আমার_মনপাখি পর্ব – ১৯

0
2630

আমার_মনপাখি পর্ব – ১৯
#পলি_আনান

_ কিরে তোর নাকি বিয়ে হয়ে গেছে আর তুই আমাকে একটি বারো জানালি না।এই তুই আমাকে বেস্ট ফ্রেন্ড মানিস তো নাকি সব নাটক।
_ আমার বিয়ের দাওয়াত আমি নিজেই পাইনি মিম।যদি পাইতাম তবে তোরে একবার হলেও বলতাম।
_ মানে কি, তুই কি বলছিস। আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না।
_ তোর বুঝে কাজ নাই। আগে বল আমার বিয়ের খবর তুই কার কাছে থেকে পেলি।
_ রাইসা বলেছে আমাকে।
_ তবে বাকি ঘটনা রাইসার কাছ থেকেই শোন। আমার এখন এইসব বিষয়ে কথা বলতে ভালো লাগছেনা।
আর কোন কথা না বলেই রাইফা ফোন কেটে দিল।রাইফা বিরক্ত মুখনিয়ে বিড়বিড় করে বলে,
_যার বিয়া তার খবর নাই পাড়া পড়শীর ঘুম নাই??।যতসব।

রাইফা মাথায় হাত দিয়ে চুপচাপ বসে আছে। তার নিজের জিবনের ছন্দ সুর কেটে গেছে। সব কিছু বিষাক্তময় লাগছে।কাছে থাকার মানুষ গুলোকে ও আজ বড্ড অচেনা লাগে।রাইফার দরজায় মিসেস হাবিবা নক করে বলে,
_ আসবো বউমা।
রাইফা বউমা শব্দটি শুনে চকিতে তাকায়।নিজের মুখে বিড়বিড় করে দুই বার উচ্চারণ করে ব- উ – মা।
_ কিরে মা আসবো।
_ দাঁড়িয়ে আছ কেন মামনি। আমার রুমে আসতে তোমার অনুমতি নেওয়া লাগে বুঝি।

মিসেস হাবিবা রাইফার পাশে এসে বসে তার হাতে কয়েকটা গয়নার বাক্স।রাইফার গালে হাত দিয়ে মিসেস হাবিবা বলে,

_কিরে মা কেমন আছিস।
_ এইতো যেমন থাকার কথা।তেমনি আছি।
_এভাবে বলছিস কেন মা।আমি জানি বিয়েটা একটু ঝামেলা ভাবেই হয়েছে তবে সত্যিটা হলো তোর আর আহাদের বিয়েটা তোদের ছোট বেলা থেকেই ঠিক।
_ তোমারা কেউ তো আমাকে আগে কখনো এইসব বেপারে বলো নি।হুট করে সবাই এখন বলছো বিয়েটা ছোট বেলা থেকে ঠিক।নাকি এগুলো লোক দেখানোর জন্য বলছো।
_ এভাবে বলিশ না মা।মামনিকি তোকে কখনো কোন বিষয়ে মিথ্যা কথা বলেছি।আমার ছেলেকি তোকে খারাপ রাখবে।আমি কি তোকে কম ভালোবাসবো।আমি চাই যত তাড়াতাড়ি পারি তোকে আমার ঘরে তুলবো।

মিসেস হাবিবা রাইফার আর কোন কথা না শুনে হাতে থাকা গয়নার বাক্স গুলো খুললো।তিনি দুটো বালা বের করে রাইফার হাতে পড়ান আর বলেন,
_ দেখ রাইফা বালা দুটো কিন্তু সব সময় হাতে রাখবি।তোর দাদিমা এই বালা গুলো আমায় দিয়েছিল।

রাইফা বালা গুলোকে বারবার নাড়িয়ে চাড়িয়ে দেখছে, আর মনে মনে বলে,
_ আল্লাহ, আমি এই গুলো কেমনে হাতে রাখবো কি ভারী।

মিসেস হাবিবা রাইফার গলায় একটি হার দিয়ে বলে,
_ এই হারটি গড়ে ছিলাম কিন্তু তোর জন্য।দেখতো মা পছন্দ হয় কি না।
রাইফা খেয়াল করে এই হারটিও বেশ ভারী।নিখুত কাজ করা।দেখতেও বেশ দারুন।
_ হ্যা মামনি পছন্দ হয়েছে।(তুতলিয়ে)কিন্তু তুমি এসব আমায় দেখাচ্ছ কেন।

রাইফার কথা শুনে মিসেস হাবিবা ভ্রু কুচকে ফেলেন,
_ তোকে দেখাচ্ছি মানে তুই আমার ছেলের বউ তোকে দেখাবো না তো কাকে দেখাবো।
_ মামনি আমায় ক্ষমা করো।তোমার ছেলেকে আমি কখনো ওই চোখে দেখিনি।ঝামেলা মিটে গেলে আমি…………….

