আমার_মনপাখি পর্ব – ১৬
#পলি_আনান
সময় যায়,মুহূর্ত যায়,দিন যায় এভাবে কেটে গেছে আরো দুটো দিন।এই দুটো দিন হয়তো কারো খুব ভালো কেটেছে।কিন্তু রাইফার কেটেছে ভয়ে।অনিকের সাথে সেই দিনের পর আর দেখা করেনি রাইফা।যদিও অনিককে কথা দিয়েছিল সে অনিকের সাথে ঘুরতে যাবে।কিন্তু একবার অনিকের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে গাঁ ডাকা দিয়েছে সে।অনিক তাকে ফোনের উপর ফোন দিয়ে যাচ্ছে। মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে অগনিত।কিন্তু সে কোন সাড়া অনিককে দেয় নি।এদিকে আহাদ ভাই এই দুইদিন আমার কাছে কাছেই ছিল।আমাকে রাগাতো হাসাতো, আবার ইচ্ছে মতো হাসির ছলে অপমান করতো।আমাকে দেখলেই ঠোঁট কামড়ে গান ধরে আহাদ ভাই। আহাদ ভাইয়ের এইসব রুপের সাথে আমি মোটেই পরিচিত না।হয়তো বিলেতে থেকে পরিবর্তন এসেছে।
অচেনা সেই লোকটি প্রতিরাতে আমার রুমে আসে।কিন্তু আমি যানি না কখন সে আসে।সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বালিশের পাশে চিরকুট থাকে।মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় আমার খাবারে কি কেউ ঘুমের ঔষুধ মিশিয়ে দেয়।নাহলে এতো ঘুমতো আমার হওয়ার কথা না।যাক বাদ দি সব কথা।দিন কাল ভালো যাচ্ছে না।নিজের জিবনের ছন্দ মনে হয় যেন কেটে গেছে। সেই ছন্দ ফিরে পাবো কি করে।
এইসব কথা ছাদে রেলিং এর পাশে দাঁড়িয়ে ভাবছে রাইফা। সময় টা দুপুরের পর।তিনটা বা সাড়ে তিনটা।আকাশে সূর্যের তেজ এখনো কমে নি। রাইফার ফোনে আবার অনিক ফোন আসে।কিন্তু রাইফা তাকিয়ে আছে ফোনের দিকে ধরবে নাকি ধরবে না।ভাবতে ভাবতেই ফোনটা কেটে গেলো।এবার তার ফোনে একটা মেসেজ দিয়েছে অনিক। সেখানে লেখা,
_ নিচে তাকাও আমি দাড়িয়ে আছি।যদি ১০ মিনিটের মধ্যে তুমি রেডি হয়ে নিচে না নামো।তবে আমি তোমার বাড়িতে ডুকে তোমায় নিয়ে যাবো।
এবার রাইফার পুরো শরীর কাপছে।যদি বাড়ির কেউ দেখে ফেলে তবে তার জীবনে ঘোর অন্ধকার নেমে আসবে।রাইফা অনিককে ফোন করে যানায় সে যাবে তবে যেন বাড়ি থেকে দূরে গিয়ে দাঁড়ায় অনিক।
???
