গল্পঃ- #আমি_খুনী_হতে_চাইনি (পর্ব ৭ )
লেখাঃ #মোঃ_শাহরিয়ার_ইফতেখায়রুল_হক_সরকার
যার ফল সরূপ আগুনে দগ্ধ হয়েই মূলত আপনার মায়ের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। লাশের অর্ধাংস পুড়ে গিয়েছে।না দেখার বিশেষ অনুরোধ রইলো !!”
সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এহসানুল।মুখের ভাষা
আজ তারও গেছে হারিয়ে গভীর অরণ্যে। জগত যেন
ঘুরছে তার মাথার উপর। হাত,পা কাপছে,ধীরে ধীরে
ঠান্ডা হয়ে আসছে। চোখের কোণের জল গুলো তার
স্পষ্টই টলমল করছে। নিজে কে এই মুহূর্তে সংযোত
রাখার কোনোই কুল যেন খুঁজে পাচ্ছে না এহসানুল।যে
কুলেই উঠার চেষ্টা করছেন, সে কুলই তাকে দূরে ঠেলে
দিচ্ছে।অতঃপর এসআই হাবিবুল্লাহ, এতো করে বলার
পরেও ওনার কথা গুলোকে অগ্রায্যের তালিকায় যুক্ত
করে,নিজের গর্ভ-ধারাণী মায়ের লাশ দেখতে চাইলেন
এহসানুল। পরিশেষে এহসানুল কে যখন তার মায়ের
লাশটি দেখানো হলো তখন তিনি মাত্র একবার দেখেই
নিশ্চিন্তে বলে দিলেন”, এটা আমার মায়ের লাশ নয়। ”
কিছুটা হতভম্ব হয়েই এসআই বললেন,
–আপনি কি সত্যিই নিশ্চিত হয়ে বলছেন তো এটা
আপনার মায়ের লাশ নয়?নাকি লাশের অর্ধাংশটা
জঘন্য ভাবে পুড়ে যাওয়াতে, মূলত চিনে উঠতে না,
পারাকে কেন্দ্র করে এরূপ কথা বললেন?
–আমার মায়ের লাশ-খানি যতইনা আগুনে পুড়ে যাক
বা চেহারা ঝলসে যাক তবুও আমি আমার মা-কে খুব
ভালো করেই চিনতে পারবো। এটা আমার মায়ের লাশ
একদমই নয়।সম্ভবত অন্য কোনো মহিলার লাশ।জানি
না আমি, কে এই মহিলা, আমাদের বাড়িতে কি এমনি
বা করছিলেন।দেখেতো বাসার কাজের মেয়েটাও মনে
হচ্ছে না কারণ সরূপ এতটা বয়স্ক কাজের মেয়েটা নয়
তাছাড়া এতো সচেতন,নিরাপত্তার পরেও বাসার গ্যাস
সিলিন্ডার কি করে ব্লাস্ট হতে পারে?সবচেয়ে মূল্যবান
কথা হচ্ছে, আমার মা কোথায়?প্রার্থনা উপর ওয়ালার
নিকট, মা যেন সহিসালামতেই থাকে। যড়যন্ত্র! গভীর
কোনো ষড়যন্ত্র।এসআই সাহেব,শুনুন”আপনি বরং-চো এই লাশটিকে নিয়ে যান। আমি আমার মায়ের খোঁজ
ঠিকি বের করতে পারবো।
অতএব এসআই হাবিবুল্লাহ সাহেব তেমন আর কিছুই
বললেন না।লাশটিকে মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করার
পর চলে গেলেন।
বাবার তৈরি বাড়ির সামনে এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে
এহসানুল। যে বাড়িটা আজ ভাঙাচুরায় রুপান্তরিত
হয়েছে।অনাবরত,পরিচিত,আত্মীয়-স্বজনদের কল
করছে এহসানুল। কিন্তু তবুও মায়ের কোনো খোঁজ
তিনি পাননি। আজ বেশ কয়েকটা দিন অতিবাহিত
হলো,এখনও নিজের মায়ের কোনো সন্ধান পাচ্ছেন
না এহসানুল। নিরাশ হয়েই হাসপাতালের কেবিনের
বাহিরে বসে রয়ে ছিলেন তিনি। বহু বছর পূর্বে ছোট
বেলায় নিজ বাবার মৃত্যুর পর এক মা ছিলেন যিনি
সব সময়,সার্বক্ষণিক গাছ হয়ে ছায়া প্রধান করতো।
আজ সে মা তার পাশে নেই।
__পিছন থেকে কাঁধে হাল্কা ভাবে স্পর্শ করে সোহান
বলল,
–ভাইয়া,চাচির কি কোনো সন্ধান পেলে?
