আমার_মনপাখি পর্ব ২৭(শেষ পর্ব)
#পলি_আনান
সকালের মিষ্টি রোদের ঝলকে ঘুম ভাঙ্গে আহাদের। নিজেকে কেমন আবব্ধ মনে হয় তার। মনে হয় ভারী কিছু তার শরীরে লেপ্টে আছে।এমনিতেই মাথা টা ঘুরছে তার উপর নিজেকে আবব্ধ মনে হচ্ছে তাই চোখ বন্ধ থাকতেও চোখ মুখ কুচকে বিরক্ত প্রকাশ করে সে।কিন্তু নাকে আসে এক নেশা জাগানো ঘ্রাণ । খুব পরিচিত সুভাস। যে সুভাশ পেতে সে আকুল।যে সুভাসের জন্য তার তৃষ্ণা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আজ সেই সুভাসের ঘোর আবার নতুন করে জেগেছে তার মনে। নানান সব কথা আওড়াতে আওড়াতে চোখ খুলে আহাদ।চোখ খুলে যা দেখে তার জন্য বিন্দু পরিমানে প্রস্তুতি ছিল না তার।
_মনপাখি আমার ঘরে, আমার রুমে কি করছে(অবাক হয়ে মনে মনে)মাথাটা এমন ঘুরছে কেন। কি হয়েছে আমার।
আহাদ কালকের সব কথা মনে করার চেষ্টা করলো কিন্তু বেশি কিছু মনে করতে পারলো না।আবার নিজের মনে শত কথা বাদ দিয়ে রাইফার দিকে মন দিল।
_ যেই মেয়ে আমার ধারে কাছে ঘেসে না সেই মেয়ে আমার বুকের উপর ভাবা যায়।
আহাদ বাকি সব কথা বাদ দিয়ে।রাইফার চুলে হাত ভুলাতে থাকে।কপালে দিকে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে কপালে দিতে থাকে অসংখ্যা চুমু।আহাদের প্রতিটি স্পর্শে রাইফা কেপে উঠে।আহাদ রাইফার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে।
_ থাকোনা এভাবে আরো কিছু মুহূর্ত। আমার বুকে মাথা দিয়ে।জেগে গেলে তো আর থাকবে না।লজ্জায় দূরে সরে যাবে।না তুমি তো আমার কাছ থেকে লজ্জায় দূরে সরো না। ঘৃনায় দূরে সর।এই ঘৃনার মাঝে আমি অসংখ্যা রাগ অভিমান দেখতে পাই।আর সেই অভিমানে একচিলতে ভালোবাসা দেখতে পাই।এই এক চিলতে ভালোবাসাই আমি তোমার কাছ থেকে চাই।
আহাদ কথা গুলো ভাবতে ভাবতে রাইফার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দেয়।রাইফা আবার নড়ে চড়ে উঠে। পিট পিট করে চোখ খুলে তার অবস্থান বোঝার চেষ্টা করে।আহাদ যেই দেখে রাইফা চোখ খুলছে সে আবার আগের মতো ঘুমানোর ভাব ধরে।রাইফা আহাদ কে ঘুমন্ত অবস্থায় পেয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।এক মোহময় দৃষ্টিটিতে তাকিয়ে আছে সে আহাদের দিকে।রাইফা এবার নিজের মুখটা আহাদের দিকে এগিয়ে আহাদের কপালে, দুই চোখে, গালে, থুতনিতে চুমু খায়।তারপর শব্দ করে কপালে ভালোবাসার পরশ একে দেয়।রাইফা আহাদের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে উঠতে নিলেই আহাদ রাইফাকে আরো জোরে নিযের সাথে চেপে ধরে।
_ এখন কই পালাচ্ছো হুম?
