আমার_মনপাখি পর্ব – ১৮
#পলি_আনান
সকাল ১১ টা। চারিদিকে সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়েছে। রোদের আলো উঁকি ঝুকি দিচ্ছে রাইফার মুখ জুড়ে। মানুষজন নিজ নিজ জন জিবন নিয়ে ব্যস্থ।রাইফার চোখে সূর্যের প্রখর আলো পড়ায় পিটপিট করে চোখ খুলে সে ।সে অনুভব করে তার বাম হাতটায় কেমন ভারি ভারি লাগছে।মাথাটা বাম দিকে ঘুরাতেই ধরপর করে উঠে যায় রাইফা।আহাদ তার হাতটা ধরে হাতের উপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।সে ১০ সেকেন্ডের জন্য ভুলে যায় তার পরিণতির কথা। কিন্তু যখন মাথায় আসে সে নিশব্দে চোখের জল ফেলতে থাকে।হঠাৎ ঝাকুনি খেয়ে আহাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়।রাইফাকে কাদতে দেখে তাড়াতাড়ি রাইফার সামনে বসে গালে হাত দিয়ে বলে,
_ রাইফা রানি কি হয়েছে কাদছো কেন।বলো কোথায় কষ্ট হচ্ছে।মথায়,, মাথায় ব্যাথা করছে।বলো না কি হয়েছে(অস্থির হয়ে)
রাইফা নিশব্দে হাটুতে মাথা ঘুজে কেদেই যাচ্ছে।চোখের পানি নাকের পানিতে শাড়ি ভিজে যাচ্ছে।
আহাদ রাইফার হাত ধরে একবার ঝাকুনি দেয়।তবুও রাইফার কোন হুস নেই। সে তার মতো কেদেই যাচ্ছে।আহাদ বুঝতে পারে রাইফার নিজেকে খুব একা লাগছে তাই সে রাইফাকে হেচকা টান দিয়ে বুকে টেনে নেয়।রাইফা আহাদের কান্ডে অবাক হয়ে আহাদের দিকে তার ভেজা চোখ তাকায়।আহাদ বুঝতে পারে রাইফার ভাষা তাই সে রাইফার চুল গুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে বলে,
_আজ থেকে যেমন তোমার উপর আমার অধিকার আছে ঠিক তেমনি আমার উপর তোমারো অধিকার আছে।কাদো যত ইচ্ছে কাদো।তবে আমার বুকে মাথা রেখে কাদবে।
রাইফা যেন এটাই চাইছে। সে ও আহাদকে জড়িয়ে ধরে ফুফিয়ে কেদেই যাচ্ছে।এদিকে আহাদের গায়ে থাকা বিয়ের পাঞ্জাবি রাইফার চোখের পানি নাকের পানিতে সব একাকার হয়ে যাচ্ছে।আহাদ রাইফার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আর মনে মনে বলে,
_তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য আমাকে একটু সার্থপর হতেই হবে।আমার কতো বছরের সাধনা তুমি তা জান না। তোমায় পাওয়ার জন্য যত খারাপ হতে হয় আমি হবো।(বাকা হাসি দিয়ে?)
