আমার_মনপাখি পর্ব – ২৬
#পলি_আনান
জীবনের মোড় একবার এক দিকে টানে।এইতো কয়দিন আগেও সব ভালোই ছিল।আহাদের প্রেমে প্রথম বার পড়ার ফিলিংস,তার হুট হাট, চুমু খাওয়া,জড়িয়ে ধরা,প্রতিটি কাজে যত্ন। সব মিলিয়ে দিন গুলোতো ভালই ছিল।তবে এই ঝড়টা আবার কেন আসলো।এই রাগ অভিমানে কেটে যায় আরো কিছুদিন।আহাদ বার বার রাইফার সামনে যেত। তাকে আগের মতো ভালোবাসতো কিন্তু রাইফা বিরক্ত বোধ করতো।দূরে দূরে সরে থাকতো।রাইফার আর আহাদের সম্পর্ক কিছুতেই আগের মতো স্বাভাবিক করতে পারছেনা শিহাব আর রাইসা।শিহাব আর রাইসা এক হলেই আহাদ আর রাইফার মেলানোর বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত থাকে।আহাদ ইদানিং খিটখিটে হয়ে গেছে।কারো সাথেই ভালোভাবে কথা বলে না।শিহাবের সাথেও না।তবে শিহাব ব্যাপার টা মেনেজ করে নেয়।রাইফা ইদানিং আরো গম্ভীর হয়ে গেছে। সারাদিন চুপচাপ থাকে।হুট হাট কেদে দেয়।রাইসা যত রাইফাকে দেখে অবাক হয় যে মেয়ের মুখে সবসময় হাসি ফুটে থাকতো আর আজ সেই মেয়ে এতো কাদে।
দুপুর ২ টা, ভেজা চুল গুলো খুলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে রাইফা।তার চোখ বিশাল ওই সাদা আকাশটার দিকে।মনে মনে ভাবছে হাজারো কথার শব্দ মালা।
_আর কতোদিন আহাদ ভাইকে দূরে সরিয়ে রাখবি আপু।(পেছন থেকে রাইসা)
_তোকে এতো পাকামি করতে বলিনি। আমার রুম থেকে যা(পেছনে না তাকিয়ে রাইফা)
_এই এক ধমক আজ কয়েকদিন শুনে আসছি। তুমি এমন কেন আপু আহাদ ভাইয়ের মতো একটা হিরের টুকরো ছেলেকে পায়ে ঠেলে দূর করে দিচ্ছিস কেন।
রাইসার কথা শুনে রাইফা পেছনে ঘুরে তাকায়। মুখে বাকা হাসি ঝুলিয়ে রাইফা বলে
_কাকে হিরের টুকরো ছেলে বলছিস।ওই শয়তান টাকে।
_আপু একদম আহাদ ভাইয়ের নামে উল্টা পালটা কথা বলবেনা।
_ কি উলটা পালটা কথা বলছি।সে এতোদিন আমাকে ঠকায় নি।আমার সাথে মিথ্যা অভিনয় করেনি।আমাকে চাপের মধ্যে রাখেনি তারপর ও তুই ওই আহাদের পক্ষ নিচ্ছিস(চিল্লিয়ে)
_ একদম চিল্লাবানা আপু।আহাদ ভাই যা করেছে তোমার ভালোর জন্যই করেছে।
রাইসার কথা শুনে রাইফা উচ্চ সরে হেসে উঠে,
_কি বললি আমার ভালোর জন্য।আমার ভালোর জন্য করেছে।কি ভালো হয়েছে আমার বল কি ভালো।
_ লজ্জা করা উচিত তোমার আপু।এতো ভালো একজন জিবন সঙ্গী পেয়েও দূরে ঠেলে দিচ্ছ।তোমাকে আমার নিজের বোন ভাবতেও লজ্জা লাগছে।ছিহহ।
_ রাইসা… (ধমক দিয়ে)
_ একদম ধমকাবেনা আপু।সেই ছোট বেলা থেকে আহাদ ভাই তোমায় ভালোবেসে গেছে আর তুমি কিনা বার বার দূরে ঠেলে দিতে।তোমাকে পাওয়ার জন্য সবার শর্তে বিদেশে চলে যায়।
