#আমিই_কাবেরী,05
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
জয় এক কাপ চা বানিয়ে বিষন্নদার সামনে রাখলো।বিষন্নদা বলে উঠলো
‘এক কাপ কেন,আপনি খাবেন না?’
“জি না।আমি চলে যাবো”
“হুম”
“আপনাকে এক প্যাকেট সিগারেট কিনে দিয়ে চলে যাবো”
বিষন্নদাকে এক প্যাকেট সিগারেট কিনে দিয়ে ঘর থেকে বেড় হলো জয়।সিগারেটের প্যাকেট পেয়ে বিষন্নদার মুখে আনন্দের ছিটেফোঁটা লক্ষ করে জয়।
এদিকে বিষন্নদা একটি সিগারেট ধরালেন।মনে মনে ভাবতে লাগলেন কাবেরী মেয়েটার কথা।সন্ধা ঘনিয়ে রাত নেমে এলো।বিষন্নদা রাতে কিছু খেলেন না।তিনি মাঝে মাঝেই না খেয়ে সারারাত কাটান।আজকে সে পূর্নিমা দেখবে।বারান্দায় একটি বেতের চেয়ারে বসে আছে বিষন্নদা।পরনে সাদা পাঞ্জাবি।পায়ে কালো চামড়ার চটি স্যান্ডেল।তিনি উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে চাঁদের পানে।চাঁদ নিয়ে তার মনে কৌতুহলের শেষ নেই।এমন সময় এককাপ চা পেলে ভালোলাগতো।কিন্তু উঠে গিয়ে চা করে নিতে ইচ্ছে করছে না।এমন সময় বিষন্নদার সামনে একটি হাত এলো,হাতে পিরিচে করে এককাপ চা। তিনি পিরিচটা নিজের হাতে নিলেন।তখন মেয়েলি কন্ঠে কেউ বলে উঠলো
“চা কেমন হয়েছে বিষন্নদা”
“সুন্দর”
“শুধুই সুন্দর”
“না,অতিসুন্দর।আপনি অনেক সুন্দর চা বানাতে পারেন”
বিষন্নদা এখনো চাঁদ থেকে চোখ সরিয়ে নেয় নি।চাঁদের দিকে তাকিয়ে মেয়েটির সাথে কথা বলছে।মেয়েটি তখন বললো
“এতো উৎসুকভাবে কি দেখছেন”
“চাঁদ”
“চাঁদে দেখার মতো কি আছে”
“অনেককিছু।আচ্ছা বলো তো চাঁদে যে ছোপ ছোপ কালো দাগ সে দাগ গুলি না থাকলে কি হতো? ”
“কি হতো মানে? কি অদ্ভুত প্রশ্ন ”
“হাহাহা বলতে পারলে না তো।যদি দাগ না থাকতো তাহলে লোকে বলতে পারতো না যে চাঁদের ও কলঙ্ক আছে”
“রসিকতা করছেন?”
“হুম”
“আমাকে কিন্তু এখনো দেখেননি আপনি”
“দেখার প্রয়োজন মনে করছি না।আজকের চাঁদটা দেখেছো,কতো সুন্দর।শুধু এই দাগগুলি এর সৌন্দর্য কিছুটা ক্ষুন্ন করেছে।তাই না?”
“হুম”
বিষন্নদা চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে।মেয়েটি তার পাশে দারিয়ে আছে।কিন্তু বিষন্নদার যেন চাঁদের ওপর থেকে নিজের আকর্ষন সরছেই না।কিছুক্ষণ পর বিষন্নদা বললেন
“কাবেরী, আরেককাপ চা করে আনতে পারবে?আমার রান্নাঘরে সব আছে।একটু কষ্ট করে বানিয়ে আনবে?”
মেয়েটি এবার কিছুটা ঘাবড়ে গেলো।কাপা কাপা কন্ঠে বললো জি আনছি।বিষন্নদা মুচকি হাসলেন।
“এই নিন চা”
“ধন্যবাদ”
“আপনি আমায় চিনলেন কিভাবে?আপনি তে আমায় দেখেননি”
“তোমার কাপরের ঘ্রাণ পেয়েই বুঝতে পেরেছি”
“ঘ্রাণ শুনে কিভাবে বুঝতে পারলেন।আপনি তো আগে আমার শরীরের ঘ্রান কখনো পাননি”
“তোমার গায়ের আগরবাতির ঘ্রাণ লেগে আছে”
“আমার গায়ে আগরবাতির ঘ্রান লেগে আছে,এতে কিভাবে বুঝলেন যে আমি কাবেরী?”
