গল্পঃ- #আমি_খুনী_হতে_চাইনি (পর্ব ৯ এবং শেষ)
লেখাঃ #মোঃ_শাহরিয়ার_ইফতেখায়রুল_হক_সরকার
জবাবে সেরু ভাই কিছুই বলল না। মুখ-খানি ঘুরিয়ে
নিয়ে মুচকি হাঁসলো।এতে ওসি সাহেব অনেক রেগে
গেলো। এবং সেরু ভাইয়ের কলার চেপে ধরে বলল,
–আমি এতোকিছু বুঝি না।আমার স্ত্রী-সন্তানের মৃত্যুর
আসল রহস্য কি বল? আমার মেয়েকে তুই স্বার্থের
জন্য কেনো ব্যবহার করেছিলি?তোর উদ্দেশ্য কি?মনে
তো হচ্ছে তুই আমার স্ত্রী সন্তানকে খুন করেছিস?
সেরু ভাই বলল,
-পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে কি লেখা আছে আমি আপনার
দ্বিতীয় স্ত্রী এবং প্রথম স্ত্রীর মেয়ে কে খুন করেছি?
একটু চুপসে গিয়ে ওসি সাহেব আবার বলল,
–না!”
–তাহলে কলার’টা ছাড়ুন?
–চুপ কর! কেনো ছাড়বো?তুই একজন খুনী।পুলিশ
হয়ে তোর কলার তো আমি ধরতেই পারি। তাছাড়া
একটু পর যখন তুই থার্ড-ডিগ্রির সম্মুখীন হবি তখন
বুঝবি আর নিজে থেকেই মুখ ফুটে সব কিছু বলার
জন্য লাফাবি।
ওসির কথার জবাবে অট্ট হাসিতে সেরু ভাই বলল,
–এসব থার্ড-ডিগ্রির ভয় থাকলে তো আজ খুনী হতাম
না স্যার! আর তাছাড়া আপনার মেয়ে মৃত্যুর আগে যা
যা আমায় বলেছিলো,শুধু সেটাই চিঠিতে আমি উল্লেখ
করেছিলাম।এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।
এতক্ষণ বেশ চুপ করে ছিলো এহসানুল। অতএব ওসি
সাহেব কে উদ্দেশ্য করে বলল,
— বাকিটা আমি বলছি ওসি সাহেব। শুনেনঃ- “‘
আপনার মেয়ের এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী যার নাম মারিয়া।
শুধু মাত্র ওর বয়ফ্রেন্ড কে খুন করার জন্যই মূলত
সেরু ভাই আপনার মেয়ে কে ব্যবহার করেছে। এখন
আসি বাকি কথায়, আপনার দ্বিতীয় স্ত্রীর পর-পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিলো। যা আপনার প্রথম স্ত্রীর
মেয়ে রিহানা জানতে পেরে ছিলো। এমনকি ব্যাপারটা
আপনাকে বলতেও চেয়েছিলো। কিন্তু ভাগ্য ওর সহায় হয়নি।তার পূর্বেই আপনার স্ত্রী অর্থাৎ রিহানার সৎ মা
ওকে খুন করার প্রচেষ্ঠা করেন।দস্তাদস্তির এক পর্যায়ে
রিহানা ওর সৎ মায়ের প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য
ওয়াস রুমে গিয়ে লুকানোর চেষ্টা করেছিলো।কিন্তু সে
পারেনি। শেষ অবধি কোনো কুল-ই খুঁজে না পেয়ে
আত্মরক্ষার তাগিদে ভারী কিছু একটা হাতে উঠিয়ে
নিয়ে,শরীরের সর্বোচ্চ শক্তিতে আঘাত করে। যার ফল
সরূপ সঙ্গে সঙ্গে-ই আপনার দ্বিতীয় স্ত্রীর মৃত্যু ঘটে।
