আমিই_কাবেরী-02

0
629

#আমিই_কাবেরী-02
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

কুয়ো থেকে শেকড় ধরে ধরে ওপরে উঠলাম।চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম কুয়োটা সেই বিল্ডিং এর পাশেই,যেখানে সেই কাবেরী মেয়েটাকে দেখলছিলাম।মাথায় চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলাম।দারাতে পারছি না,সেখানে খানিকক্ষণ বসে নিজেকে সামলে নিতেই কারো পায়ের ছাপ লক্ষ করলাম।পায়ের ছাপটার শুরু কুয়ো থেকে এবং এর শেষ বিল্ডিং এর দেয়ালে।দেয়ালের যেখানে পায়ের ছাপ শেষ হয়েছে তার ঠিক ওপরের ঘরটায় আমি ছিলাম সেটা বেশ বুঝতে পারছি।

মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে হেলতে দুলতে রাস্তার কাছে গিয়ে একটা রিক্সায় করে বাড়িতে গেলাম।এখন রাত ১২ টা।ঘরের দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করে শুয়ে আছি আর ভাবছি মৃত মেয়েটা কিভাবে আসলো,তাকে মেরে ফেলেতো বিল্ডিং এর ওপর থেকে ফেলেও দিয়েছিলাম,কিভাবে বেঁচে ফিরে আসলো? আদৌ কি সে জীবিত? নাকি অশরীরী? তাছাড়া আরেকটি বিষয়, মেয়েটা অগ্নিদৃষ্টিতে জানালার বাহিরে তাকাতেই আগুন জ্বলে উঠলো কিভাবে?এগুলো কি আমার কল্পনা? ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো। একটা সিগারেট ধরালাম।সিগারেটের ধোয়ায় মনের বিষন্নভাবটা কাটানো দরকার।

সিগারেটটা শেষ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।কিছুতেই ঘুম আসছে না।লাইটটা অন করেই রাখলাম।বারবার শুধু সেই দৃশ্যগুলি চোখের সামনে দৃশ্যমান হচ্ছে।এক পর্যায়ে চোখটা হাল্কা লেগে গেলো।ঘুমেরা আসতে শুরু করেছে,এরপর হারিয়ে গেলাম গভীর ঘুমে।

মাঝরাতে খেয়াল করলাম আমার মাথার ঠিক সোজায় ওপরে কিছু একটা আছে।ঘুমের মধ্যোই তার ছায়া অনুভব করতে পারছি।কিছুক্ষন পর সাথে হাল্কা গোঙানির মতো একটা শব্দ আস্তে আস্তে স্পষ্ট হতে লাগলো কানে।

হুট করে ঘুম ভেঙে গেলো।বিছানায় বসে চারপাশটা দেখতে লাগলাম।তেমন কিছু চোখে পড়লো না।শব্দটাও পাওয়া যাচ্ছে না।মনের ভুল হতে পারে এটা ভেবে যেই বালিশে মাথা দিলাম তখনি দেখলাম একটা ছায়া আমার ঘরের দেয়ালে পড়লো,ছায়াটা একটা মেয়ের।লক্ষ করলাম মেয়েটা যেনো আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসছে দুই হাত সামনে দিয়ে।তার হাটার ভঙ্গি ছিলো এলোমেলো। একবার এদিকে ঢুলে পড়ছে,একবার ওদিকে।

প্রচন্ড ভয়ে আমি চুপসে গেছি।কাতর কন্ঠে বললাম-

‘ক.কে.কে ওখানে? কে?’ সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আওয়াজ করে বললাম।আর সক শব্দে যেন সে ছায়াটা রাস্তা খুজে পেলো।সে খিলখিল করে হেসে আমার দিকে আরো জোরে এগিয়ে আসতে লাগলো।আমি চোখ বন্ধ করে প্রচণ্ড ভয়ে চিৎকার করে উঠলাম।তারপর আর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমায় স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।মা চিন্তিত,কান্নাভরা সজল চোক্ষে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।গায়ে প্রচন্ড জ্বর।

এরপর থেকে আমি যেনো কেমন বদলে যেতে লাগলাম।কারো সাথে কথা বলিনা।বাইরে বের হইনা,সারাদিন ঘরে দরজা, জানালা বন্ধ করে বসে থাকি।এমনকি এক পর্যায়ে প্রায় পাগল হওয়ার উপক্রম হয়ে গেলাম।

বহুদিন এভাবে কাটলো।সারাদিন বসে থাকি,রাতে ঘুমাই না,খাই না,দরজা বন্ধ করে কি কি যেনো প্রলোপ বকতে থাকি।সে এক রাতের ঘটনা।খাটের কোনে মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে বসে আছি। হাত দিয়ে মাথা চেপে রেখে গোঙ্গাচ্ছি।এমন সময় একটা ফিসফিস আওয়াজ শুনতে পেলাম

‘আঃ আঃ’

‘কে? কে আওয়াজ করে?’

