আমি আসবই পর্ব ৮,৯

0
1711

আমি আসবই পর্ব ৮,৯
লেখিকা- Saaiba Chowdhury
পর্ব ৮

বাতাসের বেগে অর্পিতা একটা ঝোপের উপর পড়ে। ফলে তার ডান হাতের কনুই কিছুটা কেটে যায়।
নাকে ভেসে আসে একটা উটকো বিশ্রী গন্ধ।
গন্ধটা নাকে আসতেই অর্পিতা খানিক-টা কেঁপে ওঠে।
চোখ মেলে দেখতে পায় সে তার নিজের রুমেই চা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। নুরীও শুয়ে আছে বিছানায়। হাতের চা-টা থেকে এখনো ধোঁয়া উড়ছে।
তাহলে এতক্ষণ যেটা হচ্ছিল আমার সাথে সবটাই কি কল্পনা?
মনে মনে কথাগুলো ভাবতেই তার নাকে একটা তীব্র বিশ্রী গন্ধ ভেসে আসে।
গন্ধে নাক চেপে ধরতে গিয়ে সে দেখতে পায় হাত বেয়ে কয়েক ফোঁটা রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
ভালোভাবে লক্ষ্য করার পড়ে অর্পিতা দেখে তার ডান হাতের কনুই বেশ খানিকটা কেটে গিয়েছে। বিস্ময়ে চোখ বড় বড় হয়ে যায় তার।
শব্দ করে বলে ওঠে,
“এটা কিভাবে সম্ভব ”
তাহলে কিছুক্ষণ আগে যেগুলো ঘটে গিয়েছিলো সেগুলো ভ্রম না,বাস্তব?
বাস্তব হয় কিভাবে!
হিসাবে ওখানে বেশ অনেকক্ষণ সময় আমার কেটেছে। ততক্ষণ চা গরম থাকার কথা না।
কিন্তু চায়ের কাপ থেকে এখনও ধোঁয়া উড়ছে।
যদি ভ্রম হয় তাহলে হাতে রক্ত আসলো কিভাবে!
উফফ আমার মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে।
হাত থেকে কাপটি রেখে অর্পিতা বিছানায় বসে পরে।
চিন্তায় মাথা ঘুরপাক খাচ্ছে।
অর্পিতার রুমের সামনে দিয়ে কাজের মেয়ে রিতা যাওয়ার সময় দেখতে পায়, অর্পিতার হাত থেকে
রক্ত ঝড়ছে।
ভাবী আমনের হাতে রক্ত কিভাবে আসলো!
জোরে কথাটা বলে অর্পিতার রুমে প্রবেশ করে সে।
রুমে ঢুকেই গন্ধে ওড়না দিয়ে মুখ চেপে ধরে রিতা।
রুম তো সকালেই পরিষ্কার করেছি তাহলে এহন এতো গন্ধ আইলো কেমনে ভাবী?
-তেমন কিছু না দরজার সাথে লেগেছে একটু, তাই কেটে গিয়েছে। হঠাৎ করে গন্ধটা কোত্থেকে আসলো আমিও বুঝতে পারছি না।
-দাঁড়ান ভাবী আমি এহনই ব্যান্ডেজ করে দিতাছি বলে রিতা রুম থেকে বের হয়ে যায়।
.
.
.
ক্ষত জায়গা পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দেয় রিতা।
তারপর গন্ধের উৎস খুঁজতে থাকে পুরো রুম জুড়ে।
টেবিলের নিচে,ওয়ারড্রব, খাটের নিচে সব জায়গা তন্নতন্ন করে খুঁজে সে।
কিন্তু কোথাও কিছু না পেয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাওয়ার সময় তার চোখ পড়ে দরজার পেছনে।
“এই দেখেন ভাবি এইডা দিয়া এতো গন্ধ বাইর হইতাছে ”
কথাটা বলে একটা মৃত বাদুড় তুলে ধরে অর্পিতার সামনে।
রুমের ভেতরে বাদুড় দেখে অবাক হয় দু’জনেই।
বদ্ধ রুমে এতো বড় একটা বাদুড় আসা কোনোভাবেই সহজ নয়।
অর্পিতা বুঝতে পারে,অন্যান্য প্রশ্নের মতো এটাও একটা প্রশ্ন যার উত্তরটা সহজে মিলবার নয়।
রিতাকে বাদুড়টা ফেলতে বলে, হাসিবকে কল দেয় অর্পিতা।
কয়েকবার কল দেওয়ার পরেও ওপাশ থেকে কল রিসিভ না হওয়ায় বেশ চিন্তায় পরে যায় সে।
কিছুক্ষণ পরে অর্পিতার ফোনে হাসিবের নাম্বার থেকে একটা মেসেজ আসে,
-বিশেষ কাজে ব্যস্ত আছি। ফ্রী হয়ে কল দেবো।
মেসেজটি পেয়ে ফোন রেখে অর্পিতা খাটের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমের অতলে তলিয়ে যায়।
.
