আমি আসবই,পর্ব ৬,৭

0
1514

আমি আসবই,পর্ব ৬,৭
লেখিকাঃ Saaiba Chowdhury
পর্ব ৬

অর্পিতা জোহরা বেগমের কথাগুলো নিয়ে ভাবতে ভাবতে আনমনা হয়ে প্রবেশ করে নিজের রুমে।
রুমে ঢুকতেই তার চোখ চলে যায় বিছানার পাশে একটা জানালার দিকে।
অর্পিতা দেখতে পায়, জানালার থাই গ্লাসের ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে একটা কালো অবয়ব।
অবয়বটার আকৃতি মানুষের থেকে বেশ বড়।
কাঁচের উপরে একটা হাত রেখে, টকটকে লাল জ্বলন্ত চোখে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে নুরীর দিকে।
অবয়বটির দিকে চোখ পড়ার পরে অর্পিতা ভয়ে পাথরের মতো নিশ্চুপ হয়ে যায়। নড়াচড়ার শক্তিটুকুও হ্রাস পায় তার। হঠাৎ করেই অর্পিতার চোখে চোখ পরে অদ্ভুত কালো শরীরের অবয়বটির।সাথে সাথেই জানালার কাঁচের সামনে থেকে দ্রুত কোথাও অদৃশ্য হয়ে যায় জিনিসটি।
.
.
.
কালো অবয়বটি চলে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর অর্পিতার ঘোর কাটে।
সম্বিৎ ফিরে পেয়ে হাসিবের নাম ধরে জোরে ডাক দিয়ে দৌড়ে গিয়ে নুরীকে জড়িয়ে ধরে কাঁপতে থাকে অর্পি।
অর্পিতার ডাক শুনে হাসিব দ্রুত ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে।
রুমে এসে দেখতে পায় অর্পিতা নুরীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁপছে।
অর্পিতার পুরো শরীর ঘামে ভিজে গেছে।
হাসিব অর্পিতার কাছে গিয়ে হাত ধরে বলে,
-কি হয়েছে অর্পি?
তুমি এমন অবস্থা কেন?
অর্পিতা কম্পিত গলায় বলে,
-আমার কিছু ঠিক লাগছে না হাসিব।
আমার মন বলছে সামনে কোনো অঘটন ঘটতে চলেছে। আমার নুরীর বড় কোনো ক্ষতি হতে পারে।
অর্পিতার কথা শুনে হাসিব বলে,
-কি সব আজগুবি কথা বলছো অর্পি।
তোমার আসলে মাথা ঠিক নেই। নুরীকে আমার কাছে দাও!
নুরীকে কোলে নেয় হাসিব। অর্পিতাকে বলে,
-এবার একটু রিল্যাক্স হও। আর কি হয়েছে আমাকে খুলে বলো সব।
তোমার কেন মনে হচ্ছে, আমাদের নুরীর সামনে কোনো বিপদ আসতে চলেছে?
হাসিবের প্রশ্নের উত্তরে একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার সবটা খুলে বলে অর্পিতা।
অর্পিতার কথা শুনে হাসিব ওর হাত ধরে বলে,
-সবকিছুই তোমার মস্তিষ্কের ভুল ধারনা।
এই জেনারেশনে এসেও তুমি অলৌকিক কিছুতে বিশ্বাস করো?
আসলে নুরীকে নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করো তো!
তাই এমন দেখেছো।
যাই হোক তোমাকে একটা খুশির খবর দেওয়ার আছে।
অর্পিতা নিজেকে শান্ত করে মুখে হাসি টেনে বললো,
-বলো খুশির খবরটা কি।
হাসিব নুরীর নাকটা আস্তে করে টেনে দিয়ে বলে,
-আমার সোনামণি পৃথিবীতে আসার সাথে সাথে আমাদের সবদিক থেকে উন্নতি হচ্ছে।
আজ আমি প্রমোশন পেয়েছি ম্যানেজার পদের।
ভাবতেই পারিনি এতো কম সময়ে এতো বড় পদে যেতে পারবো।
আমার থেকে যোগ্য আরও অনেকে আছে তাই প্রমোশন নিয়ে বিন্দুমাত্র আশাবাদী ছিলাম না আমি।
আজ যখন বস এনাউন্স করলেন আমার নাম আমি তো মেঘ না চাইতেই জল পেয়ে গিয়েছিলাম।
হাসিবের কথা শুনে অর্পিতা অনেক খুশি হয়।
তার মনে পড়ে যায় কিছুক্ষণ আগে বলা জোহরা বেগমের কথাগুলো।
হাসিবের সাথে বেশ কিছুক্ষণ টুকটাক কথা বলার পরে অর্পিতা উঠে চলে যায় রাতের খাবার প্রস্তুত করতে।
.
