আমার_মনপাখি পর্ব – ১৫

0
2837

#আমার_মনপাখি পর্ব – ১৫
#পলি_আনান

রাইফা দোয়া, কালাম পড়ে ভার্সিটি গেটে ডুকছে যেন অনিকের সাথে না দেখা হয়।কিন্তু গেটের ভেতর ঢোকার পর সে যা দেখে তার জন্য সে মোটেই প্রস্তুত ছিল না।তার মাথা ভন ভন করছে।ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।রাইফা দেখে অনিক মীম আর কলিকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।রাইফা বুঝতে পারছে তার কারনে মিম আর কলির এই অবস্থা।কেননা সবাই জানে অনিক শান্ত শিষ্ট রাগি ছেলে,তবে তার কিছু বদ অভ্যস আছে সহযে তা কারো কাছে প্রকাশ পায় না।কারন ছাড়া কাউকে সে শাস্তি দেয় না।ভার্সিটিতে অনিককে যেমন সবাই সম্মান করে তেমনি আবার ভয় পায়।তাই রাইফা ভয়ে সুযোগ বুঝে আস্তে আস্তে গেট থেকে বেরিয়ে যায়। বাইরে গিয়ে রাইফা চোখ বুঝে, বুকে হাত দিয়ে বলে,

_ওই বজ্জাতের হাত থেকে বেচে গেছি।শায়ায়ায়ায়ান্তি।(টেনে)
_আমারো এখন শান্তি লাগছে জান।

সামনে থেকে কারো কন্ঠ শুনতে পেয়ে চোখ খুলে রাইফা।সামনে থাকা লোকটিকে দেখে মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।রাইফার পুরো শরীর ঘামতে থাকে।জিব দিয়ে একবার ঠোঁট ভিজিয়ে নেয় সে।
_কি হলো কথা বলছোনা কেন।
(রাইফার দিকে তাকিয়ে অনিক)
_ কি বলবো আমি।(থতমত খেয়ে রাইফা)
_তুমি আমার ফোন ধরোনা কেন।আর তোমার বান্ধবীরা বলছে তুমি নাকি আমার সাথে আর সম্পর্কে এগোতে চাওনা।এগুলো কেমন কথা।শুনেই আমার মাথাটাই গরম হয়ে গেছে তাই ওদের শাস্তি দিয়েছি।

রাইফা অনিকের কথার ভাব দেখে বুঝতে পারছে অনিক এখনো রেগে আছে।যদি রাইফা বলে দেয় সে সত্যি তার সাথে সম্পর্ক রাখবে না তাহলে অনিক হিংস্র হয়ে যাবে।তাই রাইফা নিজেকে বাচাতে আবার মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে।

_কে বলেছে অনিক আমি তোমার সাথে সম্পর্ক রাখবো না।আসলে আমি কাল ওদের সাথে মজা করছিলাম ওরা তা সিরিয়াচ ভেবে নেয়।তুমি ওদেরকে ছেড়ে দাও। প্লিজ।
_অবশ্যই দিব আগে বল কোথায় ঘুরতে যাবে।

অনিকের কথা শুনে রাইফার মাথা ঘুরাচ্ছে। তার ইচ্ছে করছে নিজের মাথা নিজে ফাটাতে। তবুও অনিকের সামনে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে রাইফা মুচকি হেসে বলে,
_আসলে অনিক আজকে না আমার খুব গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস আছে।তাই এখন আর বের হবো না, পরে ঘুরতে যাবো ঠিক আছে।

অনিক কিছু একটা অনেক্ষন ভেবে বললো,
_আচ্ছা ঠিক আছে।
_তাহলে আমার বান্ধবীদের এবার ছেড়ে দাও।
_ দিচ্ছি চলো।