“হতাশা যুক্ত কন্ঠে এহসানুল বলল,
–নাহ! এখনো কোনোই খোঁজ পাইনি।
–কি বলছো? আচ্ছা ওই লাশটি-ই চাচির নয় তো?
–শাট’ আপ ‘সোহান!ওটা আমার মায়ের লাশ নয় এটা
আমি দীর্ঘ বিশ্বাসের সাথেই বলছি।
–সরি ভাইয়া? তবে আমার তো এখন মনে হচ্ছে এর
পেছনে নিশ্চয়ই কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে?
— তোকে এসবে ইন্টারফেইস করতে হবে না?আজ
হাসপাতাল থেকে শান্তার রিলিজ এর দিন। সন্ধ্যায়
বাসে উঠিয়ে দিবো, শান্তাকে নিয়ে তোদের বাসায়
চলে যাস!
–এসব কি ভুল-ভাল শব্দ প্রয়োগ করছো ভাইয়া?
তোমাকে আমরা,একা রেখে কোনো ক্রমেই যেতে
পারি না?তুমিও আমাদের সাথে চলো?
–না সোহান!আমার এখানে থাকাটা বিশেষ প্রয়োজন। এদিকটা আমি একাই হেন্ডেল করে নিতে পারবো।তুই
শান্তাকে নিয়ে তোদের বাড়িতে চলে যা।তাছাড়া তোর
মায়ের মনটা কিন্তু তেমন একটা ভালো না।মেয়ে যতই
অন্যায় করুক না কেন,মায়ের মন বলে কথা!আর হ্যাঁ!
শান্তাকে একটু-আধটু খানির জন্যেও চোখের দৃষ্টির আড়াল করিস না?
অতএব এহসানুল বসা থেকে উঠে হাসপাতাল থেকে
বেরিয়ে গেলো। সন্ধ্যায়, সোহান এবং শান্তাকে বাসে
তুলে দেওয়ার পর, ফুটপাত এর একটা পথ দিয়ে সে
আনমনে হাঁটছিলো।হঠাৎ,আচমকাই এহসানুল থেমে
যায়। একটু কড়া কন্ঠে রাস্তার একটা ছেলেকে ডাক
দিলো।ছেলেটি কাছে আসলে তার ডান হাতে থাকা
কালো রঙের খামটা নিজের তত্ত্বাবধানে এনে বলল,
–এই খামটা তুই কোথায় পেয়েছিস?
“ছেলেটি খানিকটা ভীতু গলায় বলল,
–এডা ময়লার ডাস্টবিনে এইডা পইড়া আছিল!সুন্দর
লাগছিল, তাই উঠাইয়া নিছি।
–বুঝেছি।তা তোর হাতে কি?
–খাবার।
–ডাস্টবিনের?
“”ছেলেটি ফিক করে একটু হাঁসলো।রাস্তার ছেলে কিন্তু
ওর হাসিটা বেশ দারুন ছিলো। অতএব ছেলেটি বলল
–হ্যাঁ
“ছেলেটার মাথায় খানিকটা হাত বুলিয়ে,কিছু টাকা
ধরিয়ে দিয়ে এহসানুল বলল,
— তুই আমার অনেক বড় একটা উপকার করলি। যার
কাছে এই টাকাটা কিন্তু অতিই সামান্য।ভালো থাকিস।
অতঃপর এহসানুল সেখান থেকে দ্রুতই প্রস্থান আরম্ভ
করলো। রাস্তার ছেলেটা বেশ কিছুক্ষন এহসানুলের
দিকে অদ্ভুত একটা চাহনিতে তাকিয়ে ছিলো। কিন্তু
পরিশেষে একটু মুচকি হাঁসি দিয়ে ছেলেটাও নিজের
গন্তব্যের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করে দিলো। কালো রঙের
খামটা চিনতে এহসানুলের একদমই ভুল হয় নি। সে
নিশ্চিত এটাই সেই খামটা। যেটা হয়ত বাড়ির কাজের
মেয়েটা ফেলে দিয়ে ছিলো।হাঁটতে হাঁটতেই, সে “খামটা
খুলে চিঠিটা বের করে পড়তে লাগলো,চিঠিতে শুধু
একটা কথাই বড় বড় করে লেখা ছিলোঃ-
–অন্যায় করেছিলো তাই তো উভয়ই পেয়েছে উপহার
সরূপ,মৃত্যু। (সেরু ভাই)””
চিঠিটা পড়ার পরপরই একজন কনস্টেবল ফোন
দিয়ে এহসানুল কে বলল,
–স্যার পোস্ট মর্টেমের রিপোর্ট বেরিয়েছে।”
–কি লেখা আছে সেখানে?
