#আমার_সংসার,পর্ব ১১,১২
লেখক:হৃদয় আহমেদ
পর্ব ১১
‘ কিন্তু আপনিতো আমায় কখনো বলেননি আমাকে আপনার পছন্দ! ইভেন, আমার মন বলেছিলো আপনি অমন ছেলেই নয়। ‘
আমার প্রশ্নের উত্তরে উনি চোখ সরিয়ে মরিচ টপের উপর রাখলেন। লাল রঙের দুটো ক্যাপসিক্যাম ঝুলে আছে গাছটায়।কিছু একটা ভেবে উত্তর দিলেন,
‘ বলেছি ভালো লাগে, ভালো বাসি এটাতো বলিনি? ‘
চোখে পানি জমলো। বুক ধুকধুক করছে। সবটা জেনে করা, অথচ আমায় ভালোবাসতেন না উনি। কি অদ্ভুত! চোখ বুজে নিলাম। ভিজে উঠলো গাল। ভাইয়া দেখার আগেই চোখের পানি মুছে নিলাম। জিজ্ঞেস করলাম,
‘ অন্যকেউ কেন নয়? ভালোবাসতেন না, অথচ আমাকেই বিয়ে করলেন? ‘
‘ ওইযে ভালো লাগতো! সেখান থেকেই। ‘
এমদম স্বাভাবিক গলা,মুখভঙ্গি! আড়ষ্ট কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম,
‘ আব্বুতো খুব পজিটিভ ছিলো আমায় নিয়ে, আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে। উনি হুট করে বিয়ে দেওয়ার লোক নন। কেন দিলেন? ‘
টপে চোখ আবদ্ধ রেখেই বললেন উনি,’ এসব তোর আব্বুই বলতে চেয়েছিলেন। আমি বাঁধা দিয়েছি। আর এই কারনটা আমায় উনি বলতে নিষেধ করেছেন। তাই আ’ম সরি। বলতে পারবো না। ‘
ঠিক ভেবেছি! নিশ্চয়ই কিছু না কিছু হয়েছে আব্বুর। বাধভাঙা নদীর মতো হু হু করে কেঁদে উঠলাম। আমার কান্নার স্বর পেতেই দ্রুত আমার দিকে তাকায় সিয়াম ভাইয়া। হঠাৎ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নেন উনি। কন্ঠ উত্তেজিত,
‘ তুই যা ভাবছিস, ভুল ভাবছিস! তোর আব্বু সেদিন রাজধানী কেবল নিজের পেনশনের টাকা নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছিলো তাই গিয়েছিলো। এভাবে ভুল ভেবে নিজেকে কেন কষ্ট দিচ্ছিস?’
ভেজাকন্ঠে বললাম, ‘ তাহলে বলুননা আমায়! ‘
‘ হয়তো কোন স্পেশাল কারণ আছে, আমি ঠিক জানি না! ‘
‘ মিথ্যে বলছেন? ‘
ছেড়ে দিলেন উনি। আবারো অন্যদিক ফিরে বললেন, ‘ বলছি না মিথ্যে। ইট’স ট্রুথ। ‘
উনি বলার পরও কেন বিশ্বাস হচ্ছে না আমার? কেন মনে হচ্ছে সামনে যা হচ্ছে তার সবটাই পরিকল্পিত ভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। চোখ বুজলেই আব্বুর ফ্যাকাশে, শুকনো মুখটা ভেসে উঠছে। কিছুতেই নিজেকে শান্তনা দিতে পারছি না আমি। কিছুতেই না!