তারপর কিন্তু রিহানা আপনার নিকটে ছুটে আসছিলো
কিন্তু বাংলায় একটা প্রবাদ রয়েছে, অভাগা যেদিকে
যায়, সাগর যে শুকিয়ে যায়। মাঝ রাস্তায় থেমে যেতে
হয় রিহানাকে। বাধা হয়ে দাড়িঁয়ে ছিলো কম বয়সী বেশ কিছু বখাটে ছেলেদের দল।রিহানা নিজের আত্ম
রক্ষার অ-প্রাণ চেষ্টা করেছিলো।কিন্তু ও-সক্ষম হয়নি।
পালিয়ে বেশি দূর যেতেও পারেনি। পরিশেষে আপনার
মেয়ে, রিহানাকে ওরা জোরজবরদস্তি করে নদীর ধারে তুলে নিয়ে আসে।যারপর গলায় ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে
রাতের আধারে ধর্ষণ করার পর, হন-হনিয়ে চলে যায়।
ওরা যাওয়ার পরপরই নদীর ধারের ছোট্ট পথ ব্যবহার
করে, মূলত শান্তার বাবাকে খুন করার পর সেরু ভাই
তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলো। আর তখনই তারা
রিহানাকে দেখতে পায়। জানলে সত্যিই অবাক হবেন।
সেই করুণ পরিস্থিতির মাঝেও, সেরু ভাইকে চোখের
দৃষ্টি গোচরের সীমানায় দেখতে পাওয়াকে কেন্দ্র করে
না চাইলেও একটু মুচকি হেঁসে ছিলো রিহানা। এমনকি
সেরু ভাই কে সর্বোচ্চ শক্তিতে জড়িয়ে পর্যন্ত ধরে
ছিলো তখন। হয়তো এভাবে আর কোনো দিন পারবে
না জড়িয়ে ধরতে। তারপর ঝাঁজালো কন্ঠ স্বরে বেশ কয়েক’টা কথা বলার পরপরই হুটহাট ভাবেই বখাটে
ছেলেদের ফেলে যাওয়া,ধারালো অস্ত্র’টি ব্যবহার করে আত্মহত্যা করে বসে। যা সেরু ভাই কে তৎক্ষনাৎ কিন্তু
সম্পূর্ণই স্তব্ধ করে দিয়ে ছিলো।যতই হোক এই কথা’টা
কিন্তু সত্য। হয়তো সেরু ভাই রিহানাকে নিজের সার্থের
জন্য ব্যবহার করেছিলো। কিন্তু রিহানা সত্যি সত্যিই
সেরু ভাই কে মনের গহীনের সবটা দিয়ে রেখেছিলো।
কথা-গুলো শোনার পর, চোখে টলমল করতে থাকা
জল-গুলো মুছে ওসি সাহেব ভেঁজালো গলায় বলল,
–তাহলে পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে ধর্ষণের কথাটা কেনো
উল্লেখ করা হয়নি?
–সেটাই তো ষড়যন্ত্র।
–ষড়যন্ত্র! কিসের ষড়যন্ত্র? কে করেছে ষড়যন্ত্র?
–হ্যাঁ ষড়যন্ত্র। যেটা আপনার থানার একজন বিশ্বস্ত
সাধারণ পুলিশ অফিসার করেছে।যার নাম হারেজ।
–কিহ! কিন্তু ও…কেনো করলো এমন’টা?
–কারণ আপনার মেয়ের সর্বনাশ-কারীর মধ্যে ওনার
এক মাত্র ছেলেই ছিলেন, অন্যতম।কিন্তু এখন চিন্তার
তেমন কোনোই কারণ নেই? ওদের এতক্ষণে হয়তো
গ্রেফতারও করা হয়েছে।নিশ্চয়ই উপযুক্ত শাস্তি পাবে
তারা সবাই।
–কিন্তু এসব তুমি কি করে জানলে?