দশটা বছর পরিবার থেকে দূরে ছিল কেন জান তোমাকে পাওয়ার জন্য।অচেনা লোক সেজে তোমাকে চিঠি দিত, হুমকি দিত, মেসেজ দিত কেন জানো তুমি যেন অন্য কোন ছেলের সাথে না জড়াও।এই এক জিবনে কম।ছেলেকে তো নাচাও নি।তারপরও তুমি অনিকের ফাদে পড়লে।।তুমি ভাবোনা কিভাবে তোমার না চাইতেও এতো তাড়াতাড়ি রাতে ঘুম চলে আসে।কারন আমি তোমার খাওয়ারে ঘুমের ঔষধ মেশাতাম।যেন তুমি তাড়াতাড়ি ঘুমাতে পারো।আর আহাদ ভাই তোমার রুমে এসে তোমার পাশে ঘুমাতে পারে।বন্ধু নামের যাদের এতোদিন বিশ্বাস করে এসেছো তারা কি তোমার ভালো চায় একবারো ভেবেছো।কলি,আসিফ, ইমন এরা তোমার নিজের সার্তে ব্যবহার করতো।আমি আর মিম আপু তোমায় কতো বারন করতাম কিন্তু আমাদের কথা তো তোমার কানেই নিতেনা।ওদের সাথে থেকে থেকে তুমি পুরাই বখে গেছ।ওই যে আসিফ আর ইমনে হাত ভেঙ্গেছে আহাদ ভাই।আমি সব যানি আপু সব।আহাদ ভাই বিদেশ থাকতেই আমি তোমার সব কথা আহাদ ভাইকে বলতাম।তুমি কখন কি করছো, কোথায় যাচ্ছ, কার সাথে মিশছ সব খবর।খান বাড়ির গায়ে হলুদের বিষয় টা তোমার সবচে বেশি খারাপ লেগেছে তাই না আপু।কেন যখন সবার সামনে নিজের পিঠ,পেট,বাহু দেখিয়ে চলছিলে তখন খারাপ লাগেনি।লজ্জা করে নি।
নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যর চোখে আকষনীয় দেখতে কারোরি ভালোলাগেনা।আহাদ ভাইয়েরো লাগেনি।
সময় থাকতে থাকতে আহাদ ভাইকে আপন করে নাও। নাইলে কাদতে কাদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেলেও।মানুষ টাকে আর সময় টাকে ফিরে পাবে না।অবশ্য তোমাকে বলে লাভ নেই।আমি যাই কথা গুলো ভেবে দেখিস।
রাইসা আর একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে রুম থেকে চলে যায়। রাইফা পাশে থাকা দোলনায় ধপ করে বসে পড়ে।বাতাসের দাপটে তার চুল গুলো উড়ছে এলোমেলো ভাবে।কিছু চুল মুখে এসে পড়ছে। চুল গুলো রাইফা সরাচ্ছে না।সে ভাবছে গভীর ভাবে ভাবছে।আসলেই কি সে ঠিক করছে নাকি ভুল?
???
পশ্চিম দিকে সূর্যটা লালচে হয়ে গেছে কিছুক্ষন পরেই ডুবে যাবে।বাতাসের দাপটে ওরনা আর চুল উড়ছে রাইসার।শিহাব তাকিয়ে আছে রাইসার কান্না করা মুখটার দিকে তাকিয়ে।চোখ,নাক লাল হয়ে গেছে,চোখের নিচের কাজল লেপটে গেছে, এই মেয়েকে কাদলে আরো বেশি সুন্দর লাগে।
মোহময় লাগে।
_ আর কত কাদবে।(শিহাব)
_ আরো কাদবো,
_ তোমার কান্না দেখে এবার আমিই কেদে দিব।
রাইসা কান্না বন্ধ করে সরু চোখে শিহাবের দিকে একবার তাকায়।আবার কান্না শুরু করে বলে,
_আচ্ছা আপু কেন আহাদ ভাইকে বুঝে না।আহাদ ভাইয়ের দিকে আমার তাকাতেও ইচ্ছে করে না।এই কয়দিনে ওনার শরীরে কি হাল করেছে। দেখছেন না আপনি।আপু এতো খারাপ কেন।
_ তুমি ঠিকি বলেছো।আমারো আহাদের দিকে তাকাতে ইচ্ছে করেনা। বেচারার মনের অবস্থা আমি বুঝতে পারছি।কিন্তু রাইফা এমন উলটা পালটা জিদ নিয়ে আছে কেন বলতো।
_ আপু বোকা সত্যি খুব বোকা আহাদ ভাইয়ের মতো মানুষকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।
রাইসা আবার শিহাবের বুকে মাথা রেখে কান্না শুরু করে।
???
