গল্পঃ- #আমি_খুনী_হতে_চাইনি,পর্ব ২,৩
লেখাঃ-#মোঃ_শাহরিয়ার_ইফতেখায়রুল_হক_সরকার
পর্ব ২
আর আজ একটু আগে আমরা যাকে ধাক্কা দিয়ে লঞ্চ
থেকে নদীতে ফেলে দিলাম, এমনকি সেও আপনার
নিজের আপন রক্তের ভাই ছিলেন?তাও কিন্তু আপনি
খুব ভালো করেই জানতেন তবুও কেনো বলেন নি
আমাদের?এতোটা নিষ্ঠুর মানুষ কি করে হতে পারে?
অবশ্য আপনি যে বেশ জঘন্য প্রকৃতির মানুষ সেটা
আমি আগে থেকেই জানতাম তাই তো আজ দীর্ঘ দিন
আমি আপনার সাথে কাজ করছি। তবে একটা কথা,
হয়তো বা আমরা সন্ত্রাসী, খুনী এবং অসৎ লোক হতে
পারি কিন্তু তাই বলে জন্মদাত্রী মা এবং রক্তের ভাইকে
এভাবে খুন করতে আপনার হৃদয়ে কি একটুও কষ্টের
সুত্র-পাত বলতে তখন কিছুই হয়নি?
জবাব সেরু ভাই মুচকি হাসিতে উৎফুল্ল হয়ে বলল,
–খুনীদের চোখে কখনো দয়া-মায়া বোধ থাকতে পারে
না? একটুও না। যদি তাদের জন্য আমার একটু হলেও
কষ্ট বলে কিছু অবশিষ্ট রইতো তাহলে আমি তাদের
এরূপ মৃত্যু উপহার সরূপ কখনোই প্রধান করতাম না!
অতএব সেরু ভাই দোতলায় নিজের কেবিনে চলে
আসলো। সঙ্গে তার সহযোগীরাও। বড় একটা কেবিন
নিয়েছে তারা। বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে রয়েছে সেরু
ভাই। পাশেই একটা চেয়ারে তার দু’জন অতি বিশ্বস্ত
সহযোগী, দেলোয়ার এবং শরিফুল বসে রয়েছে।মূলত
তিন জনের একটা জুট তাদের। যারা প্রত্যেকেই বেশ
একটা বুদ্ধি মান ও দক্ষ।যাদের লিডার বা মাথা হচ্ছে
সেরু-ভাই। আজ দীর্ঘ কয়েক দিন যাবত চোখে নিদ্রা
নেই সেরু ভাইয়ের।মনে বেশ খানিক তৃপ্তি পোষণ করে
প্রায়ই চোখে তন্দ্রা এসে গিয়ে ছিলো কিন্তু কোণার ওই
ছোট্ট কেবিন থেকে কারো গোঙ্গানোর শব্দে তন্দ্রার
হাব-ভাব কেটে যায়। বিরক্ত হয়ে সেরু ভাই বলল,
–দেখ তো কে এমন ভাবে গোঙ্গানোর শব্দ করছে?
