আমার_মনপাখি পর্ব – ৯
#পলি_আনান
দাদিমার রুমের বারান্দায় দাড়িয় আছে রাইফা।তার ভিষণ মন খারাপ।সে ভাবতে থাকে গতকাল থেকে তার কিছুই ভালো যাচ্ছে না।সব কিছু এলো মেলো লাগছে।তার জিবনটা তো হাসি খুশি সুন্দর ছিল।তবে এমন কেন হলো।কে এই লোকটা তাকে বার বার হুমকি দিচ্ছে।এদিকে অনিক তাকে বার বার ফোন আর মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু সে রিপ্লাই দেয় না।রাইফার সব কিছু তিক্ত লাগছে।রাইফাদের একই বাড়িতে দুইটা বিলিং একটা আহাদ আর একটা তাদের। তাই পুরো বাড়ি জুড়ে আহাদ আর রাইফাদের বিশাল ফুলের বাগান।যেখানে আছে হরেক রকম ফুল।যে ফুলগুলো দেখলে আগে রাইফার মন ভালো হয়ে যেত।কিন্তু আজ সে ফুল গুলই তার ভালো লাগছেনা।তার গোটা মনে কালো মেঘ ধারন করেছে।
এমন সময় রাইফার ফোনে মেসেজ আসে।রাইফা স্কিনে তাকিয়ে দেখে সেই অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে।রাইফা মেসেজটি পড়া শুরু করে,
“তোমার হাতের কি অবস্থা ঔষধ খেয়েছো ”
মেসেজটি পড়েই রাইফার মাথায় দপ করে আগুন লেগে যায়। “ইসস সাহস কম না,নিজে ব্যাথা দিয়ে আবার খবর নিতে এসেছে।একেই বলে, জুতা মেরে গরু দান। তোকে আজ ছাড়বোনা আর ভয় পাবনা,এর একটা বিহিত করতেই হবে”
রাইফা রাগের মাথায় মেসেজের রিপ্লাই দেয়,
“কেরে তুই আমার পিছে পড়লি কেন, সামনে পাইলে তোর খবর আছে”
লোকটি রাইফার মেসেজ পেয়ে তার চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে যায়।লোকটি রাইফার মেসেজ পড়ে মাথা গরম হয়ে যায়,
“তুমি এতো তুই তুকারি করছো কেন।তোমাকে আমি কি জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দাও”
রাইফা মেসেজটি পড়ে আবার উওর দেয়,
“তুই কেরে যে তোকে আমি সুন্দর করে সম্মোদন করবো”
লোকটি রিপ্লাই দেয়,
“দেখ রাইফা তুমি হয়তো ভুলে গেছ আমি তোমার দুই বন্ধু ইমন আর আশিকের হাত ভেঙে দিয়েছি।আমার টার্গেট কিন্তু তিনজন।এখনো কিন্তু কলি বাকি আছে।ও মেয়ে মানুষ বলে ছেড়ে দিয়েছি।যদি তুমি আমার সাথে এমন করে কথা বলো তবে কিন্তু কলির ও একই অবস্থা হবে।সো বি কেয়ারফুল।”
রাইফা মেসেজটি পড়েই চুপসে যায়,তার মনে প্রশ্ন জাগে এই ছেলেটা এই তিনজনের পিছনে লাগলো কেন।আমার বেস্টু তো মিম।মিমকে নিয়ে তো কোন হুমকি দেয় না।
রাইফার যেভাবা সেই কাজ সে অচেনা ছেলেটাকে মেসেজ দিল,
“আচ্ছা আপনি আমার ওই তিন বন্ধুর পিছনে লাগলেন কেন,কিন্তু মিমকে নিয়ে তো হুমকি দেননা কাহিনিটা কি বলুন তো”
রাইফার মেসেজটি পড়ে লোকটি মুচকি হাসে আর উওর দেয়,
“তোমার ওই তিন বন্ধুই তো নাটের গুরু।তাদের তো আমি সহজে ছাড়বো না,তাছাড়া মিম তাদের মতো এতো বাজেনা।সব কথা বাদ আগে গিয়ে ঔষধ খাও।”
“কিরে দাদুমনি একা একা দাঁড়িয়ে কি করছিস”