–মন দিয়ে তদন্ত করলে কোনো কিছুই অজনা থাকে
না, ওসি সাহেব। এবার একটু প্লিজ! আপনি বাহিরে
যান?সেরু ভাইয়ের সাথে আমি এখন, নিতান্তই একা
কথা বলতে চাই।
অতঃপর ওসি সাহেব নিশ্চুপ হয়েই চলে গেলো।তিনি
চলে যাওয়ার পর এহসানুল সেরু ভাইয়ের সামনে
এসে দাঁড়ালো। এবং বলল,
–তুমি কিন্তু খুবই বুদ্ধিমান।চাইলে খুনী হওয়ার বদলে
আমার মতো গোয়েন্দা পুলিশও হতে পারতে?
–চাইলেই সব কিছু সম্ভব হয় না স্যার।নিয়তি চেয়েছে
বিধায় আজ আপনি গোয়েন্দা পুলিশ অফিসার আর
আমি একজন খুনী।
–যে নিজের গর্ভধারণী মা এবং রক্তের আপন ভাইকে
খুন করতে দ্বিধা বোধ করে না, সে কি করে পরের মা
কে মৃত্যুর নিকটবর্তী স্থান থেকে বাঁচাতে পারে?এই ব্যাপারটা কিন্তু এখনও আমার নিকট ঝাপসা থেকে
পরিষ্কার হয়নি। মানুষ নিষ্ঠুর হয় জানতাম।কিন্তু এতটা
নিষ্ঠুর, জঘন্য মানুষ যে হতে পারে সেটা সত্যি বলতে
আমার জানা ছিলো না।তোমার কলিজা বলতে কিছুই
কি নেই?কেনো নিজের আপন মা-ভাই কে এভাবে খুন
করলে?
__ গাল বেঁকিয়ে একটু হাঁসলো সেরু ভাই। তারপর
বলল, “”
— আমি খুনী হতে চাইনি বাস্তবতা আমাকে খুনী হতে
বাধ্য করেছে।আমি মানুষ খুন করতে চাইনি,খুন হওয়া
ব্যক্তিরাই আমাকে বাধ্য করেছে, ওদের খুন করতে।
সারা দুনিয়ার মানুষ জানলেও আসলে সত্যিতো এটাই
ছিলো,যে ওনি আমার জন্মদাত্রী মা ছিলেন না।কখনো
না। আজ থেকে প্রায়ই অনেক বছর পূর্বে, ওনার স্বামী
যাকে আমি বাবা বলে ডাকতাম।নিজের প্রাণ বিপন্নে
রেখে তিনি আমায় বাচ্চা চুরির একটা মহা চক্র থেকে
উদ্ধার করেন। এবং নিজের ছেলে হিসেবে সম্মোধন
করে বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে ছিলেন। তখন আমি অনেক
ছোট ছিলাম। বলতে গেলে, দুধের শিশু। তিনি যতদিন
বেঁচে ছিলেন ততদিন আমার সুখ ছিলো কপালে।কিন্তু
আচমকা তার একটা নির্মম দূর্ঘটনায় মৃত্যু হয়।যারপর
দুঃখ নেমে আসে প্রতিটি ধাপে-ধাপে আমার জীবনে।
আমার পালিত মা প্রচুর টর্চার অত্যাচার করতো।তার
সাথে মাঝে-মধ্যে যোগ হতো ওনার আপন ছেলে রনি।
তবুও আপন ভাবে সব কিছু সয্য করে নিতাম আমি।
আমি চেয়ে ছিলাম পড়াশোনার ভিত্তিতে অনেক দূর
এগিয়ে যেতে কারণ বর্তমান পড়াশোনা ছাড়া কোনো
বিকল্প নেই।তাই আমি দু-জন মেয়েকে বাসায় প্রাইবেট
পড়াতাম। কারণ পড়াশোনার খরচ আমার পালিত মা
দিতেন না। তাছাড়া যেখানে খাবার জোটে’না কপালে
ঠিক মতো সেখানে এই বিষয় তো শত দূরেই অবস্থিত।
আলো আর আনিকা।যাদের আমি প্রাইবেট পড়াতাম।