অতঃপর দেলোয়ার উঠে চলে গেলো।গোঙ্গানোর শব্দ
অনুসরণ করে।হঠাৎ থেমে গেলো সে।কোণায় অবস্থান
রত ঠিক ছোট্ট কেবিনটির নিকট।এই কেবিনের ভেতর
থেকেই শব্দ আসছে যা দেলোয়ারের বুঝতে তেমন
একটা সমেস্যার সূত্র-পাত হয়নি। এখনো ভেতর থেকে
দস্তা-দস্তির সহ বিভিন্ন আওয়াজ স্পষ্ট ভাবেই শুনতে
পাচ্ছে সে। তবে ভেতরে ঠিক কি হচ্ছে সেটা তার বেশ
একটা অজানাই বটে। ইচ্ছে ছিলো না কোনোই, তবুও
বাধ্য হয়েই,দরজা নক করলো দেলোয়ার।কারণ এরূপ
আওয়াজে তারা তো আর ঠিক মতো ঘুমাতে পারবে
না। এমনিতেও রাতে তেমন একটা ভালো ঘুম নাহলে
সকালে কাজ-কর্মে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে তারা সবাই।
সেই কখন থেকেই দেলোয়ার অনাবরত দরজা নক
করে যাচ্ছে কিন্তু কেউই কেবিনের দরজা খুললো না।
এতে ধৈর্যের শেষ সীমানা অতিক্রম করে দেলোয়ার
রেগে গিয়ে, চিল্লা-ফাল্লা শুরু করে দেয় এবং কেবিনের
দরজা পূর্বের তুলনায় আরও বেশ খানিক জোরেজোরে
নক করতে আরম্ভ শুরু করে।আচমকা কেবিনের দরজা
খুলে একজন লোক বেড়িয়ে এসে বলল,
–কি সমেস্যা তোর? এই ভাবে দরজা কেনো অনাবরত
নক করে বিরক্ত করছিস?
“লোকটির এরূপ দূর্ব্যবহারে দেলোয়ার আরও রেগে
উঠলো।এবং উচ্চ গলার কন্ঠ স্বর প্রয়োগ করে বলল,
–সমেস্যা তো হবেই যদি আপনাদের কেবিন থেকে
এরূপ শব্দ,আওয়াজ আমাদের ঘুম নষ্ট হওয়ার কারণ
হয়ে দাঁড়ায়? তাছাড়া কি আশ্চর্যের ব্যাপার- স্যাপার
আপনি আমার সাথে তুই-তু কারি ভাবে কোন সাহসে
কথা বলছেন?কি হচ্ছে আপনাদের কেবিনের ভেতর?
সর্বদা একটা মেয়েলী কন্ঠের গোঙ্গানোর বা চিৎকারের
শব্দ কেনো শোনা যাচ্ছে?
কথাটা বলার পরপরই দেলোয়ার একটু উঁকি-ঝুঁকি
দিয়ে কেবিনের ভেতরটা দেখার চেষ্টা করলো হঠাৎ সে
হতভম্ব হয়ে পড়লো। সে দেখলো কেবিনের ভেতরে,
একটা মেয়ের হাত,পা,মুখ চেপে ধরে বসে রয়েছে বেশ
কয়েক-জন লোক।সন্দেহ হলো তার!কিন্তু কিছু বলতে
গিয়েও কেনো যেন দেলোয়ার তেমন কিছুই বলতে
পারলো না।চুপচাপ সেখান থেকে চলে আসলো।কারণ
সরূপ তখন আচমকাই লোকটি দেলোয়ারের বুকের
মধ্যবর্তী স্থানে বন্দুক তাক”করে বলেছিলো,
–আমরা কন্ট্রাক্ট কিলার অথবা সন্ত্রাসী!মেয়েটিকে খুন
করার জন্য আমাদের টাকা দেওয়া হয়েছে। শুধু এক
বারই বলবো চুপচাপ চলে যা?
দেলোয়ারও একজন কিলার বা সন্ত্রাসী। চাইলেও সে
অনেক কিছুই করতে পারতো কিন্তু মূলত সে-ও চায়নি
সন্ত্রাসী হয়ে অন্য সব সন্ত্রাসীদের কাজে কোনো ক্রমেই
বাধা হয়ে দাঁড়াতে। অতএব দেলোয়ার কেবিনে প্রবেশ
করলে সেরু ভাই বলল,
–কি হয়েছে? ওরূপ শব্দের কোনো কারণ জানতে
পারলি?তাছাড়া এখন তেমন একটা আওয়াজ শোনাও
যাচ্ছে না।
“দেলোয়ার বলল,
–আর শুনতেও পারবেন না? হয়তো এতক্ষণে মেয়েটি
কে তারা খুনও করে ফেলেছে!
কিছুটা আশ্চর্য হয়ে সেরু ভাই বলল,
–পরিষ্কার করে বল?
