আমি_খুনী_হতে_চাইনি (পর্ব ৪)

0
920

গল্পঃ- #আমি_খুনী_হতে_চাইনি (পর্ব ৪)
লেখাঃ-#মোঃ_শাহরিয়ার_ইফতেখায়রুল_হক_সরকার

আপনার মা শাপলা বেগম যেভাবে,যেমনই হোক খুন
আপনাকে করিয়েই ছাড়বেন। হয়তো অন্য কিলার
ঠিক করবেন। বাঁচতে চাইলে এখনি পালিয়ে যান।
অনেক দূর, অনেক দূর!

অতএব চিঠির ওপর পৃষ্ঠে ছোট্ট করে একটা নাম
লিখা ছিলো, সেটা হলো সেরু ভাই। শান্তা ভাবলো,
হয়তো তার নাম সেরু ভাই। তবে শান্তা এখন বেশ
আতংকের মধ্যে বসবাস করছে। শান্তা যেন ভাবতেও
পারছে না, যাকে ভালো মানুষ হিসেবে নিজের সম্মুখে
সম্মোধন করে, যার দীর্ঘ আয়ু কামনা করেছিলো,সে
আসলে একজন কন্ট্রাক্ট কিলার। টাকার বিনিময়ে মানুষ খুন করেন। কিন্তু এটা ভাবলেও কেনো যেন
অজস্র ব্যথার যন্ত্রণায় শান্তার বুক ফেটে যাচ্ছে।আপন
মা কি করে পেটের মেয়ে কে খুন করার পরিকল্পনা
মনে পোষণ করতে পারেন? এটা কি আদৌও সম্ভব?
কেন যেন চিঠির লেখা গুলোর প্রতি একদমই বিশ্বাস
করতে ইচ্ছে করলো না শান্তার। সেখানেই চিঠিটা
ফেলে দিয়ে,যখন সে বাসায় প্রবেশ করলো তখন রুমে
নিজের মায়ের এবং তার বান্ধবীর এরূপ কথোপকথন
শান্তাকে সম্পূর্ণ স্তব্ধ করে দিতে বাধ্য করলো। দরজার
আড়ালে, দাঁড়িয়ে রয়েছে শান্তা। ভেতরে তার মা ওনার
বান্ধবীর উদ্দেশ্যে বললেন,

–যাকে কন্ট্রাক্ট করেছিলাম,সে ফোন দিয়ে কি বলল?

–টাকা ঘুড়িয়ে দিয়েছে।

–কেনো?

–জানিনা?

–কারণ জানতে চাসনি?

–জিজ্ঞেস করেছিলাম,উত্তরে শুধু একটা কথাই মাত্র
বলেছিলো, এ খুন সে একদমই করতে পারবে না?

–কি বলিস?তাহলে হাতে তো একদমই সময় অবশিষ্ট
নেই আমাদের নিকট?

–তা অবশ্য ঠিক। দিন ফুরিয়ে রাত তো হতেই চললো।
তবে এখন আর কিছুই করা যাবে না। আজকে রাতেই
অন্য কোনো কিলার কে কন্ট্রাক্ট দিয়ে রাখতে হবে।
আগামীকাল যা হওয়ার তা তো অবশ্য হবেই বটে।
শান্তার পছন্দ, গরুর মাংস রেঁধেছি। শেষ বারের জন্যে
খাইয়ে দিস। আর খবর দার! শান্তা যেন এসব মোটেও
জানতে না পারে। কিঞ্চিৎ পরিমাণও যাতে একদমই
বুঝতে না পারে।

-হুম এতে আমি বেশ সচেতনই রয়েছি।এখন শুধু মাত্র
অপেক্ষার প্রহর গুনছি, ক্ষণে ক্ষণে নাটক সাজাচ্ছি।
তাছাড়া আর কিছুই নয়। তবে ওকে তো মরতেই হবে।
নতুবা আপদটা বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আড়ালে থেকে এসব শোনার পর স্তব্ধ হয়ে যায় শান্তা।
চোখ দু’টো ভিজে একাকার।মুখ চেপেই কাঁদছে শান্তা।
কাদঁতে কাদঁতে চোখ দু’টো লাল বর্ণে রূপ ধারণ করে।
না জানি গলার কন্ঠ স্বর কোন বনে গিয়ে হারালো
তার। তাহলে চিঠির লেখা গুলোই শেষ পর্যন্ত সত্য
প্রমানিত হলো। ধপাস করে শান্তা ফ্লোরে বসে পড়লো।ধীরে ধীরে শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। দেহ অচল হয়ে পড়ছে।

