আমার_মনপাখি পর্ব ৭

0
3440

আমার_মনপাখি পর্ব ৭
#পলি_আনান

রাইফার কানে কারো গরম নিশ্বাসঅনুভব,করে,সে
চোখ খুলে যেই চিৎকার দিতে যাবে তার আগেই লোকটি রাইফার মুখ চেপে ধরে,,
“ইসসস,,,কোন কথা না,” (ফিসফিস করে লোকটি)
“উমম,, উমম
” মুখ খুলবো আগে বলো চিৎকার করবে না।”
রাইফা দুইপাশে মাথা নাড়ে সে চিৎকার করবেনা।
লোকটি রাইফার মুখ ছেড়ে দেয়।রাইফা জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।আর লোকটি মুগ্ধ দৃষ্টিতে,রাইফাকে দেখছে।লোকটি মনে মনে বলে,

“ভয় পেলে তোমায় আরো সুন্দর লাগে মনপাখি।ইচ্ছে করছে টুপ করে একটা চুমু খাই।”

লোকটির ধ্যান ভাঙ্গে রাইফার কথা শুনে।রাইফা ভয়ার্ত কন্ঠে বলে,
“ক্কে,,,,,,,কে আপনি,আমার র,, রুমে কি করছেন”
“তোমাকে ভালোবাসতে এসেছি মনপাখি”
লোকটির কথা শুনে ভয় পেয়ে যায় রাইফা।কিছুটা সাহস নিয়ে বলে,
“কে আপনি, আমি আপনাকে ভালোবাসিনা।চলে যান আমার রুম থেকে।”
রাইফার কথা শুনে লোকটির মুখের রঙ পালটে যায়।চোখ গুলো লাল বর্ণ ধারন করে।কপালের রগ ফুলে উঠেছে।রাইফা একবার লোকটাকে দেখে নিল।লোকটি একটি হুড়ি জ্যাকেট পরা,মুখে মাক্স,চুল গুলো সামনে কপালে পড়ে আছে।রাইফা বেশিক্ষন লোকটির দিকে তাকিয়ে থাকতে,পারলোনা।লোকটির চোখের দিকে তাকিয়ে রাইফা ঢোক গিলে।
“কাকে ভালোবাসবে ওই অনিক কে,অনিকের কথা ভুলে যাও, যদি ভুলে তবে তোমাদের দুজনের জন্যই ভালো।”(বাকা হাসি দিয়ে)
“আ….আপনি অ….. অনিকের নাম জানলেন কি করে”
“আমি তোমার সব খবরি রাখি মনপাখি।এতো দিন আনেক উড়েছো আর না এবার আমার কাছে থাকবে,শুধু আমাকে ভালোবাসবে”(রাইফার কাছে আগাতে আগাতে)
“আপনি কে যে আমি আপনাকে ভালোবাসবো।আমি অনিককে ভালোবাসি”আর ওকেই বাসবো”(পিছাতে পিছাতে)
” কি বল্লে,,,আবার বলো,,,, আবার বলো তোমার সাহসত কমনা”
“আপনি আমার সাহসের কি দেখেছেন,আমি একবার বলেছি আমি অনিক কে ভা……