ক্লসে বসে আছে রাইফা, মিম আর কলি।করো মুখে কোন কথা নেই।কলির ইচ্ছে করছে রাইফাকে চিবিয়ে খেতে।মিম বসে আছে ভাবলেশহীন ভাবে। আর রাইফা আছে ভায়ে একটু পর পর হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের নাকের ঘাম মুচ্ছে।অনিক যদি তার সাথে ঘুরতে যাওয়ার জন্য রাইফাকে ফোর্স করে তখন সে কি করবে এসব ভাবতে ভাবতে রাইফার দম বন্ধ হয়ে আসছে।জীবনে অনেক মজার ছলে ভুল সে করেছে সে ভুলের মাসুল হয়তো এখন দিতে হচ্ছে।একদিকে সেই হিংস্র লোকটি।তাকে প্রতিদিন হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।তবে তার কোমল ছোয়ায় যেন ভালোবাসা আছে।তার কাছে গেলেই বাহিরের জগতের কথা বুলে যাই। কি যেন মোহ ময় জগতে আমাকে আটকে দেয়।কিন্তু আরেক দিকে আহাদ ভাই। পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক না কেন নিজে সামলে নিতে পারবো।কিন্তু আহাদ ভাইয়ের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। তিনি সহযে বুঝে যেতে পারে আমি কখন বিপদে পড়েছি আর কখন ভুল সিদ্ধান্ত গুলো নিচ্ছি।তিনি যদি বাবাকে আর মাকে আমার সব কীর্তির কথা বলে দেয়। তবে আমি কি করবো।আল্লাহ আর ভাবতে পারছি না।আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।গলা শুকিয়ে গেছে।

এদিকে পুরো ক্লাস নিরব।বোর্ডে স্যার চিএের মাধ্যমে কিছু একটা বুঝাতে চাইছে।কিন্তু তার মাঝে রাইফার এসব কথা ভাবতে ভাবতে গলা শুকিয়ে গেছে। তাই সে ভাবনার মাঝেই চিল্লিয়ে উঠে,
_ পানি খাব পানি খাব, এই পানি দে তাড়াতাড়ি।

রাইফার কথায় স্যার সহ সকল স্টুডেন্ট তার দিকে তাকিয়ে আছে।মিম রাইফার মাথায় একটা ঘাট্টা দেয়, আর রাইফার ঘোর কাটে । সমনে থাকা স্যার আর সকল স্টুডেন্টকে দেখে রাইফা বুঝতে পারে সে কি করেছে।রাইফা মাথা নিচু করে স্যারের উদ্দেশ্য বলে,
_ সরি স্যার আর কখনো এমন হবে না।
_ হুম বসো।ক্লাস চলাকালিন মন কোথায় থাকে।

স্যারের কথা শুনে রাইফা বিড়বিড় করে বলে,
_ কার কাছে আর ওই তিন ডেবিলের কাছে।
_ কিরে কি বিড়বিড় করছিস(ফিসফিসিয়ে মীম)
_ কি আর বিড়বিড় করবে যানিস না অনিকের সাথে কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায় তার প্লেন করেছে।(খোচা মেরে কলি),
_ আচ্ছা তুই যদি প্রেম করবি তাহলে আমাদের কাল মিথ্যা বললি কেন। তোর পক্ষে কথা বলতে গিয়ে মাঝখান থেকে আমাদের শাস্তি দিল(কাদো কাদো হয়ে মিম)
_ দূর আমি প্রেম করবো না।তোদের বাচাইতে আমি মিথ্যা বলছি।বুঝতে পারচত।
মিম আর তুলি বেকুবের মতো রাইফার দিকে তাকিয়ে আছে.
????
আহাদ বসে আছে তার দাদিমার মুখোমুখি।শিহাব বসে আছে আহাদের পাশে।

_ দাদিমা তুমি বুঝতে পারছো আমি কি বলছি।রাইফা কিন্তু দিনদিন আরো পাগল হয়ে উঠছে।তুমি দেখনি কাল সে কি সাজে অনুষ্ঠানে গিয়েছে।দেখ দাদিমা রাইফা বউ হলে আমার বউই হবে।তো এখন তুমি বিয়েটা দিয়ে দিচ্ছোনা কেন।আমি চাইনা বিয়ের আগে আমার বউয়ের কোন বদনাম উঠুক।তাকে সামলাতে হলে যত তারারারি সম্ভব বিয়ে দিয়ে দাও।আমার বু আমি সামলাবো।তাকে এখন কিছু বলতে গেলে সে আমাকে অধিকার নিয়ে প্রশ্ন করে।তোমরা তো ঘরে থাক ওর বাইরে কি করে বেড়ায় তার খবর কি তোমরা রাখ।