নিজের মায়ের কথা গুলো বারবার কানে এসে ভাসছে
শান্তার। যা শান্তাকে তিলে তিলে ভেতর থেকে শেষ
করে দিচ্ছে। শান্তার এই মুহূর্তে, ইচ্ছে তো করছে মরেই
যেতে ,অবশ্য সে তো ওই দিনই অর্ধমৃততে পরিণত হয়েছিলো, যেদিন ননদের ইচ্ছে কৃত ধাক্কায় নিজের
পেটের সন্তানের মৃত্যু হয়। উঠে দাঁড়ানোর শক্তি টুকু
খুঁজে পাচ্ছে না সে। কিন্তু শান্তাকে তো উঠে দাঁড়াতেই
হবে। এভাবে ভেঙে পড়লে তো চলবে না।একদমই না।
তাকে এখান থেকে পালাতেই হবে, অনেক দূরে।নতুবা
নিজের মা বাঁচতে দিবেন না। যে করেই হোক তাকে
উঠে দাঁড়াতে হবে, এখান থেকে পালিয়ে যেতে হবে,
এমনিতেও বেঁচে থাকার তেমন কোনো, আগ্রহ অথবা আকাঙ্খা শান্তার মনে মোটেও নেই বললে চলে। তবুও
যেমনই হোক শান্তাকে পালিয়ে, বাঁচতে হবে শুধু মাত্র
এটা জানার গভীর আগ্রহে, কেনো শান্তাকে তার নিজ
আপন গর্ভধারণী মা খুন করাতে চান?

অতঃপর শান্তা উঠে দাঁড়ালো। আড়ালে গিয়ে আরও একবার নিজের মায়ের দিকে তাকালো সে। এখনও
ভেতরে শাপলা বেগম তার বান্ধবীর সাথে নিজ মেয়ে কে খুন করার ফন্দি আঁটতে ব্যস্ত। চোখ-জোড়া বন্ধ
করে মনে মনে শান্তা বলেই ফেললো, উনি কি সত্যিই আমার জন্মদাত্রী মা জননী তো ?

অতএব দ্রুতই প্রস্থান করলো শান্তা। দিন ঘনিয়ে সেই
কখনই রাত নেমে এসেছে। কোথায় যাবে, কি করবে,
কার কাছে যাবে কিছুই যেন ভেবে না পায় সে? বেশ
কিছুক্ষণ যাবত ধরে শান্তা অনুভব করছে কেউ তাকে
অনুসরণ করছে। কিন্তু পিছনে ফিরে তাকালে শান্তা
কাউকেই দেখতে পায় না। নির্জন এক রাস্তা। খানিকটা
অন্ধকারও বটে। এই মুহূর্তে শান্তা কোথায় যাচ্ছে সেটা
সে নিজেও জানে না। আনমনে হাঁটছে। হঠাৎ শান্তাকে
থেমে যেতে হয়। পেছন থেকে একজন বখাটে লোক
শান্তার গায়ের ওন্না টেনে, বলল,

–এই নির্জন অন্ধকার রাস্তায় একটা ফুটফুটে চাঁদেরই
অভাব ছিলো। যেটা আজ পূর্ণ হলো হে আমার ফুলের
মতো পবিত্র মাল? তোমার দেখায় আজ আমি ধন্য?

