আমি_খুনী_হতে_চাইনি (পর্ব ৮ )

0
1470

গল্পঃ- #আমি_খুনী_হতে_চাইনি (পর্ব ৮ )
লেখাঃ #মোঃ_শাহরিয়ার_ইফতেখায়রুল_হক_সরকার

–আপনার মাকে বাঁচাতে চাইলে,এক্ষুনি হাসপাতালের
দিকে ছুটুন।দ্রুতই ছুটুন।নতুবা তিনি বাঁচবেন না।তাকে
বাঁচতে দেওয়া হবে না।আপনার চাচা ওনাকে মেরে
ফেলবেন।

~সেরু ভাই “–

_” চিঠিটা পড়ার পর কেন যেন শিহরিত অনুভব করল
এহসানুল। বিশ্বাস করতে পারছে না চিঠিতে থাকা এই
লেখা গুলোর উপর। আবার বিশ্বাস না করেও এভাবে
দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না।কারণ সরূপ সেরু ভাইয়ের
লেখা এই পর্যন্ত কোনো চিঠিই মিথ্যা প্রমানিত হয়নি।
এহসানুল আর একটুও দেরি করলো না। উত্তর দিকে
ছুটতে লাগলো। হাসপাতালটা ওই দিকেই অবস্থিত।
মূলত কিছু দরকারী প্রয়োজনের জন্যই হাসপাতাল
থেকে সামান্য-টুকু দূরে কারো অপেক্ষায় এহসানুল
দাঁড়িয়ে ছিলো।অতএব হাঁপাতে হাঁপাতে হাসপাতালের
চৌকাঠ পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হয় সে। অতএব মায়ের কেবিনের সম্মুখে আসতেই আঁতকে উঠলো এহসানুল।
চিৎকার দিয়ে একটা নার্সকে ডেকে উচ্চ স্বরে বলল,

–আমার মা কোথায়?

উত্তরে নার্সটি একটু ধীর কন্ঠে বলল,

–খানিক্ষণ আগেই কিছুলোক আপনার মাকে শ্বাসরুদ্ধ
করে মারতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তারা সফল হতে পারে
নি। তবে আপনার মায়ের অবস্থা তেমন একটা ভালো
নয়। তাই ইমিডিয়েটলি তাকে থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া
হয়েছে।

–I don’t Understood! এতো বড় হাসপাতালে এরূপ
ঘটনা কিভাবে হতে পারে? তারা কারা? আমার মাকে
কেনো মারতে এসেছিলেন?তাদের মধ্যে কেউ কি ধরা
পড়েছে?

–সরি স্যার! তারা হুঠ করে এলো আর হুঠ করেই চলে
গেলো। তবে সিসিটিভি ফুটেজের সাহায্যে আমরা এক
জনের মুখ চিহ্নিত করতে পেরেছি।ফুটেজ’টি আপনার
দেখা প্রয়োজন।ওরা আপনার মাকে মারতে এসেছেন।
নিশ্চয় আপনার কোনো পরিচিত লোকও হতে পারে?

অতঃপর এহসানুল নার্সটির পিছু পিছু গিয়ে ফুটেজ’টি
দেখলো। সেখানে স্পষ্টই তার চাচার মুখচ্ছবিটা ফুটে
উঠছে।যা এহসানুল কল্পনাও করেনি।দ্রুতই সোহানকে
ফোন দিয়ে বলল,

–তোর বাবা কোথায়?

–বাবা তো সেই গতকাল বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন।
কিন্তু এখনও ফিরে নি। মা ফোন করে জিজ্ঞেসা করে
ছিলেন,তিনি একটু জরুরী ভিত্তিতে দূরে রয়েছেন।
কিন্তু কেনো ভাইয়া?

–তোর বাবা আর বাসায় ফিরবেও না। হয়তো অনত্রে
কোথাও পালিয়ে যাবে নতুবা ধরা পড়লে জেলে যাবে।

কিছুটা আশ্চর্য হয়েই সোহান বলল,

–এসব তুমি কি বলছো ভাইয়া?”

–তোর বাবা খানিকক্ষণ পূর্বে হাসপাতালে আমার
মাকে মারার জন্য এসেছিলেন।কিন্তু ব্যর্থ হয়েই তাকে
পালিয়ে যেতে হয়েছে।

–ভাইয়া তোমার ভুল হচ্ছে বাবা কেনো এমন করবে?