বিকাল ৫ টা লেকের পাড়ে বসে আছে অনিক রাইফা। দুজনেই পাশাপাশি বসে আছে।রাইফা আছে বিরক্তিকর মুডে তার ইচ্ছে করছে এক দৌড়ে এখান থেকে পালিয়ে যেতে। কিন্তু কি করার না পারছে সইতে না পারছে রইতে।আর অনিক আছে রোমান্টিক মুডে সে বিভিন্ন ভাবে রাইফাকে তার মনের কথা বুঝাতে চাইছে। কিন্তু সে বারবার কথা গুলো ঘুরিয়ে দিচ্ছে।এদিকে গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে শিহাব আর আহাদ।তারা যেন গোয়েন্দা কাজ করছে।বাজ পাখির মতো তাকিয়ে আছে অনিক আর রাইফার দিকে।এদিকে অনিক আরো গেসে বসে রাইফার দিকে। যা দেখে আহাদের মাথায় আগুন লেগে যায়।
_দেখ শিহাব শালায় আমার কলিজার দিকে হাত দিসে,মন চায় শালারে জেন্ত কবর দি।
_ আরে ভাই চেতস কা।একটু সহ্য কর তোর জন্যই ভালো হবে। আচ্ছা যে কাজে আসছি আগে ওই কাজটা করি ছবিটা তুলি নি।
_ হুম তুল।
অনিক আর রাইফার ঘনিষ্ট ছবি তোলা হলেই শিহাব আর আহাদ স্থান ত্যাগ করে।
???
মির্জা বাড়ির বসার ঘরে পাইচারি করছে মি.জহির।তিনি ভিষণ রাগি মানুষ তবে রাইরে থেকে বুঝাযায় না।আর তাকে শান্ত করতে পাচ্ছে না মিসেস ডালিয়া।রাত ৯ টা বাজে এখনো রাইফা বাড়ি ফেরেনি।সন্ধ্যা ৬ টায় মি.জহিরের ফোনে কে যেন রাইফা আর অনিকের ছবি গুলো পাঠায়।সেখানে দেখা যাচ্ছে রাইফা আর অনিকে ঘনিষ্ট ভাবে ।তা দেখেই মি.জহিরের মাথা গরম হয়ে যায়।এদিকে রাইফা এতো রাতেও বাড়ি ফিরেনি।বসার ঘরে মিসেস ডালিয়া মিসেস হাবিবাকে ডেকে এনেছে যেন কিছুটা হলেও রাইফার উপর আঘাত কম আসে।তার সাথে আছে সামাদ।এদিকে রাইফা গেটের ভিতর ডুকছে আর মনে মনে বলছে।
_ আল্লাহ বাবা যেন বাসায় না থাকে।যদি দেখে আমি এত রাতে বাড়ি ফিরছি তবে জেন্ত কবর দেবে।
রাইফা আসতে আসতে বাসায় ডুকছে।বসার ঘরের দিকে তাকিয়ে সে ভয়ে একটা ঢোক গিলে।
রাইফা আসতে আসতে পাশকেটে ঘরে ডুকতে নিলেই মি.জহির বলে,
_ দাঁড়াও।কোথায় ছিলে এতোক্ষন।
_ব্ববা, মীমের সাথে।(আমতা আমতা করে)
_ তাইনাকি, মীমের সাথে কোথায় ছিলে।(চোখ গরম করে)
_ তা,,,তাদের বাসয়।
_ তবে এই ছেলেটি কে তোমার সাথে।(মোবাইল দেখিয়ে)
রাইফা তার বাবার ফোনে অনিক আর তার ছবি দেখে অবাক হয়ে যায়।সে নিজের আনমনে বলে দিল,
_ বাবা এগুলো তুমি কোথায় পেলে।
মি.জহির এবার রাইফাকে কসে চড় দিতে নিলেই
মিসেস হাবিবা একটানে রাইফাকে নিজের বুকে নিয়ে আসে।
_ আপনি কি করছেন ভাইজান এত বড় মেয়ের গায়ে হাত তুলা কি ঠিক।
_ হাত তুল বো না তো কি করবো।এত রাতে বাড়ি ফিরে তাও একটি ছেলের সাথে এতটা সময় কাটিয়েছে ছিহহ….লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে।
রাইফা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে মিসেস হাবিবার বুকে ফোপাচ্ছে।
মিসেস ডালিয়া এবার তাদের কথার মাঝে কথা বললেন।
_ ওটা ওর বন্ধু ও তো হতে পারে,
_ চুপ, তুমি কোন কথা বলবেনা।আমি ওর সকল বন্ধুকে চিনি।আর তাদের নিয়ে আমি কখনো কোন কথা বলিনি।কিন্তু এই ছবি গুলো দেখে তোমার মনে হয় ওই ছেলে ওর বন্ধু।
মিসেস হাবিবা রাইফাকে ওর ঘরে নিয়ে যায়।আর যাওয়ার আগে মি.জহির কে বলে যায় যেন রাইফাকে আর কোন কথা না শুনায়।
???