কথাগুলো বলার পরপরই লোকটি শান্তার গায়ে হাত
দেওয়ার চেষ্টা করলে, শান্তা কোষে একটা থাপ্পর দিয়ে
সেখান থেকে দ্রুতই প্রস্থান করার জন্য সামনে পা
বাড়ালেও বেশি দূর যেতে পারেনি। সামনে আরও চার
জন ছিলো মূলত শক্ত দেয়াল হিসেবে দাঁড়িয়ে। যে দেয়াল গুলো হাসছিলো অট্ট দিয়ে। আচমকাই কেউ
একজন রুমাল দিয়ে শান্তার মুখ চেপে ধরলো। শান্তা
সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করলো ছাড়ানোর জন্য কিন্তু সে
পারলো না।সেন্সলেস হয়ে পড়ে।যখন সে আবার নিজ
চোখের পাতা মেলতে সক্ষম হয় তখন শান্তা উপলব্ধি
করলো এই মুহূর্তে কারো বাড়িতে সে অবস্থান করছে।
হঠাৎই একজন মহিলা এসে দাঁড়ালো শান্তার সম্মুখে।
কিছুটা আঁতকে উঠে শান্তা বলল,

–আমি কোথায়?এখানে কে নিয়ে এসেছে?

শান্তার কথার উত্তরে মহিলাটি মধুর কন্ঠেই বললেন,

–তুমি আমাদের বাড়িতে রয়েছো। ভয় পেয়ো না?তুমি
সম্পূর্ণই নিরাপদ। আমার ছেলে এহসানুল তোমাকে
ওই নির্জন অন্ধকার রাস্তায় পাঁচ জন লাশের কিছুটা
পাশে সেন্সলেস হয়ে পড়ে থাকতে দেখে বাড়িতে নিয়ে
এসেছে।আচ্ছা এবার আমায় নির্ভয়ে বলো, কে তুমি?
বাড়ি কোথায়? ওই পাঁচ জন লাশের সাথে কি তোমার
কোনো সম্পর্ক রয়েছে? তুমি কেনো ওখানে ওভাবে
পড়ে ছিলে?

হঠাৎ রুমের ভেতরে একজন লোক এক প্রকার প্রবেশ
করতে করতেই বলল,

-মা?একটু থামো তো?এভাবে কেউ প্রশ্ন করে?

–কেনো করবো না?গোয়েন্দা পুলিশের মা বলে কথা!

-তা তো অবশ্যই কিন্তু মেয়েটির তো এখন বেশ রেস্ট
এর প্রয়োজন। এখন ওনাকে প্লিজ ডিস্টার্ব করো না?

–আচ্ছা ঠিক আছে,যাচ্ছি আমি।

অতএব মহিলাটি চলে গেলেন। যার কিছুক্ষণ পর
নিরবতার শক্ত দেয়াল ভেঙে দিয়ে এহসানুল বলল,

–আমি এহসানুল সরকার।গোয়েন্দা পুলিশ অফিসার।
সবেই জয়েন হয়েছি। এতো দিন পড়াশোনার তাগিদে
দেশের বাহিরে ছিলাম,কিছু দিন হয়েছে দেশে ফিরেছি
এবং আপনি?

ভাঙা কন্ঠ স্বরে শান্তা বলল,

-আমি শান্তা।

– শুধুই শান্তা?পদবি নেই?

–ছিলো একসময় কিন্তু এখন নেই?

–বুঝলাম না ঠিক?প্লিজ একটু ক্লিয়ার করে বলবেন?

কিছুক্ষণ চুপ থেকে অতএব শান্তা অশ্রুতে দু-নয়ন
ভিজিয়ে বলেই ফেললো,

–প্লিজ আমায় বাঁচান?

অবাক হয়ে এহসানুল বলল,

–বাঁচাবো মানে?

অতঃপর শান্তা বেশ কিছুক্ষণই চুপ ছিলো কিন্তু আর
থাকতে পারলো না এভাবে।তার কেনো যেন মনে হলো
এই লোকটাই তাকে কিছুটা হলেও হয়তো সাহায্য বলে
কিছু করতে পারবেন। তাই তো পরিশেষে এহসানুলের কাছে, শান্তা নিজের জীবনের সমস্ত ঘটনা-বম্ভলি খুলে
বলল। যা শোনার পর এখনও এহসানুল সরকার বেশ
একটা চুপ করেই রয়েছেন। অনেকক্ষণ যাবতই তিনি
ভাবলেন এবং পরিশেষে খানিকটা মুচকি হেসেই তিনি
বললেন,