–এক’ দিন পূর্বে তারা দু’জনেই এমন একটা ওষুধ
খেয়ে ছিলেন, যেটা আমাদের দেশে পাওয়া যায়না।
খুবই মারাত্বক একটা ঔষুধ। যেটা যে সময়ে সেবন
করবে, ঠিক তার পরের দিন ওই সময়েই তার মৃত্যু
ঘটবেই ঘটবে শু-নিশ্চিত।স্যার’ আপনি শুনেছেন তো?
হ্যালো”…! হ্যালো”…!
এহসানুল কিছুই বলছে না।চুপচাপ।অতএব ফোনটা
আস্তে করে কেটে দেয় সে। হাতে থাকা কালো রঙের
খাম ও চিঠিটা ফেলে দিয়ে, একটা হোটেলের দিকে
অগ্রসর হতে শুরু করলো এহসানুল। কারণ তাদের
বাড়ি এখন মানুষ বসবাসের অযোগ্য স্থানে পরিনত
হয়েছে। খানিক সময় পর একটা হোটেলে এসে রুম
ভাড়া করেন তিনি।কড়া শীতের মাস তবুও বেশ গরম
লাগছে তার। এসি’টা চালিয়ে দিয়ে, দীর্ঘ একটা শ্বাস
ছেড়ে বিছানায় বসে পড়লো। দু’খানা চোখ বন্ধ করে
মনে মনে নিশ্চিত হয়েই এহসানুল বলল, তারমানে
রৌহিকা এবং ফারিয়ার মৃত্যুর পেছনে রয়েছে শুধু’ই
সেরু ভাই।” আচমকাই তার চোখ’টা লেগে আসলো।
ঘুম আসছে ভিষণ। না জানি কতই না রাত কেটে
গেছে তার নির্ঘুমে। ঘুমে প্রায়ই অটল হয়ে পড়ে ছিলো
এহসানুল। কিন্তু ঘুমাতে পারেনি। তবে ঘুমের ঘোরটা কাটে নি।অপরিচিত নাম্বার থেকে আসা কলটা,
রিসিভ করে এহসানুল বলল,
–কে আপনি ?
জবাবে ও’পাশ থেকে কেউ একজন গম্ভীর কণ্ঠ স্বর
প্রয়োগ করে বলল,
–আপনার মা” হাসপাতালে এডমিট রয়েছেন। শহর
থেকে বেশ খানিকটাই দূরে অবস্থিত বড় হাসপাতালটি
তে দ্রুতই চলে আসুন।
কথাটা শোনা মাত্রই ঘুমের ঘোর’টা তার নিমিষেই
কেটে যায়।সঙ্গে সঙ্গে এহসানুল বলল,
–কি বলছেন?কে আপনি?আমার মা হাসপাতালে
এডমিট! কি হয়েছে তার? মা ঠিক আছেন তো?
আর আপনি কে বলছেন? প্লিজ আনসার দিন?
–আমি সেরু_ভাই বলছি।
উত্তেজিত হয়ে জবাবে, এহসানুল কিছু বলতে গিয়েও
বলতে পারেন নি। তার আগেই ওপাশ থেকে কল’টা
কেটে দেওয়ার সাথে সাথেই ফোন বন্ধ করে রাখা
হয়। মাথায় হাত দিয়ে ভাবাতে বিভোর এহসানুল। কি
করা উচিত এখন তার?কিছুই যেন ভেবে পাচ্ছেনা সে।
আর এক মূহুর্তের জন্যেও বসে রইলো না এহসানুল।
দ্রুতই রওনা আরম্ভ করে দিলো। মাথার গহীন’টায়
অজস্র টেনশন এসে ভীড় জমাচ্ছে তার। শতবার চেষ্টা
করার পরেও, এহসানুল কিছুতেই টেনশন মুক্ত হতে
পারছে না। অতএব সেই হাসপাতালে এসে এহসানুল
জানতে পারলো,তার মা সত্যি সত্যিই এই হাসপাতালে
এডমিট রয়েছেন। অবস্থা বেশ একটাই গুরুতর।এই
মূহুর্তে মায়ের কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে চোখের জল
থামাতে ব্যস্ত এহসানুল। বুক ফেটে, অশ্রু শুকিয়ে যেন
রক্ত পড়ার উপক্রম। শেষ-মেস বহু বাঁধা কে উপেক্ষা
করে মন কে শক্ত করলো এহসানুল এবং একজন নার্স
কে ডেকে বলল,
–আমার মা কে এখানে কে অথবা কারা এডমিট
করেছেন,আপনি কি জানেন?