–আমি জানি না। সিসিটিভি ক্যামেরায় স্পষ্টই তোর বাবার মুখটা দেখা যাচ্ছে।আমি ভাবতেও পারছি না এইসব।তোর বাবা অর্থাৎ চাচা কেনো আমার মাকে
প্রাণে মেরে ফেলার প্রচেষ্ঠা করলেন?এর পেছনে কি
কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে?হ্যাঁ নিশ্চয়ই বড়সড় উদ্দেশ্য
রয়েছে। আমাকে বের করতে হবে, কি সেই উদ্দেশ্য?
তাছাড়াও সব রহস্যের ভেদ ঘটাতে হবে, সব…সব.!

কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে, সঙ্গে ফোন কেটে দিলো সে।
এই মুহূর্তে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে তার। বিচলিত হয়ে
পড়লে তো চলবে না।কিছুতেই না।যতই নিজেকে শান্ত
রাখার চেষ্টা করছে ততই শান্তিষ্টতা লঙ্ঘন হচ্ছে তার।
মা ছাড়া সান্ত্বনা দেওয়ার মতো এহসানুলের তেমন
কেউ নেই। কিন্তু তার মা জননী তো এখন প্রায়ই মৃত্যু
যাত্রার পথিক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। যেকোনো সময়
যা কিছু হতে পারে।পানিহীন মাছ যেমন সম্পূর্ণ অচল।
তেমনই মায়ের ছায়া ছাড়া এহসানুলও অচল। ডাক্তার
বেরিয়েছে থিয়েটার থেকে। কাঁধে হাল্কা স্পর্শ করে
ডাক্তার সহানুভূতির গলায় বললেন,

–আপনার মায়ের কন্ডিশন এতোদিন অনেকটা উন্নতই ছিলো কিন্তু এখন বেশ একটা অবনতির দিকে চলে
গিয়েছে।তবুও কিছুটা আশঙ্কা রয়েছে বাঁচার। বাকিটা
সৃষ্টি কর্তার ইচ্ছে। প্রার্থণা ছাড়া অবশিষ্ট কিছুই নেই।

অতঃপর ডাক্তার চলে গেলেন।থমকে দাঁড়িয়ে রয়েছে
এহসানুল। চোখে জল টলমল ঠিকি করছে কিন্তু গাল
বেয়ে পরছে না।অনেকের ভেতরটা নরম উপরটা শক্ত।
কিন্তু এহসানুলের একটু উল্টো। তার ভেতরটা শক্ত
উপরটা নরম। পরের দিন সকাল এগারো ঘটিকায়
সোহান এবং শান্তা উভয়ই হাসপাতালে এসে উপস্থিত
হয়।কড়া কন্ঠে নিষেধ আজ্ঞা প্রধান করা সত্যেও তারা
এসেছে। এমনকি জোরাজুরি করে তিন দিনের মতো হাসপাতালেও থেকেছে। বিকেলের দিকে সোহান এবং
শান্তাকে গাড়িতে উঠিয়ে দেওয়ার সময়,সোহান বলল,

–জানি না ভাইয়া বাবা কেনো এমন করলো তবে তিনি
অন্যায় যখন করেছেন তার ফল সরূপ শাস্তিতো তাকে
পেতেই হবে।তাছাড়া আমি আবারও বলছি,থেকে যাই
না আমরা? চাচি সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত?

— নাহ! তোদের আর থাকতে হবে না। মায়ের অবস্থা এখন একটু উন্নতও বটে। আমি সব’টা সামলে নিতে
পারবো। তাছাড়া ভুলে গেলে চলবে না,বাড়িতে তোর
মা কিন্তু একাই রয়েছেন।আর শোনো”শান্তা,তুমি তো সেরু_ভাই কে দেখেছো? এখন এটা বলো আমায়,
তার মুখের আকৃতি,গঠন অথবা সে দেখতে কেমন?
ওর মুখটা কি পোড়া,ঝলসানো,বিকৃত?

জবাবে শান্তা বলল,

–নাহ ভাইয়া! তার মুখটা পোড়া, ঝলসানো বা বিকৃত
নয়। তার মুখের আকৃতি,গঠন বেশ সুন্দর ছিলো।

–তাহলে,পোড়া,ঝলসানো,বিকৃত চেহারার অধিকারী
লোকটা কে?হতে পারে সেরু ভাইয়ের দুই সহকারীর
মধ্যে একজন!নতুবা অন্য কেউ?রহস্য সব-ই রহস্য?