রাইফা আহাদের কান্ড দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
_ কি দেখছো এমন করে ,দেখো তোমার অবহেলায়,চিন্তায় আমার শরীরের কি হাল হয়েছে। কেন করছো এমন বলোনা। প্লিজ তুমি আমাকে ছেড়ে যেওনা। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। দেখবে একদিন হঠাৎ করে শুনবে আমি আর পৃথিবীতে নেই।তখন কিন্তু শত বার ডাকলেও তোমার মাঝে আর ফিরে আসবো না।
আহাদের কথা গুলো রাইফার কানে গরম শীশার মতো লাগে যেন কান জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। আহাদ কে আর কোন কথার সু্যোগ না দিয়ে রাইফা বলে,
_ আহাদ ভাই আমি আপনাকে ২ দিন সময় দিলাম।এই দুইদিনের ভিতর আমাদের বিয়েটা সেরে ফেলতে হবে।সাথে শিহাব আর রাইসার বিয়েও (সহজ গলায়)
রাইফার কথা গুলো শুনে আহাদের কানে বাজ পড়ার মতো অবস্থা হয়।তার কাছে সব যেন সপ্ন সপ্ন লাগছে।
_কি বললে মনপাখি আরেক বার বলো।(উত্তেজিত হয়ে)
_ আপনি যাই শুনতে পেয়েছেন তাই বলেছি।মানে কাল গায়ে হলুদ আর পরশু বিয়ে।কি পারবেন তো।এই দুই দিনে সব সামলাতে।
_ পারবোনা মানে। তুমি যদি বলতে আজ তবে আজি সব এরেঞ্জ হয়ে যেত।
আহাদের খুশি দেখে রাইফার মনের মাঝেও আলাদা ভালোলাগার সৃষ্টি হয়।হঠাৎ করে রাইফা আহাদের বুকে মুখ গুজে হু হু করে কেদে উঠে।
_ আপনি আমাকে ক্ষমা করতে পারবেন তো আহাদ ভাই।আমি আপনাকে বুঝিনি বার বার কষ্ট দিয়ে গেছি।আর আপনি আমায় ভালোবেসে গেছেন(কেদে কেদে)
_ দূর পাগলি আগের সব অন্যায় মাফ।তবে সামনে থেকে যে অন্যায় গুলো করবে তার কিন্তু একটাও মাফ হবে না, শাস্তি পেতে হবে।আমি আগেই বলে দিলাম।
_ আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো আপনার কথার বাইরে একচুল ও নড়বো না(নাক টেনে টেনে)
_ লক্ষী বউ আমার আর কাদে না।দেখি আমার মনিং কিস টা কই দেও দেখি।
আহাদের কথা শুনে রাইফার কান্না ফুরুত।সে চোখ বড় বড় করে আহাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
_ কি বললেন আপনি(ভ্রু কুচকে)
_ কই কি বলেছি মনিং কিস দিতে বলেছি।
_ চুপ একদম। বিয়ের আগে না।
_ হোয়াট!! । বিয়ের আগে না মানে। বিয়ে তো হয়েই গেছে।
_আবার করবো।নিজের ইচ্ছায় করবো হাসতে হাসতে করবো।তারপর আপনার সকল অধিকার পূরণ করবো কিন্তু বিয়ের আগে এইসব কথা মুখেও আনবে না।
রাইফার কথা শুনে আহাদ উচ্চসরে হেসে উঠে।
_ওলে আমার গুলুমুলু বউ। ঠিক আছে তোমার কথাই রাখছি।
_হুম এবার চুপচাপ ফ্রেশ হতে চলে যান।
আহাদ রাইফার কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে। রাইফা মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে আহাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে।
???
রাইসার খুশি যেন আজ আকাশে বাতাসে।কিছুতেই লাফানো থামছেনা।যখন থেকে রাইফার কাছ থেকে শুনেছে শিহাব আর তার বিয়ে ২ দিনের মধ্যে। রাইসা চুপিচুপি শিহাবের রুমে প্রবেশ করে।শিহাব উপুর হয়ে শান্তি তে ঘুমাচ্ছে।
_এই ছেলে এখনো ঘুমায়।আর আমি খুশিতে ঘুম কি জিনিস তাই ভুলে গেছি।
রাইসা রুমের দরজা বন্ধ করে শিহাবের মাথার পাশে বসে।তার পর শিহাবের কানের সামনে মুখ নিয়ে, জোরে বলে,
_কুওওঅঅঅঅঅঅ
রাইসার কান্ডে শিহাব ধরফরিয়ে ওঠে।
_ক কে…কে (পাশে তাকিয়ে)
_ আমি গো আমি তোমার হবু বউ।
শিহাব রাইসার কথা শুনে ঘুম উড়ে যায়।
_ ভুতের মুখে রাম রাম।কি বলছো তুমি হঠাৎ কি হয়েছে তোমার।
_ দূর আমার কিচ্ছু হয়নি।তোমাকে একটা খবর জানাতে এলাম।
_ কি খবর(কপাল কুচকে)
_আহাদ ভাই আর আপুর দুই দিনের মধ্যে বিয়ে।
_ কি।কি বললে তুমি। ভাবি রাজি হয়ে গেছে।
_হুম।আরেক টা কথা আছে(লজ্জা পাওয়ার ভান করে)
_ কি খবর।
_ তাদের সাথে আমাদের ও বিয়ে।
_ কি?!!কি বললে তুমি আমার তো বিশ্বাসী হচ্ছে না। এতো খুশির খবর পাই কেন আজ বলতো।আমার তো খুশিতে নাচতে মন চাইছে।
_ আচ্ছা আমার না তবুও একটা চিন্তা রয়েগেছে।
_ কি চিন্তা (ভ্রু কুচকে).
