আমার_সংসার,পর্ব ৭,৮

0
1516

#আমার_সংসার,পর্ব ৭,৮
লেখক:হৃদয় আহমেদ
পর্ব ৭

আকাশে চাঁদ উঠেছে। থলের মতো গোল চাঁদ। ফুরফুরে বাতাস বেলকনি থেকে এসে গায়ে লাগছে। কিন্তু মন ছুঁতে পারছে না কিছুই। বুক ব্যাথায় বিষিয়ে উঠেছে। ভেঙে টুকরো টুকরে হয়ে গেছে আমার মন। জানতাম সম্পূর্ণ দায়বদ্ধ এ বিয়ে! এই তো তার মুখোশ। তার আসল আচরন! কতটা অহংকার তার প্রফেশনে। বুক চুরমার হয়ে আসছে। ভেবেছিলাম হয়তো ভালোবাসেন আমায় উনি। কিন্তু উনি খুনি? কার খুনি? কোন মায়ের বুক খালি করেছে সিয়াম ভাইয়া? তাই ত্রিধা আপু তাকে ছেড়ে চলে গেছে? চোখ ফেটে পানি গড়িয়ে পড়লো। বুক ঝলসে যাচ্ছে। অসহনীয় যন্ত্রনায় হেঁচকি তুলে হু হু করে কেঁদে উঠলাম।

‘ সিয়া! ‘

পুরুষালি কন্ঠে কেঁপে উঠলাম। দু হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে মুছে নিলাম চোখ। ঘৃনাভরা চোখে তাকালাম সামনের মানুষটার দিকে। ছোট ছোট চোখে আমাকেই দেখছিলেন উনি। চিঠি তারাতাড়ি বালিশের নিচে রাখলাম। কেবল প্রথম লাইন পড়েছি। পুরোটা পড়া শেষ হয়নি। হাত কাঁপছে, বুক কাঁপছে! কোন খুনি সামনে দাড়িয়ে আমার। আর তাও সে আমার স্বামী। সন্মোধনটা ছিলো ‘ খুনি সিয়াম ‘ দিয়ে। কেন? কি আছে পুরো চিঠিতে?

,,ফ্লাসব্যাক,,

ছাঁদে অনেকক্ষণ দাড়িয়ে আছি। একটু ব্যাথা করছে পা। আব্বু কি আমাদের এখানে আসতে বলে নিজেই কোথাও চলে গেলো নাকি? ক্লান্তিভরা পূর্ন দৃষ্টি নিয়ে তাকালাম সিয়াম ভাইয়ার দিকে। হালকা বাতাসে সামনে চুলগুলে এলোমেলো ভাবে উড়ছে। পাতলা, মৃসন চামড়া ভরসন্ধ্যায় কত স্নিগ্ধ,সুন্দর দেখাচ্ছে। লোকটিকে যত দেখি মুগ্ধতা বাড়ে। বয়স বাড়ার সাথেসাথে তার কি সৌন্দর্য ও বৃদ্ধি পাচ্ছে? উনি খোলা আকাশ দেখছেন। তারাদের মেলা বসেছে আকাশে। হঠাৎ ই আমার দিকে তাকালো সিয়াম ভাইয়া। একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। তড়িৎ গতিতে চোখ সরিয়ে নিলাম আমি।

‘ কি দেখছিলিস হুম? ‘

আটকানো গলায় বললাম, ‘ কই না, না নাতো। ‘
বলেই আবারো বলতে লাগলাম,

‘ কি জন্য ডেকেছে কি বলেছে আব্বু? ‘

‘ না। ‘

‘ আপনি বরং রুমে চলে যান। ঠান্ডা লাগবে। ‘

‘ আর ইউ ওকে সিয়া? ‘

কপাল কুঁচকে তাকালাম আমি। বললাম,

‘ কেন? ‘

‘ একজন ডেকেছে, আর তার কথা না শুনেই চলে যাবো? ‘

‘ আপনার যে অল্পতেই ঠান্ডা লাগার বেরাম আছে। ভুলে গেছেন? ‘

উনি চমকে উঠলেন। আবাক কন্ঠে বললেন, ‘ মা বলেছে? ‘

‘ না। আগে দেখতাম, আপনি রাতে কখনোই অনু, তনু আপু আর অলভীর সাথে ছাঁদে আসতেন না। ‘

‘ তুই লুকিয়ে দেখতিস আমার কাজকর্ম? ‘

মুখ বাঁকিয়ে বললাম,’ বয়েই গেছে! ‘

চোখ সরিয়ে কিছু সময় দাড়িয়ে রইলো সিয়াম ভাইয়া। কিছু বলবে না? কিছু একটা ভেবে চলেও গেলো। এখনো ওনার অফিসের অনেক কাজ পরে আছে। এ বাড়িতে ওয়াই-ফাই না থাকায় উনি কাজ করতে পারছেন না। অফলাইন প্রবলেম গুলো নিয়েই দুপুর থেকে কাজ করছিলেন।

