#আমিই_কাবেরী,অন্তিম পর্ব
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
দরজা খুলতেই যে মেয়েটি আসলো সে আর কেউ নয়,স্বয়ং কাবেরী।জয় কাবেরীকে দেখে সোফা থেকে উঠে দারালো।ভয়ে আতঙ্কে জয় কাঠ হয়ে দারিয়ে আছে।চিপ বেয়ে ঘাম ছুটছে।বিষন্নদা সেই নিরবতা ভেঙ্গে বললেন
“কাবেরী,এসো, বসো এখানে”
কথাটি বলে হাতের কাছের বেতের চেয়ারটা কাবেরীর দিকে এগিয়ে দিলেন বিষন্নদা।কাবেরী মাথা নিচ করে এসে চেয়ারে বসলো।কাবেরীর দিকে জয় এখনো তাকিয়ে আছে।তার বিষ্ময়ের শেষ নেই।সামনে রাখা গ্লাসে বোতল থেকে জল ঠালতে লাগলো।তার নজর এখনো কাবেরীর দিকে।তার দিকে নজর থাকায় বোতলের জল গ্লাসে না পড়ে টেবিলটায় পড়ছে।বিষন্নদা বলে উঠলেন
“মিঃজয়,আপনি কি কোনো কারনে ভয় পাচ্ছেন? ”
“হু? না না,ভয়, না,আমি কিছু জানিনা,আমি,আমি কিচ্ছু জানিনা” কথাটা গ্লাসে জল ঢালা বন্ধ করে গ্লাসের জল এক ঠোকেই শেষ করেই বললো জয়।
জয়কে দেখে তার বাবা কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন।হঠাৎ তার ছেলের এমন অস্বাভাবিকতা তাকে কিছুটা বিচলিত করতে পেরেছে।তিনি এবার ভালোভাবে কাবেরীর দিকে তাকালেন।তীক্ষ্ণ কন্ঠে কাবেরীর উদ্দেশ্যে বললো-
“কে তুমি মা? তোমার নাম? ”
“জি,আমার নাম কাবেরী”
“এখানে আসার কারন জানতে পারি?আর তোমাকে দেখে জয় এতোটা ভয় পেয়ে গেলো কেন?”
এবার বিষন্নদা সামনে রাখা ফ্লাস্কে থেকে চায়ের কাপে চা ঠালতে ঠালতে বললেন-
“সেটা নাহয় আমিই বলি।আঙ্কেল এই মেয়েটির নাম কাবেরী।এর সাথে একটি পৈশাচিক ঘটনা ঘটেছে।ঘটনাটা ঘটিয়েছে আেনার অনেক কাছের একটা মানুষ।কি হয়েছে জানতে চান? ”
“হ্যা।”
“মিঃজয়,আপনি কি এখন স্বাভাবিক আছেন? ” জয়ের দিকে তাকিয়ে চায়ে চুমুক দিতে দিতে কথাটা বললো বিষন্নদা।জয় ভয়ার্ত চাহনিতে কাবেরীর দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বললো
“আমি ঠিক আছি।আমি ঠিক আছি”
“বেশ,তাহলে আপনি নিজের মুখেই নিজের কর্মের কথাটা বলুন।কে এই মেয়ে।কেনো এখানে,কিভাবে আপনি একে চেনেন সব খুলে বলুন”
“আমি কিচ্ছু জানিনা,” ঠোক গিলতে গিলতে দুই হাত দিয়ে দুই কান চেপে ধরে কথাটা বললো জয়।
“এখন এসব অভিনয় করে কোনো লাভ হবে না মিঃজয়।হয় নিজের মুখে শিকার করুন, নয়তো আপনার বিরুদ্ধে আইনি ব্যাবস্থা নিতে হবে। ”
জয় একবার নিজের বাবার দিকে,একবার বিষন্নদার দিকে,একবার কাবেরীর দিকে তাকাচ্ছে।আজ তার জীবনের সব থেকে খারাপ সময় উপস্থিত। জয়ের বাবা কিছুটা আঁচ করতে পেরে জয়কে কিছুটা ধমক দিয়ে বললেন
“কি হলো চুপ করে আছো কেনো?কে এই মেয়ে?কি সম্পর্ক তোমাদের বলো?”
বিষন্নদা চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে একটা সিগারেট ধরালেন।সিগারেটে টান দিতে দিতে জয়ের উদ্দেশ্য বললেন
“বলে ফেলুন।আপনার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার সময় এসে গেছে।বলুন,।”
জয় এবার বলতে শুরু করলো।সেদিন রাতের ঘটনা পুরোটাই বললো।কাবেরীর সাথে ঘরে কথা হওয়ার সকল বিষয় সে বললো।বলা শেষে জয় হাউমাউ করে কাঁদতে থাকা অবস্থায় তার বাবার পা জরিয়ে ধরে বললো
“বাবা আমায় মাফ করে দাও,আমি অন্যায় করেছি।কিন্তু আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।বাবা আমায় বাঁচাও তুমি”
জয়ের বাবা নিজের পা ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন-
“কুলাঙ্গার, তুই এতোটা নিচে নামবি আমি ভাবতে পারিনি।এতো আদরের, ভালোবাসার এই প্রতিদান দিলি?যখন যা চেয়েছিস তখন তাই দিয়েছি।তার এই মূল্য? চোখের সামন থেকে সর নইলে আমার হাতে আজ তোর খুন হবে।নিজের ছেলেকে খুন করে জেলে যাবো। ”
এরূপ অবস্থা দেখে কাবেরী কিছুটা ভয় পেয়ে গুটিসুটি হয়ে বসে আছে।চোখ মাটির দিকে করে এক হাতের সাথে আরেক হাত কর্দমর্দন করছে।বিষন্নদা বলে উঠলেন
“আঙ্কেল এটা সঠিক সমাধান না।আপনি বসুন।শান্ত হন”
তিনি সোফায় বসে পড়লেন।দুই হাত মাথায় রেখে নিজের চুল টানছে আর রাগে দাঁত কিটমিট করছে।বিষন্নদা জয়ের উদ্দেশ্য বললেন-
“এখন কি করবেন? জেলে যাবেন?ধ’ষ’নের বিচার কি জানেন?মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত হতে পারে। কি করবেন এবার?”