পেছন থেকে কারো কথা শুনে পেছনে তাকায় রাইফা।
“কি আর করবো। দাদিমা তোমার ওই নাতির জন্য তো এই বাড়িতে আসা যাবে না।দেখে নিও আমি আর আসবোনা তোমাদের বাসায়” (মুখ ঘোমড়া করে)
“সে কি কথা রাইফা।তুই আসবি না কেন,আহাদ থাকবে আহাদের কাজে আর তুই আসবি আমার কাছে,তোকে আমি কও ভালোবাসি বলতো।আয় রুমে আয়”
রাইফা রুমে ঢুকে।
“রাইফা যাতো আহাদের রুম থেকে আমার চশমা টা নিয়ে আয়।”
দাদিমার কথা শুনে রাইফার কানে দিয়ে ধৌয়া বেরোচ্ছে।
“কি, তুমি ভাবলো কি করে আমি ওই রুমে যাবো।কখনো না” নেভার(চোখ বড় করে)
“কি তুই আমার কথা শুনবিনা।আমি এখন তোর কাছে খারাপ হয়েগেছি ” (মন খারাপ করে)
“তুমি আমাকে ইমোশনাল করছো তাইনা”
“আমি তো এখন খারাপ হয়ে গেছি তোর কাছে।যা আনতে হবে না।” (মন খারাপ করে)
রাইফা কোমড়ে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ ভেবে বললো
“আচ্ছা যাচ্ছি, রাগ করোনা”
রাইফা আহাদের রুমের উদ্দেশ্য বেরিয়ে যায়। আর দাদিমা রাইফার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
???
রাইফা আহাদের রুমের সামনে এসে উকি দিচ্ছে। আহাদ রুমে আছে কি না তা দেখার জন্য।
“না তো পুরো রুম ফাকা।কেউ নেই”(মনে মনে)
রাইফা যেই রুমে প্রবেশ করে উমনি পিছন থেকে আহাদ দরজাটা বন্ধ করে দেয়।রাইফা আহাদকে দেখে ভূত দেখার মতো অবস্থা।
“আ….আপনি দ…দরজা বন্ধ করলেন কেন?(আমতা আমতা করে)
” আমার রুমের দরজা আমি বন্ধ করতেই পারি,তোমার কোন সমস্যা”(রাইফার কাছে এগোতে এগোতে)
“সমস্যা তো আমারি।আমি এই রুমে আপনি দরজা বন্ধ করলেন কেন।
” খাওয়া ছেড়ে উঠে এলে কেন (পকেটে হাত দিয়ে)
“আমার ইচ্ছা আমি এসেছি তাতে আপনার কি”(নিচের দিকে তাকিয়ে)
“সবতো আমারি,তোমার শরীর খারাপ হলে তো আমারি কষ্ট হবে।তাতো তুমি বুঝবে না”(মনে মনে)কিন্তু সামনে বললো,
” চুপ বেয়াদপ মেয়ে সবসময় মুখে মুখে তর্ক করো”
আহাদ পকেটে থেকে ফোন নিয়ে কাকে যেন ফোন করে।একটু পর দরজায় টোকা পড়ে।আহাদ দরজার দিকে এগিয়ে যায়।কে এসেছে রাইফা তাকে দেখেনা।আহাদ হাতে করে খাওয়ারের প্লেট নিয়ে ঢুকে। আহাদ রাইফার দিকে তাকিয়ে বলে,
“যাও গিয়ে খাটে বসো”।
“আমি এসেছি দাদিমার চশমা নিতে বসতে আসিনি”
“তোমাকে আমি বসতে বলেছি” (রেগে)
“বললাম তো বসবো না”(চিৎকার দিয়ে)
আহাদ হাতে থাকা প্লেটটি খাটের সাইডের টেবিলে রেখে,রাইফাকে হেঁচকা টান দিয়ে খাটে বসায়।
“নাও খাও,আমি খাইয়ে দিচ্ছি”(রাইফার দিকে তাকিয়ে)
“আমি এখানে খেতে আসিনি(রেগে)
“তোমাকে আমি চুপচাপ খেতে বলেছি”
“কথা কানে যায় না আপনার বললাম তো খাবোনা(বিছানা থেকে উঠে চিৎকার দিয়ে)
এবার আহাদ বিছানায় বসে রাইফাকে হেচকা টান দিয়ে আহাদের কোলে বসিয়ে দেয়।
“প্লিজ, এবার খাও ”
“এই আপনি কি পাগল আমি বল……….
রাইফাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আহাদ রাইফার মাথার পেছন দিকটায় হাত দিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। রাইফা আহাদের
কাছ থেকে ছাড়াতে কিল ঘুশি মেরেই যাচ্ছে কিন্তু আহাদ ছাড়ছেনা।রাইফা এবার জেদের বর্শে তার নখ দিয়ে আহাদের গলায় আচড় দেয়। কিন্তু আহাদ তখনো ছাড়েনা।আহাদ তার কাজে ব্যস্ত।প্রায় ১৫ মিনিট পর আহাদ রাইফাকে ছাড়ে।রাইফার কপালের সাথে তার কপাল লাগিয়ে শ্বাস নিতে থাকে।রাইফা আহাদের বুকে ধাক্কা দিয়ে উঠে যেতে নিলে আহাদ রাইফার কোমড় জড়িয়ে ধরে।রাইফা গাল চেপে ধরে আহাদ বলে..
” আমার কাছে আসলে এতো পালাই পালাই করো কেন তুমি,”
“আমাকে ছেড়ে দিন বলছি খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু “(নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে)
” যা খারাপ হওয়ার তা তো হয়েছে।আবার কি খারাপ হবে বলতো একটু শুনি”(রাইফাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)
“আমি কিন্তু মামনি কে বলবো আপনার এসব বাকে ব্যবহারের কথা “(নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে)
” কি বলবে মাকে গিয়ে, বলবে মামনি আহাদ ভাই আমাকে ডিপ কিস করেছে,,,ছি ছি ছি তুই তোর মামনি কে এগুলো বলবি।তোর একটুও লজ্জা লাগবেনা,তারপর আর কি সবাই তোরই বদনাম করবে।আমি তো দেশ ছেড়ে বিদেশ যেতে পারবো কিন্তু তুই কি করবি।আর তাছাড়া অনেকে জানে তোর ববয়ফ্রেন্ড এর অভাব নেই।আমি গিয়ে যদি বলি তুই আমাকে নিজেই সুযোগ করে দিয়েছিস তাহলে কি হবে বলতো,,আর ছোট বেলার কথা ভুলে গেছিস, আমাকে কিন্তু কম জ্বালাস নি”(অভিনয় করে)
আহাদের কথা শুনে রাইফার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।সে কি করবে তার এখন মাথায় আসছে না।পরের টা পরে আগে এই রুম থেকে তার আগে বের হতে হবে।তাই সে আমতা আমতা করে আহাদ কে বললো,
“আমাকে ছেড়ে দিন না, কেন আটকে রেখেছেন আমাকে”
“চুপচাপ আমার হাতে খেয়ে নেও, ছেড়ে দেব”
রাইফা মাথা নাড়ে মানে সে খাবে।
“এই তো গুড র্গাল, চুপচাপ খাও”
রাইফা চুপচাপ খাচ্ছে আর আহাদ আদর করে যত্ন সহকারে খাইয়ে দিচ্ছে।খাওয়া শেষ হলে আহাদ রাইফার মুখ মুছে দেয়।
“আমি এবার আসি তাহলে”(রাইফা)
” যাবি,, আচ্ছা আগে আমার গলায় মলম লাগিয়ে দিয়ে যা”
“ক..কেন মলম লাগাবো।” আপনার আবার কি হলো”
আহাদ এবার রাইফার কাছে এগোতে থাকে আর রাইফা পেছাতে থাকে।এবার রাইফা দেয়ালের সাথে লেগে যায়।আহাদ দেয়ালে হাত দিয়ে রাইফার দিকে ঝুকে বলে,