_ আচ্ছা রাইফা আপুর মতো আমার বিয়েটাও যদি ঠিক হয়ে থাকে। মানে আমি কি বলতে চাইছি তুমি বুঝতে পারছতো।
শিহাব আর কোন কথা না বলে রাইফাকে একটানে টান দিয়ে নিজের বুকে এনে ফেলে।আর শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে।
_ একদম উলটা পালটা কথা বলবেনা।তুমি শুধু আমার মানে আমার।আর চিন্তা নেই আহাদের উপর আমার ভরসা আছে দেখবে ঠিকি মেনেজ করবে।
_ হুম,তাই যেন হয়।
???
মির্জা বাড়ির বসার ঘরে বসে আছে আহাদ এবং রাইফার পরিবারের সবাই।আর এককোনে দাঁড়িয়ে আছে রাইসা আর রাইফা।রাইসা ভয়ে ঘেমে একাকার। তার কপাল দিয়ে বিন্দু বিন্দু গাম চিক চিক করছে।
_ আরে বোন এতো ভয় পাচ্ছিস কেন। দেখবি বাবা মা রাজি হবে(রাইফা)
_ না তবুও যদি না হয়।(চিন্তিত মুখে)
_ এই চুপ করতো তুই বেশি কথা বলিশ।
রাইসা আর কোন কথা না বলে মনে মনে আল্লাহ কে ডাকে।
_ আংকেল আমি যা বলার সরাসরি বলি আজও বলছি আসলে আমি চাচ্ছিলাম আমাদের বিয়েটা আগামী দুই দিনে সেরে ফেলতে।
আহাদের কথা শুনে মি.জহির একবার মিসেস ডালিয়ার দিকে তাকান।আহাদের বাবা মি.ওয়াহিদ আহাদের কথা শুনে চমকে যান।
_ কি বলছিস কি তুই এই দুইদিনে বিয়ে। হঠাৎ এই সিধান্ত কেন নিলি তুই।(মি.ওয়াহিদ)
_ বাবা আমি যা বলছি ভেবে চিন্তেই বলছি।
_ কিন্তু বাবা আহাদ আমাদের ও একটা প্রস্তুতি আছে হঠাৎ বললে তো বুঝতেই পারছো।(মি.জহির)
মি.জহিরের কথার সাথে তাল মিলিয়ে আহাদের মা বলে,
_ হুম ভাইজান ঠিকিতো বলেছে তোর আবার কি হলো, হঠাৎ এই খবর নিয়ে আসলি কেন আহাদ।
_ মা আমি ভেবে চিন্তেই নিয়েছি। যা যা শপিং লাগবে,দাওয়াতের কাছ টাও আজি সেরে ফেলবে। আমার যা বলার আমি বলেছি। বাকি টা তোমাদের হাতে।
পরিবারের সবাই সবার কথার মাঝে ব্যস্ত। দাদিমা রাইসা আর শিহাব কে বার বার পরখ করছে।কেননা তাদের দুজনের ঘেমে একই অবস্থা।শিহাব আহাদের হাত খামচে বলে,
_ কিরে ভাই আমাদের কথাটা কেন বললিনা। তুই না বলেছিস আমাদের বিয়েটা ও এই দুইদিনের মধ্যে দিবি(অস্থির হয়ে)
_ আরে দাড়ানা সবে তো একটা শক দিলাম।এইটা কাটিয়ে উঠুক তারপর তোদের টা বলবো।
_তার মানে আমাদের বিয়ে এই দুই দিনে হবে না।
_ আমি কি একবার ও এই কথা বলেছি।
_ উফফ তুই যা বলার সরাসরি বল না।
এভাবে কেটে যায় আরো দশ মিনিট। সবাই সবার কথার মাঝে ব্যস্ত।এমন সময় আহাদ সবার উদ্দেশ্য বলে,
_ আমার কথা তো শেষ হয় নি আরো আছে।
এবার সবাই আহাদের দিকে তাকায়।
_আমার কথা হলো। ওই দিন দুটো বিয়ে হবে।
আহাদের কথা শুনে সবার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম।
_ দুটো বিয়ে মানে কি বলছিস আহাদ(মি.জহির)
_ হুম আংকেল দুটো বিয়ে।
_ কিন্তু কার কার (মিসেস ডালিয়া)
_ আচ্ছা তা পরে বলবো। এবার সবাই আমাদের শিহাবের দিকে তাকাও তো।