.
.
রান্নার জন্য সবকিছু প্রস্তুত করতে তাকে অর্পিতা।
কিছুক্ষণ পরে মুখ কালো করে ভেতরে প্রবেশ করে জোহরা বেগম।
একটা পাত্রে চায়ের জন্য পানি উঠিয়ে দেয়।
“কি দরকার মা আমাকে বলুন আমি করে দিচ্ছি”
অর্পিতা কয়েকবার কথাটা বলার পরেও কোনো সাড়াশব্দ দেন না জোহরা বেগম।
ব্যাপারটা অর্পিতার খুব খারাপ লাগে।
সে বুঝতে পারে জোহরা বেগমের এমন করার পিছনে কারণ কি।
চুলায় পানি গরম দিয়ে জোহরা বেগম লিভিং রুমে গিয়ে বসেন।
অর্পিতা চা বানিয়ে একটা কাপে করে নিয়ে যায় তার কাছে।
চায়ের কাপ টি-টেবিলে রেখে অর্পিতা জোহরা বেগমের পাশে বসে বলে,
-মা! হাসিব যদি কালো হতো,দেখতে খারাপ হতো আপনি কি তাঁকে ফেলে দিতেন?
নাকি মায়ের ভালোবাসা থেকে তাকে দূরে রাখতেন?
নুরী আমার সন্তান। ১০ মাস ওকে পেটে ধরেছি আমি। গায়ের রঙের থেকে এই মমতা, এই ভালোবাসা যে দিগুণের চাইতেও বড়।
জানেন মা! আজ আপনার ছেলের ম্যানেজার পদে প্রমোশন হয়েছে।
তাছাড়া গায়ের রঙ সংসারে কোনো ইফেক্ট ফেলে না। আমি জানি আপনি কুসংস্কারি নন।
হয়ত মন খারাপি থেকে এসব বলছেন।
যদি নুরী সত্যি সত্যি সংসারের জন্য অমঙ্গল হতো তাহলে আজ আপনার ছেলের এতো বড় পদে প্রমোশন হতো না।
বাবার সাথে যেটা ঘটেছে সেটা নিয়তি, এতে আমার নুরীর কোনো দোষ নেই।
আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ,
নুরীরে ভালোবাসতে না পারেন তাতেও চলবে কিন্তু ওর গায়ের রঙের জন্য ওকে কোনো বিষয়ে দোষারোপ করবেন না।
কথাগুলো বলে অর্পিতা কাঁদতে কাঁদতে উঠে রান্নাঘরে চলে যায়।
হাতের চা রেখে দিয়ে মন খারাপ করে জোহরা বেগমও চলে যান তার রুমে।
.
.
.
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই শোবার প্রস্তুতি নেয়।
কিন্তু অর্পিতার ভেতরে এক প্রকারের অস্থিরতা কাজ করে।
গ্লাস রাখার শব্দে বা হাসিবের ডাক শুনেও বার বার কেঁপে উঠছে সে।
ভেতরে ভেতরে সন্ধ্যার বিষয়টি নিয়ে অনেক আপসেট থাকলেও হাসিবের সামনে সে নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রাখার চেষ্টা করে।
.
.