–কোণার ছোট্ট কেবিনে একজন মহিলা যাত্রী ছিলেন।
যিনি এখন কয়েক জন কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের তত্ত্বাবধানে
রয়েছেন। মূলত মহিলাটিকে খুন করার জন্যই তাদের
কেউ একজন কন্ট্রাক্ট দিয়েছে।
-ওরা কয় জন ছিলো?
–পাঁচ কিংবা ছয় জন হবে অথবা তারও বেশি। আমি
সঠিক নই।আনুমানিক বললাম। তবে ওদের সাথে আমি
কোনো ঝামেলা বাঁধায় নি।
-তা-ভালো করেছিস!আমরা ঝামেলা চাইনা। তবে সেই
কখন থেকেই আমার পেটে বেশ যন্ত্রণা হচ্ছে। জানি না
সকলে কি এমন খেয়ে ছিলাম। ইমারজেন্সি মনে হচ্ছে
এখন আমাকে ওয়াশ রুমে যেতেই হবে।
কথাটা বলার পরপরই, সেরু ভাই উঠে দাঁড়ালো এবং
কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলো। যার তেতাল্লিশ মিনিট
পর আবার সে নিজের কেবিনে ফিরে এসে ছিলো। এবং
তৎক্ষনাৎ দেলোয়ার এবং শরিফুল নিদ্রায় অটঁল হয়ে
পরে। অতএব শরীরে কাঁথাটা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বৃথাই
ঘুমানোর চেষ্টা করলো সেরু ভাই কিন্তু আজও কেনো
জানি তার নিদ্রা আসছে না,এই দু-চোখের গহীন ঘরে।
পরের দিন সকালে,ভোর ছয় ঘটিকার সময় লঞ্চ এসে
ভিড়লো বরিশাল সদর-ঘাটে। ঘন ঘন কুয়াশার কারণে
এক ঘন্টা দেরি হয়েছে লঞ্চটির সদর-ঘাটে পৌঁছাতে।
অতঃপর সেরু ভাই, যখন লঞ্চ থেকে ঘাটে নেমে ছিলো
তখন পেছন থেকে একটা মেয়ে সেরু ভাইকে এক
প্রকার চিৎকার করেই ধন্যবাদ জানালো। অবশ্য সেই
মেয়েটি ছিলো শান্তা।যে এখনো অক্ষত,নিরাপদ রয়েছে
শুধুই সেরু ভাইয়ের জন্য।তখন যদি সঠিক সময়ে সেরু
ভাই এসে শান্তাকে ওরূপ করুণ পরিস্থিতি থেকে না
উদ্ধার করতো, তাহলে হয়তো সে নিজের ইজ্জত-প্রান
দু’টোই চিরতরে হারাতো। শান্তাকে দেখেও না দেখার
ভান করছে, শান্তার কন্ঠ স্বরের শব্দ শুনেও না শোনার
অভিনয় করে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে সেরু ভাই
এসব কিছুই যেন দেলোয়ারের চোখ থেকে এড়ালো না!
এখনও তার স্পষ্টই মনে আছে সেদিন রাতে কেবিনে
সন্ত্রাসীদের তত্বাবধানে এই মেয়েটিকেই দেখে ছিলো।
তবে সে এখনও সহিসালামতে কিভাবে থাকতে পারে?
তাছাড়া সেরু ভাইকে,সে কেনোই বা ধন্যবাদ জানালো!