“পুরনো বিল্ডিংটার পাশের মন্দিরে যখন গিয়েছিলাম তখন ই তোমায় দেখেছিলাম।তুমি ঘোমটা দিয়ে ছিলে জন্য মুখটা দেখতে পারিনি।সেখানে তুলসি গাছে প্রদীপ জ্বালাচ্ছিলে তুমি।তখন যে আগরবাতি জ্বালিয়েছিলে সেটার গন্ধ আর এখনকার গন্ধটা একই”
“কিন্তু আমিই যে কাবেরী সেটা কিভাবে বুঝলেন?”
“সেখানকার সাধুদের সাথে কথা বলে যখন জানলাম তারা জরিবটি বানাতে জানে,এবং সেই সময় তোমায় দেখলাম।এই নির্জন মন্দিরে একটা মেয়ে এভাবে থাকাটা খুব একটা স্বাভাবিক কিছু না।আমার ধারনা তুমি যখন বিল্ডিং থেকে নিচে পড়ে যাও তখন এই সাধুদলের কেউ তোমায় নিয়ে গিয়ে তোমায় চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলেন।তারপর আশ্রয় এবং প্রতিশোধের জন্য তুমি সেখানেই থেকে গেলে।”
“আপনার বুদ্ধি দেখে আমি মুগ্ধ”
“চায়ে চিনি দিয়েছো বেশি,বেশি চিনি খেলে পেটে সমস্যা দেখা দেয়”
“আচ্ছা আমি আসি”
“দারাও”
“হুম”
“আমি জানি জয় তোমার সাথে যে কাজটা করেছে সেটা জঘন্য অপরাধ।এর শাস্তি অনেক ভয়াবহ।তুমি চাইলেই পুলিশে দিতে পারতে? সেটা না করে এতো কিছু করার মানে কি?”
“এতে কিছু বুঝতে পেরেছেন, এটা বুঝতে পারেননি?”
“পেরেছি,তবে তোমার মুখে শুনতে চাচ্ছি”
“সেদিন যখন আমার জ্ঞান ফিরলো তখন দেখলাম আমি হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি।কিছুক্ষণ পর দুজন সাধু আসলেন।তারা সব খুলে বললেন।তারা যখন সাধনা করে ঘুমোতে যাবেন সেই সময় নাকি ছাদে ফোনের ফ্লাসের আলো তাূের চোখে পড়ে।তারপরেই একটা শব্দ পান।সেই শব্দে তারা কাছে গিয়ে আমায় পায়।এবং হসপিটালে নিয়ে আসে”
“তারপর”
“হসপিটালে ছিলাম ৮ দিন।তখন সেই দুজন সাধু আমায় রোজ দেখতল আসতেন,ফল,ঔষধ সব কিনে দিতেন।আমার যাওয়ার যায়গা নেই।গ্রামে মামার বাড়িতে ছিলাম।তাদের অত্যাচার সহয় করতে না পেরে গ্রাম থেকে শহরে এসেছিলাম যদি কোনো চাকরির খোঁজ মেলে।কিন্ত যেখানেই গেলাম সেখানেই কোনোনা কোনো কারনে আটকে গেলাম।বিশেষ করে টাকার জন্য।টাকা ছাড়া চাকরি প্রায় অসম্ভব।এমনকি কেউ কেউ আমায় কু-প্রস্তাব ও দিয়ে বসে”
মেয়েটা এখন কাঁদছে সেটা বেশ বুঝতে পারলো বিষন্নদা।তবুও সবটা জানা দরকার।তিনি তাকে পুরোটা বলতে বললেন
“এরকম সারাদিন ঘুরেও চাকরির ব্যাবস্থা করতে পারলাম না।সন্ধা হয়ে এলো।একজন বৃদ্ধ লোক বললেন তাদের বাড়িতে কাজের মেয়ে দরকার।একটা আশ্রয়ের আশায় আমি রাজি হয়ে যাই।সেই বৃদ্ধ লোকটি আমায় পতিতা পল্লিতে বিক্রি করে দিয়ে চলে গেলো।এরপর সেখান থেকে উনি আমায় ওই বিল্ডিং এ নিয়ে আসেন,তারপর… ”
“হসপিটাল থেকে তুমি আশ্রয়ের আশায় সেই মন্দিরে থেকে গেলে? ”
“হুম,শুধু আশ্রয় না,আমি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যও ছিলাম”
“পুলিশকে জানাও নি কেন?”