রাত ২ টা বাজে।
হাসিব ঘুমে বিভোর।
পাশের রুম থেকে জোহরা বেগমের নাক ডাকার শব্দ শোনা যাচ্ছে।
নুরীও ঘুমিয়ে আছে বাবার কোলের ভেতর।
শুধু ঘুম নেই অর্পিতার চোখে।
মনটা খুব কু গাইছে।
অর্পিতার মনে হচ্ছে কালো অবয়বটি ঘোরাঘুরি করছে তার আশেপাশেই।
হয়তো এখনই তার মেয়ের কোনো ক্ষতি করে বসবে।
এমন দুশ্চিন্তা নিয়ে কোনো মায়েরই ঘুম হবার কথা নয়।
শত দুশ্চিন্তা ও ভয় নিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে আছে অর্পিতা।
তার মনে হচ্ছে ঘুমালেই হয়ত কোনো অঘটন ঘটবে তাই না ঘুমিয়ে নুরী গায়ে হাত দিয়ে বসে থাকে।
.
.
.
সকাল পাঁচটা।
কিছু একটার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় অর্পিতার।
নানা কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে তা নিজেও বুঝতে পারেনি।
ঘুম ভাঙতেই সে হুড়মুড়িয়ে উঠে বসে।
নুরীর দিকে তাকাতেই সে দেখতে পায়, তর পাশ নুরী নেই। হাসিব তখনও বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।
তাহলে নুরী গেল কোথায়!
অর্পিতার বুকটা ধুক করে উঠলো।
হাসিবকে জোরে জোরে ধাক্কা দিয়ে শব্দ করে কাঁদতে শুরু করে অর্পিতা।
হঠাৎ ঘুম ভেঙে এমন কান্ড দেখে হাসিব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।
অর্পিতাকে এভাবে কাঁদতে দেখে বুকে জড়িয়ে তাকে।
নুরী যে নেই সেদিকে লক্ষ্যই করে না হাসিব।
অর্পিতা কাঁদতে কাঁদতে বলে,
-আমাদের নুরী কোথায় হাসিব?
ও তো আমাদের মাঝেই ঘুমিয়ে ছিলো। কিছুক্ষণ আগেও ওকে খাইয়েছি। একটুর জন্য চোখ লেগে গিয়েছিলো এর মাঝে আমার বাচ্চাটা কোথায় যাবে বলো?
অর্পিতার কথায় হাসিব তাকিয়ে দেখে নুরী তার জায়গায় নেই।
নুরীকে দেখতে না পেয়ে হাসিবও অনেক দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়।
.
.
.
জোহরা বেগম, হাসিব ও অর্পিতা মিলে পুরো বাসা তন্নতন্ন করে খুঁজতে থাকে।
কিন্তু কোথাও নুরীকে খুজে পাওয়া যায় না
আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, অর্পিতা যখন ঘুম থেকে জেগে নুরীকে খুঁজে পাচ্ছিলো না তখনও তাদের রুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিলো।
তাহলে নুরী গেলো কোথায়?
এমনই নুরী হাটতে বা বসতেও পারে না এমন অবস্থায় একটা বাচ্চা গায়েব হয়ে যেতে পারে কি করে!
হাজারও দুশ্চিন্তার নিয়ে নুরীকে খুঁজতে থাকার মাঝে হঠাৎ থমকে দাঁড়ায় অর্পিতা।
হাসিবকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-একটা হাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছো না!
ছাঁদ থেকেই আসছে শব্দটা। কথাটা বলেই অর্পিতা দৌড়ে চলে যায় ছাঁদের দিকে।
তার এমব আচরণ দেখে অবাক হয় জোহরা বেগম ও হাসিব দু’জনেই।
কারণ তারা কেউই কোনো হাসির শব্দ শুনতে পায়নি তাছাড়া ছাঁদ থেকে বাসা পর্যন্ত কোনো হাসির শব্দ আসার কথাও নয়।
তবুও তারা বেশি কিছু ভেবে সময় নষ্ট না করে অর্পিতার পিছু পিছু এগিয়ে যায়।
.
.
.