একদমে কথা গুলো বলে শেষ করে আহাদ।আর শিহাব তাকিয়ে আছে আহাদের দিকে একপলক দৃষ্টিতে।সে কত সুন্দর করে নিজের বিয়ের কথা বলছে।সত্যাই বিডিতে না এলে এমন বিয়ে পাগল আহাদকে সে দেখতো না আল্লাহ যানে আর কি কি রুপ আছে আহাদের।
_দাদুভাই এত উতলা হচ্ছো কেন। বিয়ে তো হবেই।
_ না দাদিমা এভাবে বললেতো হবে না।তোমাদের কথায় আমি দেশ ছেড়া চলে যাই।তোমরা বলেছিলে আমি নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুললে তোমরা আমাদের নিজেরা দাঁড়িয়ে বিয়ে দেবে।এখন তো আমার সব ঠিক।আর শিহাবের সাথে যে বিজনেস গড়েছি তা এখন দেশে নিয়ে আসবো।তবে এখন এতো বাহানা কেন।আর তোমরা সবাই বলেছিলে রাইফাকে চোখে চোখে রাখবে,কি রেখেছো।সে বাইরে যা করে বেড়ায় তা কি তোমাদের কারো চোখে পড়ে।বরং আমি ইউএস থেকে তার প্রতিনিয়ত খবর রেখেছি।তার এসব কীর্তির কারনে আমি তো ভেবেছিলাম দেশে এসে আগে ওর মাথা ফাটিয়ে দিব।কিন্তু এখনো চুপচাপ আছি।আমি আসার ১ মাস হতে চললো।কই কেউ তো আমার আর রাইফার বিয়ের কথা টা একবার ও উঠায় নি।

আহাদের কথা শুনে মিসেস জমিলা মাথা নিচু করে আছে।সব কিছু যেন তার কারনেই ঘটছে।তিনি তো বলেছিলেন আহাদ দেশে ফিরে আসার ১০ দিনের মাথায় রাইফাকে তার হাতে তুলে দেবে।কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তিনি ভুলে যান তার ওয়াদার কথা।কিন্তু যে আশা নিয়ে দাড়িয়ে আছে সে তো ভুলেনি।সত্যিই তিনি কাজটা অন্যায় করেছেন।তাই তিনিই আবার সব কিছু ঠিক করে দেবে।

_ দাদু ভাই আমি সত্যিই ভুল করেছি মাফ করে দিস।আজ তো খান ভাড়িতে রাতে বিয়ে আছে। আজ আর সময় নেই।কাল থেকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে তোদের বিয়ে দেব।
তবে তোদের একটা কাজ করতে হবে।

মিসেস জামিলার কথা শুনে আহাদ চমকে যায়।আহাদ তার দাদিমার হাত ধরে বলে
_ কি করতে হবে দাদিমা বলো আমি।সব করতে রাজি।
দাদিমা শিহাবের দিকে তাকিয়ে বলে,
_ শিহাব তুমিও শুন।

তারপর দাদিমা শিহাব আর আহাদকে সব কথা বুঝিয়ে দেয়।
????

ভার্সিটির ক্লাস শেষ তাই রাইফা চুপিচুপি পালানোর রাস্তা খুজছে যেন অনিক তাকে না দেখতে পায়।রাইফা ভার্সিটির এককোনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেখান থেকে গেটের দিকটা সরাসরি দেখা যায়।সে পেছনে গেট দিয়ে পালাবে ভেবেছে কিন্তু পেছনের গেটের সামনে অনিক দাড়িয়ে আছে।তাই বাধ্য হয়ে সামনের গেট দিয়ে যাবে কিন্তু সেখানেও অনিকের লোক।রাইফার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে মিম আর কলি।তারা নিজেরাও বাজে ভাবে ফেসে গেছে।হঠাৎ রাইফার ফোনে মেসেজের আওয়াজ আসে।রাইফা দেখে সেই অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে।মেসেজে লিখা,
__ডুবে ডুবে ভালোবাসি, তুমি না বাসলেও আমি বাসি {গান}
মাথায় রেখ মনপাখি তুমি না বাসলেও তোমায় আমি ভালোবাসি।

রাইফা মেসেজটি পড়েই দাত কিড়মিড়ি দিয়ে বলে,
_শালা তুই জবে থেকে আমার জিবনে এসেছিস জিবনটা নিমপাতা হয়ে গেছে।

