আমার_মনপাখি পর্ব – ২৪

0
3490

আমার_মনপাখি পর্ব – ২৪
#পলি_আনান

ছাদের এককোনে দাঁড়িয়ে আছে রাইসা আর শিহাব।ছাদের কিছু ফুলের টব রয়েছে সেখানে রয়েছে বিভিন্ন রকমের ফুল।রাইসা দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর তার মুখোমুখি দাড়িয়ে আছে শিহাব।হালকা হাওয়ায় রাইসার চুল গুলো উড়ছে। আর শিহাব তা কানের নিচে গুজে দিচ্ছে।আর রাইফা শিহাবের কান্ড দেখছে।

_ আমার রাইসারানী এভাবে কি দেখছে।(রাইসার চুল ঠিক করতে করতে শিহাব)
_ তার রাজা কে দেখছে(আনমনে)

রাইসার কথা শুনের মুচকি হেসে শিহাব বলে

_তাই রাজাকে এতো দেখার কি হলো?
শিহাবের হাসিতে ঘোর কাটে রাইসার
_ক..কিছুনা।
_আচ্ছা আমদের কথা বড়িতে যানাবে কবে বলোত।(বিষন্ন মনে শিহাব)
_আরে দূর আপনি।এতো টেনশন করছেন কেন। আহাদ ভাই সব সামলে নেবে।
_ তো টেনশন করবো না আমার বউ টার সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতে হয়।এগুলাকি মানা যায়।তুমিই বলো

শিহাবের কথা শুনে খিলখিল করে হেসে উঠে রাইসা।
_হাসছো কেন আমি কি তোমায় হাসির কথা বললাম
_ তা নয় তো কি বলেন। এতো অদৈর্য্য হচ্ছেন কেন। আহাদ ভাই রাইফা আপুর জন্য কত বছর অপেক্ষা করেছে তা তো যানেন।আর আপনি কিনা একমাসেই অস্থির হয়ে উঠেছেন।

শিহাব মুগ্ধ দৃষ্টিতে রাইসার হাসি দেখছে।এমন সময় নিচ থেকে একটা সুরেলা কন্ঠ ভেসে আসে।
_ মনে হচ্ছে আহাদ ভাই গান গাইছে(রাইসা)
_ হুম আমারো তাই মনে হচ্ছে কিন্তু আহাদতো এসময় অফিসে থাকার কথা।
দুজনের মাঝেই আবার ছড়িয়ে যায় নিরবতা। কারো মুখে কোন কথা নেই।দুজনেই দূজনের চোখের দিকে তাকিয়ে গানটা অনুভব করছে।

❣️❣️❣️
আহাদ বেলকনিতে থাকা দোলনায় বসে রাইফাকে কোলে নেয় রাইফা ও
আহাদের কোলে চুপচাপ ঘাপটি মেরে বসে আছে।
আহাদের হাতে তার প্রিয় গিটার।আজ সে তার প্রেয়সীর উদ্দেশ্য গান ধরবে।
_তবে শুরু করা যাক ( রাইফার চোখের দিকে তাকিয়ে আহাদ)
_হুম।

আহাদ চোখ বুঝে রাইফার গলায় মুখ ডুবিয়ে গান শুরু করে,

?আমার কাছে তুমি মানে সাত রাজার ধন আমার কাছে তুমি মানে অন্যরকম।
আমার কাছে তুমি মানে আমার পোষা পাখি,দিনে রাইতে চোখ বুঝিয়া আমি তোমায় দেখি।
তোমার কাছে হয়তো বন্ধু আমি কিছু না তাইতো তোমার সপ্নে বন্ধু আমি আসি না।
আমি মানে তুমি আর তুমি মানে আমি আমার কাছে আমার চেয়ে বন্ধুতুমি ধামী।?

এই গানটা রাইফার মনে ও নেশা জাগিয়ে দেয়।একদিকে আহাদ তার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিয়েছে এতে আহাদের গরম নিশ্বাস গুলো তার গলায় আচড়ে পড়ছে।আরেক দিকে তার এই নেশা লাগানো কন্ঠে গান।পরিবেশটা যেন আজ উন্মাদ উন্মাদ লাগছে তার কাছে। জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল আহাদকে আগে থেকে কাছে না পাওয়া তা এখন বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে রাইফা।আজ মনে মনে শত বার বার বলছে এই সময় থেমে যাক।আমার জন্য থেমে যাক।না ফুরাক আমাদের এই উন্মাদ সময় টুকু। চলতে থাকুক সারাজীবন।এই মূহুর্তেরা আমাদের রয়ে যাক।এই প্রকৃতি আমাদের হয়ে যাক স্মৃতি হিসেবে।থাকুক না আরো কিছু মূহুর্ত এমন। তোমার ওই তেজি কন্ঠের উন্মাদ করা গান নিয়ে।
কিন্তু সময় কি আর থেমে থাকে সময় টা ঠিকি ফুরিয়ে যায়।
আহাদ গান শেষ করে আগের মতো এখনো চুপচাপ বসে আছে।রাইফা ও নড়াচড়া করছে না। তারো ভালোলাগছে আহাদের উওপ্ত গরম নিশ্বাস।
❣️❣️
রাইফা আর আহাদের মতো আজ উন্মাদ হয়েছে ছাদে থাকা আরেক, দম্পতি। দুজন দুজনকে জড়িয়ে আছে অনেক্ষন থেকে। কারো মুখে কোন কথা নেই। আজ শুধু দুজন দুজনের মাঝে অঅনুভূতি গুলো প্রকাশ করছে।
_ রাইসরানী ও ওও রাইসারানী।(ফিসফিসিয়ে শিহাব)
_হু
_ শুনতে পাচ্ছ আমার কথা?
_হু,
_কি হু, হু করছো আমার কথা তুমি শুনতে পাচ্ছো তো,
_ হু,
_ আচ্ছা বলেই দি তুমি কখনো আমাকে এতো সময় নিয়ে জড়িয়ে ধরোনি তবে আজ এতো সময় পার হয়ে গেল তোমার কোন খবর নেই তাড়ানেই।তার মানে তুমি আমার মাঝে ডুব দিয়েছো,(মজার ছলে মুচকি হেসে)