তারা রোজ-ই পড়তে আসতো বাড়িতে। একটা দিনও
ওরা মিস করতো না। কারণ আমার পড়া ওদের কাছে
ভিষন ভালো লাগতো। ওদের মধ্যে একজন দ্বিতীয়
শ্রেণীতে এবং অপর জন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলো।
একদিন আমার অবর্তমানে ওরা বাড়িতে পড়তে এসে
ছিলো। অবশ্য ওদের কে বলতেও ভুলে গিয়ে ছিলাম।
যে আজ আমি বাসায় থাকবো না।সেই মূখ্য সুযোগ’টা
নিয়েই আমার পালিত মা এবং তার আপন ছেলে কিছু
অর্থের কাছে বিক্রি হয়ে ওই ছোট্ট নিষ্পাপ দুই মেয়েটি
কে বাড়িওয়ালার হাতে সমর্পণ করে দেয়। সুদীর্ঘ সাড়ে
এগারো বছর যাবত বাড়িওয়ালা ফরাদুল তালুকদার
কিডনি পাঁচারের বিরাট একটা চক্র চালিয়ে আসছেন।
যা কিন্তু আমার অজানাই ছিলো বটে। বাড়ি-ওয়ালা ফরাদুল তালুকদার আমার প্রিয় একজন মানুষ ছিলো
কারণ তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমায় পড়াশোনা নিয়ে
মোটিভেশন করতেন। তাছাড়া মাঝে-মধ্যে অর্থ-কড়ি
দিয়েও নানা ভাবে সাহায্য করতেন। এলাকাতেও তার অনেক নাম ডাক ছিলো। আসলে একটা কথা পদে
পদে বারবার সত্যই প্রমানিত হয়েছে, মানুষ চেনা বড়ই
কঠিন।দু-দিন পর ওদের লাশ পাওয়া গেছিলো একটা
ময়লা ফেলার বড় ডাস্টবিনে।যার সমস্ত দ্বায়ভার এসে
পড়ে ছিলো আমার উপর। এসব কিছু আমার নিকটে
তখনই পরিষ্কার হয়ে উঠেছিলো যখন বাড়িওয়ালার
এক মাত্র মেয়ে স্বয়ং এসে আমায় তার বাবার কুকীর্তি
সম্পর্কে জানিয়ে ছিলেন। বাড়িওয়ালার মেয়ে আরিহা
এটা কখনোই জানতেন না,যে তার বাবা এতটা খারাপ
মানুষ। কারন মায়ের মৃত্যুর পর আরিহা সেই ছোট
বেলা থেকেই বিদেশে নিজের মামাদের সাথে থাকতো।
দেশে বাবার কাছে বেড়াতে এসেছে এক সপ্তাহ হয়নি।
কিন্তু পরিশেষে তাকেও প্রান হারাতে হলো নিজ বাবার
হাতেই।যার খুনের অভিযোগ পর্যন্ত আমার উপর তুলা
হয়। সব দিক দিয়েই আমাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছিলো।
আমাকে ফাঁসানোর প্রচেষ্টা চলছিলো। পড়াশোনা সহ
আমার সব কিছু শেষ হয়ে যায়।ক্যারিয়ার গঠনের স্বপ্ন
ভেঙে যায়। ইচ্ছে গুলো তো অপূর্ণ-তাই রয়ে যায়। কি
করবো? কি করা উচিত? তখন কিছুই যেন আমার
মাথায় ধরতে চায়নি। আমাকে মারধরের পর পুলিশের
তত্ত্বাবধানে দিয়ে দেওয়া হয়। মূলত মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে। কিন্তু আমি সেখান থেকে পালিয়ে যাই। বেশ
কয়েকটা দিন, অপরাধী না হওয়া সত্যেও আমাকে গা