কোনো শব্দ পাওয়া গেলো না।কিছুক্ষণ এভাবেই চললো।ফিসফিস শব্দ হয়,আমি কে কে বললেই আওয়াজটা বন্ধ হয়ে যায়।একটুপর আবারো ফিসফিস শব্দ হচ্ছে

‘কে? কে বিরক্ত করে?’

‘আমি’

এবার তার উত্তর পাওয়া গেলো।কেমন গম্ভীর স্বর,শুনলেই গা হিম হয়ে আসে এমন।

‘আমি কে? ‘

‘আমায় চিনো না? এতোদিন একসাথে আছি,আমায় চিনো না? ‘

‘কে তুমি? সামনে এসো’

‘সামনে যাওয়ার শক্তি নাই’

শব্দটা খাটের তল থেকে আসছে বুঝতে পারলাম।উঠে গিয়ে আস্তে আস্তে বিছানার চাদরটা তুলতেই ভয়ে ছিটকে গেলাম।একটা নগ্ন মেয়ে।মেয়েটা যে সেই কাবেরী মেয়েটা সেটা চিনতে পারলাম।

‘তুমি এখানে?’

‘মেয়েটা বিষন্ন চাহনিতে তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে’

‘কি হলো কথা বলছো না কেন?

‘কোথাও যাওয়ার যায়গা নেই,তাই তোমার সাথেই থাকি,কি দোষ করেছি আমি?কেনে মারলে আমায়? ‘

‘আমি ইচ্ছে করে মারিনি,বিশ্বাস করো’

‘সেদিন বারবার বললাম,আমার পিরিয়ড চলছে,শুনলে না।এখন তোমার যে আর মুক্তি নেই ‘

এইরকম ভাবে তার সাথে মাঝে মাঝে আমার কথা হয়।এইতো সেদিন ও কথা হলো।মাঝরাতে তার কান্নার শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো।সে কান্না করছে।কান্নার শব্দ শুনে বিছানা থেকে নেমে খাটের কাছে গিয়ে বললাম,

‘কে কাবেরী? ‘

‘হু’

‘কান্না করছো কেন? ‘

‘খুব কষ্ট পাচ্ছি’

‘কেমন কষ্ট?’

‘নিশ্চুপ’

‘তুমি নগ্ন হয়ে থাকো কেন?’

‘নগ্নতাই তো তোমার পছন্দ’

‘প্লিজ,এভাবে এসো না।কাপর নাই তোমার? ‘

‘কিচ্ছু ছুঁতে পারি না,কাপর পড়বো কিভাবে,আর মৃত আত্মার কাপর পড়ার শক্তি নেই’

‘কেনো?’

‘সব ধোঁয়াশা,ছুতে গেলেই মিলিয়ে যায়’

‘খাটের তলায় কি করো,বাইরে এসো’

‘বাইরে আসতে পারিনা,শক্তি নাই,আমার যায়গা শুধু এই খাটের নিচ পর্যন্ত,তাছাড়া আর কোথাও যেতে পারিনা’

‘এতোদিন কোথায় ছিলে?’

‘জানিনা,একটা আলোর ঘূর্ণনে পড়ে যাই,সেখান থেকে কোথায় যাই জানি না,রাস্তা হারিয়ে ফেলি।অনেক কষ্টে এসছি’

‘বারবার আসো কেন?চলে যাও আর কখনো আসবে না চলে যাও ‘

‘প্রতিশোধ এখনো বাকি’

কথাটা বলে বিকট হাসি দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো।এরমধ্যে আমায় বিভিন্ন সাইক্রেটিস্টের কাছে নিয়ে গিয়েছিলো বাবা।কোনো কাজ হয়নি।

আরো অসুস্থ হয়েছি এরকম খবর শুনে স্পৃহা আসলো আমায় দেখতে।স্পৃহা আমার চাচাতো বোন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন নিয়ে অনার্স করছে।মেধা অত্যান্ত তুখোড়।প্রতিটি পরিক্ষায় লেটার মার্ক তার কাছে যেনো নিতান্তই খেলা।

‘আঙ্কেল, জয় কতদিন থেকে এরকম করছে?’