উনি যেতেই ছাদে রাখা বেঞ্চে বসে পড়লাম। আব্বু এলো। আমার পাশে বসলেন উনি। চাঁদের আলোয় চারপাশ আলোকিত, মুগ্ধতা কেড়ে নিতে বাধ্য মন। আব্বু খুব যত্নে মাথায় হাত রাখলেন। আমি বলে উঠলাম,

‘ কি বলবে? ‘

আব্বু হাত সরিয়ে দুহাত বুকে গুজে বললেন,’ কলেজ ভর্তি হচ্ছিস কবে? ‘

‘ কাল যেতে বলেছে একবার। ‘

‘ ও বাড়িতে কোন অসুবিধা হয়? ‘

মাথা নাড়িয়ে বললাম, ‘ কই না তো। ‘

‘ জানিস সিয়া, ত্রিধা যখন সরাসরি বললো ও এ বিয়েতে আসবে না, তখন সিয়ামের কি অবস্থা হয়েছিলো? তোর মামী-মামা খুব আকুতি নিয়ে বলেছিলেন যেন সিয়ার সাথে বিয়েটা দেই। আমি রাজি ছিলাম না। অনেক জোর করলো, তাই….’

‘ তাই তুমি আমার চিন্তা না করে রাজি হয়ে গেলে। তাইতো? ‘

‘ পরিস্থতির চাপে রে মা। ‘

শান্ত করলাম নিজেকে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এতটুকু কারনের জন্য আব্বু কিছুতেই এ বিয়েতে রাজি হতে পারে না। আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে আব্বুর কতশত ভাবনা ছিলো, আর এইটুকুতেই বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেলো আব্বু? এও সম্ভব? কন্ঠনালি খিঁচে বলে উঠলাম,

‘ ব্যাস এতটুকুই কারন এ বিয়ের? ‘

‘ হুম। ‘ কন্ঠ শান্ত শোনালো। তবে কি আমিই ভুল ভেবেছি? আমি যতটা ভাবতাম ততটা চিন্তিত ছিলো না আব্বু?

‘ তুই নাকি খুব রাগারাগি করিস সিয়ামের সাথে? ‘

টনক নড়লো। চমকে তাকালাম আব্বুর দিকে।

‘ কখনোই না। কে বলেছে? ‘

‘ আমার মনে হলো। ‘

বুঝেশুনে কথা বলা শক্তপোক্ত লোকটা অদ্ভুত সব কথা বলছে। চোখ ছলছল করে উঠলো। বটগাছের মতো উঁচু মস্তিষ্কে ভাবা লোকটার কথাগুলোয় আহত করছে আমার বুক। না না। শক্ত হতে হবে আমায়। সবটা জানতে হবে। কয়েকটা প্রশ্ন কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে আমায়। তার মধ্যো একটি হলো আজ কোথায় গিয়েছিলো আব্বু। বসে থাকতে পারছি না। মনে হচ্ছে পাশে বসে থাকা লোকটার বুক ফেটে যাচ্ছে। গোপন কথাগুলো না বলার কষ্ট একটু একটু করে নিঃশেষ করে দিচ্ছে তাকে। আমি উঠে দু পা এগোতেই বলে ওঠে আব্বু,

‘ সিয়া…’

পিছু ফিরতেই আবারো বলতে লাগলো আব্বু,

‘ যা কিছুই হয়ে যাক সিয়ামকে ভুল বুঝবি না। পৃথিবী উল্টে গেলেও না। ‘

কিছুই বললাম না। ছুটে রুমে চলে এলাম। ভাইয়া রুমে নেই৷ কিন্তু উনি তো রুমে আসবেন বলেই চলে এলেন ওখান থেকে। ওয়াশরুমের দরজাও খোলা। তাহলে কি নেই উনি রুমে? হুট করেই চিঠির কথা মনে পড়লো। অজানা অনুভূতি হচ্ছে। দুপুরে চুপিসারে বইয়ের ভাজে রেখেছিলাম। টেবিলে গিয়ে বইয়ের ভাজ থেকে চিঠিটা বের করে রুমে এলাম। বুক ধুকপুক করছে। জানি না কেন, চিঠিটা হাতে নিলেই বুক ধুকপুক করে, হাত নিশপিশ করে। দামামা বাজে বুকে। দ্রিম, দ্রিম শব্দের উৎপত্তি হয় বুকে।