‘ আর কিছু? ‘ বললো ভাইয়া। আমি চোখের পানি মুছে নিলাম। শুকনো ডোগ গিলে বলে উঠলাম, ‘ কোথায় ছিলেন এ দু রাত? ‘
‘ এটা কি না জানলেই নয়? ‘
বলেই চলে যেতে যাচ্ছিলেন উনি। আমি পিছু ডেকে শক্ত গলায় বললাম,
‘ বলেছিলেন সবটা বলবেন! তাহলে যে পালাচ্ছেন? ‘
থেমে গেলো সিয়াম ভাইয়া। খানিক ঠায় দাড়িয়ে রইলো। এরপর নরম গলায় বললো,
‘ অবিশ্বাস,ভুল, আর ঘৃনা! তিনটে জিনিসই রয়েছে আমার প্রতি তোর। এতটুকু ভালোবাসা, বিশ্বাস নেই। কি বলবো? হাহ্! ‘
শেষের কথাটা কষ্টে জর্জরিত শোনায়। চাপা আর্তনাৎ নিয়েই স্হান ত্যাগ করলো সিয়াম ভাইয়া। জলভর্তি আখিতে আকাশের দিকে তাকালাম। অন্ধকারে ছেয়ে গেছে ধরনী।
____
অর্ধেক রাত চিন্তায় কাটলো। সকালের তির্যক রোদ মুখে পড়তেই হকচকিয়ে উঠলাম। তাড়াতাড়ি উঠতে গিয়ে আজও আটকে গেলাম। উনি জড়িয়ে রেখেছেন আমায়। আস্তে করে হাত সড়িয়ে উঠে বেলকনির পর্দা সরাতেই মুখে চকচকে রোদ পড়লো। মুখচোখ কুঁচকে নিলাম। এরপর পড়লো মাথায় হাত! এত বেলা হয়ে গেছে? আর আমি পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিলাম? আজ তো আমায় কলেজেও যেতে হবে! আবারো বেডের পাশের টেবিলটায় রাখা ফোন অন করে দেখলাম সারে নয়টা অলরেডি বেজে গেছে! তড়িৎ গতিতে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে ফিরে এসে রেডি হয়ে নিলাম। উনি এখনো ঘুমাচ্ছে। ডাকলাম না! বেড়িয়ে পরলাম রুম থেকে। একটু তাড়াহুড়ো করে নিচে নেমে ছুটে গেলাম রান্না ঘরে। এ সময় মামী রান্নাঘরেই থাকে।
‘ কি রে তুই খাবি না? কই যাচ্ছিস রেডি হয়ে? ‘
আমি ভেতরে গেলাম রান্নাঘরের। বাদাম ভাজছে মামী। বাদাম আমার খুব প্রীয়। গরম গরম কেবল নামালো মামী। বললাম,
‘ সকাল সকাল বাদাম বাজছো যে? ‘
‘ আর বলিস না। সিয়ামের আব্বু প্রতিদিন সন্ধ্যায় টিভি দেখে আর বাদাম খায়। কাল শেষ হয়ে গিয়েছিলো। তাই হুকুম এসেছে বাদাম ভাজার। ‘
‘ আমি নিবো কয়েকটা? ‘
ছোট্ট শিশুর মতো তাকিয়ে ভিজে গলায় বললাম। মামী ঠাট্টা হাসলো। বললো,
‘ নিবি তো এভাবে বলার কি আছে? নে। ‘
কয়েকটা বললেও গরম বাদাম কয়েক মুঠো করে ব্যাগে নিলাম। এরপর হাতে কতগুলো নিয়ে তাড়া দিয়ে বললাম,
‘ আমি আসছি। আমার দেড়ি হচ্ছে। ‘
‘ একটু খেয়ে যা। ‘
‘ খেয়ে নিবো চিন্তা করো না। ‘
‘ সাবধানে যাস। ‘
বেড়িয়ে পড়লাম বাড়ি থেকে। বাড়ির গাড়ি করে আমি কলেজে যেতে পারবো না সেটা কাল সাফ বলে দিয়েছি সিয়াম ভাইয়াকে। উনি রাতে তর্ক করেছেন। কথা বলার মুড ছিলো না বলে চুপ ছিলাম। তাই বলে কি গাড়ি করে যাবো নাকি? আমার যে বন্ধবী, ওরা সারাক্ষণ মজা নিবে। তাই রাস্তায় গিয়ে দাড়ালাম রিকশার আশায়। কিছুক্ষণ পর রিকশাও পেলাম আমি। উনি কলেজে নামিয়ে দিলেন।