লোকটি রাইফাকে আর কোন কথা বলতে না দিয়ে, রাইফাকে বিছানার সাথে চেপে ধরে,আর ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।রাইফা কিছুতেই নিজেকে ছাড়াতে পারছেনা রাইফার জিবনে এটাই প্রথম কিস, তাও অচেনা, অজানা কারো সাথে ভাবতেই তার দুচোখ থেকে নোনা জল গড়িয়ে পড়লো।লোকটি রাইফাকে ছাড়লো ১০ মিনিট পর।লোকটি রাইফার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে শ্বাস নিচ্ছে।রাইফা দূরে যেতে নিলেই লোকটি রাইফাকে আরো নিজের কাছে নি আসে।
” তো কি বলছিলে মনপাখি তুমি অনিক কে ভালোবাসো।আর বলবে এই কথা”
লোকটির কথা শুনে রাইফা রেগে যায়,
“একশো বার বলবো,হাজার বার বলবো।অনিক অন্তত্য আপনার মতো না,,সে এতো বাঝে ভাবে ভালোবাসার প্রকাশ করে না।”
“তাই নাকি,অনিক ফুলদিয়ে ভালোবাসা প্রকাশ করে ছিল তাইনা, ওয়েট আমি ও ফুল এনেছি,নাও”লোকটি ফুল গুলো রাইফার হাতের সামনে ধরে কিন্তু রাইফা ফুল গুলো স্পর্শ না।
” কি হলো পাখি ফুলগুলো নাও”
রাইফা চুপচাপ অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
“কি হলো কথা কানে যায় না,ও ফুল নিবে কিভাবে তোমার ওই তিন বন্ধু তো নেই যে উৎসাহ দেবে,কি যেন নাম তাদের……. ও মনে পরেছে ইমন,কলি,আসিফ আমি ভাবছি এই তিনজন কে একটা চরম শিক্ষা দেব”
“ক,,,কি শিক্ষা দেবেন ওদের”
“দেব আগে তোমারটা দি,,কি হলো ফুল গুলো নিচ্ছনা কেন,নাকি আবার কিস করবো” (ধমক দিয়ে)
লোকটির ধমক শুনে ভয় পেয়ে যায় রাইফা রাইফা ফুলগুলো হাতে নিতেই লোকটি রাইফার হাতে কাটা যুক্ত ফুলগুলো চেপে ধরে।রাইফা চিৎকার দিতে যাবে তার আগে লোকটি রাইর মুখ ওরনা দিয়ে বেধে দেয়।রাইফা ব্যাথায় অসহায় দৃষ্টিতে লোকটির দিকে তাকিয়ে কান্না করেছে।
“কি হলো জান হাত ব্যাথা করছে,আমারো বুকের মাঝে এমন ব্যাথা হয়েছে যখন তুমি অনিকের হাত থেকে ফুল নিয়েছিলে।”
রাইফা নিশব্দে কেদেই যাচ্ছে। তার হাতে ফুলগুলোর কাটা ফুটে হাত ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেছে।রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে পরছে।
লোকটি এবার রাইফার খারাপ অবস্থা দেখে বলে
“যদি আজকের কথা মাথায় থাকে তবে অনিক কেন সকল ছেলে থেকে দূরে থাকবে।কথাটা মনে থাকে যেন”
রাইফা কেদেই যাচ্ছে।রাইফার দিকে তাকিয়ে লোকটি বলে “ফাস্ট এইড বক্স কোথায়”
রাইফা ভেজা চোখে বোকার মতো লোকটির দিকে তাকিয়ে আছে,,
“কি হলো কথা কানে যায় না” (ধমক দিয়ে)
রাইফা হাতদিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে দেয়,লোকটি
গিয়ে বক্সটি আনে,এবং রাইফার দুই হাত যত্ন করে ব্যান্ডেজ করে দেয়।রাইফার হাতে একটি চুমু খেয়ে রাইফাকে বলে “যাও শুয়ে পর”রাইফা চুপচাপ শুয়ে পরে।ঠিক তখনি লোকটা রাইফার পাশে শুয়ে পড়ে।এমন কান্ড দেখে রাইফা তারাতাড়ি উঠে পড়ে, আর রাগি দৃষ্টিতে বলে,
” একি আপনি এখানে শুয়েছেন কেন”
“তো কোথায় ঘুমাব” (সহজ ভাবে)
“আপনি আপনার বাড়িতে গিয়ে ঘুমান, আমি আপনার সাথে একি বিছানায় ঘুমাবো না”(রেগে)
লোকটি রাইফাকে হেচকা টান দিয়ে জড়িয়ে ধরে রাইফার গলায় মুখ ডুবায় আর কানে ফিসফিস করে বলে ” তুমি কি তোমার ওই তিন বন্ধুর ভালো চাও,যদি ভালো চাও তবে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়,আর যদি না চাও বলো আমি চলে যাচ্ছি”
রাইফা আসহাস দৃষ্টি নিয়ে লোকটির দিকে তাকিয়ে থাকে।লোকটি তাকে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় আর বলে,”চোখ বন্ধ করো আর ঘুমাও অনেক রাত হয়েছে”।রাইফা অসহায় হয়ে লোকটির সাথে শুয়ে পড়ে।
????
সূর্যের আলো মুখে পড়তেই রাইফা পিটপিট করে চোখ খুলে ৫ সেকেন্ড পর তার রাতের সব কথা মনেপড়ে, পাশে তাকিয়ে দেখে লোকটি নেই।রাইফার বালিশের পাশে তাকাতেই দেখে বড় ২ টা চকলেট আর তার নিচে একটা চিঠি।রাইফা চিঠিটি খুলে আর পড়া শুরু করে।চিঠিতে লেখা ছিল,