শিহাবের কথা শুনে রাইসা ছিটকে দূরে সরে যায়।লজ্জায় তার মুখ লাল হয়ে গেছে। মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছেনা
_আরে আমার রাইসা রানী লজ্জায় লাল হয়ে গেছে দেখছি(মুচকি হেসে)

রাইসা কোন কথা না বলে মাটিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।শিহাব রাইসার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে হেচকা টান দিয়ে তার বুকের সাথে লেপটা নেয়।
_এই লজ্জা মাখা মুখ টাই তো দেখতে চাই।তাইতো এতো লজ্জা দি।তুমি লজ্জা পেয়ে আমার বুকে মুখ লুকাবে আর আমি তোমায় আমার বাহু ডোরে আবদ্ধ করবো।(কানে ফিসফিস করে)

শিহাবের কথা শুনে রাইসা শিহাবের সাথে আরো লেপ্টে যায়।কি যেন লজ্জা তাকে কুড়ে খাচ্ছে।
_ সব লজ্জা একদিনে দেখাই ও না কিছুটা ভবিষ্যতের জন্য রাখো(মুচকি হেসে)
❣️❣️
এখনো আহাদ আগের মতো রাইফাকে জাপটে ধরে আছে। রাইফাও চুপচাপ আহাদকে অনুভব করছে।হয়তো ভালোবাসার নেশাটা দুজনের মাঝেই ছড়িয়ে যাচ্ছে।আহাদ রাইফার কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
_ ভালোবাসো তা কি এখনো লুকিয়ে রাখবে নাকি মনের কথা মুখে বলবে।

রাইফা আহাদের দিকে একবার চেয়ে আবার তার বুকে মুখ লুকায়।আহাদ মুচকি হেসে আবার তাকে জড়িয়ে ধরে আর গান ধরে,

,?তোমার মাঝে নামবো আমি তোমার ভেতর ডুব।তোমার মাঝে কাটবো সাতার ভাসবো আমি খুব।তোমার মাঝেই জিবন যাপন। সপ্ন দেখার সপ্ন ভাবার।

?সারা নিশি ভিজবো দুজন চাঁদের ঝরা জলে। (২)সবুজ সুখে করবো কুজন নীল আকাশের তলে।পাজর দিয়ে আগলে রবো তোমায় সারাজিবন।

ছাদে দাড়িয়ে থাকা শিহাব আর রাইসার মাঝেও এই ভালোবাসার রং ছড়িয়ে যায়।দুজন দুজনকে কাছে পাওয়ার সুপ্ত অনুভূতি ছড়িয়ে যায় তাদের মাঝে।ভালোবাসার নেশায় মাতাল হয়েছে ২ দম্পতি।

???

এভাবে কেটে যায় আরো কিছু দিন।অচেনা লোকটির হুমকি এখনো শেষ হয় নি। দিনে দিনে তা বেড়েই যাচ্ছে।। আহাদ আর রাইফার সম্পর্ক এখন বন্ধু সুলভ।অফিস ছাড়া বাকি সময় টুকু আহাদ রাইফার সাথে কাটায়।শিহাব আর রাইসার সম্পকের কথাও বাড়িতে সবাই যেনে যায়। এখন শুধু অপেক্ষা তাদের ২ হাত চার করার।

বারান্দায় দাড়িয়ে ফুলের গাছে পানি দিচ্ছে রাইফা।হাতে থাকা মোবাইলে মেসেজ আসে তার। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে সেই অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ।

_ তুমি আমার নাহয় ওই আহাদের। আজ এর শেষ আমি দেখেই ছাড়বো।মনপাখি।

মেসেজ টি পড়ে রাইফা ছুটে যায় আহাদের রুমে। আহাদ তখন ওয়াশমে। রাইফা কিছুটা স্বস্তির শ্বাস ফেলে অচেনা লোকটিকে উওর দেয়,

_আহাদ ভাই আমার ছিল আছে আর থাকবে। কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবেনা।

রাইফার চোখ পড়ে বিছানায় থাকা আহাদের মোবাইলের দিকে।রাইফা মোবাইল হাতে নিতেই তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। অস্পট সরে বলে,
_ এ….টা হতে পারে না।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here