রাইফা কথা শেষ করার আগেই মিসেস ডালিয়া ঘরে ডুকে, রাইফার বলা কথা গুলো শুনে তিনি রেগে যান।তিনি রাইফার চুলের মুঠি টেনে বলে,

_ কি বললি, লজ্জা করে না তোর। নিজের মান সম্মান তো কাল ডুবিয়েছিস সাথে আমাদের টাও এখন আবার এইসব কথা বলছিস তোর সাহস তো কম না(দাতে দাত চেপে)

_মা ছেড়ে দাও লাগছে আমার(কান্না করতে করতে রাইফা)

_ডালিয়া ছেড়ে দে মেয়েটাকে এমন করছিস কেন।আসতে আসতে সব ঠিক হয়ে যাবে।

মিসেস ডালিয়া রাইফাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেন।আর রুম থেকে চলে যান।
মিসেস হাবিবা ও রুম থেকে যাওয়ার জন্য দরজার সামনে গেলে রাইফা বলে,
_ মামমি দাঁড়াও।এই বালা আর হার টি নিয়ে যাও যদি কখনো তোমার ছেলের উপযুক্ত বউ হতে পারি তবেই এই গুলো আমায় দিও।(ফুঁপাতে ফুঁপাতে)

রাইফার কথা শুনে মিসেস হাবিবা রাইফার মাথায় হাত দিয়ে মুচকি হেসে বলেন,
_ তুই ই আমার ছেলের বউ। আর বউ থাকবি।তুই যেতে চাইলেও আমার ছেলে কখনো তোকে যেতে দেবেনা।

আর কোন কথা না বলে তিনি রুম থেকে চলে যান
এদিকে রাইফা হাটু মুড়ে আবার নিরবে চোখের জল ফেলে।একটু পর রাইফার একটি মেসেজ আসে,মেসেজটি ওপেন করতেই রাইফার চোখ মুখের ধরন পালটে যায়।মেসেজ টি এসেছে সেই অচেনা নাম্বার থেকে। রাইফা মেসেজটি পড়া শুরু করে,
_ বিয়েটাও করে নিলে তুমি। তোমার এতো বড়ো সাহস আসলো কোথা থেকে।??।তুমি কি ভেবেছো আমি খবর পাবো না।তোমার সব খবর আমি রাখি মনপাখি।দেখি তুমি আহাদের সাথে কি করে সংসার করো।আমি তোমাদের প্রতিটি ধাপে বিপদ হয়ে দাড়াবো মনপাখি।আগে আহাদের ব্যবস্থাটা করি??

রাইফা মেসেজটি পড়েই ঘামতে থাকে। তবুও আবার চুপ হয়ে যায়।যা হওয়ার তা হয়েছে। ভাগ্য তো সে নিজের হাতে তৈরি করেনি যে সব কিছু তার মতো হবে এই বিয়েটাও সে চায় নি।নিরবে চোখের জল ফেলা ছাড়া তার কাছে আর কোন উপায় নেই।রাইফা আগের মতো আবার ফোপাঁতে থাকে।একটু পর রাইসা তার রুমে আসে।

_ কিরে আপু এভাবে বসে আছিস কেন।কি হয়েছে একটু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা কর।একটু আগে দেখেছি তোর রুম থেকে বেরিয়ে জিজুও গাড়ি নিয়ে চলে গেল।
_ তুই এখান থেকে যা রাইসা।আমার কিছু ভালো লাগছে না।

