আমি শুধুই তোমার❤️,পর্বঃ-১০ শেষ
Writer:-আইদা ইসলাম কনিকা
মানুষের জীবনে সুখ দুঃখ দুনটাই আসে একটার পরই আরো একটার আশা করা যায়। ফারিদাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে, আজ ইভান একজন বড় মাপের ডক্টর হওয়ার পরও সে আজ দূর্বল, ইভান সেই কখন থেকে মিরার দিকে লাল চোখে, তাকিয়ে আছে। ফারিদার মা-বাবা ফারিনও আসছে। ফারিন অনেক কান্না করছিল তাই অংশ তাকে নিয়ে বাইরে চলে যায়। ফারিদার মা আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না করছে। মিরা ভাবে এটাই সময় ইভানের কাছে ভালো সাজার। মিরা ইভানের কাছে গিয়ে কিছু বলতে যাবে। ইভান উঠে দাড়িয়ে দেয় এক চড় বাসিয়ে মিরা ছিটকে গিয়ে নিচে পরে। চড়টা এতটাই জোড়ে ছিল যে মিরার ঠোঁট কেটে যায়। ইভান গিয়ে মিরা চুলের মুঠি ধরে আবার দাড় কারায় ইভানের মা এগিয়ে আসলে ইভান এমন ভাবে তাকায় যে সে আর কিছু বলতে পারেনা। সবাই বুঝতে পারছে মিরা এমন কিছু করেছে যার কারণে তার এমন অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে। মিরা অনেক কষ্টে বলে
—কি করছ কি ইভান ভাইয়া? ইভান এবার আরেক হাত দিয়ে মিরার গলা টিপে ধরে আর বলে
—-তোকে আজ মেরেই ফেলবো। আমি নিজে দেখেছি তুই ফারিদাকে ধাক্কা দিয়েছিস। জানে মেরে ফেলবো যদি আমরা ফারিদার কিছু হয় কসম খোদার ।মিরার তো হাত পা দিয়ে কাপঁ উঠে গেছে ইভান কি করে জানলো। মিরা বলে
—-চমার কষ্ট হচ্ছে, আর ফারিদা পরে যাচ্ছিল আমি ওকে। আর কিছু বলতে যাবে ইভান আরো জোড়ে গলা চেপে ধরলো। তখনই ফারিদার বাবা আর ইভানের বাবা এসে ইভান কে ছাড়ায়। কিন্তু লাভ হয়না। ইভান আবার গিয়ে পর পর ৩টা চড় বসিয়ে দেয়। আর বলে
—-তোকে আমি জেলে দিব। কেনো করলি এমনটা? মিরা বলে
—-কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি। সাথে সাথে আরেকটা চড় পরলো তার গালে। সামনে তাকিয়ে দেখে মিরার মা। মিরার মা বলে
—- আমি সব শুনেছি, তোকে নিজের মেয়ে বলতে ঘৃণা করছে। ইভান বাবা। ইভান হাত দিয়ে থামিয়ে বলে
—-কাজ হবে না, ওকে জেলের ভাত খেতেই হবে। মরি যেই না দৌড় দেয় পালানোর জন্য, পিছন পিছন ইভানও,ইভান সামনে তাকিয়ে দেখে অংশ আর ফারিন আসছে। ইভান বলে
—-মিরাকে ধর। ফারিনকে যখন মিরা ক্রস করতে যাবে তখনই ফারিন মিরার খুলা চুলগুলো নিজের হাতে পেচিয়ে ফেলে। আর টান মেরে নিচে ফেলে দেয়। অংশ তো হা হয়ে তাকিয়ে আছে। ইভান এসে আরেকটা থাপ্পড় মারে মিরার গালে। মিরার গালগুলো লাল টোটকে হয়েগেছে। তারপর ইভান বলে
