আমার_মনপাখি পর্ব – ১৭
#পলি_আনান
রাইফাদের বসার ঘরে দাড়িয়ে আছে সবাই। সেখানে উপস্থিত আছে আহাদের পরিবারের সবাই।রাইফা সবার পিছনে জড়োসড়ো হয়ে দাড়িয়ে আছে। আর ফুফিয়ে কাদছে,তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে রাইসা।সদর দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে নেশায় বুদ হওয়া অনিক।সে নিজের নিয়ন্ত্রণ কিছুতেই ধরে রাখতে পারছেনা।এদিক সেদিক বারবার পড়ে যাচ্ছে তাই সদর দরজা ধরে সে দাঁড়িয়ে আছে। আর বার বার চিল্লিয়ে বলছে, _ _রাইফা আমার কাছে চলে এসো।এখানে তোমায় থাকতে হবে না।আমার কাছে থাকবে তুমি। চলে এসো।আমার কাছে না থাকলে তুমি পালিয়ে যাবে। ( নেশা কণ্ঠে)
মি.জহির অনেক্ষণ অনিকের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু এবার প্রশ্ন করলো।
_ এই ছেলে রাইফাকি তোমায় বলেছে সে তোমার সাথে যেতে চায়।
_ ন্না….না(নেশা কন্ঠে)
_ তবে কেন তুমি রাইফাকে নিতে এসেছো।(শান্ত কন্ঠে।রাইফা তার বাবার এমন পরিস্থিতিতে শান্ত কন্ঠ শুনে অবাক হয়ে যায়)
_ আমি জা…জানি রাইফা অন্য ছে… ছেলেদের যেভাবে ছেড়ে গেছে আমাকেও ছেড়ে চলে যাবে।ঠিক তাদের মতো।
মি.জহির কথাটা ঠিক স্পষ্ট বুঝলেন না তাই তিনি আবার প্রশ্ন করলেন
_ মানে।
_ রা…রাইফা শুধু আমার সাথেই রি…রিলেশন রাখেনি… আরো অ…নেক ছেলের সাথে সম্পর্ক রেখেছে।তা…তাই ও জেন আমায় ছেড়ে না যেতে পারে তাই আমি ওকে নিয়ে যেতে চাই।কই আস রা… ইফা বে…বি।
আনিকের বলা কথা গুলো শুনে মি. জহির রাইফার দিকে রক্ত বর্ন চোখ নিয়ে একবার তাকায়। রাইফা তার বাবার চোখের দিকে একবার তাকিয়ে আতকে উঠে। এই চোখ দিয়ে যেন তার বাবা তাকে খুন করতে ও পিছ পা হবেন না।নিজের করা কৃত কর্মের ফল যেন এখনি ভোগ করার সময় হয়ে এসেছে।তার সব বাইরের কথা আজ প্রকাশ করে দিল অনিক।এর পর থেকে হয়তো বাবা ও তাকে মায়া করে ডাকবে না “রাইফা মা কই তুই”
মা ও আগের মতো ভালোবাসবেনা।ছোট মা আজ যে মুখ নিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল সেই মুখ হয়তো আজ নিচু হয়ে গেছে।ভাবতেই বুকের ভিতর এক চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো সে।অনিক হেলে দুলে এগিয়ে আসে রাইফার কাছে রাইফার হাত ধরতে আহাদ এক ঝটকায় অনিকের হাত সরিয়ে দেয়।আর রাইফার সামনে ধাড়িয়ে বলে,
_ সাহস কি করে হলো তোর আমার বাড়িতে থেকে তুই মাতলামি করছিস।আবার আমার বাড়ির আমার সম্পদে তুই হাত দিচ্ছিস।(রেগে। গর্জন করে)
আহাদের বলা কথা গুলোতে অবাক হয়ে যায় সবাই।রাইফা মুখ তুলে একবার আহাদের দিকে তাকায় আর মনে মনে বলে,