বেশ একটা ভাবিয়েই তুলছে দেলোয়ার কে। কিছুটা
সন্দেহও হচ্ছে বটে, সেরু ভাইয়ের প্রতি। যখন তারা
গাড়িতে উঠলো, তখন তাদের গাড়ীর খানিকটা পাশ
কেটেই,ঢাকা থেকে এই মাত্র আজ্ঞত ফাইভ-লাইন লঞ্চে
বেশ কয়েক জনের নৃশংস লাশ পাওয়া গিয়েছে। মূলত
এসব বলা বলি করেই লঞ্চটির দিকেই কিছু পুলিশ
এগিয়ে যাচ্ছিলো। যা কেউ না শুনলেও দেলোয়ার কিন্তু
ঠিকি শুনতে পেয়ে ছিলো। যার-পর দেলোয়ারের সন্দেহ
আরও তীব্র আকার ধারণ করলো। নিমিষেই ঝাপসা
থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠলো তার নিকট। এ খুন গুলো আর
কেউ নয় স্বয়ং সেরু ভাই করেছে। মাঝে-মধ্যে সেরু ভাই
এর আচরণ গুলোতে দেলোয়ার কনফিউজড হতে এক
প্রকার বাধ্যই হয় বটে।
___________________
এদিকে ভিড়ের মাঝে এখনও সেরু ভাই কে অনাবরত
খুঁজছে শান্তা। কিন্তু আর পায়নি তাকে। তবুও মনে মনে
সেরু ভাইয়ের জন্য সর্বদা মঙ্গল কামনা করলো শান্তা।
অতএব শান্তাও গাড়িতে উঠলো, কুয়াকাটা নিজের
পৈতৃক নিবাসের উদ্দেশ্যে। মনের অবস্থা তেমন একটা
ভালো না তার! অতঃপর দীর্ঘ ঘন্টার পর ঘন্টা জার্নির
পর নিজ গন্তব্যে এসে পৌছিলো শান্তা। পরিশেষে শান্তা
যখন তার মা-বাবার সম্মুখে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো তখন
সে ভেবে ছিলো, তার মা-বাবা হয়তো তাকে ফিরিয়ে
দিবেন। কিন্তু সে হয়তো ভুল কিছুই মনে পোষণ করে
ছিলো।শান্তা কে দেখা মাত্রই তখন তার মা-বাবা উভয়ই
বুকে জড়িয়ে নিয়ে কান্নায়, চোখের নোনা জলে ভেঙে
পরে ছিলেন তারা। কিন্তু যার মাত্র দশটা দিন হতে না
হতেই শান্তার বাবাকে কেউ একজন খুন করে।খানিক্ষন
পূর্বেই শান্তার বাবার লাশ ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে
যাওয়া হয়।রাত ঠিক সাড়ে এগারো ঘটিকা হবে।শান্তার
বাড়ি জুড়ে এখন শুধুই কান্না আর আর্তনাদ। পুলিশ
বাহিরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। কয়েক জন আশে-পাশে ক্লু
খুঁজছেন। তবে থানার ওসি এখনোও লাশের পাশে
পাওয়া চিঠি হাতে নিয়ে বেশ একটা গম্ভীর হাব-ভাবেই
দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তার কেনো যেন মনে হচ্ছে এই হ্যান্ড
রাইটিং গুলো খুব পরিচিত। হঠাৎ থানার ওসি সাহেবের
ফোনটা টং,টং করে বেজে উঠলো। ফোন রিসিভ করার
পর ওপাশ থেকে কেউ একজন বলল,
–স্যার নদীর ধারে আপনার একমাত্র মেয়ের নৃশংস
লাশ পাওয়া গেছে।আপনি একটু জলদিই এদিক টায়
আসুন?