—-তোকে আমি বলে ছিলাম চিরকুটটা নিয়ে ফারিদাকে দিতে। আর আমি চিরকুটে লিখেছিলাম, ভালোবাসি বলিনা কিন্তু তোমায় বাসি,সেটা পরে ফারিদা ছাঁদে কেনো যাবে। আর তাছাড়া আমি নিজ চোখে দেখেছি তোকে তুই আমার ফারিদাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলেদিয়েছিস। তখনই একটা ডক্টর এসে বলে।
—-ডক্টর ইভান কি করছেন কি এটা বাসা না, হসপি,,,, আর কিছু বলতে যাবে ইভান তার দিকে তার রক্ত চোখে তাকিয়ে বলে
—–এটা আমাকে শিখাতে হবে না। আর হসপিটালটা আমার বাবার নামে সো, চুপচাপ নিজের কাজে যান,আর অংশ তুই পুলিশকে কল কর। অংশ কল করে দেয় ফারিন গিয়ে মিরার চুলগুলো ইচ্ছে মতো টানে।আর বকে। কিছু সময় এর মধ্যেই মিরার কুকর্তি প্রকাশ পেয়ে যায়। ইভানের আন্টি হাজার বললেও ইভান শুনেনি। বাধ্য করেছে মিরাকে জেলে যেতে। ইভান আর পারে না বুক ফেটে কান্না আসছে। ছেলেদের নাকি কাদঁতে নেই। কিন্তু ইভান যে নিজের কান্নাটা আটকাতে পারছে না। সে দেওয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে জোড়ে জোড়ে কেঁদে দিল। ছেলের এমন অবস্থা দেখে ইভানের বাবা গিয়ে জড়িয়ে ধরে ইভানকে শান্তনা দিতে থাকে। তখনই একটা ডক্টর বেরিয়ে আসে।ইভান দৌড়ে গিয়ে ডক্টরকে বলে
—-আমার আমার ফারিদা কেমন আছে? ডক্টর বললো
—-আমরা আমাদের বেস্টটা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আর বাকিটা আল্লাহ জানে। ইভাম ডক্টরের কাঁধের কাছে হাতটা নিয়ে বলে
—-ফারিদার কিছু হলে,সবাইকে হসপিটাল থেকে বের করে জেন্ত কবর দিব। চুপচাপ ভিতরে যান। ডক্টরটা ভয়ে ভিতরে চলে যায়। ইভানের বাবা বলে
—-ইভান পাগলামী না করে আল্লাহর কাছে ফারিদার জন্য দোওয়া কর। ইভান কিছু না বলে চুপচাপ বেড়িয়ে গেলো হসপিটাল থেকে। ছেলেটা তার সহজে রাগে না রাগলে কি করে নিজেও জানে না। ইভানের বাবার টেনশন হচ্ছে এখন।ইভান হসপিটালের পাশের মসজিদ টায় ওযু করে নামাজ পড়তে লাগে। রাত ১টার দিকে ফারিদাকে আইসিইউ তে দেওয়া হয়। ৩৬ ঘন্টাার আগে কিছু বলা যাবে না। ইভান রাত ২ টার দিকে হসপিটালে আসে দেখে ফারিদারমুকে অক্সিজেন মাস্ক, হাতে কেরোলা মাথায় হাতে,পায়ে বেন্ডেজ। ইভানের কলিজা আতকে উঠে। আল্লাহর রহমতে আর সবার দোওয়ায় ৩৬ ঘন্টার আগেই ফারিদার সেন্স ফিরে আসে। নার্স গিয়ে ডক্টরকে বলে যে ফারিদার সেন্স আসছে সেই কথা শুনে সবাই একসাথে জড়ো হয় কেবিনের সামনে। অনেক বলার পর ডক্টর রাজি হয় তাও একজন যেতে পারবে ফারিদার সাথে দেখা করতে। ইভান সবার দিকে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে বলে
—-আম,, আমি যাই? সবাই ইভানকে যেতে বলে। ইভান কেবিনে যায় ধীরে পায়ে। দেখে ফারিদা চোখ বুঁজে আছে। পারিদার কারো উপস্থিত টের পেয়ে চোখ খুলে দেখে ইভান। সে তো ভেবেছিল এই সুন্দর মুখটা আর তার দেখা হবে না। ইভানকে দেখেই ফারিদা কান্না করে দেয়। অনেক কষ্টে নিজের একটা হাত উঁচু করে ইভানকে কাছে ডাকে। ইভান গিয়ে ফারিদাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয় আর বলে