অর্পিতা ছাঁদে গিয়ে চারপাশে তাকিয়ে নুরীকে খুঁজতে থাকে।
হঠাৎ তার চোখ চলে যায় ছাঁদের একপাশের কর্ণারে।
ওখানে চোখ পড়তেই ভয়ে ও উৎকন্ঠায় হাত পা অবশ হয়ে আসে অর্পির।
ছাঁদের একদম কিনারে নুরী শুয়ে আছে।
ছাঁদের এতোটাই কিনারে যে, দেখে মনে হচ্ছে হালকা হাত পা নড়াচড়া করলেই নুরী ছাঁদ থেকে ওপাশে পড়ে যাবে।
অর্পিতা দৌড়ে গিয়ে নুরীকে সাবধানে তুলে বুকে জড়িয়ে চোখের পানি ছেড়ে দেয়।
ঠিক তখনই খুব শীতল একটা বাতাস এসে অর্পিতার শরীরে দোল দিয়ে যায়।
অর্পিতার পুরো শরীর জুড়ে শীতলতা নেমে আসে।বিষয়টি নিয়ে তখন চিন্তা না করে সে নুরীর মুখে চুমু খেতে শুরু করে।
হাসিব ও জোহরা বেগম দৌড়ে এসে নুরীকে দেখতে পেয়ে হাঁপ ছাড়েন।
কিন্তু এতটুকু মেয়ে ছাঁদে এলো কি করে! চিন্তাটা হাসিব ও জোহরা বেগমের মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে।
.
.
.
হাসিব এগিয়ে গিয়ে অর্পিতার কোল থেকে নুরীকে টেনে নেয়।
অর্পিতার দিকেও হাত বাড়িয়ে দেয় উঠে আসার জন্য।
হাসিবের হাত ধরে উঠতে যাবে তখন অর্পিতার চোখ চলে যায় ছাঁদের নিকটস্থ একটা গাছের দিকে।
অর্পিতা আবছা অন্ধকারে দেখতে পায়,গাছের একটা ডালে তার দিকে তাকিয়ে বসে আছে বড় একটা দাঁড়কাক।
যার চোখদুটো মাত্রাতিরিক্ত লাল হয়ে জ্বলজ্বল করছে।
.
.
.
চলবে

আমি আসবই
পর্ব ৭
.
.
.
হাসিব এগিয়ে গিয়ে অর্পিতার কোল থেকে নুরীকে টেনে নেয়।
অর্পিতার দিকেও হাত বাড়িয়ে দেয় উঠে আসার জন্য।
হাসিবের হাত ধরে উঠতে যাবে তখন অর্পিতার চোখ চলে যায় ছাঁদের নিকটস্থ একটা গাছের দিকে।
অর্পিতা আবছা অন্ধকারে দেখতে পায়,গাছের একটা ডালে তার দিকে তাকিয়ে বসে আছে বড় একটা দাঁড়কাক।
যার চোখদুটো মাত্রাতিরিক্ত লাল হয়ে জ্বলজ্বল করছে।
কাকটাকে দেখে অর্পিতা খুব ভয় পেয়ে যায়।
হাসিবকে ডাক দিয়ে কাকটির দিকে ইশারা করে।
এবার হাসিবও কাকটিকে দেখে বেশ ঘাবড়ে যায়। কিন্তু সেটা বুঝতে না দিয়ে অর্পিতা ও নুরীকে নিয়ে বাসায় চলে যায়।
.
.
হাসিবের এক হাত শক্ত করে ধরে নুরীকে বুকের ভেতর নিয়ে অর্পিতা ঘুমাচ্ছে।
আজ রাতে ঘুমাতে রাজিই হচ্ছিলো না সে।
মাথার কাছে বসে অনেক বলে জোর করে হাসিব তাকে ঘুম পাড়ালো।
আসলে নুরীর হারিয়ে যাওয়ার সম্পূর্ণ ব্যাপার নিয়ে হাসিবও খুব চিন্তায় পড়ে যায়।
কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা কখনোই স্বাভাবিক হতে পারে না।
এতো ছোট বাচ্চা কখনোই ছাঁদে যেতে পারে না যদি না কেউ তাকে নিয়ে যায়।
কিন্তু কে নিয়ে যাবে তাকে?