চিঠিটা নিয়ে বসে পড়লাম বিছানায়। আলতো করে ভাজ খুললাম চিঠির। অসম্ভব সুন্দর হাতের লেখা। মুগ্ধ নয়নে প্রথম লাইনটুকু পড়ে চোখ ভর্তি ঘৃনা জমলো।

‘ খুনি সিয়াম ‘

চোখ ছানাবড়া। আমি কি ঠিক পড়লাম? সত্যিই কি খুনি সিয়াম লেখা? চোখ বোলালাম চিঠির পাতায়। ভুল পড়িনি আমি। সুন্দর করে শুরু করেছে আগুন্তকঃ! লিখেছে খুনি সিয়াম দিয়ে শুরু।

#চলবে….

#আমার_সংসার
লেখক:হৃদয় আহমেদ
পর্ব ৮

‘ তোর চোখে পানি কেন সিয়া? কাঁদছিস কেন তুই? ‘

বলতে বলতে আমার পাশে বসে চোখ থেকে পানি মুছাতে লাগলেন সিয়াম ভাইয়া। ঘৃনায় শরীর রি রি করে উঠলো। কিন্তু প্রকাশ করলাম না। দ্রুত চোখের পানি মুছে সরে গেলাম ওখান থেকে। সবটা না জেনে দোষারপ করবো না আমি। বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালাম। হালকা বাতাসে চুলগুলো অবাধ্য হয়ে উড়ছে। আমার এমন কান্ডে উনি কি আমার দিকেই তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছেন? অনবরত শুকনো ডোগ গিলে দাড়িয়ে রইলাম। কনকনে শিত! শরীরে লোম খাড়া করে তুলছে। ডান হাত কাঁপছে ঠান্ডায়। উনি পিছনে এসে দাড়ালেন আমার। পদধ্বনি কর্নকুহরে হানা দিলো।

‘ সিয়া কি হয়েছে? এভাবে কাঁদছিলিস কেন তুই? আমায় বল! ‘

অস্ফুটস্বরে বললাম,’ কিছু হয়নি। ‘

‘ তাহলে কাঁদছিলি কেন? ‘

‘ এমনি। ‘

‘ আব্বু কি বললো? ‘

‘ কিছু না। বিয়ের কাহিনিটুকু শুধু। ‘

‘ তোর চোখ আজ অন্যকিছু বলছিলো সিয়া। কি লুকাচ্ছিস তুই? ‘

চমকে তাকালাম ভাইয়ার দিকে। তিক্ন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে উনি। গলা শুকিয়ে আসছে। চোখ দেখে মানুষ বোঝার ক্ষমতা উনার আছে তা অজানা ছিলো না আমার! তাহলে কেন ওভাবে তাকালাম আমি? এটা কি ভুল ছিলো আমার? যদি চিঠিতে সত্যিই খারাপ কিছু লেখা থাকে, তাহলেও কি আমি পিছিয়ে যাবো? ভয় পাবো?

হঠাৎ আমার দিকে এগোতে লাগলেন সিয়াম ভাইয়া। শুকনো গলায় ডোগ গিললাম। বেলকনির রেলিং খিঁচে নিলাম আমি। আমাদের দুরুত্ব হয়েক হাত। তবুও ভয়ে কলিজা শুকিয়ে আসছে। আরও এগিয়ে এলো সিয়াম ভাইয়া। এখন ব্যাবধান কয়েক ইঞ্চির। নিশ্বাস আটকে এলো। দম ফুরিয়ে আসছে। আমাদের মাধ্যবর্তী ফাক এক আঙ্গুল হবে। তার উষ্ণ,গরম শ্বাস মুখশ্রীতে আছড়ে পড়তে লাগলো। গুটিশুটি মেরে রেলিং এর ধারে দাড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ কোমর জড়িয়ে নিলেন উনি। বিস্ফোরিত চোখে তাকালাম ওনার দিকে। তার সূক্ষ দৃষ্টিজোড়া আমার চোখে কিছু খুজছে। হাতড়ে বেড়াচ্ছে আমার অস্বাভাবিক আচরণের কারন । হয়তো পায়নি! কোমরের হাতটি হেঁচকা টান দিতেই তার বুকে বাড়ি খেলাম। থমকে তাকালাম। একফোঁটা পানি লাগবে। গলা শুকিয়ে কাঠ! তার স্পর্শে শরীর রি রি করে উঠছে। অস্বস্তি হচ্ছে! চোখে ঘৃনা ঝড়ছে! উনি ঘোর লাগা কন্ঠে বলে উঠলেন,