–চিন্তা করবেন না? যতদিন এসব কিছুরই কোনো
সমাধান বের হচ্ছে না ততদিন আপনি আমাদের
বাড়িতে সম্পূর্ণ নিরাপদেই থাকবেন।এখন আপনি
একটু বিশ্রাম নিন। পড়ে কথা বলবো।

অতএব এহসানুল সরকার চলে গেলেন।আজ প্রায়ই
পনেরো দিনের মতো অতিক্রম হলো, শান্তা এখনও
তাদের বাড়িতেই রয়েছে।ঘড়ির কাটায় সকাল দশ’টা
ত্রিশ মিনিট। সোফায় বসে ছিলো শান্তা। তখন এক কাপ চা শান্তার দিকে এগিয়ে দিয়ে এহসানুলের মা
একটু হেসেই বললেন,

–আমার হাতের স্পেশাল চা! শুধুই তোমার জন্য?

মন, একদমই ভালো ছিলো না শান্তার। তবুও দুঃখ
লুকিয়ে মুখে হাসি এনে চায়ের কাপটা হাতে তুলে নিয়ে
চুমুক দিতে যাবেই মাত্র কিন্তু পারলো না।কারণ সরূপ,
আচমকাই এহসানুল একটা লোক কে বাড়ির ভেতরে
নিয়ে এসেছিলেন।যাকে দেখা মাত্রই গরম চায়ের কাপ
খানি,শান্তার পায়ের উপর পড়লো। এতে তেমন একটা
ভ্রু-ক্ষেপ নেই শান্তার।হতবাক হতভম্ব হয়ে শান্তা বলল,

-সোহান?

দৃষ্টি গোচরে শান্তাকে দেখা মাত্রই ছুটে এসে জড়িয়ে
ধরার অ-প্রান চেষ্টা করলো সোহান কিন্তু পারলো না।
পরক্ষণেই তীব্র গতিতে শান্তা কোষে একটা থাপ্পর
বসিয়ে দিলো সোহানের ফর্সা গালে। এবং রাগান্বিত
হয়েই সে বলল,

–আমাকে জড়িয়ে ধরার অধিকার সেই পূর্বেই তুমি
হারিয়ে ফেলেছো সোহান? খবর দার আমাকে মোটেও
ছোয়ার চেষ্টা করবে না? আমি তোমার মতো অমানুষ
কে এখন শুধুই ঘৃণা করি! শুধুই ঘৃণা! আর তাছাড়া
এহসানুল ভাই”আপনি সব কিছু জেনেও ওকে কেনো
এখানে নিয়ে আসলেন?

জবাবে গম্ভীর গম্ভীর কণ্ঠে এহসানুল সরকার বললেন,

–কারণ ও-আমার ভাই! চাচাতো ভাই। যেটা আমি
জেনেও বলিনি তোমায়?

__________________চলবে__________________

ভুল ত্রুটি এবং বানান ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে
দেখবেন।খুব দ্রুতই গল্পের সমাপ্তি হবে।ব্যক্তিগত
সমেস্যার কারণে কয়েক দিন গল্প না দিতে পারায়
আমি দুঃখীত।

বর্তমান আমি ব্যক্তিগত সমেস্যাই ভুগছি।তার মাঝেও
কষ্ট করে সময় বের করে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে বসে,
গল্প লিখছি।ইদানীং অনেককেই দেখছি আমার লেখা
গল্প গুলো খুব সহজেই কপি করে নিজেদের নামে
চালিয়ে দিচ্ছে।এসব দেখলে খুব কষ্ট হয়।এদের মতো
নিষ্ঠুর মানুষদের মেধা বলে কিছুই হয়না।এরা শুধু
পারে অন্যের পরিশ্রমের ফল চুরি করে নিজের নামে
চালিয়ে দিতে।বিবেকহীন মানুষ রা যেমন হয় আরকি।

আর তাছাড়া ইদানীং অতিরিক্ত রিপোর্টের কারণে
আমার আইডি বারবার লক হয়ে যাচ্ছে।এর আগেও
দু-বার ডিজেবল হয়েছিলো।আমার ক্ষতি করে কি
বা পাবে তারা?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here