রাইফা একটু ভেবে বলে

_অবশ্য নিমপাতা তেতো হলে কি হবে সবার জন্য উপকারী।দেখাযাক আমার কি হয়।

_,আরে জান তুমি এখানে কি করছো। তোমায় আমি কখন থেকে খুজছি।
সামনে থেকে কারো কন্ঠা শুনে সামনে তাকায় রাইফা। তার সামনে অনিককে দেখে কিছুটা বিচলিত হয়ে যায়।
_কে..কেন আমায় খুজচ্ছিলে অনিক।
_ আরে আমরা আজকে ঘুরতে যাবোতো চলো।
অনিক রাইফার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এদিকে মিম আর কলি এক জনের মুখ আরেক জন দেখা দেখি করছে।
_ অনিক হাতটা প্লিজ ছাড়ো আমি কাল।তোমার সাথে যাবো প্রমিস।
_ কেন আজ গেলে কি হয়।
_ আজ না আমার বাবার বন্ধুর বাসায় দাওয়াত আছে। আজ তাই তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে।
_ আচ্ছা ঠিক আছে।তবে কাল কিন্তু চলে আসবে।কাল ঘুরতে যাবো( হালকা হেসে অনিক)
_ হুম।
তারা তিনজন বাসার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ে।
এদিকে মিম।এতোক্ষন ঘটে যাওয়া সকল কথা আহাদ কে মসেজে বলে দেয়।কারন মিম চায় আহাদের মতো একটা ভালো ছেলে রাইফার জীবন সঙ্গি হোক।
????
আহাদ শিহাবের দিকে তাকিয়ে বলে।কাল আমাদের কাজ এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
_হুম।ঠিক বলেছিস ভাই।কিন্তু লোক গুলো বিশ্বস্ত হবে তো।
_ হবেনা কেন। ওদের আমরা এত টাকা অফার করেছি যে বন্ধুত্ব থেকে ওদের কাছে টাকা টা বেশি।গুরুত্বপূর্ণ।
_ তাই যেন হয়( বাকা হাসি দিয়ে আহাদ?)
????
খান বাড়িতে আহাদ এবং রাইফাদের পরিবারের সকলেই উপস্থিত।রাইফা আজ আগের থেকেও শান্ত শিষ্ট। কোন ছেলের সাথে কথা বলছে না।সে বেবি পিংক একটি বারবি গাউন পড়েছে। চুলগুলো ছেড়া দিয়েছে।কানে স্টোনের দুল।ঠোটে হালকা লিপ্সটিক দিয়েছে।গলায় স্টোনের নেকলেস।আহাদ রাইফার সাথে মেচিং করে ব্লেজার পড়েছে।রাইসা আজ নিজেকে সাজিয়েছে ব্লু বারবি গাউন দিয়ে।চুল ছেড়ে দিয়েছে।শিহাব রাইসার সাথে মেচ করে ব্লেজার পড়েছে। দূর থেকে যে কেউ বলবে তারা আহাদ – রাইফা, এবং শিহাব- রাইসা কাপল।

পুরো অনুষ্ঠানে রাইফা রাইসার সাথে থেকেছে।শিহাব আর আহাদ তাদের পাশে থেকেছে।

রাইফা কনের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বর বউয়ের কানে কিছু বলছে, বউ আবার নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। তাদের বর – বউ জুটিটা দেখতে কতো সুন্দর লাগছে।রাইফার ফোনে মেসেজের শব্দে তার ধ্যান ভাঙ্গে। সেই অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ। রাইফা বিরক্ত হয়ে মেসেজটি ওপেন করে আর পড়া শুরু করে,

_ তোমাকে দেখতে আজ পরির মতো লাগছে মনপাখি।ইচ্ছে করছে তোমায় আমার কাছে নিয়ে আসি।কিন্তু সময় এখনো হয় নি।আচ্ছা তুমি বর আর কনের দিকে এমন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছ কেন।ওদের তো নজর লেগে যাবে।এমন করে বউ একদিন তুমিও সাজবে শুধু আমার জন্য।

রাইফা মেসেজটি পড়ে আসে পাশে লোকটিকে খুজতে থাকে সে সিউর লোকটি আশে পাশেই আছে।কিন্তু না সে, দেখতে পাচ্ছে না কাউকে সবাই সবার কাজে ব্যস্ত। আবার রাইফার ফোনে মেসেজ আসে,

_ আমি তোমার আশেপাশেই আছি।কিন্তু তবুও দূরে।কিন্তু তোমার পাশে থাকলেতো বারবার দাও দূরে ঠেলে।

রাইফা মেসেজ টি পড়ে বিড়বিড় করে বলে,
_পাগল একটা।

চলবে……..

(ভুলগুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here