.
প্রায় ১০ মিনিট পরে আরও একটি মেসেজের শব্দে অর্পিতার ঘুম ভেঙে যায়।
ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে অচেনা একটা নাম্বার থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটা ভিডিও এসেছে।
ভিডিও প্লে করতেই অর্পিতার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
সে ভিডিওটিতে দেখতে পায়, হাসিব একটা মেয়ের সাথে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে আর অনেক হাসিঠাট্টা করছে।
মেয়েটা দেখতে অনেক সুন্দরী, বেশ স্মার্টও।
তার পড়নে শার্ট-প্যান্ট, চোখে সানগ্লাস, চুলগুলো শর্ট করে ববস কার্ট দেওয়া।
দু’জনকে দেখে মনে হচ্ছে বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দু’জনের মাঝে।
ভিডিওটি দেখে রাগে ও কষ্টে হাত পা কাঁপতে থাকে অর্পিতার।
অচেনা নাম্বারটিতে বেশ কয়েকবার কল দেয় সে কিন্তু প্রত্যেকবারই বন্ধ পায়।
অগত্যা সে হাসিবকে আবারও কল দেয়।
এবারও হাসিব কলটা কেটে দেয়।
হাত থেকে ফোনটা বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে দিয়ে হাঁটুতে মাথা গুঁজে কান্না করতে থাকে অর্পিতা।
এভাবে বেশ অনেকক্ষণ কান্না করে সে।
ফোনে রিংটোন বাজার শব্দে ঘোর কাটে তার।
ফোনটি তুলে দেখে হাসিব কল দিয়েছে।
হাসিবের কল দেখে অর্পিতার রাগ আরও বেড়ে যায়।
অনেকক্ষণ রিং হয়ে কলটা কেটে যাওয়ার সাথে সাথে অর্পিতা ফোনটা বন্ধ করে রাখে।
.
.
.
বিকাল ৫ টা।
অফিস থেকে ফিরেই হাসিব রুমে ঢুকে অর্পিতাকে জড়িয়ে ধরে।
আজ এই স্পর্শটা অর্পিতার কাছে খুব বিরক্ত লাগছে। ভালোবাসা ও বিশ্বাসের মাঝে সন্দেহর বীজ রোপণ করেছে হাসিব
মেয়েটির সাথে প্রেমজনিত সম্পর্ক আছে সেই সন্দেহ না, আমাকে সত্যিটা বলেনি সেই বিষয়ে।
-দুপুরে অনেকবার কল করেছিলাম তোমাকে,
রিসিভ করোনি,কি কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলে তুমি?