গেটেই দাড়িয়ে তিশা, তন্নি আর প্রিয়। একটু দুরুত্ব নিয়ে তাকিয়ে আছে সামি। আমি রিকশা থেকে নেমে ভারা মিটিয়ে এগিয়ে গেলাম ওদের দিকে। সবাই গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে আমার দিকে। ভ্রুযুগল কুঞ্চিত করে প্রশ্ন করলাম,
‘ এমন পেঁচার মতো মুখ করে দাড়িয়ে আছিস কেন তোরা? ‘
তিশা রাগান্বিত হয়ে বললো, ‘ তুই কি ভেবেছিস আমরা কিছু বুঝি না? ঘাসে মুখ গুজে চলি? ‘
সাবধানে বললাম, ‘ মানে? ‘
তন্নি এগিয়ে এলো আমার কাছে। বললো,
‘ এইযে তুই বিয়ে করে নিয়েছিস, আর আমাদের বলিসনি। শেষে তোর হাসবেন্ড এসে কিনা আমাদের চমকে দিলো। আর তুই ও পালিয়ে গেলি সেদিন। কিন্তু এরপর যেদিন ভর্তি ডেট ছিলো সেদিনও এলি না! আমরা বুঝিনা মনে করেছিস? ‘
তন্নির গম্ভীর কন্ঠে হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। প্রিয়োর মতো শান্তশিষ্ট ছেলেটাও এসে দাড়ালো আমার সামনে। কন্ঠ খিচে বললো,
‘ বিয়েতে ইনভাইট করিসনি এখন কি ট্রিটও দিতে চাচ্ছিস না? আমাদের সিয়াতো এমন হাড়কিপটে ছিলো না? কি রে সামি…
বলেই সামির দিকে তাকালো প্রিয়। দূরে দাড়ানো দেখে বিরক্ত কন্ঠে বললো,
‘ দূরে কি করিস? বল তাইনা? সিয়া এমন হারকিপটে ছিলো বলতো? ‘
কিছু বললো না সামি। বুঝলাম ওদের উদ্দেশ্য। শান্ত গলায় বললাম,
‘ যেহেতু হুট করে, আমার অপছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে সো আমি কোন ট্রিট ফ্রিট দিতে পারছি না। তোরা ভর্তি হয়েছিস? হলে থাক, না হলে আমার সাথে চল ভর্তি হতে। ‘
‘ এটা ঠিক হচ্ছে না কিন্তু। ‘
তন্নির কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠলো। কিন্তু যে যাই বলুক এদের আমি খাওয়াতে পারবো না। আমাদের ভবনের নিচে গেলাম ভর্তি হতে। হলাম ভর্তি। ওরা পুরোটা সময় আমার পিছুনে ঘুরলো। আমি আবারো সবাইকে বললাম,
‘ তোরা বিলিভ কর! এ বিয়ে হুট করে হয়েছে। আমি রাজি ছিলাম না। আমার ওনাকে পছন্দও না। তাই এসব ট্রিট আমি দিতে একদমই পারবো না। ‘
‘ কাকে তোর অপছন্দ আরেকবার রিপিট কর সিয়া। ট্রিট আজ হবেই। হতেই হবে। ‘
সিয়াম ভাইয়ার গলা শুনতেই কলিজা কেঁপে উঠলো। পিছনে তাকাতেই দেখলাম কোটের হাত ঠিক করতে করতে এদিকেই আসছেন উনি।
#চলবে…
#আমার_সংসার
লেখক:হৃদয় আহমেদ
পর্ব ১২
‘ তুই কি যেন বললি? আরেকবার বল! কাকে যেন পছন্দ হয়নি বলছিলি? ‘
আমি স্তব্ধ! পায়ের মাটি শিরশির করছে। শুকনো ডোগ গিলে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে। অকপটে আমাতেই তার দৃষ্টি স্থির! কোথথেকে তিশা ছুটে এসে বলে উঠলো,
‘ আরে দুলাভাই, আমি বলছি! ও বলছিলো….’