রাত ২ টা চারিদিকে কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে।ঘুম নেই রাইসার চোখে।কতো চিন্তা তার মাথায় ভর করেছে।কে দিয়েছে তার বাবার ফোনে এসব ছবি।সেই অচেনা লোকটি নয় তো।ছবি দেখে মনে হচ্ছে বেশ কাছ থেকেই ছবি গুলা তোলা।এই রহৎসের সমাধান তার মাথায় আসছে না ৷ এদিকে অচেনা লোকটির ও আজ কোন খবর নেই।আজ তো একটি বার ও যোগাযোগ করে নি।
।
|
এদিকে বন্ধুদের সাথে নেশায় বুদ হয়ে আছে অনিক।আগে ১ বা ২ পেগ নিত।কিন্তু আজ ওর বন্ধুরা পুরো বোতল তাকে গেল্লাচ্ছে।আর বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে রাইফার কথা।নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই অনিক তার নেশার মাএা এতোটাই যে ঠিক মতো দাড়িয়ে কথা বলতে পারছে না সে।তাদের মাঝে একজন অনিক কে বলে উঠলো,
_ দোস্ত রাইফা দের বাড়ি তো কাছেই। যান
রাইফা ভাবির বাড়িতে। তুই তোর কাছে রাইফাকে নিয়ে আয়।
তাদের মাঝে আরেক একজন কথায় তাল মেলালো,
_ হুম ঠিক বলেছিস তুই।আমি শুনেছি রাইফা মেয়েটার সাথে অনেক ছেলের সাথে সম্পক রয়েছে।তাই বলিকি তুই রাইফাদের বাড়ি এখনি যা।আর রাইফা কে নিয়ে আয়।
অনিক নেশার ঘোরে বলে,
_ তোরা বলছিস রাইফাকে আমি নিয়ে আসবো।
_ হ্যা দোস্ত যা।তোকে আমরা পোছে দিব।চল তুই।
রাইফা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে রাত ৩ টা। কুরের ডাক গুলো আরো বেড়ে গেছে। পরিবেশটা আরো গা ছমছমে লাগছে।রাস্তার ধারে লেম্প পোস্টের আলোতে সব দেখা যাচ্ছে।বাগানে, সুইমিংপুলের পাশে,গেটের সামনে কিছু লাইট জ্বলছে।রাইফার মাথায় আজ ছবি গুলো ছাড়া আর কোন কথা ঘুরছেনা।রাইফা রাস্তার দিকে চোখ পড়লেই দেখতে পায় একটা ছেলে তাদের গেটের সামনে হাতে মদের বোতল।একটু পর তাদের গেটের থেকে বিকট শব্দ এলো।ছেলেটি তাদের গেটে জোরে জোরে লাথি মারছে।আর রাইফা রাইফা করছে।রাইফার বুঝতে আর বাকি রইলো না এটা অনিক।সে ভয়ে জড়ো সড়ো হয়ে যাচ্ছে।আজ বাড়িতে আবার তান্ডব হবে তা সে বেশ বুঝতে পাচ্ছে।
|
দারোয়ান গেট না খোলায় অনিক গেটের ভিতর হাত ডুকিয়ে দারোয়ানের কলার চেপে ধরে মারতে শুরু করে তাই দারোয়ান ভয়ে গেট খুলে দেয়।অনিক এবার মেইন দরজায় আঘাত করে।আর জোরে নেশা কন্ঠে রাইফাকে ডাকে
চলবে…….
(ভুল গুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)