—-আমার কিছু চাই না তোমাকে চাই,ভালোবাসি তোমাকে। ইচ্ছে ছিলো বিয়ের পর বউ এর সাথে প্রেম করবো, কিন্তু কে জানতো এমনটা হবে, আমাকে ক্ষমা করে দাও ফারিদা। আর তোমার অপরাধী নিজের শাস্তি পেয়েছে। ফারিদা অনেক কষ্টে বললো
—-আমিও ভালোবাসি খুব। ইভান একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয় ফারিদার কপালে।
সময়ের সাথে সাথে ফারিদাও অনেক সুস্থ হয়ে উঠেছে। ৬ মাস হয়েগিয়েছে। আর এই ৬ মাসে ফারিদার গোসল থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়ার সব খেয়াল রেখেছে ইভান। সকালে ব্রেকফাস্ট করিয়ে যেতে দুপুরে ভিডিও কলে দেখতো ফারিদা খাচ্ছে কিনা। আর ফারিদার গোসল করা হলে সেটা সে সকালে করিয়ে দিয়ে যেতো। কিছু দিন পর ইভানের সেবার কারণে ফারিদা এখন হাটতে পারে। ফারিন আর অংশের মধ্যে বেশ ভাব হয়েগেছে। ফারিন অংশকে অংশ বলে ডাকে। কিন্তু অংশ ফারিনের চেয়ে ৭ বছরের বড়। আজ ফারিদাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে ইভান। আকাশী কালারের একটা শাড়ি পরে চুলগুলো খুলে দিলো ফারিদা। চোখে কাজল আর ইভান পরেছে আকাশী কালারের পাঞ্জাবি আর সাদা কালের পাজামা। ইভান আর ফারিদা আসছে শহরের কোলাহল থেকে বেড়িয়ে গ্রামের দিকে একটা ঝিলের পাড়ে ইভান গাড়িটা পার্ক করে ফারিদার হাত ধরে হাটতে লাগলো। ফারিদা বলে
—-ভালোবাসেন আমায়? ইভান দুষ্টামি করে বলে
—-না আমি অন্য কাউকে ভালবাসি। ফারিদা সেটা শুনে বলে
—-হুতুম পেঁচা, বেটা খচ্চর নিরামিষ। যা আমার সাথে কথা বলবিনা তুই। আমিও বলবনা বলে পিছন দিকে হাটা দিলো আর ইভান দৌড়ে গিয়ে ফারিদার সামনে দাড়িয়ে পড়ে আর বলে
—-পাগলীটা আমার। আমি তোমাকেই ভালোবাসি তোমাকেই বাসবো #আমি_শুধুই_তোমার আর তুমি শুধুই আমার। ফারিদা মুচকি হাসি দিয়ে বলে
—-আমার কিউট হুতুম পেঁচা টা। লাভ ইউ। ইভান বলে
—-এক মিনিট। ঝিলের পাড়ে ছিলো অনেক বড় বড় ঘাস ইভান সেই ঘাস গুলো দিয়ে একটা রিং এর মতো বানায় আর ফারিদার সামনে হাটু গেড়ে বসে বলে
—-চাই না তোমাকে হারাতে,পারবোনা তোমাকে হারাতে। ভালোবেসে রাখবো কাছে। বলতে পারি খুব ভালোবাসি, আমাকে কি একটু ভালোবাসা যায় না নাকি? ফারিদা বলে
—-হ্যা, যায় আমিও বাসি। কিন্তু আমি বড্ড অভিমানি, পারবেন তো অভিমান ভাঙাতে? ইভান মুচকি হাসি দেয় আর বলে
—ঢের পারবো। ভালোবাসি। ফারিদাও বলে
—-ভালোবাসি। চলেন পালিয়ে বিয়ে করে বাসায় সবাইকে চমকে দেই কি বলেন। ইভান দাত কেলিয়ে বলে
—-মন্দ না আমার অনেক দিনের শক ছিলো।
——সমাপ্ত —–