আমার_মনপাখি পর্ব – ২৩
#পলি_আনান
মিষ্টি কিছু মূহুর্ত, অনূভুতি, তিক্ত কিছু ক্ষন নিয়ে কেটে যায় আরো ১ মাস।এই একমাসে আহাদ সবসময় রাইফার পাশে পাশে থেকেছে।আহাদের ভালোবাসায়, যত্নে রাইফার প্রতিবারি মনে হয়েছে,
_আমার জিবনের সবচেয়ে বড় ভুল আহাদ ভাইকে না বুঝাতে পারা। তার অনুভূতি গুলোকে শ্রদ্ধা না করা।প্রতিবারি আহাদ ভাইকে দূরে দূরে রেখেছি।যদি আগে থেকেই তার অনুভূতি গুলো বুঝতাম তবে আমার জীবনে এতো ভূল মানুষ গুলোর আগমন ঘটতো না।এতো বাজে মূহুর্ত গুলো জীবনে আসতো না।আহাদ ভাই সত্যি আমায় ভালোবাসে।
তবে সেই অচেনা লোকটির হুমকি থামেনি।এই একমাস রাইফাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে সে।রাইফাকে যত দিন হুমকি দিত তত দিন আহাদ বিভিন্ন আঘাত নিয়ে বাড়িতে আসতো। কখনো হাতে ছুরি দিয়ে পোঁচ দেওয়া।তো কখনো রাতে রাস্তায়৷গাড়ি আটকে গাড়িতে আক্রমণ করা।বিভিন্ন বিপদের শিকার হতে হয়েছে আহাদ কে।রাইফা সব জেনেও নেএবারি বিষর্জন দেওয়া ছাড়া তার কোন উপায় নেই।লোকটি না আসছে রাইফার সামনে না যাচ্ছে দূরে সরে।রাইফার মাঝে মাঝে মনে হয় সে দূরে কোথাও চলে যেতে।যেখানে গেলে কেউ তার খোজ পাবেনা।তার জন্য অন্য এক নির্দোষ মানুষের ক্ষতি হতে পারে না।
রাইফা আহাদকে যতই মন থেকে কাছে চায় না কেন। সামনে তা প্রকাশ করেনা।সবসময় আহাদের থেকে দূরে দূরে থাকে।কিন্তু আহাদ চায় এই দূরত্ব কাটিয়ে প্রেয়সীকে কাছে পেতে।
এদিকে এই এক মাসে মীমের বিয়ে সম্পূর্ণ হয়।মীমের বিয়েতে উপস্থিত থাকে, রাইফা এবং আহাদের বাড়ির সবাই।মীমের বিয়েতে আহাদ রাইফার খুনশুটি লেগেই ছিল।তাদের সাথে ছিল শিহাব আর রাইসা।রাইফার অন্যান্য বন্ধুরা কলি,আসিফ, ইমন। তারাও যুক্ত হয়েছে মিমের বিয়েতে।সবার সাথে গল্প আড্ডায় দিন গুলো ভালো কেটেছে তাদের।
অনিকের সাথে রাইফার বহুবার দেখা হয়েছে তবে সে বারবার পাশ কাটিয়ে গেছে।কিন্তু মনে মনে অনিককে ধন্যবাদ দেয় কেননা তার ওই রাতের ঘটনার কারনে আহাদ কে তার জীবনে পেয়েছে।
রাইসা আর শিহাবের সর্ম্পক দিন দিন আরো দৃঢ় হতে থাকে।রাইফাকে রাইসা তাদের সর্ম্পকের কথা যানায়।রাইফা যখন শুনে শিহাব অবিবাহিত তখন সামনে থাকা সোফায় দপাস করে বসে যায়।
সে রাইফার দিকে তাকিয়ে বলে,
_ আমি এই কয়দিন খেয়াল করেছি শিহাব তোর বেশ ভালই যত্ন নেয় প্রথমে বিষয়টি সন্দেহ চোখে নিলেও পরে ভাবি ও তো বিবাহিত। কিন্তু তোদের মাঝে যে এতো দিন এগুলো চলছে আমি ভাবতেই পারিনি।
_সরি আপু তোমায় জানাতে দেরি করেছি।আমায় মাফ করে দাও তোমাকে না জানিয়ে আর কিচ্ছু করবো না। প্রমিস(মাথা নিচু করে)
রাইফা আচমকা রাইসাকে জড়িয়ে নেয় আর বলে,
_ দোয়া করি তোরা সুখি হ।আমার মত তো আর ভুল করিস নি।আমি খুব খুশি হয়েছি তোদের কথা শুনে।
_ তার মানে তুমি রাগ করনি আপু।
_দূর বোকা রাগ করবো কেন।
??