হাসিব অর্পিতাকে ছেড়ে দিয়ে শার্ট খুলতে খুলতে বললো,
-জরুরী একটা মিটিংয়ে ছিলাম।
বস দেশের বাইরে যাবে তো তাই সবকিছু আমাকে বুঝিয়ে দিলো।
হাসিবের এমন মিথ্যা কথা শুনে প্রচন্ড রাগ হলো অর্পিতার।
মোবাইলটা হাতে নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকলো।
ভিডিওটা দেখিয়ে হাসিবের মিথ্যাটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে ধরিয়ে দেবে সেজন্য।
কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকে কোথাও সেই ভিডিওটা দেখতে পেলো না সে।
হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ব্যাকআপ দিয়েও কোনো কাজ হলো না।
তখন মনে পড়লো কললিস্টের কথা।
নাম্বার থেকে বেশ কয়েকবার কল করেছিল তাকে। সেখানে নিশ্চয়ই নাম্বারটা পাওয়া যাবে।
বিষয়টা মনে পড়তেই অর্পিতা ফোনের কল লিস্টে চলে গেলো।
কিন্তু অদ্ভুতভাবে সেখানেও সেই নাম্বারটা অর্পিতা খুঁজে পেলো না।
দু-হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো সে। জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে শুরু করে, কপাল বেয়ে দরদর করে ঘাম ছুটছে তার।
কি হচ্ছে না হচ্ছে আজকাল কিছুই বুঝতে পারছে না অর্পিতা।
একটার পর একটা অবিশ্বাস্য ঘটনা পাগল করে তুলছে তাকে।
এমন অবস্থা দেখে হাসিব দৌড়ে এসে অর্পিতার মাথায় হাত দেয়
-কি হয়েছে অর্পি?
তোমার কি কোনোরকম শরীর খারাপ লাগছে?
টেবিল থেকে পানিভর্তি গ্লাসটি তার দিকে এগিয়ে দিয়ে পানি খেয়ে নিতে বলে হাসিব।
ঢকঢক করে গ্লাসটা নিমিষেই খালি করে ফেলে অর্পিতা।
হাসিবকে কিছু না বলে কাঁত হয়ে শুয়ে পরে বিছানায়।
.
.
.
.
সারারাত অর্পিতার ঘুম হয় না।
দুপুরের ভিডিওটার কথা মনে পড়লেই খুব কান্না পাচ্ছে তার।
ভালোবাসার মানুষের ছোটখাটো মিথ্যাও অনেক কষ্টের। একেকটা মিথ্যা মনে হয় এক একটা ছুরিকাঘাতের মতো।
মিথ্যা বিশ্বাসকে নিস্তেজ করে দেয়।
এমন না না ধরনের দুশ্চিন্তায় কেটে যায় অর্পিতার রাত।
.
.
ভোরের দিকে চোখ লেগে যায় অর্পিতার।
সকাল ৮ টার দিকে ঘুম ভাঙ্গে কলিংবেলের শব্দে।
অনেকক্ষণ ধরে কলিংবেল বেজেই চলেছে।
অর্পিতা বিছানা ছেড়ে উঠে দরজা খুলে অনেক অবাক হয়।
সে দেখতে পায় কালকের ভিডিওতে থাকা মেয়েটি বড় একটা ব্যাগ নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
অর্পিতা দরজা খুলে দিতেই মেয়েটা একটা মুচকি হাসি দিয়ে তাকে “হাই” জানায়।
অর্পিতা মেয়েটাকে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে আছে।
কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে সে।
অর্পিতা কিছু বলার আগেই পেছন থেকে হাসিবের কন্ঠ ভেসে আসে,
-হেই চলে এসেছো তুমি।
আমাদের গৃহে তোমাকে স্বাগতম সাহেবা।
অর্পি তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি ওকে ভেতরে আসতে দেবে!
হাসিবের কথায় ঘোর কাটে অর্পিতার।
কিছু না বলে সে দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়।
ভেতরে ঢোকার পরে হাসিব অর্পিতার উদ্দেশ্যে বলে,
-তোমার সাথে তো পরিচয়ই করিয়ে দেওয়া হলো না।
ওর নাম আরিকা।
আমার কলেজ ফ্রেন্ড।
এদিকে একটা কাজে এসেছে তাই বললাম আমাদের এখানে থাকতে।
অর্পিতা জোর করে মুখে হাসি টেনে বলে,
-ভালো করেছো। আপনজনের বাসা কাছে থাকতে অন্য কোথাও কেন থাকবে।
তোমার অফিসের টাইম তো হয়ে গেছে, এখনো রেডি হচ্ছো না যে!
-আসলে আজ আমি ছুটি নিয়েছি।
কতদিন পর আরিকার সাথে দেখা, ভাবলাম মন খুলে একটু আড্ডা দেওয়া যাবে।
আমি আরিকাকে ওর রুম দেখিয়ে দিচ্ছি, তুমি সেই ফাঁকে আমাদের জন্য একটু চা করে ফেলো।
কথাগুলো বলে হাসিব আরিকার ব্যাগটি নিয়ে তাদের রুমের পাশের খালি রুমটায় নিয়ে গেলো।
.