_কি আবল তাবল বলছে আহাদ ভাই আমি ওনার সম্পদ হবো কেন।
আহাদ অনিকের কাজে ভিষন রেগে আছে তাই সে
, অনিকের নাকের মাঝ বরাবর গুসি মারে যার ফলে নাক থেকে ছিটকে রক্ত পড়ে
অনিক লুটিয়ে পরে মাটিতে।আহাদ দারোয়ান কে বলে দেয় অনিককে যেন গেটের বাইরে ফেলে আসে।রাড়ির পরিস্থিতি এখনো শান্ত হয় নি।রাইফা মুখে ওরনা গুজে ফুফিয়ে কাদছে মিসেস ডালিয়া সোফায় বসে কাদছে।এবার মি.জহির গিয়ে রাইফার পাশে দাঁড়িয়।তার শরীর ও রাগে থরথর করে কাপছে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রাইফা কে প্রশ্ন করে,
_ এই দিন দেখার জন্য কি তোকে আমি এতো স্বাধীনতা দিলাম
_ ( রাইফা নিশ্চুপ ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে)
_কিরে কথা বলছিস না কেন তোকে আমি জন্ম দিয়েছে এ দিন দেখার জন্য(ধমক দিয়ে)
রাইফা তার বাবার ধমকে কেপে উঠে কান্না মিশ্রত কন্ঠে একবার বাবা ডাকে। কিন্তু বাবা ডাকার সাথে সাথে রাইফার গালে চড় পড়ে। চড়টি এতো জোরে দেয় পুরো রুমে জুড়ে সেই শব্দ ছড়িয়ে পড়ে।রাইফা যেন কিছুই শুনতে পাচ্ছে না তার পুরো শরীর অবশ হয়ে গেছে।এভাবে আরো কয়েক টি চড় রাইফার গালে পড়ে।আরো একবার চড় দিতে গেলে আহাদের বাবা মি.ওয়াহিদ,,, রাইফাকে সরিয়ে দেয়।
_ কি করছিস তুই জহির এতো বড় মেয়েরটার গায়ে কেউ হাত তুলে ও বুঝতে পারে নি।(ওয়াহিদ)
_ ছেড়ে দে আমাকে তুই এই মেয়েকে বাচিয়ে রাখলে আমার মান সম্মাম শেষ হয়ে যাবে।কি করে পারলো এই মেয়ে আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলতে।আমি ওকে বিশ্বাস করে স্বাধীনতা দিয়েছি যখন যা চেয়েছে তাই দিয়েছি আর ও কি না আমাকে দিন শেষে এই দিল ছিহহহহহ.।
রাইফা পুরোপুরি স্তব্দ হয়ে গেছে তাকে জড়িয়ে ধরে আছে মিসেস হাবিবা আর রাইসা।রাইসার গাল বেয়ে চোখের পানি ঝরছে।রাইফা যেন রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। তার মাঝে কোন প্রান নেই।
এতোক্ষন পুরো বিষটা দেখছিলেন আহাদের দাদিমা।তিনি কারো মাঝে কোন কথা বলেনি।কিন্তু হঠাৎ বলে উঠলো।
_ আমি সবার মাঝে একটা প্রস্তাব রাখতে চাই।
সবাই চমকে তাকান ওনার দিকে, মি.ওয়াহিদ বললেন,
_ কি প্রস্তাব রাখতে চাও মা।
_ আমার কথা গুলো তোমরা মন দিয়ে শুনো।দেখ রাইফা আর আহাদের বিয়ে আমরা তাদের ছোট বেলা থেকেই ঠিক করে রেখেছি। তবে আহাদ এখন প্রতিষ্ঠিত রাইফাও উপযুক্ত বয়সে আছে তবে তাদের বিয়ে এখনি এই মুহূর্তে দেওয়া হোক।
জমিলা চৌধুরীর কথা শুনে সবাই চমকে যায়।রাইফা ও চমকে যায়। কই এইসব কথা তো সে কিছুই যানতো না।মি.ওয়াহিদ বললেন,
_ আমাদের কোন আপওি নেই।