জয় নিশ্চুপ হয়ে দারিয়ে আছে।কাবেরী নিঃশব্দে চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছে।জয়ের বাবা বলে উঠলেন-
“আমি এই মেয়েকে আমার পুত্রবধু হিসেবে গ্রহন করছি।ওদের বিয়ে হবে।এই ঘটনা এখানেই শেষ হোক।এই ঘটনা যেনো আর কেউ না জানে।মিঃবিষন্ন,আপনার যত টাকা লাগে আমি দিবো,আপনি শুধু এই ঘটনার কথা কাউকে বলবেন না।”
মৌনতা ভেঙ্গে এবার কাবেরী বলে উঠলো –
“আপনারা কি মনে করেন নিজেদের? টাকা দিয়ে সবকিছু করতে পারবেন?আমি আজ ধ’র্ষি’তা হয়েছি,।এরকম কত মেয়ের শরীরে যে আপনার ছেলের ছোঁয়া আছে সেটা বলতে পারবেন? নাকি তাদেরও বউ হিসেবে নিয়ে আসবেন?”
সবাই নিশ্চুপ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।কাবেরী বলতেই থাকলো-
“আজ আপনাদের মতো কিছু লোকের জন্য আমাদের মতো মেয়েরা রাতে চলাফেরা করতে ভয় পায়।মনে মনে একটা চিন্তাই ঘুরপাক খায়।যে এই বুঝি কোনো মানুষরুপি হায়নার নজর তার ওপর পড়ে।এভাবে কত মেয়ের জীবনটা বিষাদময় হয়ে ওঠে।শুধু টাকা পয়সা,বড় স্কুল,কলেজে পড়ালেই বাবার দায়িত্ব পালন হয়না।রাত বিরেতে আপনার ছেলে নেশা করে ঘরে ফিরে।আপনি কখনো কিছু বলেছেন? বলেননি।আর আজ যখন সেই ছেলে একটা মেয়েকে রেপ করলো,সেই সত্যটা জানার পর আপনি কি বললেন? তাকে ছেলের বউ বানাবেন?ছিহঃ লজ্জা করলো না কথাটা বলতে? একটুও বাধলো না?শুনে রাখুন একটা কথা।আপনাদের মতো নিচ মন-মানসিকতার মানুষের বাড়িতে বউ হয়ে আসা কেন,আমার থুথু ফেলতেও ঘৃনা হয়।”
কথাগুলি বলে কাবেরী থেমে যায়।রাগে,লজ্জায় জয়ের বাবা দারিয়ে আছে।কোনো কথা বলছেন না।বিষন্নদা এবার বললেন-
“মিঃজয়। আপনি যা করেছেন এর মাফ বলতে কিচ্ছু নেই।আপনার শাস্তি হবে। কঠিন শাস্তি পেতে হবে আপনাকে।এ সমাজে ধ’ষ’কের কোনো স্থান নাই”
কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ আসে।জয়ের হাতে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে নিয়ে যায়।কোর্টে মামলা তুললে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।সেটা শুধু কারাদন্ড ছিলো না।তার সাথে মিশে ছিলো একটি মেয়ের বাধভাঙ্গা কষ্টের প্রতিশোধ।সমাজে ধ’র্ষ’কের কোনো স্থান নেই।
_________________________
এরপর কেটে গেলো প্রায় দুই বছর।বিষন্নদা তার বন্ধুর সাথে কথা বলে কাবেরীকে তার অফিসে একটা কাজ পাইয়ে দিয়েছিলেন।তার বন্ধুর নাম কাব্য।তাদের মধ্যে মন দেওয়া নেওয়াও হয়।যদিও কাবেরী তার জীবনে ঘটে যাওয়া কাল অধ্যায়টা কাব্যকে বলেছিলো।প্রতিত্তোরে কাব্য বলেছিলো “তোমার অতীত নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই।আজ থেকে তোমার বর্তমান এবং ভবিষ্যতের দায়িত্ব আমি নিতে চাই”।তাদের ভালোবাসা ছিলো মনের দিক থেকে। ছিলো না রুপের,ছিলোনা ছলনার।যেখানে ছিলো অপার ভালোবাসা,বিশ্বাস, শ্রদ্ধা। বেঁচে থাকুক তাদের মতো সত্যিকারের ভালোবাসা।বেঁচে থাকুক কাব্যর মতো প্রেমিক,যে কিনা যাকে ভালোবেসেছে তার অতীত জেনেও ভালোবেসেছে।
_______________________সমাপ্ত__________________________