.
কিচেনে ঢুকে রাগে গজগজ করছে অর্পিতা।
কিন্তু আপাতত নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে যেভাবে চলছে সবকিছু সেভাবেই চলতে দেওয়া উচিৎ বলে মনে করছে সে।
হতেও পারে এরমাঝে এমন কিছু আছে যা সে দেখতে পাচ্ছে না।
.
.
সকাল গড়িয়ে বিকাল হয়ে যায়।
কিন্তু সারাদিন আজ খুব বিষাক্তময় ছিলো অর্পিতার কাছে।
সকাল থেকে হাসিব ও আরিকার এতো এতো কথাবার্তা জ্বালাচ্ছে তাকে ভিষণ ভাবে।
তবে দু’জনকে একা ছেড়ে দেওয়ার মত বোকামি সে করেনি।
কিচেনে থাকুক বা যেকোনো কাজে, সর্বদা মনোযোগটা তাদের দিকেই ছিলো।
তবুও একটুআধটু সুযোগ পেলেই হাসিব চলে যায় আরিকার কাছে।
দু’জনে মিলে কখনো বেলকনিতে, কখনো আরিকার রুমে, সবার থেকে আলাদা গিয়ে মেতে ওঠে কথায়।
অর্পিতা যতটা না বেশি রাগ হয় তার থেকে বেশি কষ্ট পায়।
ভালোবাসার মানুষের পাশে কাউকে সহ্য করা যায় না। কাছের মানুষের হাসিটাও বিষের মতো লাগে যখন সেটা অন্য কারও সাথে হয়।
.
.
.
রাত ১২ টা।
আচমকা কিছু একটার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় অর্পিতার।
পাশে তাকিয়ে সে দেখতে পায় হাসিব সেখানে নেই।
অথচ দু’জন একসাথেই ঘুমিয়েছিলো।
ওয়াশরুমের ও লাইট অফ!
তাহলে এতোরাতে হাসিব গেল কোথায়?
অর্পিতার মাথায় ঘুরপাক খেতে শুরু করে ভিন্ন কিছু।
মন না চাইতেও সে বিছানা রুম থেকে বের হয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় আরিকার রুমের দিকে।
পর্দাটা টেনে দিয়ে দরজাটা খোলাই আছে।
ভেতর থেকে আরিকার অদ্ভুত কিছু শব্দ ভেসে আসছে।
অর্পিতা কাঁপা কাঁপা হাতে পর্দাটা সরাতেই ভেতরের দৃশ্য দেখে চমকে ওঠে।
সে বিছানার উপর হাসিব ও আরিকাকে নগ্ন ও খুব ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখতে পায়।
ঘৃণায় শরীর গুলিয়ে ওঠে অর্পিতার।
হাসিব বলে চিৎকার করে ওঠে সে।
নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে হাতের কাছে থাকা ফুলদানিটা ছুড়ে মারে হাসিবের দিকে।
.

.
চলবে।

আমি আসবই
পর্ব-৯
লেখিকা-সাইবা চৌধুরী

অর্পিতা কাঁপা কাঁপা হাতে পর্দাটা সরাতেই ভেতরের দৃশ্য দেখে চমকে ওঠে।
সে বিছানার উপর হাসিব ও আরিকাকে নগ্ন ও খুব ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখতে পায়।
ঘৃণায় শরীর গুলিয়ে ওঠে অর্পিতার।
হাসিব বলে চিৎকার করে ওঠে সে।
নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে হাতের কাছে থাকা ফুলদানিটা ছুড়ে মারে হাসিবের দিকে।
.
ফুলদানিটা গিয়ে সোজা হাসিবের মাথার পেছন দিকটায় লাগে।
মাথা বেশ খানিকটা কেটেও যায়।
রাগে ও ঘৃণায় জোরে জোরে শব্দ করে নিঃশ্বাস ছাড়তে থাকে অর্পিতা।
আরিকা দৌড়ে যায় অর্পিতার কাছে।
-কি হয়েছে অর্পিতা তুমি হঠাৎ হাসিবকে আঘাত করলে কেন?