যা শোনা মাত্রই থানার ওসি সাহেব থমকে যান। কয়েক
জন সহযোগী পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুততার সাথেই
সেখানে উপস্থিত হন। এবং নিজের একমাত্র আদরের
মেয়ের এরূপ নৃশংস লাশ দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলেন
থানার ওসি সাহেব। মেয়ের লাশের হাতেই মুষ্ঠি বদ্ধ
অবস্থায় একটা চিঠি ছিলো। যেটা থানার ওসির চোখ
থেকে একদমই এড়িয়ে যায়নি। বেশ একটা সাবধানতা
অবলম্বন করেই চিঠির প্রতিটি বাজ খুললেন ওসি
সাহেব। প্রথমেই তাজা রক্ত দিয়ে বড় করে লেখা ছিলো,
“সেরু ভাই।
যা হয়তো তার মেয়ের দেহের রক্ত দিয়েই লেখা।
_________________চলবে___________________
গল্পঃ- #আমি_খুনী_হতে_চাইনি (পর্ব ৩)
লেখাঃ-#মোঃ_শাহরিয়ার_ইফতেখায়রুল_হক_সরকার
বেশ একটা সাবধানতা অবলম্বন করেই চিঠির প্রতিটি
বাজ খুললেন ওসি সাহেব। প্রথমেই তাজা রক্ত দিয়ে
বড় করে লেখা ছিলো,”সেরু ভাই! যা হয়তো তার মেয়ের দেহের রক্ত দিয়েই লেখা।যার খানিকটা নিচ
দিকে খুব সাবলীল ভাষাতেই মূলত কয়েকটা লাইন লিখা ছিলোঃ-
–আপনার মেয়ে কে আমি খুন করিনি। সে নিজেই
নদীর ধারে এসে সুইসাইড করেছে। কেনো করেছে
সেটা আমি জানি না।
–তবে আমি আপনার মেয়েকে নিজের স্বার্থের জন্য
ব্যবহার করেছি। কেনো করেছি সেটা আমি বলতে
পারবো না।
–আমি নিশ্চিত আপনি আমায় কিন্তু ঠিক চিনেছেন?
হয়তো হাতের লেখার মাধ্যমে কিন্তু দূর্ভাগ্য আপনার?
আমায় আপনি কখনোই ধরতে পারবেন না। কখনোই
না? বাসার বাথরুমে আপনার দ্বিতীয় স্ত্রীর লাশ পরে
আছে। একদমই ভাববেন না আমি খুন করেছি? স্বয়ং
আপনার মেয়েই ওনাকে খুন করেছেন।
আরও কয়েকটা লাইন লিখা ছিলো, যা মূলত তাজা
রক্তের জন্য মুছে গিয়েছে। তাই সেগুলো আর পড়তে
পারেন নি ওসি সাহেব। ওসি সাহেব এই মুহূর্তে নির্বাক
হয়েই দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তেমন কিছুই যেন ধরছে না
ওনার মাথায়।কিছুই বুঝতে পারছেন না তিনি।তবে সে
কাউকে কিছু না বলেই হঠাৎই ছুটতে লাগলেন নিজের
বাড়ির উদ্দেশ্যে। অতএব বাড়িতে এসে নিজের স্ত্রীকে
তন্ন তন্ন করে খোঁজার পরেও যখন পেলেন না। তখন
কেন যেন ওসি সাহেবের ভিষণ ভয় হতে শুরু করলো।
প্রতিনিয়ত তার শরীরের লোম গুলো শিউরে উঠছে
এটা ভেবে, পরিশেষে কাগজে লেখা কথা গুলোই না
সত্যিতে রুপান্তরিত হয়ে যায়। ওসি সাহেবকে তার মন
বারবার বলেও ছিলো বটে, বাথরুমের দরজা-খানা না
খুলতে। তবুও মনে প্রচন্ড সাহস নিয়েই, কাঁপতে থাকা
হাত দিয়ে তিনি দরজা-খানা খুললেন। যার ফল সরূপ
তিনি কয়েক মিনিটের মধ্যেই এ-ধাক্কা নিজের উপর
বহন করে নিতে না পেরে সেন্স-লেস হয়ে যান।অতএব
দশ ঘন্টা ত্রিশ মিনিট পর তিনি আবার যখন নিজের
সেন্স ফিরে পেতে সক্ষম হয় তখন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা
মিশন দাশ নামের একজন হাবিলদার বলল,
–উপরওয়ালার কাছে হাজার কোটি শুকরিয়া।ভাগ্যিস
আপনার জ্ঞান ফিরলো বটে। গতকাল রাতে আচমকা
মেয়ের লাশ রেখে আপনাকে ওভাবে ছুটতে দেখে
অবশ্য আমি আপনার পিছু নিয়ে ছিলাম।কিন্তু আমার
আসতে একটু দেরি হয়। তৎক্ষনাৎ আপনাকে আমি
জ্ঞান হীন এবং বাথরুমে আপনার স্ত্রীর লাশ দেখতে
পেয়েছিলাম। এসব কি করে হলো স্যার? নদীর ধারে
মেয়ের লাশ আর বাসার,বাথরুমে আপনার স্ত্রীর লাশ।
এসব কি হচ্ছে স্যার?