কোমরে জোরে চিমটি কাটলাম ওর কোমরে। কথা বলা থেমিয়ে আমার দিকে রাগে ঝলসানো চোখে তাকালো। ফিসফিস করে বললাম, ‘ বলিস না ওনাকে। ‘
তিশা আরও জোড়ে চেচিয়ে উঠে বলে,
‘ কেন বলবো না? আমি বলছি দুলাভাই, আপনাকে নাকি ওর পছন্দ হয়নি। হুট করে বিয়ে হয়েছে। তাই আমাদের ট্রিট মিস করতে বলছে। জানেন আপনি? আগে ও এমন ছিলো না। ক্লাস টেস্টে ফুল মার্কস পেলে পর্যন্ত আমাদের ভেলপুরি খাওয়াতো। বিয়ের পর কি টাকা জমানো শুরু করেছে নাকি? ‘
চোখদুটি বড়বড় করে তাকালো ভাইয়া আমার দিকে। রাগে শরীর কিড়মিড় করছে। সব বলে দিলো? আরে আমায় আরেকটু জোর করলেই তো বিরিয়ানি খাওয়াইতাম। হাটে হাড়ি না ভাঙলে চলছিলো না বেদ্দপ মহিলাটার? হা হুতাশ করছিলাম, সিয়াম ভাইয়া নির্দ্বিধায় বলে উঠলো,
‘ ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য টাকা জমাচ্ছে সিয়া। কি রে? তাইনা? ‘
বিস্ফোরিত চোখে তাকালাম ওনার দিকে। মুখে বাকা হাসি! রাগ,লজ্জায় পাগল লাগছে নিজেকে! এগুলোর সামনে এসব না বললেই চলছিলো না? কলেজ লাইফ শেষ! এরা সারাক্ষণ জ্বালাবে। তিশার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ঠোঁট টিপে হাসছে ও। প্রিয় স্বাভাবিক, কিন্তু তন্নি হাসি আটকাতে পারলো না। হো হো করে হেঁসে উঠলো। উনি আবারো বললেন,
‘ ওকে নাও স্টপ দিস লাফিং! সিয়া, তুই ট্রিট দিবি তো? ‘
দাঁতে দাঁত চেপে রক্তচক্ষু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে। গা জ্বালানো বাকা হাসি হাসছেন উনি। মুখ বাকিয়ে বললাম,
‘ না। পারবো না। ‘
‘ ওকে লিসেন, সিয়া আমাদের সন্তানের জন্য টাকা জমাচ্ছে সো ওকে ঘাটিয়ে লাভ নেই। আজ সবাইকে ট্রিট আমি দেবো! যে যা খেতে চাও খেতে পারবে। চলবে? ‘
তন্নি খুশিতে গদগদ! প্রিয় একটু হাসলো। তিশা একটানে বলে উঠলো, ‘ চলবে মানে? দৌড়াবে। ‘
‘ তাহলে চলো সবাই। ‘
তন্নি ওনার কাছে গিয়ে হাত এগোতেই উনি বাড়িয়ে দিলেন হাত। আমার দিকে একপলক তাকিয়ে হাত জড়িয়ে নিলো তন্নি। পরপুরুষের হাত ধরে যেন মজা পেয়েছে ও। মুখের ভঙ্গিমায় তাতে স্পষ্ট! সবাই চলতে লাগলাম। কয়েকপা এগিয়েই থেমে গেলো সিয়াম ভাইয়া। থামলাম সকলে। উনি পিছনে তাকিয়ে হাঁক ছাড়লেন,
‘ সামি..আসো! ‘
বেমালুম ভুলে গেছিলাম ওর কথা। পিছু ফিরে দেখলাম দূরেই দাড়িয়ে ও। আসলো না সামি। সিয়াম ভাইয়া তন্নির হাত ছেড়ে আমার কাছে এসে বললেন,
‘ যা ওকে নিয়ে আয়। ‘
অবাক চোখে তাকালাম। উনি ফের বললেন,’ তুই ডাকলে নিশ্চয়ই আসবে। ‘
একপা একপা করে হেটে ওর কাছে। চোখদুটি বিষন্ন ওর! শান্ত গলায় বললাম,
‘ আয়, তুই যাবি না? ‘
‘ ভালো লাগছে না। তোরা যা। ‘ কন্ঠ খাদে সামির। আমি মুচকি হেঁসে ডানহাত ধরে নিলাম ওর। টানতে টানতে বললাম,
‘ ট্রিট খাওয়ার সখ জেগেছিলো না? আয়, খেয়ে যা। ‘