মনপাখি কাল রাতে যা যা বলেছি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে।অনিক কেন সকল ছেলের কাছ থেকে দূরে থাকবে।আর আমায় নিয়ে কারো সাথে আলোচনা করবেনা।যদি কর তোমার নিজের অবস্থা কাল রাতের থেকেও খারাপ হবে। তোমার উপর আমার নজর সবসময় আছে,তাই তুমি কি করছ সব খবর আমি পেয়ে যাবো।আরেকটা কথা আজ রাতে আবার বেলকনির দরজা বন্ধ করো না।দরজা বন্ধ করলে কিন্তু তোমার শাস্তি আছে।আর রাত ১২ টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়বে।ভালোথেকো।
রাইফা চিঠিটি পড়ে তাজ্জব হয়ে যায়।সে বিড়বিড় করে বলে”কে এ পাগল আমার ঘারে উঠেছে,আমার জিবনটাকে নরক বানিয়ে দিবে।”
কথাটা বলেই হাতে থাকা চকলেট গুলো দেয়ালের কাছে জোরে ছুড়ে মারে আর হাতের ব্যান্ডেজ খুলতে থাকে।রেগে হনহন করে ওয়াশরুমে চলে যায়।
এতোক্ষন রাইফার কান্ড গুলো লোকটি দেখ ছিল আর হাসছিল।”তুমি আমার জালে ধরাপরে গেছ রাইফা চাইলেও আর বের হতে পারবেনা।ভাগ্যিস আমি ক্যামরাটা লাগিয়েছি তাই তোমার এই রাগি মুখটা দেখার আবার ভাগ্য হলো”(মুচকি হেসে)লোকটি যাওয়ার আগে রাইফার রুমে গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে যায়।
???
রাইফা ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে আসে আর দেখে, আহাদ, শিহাব,ওয়াহিদ চৌধুরী আর জহির মির্জা মিলে বিজনেসর কথা বলছে।আহাদ আড় চোখে রাইফাকে একবার দেখে আবার কাজে মন দেয়।রাইফা তাদের পাশে গিয়ে বসে।তাদের মধ্যে কথা হচ্ছে মূলতো শিহাব তার ব্যবসা বিদেশ থেকে দেশে আনার কথা ভাবছে।রাইফা চুপচাপ বসে তাদের কথা শুনছে।এমন সময় আহাদ চিল্লিয়ে বলে,”রাইফা তোর দু হাতে কি হয়েছে এতো ফুলে গেছে কেন।আর কতো লাল হয়ে গেছে”আহাদের কথা শুনে সবাই তার হাতের দিকে তাকায়।রাইফা মনে মনে বলে”কেন যে এখানে বসতে গেলাম ধরা খাওয়ার ভয়ে ব্যান্ডেজ খুললাম তাও শেষ রক্ষা হলো না।রাইফার বাবা মি.জহির রাইফার হাত টেনে নিজের কাছে আনে,আর বলে “সত্যি করে বলনা মা কি হয়েছে হাতের অবস্থা তো বেশি ভালো না”।রাইফা এবার কি বলবে নিজেই বুঝতে পারছেনা” কি হলো কথা বলছিস না কেন”(ওয়াহিদ চৌধুরী) রাইফা আমতা আমতা করে বলে, “বাবা ছোট বাবা তোমরা ব্যস্ত হয়ো না আমার কিচ্ছু হয় নি” রাইফার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে শিহাব।
শিহাব রাইফার হাতের দিকে তাকিয়ে বলে”আমার মনে হচ্ছে রাইফা তোমার হাতে কাটা ডুকেছে,হাতের অবস্তা দেখে তাই মনে হচ্ছে।”
তাদের কথার মাঝে এগিয়ে আসে, রাইসা এবং ডালিয়া মির্জা।রাইফার হাতের অবস্থা দেখে তারাও অস্থির হয়ে পড়ে।সবার কথার মাঝে ওয়াহিদ চৌধুরী বলে”আহাদ যা রাইফা কে হাসপাতাল নিয়ে যা” রাইফার এ কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে, হাসপাতালে গেলে ডাক্তার তার হাতের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে সবার সমনে কি বলবে।রাইফা কিছুটা সাহস নিয়ে বলে,
“থাকনা ছোট বাবা আমি ঔষুধ লাগিয়ে নিয়ে ছি। ”
“চুপ একদম চুপ আহাদের সাথে তাড়াতাড়ি যা” (ধমক দিয়ে বললেন মিসেস ডালিয়া)
রাইফা উপরে চলে যায় তৈরি হতে।আহাদ ও নিজের বাড়ি যায় তৈরি হতে।আহাদ তৈরি হচ্ছে আর এমন সময় আহাদের রুমে শিহাব ডুকে।শিহাব আহাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আহাদ রাইফার হাতের এই অবস্থা তুই করিস নিতো”
শিহাবের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকায় আহাদ।
“তুই পাগল হয়ে গেছিস শিহাব আমি এমন কেন করবো”
“না করলেই ভালো চল”
আহাদ আর শিহাব চলে যায় রাইফাদের বাড়ি।

চলবে………..

(ভুলগুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here