রাইফা এভাবে কিছুক্ষন থেকে ছিটকে আহাদের কাছ থেকে দূরে সরে যায়।আহাদ খেয়াল করে রাইফার ফর্সা মুখশ্রী লাল হয়ে গেছে।চোখ গুলো,নাক ফুলে লাল হয়ে গেছে। গাল গুলো দেখতে টমেটোর মতো লাগছে।তার ঠোঁট দুটো তিরতির করে কাপছে।আহাদ এভাবে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলে,
_যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
রাইফা চুপচাপ আগের মতো বসে আছে।সে যেন আহাদের কথা শুনছেনা।
_কি হলো আমি তোমায় কি বলেছি। যাও ফ্রেশ হতে যাও
_……. (নিশ্চুপ)…….।
_ তোমার কি কোন কথা কানে যাচ্ছে না। তোমায় আমি কি বলেছি।(ধমক দিয়ে)
_……(নিশ্চুপ)……।
আহাদ কিছুক্ষণ রাইফার দিকে তাকিয়ে বলে,
_তুমি কি চাও আমি এবার বুঝতে পেরেছি।ওকে ফাইন তোমার ইচ্ছেটাই পূরন করে দি।
আহাদ এই বার রাইফাকে কোলে তুলে নেয়। রাইফা আহাদের কান্ড দেখে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
_কোলে উটতে চাও বললেই তো হয়।আর এতো নাটক করা লাগে না।যখন ইচ্ছে হবে আমায় বলবে কোলে নিয়ে থাকবো।আর আমি তো সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছি,তোমায় এখন থেকে কোলে রাখবো, দশটা না, পাঁচটা না আমার একটা মাএ আদরের বউ।চলো ফ্রেশ হতে যাই( চোখ মেরে)
রাইফা আহাদের হাভ ভাব দেখে অবাক হয়ে যায়।শত দিদ্ধা সংকোচ নিয়ে বলে,
_ আহাদ ভাই আমাকে নামিয়ে দিন। আমি যেতে পারবো।
রাইফার কথা গুলো বলা শেষ হওয়ার সাথে সাথে আহাদ রাইফার গালে টুপ করে একটা চুমু খায়।রাইফা আহাদের কান্ড দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আর আহাদ মুচকি মুচকি হাসছে।
_এটা আপনি কি করলেন আহাদ ভাই(রেগে)
আহাদ এবার টুপ করে দুই গালে দুটো চুমু খেল।
রাইফা এবারো অবাক।
_আহাদ ভাই আপনার সমস্যা কি এমন করছেন কেন।
আহাদ এবার আগের মতো করে তিনটে চুমু খেল।
_ এই আপনার সমস্যা কি বলবেন আমাকে (রেগে)
_তুমি যত বার আমাকে ভাইয়া ডাকবে ততবার এই পুষ্টিকর ডোজটি দেওয়া হবে।
_মানে(অবাক হয়ে)
_মানে আমি কি এখনো তোমার ভাইয়া নাকি।আমি তো এখন তোমার বর।তো ভাইয়া ডাকছো কেন।
বিয়ের কথা মনে করতেই রাইফা চুপ হয়ে যায়।তার মুখ জুড়ে গভীর কালো মেঘ ধারন করে।বুকের ভেতর চিনচিন ব্যাথা অনুভব করে । আহাদ রাইফার অবস্থা বুঝতে পেরে তাকে ওয়াশরুমের সামনে এনে কোল থেকে নামিয়ে দেয়। আর বলে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।আমি বাইরে অপেক্ষা করছি।
রাইফা ফ্রেশ হতে গেলেই আহাদ রাইসার রুমের সামনে যায়।রাইসা তার রুমে শিহাবের সাথে কি নিয়ে যেন কথা বলছে।তাদের দেখে আহাদ বলে,
_ আসবো রাইসা।
আহাদের কন্ঠো শুনে রাইফা হাসিমুখে বলে,
_ জিজু ভেতরে এসো।
_
আহাদ কে দেখে শিহাব প্রশ্ন করলো,
_কিরে ভাবির সেন্স ফিরেছে.
_ হুম ফিরেছে।
_আপু কি করছে এখন জিজু(রাইসা)
_ তোমার আপু তো কেদে কেটে নাম,মুখ, চোখের অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে।
আহাদের কথা শুনে শিহাব মুচকি হেসে অভিনয় করে বলে,
_হুম তাতো বুঝতেই পারছি কেদে কেটে তোর বুক ভাসিয়েছে।
শিহাবের কথা শুনে রাইসা ও হাসছে।
_ওই আমার বউ আমার বুক ভাসাইছে তাতে তোর কি।নিজে বিয়া করতে পারো নাই তাই জ্বলে বুঝি বন্ধু।(বাকা হেসে?)