নাম ধরে বেশ কয়েকবার ডেকেও কোনো উত্তর না পেয়ে অর্পিতাকে ধরে জোরে একটা ঝাঁকি দেয় আরিকা।
ঝাঁকিতে অর্পিতা সজ্ঞানে ফিরে আসে।
বড় বড় চোখ করে আরিকার দিকে তাকিয়ে অর্পিতা বলে,
-ছিহ! কেমন চরিত্রের মেয়ে তুমি?
বন্ধু পরিচয় দিয়ে একটা বিবাহিত পুরুষের বাসায় থেকে, গভীররাতে তার সাথে নষ্টামি করতে একটুও বাঁধে না?
অর্পিতার কথা শুনে হাসিব চিৎকার করে বলে ওঠে,
-একদম চুপ অর্পি
যথেষ্ট হয়েছে !
কোনোকিছু না জেনে একটা মেয়ের চরিত্রের উপর আঙুল তুলতে কি তোমার একটুও বাঁধলো না?
তোমার কেন মনে হচ্ছে, আরিকা খারাপ মেয়ে!
বলো আমাকে!

অর্পিতার কথায় আরিকার খুব খারাপ লাগে।
নিজের চরিত্র নিয়ে কোনো মেয়েই কিছু শুনতে পারে না। সেখানে এমন একটা অপবাদে আরিকা একদম নির্বাক হয়ে যায়।
তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে হাসিবের উদ্দেশ্যে বলে,
-অর্পিতাকে কিছু বলো না হাসিব।
এখানে ওর কোনো দোষ নেই।
অর্পিতা সেটাই দেখতে পাচ্ছে যেটা ওকে দেখানো হচ্ছে। এখনও অর্পিতা একটা ঘোরের মধ্যে আছে। যেখান থেকে আমাদেরই তাকে বুঝিয়ে বের করে আনতে হবে।
আরিকা অর্পিতার হাত ধরে রুমের ভেতরে নিয়ে একটা সোফায় বসায়।
এক গ্লাস পানি তার দিকে এগিয়ে দিয়ে আরিকাও তার সামনাসামনি একটা চেয়ার টেনে বসে।
অর্পিতা পানি না খেয়ে টেবিলের উপরে গ্লাসটি রেখে দেয়।
অনেক সময় ধরে আরিকা এক ধ্যানে অর্পিতার দিকে তাকিয়ে থাকে।
এক পর্যায়ে সে বলে,
-এবার বলো অর্পিতা তুমি কি দেখেছো?
আরিকার এমন প্রশ্ন শুনে সে রাগে আরও ফুলে ওঠে।
অর্পিতা বলে,
-যা তোমরা করেছো তাই দেখেছি।
ছিহ! আমার ভাবতেও ঘৃণা লাগছে।
কিভাবে পারলে আরিকা একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের সংসার নষ্ট করার মতো কাজ করতে?
আর হাসিব তুমি!
রুমে বউ বাচ্চা রেখে এখানে এসে!
ছিহ!
ভালোবাসার কোনো দাম রাখলে না তুমি।
হাসিব রেগে গিয়ে আবারও কিছু বলতে যাবে তখন আরিকা ইশারা করে তাকে চুপ করিয়ে দেয়।
অর্পিতার কাঁধে হাত দিয়ে বলে,
-তুমি যেটা দেখেছো সেটা তোমার মনের ভুল।
আমি কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে এখানে আসিনি।
আমি এসেছি তোমার মেয়ে নুরীকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে।
ভুতপ্রেত-অলৌকিক শক্তি, রহস্য, এসবের পেছনে ছুটে বেড়ানো আমার কাজ।
তোমাদের সাথে কয়েকদিন ধরে যা ঘটছিলো সেই সবকিছুই হাসিব আমাকে জানিয়েছে।
বিশ্বাস নাহলে ওই দেখো,
বিছানার উপর কতো বই রাখা শুভ শক্তি -অশুভ শক্তি বিষয়ক।
এতক্ষণে অর্পিতা চারদিকে নজর বুলাল।
রুমের সবকিছু দেখে নিজেই অবাক হয়ে গেলো।
কিছুক্ষণ আগেও সে রুমের অনেককিছু ভিন্নভাবে দেখেছে, বইয়ের কোনো চিহ্নও ছিলো না বিছানায়।
তাছাড়া আরিকা ও হাসিবতো উলঙ্গ ছিলো,তাহলে কাপড় পড়লো কখন?