ঢাকা দিতে বাধ্য হতে হয়। ত্রিশ অক্টোবর ক্ষুদার্থ পেট
নিয়ে রাস্তা পারাপার হওয়ার সময় আমার এক্সিডেন্ট
হয়।দু-দিন ধরে সরকারি হাসপাতালের বারান্দায় পরে ছিলাম আমি। যন্ত্রণায় শুধুই কাতরাচ্ছিলাম। তখনও
কাউকে খুন করার চিন্তাধারা আমার মাথায় আসেনি।
কিন্তু যার বত্রিশ ঘন্টা পর আমি কোনো একটা ক্রমে
জানতে পেরেছিলাম, দিনাজপুর থেকে আমার খোঁজে
আমার ভালোবাসার মানুষ ঐশি এসেছিলো। মধ্যবিত্ত
পরিবার মেয়ে ছিলো ও কিন্তু আমার প্রতি ভালোবাসা
ওর তুখোর ছিলো।জমানো টাকার ভিত্তিতে দিনাজপুর
আট দিনের জন্য একটা টুরে গিয়েছিলাম। সেখানেই
অবশ্য প্রথম ওর সাথে আমার পরিচয়ের সুত্র-পাত
ঘটে।
সেদিন ঐশির সৌন্দর্যের প্রতি পালিত মায়ের আপন
সন্তান রনি এতটাই আকৃষ্ট হয়ে পরেছিলো, যে! ” সে
নিজেকে সামলে উঠতে না পেরে, ধর্ষণের মতো একটা ভয়াবহ অপরাধ করে ফেলে।যেটা ওর আপন মা যখন
বান্ধবীর বাসা থেকে এসে জানতে পারলো,তখন তিনি
কোনো কিছু না ভেবে চিন্তে নিজের ধর্ষক ছেলেকে
বাঁচানোর জন্য বাড়ি-ওয়ালার সাহায্য নিয়ে ঐশিকে শেষ-মেস খুন করার পর ওর লাশ ফেলে দেওয়া হয়
নর্দমার ময়লা জলে। তখন আর চুপ করে রইতে পারি
নি আমি। ক্ষণে ক্ষণে ওদের প্রত্যেক-কেই নৃশংস মৃত্যু
উপহার দেওয়ার জন্য ফন্দি আঁটতে লাগলাম এবং
নিজেকে ধীরে ধীরে গড়ে তুললাম। আমি এই সমাজ
কে পাল্টে দিতে চেয়েছিলাম। খারাপ মানুষদের ধ্বংস
করে দিতে চেয়েছিলাম। এমন একটা দল গড়তে চেয়ে
ছিলাম, যে দল যনজাট পরিষ্কার করবে। অন্যায়কারী
দের যোগ্য শাস্তি দিবে। মুখোশ-দারী মানুষদের উপরে
ফেলবে।
–তোমার বিশ্বাস্ত সহযোগী দেলোয়ার এবং শরীফুলের
কাছ থেকেও তুমি কিন্তু অনেক কিছুই লুকিয়েছো?
–হ্যাঁ।পরবর্তীতে ওরা সব জানতে পেরেছিলো।অবশ্য
আমিই বলেছিলাম।কিন্তু তবুও ওরা আমর সঙ্গ ছেড়ে
কোথাও যায়নি।
–সবি বুঝলাম।এখন এটা তুমি আমায় বলো, রিহানার
ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর বয়ফ্রেন্ডকে কেনো খুন করলে?ওর কি
কোনো দোষ ছিলো?কি ওর অপরাধ?কেনো ছল করে
ওকে ভয়ংকর এক ঔষুধ খাওয়ালে?যার বারোটা দিন
পর মারিয়ার সাথে রুম ডেট করতে গিয়ে, মাত্রাধিক
রক্ত ক্ষরণের জন্য ওর মৃত্যু ঘটে ছিলো?
— মারিয়ার বয়ফ্রেন্ড নারী পাচারের সাথে যুক্ত ছিলো।
তাই প্রাণ হারিয়েছে।
–আচ্ছা তাহলে শান্তার সাথে তোমার কিসের সম্পর্ক।
ওর বাবাকে কেনো খুন করলে? ওকে বিভিন্ন বিপদের
হাত থেকে কেনো বাঁচালে? শান্তাকে কেনো ওর মা খুন
করতে চেয়েছিলো?
