আমিই_কাবেরী-03

0
629

#আমিই_কাবেরী-03
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

এমনিতে হলে রাস্তার ধারে বিড়ির দোকানটায় তার দেখা পাওয়া যায়। আজ তাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না স্পৃহা। দুপুরের কড়া রোদে ঘুরতে ঘুরতে সে ক্লান্ত। বিড়ির দোকানটায় বললে হয়তো ওনার খোঁজ পাওয়া যাবে ভেবে দোকানিকে জিগ্যেস করলো

‘এইযে মামা শুনছেন’

‘জি আফা,কেমন আছেন? কি খাইবেন আফা,?চা দেই? কি চা রং চা না দুধ চা? আফা চায়ে চিনি দিবো?

‘চা লাগবে না।একজনার খোঁজ নিতে আসলাম,যদি দিতে পারেন ‘

‘কারে চান আফা?’

‘আপনার এখানে যে মাঝে মাঝে বসে থাকে,লম্বা চুল,বড় বড় দাঁড়ি, এলোমেলো চেহারা’ স্পৃহা পুরো বর্ণনা না দিতেই দোকানি বলে উঠলো

‘কার কথা বলতে আছেন? বিষন্ন দার কথা? ‘

‘জি,আপনি নাম জানেন ওনার? ‘

‘কি যে বলেন আফা,বিষন্ন দার নাম জানবো না’

‘কোথায় পাবে ওনাকে?’

‘ওনার তো জ্বর,কিছুদিন থাইক্কা আহে না,ওনার বাড়িতে খোঁজ নেন’

‘ওনার বাড়ি কোথায় জানেন?’

‘ওইযে গলি দেহা যায়? ওই গলি দিয়ে গিয়া হাতের বাম পাশে মোড় পাইবেন একটা,সেই মোড় ঘুরিয়াই ডাম পাশের ৩ নম্বর বাড়িডাই ওনার’

স্পৃহা লোকটিকে ধন্যবাদ দিয়ে রওনা হলো বিষন্ন দার খোঁজে তার বাড়িতে।তার বাড়ি পাওয়া গেলো।পুরনো আমলের রাজা বাদশাদের বাড়িগুলির মতো ধ্বংসস্তুপ বাড়ি।স্পৃহা দরজা ঠকঠক আওয়াজ করতেই ভেতর থেকে উত্তর এলো অপেক্ষা করুন।স্পৃহা দরজার বাহিরে অপেক্ষা করছে।প্রায় আধাঘন্টা পর দরজা খুলে দিলেন বিষন্নদা।রুক্ষ চুল,দাড়িগুলিও বড় বড় হয়েছে।পড়নে পাঞ্জাবী।চোখে হালকা ফ্রেমের চশমা পড়তে পড়তে তিনি বললেন ভেতরে আসুন।স্পৃহা ভেতরে গেলো।এই লোকটার প্রতি তার আলাদা একটা টান কাজ করে।তাকে মনের কথা বলতে গিয়েও বলতে পারেনা।লোকটা ভবঘুরে। কোনো কাজ কর্ম করে না।সারাদিন চায়ের দোকানে চা,বিড়ি খেতে দেখা যায়।ঘরে ঢুকে একটা মস্ত বড় বুক শেলফ ছাড়া চোখে পড়ার মতে কিছুই নেই।তার নজর কাটিয়ে জীর্ণ কন্ঠে বিষন্নদা বললেন

‘দরজা খুলতে দেরি হলো,প্রথমবার যখন ডাকলেন তখন হালকা ঘুম চোখে ছিলো।আপনার ডাকে ঘুমটা আরো গাড়ে হলো,বাস্তবে খুলতে ন পারলেও স্বপ্নে ঠিকি দরজা খুলে দিয়েছি,কি আশ্চর্য, স্বপ্ন আর বাস্তব চেনাও মুশকিল’

‘আপনি এখনো এভাবেই খামখেয়ালি চলেন?’

‘যেমন আছি বেশ আছি।বলুন কি জন্য এসেছেন। শরীরটা খারাপ।কয়েকদিন থেকে জ্বর, ছাড়ে আবার ধরে।’

ওনাকে জয় ভাইয়ার সকল ঘটনা খুলে বললাম।সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন ওনাকে নিয়ে আসুন একদিন।ওনার মুখেই সবটা শুনতে হবে।চা খাবেন?
স্পৃহা না সূচক মাথা নেড়ে আগামী পরশু জয়কে নিয়ে আসবে বলে উঠে চলে গেলো।বিষন্নদা ফ্যাকাসে হেসে আবারে শুয়ে পড়লেন।

কথা মত একদিন পর জয়কে নিয়ে স্পৃহা উপস্থিত হলো বিষন্নদার বাড়িতে।দরজায় ঠকঠক শব্দ করা হলো।ভেতর থেকে সাড়া পাওয়া গেলো না।আরেকবার দরজায় হাত দিতেই বিষন্নতা দরজা খুলে দিলেন।সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন,

‘পেটে ব্যাথাটা কেমন বেড়েছে,শুয়ে ছিলাম’ বলেই নির্বিকার ভঙ্গিতে বিছানায় গিয়ে বসলেন।স্পৃহা এবং জয় ভেতরে ঢুকলো।
তারা দুজন বসে আছে দুটো বেতের চেয়ারে।

‘বিষন্নাদা,সেদিন যে বলেছিলাম আমার ভাইয়ের কথা’। স্পৃহার কথা উপেক্ষা করে বিষন্নদা বলে উঠলেন।’চা বানাতে পারো?’