সবাই একসাথে শিহাবের দিকে তাকায়। যেন সে চিড়িয়াখানার চিড়িয়া।শিহাব আহাদের কান্ডে ভড়কে যায়।সে সবার দিকে তাকিয়ে হাসার অভিনয় করে।কিন্তু হাসি তার মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।তার নিজের থেকে নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।সে ঘেমে একাকার।সবার কাহিনী দেখে আহাদের দাদিমা মুচকি মুচকি হাসছে।
_ সবার দেখা হয়েছে। আচ্ছা এবার আসল কথায় আসি।শিহাব একটা মেয়েকে ভালোবাসে।শিহাবের পরিবার বলতে শুধুই আমি আর কেউ নেই। এখন কথা হলো শিহাব ইচ্ছে করলে মেয়েটাকে বিদেশ নিয়ে যেতে পারে,বা দেশেও বাড়ি করতে পারে,ফ্লাট কিনতে পারে,কিন্তু মেয়েটা তো তার পরিবার ছেড়ে যাবেনা। আমি ও শিহাবকে ছাড়বো না।
আহাদের কথার মাঝে ফোড়ন কাটলেন মি.ওয়াহিদ,
_ শিহাবকে ছাড়বে কে আমরা তো ছাড়বো না। আমার দুই ছেলের মতো শিহাব ও আমার এক ছেলে।
এবার রাইফার বাবাও সহমত জানালেন,
_ ঠিক কথা আমরা কেউ ওকে ছাড়বো না। এই কয়দিনে আমাদের চোখের মনি হয়ে ওঠেছে।তাছাড়া রাইফার বিয়ে হয়ে গেলে বাড়ি ফাকা ফাকা লাগবে।তাই শিহাবের বউ আমাদের ঘরেই থাকবে।
সবার মতামত দেখে আহাদ হাসছে সাথে তার দাদিমা। আর শিহাব তো পুরাই অবাক।সবাই তাকে এতো ভালোবাসে।আহাদ তার দাদিমার কানের কাছে গিয়ে বলে,
_ দাদিমা তুমি হাসছো কেন,
_ তুই যে কারনে হাসছি আমি ও তাই হাসছি।।
_ মানে (অবাক হয়ে)
_ মানে শিহাব আর রাইসার বিয়ে তাই তো।
_ আরে বাহ তুমি তো সবই যানো।
_ আমি খেয়াল করেছি গত কয়দিন শিহাব আর রাইসার বিষয় টা।
_ এখন তুমি বলো বিয়ে কি দেব ওদের।
_দিবিনা মানে দিয়ে দে শিহাব ও ছেলে ভালো। আমার অমত নেই।
_ থাংকু লেডি। (মুচকি হেসে)
রাইসা আর রাইফা অবাক হয়ে আহাদের কান্ড দেখছে।
আহাদ এবার গলা খাকিয়ে বলে,
_ আচ্ছা এবার বলি মেয়েটা কে,
_ অভিনয় না করে বলতো (মিসেস ওয়াহিদা)
_ আচ্ছা তোমরা সবাই একবার রাইসার দিকে তাকাও তো।
এবার সবাই রাইসার দিকে তাকায়। রাইসা নিজেকে আড়াল করতে রাইফার পিছনে লুকিয়ে পড়ে।
এবার আহাদ সবার উদ্দেশ্য বলে,
_সব কিছু আমি ব্যবস্থা করে দিয়েছি বাকি আসল কথা টা শিহাব বল।
শিহাবের মাথায় যেন বাজ পড়ে। সে থতমত খেয়ে আহাদের দিকে তাকায়।আহাদ তাকে চোখ ইশারা করে বলার জন্য।আহাদ এবার চোখ রাঙ্গিয়ে শিহাবের কানের কাছে গিয়ে বলে,
_শালা প্রেম করবি আর সাহাস করে বলতে পারবি না তা তো হবে না। তুই বলবি তোর কথা আমি না।
শিহাব এবার ধিদ্ধা ধন্দে পড়ে যায়।সোফা থেকে দাঁড়িয়ে আহাদের বাবা মায়ের সামনে ধাড়ায়।তারপর চোখ বন্ধ করে বলা শুরু করে,
_ আপনারা জানেন আমার পরিবার বলতে আহাদ ছাড়া কেউ নেই।কিন্তু আপনাদের মাঝে এসে আমি পরিবারের ভালোবাসা পেয়েছি।আপনারা আমার বাবা মায়ের মতো।তাই আমার পরিবারের কাছেই তো আমি আমার ভালোবাসার মানুষটার কথা জানাবো।কি আব্বু আম্মু ঠিক বলেছিতো(আহাদের বাবা মায়ের উদ্দেশ্য)