রাত ১১ টা ছাদে নেশায় বুদ হয়ে আছে আহাদ।একের পর এক বোতল গিলেই যাচ্ছে।আর মাঝে মাঝে হু হু করে কেদে উঠছে।শিহাব আহাদ কে খুজতে খুজতে ছাদে আসে ছাদে এসে দেখে এই অবস্থা।শিহাব তাড়াতাড়ি রাইসাকে ফোন করে,
এদিকে ঘুমতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল রাইসা।এমন সময় শিহাব ফোন করে তাকে,
_ হ্যালো রাইসা,
_ হুম বলো,
_আহাদ একের পর এক ড্রিংক করেই যাচ্ছে।আমি কি করবো বুঝতে পারছিনা। বিদেশে ও কখনো এইসব ছুয়েও দেখে নি।কিন্তু এখন পুরো বোতল শেষ করে দিচ্ছে।(অস্থির হয়ে)
_ কি বলছো তুমি আহাদ ভাই, ড্রিংক করছে,(অবাক হয়ে)
_হুম।কখন ও কি করে বসে আমার মাথায় ধরছে না।
_ আচ্ছা তুমি সামলাও আর বাড়ির কেউ যেন বিষয়টা টের না পায়।জানলে সবাই কষ্ট পাবে।
_ হুম, আচ্ছা রাখছি।
রাইসা ওড়না নিয়ে তাড়াতাড়ি রাইফার রুমে যায়।রাইফা চুপচাপ ফোন দেখছে। এমন সময় রাইসা কান্না করতে করতে রাইফার রুমে ডোকে,
_ কি রে কি হয়েছে তুই কাদছিস কেন
_ আপু আ…..আহাদ ভাই ছাদে বসে ড্রিংক করছে।ওনার অবস্থা নাকি খারাপ।(ফুপাতে ফুপাতে)
_ তো আমি কি করবো।
_ দেখ আপু আজ যদি আহাদ ভাইয়ের কিছু হয় তার জন্য কিন্তু তুই দায়ি থাকবি।তোর লজ্জা করেনা আহাদ ভাইয়ের মতো মানুষকে এভাবে দূরে ঠেলে দিচ্ছিস।আহাদ ভাইয়ের মতো কেউ তোকে কখনো ভালো বাসবে না দেখে নিস তুই।কখনো না।তুই তোর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটাকে হারাচ্ছিস মনে রাখিস।
রাইসা আর কোন কথা না বলে কাদতে কাদতে বেরিয়ে যায়।রাইফার মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা হয়।সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।রাইফা মনে মনে সিধন্ত নিয়ে নেয় ছাদে উঠে লুকিয়ে লুকিয়ে আহাদের কথা শুনবে।রাইফার যেই ভাবা সেই কাজ সে ছাদে উঠে গাপ্টি মেরে এককোনায় বসে পড়ে।ঠিক সেই পাশের আপর ছাদে বসে আছে আহাদ সে কাদছে হু,হু করে কাদছে,শিবাব তাকে কিছুতেই সামলাতে পারছে না।রাইফা আড়াল থেকে সব দেখছে।
_আহাদ প্লিজ ভাই এবার ঘরে চল এইসব ছাইপাস আর গিলিস না,
_ এই চুপ কেউ আমাকে ভালোবাসে না কেউ না।
_আমি ভালোবাসি তোকে, তোর পরিবার ভালোবাসে তোকে আর কি চাই তোর বল।
_ রাইফা,,,,,,,,,রাইফা ভালোবাসে না আমায়,(ছলছল চোখে শিহাবের দিকে তাকিয়ে)
_ বাসবে, বাসবে একদিন ঠিকি ভালোবাসবে।
_ কবে বলনা কবে ওর জন্য এতো কিছু করলাম ও কিনা আমায় ভালোবাসেনা।। একটুও না এতো ঘৃন্য করে আমায়,আমার দিকে একবার তাকায় ও না।বিশ্বাস কর ওকে পেলে আমি ওকে আমর ঘরের রানি করে রাখবো।ওকে বলনা আমার কাছে চলে আসতে।
আহাদ আবার কান্না শুরু করে।আহাদের কান্না দেখে শিহাবের মাথা নিচু হয়ে যায়।এমন বিধস্ত অবস্থায় আহাদকে আগে কখনো দেখেনি শিহাব।
আহাদ আবার কাদতে কাদতে বলে,