চোখের কোণের অশ্রুর বাধ ভেঙে ওসি সাহেব বলল,
–আমিও জানি না মিশন এসব কি হচ্ছে?কেনো হচ্ছে?
কে করছে?
–একটু শান্ত হন স্যার।ধর্য ধারণ করা ছাড়া এখন আর
কিছুই অবশিষ্ট নেই আপনার নিকট।
–আমার স্ত্রী এবং মেয়ের লাশ গুলো কোথায় এখন?
–তাদের লাশ গুলো এখন হাসপাতালের মর্গে অবস্থান
করছে। ময়না তদন্ত করা হয়েছিলো। এখন আপনি
চাইলে তাদের দাফন-কাফনের কাজ গুলো সম্পন্ন
করতে পারেন?
–রিপোর্ট বেরিয়েছে?
–না স্যার! দুই দিন অথবা তারও বেশি সময় লাগতে
পারে।আশা করছি খুনীদের আমরা খুবসহজেই ধরতে
পারবো।
অতএব আর তেমন কিছুই বললেন না তিনি।খানিকটা
সময় পর হঠাৎ তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং হাবিলদার
মিশন দাশ কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
–হাসপাতালে চল। এম্বুলেন্সের সাহায্যে লাশ গুলো
আমার গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
–জ্বি চলেন।
অতঃপর ওসি সাহেব নিজেকে এক-প্রকার শক্তপোক্ত
করে,হাবিলদার মিশন দাশকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে
গিয়ে উপস্থিত হন। পরিশেষে এম্বুলেন্স ঠিক করার পর
লাশ গুলো গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এসে দ্রুততার সাথেই
দাফন-কাফনের কাজ গুলোতে কোনো ক্রুটি না রেখে
সম্পন্ন করা হয়। যার তিন দিন পর ময়না তদন্তের
রিপোর্ট গুলো ওসি সাহেবের হাতে এসে পৌছায়। যেই
রিপোর্ট গুলো দেখা মাত্রই তিনি আঁতকে উঠলেন এবং
নিজেই বিরবির করে বলেই ফেললেন।
–তার মানে চিঠিতে যা লেখা ছিলো তা সবি সত্য?
এখনো স্তব্ধ হয়ে রিপোর্ট গুলো হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে
রয়েছেন, থানার ওসি সাহেব। যেই রিপোর্ট গুলোতে
স্পষ্টই উল্লেখিত রয়েছে,দ্বিতীয় স্ত্রীকে স্বয়ং তার প্রথম
স্ত্রীর মেয়ে রিহানাই মেরেছেন। যার বেশ কিছুক্ষণ পরে
নদীর ধারে গিয়ে সে মূলত আত্মহত্যা করেছে। থানার
ওসি সাহেব ক্ষণে ক্ষণে হতাশ হয়ে পড়েছেন। কিছুই
যেন বুঝতে পারছেন না ওসি সাহেব। এটা ভেবে বেশ
একটা কষ্ট হচ্ছে ওনার। মূলত রিহানার সাথে তার সৎ
মায়ের সম্পর্ক ছিলো অত্যন্ত গভীর এবং আপন মা
মেয়ের মতো তাহলে কেনোই বা রিহানা তার সৎ মাকে
এভাবে খুন করার পর নিজে আত্মহত্যা করলো? সব
কিছুই যেন থানার ওসি সাহেবের কাছে কেবল এক
রহস্য মাত্র। তবে ওসি সাহেবের মতে এ সব রহস্য
তখনই উন্মোচন হওয়া সম্ভব যখন নিজের মেয়ের
বয়-ফ্রেন্ডকে তিনি ধরতে পারবেন। রাত ঠিক
দু’টোর কাছা-কাছি। মেয়ের রুম থেকে পাওয়া কালো
রঙের খামে থাকা চিঠি-খানা হাতে নিয়ে চেয়ার টেনে
টেবিলে বসে রয়েছেন।বেশ একটা মনযোগ সহ কারেই