শিহাবের কথা শুনে আহাদের বাবা মায়ের মনের মাঝে প্রশান্তির ছোয়া ছেয়ে যায়।
শিহাববের কান্ড দেখে আহাদ মনে মনে বলে,
_ আমি জানতাম আমি ড্রামাবাজ এখনতো দেখি এটা আমার থেকে বেশি ড্রামা বাজ।দেখি আর কি কি করে(মনে মনে)
শিহাব আবার বলা শুরু করে,
_ আমি রাইসাকে আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে পেতে চাই আব্বু আম্মু। আপনাদের মতামত আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সবাই অবাক হয়ে একবার রাইসার দিকে আরেক বার আহাদের দিকে তাকায়।
মিসেস হাবিবা মুচকি হেসে বলে,
_ আমাদের কোন আপওি নাই বাড়ির মেয়ে বাড়িতে থাকবে এতে আমরা খুশি।কি ভাইজান আপনারা রাজিতো(রাইসার বাবার উদ্দেশ্য)
_ আমরাও রাজি (মিসেস ডালিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে)
_ হ্যা শিহাব কে আমদের চেনা যানা ছেলে আমাদের কোন সমস্যা নেই।
দুই পরিবারের মুখেই তৃপ্তির হাসি।শিহাব সবার আড়ালে রাইসাকে চোখ মারে আর রাইসা লজ্জা পেয়ে রাইফার পিছনে নিজেকে আড়াল করে।
????
সারা বাড়ি জুড়ে আজ হইহই অবস্থা।আজ শিহাব -রাইসা আর আহাদ রাইফার গায়ে হলুদ। সকাল থেকে যোগ দিয়েছে মিম,ইমন, আসিফ,কলি।তারা সকাল থেকে পুরো বাড়ি মাতিয়ে রেখেছে। সকাল থেকে ব্যস্ত সময় পার করছে সবাই।সন্ধ্যা থেকে অথিতীরা এসে কানায় কানায় ভরে গেছে। অনুষ্টান শুধু হওয়ার কিছুক্ষন আগে রাইফা নিজের রুমে সেজে বসে আছে। পুরো রুম ফাকা।এমন সময় আহাদ বেলকনি দিয়ে রাইফার রুমে প্রবেশ করে।রাইফা আয়নার সামনে দাড়িয়ে শাড়ি ঠিক করছে।আহাদ নিজের পিছনে হাত লুকিয়ে রাইফার পেছনে এসে দাঁড়ায়।রাইফা আয়নায় আহাদকে দেখে চমকে উঠে। তাড়াতাড়ি গাড় গুরিয়ে আহাদকে দেখে বলে,
_ আপনি এখানে কেন।(চমকে)
_ কেন আমার আসা কি নিষিদ্ধ নাকি।(ভ্রু কুচকে)
_ ন..ন্না তা কেন হবে।(হকচকিয়ে)
_ তাহলে এই কথা বললে কেন (রাইফার দিকে এগোতে এগোতে)
_ এমনি,আপনি এগোচ্ছেন কেন(পিছাতে পিছাতে)
_ তুমি পিছাচ্ছ কেন (বাকা হাসি দিয়ে)
রাইফার পিঠ এবার দেয়ালে ঠেকে যায়।রাইফা কাদো কাদো মুখ করে আহাদের দিকে তাকায়। আহাদ বাকা হেসে বলে,
_ কি হলো তুমি পিছাচ্ছ না কেন।
_আহাদ ভাই এমন কেন করছেন।(কাদো কাদো মুখ করে)
_ কেমন করছি(ভ্রু কুচকে)
_ দেখি সরুন। আমাকে এখন গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে ডাকবে।অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে তো।
_ তাই নাকি এতো তাড়া কেন তোমার।
রাইফা আহাদের হাবভাব বুঝতে পারে না। তাই সে চুপচাপ আহাদের চোখের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করে।আহাদ রাইফার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
_ আমার বউ কে প্রথম হলুদের ছোয়া আমি দিবো।অন্য কেউ কেন দিবে।
_ কি! আপনি কি বলছেন এগুলো।আপনি কেন আমায় হলুদ লাগাবেন।