‘জি পারি’ স্পৃহা হকচকিয়ে উত্তর দিলো

‘যাও,রান্না ঘরে গিয়ে চা বানিয়ে নিয়ে এসো।ফ্লাস্কে করে নিয়ে এসো’

জি আচ্ছা, বলে স্পৃহা রান্নাঘরের দিকে গেলো।জয় ঘরের এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। তাকে অনেক চিন্তিত দেখাচ্ছে।সামনপর মানুষটার এরুপ নির্বিকার আচরন তাকে হয়তো প্রভাবিত করছে না।সে নিজের মতো হাতে হাত কচলিয়েই যাচ্ছে।

‘আপনার নাম?’ বিষন্নদা জয়কে জিজ্ঞেস করলো

‘জয়’

‘জয়,আপনার গত ২ মাসের ঘটে যাওয়া কাহিনী শুনতে চাচ্ছি,বলবেন’

‘যদি শুনতে চান তবে বলবো’

‘শুরু করুন’

জয় পুরো ঘটনাটা বললো।বিষন্নদা কথার মাঝে দুবার থামিয়ে জিগ্যেস করেছিলো ‘কয়টার কথা বললেন?’ তখন জয় বললো রাত ৩টা।তারপর আরেকবার থামিয়ে জিজ্ঞেস করলেন প্রতিবারই নগ্ন অবস্থায় দেখেছিলেন? উত্তরে জয় হ্যা সূচক মাথা নাড়লো।স্পৃহা চা নিয়ে উপস্থিত। চিনি ছিলো না,চিনি নিয়ে এসে চা বানাতে খানিক্ষন দেরি হয়ে গেলো।কাপে ৩ কাপ চা নিয়ে তারা নিঃশব্দে চা খাচ্ছে।খাওয়া শেষে বিষন্নদা আরো এককাপ চা দিতে বললো।

‘আপনি খুব সুন্দর চা বানাতে পারেন’

‘থ্যাঙ্কিউ’

‘মিঃজয় ‘

‘জি’

‘আপনার কি মনে হয়? পুরো বিষয়টা বাস্তবিক নাকি কাল্পনিক? ‘

‘কাল্পনিক হতে যাবে কেন?’

‘আমি সেই বিল্ডিংটা একবার দেখতে চাইচসেই কুয়োটাও দেখতে হবে’

বিল্ডিং এর ঠিকানা বলে দিয়ে স্পৃহা জয়কে নিয়ে চলে গেলো।কারন তার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে। যেতে যেতে বিষন্নদা একটি কথা বললেন।অসাধারণ চা।

পরেরদিন বিকেলে বিষন্নদা গেলেন সেই বিল্ডিংয়ের ঠিকানায়।ঝোপঝাড়ের ভেতর পরিত্যক্ত একটা বিল্ডিং।দেয়ালে শ্যাওলা জমা।বিল্ডিং এর পাশের কুয়োটাও দেখে নিলো।সন্ধা হয়ে আসছে।হাতে ঘড়ি নেই।কাজেই সময় বুঝতে তার অসুবিধা হচ্ছে।পাশের মন্দিরে পূজোর ঘন্টা বেজে উঠলো সেই শব্দ কানে এলো।মন্দিরটা তেমন দুরে নয়,,সুক্ষ্ম নজর দিলেই সব দেখা যায়।সেখানে কিছু সাধুকে দেখতে পেলো বিষন্নদা।তিনি তাদের কাছে গেলেন। তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারলেন এই অঞ্চলে ডাক্তার আসে না।তারাই রোগের ঔষধি বানিয়ে রোগ নিরাময় করে।সেখানে একটা মেয়েকেও নজরে পড়লো।বয়স কত?১৯ অথবা ২০? আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে আছে।

সেদিনের মতো চলে আসলাম।জ্বরের প্রকোপ আরো বাড়লো।২ দিন বমি করতে আজ একটু সুস্থ। দরজায় টোকা পড়ছে।আমি বললাম দরজা খোলা।একটি ছেলে ঢুকলো ঘড়ে।

‘আপনি কি বেশি অসুস্থ?’

‘এখন সুস্থ, দুদিন আগে খুব অসুস্থ ছিলাম’

‘আমায় চিনতে পেরেছেন? ‘

‘হ্যা,আপনার সাথের মেয়েটা আসেনি?ওর হাতের চা খেতে পারলে ভালোলাগতো।অসুস্থতার জন্য ২দিন থেকে চা বাইরে থেকে দিয়ে যায় এক ছোকড়া,চায়প চিনি দেয় না হারামজাদা’

‘আমি চা করে নিয়ে আসি?আমি ভালে পারি’

‘ঠিক আছে আসুন’

জয় চা করে দুকাপ চা নিয়ে ঘরে আসলো।বিষন্নদা চেয়ারে বসে আরামল পা দুলিয়ে শব্দ করে চা খাচ্ছে। তাকে শিশুদের মতে লাগছে।

‘আপনি খুব সুন্দর চা বানাতে পারেন’

‘থ্যাঙ্কিউ’

‘আপনার বিষয়টা নিয়ে আমি কাল ভেবেছি’

‘কিছু পেলেন?’

‘হুম পেয়েছি।মনে হয় আমি আপনার সমস্যাটা প্রায় ধরে ফেলেছি।নিজকর মতো করে একটা হাইপোথিসিস দার করিয়েছি’

‘বলুন’

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here