মি.ওয়াহিদের সাথে মিসেস হাবিবা তাল মেলালো
_ আমার ও কোন আপওি নেই। আমি রাইফাকে খুব ভালো করে চিনি ও কোন খারাপ মেয়ে না।যা ভুল করেছে নিজের অজান্তে করেছে।
_ তোমরা রাজি হলে তো হবে না। যদিনা আহাদ রাজি হয়।(শান্ত হয়ে জহির)
রাইফা মনে মনে বলছে আহাদ যেন না রাজি হয়।যত যাই হোক সে আহাদ কে বিয়ে করবেনা।
_আমি রাজি। আপনারা সব কিছুর ব্যবস্তবা করুন।
রাইফা আহাদের বলা কথাটা শুনে চমকে যায়।রাইফা সবার কথার মাঝে বলে উঠে
_ আ….আমি রা…জি না।
সবাই চমকে রাইফার দিকে তাকায়।রাইফার বাবা রাইফার কাছে এসে আরো দুটো চড় মারলো।
_ তোর লজ্জা লাগেনা এই মুখে আবার কথা বলছিস।
রাইফা কেদেই যাচ্ছে। আরেক বার চড় দিতে গেলেই আহাদ বাদা দিয়ে বলে,
_আংকেল আপনি এখনি বিয়ের ব্যবস্থা করুন। আমি এখনি বিয়ে করবো।দেখি ও কিভাবে বিয়েটা না করে।( দাতে দাত চেপে রাইফার দিকে তাকিয়ে)
????
ভোর ৫ টা। ভোরের আলো ফুটেছে। চারিদিকে পাখিদের কিচিরমিচির শুনা যাচ্ছে।রাইফা তার রুমে বসে আছে। তার পড়নে লাল আর গোল্ডেন পাড়ের বেনারসি শাড়ি পড়া।এইতো বেশিদিন না ১০ দিন আগের কথা, রাইফা, রাইসা, শিহাব আর আহাদ মিলে শপিং করতে গিয়েছিল।যদিও রাইফা চায়নি যেতে কিন্তু আর মামনির জোরা জুরিতে তাকেও যেতে হলো।শিহাব সবার উদ্দেশ্যে বললো যে যত পারে শপিং করতে টাকা দেবে শিহাব।রাইফা নিজের জন্য একটি শাড়ি কিনতে চাইলো।একটি শাড়ি তার বেশ পছন্দ হয়েছিল।কিন্তু শাড়িটি কিনতে গেলে যানতে পারে কিছুক্ষন আগে তা বিক্রি হতে গেছে।আর এই ধরনের শাড়ি তাদের কাছে একপিসই ছিল।তাই রাইফা মন খারাপ করে দোকান থেকে চলে আসে।তখনো সে যানতো না শাড়ির মালিক টি হলো আহাদ।আহাদ শাড়িটি কিনেছিল রাইফার উদ্দেশ্য কিন্তু তা রাইফা জানতো না।যখন বিয়ের উদ্দেশ্য শাড়িটি আনা হলো তখন সে চমকে যায়।
।
।
এদিকে আহাদের পড়েছে সাদা পাঞ্জাবি। সে আজ ভিষণ খুশি। তার প্রাপ্তির খাতা যেন আজ পরিপূর্ন।শিহাব তার খুশিটা মন ভরে দেখছ।শিহাব আহাদের ঘাড়ে হাত রেখে বলে,
_আচ্ছা ভাই দেখলি টাকার কাছে সব হেরে যায়।এমন কি বন্ধুত্ব ও।আজ নতুন করে দেখলাম।
_ না শিহাব এটা ভুল কথা সবাই এক হয় না
_ তুই কি ভেবে এ কথা বলছিস আহাদ।তুই দেখলি না অনিকের বন্ধুগুলো আমাদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে অনিক কে নেশাগ্রস্ত করে এই বাড়িতে পাঠিয়েছে।আমাদের প্লান মোতাবেক।
_তারা কখনই অনিকের সত্যই কারার বন্ধু ছিল না।তারা অনিকের টাকার জন্য তাকে ব্যবহার করতো।শুনেছি অনেক নাকি বড়লোক বাপের বখে যাওয়া ছেলে।
_ তা ঠিক বলেছিস।আমি কিন্তু খুব খুশি এবার আমার লাইনটা ক্লিয়ার করে দেনা ভাই.