” একটু আগে আমাকে কি করেছিস মনে নেই”
আহাদের কথা শুনে রাইফা চোখ বড় করে তাকায় আর বলে,
“আমি আবার কি করলাম যা করার আপনি তো করলেন”
আহাদ রাইফার কথা শুনে মুচকি হেসে শার্টের বোতাম খুলতে থাকে।
“ছি আপনি কি করছেন আহাদ ভাই”
আহাদ রাইফার কথায় কান না দিয়ে কলার টা একটু উচু করে ধরে আর বলে
“দেখ তুই আমার ঘাড় গলায় কি করেছিস তুই পুরো জংলী মেয়ে”
আহাদের কথায় রেগে যায় রাইফা।সে ড্রয়ার থেকে র্ফাস্ট এইড বক্স বের করে আহাদ কে টেনে বিছানায় বসিয়ে দেয়।সে দেখে অনেক গুলো নখের আচড় একসাথে লেগেছে।রক্ত বেরিয়ে শুকিয়ে গেছে।তার নিজের থেকেই এখন খারাপ লাগছে।তাই সে চুপচাপ ক্ষত স্থান ডেটল দিয়ে
পরিষ্কার করছে।আহাদের কিছুটা উনমুক্ত বুক রাইফার দৃষ্টি বারবার কেড়ে নিচ্ছে।তবুও সে নিজেকে সামলিয়ে নিচ্ছে।
আহাদ তাকিয়ে আছে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে।রাইফার চোখ, নাক, গাল খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।আহাদ মনে মনে বলে,
“আর কত দিন দূরে থাকবে তুমি,দীর্ঘ বছর অপেক্ষা করে আসছি তোমাকে পাওয়ার জন্য”
রাইফার মলম লাগানো শেষ হয়।রাইফা ধমক দিয়ে বলে
“লাগিয়ে দিয়েছি মলম এবার আমি যাই”
“যাই যাই করছিস কেন, দাড়া তোকে একটা চিহ্ন দেখাই”
এই বলে আহাদ তার বুকের ডান দিকটার র্শাট কিছুটা সরিয়ে দেয়।রাইফা দেখতে পায় কালো একটা দাগ বেশ পুরনো মনে হচ্ছে কিচ্ছু ঝাপসা হয়ে গেছে দাগটি।
“চিনতে পারছিস এই দাগ রাইফা”
রাইফা মাথা দুদিকে নাড়ায় মানে সে চিনতে পারছে না।
“মনে আছে তুই একদিন আমাকে বুকের বাম পাশটায় কামড় দিয়ে ছিলি।যা গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়।এই ক্ষত হওয়ার ২১ দিনের মাথায় আমাই ইউএস চলে যাই।কিন্তু এখন পর্যন্ত দাগ টা রয়ে গেছে।জানিস আমি যখন বিদেশে আমার বন্ধুদের সাথে সুইমিংপুলে গোসল করতাম তারা বলতো আমার জিএফ এর লাভ বাইট।উওরে আমি শুধু হাসতাম।শুধু শিহাব জানতো আমার বুকে লালন করা এই দাগটি তুই দিয়েছিস।,,, (আহাদ এবার নিজের আবেগ থেকে বেবিয়ে আসে।নিজেকে আগের রুপে এনে বলে)তো বল এখন আবার তুই আমার গলায় আচড় দিয়েছিস।আমার হবু বউকে আমি কি জবাব দিব।”
আহাদের কথা শুনে রাইফা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাইফার ফোন বেজে উঠে।ফোনের স্কৃিনে তাকিয়ে দেখে,,,,
চলবে……
(ভুলগুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)