তাছাড়া দরজাও ভেতর থেকে বন্ধ ছিলো।
এমন অবস্থায় নুরীকে ভেতর থেকে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব।
মনে মনে এমন অনেক কথা ভাবতে থাকে হাসিব।
ঠিক তখনই মনে পরে যায় গতকাল রাতে অর্পিতার বলা কথাগুলো।
অর্পিতা বলেছিলো, জানালার কাছে দাঁড়িয়ে কোনো এক কালো অবয়ব নুরীর দিকে তাকিয়ে ছিলো।
মন না চাইলেও মস্তিষ্ক ভিন্ন কিছু জানান দেয় হাসিবের।
কিন্তু সে মানতে নারাজ। এ যুগে এসে অলৌকিকে বিশ্বাস রাখা বোকামি ছাড়া কিছুই না।
কিন্তু সবকিছু চোখের সামনে থাকতে মিথ্যা বলি কিভাবে!
শত চিন্তা করেও নিজের ভাবনাকে ভিত্তিহীন বলে এড়িয়ে যেতে পারলো না হাসিব।
অর্পিতার হাতটি ছাড়িয়ে কল দিলো তার পুরনো দীর্ঘদিনের বন্ধু আরিকাকে।
ভুতপ্রেত, ব্ল্যাকম্যাজিক,অশুভ শক্তি নানান বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছে সে।
অলৌকিক সবকিছু নিয়ে এপর্যন্ত সে সীমাহীন জ্ঞান অর্জন করেছে।
তবে এটা নিয়ে হাসিব বরাবরই তার মজা উড়িয়ে এসেছে। তাই আরিকাকে কল দেওয়া নিয়ে একটু ইতস্তত বোধ করলেও, নুরীর কথা ভেবে আর দেরি করে না হাসিব।
অর্পিতার থেকে আড়ালে গিয়ে কল দেয় আরিকাকে।
কয়েকবার রিং হওয়ার পরেই ওপাশ থেকে কল রিসিভ করে সালাম জানায় আরিকা।
সালামের উত্তর দিয়ে টুকটাক আলাপ আলোচনা সেড়ে, হাসিব বিগত কয়েকদিনের ঘটনা সব খুলে বলে।
আরিকা সব মন দিয়ে শুনে হাসিবকে জানায়,
-নুরীকে না দেখে,পর্যবেক্ষণ না করে কিছু বলা সম্ভব না। আমি আপাতত জরুরি একটা কাজে গ্রামে এসেছি।
কয়েকটা দিন আমার এখানে থাকতে হবে।
তবে চেষ্টা করবো খুব দ্রুত ঢাকায় ফেরার।
ততদিন ওকে একটু চোখে চোখো রাখ।
আরিকার কথায় সম্মতি জানিয়ে হাসিব ফোন কেটে দেয়।
কিন্তু ভেতরে ভেতরে অনেক দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকে।
.
.
.
তারপরের দিন সন্ধ্যা।
হাসিব একজন কবিরাজের কাছে নুরীর সম্পর্কে সব কিছু জানায়। কবিরাজ তেল,তাবিজ,নদীর পানি, এমন কিছু সামগ্রী দেয় নুরীর জন্য।
তিনি জানিয়েছেন এসব নিয়মিত ব্যবহারের ফলে খারাপ কোনোকিছুর প্রভাব থাকলে সেগুলো কেটে যাবে।
যদিও হাসিব এগুলো একদমই বিশ্বাস করে না, কিন্তু সময় অনেক কিছু বদলে দেয়।
.
.