সকাল ৯ টা।প্রতিদিনের মতো রাইফার ঘুম ভাঙ্গে। সূর্যের ঝলকে।আড়মড় কাটিয়ে উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়।কিছুক্ষণ পর বারান্দায় দাড়িয়ে মুক্ত আকাশটার দিকে তাকিয়ে থাকে।সাদা নীল মিশ্রণে আকাশটি দেখতে বড্ড মায়াবী লাগছে।বারান্দায় থাকা টিয়া পাখি টার সাথে কিছু সময় খুনসুটি করে রুমে চলে আসে। রুমে এসে ফোন টা হাতে নিতেই সেই অচেনা লোকটির মেসেজ চোখে পড়ে,
_ মনপাখি তোমাকে পাওয়ার রাস্তা পেয়ে গেছি।এতো দিনে আমার সব সপ্ন পূরণ হতে চলেছে।আজ আহাদ একা অফিস যাবে তাই তাকে ট্রাক এক্সিডেন্ট করিয়ে আমাদের পথ থেকে সরিয়ে দেব।আর মাএ কিছু সময়ের অপেক্ষা।
এইটুকু পড়েই রাইফার হাত থেকে ফোনটি পড়ে যায়।সে হাটু মুড়ে বসে মুখে ওরনা চেপে কাদছে।তার বারবার দম বন্ধ হয়ে আসছে তার মনে হচ্ছে কে যেন তার কলিজাটা ছিড়ে ফেলছে।চোখে থাকা কাজল লেপটে গেছে। ঠোঁটে থাকা হালকা লিপ্সটিক ঠোঁটের চারপাশে ছড়িয়ে গেছে।তার মাথার ভেতর সব শূন্য শূন্য লাগছে কি যেন সে হারাতে বসেছে।
_আমি এভাবে ব..বসে আছি কেন আমার.. আমার আহাদ ভাইকে আটকাতে হবে….ওনাকে আজ অফিসে যেতে দেব না… ন্না না কিছুতেই না।
রাইফার যে ভাবা সেই কাজ এক দৌড়ে ছুটে যায় আহাদের বাসায়।রাইফাকে দৌড়তে দেখে মিসেস হাবিবা আর সামাদ হা করে তাকিয়ে থাকে।রাইফা কারো দিকে না তাকিয়ে এক ছুটে চলে যায় আহাদের রুমে।এদিকে সামাদ তাকিয়ে থাকে রাইফার যাওয়ার পানে আর বিড়বিড় করে বলে,
_ মা রাইফা ভাবি এতো ছুটা ছুটি করছে কেন।
_ আমি নিজেও বুঝতে পারছিনা। এই ছেলে মেয়ে দুইটার মনে কিযে চলে বুঝা মুশকিল।
_হুম তুমি ঠিক বলেছো।
_ হয়েছে তোকে আর পাকনামি করতে হবেনা।যা তুই পড়তে বস।(ধমক দিয়ে)
সামাদ আর কোন কথা না বলে নিজের রুমে চলে যায়।
?