সোহান আবার বলল,

–ভাইয়া,থাকি না আর কদিন?

— চুপ!গাড়ি ছেড়ে দিবে মনে হচ্ছে।জলদি গিয়ে বস।
আর হ্যাঁ,সাবধানে যাস।

অতঃপর সোহান আর কিছু বলল না।নিজ সিটে বসার
কয়েক মিনিট পর গাড়ি ছেড়ে দিলো। এহসানুল আর
দাঁড়ালো না।হাসপাতালে চলে আসলো।অবশেষে দীর্ঘ
প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ দু-মাস পর মোটা-মুটি সুস্থ’টা লাভ করতে সক্ষম হয় এহসানুলের মা।অতএব
তার নিজ গর্ভধারণী মায়ের মুখেই জানতে পারলো
সব’টা। এহসানুলের মা বললেন,

–শোন”বাবা! হয়তো জানিস না,তোর চাচা কতটাই না
নিষ্ঠুর মানুষ। তুই তখন অনেকটা ছোট’ই ছিলি। এসব
মনে না থাকাটাই স্বাভাবিক।তোর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই ওনার তুখোড় নজর ছিলো আমাদের এই সম্পত্তির উপর। তিনি চেয়ে ছিলেন বড় ভাইয়ের হঠাৎ মৃত্যুর মূখ্যম সুযোগটা ব্যবহার করতে। অবৈধ, অন্যায় ভাবে তোর বাবার সমস্ত জমি-জমা ধন-সম্পত্তি হ্রাস করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেন নি। এই নিয়ে পূর্বেও তোর চাচার সাথে আমার অনেক ঝামেলার সৃষ্টি হয়ে
ছিলো। যা একসময় সমাধানও হয়ে ছিলো।কিন্তু হঠাৎ
করেই তিনি আবার সেই পুরনো রূপ ধারণ করে জমি,
জমা নিয়ে আমার সাথে তর্কা-তর্কির সুত্র-পাত ঘটায়।এমন কি থ্রেড পর্যন্ত দিচ্ছিলেন, জমি-জমা তার নামে
লিখে দিতে। তোকে এসব জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু
পারিনি। আমি চাইনি এসব নিয়ে তোর আবার, চাচার
সাথে কোনো প্রকার বিভ্রাটের সৃষ্টি হোক।

–আমাকে, না জানানো টাই মূলত তোমার ভুল ছিলো
মা…?

–হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক-ই বটে।আমি কখনও ভাবতেও
পারিনি, সম্পত্তির লোভের বশীকরণের শিকার হয়ে
তোর চাচা শেষ পর্যন্ত এতটা নিম্ন স্তরে নেমে যাবে।
সেদিন তোর চাচা কয়েকজন লোক নিয়ে হুঠ করে
বাসার ভেতরে চলে এসেছিলো। তখনো কিন্তু আমি
তেমন একটা বুঝতে পারিনি, তার মতিগতি ঠিক কি
ছিলো।যখন তোর চাচা পেছন থেকে আমায় আঘাত
করলো তখনই বুঝলাম তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে।আহত
করার পর তারা গ্যাস সিলিন্ডার লিগ করে চলে যায়।
তারপর আর মনে নেই কিছু আমার।বাঁচার ইচ্ছে তো
একদমই ছেড়ে দিয়েছিলাম।তবুও জানি না আমি,কে
হাসপাতালে নিয়ে আসলো আমায়?

–যেই নিয়ে আসুক তুমি ঠিক আছো ব্যাস!আর একটা
কথা এখনও আমার মাথার গহীনে কিছুতেই ঢুকতে
চাইছে না,তাহলে কে ওই মহিলা?যার মৃত্যুটা ঘটেছে
আমাদের বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্লাস্ট হওয়ার জন্য?

–কার কথা বলছিস তুই?

একটু ভেবে চিন্তে এহসানুল নিজের ফোন বের করল।
এবং সেই মহিলার পোড়া লাশটির ছবি দেখিয়ে মাকে
জবাবে বলল,

–এই মহিলার লাশ আমাদের বাড়িতে পাওয়া গেছে।
মূলত যার মৃত্যু ঘটেছে,গ্যাস সিলিন্ডার ব্লাস্ট হওয়ার
ফলে।

ছবিটার দিকে বেশকিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর হঠাৎ
আঁতকে উঠলো এহসানুলের মা।জবাবে একটু কাঁপা
কন্ঠে বললেন,

–এটা তো সায়েলার মতো লাগছে?