‘ কিছুই লুকাচ্ছিস না? ‘

আমতাআমতা করে বলে উঠলাম,’ না, লুকাচ্ছি না! ‘

‘ আজ প্রথম তোর চোখদুটি খেয়াল করলাম সিয়া। বড্ড গভীর, নেশাভরা। ‘

তার কন্ঠ অচেনা লাগছে। এদিকে দমও শেষ! প্রানভরে শ্বাস প্রয়োজন আমার। আবারো আচমকা আমায় ছেড়ে দিলেন উনি। একটু দূরে দাড়িয়ে কিছু বিরবির করতে লাগলেন। এরপর বিছানায় দুরুম করে বসে পড়লেন। ঠোঁট ভিজিয়ে নিলাম। শ্বাস নিলাম কয়েকবার। এরপর সোজা বেলকনি থেকে দরজার সামনে এসে দাড়ালাম। পিছু ফিরে বললাম,

‘ খেতে আসুন। রাত বাড়ছে। ‘

বলেই চলে এলাম নিচে। বড়মা অনেক রান্না করেছে। কোন পদ বাদ দেয়নি। আব্বু টিভি দেখছে। বড়মাকে সাহায্য করার জন্য চলে এলাম রান্নাঘরে। যদিও জানি সব রান্না শেষ। তবুও বললাম,

‘ কোন সাহায্য লাগবে বড়মা? ‘

‘ উহুক। ‘

বলেই প্লেটগুলো হাতে তুলে টেবিলে চলে গেলো বড়মা। আমিও চলে এলাম। সার্ভ করতে চাইতেই ঝাড়লো আমায়। টেনেটুনে এনে বসালো টেবিলে। আব্বু আর সিয়াম ভাইয়াও চলে এলো। সকলে বসলাম টেবিলে। বড়মা প্লেটে প্লেটে ভাত দিচ্ছে। কোথথেকে তুষার ভাইও চলে এলো। এসেই বলে উঠলো,

‘ হ্যালো এভরিওয়ান। আর দুলাভাই, কখন এলে? ‘

উনি হাসলেন। বললেন,

‘ দুপুরে এসেছি৷ এসেছি থেকে তো তোমার টিকিটাও দেখতে পেলাম না। ‘

‘ ওহ্হো, একটু ব্যাস্ত ছিলাম। ‘

মামী তিক্ত চাউনি নিয়ে তাকালো তুষার ভাইয়ের দিকে। আক্ষেপ স্বরে বললো, ‘ তা তো দিনেদুপুরে সবসময় থাকে। ‘ বলেই হনহন করে চলে গেলো রান্নাঘরে। এখন নিশ্চিত বড়মা কাঁদবে। তার বুকের জ্বালা যে কতটুকু আমি জানি। মায়ের একটু কথা শুনলে কি হয় ভাইয়ের? আগে তো ভালোই ছিলো তুষার ভাই!

একটু পর মাছের বাটি হাতে এলো বড়মা। চোখ দেখলে যে কেউ বলে দিবে বড়মা কেঁদেছে। আমি প্লেটের দিকে চোখ রাখলাম।

‘ তা তুই কেমন আছিস বললি না সিয়া? ‘

মাথা তুলে চাইলাম। পরিক্ষিত চোখে আমার দিকে সিয়াম ভাইয়াও তাকিয়ে। আমি হাসি মুখে মাথা নাড়িয়ে বোঝালাম ভালো আছি।

এরপর সবকিছু ঠিক, শান্ত হলেও সিয়াম ভাইয়ার চোখ ঠিক, শান্ত হলো না। খাওয়ার মাঝে উনি বারবার আমায় অস্বস্তিতে ফেলেছেন। বারবার আমার দিকে তাকিয়েছেন সন্দিহান চোখে। তখনের কান্নার রেশ রয়ে গেছে তার মাঝে। পুরোটা সময় ওভাবেই চললো। খাওয়া শেষে এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে ছুটে চলে আসলাম রুমে। পরিকল্পনা করলাম, রাতে পুরো চিঠিটা পড়বো।