চোখের সামনেই তো ছিলো দু’জন।
অর্পিতা আস্তে করে বলল,
-তাহলে একটু আগে যেটা আমি দেখলাম সেটা কি ছিলো?
-সেটা তোমাকে দেখানো হয়েছে অর্পিতা। এ বাসায় দুই ধরনের শক্তির অস্তিত্ব আমি টের পেয়েছি। তার মধ্য থেকে একটা শক্তি চায় না আমি এখানে থাকি বা নুরীর সত্যতা উদঘাটন করি। যার কারণে তোমার সামনে একধরনের মায়াজাল বিছিয়ে রেখেছে।
-আচ্ছা! তোমার কথা যদি মেনেও নেই তাহলে হাসিব তুমি এটা বলো আমাকে,
আমাকে না জানিয়ে এতো রাতে চুপিচুপি এখানে কি করছো তুমি?
যদি আরিকার কথা সত্যি হতো তাহলে আমাকে জানাতে সমস্যা ছিলো কোথায় তোমার?
অর্পিতার প্রশ্ন শুনে আরিকা বলে ওঠে,
-এটার উত্তরও আমি দিচ্ছি।
তুমি গত কয়েকদিন ধরে সবকিছু নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তে আছো। যার কারণে নতুন কোনো দুশ্চিন্তায় ফেলতে চায়নি হাসিব। বলতে পারো একরকম আমিই নিষেধ করেছি ওকে।
কারণ এসব পথে অনেক রিস্ক।
তার জন্য তুমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ও এসেছিল আমার কাছে, আমরা খুব দ্রুত একটা সমাধানে যেতে চাচ্ছিলাম।
আমার কথা বিশ্বাস করো অর্পিতা।
এখন যেহেতু আমার সম্পর্কে তুমি জেনেই গিয়েছো, নিজেকে শান্ত করো আর খুলে বলো এতদিনে কি কি হয়েছে তোমার সাথে।
সবকিছু দেখে ও আরিকার কথা শুনে নিজের ব্যবহারের উপর খুব লজ্জিত হয় অর্পিতা।
.
.
অর্পিতা বড় একটা নিশ্বাস ফেলে টেবিলে রাখা পানির গ্লাস তুলে ঢকঢক করে সব পানি খেয়ে নেয়।
নিচ দিকে তাকিয়ে বলে,
-আমি খুব দুঃখিত।
তোমাকে ওভাবে বলা আমার উচিৎ হয়নি। তাছাড়া কি বা করতাম বলো!
ভালোবাসার মানুষকে চোখের সামনে ওভাবে দেখলে কেউ ই সহ্য করতে পারবে না।
-যা হবার হয়ে গেছে, এতে তোমার কোনো দোষ নেই। মুল কথা হলো এসব নিয়ে ভাবার সময় এখন না অর্পিতা।
তুমি আমাকে বিগত কয়েকদিনের ঘটে যাওয়া সব খুলে বলো।
অর্পিতা আরিকাকে সব খুলে বললো।
নুরী পেটে আসা, তারপর এবরশন না হওয়া,একেরপর এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটা, কালো ছায়া দেখতে পাওয়া,মিষ্টি ও বিশ্রী গন্ধের ব্যাপারে সব বলতে শুরু করলো।
আজ দুপুরের সেই জঙ্গলের ঘটনাও বললো আরিকাকে।
এমনকি হাতের কাটা জায়গাটাও দেখালো।
এতে অনেক চিন্তায় পরে গেলো সবাই।
এটা কি করে সম্ভব!