হাতের লেখা গুলোর প্রতি বারবার তাকাচ্ছেন তিনি।
এরকম কালো রঙের খাম পূর্বে তাদের বাড়িতে রোজ
আসতো। যেটা অবশ্য ওসি সাহেবের মেয়ের বয়ফ্রেন্স
পাঠাতো। মেয়ে রিলেশনে জড়িত সেটা তিনি তখনই
সর্ব-প্রথম জানতে পেরেছিলেন, যেদিন ঘর-গোছানোর
সময়, মেয়ের রুম থেকে পাওয়া কয়েকটা চিঠি ওসি
সাহেবকে দেখিয়ে ছিলেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী। ছেলেটির
চিঠি লিখার ধরণ ছিলো খুবই ইউনিক। এবং হাতের
লেখা মনমুগ্ধ কর। তবে এতে বেশ নারজই ছিলেন
তিনি।তাই বোধ হয় খোঁজ খবর নিয়ে “মিট করে প্রথমে
বহুবার ছেলেটিকে বিভিন্ন ভাবে বুঝানোর পর সেদিন
তিনি চলে এসেছিলেন।কিন্তু তবুও ছেলেটি সেই পূর্বের
মতোই তার মেয়ের সাথে আড়ালে সম্পর্ক বজায়
রেখেছিলো। যা তার চোখ এড়িয়ে যায়নি। একমাত্র
মেয়ে, দ্বিতীয় স্ত্রীরও কোন সন্তান-সন্ততি নেই তাই মন
চাইলেও তিনি কোনো ক্রমেই তার মেয়েকে কিছুই
বলতে পারেন না। তাই বাধ্য হয়ে ওসি সাহেব আবার
ছেলেটির সাথে মিট করে ছিলেন। এবং থ্রেড পর্যন্ত
দিয়ে বলেছিলেন, “আমার মেয়ের আশে-পাশে যাতে
আর না দেখা যায় তোকে?শেষ বারের জন্যই বলছি?
এখনও স্পষ্ট ভাবেই মনে আছে ওসি সাহেবের। তিনি
এ কথাটা সেদিন তীক্ষ্ণ গলাতেই মূলত বলে ছিলেন।
ওসি সাহেব এটাও বেশ নিশ্চিত শান্তার বাবাকে তার
মেয়ের বয়ফ্রেন্ডই হত্যা করেছে।কিন্তু কেনো সেটা তার
বেশ অজানাই বটে। পরের দিন সকালে কুয়াকাটা
থেকে বরগুনা এসেছিলেন ওসি সাহেব।কারণ সরূপ
তিনি কোনো এক ক্রমে জানতে পেরেছিলেন,ছেলেটির
বাড়ি বরগুনা জেলায়। কিন্তু পরিশেষে সেই ব্যর্থ হয়েই
ওসি সাহেব কে আবার কুয়াকাটায় ফিরে আসতে হয়।
আজ দু-মাস অতিবাহিত হলো কিন্তু কোনো কিছুরই
সমাধান এখনো খুঁজে পেতে সক্ষম হয়নি তিনি। নিরাশ
হয়ে থানায় বসে রয়েছেন। এই দু-মাস যাবত সমাধান
খুঁজতে, খুঁজতে, রহস্য ভেদ করার তীব্র প্রচেষ্ঠায় মূলত
তার এখন ধম বন্ধ হওয়ার উপক্রম।তিনি একজন দক্ষ
পুলিশ হওয়া সত্যেও এখনও কোনো রহস্যেরই ভেদ
করতে সক্ষম হয়নি। খানিক্ষন পূর্বে শান্তা তার মাকে নিয়ে থানায় এসে ছিলো নিজ বাবার মৃত্যুর কেসটির
ব্যাপারে কথা বলতে কিন্তু আজও সেই আগের মতো
হতাশ হয়ে বাড়িতে ফিরতে হয় তাদের উভয়েরই। রাত
দশটায় জানালার পাশে বসে বসে কাঁদছিলো শান্তা।
সেই মুহূর্তে আচমকা কেউ তার রুমের দরজা নক
করেন। চোখের জল গুলো মুছে দরজা খুললো শান্তা।
ভেতরে এসে মা বলল,
– শুন মা কাল, সকাল সকাল আমার এক বান্ধবীর
বাসার উদ্দেশ্যে এক প্রকার জুরুরী ভিত্তিতেই চট্টগ্রাম
যেতে হবে। পনেরো দিনের মতো থাকবো। এক্ষুনি ব্যাগ
গোছানো আরম্ভ করে দে?