রাত দশটা! শুয়ে পড়েছি আমি। প্রতিদিন যেটা হয়, আজ সেটা হলো না। ভাইয়া সারে নয়টায় ঘুমিয়ে পড়লেও আজ ঘুমালো না। লাইট অফ করা, কিন্তু ল্যাপটপে ডুবে আছেন উনি। আজ এখনো ঘুমাচ্ছে না কেন উনি? ইচ্ছে করে? আমি এপাশ ওপাশ করতে লাগলাম। আমারো ঘুম আসছে না। কই এতো দেড়ি তো উনি কখনোই করেনা! আমার উশখুশ বুঝে বলে উঠলো সিয়াম ভাইয়া,

‘ আজও কি ঘুমাবি না পণ করেছিস? ‘

পাশ ফিরে তাকালাম ওনার দিকে। বললাম,

‘ আজও মানে? ‘

‘ কতদিন ধরে রাত জাগিস আমি জানি না মনে করেছিস? ‘

অবাক হলাম, কিন্তু প্রকাশ করলাম না। বললাম,’ আপনি তো এরও আগে শুয়ে পড়েন,তাহলে আজ কেন ঘুমাচ্ছেন না? ‘

‘ খটকা লাগছে! ‘

তড়িৎ গতিতে উঠে দাড়ালাম। হাসফাস করতে করতে বললাম, ‘ কেন? ‘

‘ এইযে তুই এমন করছিস! তার কারনেই। বাই দা ওয়ে, তুই ঘুমা। আমি নাটক দেখবো এখন। ‘

ভ্রুযুগল কুঁচকে বললাম, ‘ কানের কাছে বসে এখন নাটক দেখবেন? হবে না! ‘

‘ ইয়ারফোন আছে। ইডিয়ট! ‘

ফুঁসতে ফুঁসতে শুয়ে পড়লাম। উনি সত্যিই নাটক দেখতে লাগলেন। এভাবে অনেকক্ষণ চোখ বন্ধ রাখার পর কখন আমি ঘুমিয়ে পড়লাম, জানা নেই!

শিতের সকালে সূর্যের স্নিগ্ধ আলো মুখে পড়তেই চোখমেলে তাকালাম। হাই তুলে উঠতে গিয়েই বুঝলাম কারো বুকে আমি। কেউ জড়িয়ে শুয়ে আছে। ঘুমো ঘুমো চোখ মেলে তাকাতেই দেখলাম উনি জড়িয়ে রেখেছেন আমায়! সারা শরীরে শিহরণ বয়ে গেলো। হাত পা অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপতে লাগলো। হৃদপিণ্ড লাফাচ্ছে দ্রুত গতিতে। দম আটকে এলো আমার। উনি কেন জড়িয়ে রেখেছে আমায়? সারা শরীর পাথরের মতো নিথর হয়ে রইলো। কখন ঘুম ভাঙবে ওনার? আর কতক্ষন? হঠাৎ চোখ মেলে তাকালেন উনি। সারা মুখে রোদ পড়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে ওনার মুখশ্রী। লজ্জায় মুখ নামিয়ে নিলাম।

‘ ওয়াও! বেশ লজ্জাতো তোর মুখে? ‘

শিতল চোখে তাকালাম তার দিকে। উনি আমায় ছেড়ে উঠে গেলেন বিছানা থেকে। লজ্জায় জুবুথুবু হয়ে বসে রইলাম আমি!
___

বালিশের নিচ থেকে দ্রুত চিঠিটা বের করে ব্যাগে পুরে নিলাম। এরপর বেড়িয়ে গেলাম বাড়ি থেকে। যে করেই হোক রিকশায় বসে চিঠিটা পড়তেই হবে। রাস্তায় অপেক্ষা করতে লাগলাম রিকশার। একটু বাদে পেয়েও গেলাম। রিকশায় উঠতেই কলেজের নাম বলে দিলাম। এরপর নতুন ভাবে ভাজ খুললাম চিঠির। প্রথম কয়েক লাইনে বিভৎস খুনের বর্ননা! বমি গলায় এসে আটকালো আমার।

#চলবে…..

চিঠি? কালকে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here