আরিকা অর্পিতার থেকে জঙ্গলটার বিবরণ বিস্তারিত শুনলো।
অতঃপর ল্যাপটপ বের করে গুগলে সার্চ দিয়ে আশেপাশের সব জঙ্গলগুলো দেখাতে লাগলো অর্পিতাকে।
অনেকগুলো জঙ্গল দেখানোর পর একটা জঙ্গল দেখে অর্পিতা কিছুটা কেঁপে উঠলো।
ছবিটাতে স্বপ্নে দেখা সেই কুঁড়ে ঘরটাও দেখা যাচ্ছে।
অর্পিতার এক্সপ্রেশন দেখে আরিকা বললো,
-কি মনে হয় অর্পিতা?
এটা কি সেই জঙ্গলটা?
অর্পিতা হ্যাসুচক জবাব দিলে আরিকা জঙ্গলটির ব্যাপারে বিস্তারিত পড়তে আরম্ভ করলো।
.
.
.
আমার মনে হচ্ছে সব সমস্যার সমাধান এই জঙ্গলেই পাওয়া যাবে।
তবে জঙ্গলটা খুব বিপদজনক। নানাধরণের বিষাক্ত গাছপালায় ভর্তি।
এরমাঝে এমনকিছু গাছ এমনও আছে যেগুলো শরীরে লাগলে ঝলসে যায়,কিছু কিছু গাছের কারণে মৃত্যুও হয়।
আরও আছে অসংখ্য ভেনাস ফ্ল্যাইট্র্যাপ গাছ।
যেগুলো খাদ্য হচ্ছে পোকামাকড়।
পোকামাকড়ের ছোঁয়া পেলেই গিলে ফেলে।
এসব কারণে জঙ্গলটিতে কোনো জীবজন্তুও নেই।
না আছে দূরদূরান্ত পর্যন্ত কোনো বসতবাড়ি।
এলাকাবাসীদের কথানুযায়ী,
-জঙ্গলের ভেতরে নাকি অশরীরী শক্তি আছে।
যদিও এটা অনেকেই গুজব বলে ধরে নিয়েছে।
তবে আমি আশাবাদী ওই জঙ্গলে গেলে আমরা সব প্রশ্নের উত্তর পাবো।
জানো অর্পিতা!
তোমাকে কল্পনায় এইসবকিছু দেখিয়েছে শুভ কোনো শক্তি। হাতে একটা চিহ্নও রেখেছে যাতে ভ্রম বলে এড়িয়ে না যাও।
কল্পনায় দূরে সরিয়ে দিয়েছে অশুভ শক্তি, আমার ধারণা মতে।
তবে যাই হোক হাসিব! আমাদের দ্রুত বের হতে হবে।
এখান থেকে জঙ্গলে পৌঁছাতে ১২ ঘন্টা সময় লাগবে গুগল ম্যাপ অনুযায়ী।
এখন রাত ৩ টা বাজে।
এখন রওনা দিলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে কাল দুপুর ৩ টা।
বেশি লেট করলে রাত হয়ে যাবে। ওইরকম একটা জঙ্গলে রাতে কিছু করা ঠিক হবে না।
অর্পিতা!
তুমি বাসায় থেকে নুরীর খেয়াল রাখবে।
আমরা কল করে কিছু না জানানো পর্যন্ত নুরীকে কোল থেকে সরাবে না।
অর্পিতা মাথা নেড়ে আরিকার কথায় সম্মতি জানায়।
হাসিবের দিকে তাকিয়ে আরিকা বলে,
রুমে গিয়ে দরকারী যা যা লাগবে বলে মনে হয় সাথে নিয়ে নাও।
বাকিটা আমি দেখছি!
আরিকার কথা অনুযায়ী হাসিব ও অর্পিতা উঠে নিজেদের রুমের দিকে পা বাড়ায়।
দরজার কাছে যেতেই অর্পিতাকে ডাক দিয়ে আরিকা বলে,
-অর্পিতা!
যদি কখনো শোনো নুরী তোমাদের সন্তানই নয় তাহলে নিজেকে সামলাতে পারবে তো?
আরিকার কথা শুনে অর্পিতার বুকটা ধুক করে উঠলো। চোখে হাজারও প্রশ্ন নিয়ে আরিকার দিকে তাকিয়ে রইলো সে।
.
.
.
.
চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here