‘প্রায় ২ মাস ‘ মলিন মুখে বাবা বললেন

‘আমার জানান নি কেন?’

‘আমরা ভেবেছিলাম ঠিক হবে,এমন কোনো সাইক্রিটিস্ট নেই যার কাছে ওকে নিয়ে যাই নি।কেউ কিচ্ছু করতে পারে নি’

‘ও কি কি করে?একটু বলবেন?’

‘সারাদিন,সারারাত ঘরে বসে থাকে,মাঝে মাঝে চিৎকার করে।আবার ফিসফিস করে কথা বলার আওয়াজ ও শোনা যায়।’

‘ আপনারা দেখেননি কার সাথে কথা বলে?’

‘একদিন দরজায় দারিয়ে ছিলাম।ও কার সাথে যেনো কথা বলছে ফিসফিস করে।দরজা ধাক্কা দিয়ে ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে দেখি খাটের নিচে তাকিয়ে কিসব বলছে’

‘খাটের নিচটা দেখেননি? ‘

‘হ্যা দেখেছি’

‘কি দেখলেন?

‘কেউ ছিলো না।আমার মনে হয় অশরীরী কোনো শক্তি ওকে প্রভাবিত করছে’

‘হাহাহাহা,আঙ্কেল, এই সময়ে এসে আপনি এসবে বিশ্বাস করেন? মানুষ চাঁদে পা রাখছে।অন্য গ্রহে বসতি গড়ে তুলছে,সেই যুগে আপনি অশরীরী নিয়ে পড়ে আছেন,হাহাহা’

‘আঙ্কেল আমি জয়ের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলবো।’

‘হুম,ওই কর্নারের ঘরটায় আছে ও’ হাতের ইশারায় ঘরটা দেখিয়ে দিলেন।

দরজায় ঠকঠক করে আওয়াজ করছে স্পৃহা। শব্দটা আমার কানে লাগছে প্রচুর।রেগে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।স্পৃহা ঘরের ভেতরে আসলো।

‘কেমন আছে জয় ভাইয়া’

‘ভালো’

‘শরীর কেমন আছে?’

‘ভালো’

‘কি করো সারাদিন ঘরে?’

‘কথা বলতে ভাল্লাগছে না’

‘কিছুক্ষণ বলো,তারপর চলে যাবো।আচ্ছা তুমি কার সাথে কথা বলো?আমায় বলো, আমার সাথে না তুমি সব কথা শেয়ার করো? ‘

‘একটা মেয়ে’

‘কে সে? ‘

‘কাবেরী’

‘মেয়েটা দেখতে কেমন? ‘

‘সুন্দর,তবে এখন সুন্দর লাগেনা।সবসময় নগ্ন হয়ে থাকে।তাকে কাপর পড়তে বলি,সে পড়ে না’

‘কেনো পড়ে না?

‘সে শক্তি তার নেই’

‘কি নিয়ে কথা হয় তোমাদের? ‘

‘সে চলে গেলে ভুলে যাই,মনে থাকে না’ মিথ্যে বললাম

‘জয় ভাইয়া’

‘হুম’

‘তুমি পাগল হয়ে যাচ্ছো,বুঝতে পারছো? ‘

‘হুম’

‘তোমায় আমি একজনার কাছে নিয়ে যাবো,যাবে আমার সঙ্গে? ‘

‘হুম’

‘কি যেন বললে,কাবেরী,কাবরী কি নগ্ন হয়েই আসে? না তোমার কাছে আসার পর নগ্ন হয়?’

‘কাপর পড়ে না,সবসময় নগ্নতায় থাকে’

স্পৃহা চলে গেলো।বাবার সঙ্গে তার আলাপ যতদূর শুনতে পেলাম-

‘আমার একজন পরিচিত আছে।আমার ধারনা তিনিই জয় ভাইয়ার এই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে তাকে স্বাভাবিক করে তুলতে পারবে’

‘তুমি তাকে নিয়ে আসো,যতো টাকা লাগপ আমি দিবো।তুমি আমার ছেকেটাকে বাঁচাও মা’ বাবা বললেন।

‘আঙ্কেল আপনি চিন্তা করবেন না।আমি ওনার সাথে কথা বলবো।উনি যতো সম্ভব আসবে না।জয় ভাইয়াকে নিয়ে ওনার কাছে যেতে হবে।’

‘তুমি কথা বলো’

‘আচ্ছা আঙ্কেল আমি আসি’

চলবে..??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here