“সেরু ভাই এবার একটু লড়ে-চরে বসলো।এবং বলল,
–শান্তা আমার ছোট বেলার বান্ধবী ছিলো। সেই ছোট্ট
বেলাতেই আমরা একে অন্যের থেকে আলাদা হয়ে
গেছিলাম। প্রাইমারি লেভেল পর্যন্ত আমার একসাথেই
পড়াশোনা করে ছিলাম। তারপর বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর
শান্তার সাথে আমার আর কোনো যোগাযোগ অথবা
দেখা বা সাক্ষাৎ হয়নি। কিন্তু আমি শান্তাকে ঠিকি মনে
রেখেছিলেন। ওর নাম-খানা প্রায়ই সময় আমার মনে
পড়তো। হয়তো আমার কথা শান্তার এখন তেমন মনে
নেই। সেই ছোট বেলার কথা, সবার মনে না থাকাটাই
স্বাভাবিক। তাছাড়া শান্তার বাবাকে আমি কেনো খুন করেছি জানেন, কারণঃ
|
তিনি ওই বাড়িওয়ালা ফরাদ তালুকদারের সহযোগী
ছিলেন। যে কিনা কুয়াকাটায় থেকেই কিডনি পাচার
সহ বিভিন্ন অবৈধ অপকর্মে লিপ্তে ছিলেন।অবশ্য ওনা
কে খুন করার সময়-ই আমি এটা জানতে সক্ষম হয়ে
ছিলাম, যে ওনার একমাত্র মেয়েই আমার সেই ছোট
বেলার বান্ধবী শান্তা। যাকে আমি কদিন পূর্বেও লঞ্চে
কুখ্যাত কন্ট্রাক্ট কিলারদের কবল থেকে উদ্ধার করে
ছিলাম।
|
তাছাড়া শান্তাকে তার নিজ আপন মা খুন করতে চান
এটা আমি তখনই জানতে পেরেছিলাম যখন সৌভাগ্য
ক্রমে শান্তার গর্ভ-ধারিণী মা- স্বয়ং আমাদেরই কোনো
এক লোককে নিজের মেয়েকে খুন করার জন্য ভুল
বসত কন্ট্রাক্ট দিয়ে ফেলে ছিলো।
অতএব এহসানুল বলল,
–বুঝলাম।তবে তুমি সেদিনকার চিঠিতে নিজেকে এক
জন কন্ট্রাক্ট কিলার হিসেবে কেনো উল্লেখ করেছিলে?তোমার কাজকর্ম গুলো তো সেগুলোর মধ্যে পরে না?
চাইলে তুমি অন্য ভাবেও শান্তাকে কিন্তু সাহায্য করতে
পারতে। তাছাড়া কালো রঙের খামের রহস্য ঠিক কি?
সব কিছু তুমি চিঠিতে কেনো উল্লেখ করো?
“খানিকটা হাঁসির সুরে প্রতি-উত্তরে সেরু ভাই বলল,
-রহস্য! আমি কখন,কিভাবে,কোথায় জড়িয়ে যাই।
সেটা নিজেও জানি না। আমি ভেতরে এক রকম,
বাহিরে অন্য রকম,তিন বেলা তিন রকম।
–শান্তাকে কেনো তার নিজ আপন মা খুন করতে চেয়ে
ছিলো, এটা কিন্তু এখনও ক্লিয়ার হয়নি?এই বিষয়ে কি
তুমি কিছু জানো?
— হ্যাঁ জানি।
–তাহলে বলো?