_ কেন আমি হলুদ লাগাতে পারবো না। (ভ্রু কুচকে)
_ না ঠিক তা না।
_ তাহলে কোনটা (সন্দেহ চোখে তাকিয়ে)
_ উপপ আপনাকে আমি এতো বোঝাতে পারবো না।
_ আমি বুঝতে চাই ও না।
আহাদ এবার পিছন থেকে হাত বের করে রাইফার গালে আলতো করে হলুদ লাগিয়ে দেয়।রাইফা চমকে উঠে আহাদের স্পর্শে।আহাদ মুচকি হেসে রাইফার পেটের সাইডে হালকা হলুদ ছুয়ে দেয়।রাইফার পুরো শরীর জুড়ে শিহরন বয়ে যায়।আহাদের প্রতিটি স্পর্শে সে কেপে উঠে।
_ তুমি এমন কাপছো কেন(বাকা হেসে)
_ ক… কই কাপছি (থতমত খেয়ে)
_ না আমি দেখছি তুমি কাপছো। আচ্ছা থাক তোমাকে আর জ্বালাবো না।হলুদ টা মুছে তৈরি থেকে।
আহাদ এবার রাইফার কানের সামনে এসে বলে,
_ সব কাপাকাপি বন্ধ কাল হবে(ফিসফিসিয়ে)
রাইফা অবাক হয়ে আহাদের দিকে তাকিয়ে থাকে আর আহাদ বারান্দায় গিয়ে পেছন থেকে রাইফাকে চোখ মেরে বলে,
_ বাই সুইটহার্ট।
আহাদ চলে যায় কিন্তু রাইফা অবাক হয়ে দাড়িয়ে থাকে মূর্তির মতো।
???
খুনশুটি,বিভিন্ন রসিকতার মাঝে শেষ হয় গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান। গভীর রাত রাইফার আর রাইসার চোখে ঘুম নেই দুই বোন আজ একসাথে শুয়েছে।বিভিন্ন কথায়, হাসি তামাশায় শেষ রাত পেরিয়ে যে ভোর হয়ে গেছে তাদের খবর নেই।
অবশেষে এসে গেল সেই মূহুর্ত।যার হাজার বছর প্রতিক্ষায় ছিল আহাদ।আজ আহাদ আর রাইফার বিয়ে সাথে রাইসা আর শিহাবের।
তাদের বিয়ে টা ধুমধাম ভাবে সম্পূন হয়।।রাত ১২ আহাদ তার রুমে প্রবেশ করতে নিলেই পথ আটকে ধরে রাইফার বন্ধুরা আর কিছু কাজিন।
_ এতো তাড়া কিসের দুলাভাই,(কলি)
_ আরে তাড়া হবে না তোমাদের বন্ধবী রুমে একা ভয় পাবেতো বেচারী।
_আমাদের বান্ধবী আগেও রুমে একাই ছিল।সো সে ভয় পাবেনা(মিম)
_ এই কথা প্যাচাচ কেন।মাইয়া মানুষ মানেই কথা প্যাচায়(ইমন)
ইমনের কথায় আহাদ তাল মেরে বলে,
_ এইতো মনের মতো একটা শালা পাইলাম। আমার কষ্ট বুচ্ছে।
আহাদের কথা ইমন হাসতে হাসতে বলে,
_ আরে দুলাভাই কথা তো এখনো শেষ হয় নি।আমাদের টাকা কই।
_ কিসের টাকা(ভ্রু কুচকে আহাদ)
_আরে দুলাভাই দেখি বাচ্চা মানুষ কিছুই বুঝে না। যদি আপনি আপনার রুমে যেতে চান তবে আপনাকে আমাদের খুশির জন্য কিছু এমাউন্ট দিয়ে রুমে প্রবেশ করুন।
_ কি!!আমি আমার রুমে যেতে টাকা লাগবে কেন।
_ এটাই নিয়ম দুলা ভাই(কলি)
_ তাই নাকি, আচ্ছা কতো লাগবে বলো,(বাকা হেসে আহাদ)
_ বেশি না দুলাভাই ৫০ হাজার।(মুচকি হেসে মিম)
_ কি!! ৫০ হাজার পাগল হয়ে গেছ তোমরা।
_ দূর কি বলেন দুলাভাই কতো সাধনার পর আমাদের বান্ধবীকে আপনার কাছে দিলাম আর এখন আমাদের বান্ধবীর থেকেও আপনার কাছে ৫০ হাজার টাকা বেশি হয়ে গেছে(কলি)
কলির কথায় আহাদ রেগে মনে মনে বলে,
_ শালি তোদের কারনেই তো আমার মনপাখিকে আমি হারাতে বসেছি আবার কথা বলস।মন চায় কানের নিচে দুই টা দি।পাজিল একটা।
