আমার_মনপাখি পর্ব -৩
#পলি_আনান
যখনি রাইফা ভাবছে
“দূর আহাদ ভাই সুন্দর হয়েছে তাতে আমার কি,, আমার তো আহাদ ভাইয়ের বন্ধুকে চাই”
তখনি আহাদ গাড়ি থেকে এগিয়ে আসে সবার কাছে,,মিসেস হাবিবা এবং মিসেস ডালিয়াকে পা ছুয়ে সালাম করে।আহাদের আচরন দেখে অবাক হয়ে যায় মিসেস ডালিয়া।তিনি ভেবেছিলেন হয়তো আহাদ বিদেশে থেকে, বিদেশি সংস্কৃতি রপ্ত করবে।দেশের সব সংস্কৃতি ভুলে যাবে।কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে আহাদ সবার সাথে কুশল বিনিময়ে করে।শিহাব ও সবাইকে কুশল বিনিময় করে।আহাদ রাইসাকে জড়িয়ে ধরে।
“কেমন আছ রাইসু বেবি “(রাইসার গালে হাত দিয়ে)
“অনেক ভালো ভাইয়া, তুমি কেমন আছ।
” হুম ভালো, তবে তোকে দেখে অনেক ভালো হয়ে গেছি।
তাদের কথার মাঝে শিহাব বলে উঠলো
“আহাদ ও বুঝি তোর শায়ায়া””
এইটুকু বলতেই আহাদ, শিহাবের দিকে চোখ গরম করে তাকায়। যার ফলে শিহাব আহাদের ইশারা বুঝতে পেরে চুপ হয়ে যায়।
আহাদের চোখের ইশারা কেউ খেয়াল না করলেও রাইসা খেয়াল করে। এমন অবস্থা দেখে রাইসা মুচকি মুচকি হাসছে।
রাইফা ভাবলো এই সুযোগ শিহাবের নাম জানা যাবে,কথা বলা যাবে। আহাদ মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাইফার দিকে।কিন্তু রাফার তো সেদিকে কোন খেয়াল নেই, সে আছে শিহাবের দিকে তাকিয়ে । রাইফার দৃষ্টি বুঝতে পারে আহাদ।সাথে সাথে তার রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে তার।রাইফার যে ভাবা সেই কাজ, রাইফা যেই শিহাবের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে যাবে ঠিক সেই মুহুর্তে আহাদ সবার উদ্দেশ্যে বলে,
“আর কতক্ষন দাড়করিয়ে রাখবে আমাদের, এবার তো ঘরে যেতে দাও”
আহাদের কথা শুনে মিসেস হাবিবা তাড়াতাড়ি করে ঘরে নিয়ে গেলেন সবাইকে ।
রাইফার রাগে নিজের মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে।এতো সুন্দর সু্যোগে থেকেও সে শিহাবের সাথে কথা বলতে পারলোনা।
“কিরে আপু দাঁড়িয়ে আছিস কেন চল”
রাইসার কথায় ধ্যান ভাঙ্গে রাইফার।
“তুই যানা আমি আসছি” (বিরক্ত হয়ে)
রাইসা চলে যায় আর রাইফা ভাবছে কিভাবে শিহাবের সাথে কথা বলা যায়।রাইফা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই।দেখে
সবাই আহাদ আর শিহাবকে নিয়ে ব্যাস্ত।রাইফার এসব দেখে গা জ্বলে উঠলো।
“আসছে এই আহাদ আমার সব ভালোবাসা কেড়ে নিতে দূর ভাল্লাগেনা।অবশ্য একটা ভালো কাজ করেছে আসার সময় ওই হিরোটাকে নিয়ে এসেছে”
রাইফা এই সব ভাবছে মনে মনে, এমন সময় রাইফাকে মিসেস হাবিবা ডাকদিল।
“রাইফা মা এদিকে আয় অনেক কাজ হাতে। মামনিকে একটু সাহায্যে কর””
“আসছি মামনি”
রাইফা কিচেনে চলে যায়।আসার পর থেকে আহাদ রাইফাকে খেয়াল করছে, রাইফার যেন কোন আগ্রহ নেই তার প্রতি,সঙ্গোপনে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আহাদ।
“বাবা আমাদের নিজ নিজ ঘর দেখিয়ে দেও” (সোফা থেকে দাড়াতে দাড়াতে আহাদ)
“হুম তোমরা তোমাদের ঘরে যাও,ফ্রেশ হয়ে নাও,সামাদ তোর ভাইয়াদের ঘর দেখিয়ে দে” (সামাদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো ওয়াহিদ চৌধুরী )
আহাদ উপরে চলে যায় এবং যাওয়ার আগে বলে যেন তাদের জন্য কফি দিয়ে যায়।শিহাবের টা আগে দিতে, শিহাব কফি খেয়ে ফ্রেশ হবে।আহাদের টা পরে দিলেও চলবে।
??