কথাটা বলার পরপরই শান্তাকে তেমন কোনো কিছুই
বলার সুযোগ করে না দিয়ে হন-হনিয়ে চলে গেলেন।
পরের দিন সকাল সকাল তারা চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে
রওনা দেন।অতএব দীর্ঘক্ষণ জার্নির পর শাপলা বেগম,
সঙ্গে তার মেয়ে, শান্তাকে নিয়ে বহু দিনের পুরনো এক
বান্ধবীর বাসায় উঠেন। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার
উপক্রমে। এখনও শান্তা ছাঁদের এক কিনারায় একাকী
দাঁড়িয়ে রয়েছে। হঠাৎ গলির মোড়ে স্বয়ং সেরু ভাইকে
দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, থমকে দাঁড়ালো শান্তা।এটা তার কল্পণারও শত দূরে ছিলো। নিজের চোখ-খানিতে বেশ
সন্দেহ হচ্ছে শান্তার।ভুল কিছু দেখছে নয় তো?অতএব
শত দুঃখের ভিড়ে খুশিতে মুখের কোণে একটু-খানি
হাসি ফুটে উঠলো তার।অতঃপর দ্রুততার সাথেই নিচে
নামলো শান্তা, যাতে আবার চোখের দৃষ্টির অগোচরে না না চলে যায় উনি। অতএব শান্তা যখন সেরু ভাইয়ের
সম্মুখে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো তখন সেরু ভাই খানিকটা
মুচকি হাসলো এবং কালো রঙের একটা খাম শান্তার
হাতে তুলে নিয়ে দ্রুততার সাথেই প্রস্থান করলো। হঠাৎ
সেরু ভাইয়ের এরূপ আচরণে কেনো যেন বেশ একটা আশ্চর্য না হয়ে পারলো না শান্তা। চিঠি হাতে নিয়ে সেই
পূর্বের ন্যায়ে এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে শান্তা। সে ভাবছে,
‘তার এরূপ অদ্ভুত আচরণের কারণ কি? সে কেনো
এভাবে জোর করে হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে চলে
গেলো? কি আছে এই কালো রঙের খামটির ভিতরে?
মন শত বার শান্তাকে বারন করেছিলো কিন্তু তারপরও
কালো রঙের খামটির ভেতরে থাকা চিঠি-খানা বের
করলো এবং সে খুব মনযোগ সহ কারেই পড়তে আরম্ভ করলো। চিঠিতে লেখা ছিলোঃ-
-আমি একজন কন্ট্রাক্ট কিলার। আপনার মা আমাকে
মোটা অংকের টাকা দিয়েছেন।শুধু মাত্র আপনাকে খুন
করার জন্য। কিন্তু আমি আপনাকে মারতে পারবো না।
কেনো সেটাও বলতে পারবো না আমি। তাই বলে অন্য
কোনো কিলারও আপনাকে মারবে না! তা কিন্তু ভুল?
আপনার মা শাপলা বেগম যেভাবে, যেমনই হোক খুন আপনাকে করিয়েই ছাড়বেন।হয়তো অন্য কিলার ঠিক
করবেন।বাঁচতে চাইলে এখনি পালিয়ে যান।অনেক দূর,
অনেক দূর!
_________________চলবে___________________