কিন্তু সামনে বললো
_আচ্ছা দিব। তবে কিছু টাকাতো কমাবে।এতো টাকা তো দেওয়া সম্ভব না।
_ঠিক আছে ৪০ হাজার দিন। (ইমন)
আহাদ এবার নিজের পকেট থেকে চারটি টাকার বান্ডেল বের করে বলে,
_ এখানে ৪০ হাজার আছে তবে টাকা গুলো তোমরা পাবে একটা শর্ত আছে,
_ কি শর্ত (ভ্রু কুচকে আসিফ)।
_ শর্তটা হলো তোমরা এখন দরজা থেকে সরে যাবে আর আমি ভেতরে ডুকে টাকা ছুড়ে দেব।যদি রাজি থাকো তবে পুরো ৪০ হাজার পাবে।
আহাদের কথায় প্রথমে কেউ রাজি না হলেও পরে রাজি হয়ে যায়। আহাদ রুমের ভিতরে ডুকে টাকা ছুড়ে মারে সবাই কাড়াকাড়ি করে টাকা নেয় কিন্তু টাকার বান্ডেলের ভিতর কোন টাকা নেই সব কাগজ।
_ দুলা ভাই আমাদের বোকা বানালো এইভাবে(মাথায় হাত দিয়ে মিম)
_ কেমন দিলাম শালিকারা। (দরজার অপর পাশ থেকে আহাদ)
সবাই রেগে তাকিয়ে থাকে আহাদের রুমের দিকে
আহাদকে না পেরে শেষে সবাই শিহাবকে ধরে বেচারা শিহাব তাদের চালাকির সাথে না পেরে ৫০ হাজার টাকার চেক দিয়ে দেয়.
???
ঘোমটা মুড়ি দিয়ে বসে আছে রাইফা। আর দরজা লাগিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আহাদ। আহাদের আজ শরীর মন জুড়ে শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে কতো বছরের সাধনা আজ পূরন হয়েছে।কতো নাটক কতো কীর্তি তাকে করতে হয়েছে। ভাবতেই হাসি পায় তার।রাইফা বিছানা থেকে নেমে পা ছুয়ে আহাদ কে সালাম করে।আহাদ রাইফাকে টেনে নিজের বুকের সাথে নেয়।রাইফা লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।তার লজ্জার ভঙ্গি ধরতে পেরে আহাদ মজার ছলে বলে,
_ ওমা আমার বউ দেখি লজ্জা পায়।
রাইফা একবার আহাদের দিকে তাকিয়ে আবার দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
_ লজ্জার কি হলো।এটা তো আমাদের প্রথম ফুলশ্যায্যা নয়(আহাদ)।
_ আপনি একটু বেশি বুঝেন আহাদ ভাই(দাত কিড়মিড় করে)
_ তাই নাকি, তুমি যে লজ্জা পাচ্ছ তা কি মিথ্যা কথা নাকি।আর আহাদ ভাই আহাদ ভাই করছো কেন আমি এখন তোমার বর হই। একটু বর চোখে দেখো।
_ আপনাকে আমি আহাদ ভাই ডেকেছি আর ডাকবো।অন্য কিছু বলতে পারবো না(ধমক দিয়ে)
_সিরিয়াসলি আমাদের ছেলে মেয়ে তবে কি আমাকে মামা ডাকবে(মাথা চুলকিয়ে)
_আপনি একটু বেশি বুঝেন।
রাইফা আহাদের কাছ থেকে সরে যেতে নিলেই আহাদ রাইফাকে কোলে তুলে নেয়।
_ আজ তো দূরে যাওয়ার দিন নয় কাছে আসার দিন(রাইফার কানে ফিসফিয়ে)
রাইফা লজ্জায় মুখ সরিয়ে নিলে আহাদ রাইফার দিকে মুচকি হেসে গান ধরে
❣️❣️ও মনপাখি ও মনপাখি শুধু একটা বার ফিরে তাকাও। গেলি চোখ ছুয়ে বড় কাছ দিয়ে আর বুকটা করে গেলি ফাঁকা। (২)
আমার কল্পনারি ঘাসে আর জল্পনার ক্যানভাসে এক ফোটা জলে মন ভেসে চলে তোর কথায় বলে হায়।হা রব্বা য়া য়া হো ওওও।(২).❣️❣️
রাইফা মুগ্ধ হয়ে আহাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
??