কবিরাজের দেওয়া সামগ্রী নিয়ে হাসিব বাসায় ফিরে।
কলিংবেল চাপতেই কাজের মেয়েটা এসে দরজা খুলে দেয়।
হাসিব সবকিছু নিয়ে অর্পিতার রুমের দিকে এগিয়ে যায়।
রুমে ঢুকে বিছানার দিকে চোখ পড়তেই হাসিব ভয়ে শিউরে ওঠে।
সে দেখতে পায়,
খাটের উপর শুয়ে আছে অর্পিতা ও নুরী।
কিন্তু দু’জনেরই শরীর পা থেকে ধীরে ধীরে কালো ধোঁয়া হয়ে বাতাসে মিলে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।
এক মুহূর্তের ভেতরেই অর্পিতা ও নুরীর বুক পর্যন্ত অদৃশ্য হয়ে যায় কালো ধোঁয়া হয়ে।
এবার চোখের পলক ফেলতেই হাসিব দেখে অর্পিতা ও নুরী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আর কালো ধোঁয়া হয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় অর্পিতা ও নুরীর পুরো দেহ।
অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে হাসিব অর্পি বলে চিৎকার করে ওঠে।
কিচেন থেকে নুরীকে নিয়ে দৌড়ে আসে অর্পিতা।
পেছন থেকে হাসিবের কাঁধে হাত দিয়ে বলে,
-কি হয়েছে হাসিব! তুমি এভাবে চিৎকার করে উঠলে কেন?
সবকিছু ঠিক আছে তো?
নুরীকে কোলে নিয়ে অর্পিতাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাসিব বেশ অবাক হয়।
যদি এখানে অর্পি ও নুরী দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে একটু আগে যেটা দেখলাম সেটা কি ছিলো!
মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করে হাসিব।
অর্পিতা হাসিবকে চুপ করে থাকতে দেখে একটু ধাক্কা দিয়ে বলে,
-কি গো! বলো ওভাবে ডাকলে কেন আমাকে।
অর্পিতার ডাক শুনে হাসিব সম্বিৎ ফিরে পায়।
একটু আমতা আমতা করে সে বলে,
-না আসলে, এসে তোমাকে আর নুরীকে না দেখতে পেলে আমার ভালো লাগে না জানো তো।
তাই একটু জোরেই হয়ত তোমাকে ডেকে ফেলেছি।
অর্পিতা মুখে হাসি টেনে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
-তুমি আসলেই পাগল।
সন্ধ্যা সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে, বাহিরের পরিবেশটাও কত সুন্দর দেখাচ্ছে।
তাই বাবুকে নিয়ে বড় বেলকনিটায় দাঁড়িয়ে ছিলাম।
এবার যাও তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে নাও।
অর্পিতার কথামতো হাসিব হাত থেকে ব্যাগটি রেখে দ্রুত ওয়াশরুমে চলে যায়।
“দু’দিন এসব নিয়ে একটু বেশিই ভেবে ফেলেছি আমি।
ঘটনাগুলো খুব বাজে ইফেক্ট ফেলেছে ব্রেইনে।
এজন্যই এমন হ্যালুসিনেশন হচ্ছে আমার।
আপাতত কবিরাজের দেওয়া টিপস গুলো অনুসরণ করি দেখি পরবর্তীতে কি হয়।
তবে যাই হোক এসব কথা অর্পিকে কিছুতেই বলা যাবে না। এমনিতেও দু’দিন ধরে ও বেশ চিন্তিত। ”

নিজেকে নিজে কথাগুলো বলে লম্বা একটা শাওয়ার নেয় হাসিব।
.
.
.
এভাবে কেটে যায় আরও দুইদিন।
এর মাঝে হাসিব কবিরাজের বলা প্রতিটা কথা অনুসরণ করে।
নিয়ম করে তেল,পানি ও দেয় নুরীকে, কিন্তু ফলস্বরূপ কিছুই হয় না।
অর্পিতা বলেছে, গতকাল ও সেই কালো দাঁড়কাকটিকে সে দেখেছে।
হাসিব বুঝতে পারে,এসব কবিরাজদের দ্বারা কিছু হবার নয়।
একটা তাবিজ আর কিছু সরিষার তেল নিয়ে, নিজের নাম কবিরাজ রাখাটাও তাদের একটা ব্যবসার অংশবিশেষ।
এখন আরিকার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই।
.
.
.