এদিকে রাইফা কিচেনে বসে ভাবছে,
“আহাদ ভাইয়ের আবার কি হলো, আমার সাথে একটুও কথা বললো না। দুমাস আগেও তার সাথে মেসেজ এ কথা হয়েছে।কিন্তু দেশে এসে কি হলো?”
এমন সময় রাইফার ফোনে কল আসে। রাইফা ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো “আশিক” নামটি ভেসে উঠলো।
” দূর এই হতচ্ছাড়া আবার ফোন দিল কেন না কেটে দি”
রাইফা কলটি কেটে দিল। কিন্তু বারবার ফোন এসেই যাচ্ছে। রাইফা বিরক্ত হয়ে ফোনটা রিসিভ করলো
“” এই কি হয়েছে এতো বার ফোন দিচ্ছ কেন ”
“বেবি কি হয়েছে, তুমি আমার ফোন কেটে দিচ্ছ কেন ” (ফোনের ওপর পাশ থেকে আশিক)
“আশিক তোমার সাথে আমার ব্রেকাপ, আজ থেকে তুমি আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না”
এই কথা বলেই রাইফা ফোন কেটে দিল আর নাম্বারটা ব্লক করে দিল।
এমন সময় কিচেন থেকে মিসেস হাবিবা রাইফাকে ডাকলেন। রাইফা কিচেনে যেতেই মিসেস হাবিবা রাইফার হাতে কফি মগটা দিয়ে বললেন,
“যাতো মা আহাদকে কফিটা দিয়ে আয়,আহাদের বন্ধুর কফিটা শেলিকে দিয়ে পাঠিয়েছি তুই আহাদের টা দিয়ে
আয়। ”
মিসেস হাবিবার কথা মোটেই রাইফার পছন্দ হলো না।
“দূর আহাদ ভাইয়ের বন্ধুর কফিটা আমি দিয়ে আসলে কি হতো” (বিড়বিড় করে)
“কি বিড়বিড় করচ্ছিস যানা মা কফিটা দিয়ে আয়”
“আ,,,,,আচ্ছা যাচ্ছি”
রাইফা কফি হাতে আহাদের রুমে প্রবেশ করলো।রাইফা পুরো রুমটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিল।কিন্তু রুমে আহাদের দেখা পেলনা।সে বারান্দায় যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই খট করে একটা শব্দ হলো।পেছনে ঘুরে দেখলো আহাদ ওয়াশ রুম থেকে বের হয়েছে।
“একি তুই এখানে”
“আপনার কফি এনেছি আহাদ ভাই”
রাইফার মুখে ভাই শব্দটা শুনে আহাদের মুখের রং পালটে যায়।ভাই শব্দটা যেন এই মুহূর্তে তার কাছে বড্ড বাজে এবং বিরক্ত কর শব্দ। নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পাচ্ছেনা আহাদ।ইচ্ছে করছে দুটো চড় রাইফার গালে বসিয়ে দিতে।
“কফি দেওয়া হলে এবার যা” (গম্ভির কন্ঠে)
আহাদের কথা রাইফার পছন্দ হয়নি।সে বিড়বিড় করে বলে “বিরক্ত কর একটা মানুষ,ছোট থেকেই নিজের ইচ্ছা গুলো আন্যর ঘারে চাপাবে,এই দশ বছর শান্তিতে ছিলাম, দূর ভাল্লাগেনা ”
“এই কি বিড়বিড় করছিস তুই” (ভ্রু কুচকে)
“ন্না,,না কিছুনা।
রাইফার অবস্থা দেখে আহাদ মনে মনে বললো,