সহযে পেয়ে যায় শিহাব রাইসাকে। অবশ্য তার অবদান আহাদের।নিজেদের বোঝা পড়ায় মিল হয় দুই দম্পতির।
পূর্ণতা পায় দুটো ভালোবাসা
???
১৫ বছর পর
এই কয়েক বছরে হাসি,খুশি,রাগ, অভিমানের মাঝে সময়টা সবার কেটে যায়।আহাদের একটা ছেলে হয় যার নাম রামিম,ওর বয়স ১৩আর আর শিহাবের মেয়ে হয় ওর নাম রুহি ওর বয়স ১১ । আহাদ হয়েছে তার বাবার মতো তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পূর্ণ। আর রুহি সে নিজের মতো করে চলে।রামিম আর রুহির মাঝে ঝগড়া ঝামেলা লেগেই থাকে। তাদের ঝামেলার মূল কারন রুহি অন্য কোন ছেলের সাথে মিশতে পারবে না। সে শুধু রামিমের সাথেই মিশবে।
,,,,,,,
বাগানে দোলনায় বসে কথা বলছে রুহি তার সাথে তার স্কুল ফেন্ড আবির।তাদের কথার মাঝে রামিম সামনে এসে দাঁড়ায়
_ এই তোকে বলেছিনা আবিরের সাথে কথা বলবি না।(শান্ত দৃষ্টিতে রামিম)
_ তুই এখানে কি করছিস যা তো।আমি এখন ব্যাস্ত আছি।
_এই আবির তোকে আমি ওর সাথে মিশতে মানা করেছিনা আমার কথা কেন শুনলি না।
_ আমার সাথে কে কথা বলবে আর বলবেনা তাকি তোকে ঠিক করে দিতে হবে ভাইয়া।
_ অবশ্যই আমি ঠিক করবো।আমি ছাড়া তুই আর কারো সাথে কথা বলবি না।এটাই আমার শেষ কথা।
_ কে তুই আমি তোর কথা শুনবো না।আমি একশো বার কথা বলবো হাজার বার কথা বলবো তাতে তোর কি।(রেগে)
ব্যস লেগে গেল ঝগড়া।দুজনের মাঝে চলছে মারামারি ধমকা ধমকি।আবির বেচারা একবার রামিমের দিকে তো আরেক বার রুহির দিকে তাকায়।তাদের ঝগড়া দেখে এগিয়ে আসে মিসেস ডালিয়া আর হাবিবা তারা কিছুতেই তাদের ঝগড়া থামাতে পারছে না।আর দূর থেকে মজা নিচ্ছে আহাদ।রাইফা এগিয়ে আসলেই আহাদ বলে,
_ যেওনা দেখতে দাও।
_ মানে কি তুমি এদের ঝগড়া দেখবে।
_ দেখবোই তো। ছেলেটা একদম বাপের মতো হয়েছে নিজের জিনিস ছোট থেকেই আগলে রাখে।(রাইফার কানে ফিসফিসিয়ে)
_ হুম একরুখে বদমেজাজি।ছোট থেকেই আমাকে যেমন জ্বালাতে এখন ছেলেটাও একি রকম হয়েছে।
তাদের কথার মাঝে পেছন থেকে শিহাব বলে উঠে,
_ দেখতে হবে না বাপ টা কে।
শিহাবের কথায় তারা পিছনে তাকায়।
_ হুম ওদের দেখলে মনে হয় এই যেন আহাদ আর রাইফার খুনশুটি(মুচকি হেসে রাইসা)
রাইসার কথায় সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠে।
এভাবে কিছু ঝগড়া ঝামেলা, খুনশুটির মাঝে বেঁচে থাকে ভালোবাসা।
————–সমাপ্ত———–
(ভুলগুলো সবাই ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)
( ❣️দয়া করে আপনারা আপনাদের মন্তব্য গুলো যানাবেন।শীঘ্রই শুরু করবো নতুন গল্প হৃদয়হরণী।❣️)