ঘড়িতে দুপুর ১ টা।
সকাল থেকে মাথাটা খুব ঝিমঝিম করছে অর্পিতার। নুরী ঘুমিয়েছে এই সুযোগে কিচেনে গিয়ে কড়া এক কাপ আদা চা করে সে।
চায়ের কাপ নিয়ে সে নিজের রুমে চলে আসে।
রুমে ঢুকতেই একটা মিষ্টি গন্ধ তার নাকে এসে লাগে। গন্ধটা তার খুব পরিচিত। গত কয়েকদিন ধরে এই গন্ধটা মাঝে মাঝেই তার নাকে আসে।
কিন্তু আজকের গন্ধটা বেশি প্রখর।
মিষ্টি গন্ধটা অর্পিতাকে মোহনীয় করে তোলে।
চোখ বন্ধ করে অর্পিতা মন ভরে গন্ধটা অনুভব করতে থাকে।
হঠাৎ একটা শীতল বাতাসে অর্পিতা কেঁপে ওঠে।
চোখ খুলে সে নিজেকে আবিষ্কার করে একটা ঘন গভীর জঙ্গলে।
বড় বড় গাছ ও নানা রকম ঝোপঝাড়ে ভর্তি জঙ্গলটা।
উপরে তাকালে বড় গাছের ফাঁকা দিয়ে সূর্য দেখা গেলেও জঙ্গলের ভেতরে সন্ধ্যার মতো।
এখানে সে কিভাবে আসলো এটা নিয়ে খুব ঘাবড়ে অর্পিতা।
এতো বড় জঙ্গল অথচ চারদিকে পিনপতন নীরবতা।
মনে হচ্ছে জঙ্গলে কোনো পোকামাকড় ও নেই, জীবজন্তু তো দূরের কথা।
কিন্তু অজানা কোনো এক কারণে খুব ভয় হয় তার।
কাঁপা কাঁপা পায়ে বের হওয়ার রাস্তা খুঁজতে থাকে সে।
আচমকা একটা মিষ্টি হাসির শব্দে অর্পিতা থমকে দাঁড়ায়।
হাসিটার দিকে লক্ষ্য করে বুঝতে পারে এটা তার মেয়ে নুরীর হাসির শব্দ।
এই গভীর জঙ্গলে নুরীও আছে ভেবে বুকটা ধুক করে কেঁপে উঠলো অর্পিতার।
হাসির শব্দ অনুসরণ করে একটু সামনে আগাতে, কিছুটা দূরে একটা ছোট ঘর দেখতে পায় সে।
লক্ষ্য করে বুঝতে পারে ওই ঘর থেকেই শব্দটা আসছে।
অর্পিতা ঘরের দিকে দৌড় দিতেই একটা দমকা বাতাস এসে ধাক্কা দেয় তাকে।
বাতাসের বেগে অর্পিতা একটা ঝোপের উপর পরে যায়। ফলে ডান হাতের কনুই কিছুটা কেটে যায়।
বাতাস থেকে নাকে ভেসে আসে একটা উটকো বিশ্রী গন্ধ।
গন্ধটা নাকে আসতেই অর্পিতার খানিকটা কেঁপে ওঠে।
চোখ মেলে অর্পিতা দেখতে পায় সে তার নিজের রুমেই আছে চা হাতে করে দাঁড়িয়ে। নুরীও শুয়ে আছে বিছানায়। হাতের চা-টা থেকে এখনো ধোঁয়া উড়ছে।
তাহলে এতক্ষণ যেটা হচ্ছিল আমার সাথে সবটাই কি কল্পনা?
মনে মনে কথাগুলো ভাবতেই তার নাকে একটা তীব্র বিশ্রী গন্ধ ভেসে আসে।
গন্ধে নাক চেপে ধরতে গিয়ে সে দেখতে পায় হাত বেয়ে কয়েক ফোঁটা রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
ভালোভাবে লক্ষ্য করার পড়ে অর্পিতা দেখে তার ডান হাতের কনুই বেশ খানিকটা কেটে গিয়েছে। বিস্ময়ে চোখ বড় বড় হয়ে যায় তার।
শব্দ করে বলে ওঠে,
“এটা কিভাবে সম্ভব ”
.
.
.
.
চলবে…..

লেখিকাঃ Saaiba Chowdhury

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here