চুপচাপ চলে এলো আমার সাথে। আকাশের সূর্য কালো মেঘের আড়ালে ডাকতে ব্যাস্ত। আমরা সকলে একটি পাচঁতারা রেস্টুরেন্টে গিয়ে উঠলাম। সবাই সবার মন মতো ওর্ডার করলো। কিন্তু সামি করলো না। চুপ করে টেবিল ক্লথের দিকে তাকিয়ে আছে। ও কাচ্চি খেতে ভালোবাসে। তাই ওর ওর্ডারটা আমি দিলাম। খাবার পরিবেশন করা হলো বেশ সাজিয়ে গুজিয়ে। এরিমধ্যে বৃষ্টি শুরু হলো। সকলে খেয়ে নিলাম। ভাইয়া বিল মিটিয়ে এলো। বৃষ্টি কমার নাম নেই। ঝুম বৃষ্টি নামছে। থেকেথেকে মেঘ ডাকছে। এবারের শিতকাল অন্যরকম। হুট করেই বর্ষার দেখা মিলছে।
বৃষ্টি একটু কমতেই সবাই বেড়িয়ে পড়লাম। আকাশের হাব ভাব ভালো নয়। আবার বৃষ্টি আসতে পারে। সবাই চলে গেলো যে যার মতো। রাস্তায় নামতেই ওনাকে বললাম,
‘ গাড়ি এনেছেন? ‘
উনি ফুটপাতে উঠতে উঠতে বললেন,’ না। ‘
চুপ করে হাটছি। একটু এগোতেই উনি বলে উঠলেন,
‘ আমায় ডাকিস নি কেন তুই? ‘
ভ্রু কুঁচকে বললাম,’ কখন? ‘
‘ এইযে একাএকলা চলে এলি। ‘
কিছু বললাম না। উনি আমার উপর অধিকার ফলাচ্ছেন? কোন সাহসে? চুপচাপ হাঁটছি। উনি থেমে গেলেন। বিরক্ত চাউনিতে তাকালাম ওনার দিকে।
‘ ভর্তির দশ হাজার টাকা কই পেয়েছিস? ‘
বাজ পড়লো মাথায়। উনি ফর্ম ফিলাপের ব্যাপারে জানলেন কিভাবে? চুপই রইলাম। এ বিষয়ে কথা বলতে আমি ইচ্ছুক নই।
‘ কি হলো বলছিস না যে? ‘
‘ ছিলো আমার কাছে। ‘
‘ তুই তোর আব্বুর কাছে চেয়েছিস? ‘
সন্দিহান কন্ঠ ওনার। স্বাভাবিক কন্ঠে বললাম, ‘ না। ছিলো আমার কাছে। ‘
‘ আমায় বললে কি হতো? ইভেন, আমি রাতেই ভেবে রেখেছি তুই আমি একসাথে আসবো। ‘
‘ প্রয়োজন ছিলো না, তাই ডাকিনি। ‘
আবারো হাঁটতে লাগলাম দুজনে।
আমার কেন জানি বিশ্বাসই হচ্ছে না উনি গাড়ি ছাড়া এসেছেন। এখনো ক্লাস শুরু হতে অনেক দেড়ি। এরমধ্যে আমাকে কি আর বাড়ি থেকে বের হতে দিবে? চিঠির মেয়েটা ত্রিধা আপু কি’না জানতেই হবে আমায়! আর ওই বাচ্চাটাই বা কার? এরজন্য সবার প্রথমে প্রয়োজন ত্রিধা আপুর নাম্বার। মাঝরাস্তায় দাড়িয়ে পড়লাম। উনিও থেমে বললেন, ‘ বই কিনবি? ‘
‘ না। একটা কথা রাখবেন? ‘
আমার প্রশ্নে কিছু ভাবলেন উনি। এরপর বললেন, ‘ রাখার মতো হলে অবশ্যই রাখবো। ‘
‘ ত্রিধা আপুর নাম্বারটা আমার চাই। দিবেন প্লিজ? ‘
একচোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো সিয়াম ভাইয়া। তার চোখদুটি কেমন! বললেন,
‘ এতটা অবিশ্বাস করিস না! আর কত পুড়াবি আমায়? নতুন করে সব শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্যের লিখন হয়তো অন্যকিছু ছিলো। তাই পারছি না। হয়তো পারবো ও না! ‘
বলেই আমার হাতটা ধরে নিলেন উনি। রাস্তায় নেমে ট্যাক্সিতে বসালেন আমায়। যদি নির্দোষ হতো, তাহলে অবশ্যই দিতো। কেন দিচ্ছেন না উনি? ট্যাক্সি চলতে লাগলো। আমি বাইরে তাকিয়ে। যে করেই হোক আমায় ত্রিধার নাম্বার কালেক্ট করতেই হবে। আর এ মিশন ফুলফিল হবে রাতে। গভীর রাতেই ওনার ফোন থেকে নাম্বার চুড়ি করবো আমি। বসে বসে সব কটা বাদাম খেয়ে নিলাম। পার্ফেক্ট ভাজা হয়েছিলো। ওনার দিকে তাকাইনি।
গাড়ি বাড়ির সামনে এসে থামলে আমি নেমে গটগট করে হেঁটে বাড়িতে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে কাঁধে ব্যাগ নামিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে এলাম। অপেক্ষা রাতের!