” তুমি যে আমাকে বকছো তা আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি।
“কি হলো দাড়িয়ে আছিস কেন যা এখান থেকে (ধমক দিয়ে আহাদ)
“না এখন যাওয়া যাবে না,এই একটা সুযোগ আহাদ ভাইয়ের থেকে ওনার বন্ধু সম্পর্কে যানা।হয়তো আহাদ ভাই আমার লাইন ক্লিয়ার করতে সাহায্যে করবে।”(মনে মনে)
রাইফা নিজ মনে এইসব ভাবছে কিন্তু তার দিকে যে মুগ্ধ দৃষ্টিতে দুটো চোখ তাকিয়ে আছে তার কোন খেয়াল নেই। এইবার সবচে বড় ভুলটা করে বসলো রাইফা।সে আহাদের একটু সামনে গিয়ে বললো,,
” আহাদ ভাই আমাকে একটা ব্যাপারে সাহায্য করতে পারবেন,প্লিজ করেন না আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো।”
“বল কি হেল্প চাই”
“আহাদ ভাই আপনার বন্ধুর সাথে আমার লাইনটা ক্লিয়ার করে দেন না।আমি প্রমিস করছি আপনার প্রেমিকার সাথে আমি আপনার বিয়ে ঠিক করিয়ে দিব।আপনি শুধু আমারটায় সাহায্যে করুন।আপনার বন্ধুটাকে আমার ভিষন পছন্দ হয়েছে।প্লিজ ভাই প্লিজ(উত্তেজিত হয়ে)”
এই একটা কথা আহাদের মনের আগুন, মাথার আগুন সব জ্বালিয়ে দিয়েছে।সে নিজেকে কিছুতে সামলাতে পারছে না।তার মন চাইছে রাইফাকে জিবন্ত কবর দিতে।তবুও নিজের হাত মুষ্টি বদ্ধ করে,দাতে দাত চেপে রাগ নিয়ন্ত্রণ করছে।
“তুই এখান থেকে যা রাইফা,আর যদি এক মিনিট এখানে থাকিস আমি কি করবো নিজেও যানি না” (দুই আঙ্গুল দিয়ে কপাল বুলাতে বুলাতে)
আহাদ এতোটা রেগেছে অথচ রাইফার কোন হেলদোল নেই,সে যাওয়ার আগে বললো,
“আমার কাজে সাহায্যে না করলে আপনি জিবনে আপনার মনের মানুষকে পাবেন না, দেখে নিয়েন।
এই কথা বলে যেই দরজা থেকে বের হবে পেছন থেকে আহাদ তাকে হেচকা টান দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। (বাকিটা তো জানেনি)
?????(বর্তমান)
রাইফা আহাদের কথা গুলো ভাবছে।আহাদ যেন তাকে শান্ত – শিষ্ট ভাবে হুমকি দিয়েছে।তা সে বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে।
” আহাদ ভাই এমন করলো কেন।উনি কখন আমার ভালো দেখতে পারেনা”(আনমনে)
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কারো সাথে ধক্কা খায় রাইফা,
সামনে তাকিয়ে দেখে,,,,৷
চলবে….
(ভুলগুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)
আগের পর্ব
https://m.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/2972956122933120/