–সায়েলা?

— হ্যাঁ।আমার বান্ধবী।তুই চিনবি না।তাছাড়া ওই দিন
বাড়িতে ওর আসার কথা ছিলো?

অতঃপর এহসানুল আর কিছু বলল না।শুধু মাকে
বিশ্রাম নেওয়ার কথা’টা বলেই হাসপাতাল থেকে
বেরিয়ে এলো।দোকানে বসে চায়ের কাপে একবার
চুমুক দিয়ে ভাবাতে বিভোর হয়ে পড়লো।

-তারমানে মাকে আহত অবস্থায় রেখে,গ্যাস সিলিন্ডার লিগ করে চাচা চলে যাওয়ার পরপরই বাড়িতে সেরু
ভাইয়ের আগমন ঘটে ছিলো।কিন্তু সেরু_ভাই কেনো
আসলো আমাদের বাড়িতে?আর মাকে সে কেনোই বা
বাঁচালো?তার কি কোনো উদ্দেশ্য ছিলো?নাকি ছিলো
না?জানি না আমি,তবে যার-পর হয়তো মায়ের বান্ধবী
বাড়িতে এসেছিলেন,তৎক্ষনাৎ সিলিন্ডারও ব্লাস্ট হয়।
যার ফল সরূপ আগুনে দগ্ধ হয়েই তার মৃত্যু নিশ্চিত
হয়।

__দু-দিন পর চার রাস্তার মোড়ে বট গাছের নিচে ফোন
হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো এহসানুল।পাশ দিয়ে কালো
কোর্ট পরিধানে একটা লোক চলে যাচ্ছিলো।হুঠ করেই
এহসানুল পেছন থেকে সেই লোকটির একটা হাত ধরে
বলল,সেরু_ভাই।এতে লোকটি বেশ থমকে দাঁড়ালো।
মুচকি হেসে এহসানুল আবার বলল, তা তোমার মুখ”
খানির এমন অবস্থা কেনো?ওই দিন শান্তাকে বাঁচাতে
পাঁচ জন বখাটে লোক-জনের সঙ্গে দস্তা-দস্তির এক
পর্যায়ে পেরে উঠতে না পেরে তাদের মধ্যে কেউ এক
জন তোমার মুখে এসিড ছুড়ে মেরে ছিলো তাই না?
ঝাটকা মেরে হাত ছাড়িয়ে নিলে,এহসানুল আবারও
মুচকি হেঁসেই বলল,পালোনোর চেষ্টা করো না?সক্ষম
হবে না তুমি?চারপাশেই পুলিশ কিন্তু ওত পেতে বসে
রয়েছে,পা বাড়ালেই সুট”করে দিবে।গতকাল তোমার
দুই সঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।এটাতো তুমি ভালো
করেই জানো।ইনফরমেশন ছিলো আজ তুমি এখানে
আসবে।ঠিক আসলে,এবং পরিশেষে ধরাও পড়লে।
অবশেষে সেরু_ভাই গল্পের সমাপ্তি হলো।

মাথার হুড সরিয়ে মুচকি হেঁসে এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে
সেরু ভাই বলল,

–বলতে হচ্ছে, আপনার বিচক্ষণতা অনেক তুখোড়।
গ্রেফতার করুন। I well be ready!

অতঃপর সেরু ভাই কে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে
আসা হলো।কুয়াকাটা থানার ওসিও এখানে উপস্থিত
আছে।এহসানুল জিজ্ঞেসাবাদ মাত্র শুধু করতেই যাবে,
ঠিক তার আগেই ফোনটা’টং করে বেজে উঠলো তার।
রিসিভ করে কিছুক্ষণ কথা বলার পর সেরু ভাই কে
উদ্দেশ্য করে, এহসানুল একটু মুচকি হেঁসেই বলল,

— আমার চাচার খুন’টা তুমিই করেছো,তাই না?

জবাবে সেরু ভাই কিছুই বলল না।মুখ-খানি ঘুরিয়ে
নিয়ে মুচকি হাঁসলো।

__________________চলবে__________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here