–অনেক দিন আগের কথাই বটে।শান্তার বিয়ে তার মা
ওনার এক নিকট-বর্তী পরিচিত লোকের ছেলের সাথে
ঠিক করে ছিলেন।কিন্তু ওই দিন শান্তা সোহানের সাথে
পালিয়ে গিয়ে ছিলো। যার ফল সরূপ সেদিন শান্তার
মাকে অনেক হেনস্তা অপমান সয্য করতে হয়েছিলো।
এর জন্য রাগ ক্ষোভ তার মনে সেই রয়েই গিয়েছিলো।
শান্তার বাবার মৃত্যুর পূর্বে তার সমস্ত ধন-দৌলত কিন্তু
শান্তার নামে লিখে দিয়ে ছিলেন।যা শান্তা হয়তো এখন
ও জানে না। এসব শান্তার মা তেমন একটা মেনে নিতে
পারেননি।তাছাড়া শান্তার বাবার সব ধনসম্পদি ছিলো বিভিন্ন অন্যায়, অবৈধ কাজ-কর্মের ভিত্তিতে গড়া।যা
শান্তার মা খুব ভালো করেই জানতো।অবশ্য তিনিও
কিন্তু ওনার স্বামীর সহযোগী ছিলেন।তার নামে এক কানা-কড়ি সম্পত্তিও লিখে না দেওয়াতে বেশ একটাই
ক্ষুব্ধ ছিলেন তিনি।যদিও বা পরবর্তীতে চট্টগ্রামের সেই
পুরনো বান্ধবীর বিভিন্ন উস্কানিমূলক কথায় আসক্ত
হয়ে শেষ-মেস নিজ মেয়েকে খুন করার নেশায় হিংস্র
হয়ে উঠেন। তবে এটা আমি এখনও জানি না শান্তার
মা এবং তার বান্ধবী কোথায়?
অতঃপর কিছুটা শ্বাস ছেড়ে এহসানুল বলল,
–শান্তার মা বর্তমান আমার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।
–কিহ! তাহলে এসব আমাকে জিজ্ঞেসা করার কি
কারণ?ওনার থেকেই তো জানতে পারতেন?
–ওনি বলার মতো অবস্থায় থাকলে তো জানতাম।
–মানে?
–ভয়াবাহ একটা গাড়ি দুর্ঘটনায় শান্তার মা কথা বলার
শক্তি ও কানে শোনার শক্তি দু-টোই হারিয়েছেন। এবং তার বান্ধবী ঘটনা-স্থলেই মারা গেছেন।
__কথা’গুলো বলার পর বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলো
এহসানুল।পরিশেষে আবার সে বলে উঠলো________
–তুমি যাদের, যাদের খুন করেছো, তারা প্রত্যেকেই
কোনো না কোনো ভাবে দোষী ছিলো।যদিও বা আইন
ছিলো।যন-জাট চাইলে আইনের সাহায্যেও পরিষ্কার
করতে পারতে। কিন্তু তা তুমি করো নি।আইন নিজের
হাতে তুলে নিয়েছো।একের পর এক খুন নির্দ্বিধায় তুমি
করেই গিয়েছো। জানি না তোমার কি হবে? হয়তো বা
ফাঁসিও হতে পারে?ভেবোনা আমার মাকে বাঁচানোর
জন্য তোমাকে আমি সাহায্য করবো।আইন সবার
জন্যই সমান।গল্পের শুরু’টা হয়তো তুমি করে ছিলে,
কিন্তু যার শেষ’টা স্বয়ং আমিই করলাম।
কথা-গুলো বলার পরপরই সেরু ভাইয়ের দিকে একটু
তাকালো এহসানুল। এই পজিশনেও সেরু ভাইয়ের
মুখে হাসি দেখে কেমন একটা লাগলো তার।পরিশেষে
এহসানুল চলে গেলো।অতঃপর:-
দেড় মাস পর সেরু ভাই কে চতুর্থ বারের জন্য কোর্টে
তোলা হলো। পরিশেষে রায় বের হলো আজ।ফাঁসির
নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ছয় মাস পর ফাঁসির কর্যক্রম