____
দুপুর গড়িয়েছে। শিতল বাতাসে হাত, পা কাঁপছে! আজ আর গোসল করবো না। এতোক্ষণ মামীর সাথে গল্প করেছি। কিছুই ভালো লাগছে না। গোসল না করলেও কেমন একটা লাগে। সবমিলিয়ে বিরক্ত আমি! কোনকিছুই ভালো লাগছে না। একপা একপা করে রুমে ডুকলাম। কারো বিরাট ফরসা পিঠ দেখে চোখ খিচে নিলাম। ইশশ! এতটুকু পরিমান লজ্জা নেই ওনার? শুধু টাওয়াল পড়ে ঘরে কেন ঘোরাঘুরি করছেন উনি? চোখ বন্ধ রাখার পরও চোখের সামনে উদোম পিঠ ভাসছে । কপাল কুঁচকে বলে উঠলাম,
‘ আপনার লজ্জা নেই মিস্টার? ঘরের ভিতরে টাওয়াল পড়ে ঘুরছেন আপনি? ‘
কোন আওয়াজ এলো না। ভাবলাম আমায় দেখে হয়তো পালিয়েছেন উনি। আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালাম। উনি সয়ং সামনে দাড়িয়ে। লজ্জায় মুখ লাল হয়ে উঠলো। তড়িঘড়ি ঘর থেকে বেড়িয়ে অস্ফুটস্বরে বললাম,’ বেয়াদব লোক! লাজ-লজ্জা কিছু নেই! ‘
_____
মধ্যোরাত! বাড়ির গলিতে নেড়ি কুকুরগুলো ঘেউঘেউ করছে। অনেক কষ্টে এতো ঠান্ডায়ও জেগে আছি। ত্রিধা আপুর নাম্বার আমার লাগবেই লাগবে। বালিশের পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে দেখি প্রায় একটা বাজছে! এত রাতে নিশ্চই ভাইয়া জেগে নেই? বিছানা থেকে উঠে পড়লাম। সারা শরীর ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে। আস্তে করে হেঁটে তার কাঁধে কাছে গেলাম। পাশের টেবিলে ফোন রেখেছেন উনি। ফোন ঠান্ডায় বরফ হয়ে গেছে। হাত থরথর কাঁপছে আমার। ঠান্ডায়, নাকি উত্তেজনায়? জানা নেই। ভাগ্য এতটাই ভালো যে ফোনে লকটা অবধি নেই। তারাতাড়ি সেভ করা নাম্বার গুলো দেখতে লাগলাম। ” ত্রিধা ” নামের দুটো নাম্বার আছে। দুটোই আমার ফোনে সেভ করে রেখে গায়ে চাদর জড়িয়ে নিলাম। বেলকনিতে এসে কয়েকবার ফোন করলাম দুটো নাম্বারে। ত্রিধা আপু রিসিভ করছে না! বিরক্ত হয়ে ঘরে চলে এলাম। সবাই কি ফোন ‘ Do Not Disturb ‘ করে ঘুমায় আমার মতো? তপ্তশ্বাস ছেড়ে বিছানায় বসলাম। কতশত আশা, সব ভেঙে গুঁড়ো গুড়ো হয়ে গেলো। যখন শুব তখনি অনুভব করলাম খিদে লেগেছে। ও বাড়িতে রান্নাঘরে বিস্কুট রাখা থাকতো। গভীর রাতে উঠে উঠে খেতাম। কিন্তু আমিতো জানি না কোথায়, এবং আসলেই আছে কি’না। না না! অবশ্যই কিছু না কিছু থাকবে। গাভীর রাতে চুরির উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়লাম ঘর থেকে। রান্নাঘরে এসেই ঘুজতে লাগলাম খাবারের কৌটা। অনেক খুজেও কিছু পেলাম না। কই রাখছে সবকিছু? হঠাৎ চোখে পড়লো একটা লাল কৌটা। সকলে বাদাম ভাজার সময় মামীর পাশে ওটা দেখেছিলাম। বাদাম দিয়েই কাজ সারতে হবে! এছারা উপায় নেই! বাদামের কৌটা হাতে নিতেই কেউ বিকট গলায় চেঁচিয়ে উঠলো,
‘ চোর..চোর…! রান্নাঘরে চোর ডুকেছে। ‘
শুনতেই বুক চ্যাত করে উঠলো। শ্বাসরুদ্ধ চোখে পিছনে তাকাতেই দেখলাম সিয়াম ভাইয়া দাড়িয়ে। একছুটে গিয়ে মুখ চেপে ধরে বললাম,
‘ চিৎকার করবেন না। আপনাকেও দেব! ‘
‘ সত্যি তো? ‘
‘ তিন সত্যি। ‘
#চলবে….