রাইসা আর কোন কথা না বলে মন খারাপ করে চলে যায়।

????
সন্ধ্যা ছয়টা রাইফা আগের মতোই আছে । আহাদ এখনো বাড়ি ফিরেনি।আগেতো আহাদের সাথে শিহাব ও যেতো কিন্তু এখন যাওয়ার সময় শিহাবকেও নেয় নি।তার উপর ফোন বন্ধ এতে সবার চিন্তা বেড়ে গেল।দুই পরিবারের মাঝেই দম বন্ধ কর পরিস্থিতি।আহাদ বাড়ি ফিরলো রাত ৮ টায়।তার হাতে ব্যান্ডেজ করা।তাকে দেখেই মিসেস হাবিবা দৌড়ে এলেন।
_ কিরে বাবা তোর কি হয়েছে। ( কান্না করতে করতে)
_আহা মা ব্যাস্ত হয়ো না তেমন কিছু না।
_ বলছিস তেমন কিছু না পুরো হাতটাই তো ব্যান্ডেজ করা।
শিহাব আর সামাদ ও আহাদ কে দেখে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে,
_ আহাদ কিভাবে হলো তাড়াতাড়ি বল।আর তুই এই ভাবে কেন পাগলের মতো তখন বেরিয়ে গেছিলি(শিহাব)
আহাদ কিছুটা দম নিয়ে বলে,
_আসলে আমি তাড়াতাড়ি বাড়ি আসার জন্য ওই নিরিবিলি রাস্তাটা ধরি তখন ছিনতাই কারি আক্রমণ করে।(দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে)
_ এখন কেমন লাগছে তোর।(মিসেস হাবিবা)
_আমি ঠিক আছি আর মা তুমি এত কেদোনাতো।আমি ঘরে যাচ্ছি।
_ চল আমি তোকে হেল্প করি(শিহাব)
_ হুম
????

রাইফা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।রাত হয়ে গেছে। আজ তার বাবার সাথে একবারো দেখা হয় নি।নিজেকে এই ঘরে আবদ্ধ করে রেখেছে সে।রাইসা এসে খবর দিয়ে গেল আহাদ নাকি এখনো বাড়ি ফিরেনি। অন্য দিকে লোকটি তাকে মেসেজে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।সব মিলিয়ে জীবনের এই মূহুর্তবগুলো তার কাছে বিষাক্ত লাগছে। তার ফোনে আবার মেসেজ আসে সেই অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজে লেখা ছিল,

_আজ আহাদের সাথে যা করেছি তা একটু উদাহরণ দেখালাম।বাকিটা তো আসতে আসতে করবো। দেখি আহাদ কে তুমি আমার হাত থেকে কিভাবে বাচাও।তোমাকে তো আমার করবো মনপাখি।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।

রাইফা মেসেজটি পড়েই।তার পুরো শরীর ঘামতে থাকে।রাইফা বিড়বিড় করে বলে
_ কি করেছে লোকটা আহাদ ভাইয়ের সাথে। আহাদ ভাইয়ের আবার কিছু হয় নি তো। চাই না আমি আমার জন্য আহাদ ভাইয়ের কিছু হোক।

রাইফা এইসব ভাবতে ভাবতেই রুমে রাইসা প্রবেশ করে,
_ জানো আপু আজ কি হয়েছে ( জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতেই )
_ ক…..কি হয়েছে।
_ আহাদ ভাই বাড়ি আসার সময় ছিনতাই কারিরা আহাদ ভাইয়ের হাতে জখম করে।আঘাত টা নাকি মারাক্ত হয়েছে। শিহাব ভাই একটু আগে আমায় জানালো।
রাইফা রাইসার সামনে চুপ করে থাকলেও মনে মনে ভয়ে ঘুটিয়ে গেছে।
???
_ কিরে শিহাব তোর ভাবির কি খবর।
_ নারে ভাবি তো আজ রুম থেকেই বের হয় নি।রাইসার কাছ থেকে শুনেছি তুই যে যাওয়ার আগে যা খাইয়ে গেসিস তাই খেয়েছে আর পুরো দিনে কিছুই মুখে তুলে নি।
_ কি বলিস। ভেরি বেড তোরা আমার বউ টাকে তো না খাইয়ে মেরে ফেলবি।আচ্ছা শুন আজ আমি রুমে থাকবো না। তুই আজ আমার রুমে থাকবি যেন সবাই বুঝে তুই আর আমি একই রুমে আছি।
_ আচ্ছা ঘুমাবো। কিন্তু কেন।
_আরে বিয়ের পর এটাই তো প্রথম রাত। আর প্রথম রাতে কি হয় জানিস না।
_ আরে ভাই ভাবি কি তোকে মেনে নিয়েছে নাকি।
_সে না মানলে কি হয়েছে আমি তো মানি।আর কিছু উপহার ও তো দিতে হবে নাকি।
_ তাই তুই সকালে বাড়ি থেকে এভাবে বেড়িয়েছিস।
_ হুম৷
_ আচ্ছা আমি রাইসা কে বলে ওই দিকটা মেনেজ করে নেব।
_ ইসসস রাইসার সাথে বুঝি এই কয় দিনে ভালোই ভাব হয়েছে।(অভিনয় করে)
_ এইতো একটু একটু।(লজ্জা পেয়ে)
_ হুম তাড়াতাড়ি মনের কথা বলে দে।পরে আমার মতো আবার কাহিনি করে বিয়ে করতে হবে।
আমার মতো ভাগ্য যেন কারো না হয়।

চলবে…….
(ভুল গুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here