–জ্বি স্যার! তিন জন লোক ওনাকে গুরুতর অবস্থায়
এখানে নিয়ে এসেছিলেন।খানিকটা পূর্বেও কিন্তু তারা
সবাই এখানেই ছিলেন।
— তারা এখন কোথায়?
–জানি না স্যার।
অতঃপর এহসানুল নার্সটি কে আর কিছু জিজ্ঞেসা
করলোনা।দ্রুতই হাসপাতালের আনাচ-কানাচে খোঁজা
খোঁজিতে মগ্ন হয়ে পড়লো। কিন্তু কোথাও তাদের চিহ্ন
টুকুও পাওয়া গেলো না। তাছাড়া সিসিটিভি ফুটেজ
গুলোও ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। কে করেছে এমন জঘন্য মূলক কাজ?সেটা কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের
কাছে এখনও অজানাই বটে। নিরাশ হয়ে মায়ের ঠিক
কেবিনের সম্মুখেই বসে পড়লো এহসানুল।জীবন এবং
মৃত্যুর মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছেন তার মা জননী। ডাক্তার
বলেছেন,মাথায় অনেক আঘাত করা হয়েছে।ওরা তিন
জন দ্রুত হাসপাতালে না নিয়ে আসলে, বাঁচার আশঙ্কা
একদমই নিম্ন স্তরে নেমে যেতো। আজ প্রায়ই দু-সপ্তাহ
অতিক্রম হলো। এহসানুলের মায়ের অবস্থা অনেকটাই
উন্নত এখন। তবে এহসানুলের মা ঠিক মতো কথা
বলতে পারছেন না। ডাক্তার বলেছেন, কিছু দিন সময়
লাগতে পারে, সব ঠিক হতে।দুই রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলো এহসানুল।সেই মূহুর্তে আঠারো বয়সী একটা
মেয়ে আচমকা এগিয়ে এসে বলল,
— ধরেন ভাইয়া। রাস্তার ও’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা
লোক আপনাকে দেখিয়ে দিয়ে, এই কালো রঙের খামটা দিতে বললেন।
মেয়েটির কথা শুনে এহসানুল বেশ অবাক হলো।দ্রুত
মেয়েটার হাত থেকে কালো রঙের খাম’টা নিয়ে বলল,
–লোকটি দেখতে কেমন ছিলো?এখন সে কোথায়?
লোকটি কি একাই ছিলো?না সঙ্গে আরও দু-জনও
ছিলো?
বিরক্ত হয়ে মেয়েটি বলল,
–লোকটি দেখতে বেশ একটা জঘন্য ছিলো। মুখটা,
পোড়া,ঝলসানো।আর তেমন কিছু বলতে পারবো না।
আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে,গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে।তাছাড়া
এই খামটা দিতে এসে আমার মূলবান অনেক সময়
নষ্ট হয়েছে।
কথাগুলো বলার পরপরই মেয়েটি চলে গেলো।একটুও
থামলো না। সেরু ভাই এর খাম এটা! ভেতরে থাকা
খামে ঠিক কি লেখা আছে সেটা জানার গভীর আগ্রহে খাম, খুলে চিঠি”টা বের করে পড়তে আরম্ভ করলো
এহসানুল।চিঠিতে লেখা ছিলোঃ-
— আপনার মাকে বাঁচাতে চাইলে,এক্ষুনি হাসপাতালের
দিকে ছুটুন।দ্রুতই ছুটুন।নতুবা তিনি বাঁচবেন না।তাকে
বাঁচতে দেওয়া হবে না। আপনার চাচা ওনাকে মেরে
ফেলবেন।
~সেরু ভাই “–
__________________চলবে__________________