_ দেবো দেবো।তুই চিন্তা করিস না অনুষ্ঠান করে পরের বার বিয়ে করলে তোকে নিয়েই করবো।
_ তাই যেন হয় ভাই।
দুজনে একসাথে হেসে উঠে।
?????
চুপচাপ আহাদের পাশে বসে আছে রাইফা।দুই পরিবারের সবাই ছাড়া আর কোন বাইরের লোক নেই তাদের বিয়েতে।কাজী সাহেব বসে আছে সামনের সোফায়।রাইফা কাদতে চায় না তবু্ও তার চোখ গুলো বার বার পানিতে ডুবে যাচ্ছে।টুপটাপ কয়েক ফোটা পানি পড়ছে তার নিজের হাতে। আজ সে নিজের জিবন আহাদ নামের সিকলে বন্ধী করবে।তার বাবা একটু আগে আহাদের উদ্দেশ্যে করে বলেছে।
_আমার মেয়ের জীবনের এখন থেকে প্রতিটি পদক্ষেপ তুমি নিবে।সে কোথায় যাওয়া আসা করে।সব কিছুর কইফিত নেওয়ার অধিকার তোমার আছে।এই মেয়েকে তুমি আবার তোমার নিজের মতো করে মানুষ করে নিও।আমি তো আর মানুষ করতে পারিনি আর ও যদি তোমাকে শ্রদ্ধা সম্মান না করে আমায় বলো একটু আগে যে ভাবে চড় খেয়েছে। আবার ঠিক সেই ভাবেই দেব।
কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করে। রাইফার সেদিকে কোন খেয়াল নেই। সে ভাবলেশহীন ভাবে পড়ে আছে।একটু পর কাজী তাকে কবুল বলতে বলে কিন্তু সে স্থির হয়ে বসে আছে। তিন অক্ষরের কবুল নামের শব্দটা যেন এই মুহূর্তে তার কাছে বড্ড বিষাক্ত।রাইসা,মিসেস ডালিয়া,হাবিবা, আহাদের দাদিমা জমিলা দুই পরিবারের কাজের মেয়ে তারা পর্যন্ত রাইফাকে বারবার বলছে কবুল বলতে কিন্তু তার মুখ থেকে শব্দটি কিছুতেই বের হচ্ছেনা।এভাবে কেটে যায় ১৫ মিনিট। রাইফা আগের মতোই চুপচাপ। এবার গর্জে উঠে রাইফার বাবা জহির,
_ রাইসার মা ওকে কবুল বলতে বলো না হলে আমি কিন্তু সবার সামনে ওর গাঁয়ে হাত তুলবো।
তারপরেও রাইফা চুপচাপ। এবার রাইফার বাবা রাইফার গায়ে হাত তুলতে গেলেই রাইফা উচ্চারণ করে,
_ কবুল,কবুল,কবুল( কাপা গলায়)
রাইফার কবুল বলাতে আহাদের মুখের কোনে হাসি ফুটে ওঠে।আহাদ ও খুব তাড়াতাড়ি কবুল বলে দেয়।এবার কাজী একটি খাতা এগিয়ে দেয় আহাদের দিকে। আহাদ সই করা হলে কাজী এই বার রাইফার দিকে খাতা টা এগিয়ে দিয়ে বলে,
_ মা, এখানে সই করো।
রাইফা সই করে দেয়।সই করার সময় চোখের কয়েক ফোটা জল টুপটাপ খাতায় পড়ে সাথে তার হাতেও।
“” আজ থেকে আমি আমার নিজের জিবনের অধিকার হারালাম।অনিক নামক অভিশাপ আমার জীবনটাই পালটে দিল।আজ নিজের বাবাকে ও বড্ড অচেনা লাগছে।তবে কি সুখ গুলো এখানেই থমকে গেছে।””
আর ভাবতে পারলো না রাইফা ঢলে পরলো পাশে থাকা, অতীতে বলা ভাইয়া নামক, বরের কাধে।
চলবে…….
(ভুলগুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)