“পুলিশকে জানিয়ে ছিলাম”
“কি বললো তারা?”
“তারা প্রথমে কি হয়েছে এসব শুনে বললো এসব কেইচে টাকা লাগে অনেক।আমি যদি তাদের সাথে এক রাত কাটাই তাহলে তারা বিনা টাকায় করে দিবো”
“এটা শুনে আমি চলে আসি।মনে মনে ভাবলাম আমি নিজেই তাকে শাস্তি দিবো।তিলে তিলে ওকে শেষ করে ফেলবো”
“তোমার সাথে যেটা হয়েছে সেটা অন্যায়।এর শাস্তি জয় পাবে অবশ্যই পাবে”
“এতোক্ষণ হয়ে গেলো, আমি এতো কথা বললাম,কিন্তু আপনি এখনে আমার দিকে তাকালেন না,অন্যদিকে হয়ে শুনে গেলেন”
“যে বলে তার দিক তাকিয়ে থেকে কথায় মনোযোগ দিতে পারিনা আমি”
“আপনি অনেক অদ্ভুত একটা লোক”
বিষন্নদা এবার কাবেবী মেয়েটির দিকে তাকালো।সে পড়ে আছে লাল পারের সাদা শাড়ি।চাঁদের আলোয় মুখটা দেখা যাচ্ছে। কি অপরুপ সুন্দর। এ চাঁদ তার সৌন্দর্যের কাছে যেনো কিছুই না।মেয়েটার চোখে গাড় কাজল,কপালে কালো টিপ,ঠোঁটে লিপস্টিক,কি রঙের সেটা চাঁদের আলোয় বুঝা যাচ্ছে না।মুখের ওপর দু,চারটা চুল পড়ে আছে।সব মিলিয়ে অসাধারণ।আমার জীবনে এরকম রূপবতী কন্যা আমি দেখিনি।
“তুমি দারাও,আমি আসছি”
বিষন্নদা ঘরে গিয়ে একটি শুকনো ঝরঝরে ফুলের থোকা নিয়ে এসে কাবেরীর হাতে দিলেন।কাবেরী বিস্মিত হয়ে বললো
“শুকনো ফুলের থোকা দেওয়ার মানে?”
“এই ফুলটি দিয়েছিলো তোমার মতো দেখতে সুন্দরী একটি তরুনী।ফুলে আমার তেমন আগ্রহ নেই।ফুলটা ফেলে দিতে চেয়েছিলাম।কিন্তু পারিনি”
“কেনো পারেননি?”
“সুন্দরী তরুনীর দেওয়া ফুল ফেলতে ইচ্ছে করেনি।”
“অসুন্দর কেউ দিলে ফেলতেন বুঝি?”
“ভেবে দেখতাম”
“তো সেটা রেখে দিলেন ভালো কথা।আমায় কেনো দিলেন? ”
“তখন সেটা বইয়ের ভাঁজে রেখে দিতে দিতে মনে মনে ভেবেছিলাম,যখন তার মতো সুন্দরী কোনো মেয়েকে দেখবো তখন এই ফুলটি তাকে দিবো।সুন্দর কারোর উপহার সুন্দরের কাছে থাকা মানায়।”
“আপনি মানুষটা কিন্তু সত্যিই অনেক অদ্ভুত”
“নিজেকে নিজেই চিনতে পারলাম না। তুমি কি পারবে”
“আচ্ছা এটা কি ফুল?”
“কৃষ্ণচূড়া,আমার পছন্দের ফুল”
“মেয়েটির নামটা জানতে পারি?যে আপনার মতো একজনকে চিনতে পেরেছে সে নিশ্চই অসাধারণ কোনো মেয়ে ”
“ওর নাম স্পৃহা”
“বাহ্ সুন্দর নাম”
“একটা অদ্ভুত কথা বলি”
“বলুন?”
“মেয়েটি সেই জয়ের কাকাতো বোন ”
চলবে?