এদিকে আহাদ আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখছে সব ঠিক ঠাক আছে কিনা।আয়নার দিকে তাকিয়ে সে লক্ষ্য করে রাইফা তার রুমে ডুকেই দরজা বন্ধ করে দেয়।রাইফার এমন কান্ডে চমকে যায় আহাদ।আয়না থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আহাদ রাইফার দিকে তাকায়। রাইফার এমন বিদ্ধস্ত চেহারা দেখে সে কিছুটা ঘাবড়ে যায়।
_ক.কি হয়েছে বউ এমন অবস্থা কেন তোমার।
_আমি ঠিক আছি। আগে আপনি বলেন আপনি কই যাচ্ছেন।(হাপাতে হাপাতে)
_ তুমি ঠিক আছো মানে তুমি ঠিক নেই। বলো আমায় তোমার কি হয়েছে(অস্থির হয়ে)
_বল্লাম তো আমি ঠিক আছি(চিৎকার দিয়ে)
_ কি হয়েছে বলো আমাকে তুমি।(রাইফার কাছে এগিয়ে)
_আপনি কোথায় যাচ্ছেন(শান্ত দৃষ্টিতে)
_ কেন অফিস।
_ না আজ আপনি কোথাও যাবেন না।
_ কোথাও যাবো না মানে আজ আমার ইম্পটেন্ট৷ মিটিং আছে।কি বলছো তুমি এইসব।
_ আমার জানা মতে আমার থেকে ইম্পটেন্ট ওই মিটিং নয়। তবুও যদি আপনি যান তবে আমি সত্যি সত্যি আত্নহত্যা করবো।
রাইফার কথা শুনে আহাদের রাগ মাথায় চড়ে যায়।আহাদ রাইফার গলায় চেপে ধরে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে দেয়।
_ কি বললে তুমি।তোমাকে পেতে এতো বছর পার করেছি আর তুমি সামান্য কারনে মুখ থেকে এই কথা বের করছো।এতো সাহস আসে কোথা থেকে তোমার।(রেগে)
রাইফার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছেনা।সে কেশেই যাচ্ছে।আহাদ বুঝতে পারছে রাইফার অবস্থা তাই তাকে ছেড়ে দেয়। আর দূরে সরে যায়।আহাদ নিযের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে রুম থেকে বের হতে নিলেই রাইফা আবার পথ আটকে ধরে।
_আমি একবার বলেছিতো আপনি কোথাও যাবেন না।
আহাদ কিছু না বলে রাইফার দিকে তাকিয়ে থাকে।রাইফা এবার আহাদকে অবাক করে দিয়ে আহাদের টাই,শার্ট খুলতে থাকে,
_ আরে কি করছো পাগলী মেয়ে।
_আমি একবার বলেছি আপনি কোথাও যাবেন না মানে না।
_আচ্ছা যাবো না।কিন্তু কেন যাব না তাতো বলো।
রাইফা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না তাই সে আমতা আমতা করে বলে আমি আপনার গান শুনতে চাই আমাকে একটা গান শুনান।
রাইফার কথা শুনে আহাদ একটা বাকা হাসি দিয়ে রাইফাকে কোলে তুলে নেয়।
_আরে কি করছেন আমায় কোলে নিলেন কেন।
_আমি বুঝতে পারছি বউ তুমি আমার সাথে আলাদা সময় কাটাতে চাও।তা এতো নাটক করে বলা লাগে এমনি বললেই তো হয়।
রাইফা কি বলবে বুঝতে পারছে না। তাই তাদের সে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
আহাদ রাইফাকে নিয়ে বারান্দায় যায় আর সেখানে থাকা দোলনায় রাইফাকে বসিয়ে দেয়।রাইফা ও কিছু বলে না সেও চুপচাপ থাকে।তার বর্তমানে কিছু করার নেই, আহাদকে আটকাতে হলে তাকে আহাদের সব পাগলামো মাথা পেতে নিতে হবে।
চলবে……
(ভুল গুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)