_শালা একদম কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিবিনা।আমিও বিয়ে করে তোকে দেখাই দিমু।
_ আগে কর তারপর কথা বলিস।
আহাদ আর শিহাবের কথা শুনে রাইসা একবার একেক জনের মুখ চাওয়া চায়ি করছে।
_ শিহাব ভাই বিয়ে করেনি মানে।
রাইফার কথা শুনে শিহাব আর আহাদ দুজনে একসাথে হেসে উঠে,
_ নারে শিহাবের বিয়ে হয় নি।সে দিন মিথ্য বলেছিল রাইফার জন্য।(আহাদ)
_তাই বলে আমার কাছ থেকেও তোমরা একথা লুকাবে।অথচ তোমাদের সব প্লেনের ভাগিদার আমিও ছিলাম।
_ সরি ভুল হয়ে গেছে শালিকা।ক্ষমা কর।
_ হুম(আড় চোখে শিহাব কে দেখে)
_ আচ্ছা রাইসা কিছু খাওয়ার ব্যবস্থা করো।রাইফা আর আমি এখনো কিন্তু কিছুই খাই নি।
_জিজু তুমি আপুর রুমে যাও আমি তোমাদের জন্য খাওয়ার নিয়ে আসছি।
????
রাইফা দাড়িয়ে আছে বারান্দায় আকাশের দিকে তাকিয়ে। গায়ে তার বিয়েতে পড়া শেই শাড়িটি।আহাদ রুমে এসে রাইফাকে না পেয়ে বারান্দায় যায়।সেখানে গিয়ে দেখে রাইফা মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে।আহাদ রাইফাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।রাইফা আহাদের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলে আহাদ রাইফাকে আরো নিজের সাথে চেপে ধরে,
_ একদম নড়াচড়া করবে রাইফা।আমার কাছেই এলেই পালাই পালাই করো তুমি
_আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানি না (কাপাকাপা গলায়)
রাইফার কথা শুনে আহাদের মাথা গরম হয়ে যায় তবুও নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলে,
_মানবে৷ মানবে সময় হলে ঠিকি মানবে।
একটুপর রাইসা রুমে এসে তাদের জন্য খাওয়ার দিয়ে যায়।আহাদ সোফায় বসে রাইফাকে টেনে নিজের কোলে নিয়ে বলে,
_ হা করো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
রাইফা আহাদের কর্ম কান্ডে বিরক্ত প্রকাশ করে বলে,
_ছাড়ুন, আমি খাবো না।
_আমি যখন বলেছি তোমায় খেতে হবে তো খাবে।
_বললাম তো খাবো না।
_ ঠিক আছে তুমি যদি না খাও তবে আমি শশুর বাবাকে ডাক দিব। কালকের কথা গুলো মনে আছে তো।
রাইফা আর কোন কথা না বলে চুপচাপ খাওয়া শুরু করে।
আহাদ রাইফার মুখে খাওয়ার দিচ্ছে আর বলছে,
_যান রাইফা আমি এই শাড়িটা তোমার জন্য সেদিন কিনেছিলাম।পরে দেখি তুমি ও এই শাড়িটাই পছন্দ করলে।আর আমাদের বিয়েটা ঠিক হয়েছে আমি বিদেশ যাওয়ার আগে।কিন্তু তুমি তা যানতে না। আমি জানতাম।এবার ও কি তোমার এই বিয়ে নিয়ে মাথা ব্যাথা আছে।
_আমি আপনাকে কখনো স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না আহাদ ভাই।আমি আপনাকে ওই চোখে কখনো দেখি নি।যে হুট করে বিয়ে করলেই স্বামী হিসেবে মানবো।
আহাদ রাইফার কথা শুনে কিচ্ছুক্ষণ চুপ থেকে বলে
_ঠিক আছে আমি মেনে নিলাম।আর যদি তুমি নিজ থেকে আমার কাছে ধরা দাও তবে আর কোন ছাড়া ছাড়ি নেই। সোজা অনুষ্ঠান করে আমার ঘরে নিয়ে যাব।(বাকা হাসি দিয়ে)
আর কোন কথা না বলে আহাদ চলে যায়।রাইফা তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে,
_আমি কখনো আপনার কাছে ধরা দেবনা আহাদ ভাই,,,কখোনা না(কেদে কেদে)
চলবে……
(ভুলগুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)