_ শিহাব ও শিহাব বলনা আমাকে রাইফা কবে ভালোবাসবে বলনা।
আহাদ পরিস্থিতি দেখে রাইফার বুকের মাঝে চিনচিন করে উঠে।রাইফার জন্য আহাদ কাদছে ভাবতেই তার বুকের ভিতর মোচর দিয়ে উঠে।
_আহাদ যে তোকে ভালোবাসে না তার জন্য নিজের জিবনটা এভাবে কেন কাটাচ্ছিস।চল তুই ঘরে চল।
_চুপ একদম চুপ আমি রাইফার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি আমি(চিৎকার দিয়ে)
_ আচ্ছা মানলাম দেখেছিস। এখন তো চল।
_ আমি কিভাবে ওই রুমে যাবো শিহাব। ওই রুমে আমার আর রাইফার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে আমি যাবনা।
_ দেখ তুই চল পাগলামো করিস না।
_আমি পাগলামো করছি না রাইফাকে আমার কাছে এনে দে আমি রুমে যাবো সত্যি যাবো(করুন সুরে)
_আমি রাইফাকে পারলে এনে দিতাম। ওই মেয়ে ভালো না। তোর সাথে টাইপাস করা শেষ তাই বলে এখন তোকে ছেড়ে যেতে চাইছে(নাক ছিটকে)
শিহাবের কথাটা বলতে দেরি কিন্তু আহাদের শিহাবকে আক্রমণ করতে দেরি হয় না।শিহাবের কলার টেনে বলে,
_ কি বললি আমার রাইফা খারাপ।
_ আহাদ ছাড় আমার লাগছে।
_ লাগুক আমি আমার জান দিয়ে ওকে ভালোবাসি আর তুই কিনা ওকে খারাপ কথা বললি।
রাইফা বুঝতে পারে আহাদ এখন হুসে নেই তাই সে তাড়াতাড়ি আহাদদের ছাদে যায়। এদিকে আহাদ পাগলামো করেই যাচ্ছে।
রাইফা ছাদে গিয়ে কাপাকাপা গলায় বলে,
_আহাদ ভাই,
আহাদ রাইফার কন্ঠ শুনে ঠান্ডা হয়ে যায়।
রাইফার কাছে এগিয়ে এসে আহাদ বলে,
_মনপাখি তুমি এসেছো,আমার কাছে।
_ হুম,
শিহাব তাদের কথার মাঝে বলে,
_ ভাবি আপনার স্বামি আপনি সামলান আমি যাই।
শিহাব যেতে নিলেই রাইফা শিহাব কে ডাক দেয়।
_ শিহাব ভাইয়া দাড়ান। ওনাকে ওনার রুমে নিতে সাহায্যে করুন আমাকে.
_হুম অবশ্যই।
শিহাব আর রাইফা মিলে আহাদকে নিচে নামায়।
রাইফা আজ আহাদের রুমে থাকবে বলে সিধান্ত নেয়
আহাদ ও সব পাগলামো বন্ধ করে চুপচাপ রাইফার দিকে চেয়ে আছে।
_কি দেখছেন আপনি আহাদ ভাই,
_ তোমাকে, আগে বলো আমায় ছেড়ে যাবে না।
রাইফা দিদ্ধায় পড়ে যায় কি বলবে বুঝতে পারে না।
_ কি হলো কথা বলছো না কেন।
_আ…আচ্ছা আমি আপনাকে ছেড়ে আর কোথাও যাবো না।
আহাদ রাইফাকে ঝাপটে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।
।কিন্তু রাইফার চোখে ঘুম নেই সে গভীর রাতে ভাবছে ,
_আপনার ভালো থাকার জন্য যেমন আমায় প্রয়োজন ঠিক তেমনি নিশ্বাথ ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমার আপনাকে প্রয়োজন।আমি আপনার মনপাখি হয়ে থাকতে চাই আহাদ ভাই।আপনার মনের পাখি হয়ে বন্ধি থাকতে চাই।
রাইফাও আহাদকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।
চলবে……..
{সবাইকে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা ??}
(আজ কিন্তু সবার মন্তব্য দেখতে চাই।) ??