করা হবে। মন না চাইলেও কেনো যেন এহসানুল বেশ
একটা চেষ্টা করেছিলো, সেরু ভাইয়ের ফাঁসির সাজা
যাতে না হয়। কিন্তু সে পারেনি। তাছাড়া একদল সেরু
ভাইয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যে অভিযোগ তুলেছিলো।
অবশেষে ছয় মাস পর সেরু ভাইয়ের ফাঁসি কার্যকর
করা হয়।সেদিন এহসানুল সেখানে উপস্থিত ছিলো না।
কারণ সে ছুটিতে ছিলো।দু’দিন পর এহসানুলের বিয়ে।
এই নিয়ে বেশ ব্যস্ততাতেই ছিলো এহসানুল। কিন্তু সে
হয়তো কল্পণাও করতে পারেনি। স্বয়ং তার বিয়েতে
এতো বড় একটা কান্ড ঘটে যাবে। সদ্যই বিয়ে করা স্ত্রী
কে নিয়ে যখন শশুর বাড়ির দরজার চৌকাঠ পেরিয়ে
গাড়িতে উঠে ছিলো এহসানুল, তখন আচমকাই তার
স্ত্রী বমি করতে আরম্ভ করে। মুহুর্তেই পরিস্থিতি নির্মমে
পরিণত হয়।সবার চোখের সামনেই মারা যায় তার স্ত্রী। সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়,থমকে যায়।নিমিষেই বিয়ে বাড়ি লাটে উঠে যায়। খবর’টা দ্রতই বাতাসের তীব্র গতিতে
সব জায়গায় ছড়িয়ে পরে। সেদিনই রাত চারটা বারো
মিনিটের সময় এহসানুলের একজন সহযোগি ফোন
করে কিছুটা তাড়াহুড়োর কন্ঠে এহসানুলকে বলল,
–স্যার সেরু ভাই বেঁচে আছে!!!
— What!এটা কি আদোও সম্ভব?আমার মন মেজাজ
একদমই ভালো না।তার মাঝে এতো রাতে ফোন দিয়ে
মজা করছেন আপনি?
–না স্যার আমি মজা নয় সত্যি বলছি।ওই দিন সেরু
ভাইয়ের ফাঁসি হয়নি।সবি নাটক।একটা মহা চক্রান্ত
ছিলো।যেটা অনেক পূর্ব থেকেই পরিকল্পনা করা হয়ে
ছিলো।আমার বলতেও লজ্জা লাগছে, কয়েক জন
আইনের লোকও এই চক্রান্তের সাথে জড়িত ছিলো।
মূলত ওকে পালাতেও সাহায্য করেছে।তবে আমাদের
ডিপার্টমেন্টের কিছু দক্ষ ও বুদ্ধিমান গোয়েন্দা পুলিশ
খানিক্ষণ আগেই বেশ গভীর তদন্তের ভিত্তিতে সব
জানতে পেরেছেন।যারা এই চক্রান্ত,পরিকল্পনার সাথে
জড়িত ছিলো তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ-ই সঠিক জানে না সেরু ভাই
এখন কোথায়।
–সত্যিই আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।এটা কি ভাবে
সম্ভব হয়? I do not believe! আচ্ছা ওর দুই বিশ্বাস্ত
সহযোগী দেলোয়ার এবং শরীফুল ওরা কি জেলে-ই
আছে না পালিয়েছে?
–না স্যার ওরা কোথাও পালায়নি। তারা দুজন জেলেই
রয়েছে।
অতএব এহসানুল আর কিছু বলল না।ফোন কেটে
দিয়ে বিছানায় বসতে গিয়েও পারলো না। একের পর
এক চমক আর নিতে পারছে না এহসানুল। জানালার
এক সাইডে সেই কালো রঙের একটা খাম।বহু দিনপর
এরূপ খাম দেখতে পেলো এহসানুল। যা একটু শিউরে
তুললো তাকে। অতঃপর খামটা খুলে চিঠিটা বের করে
পড়তে আরম্ভ করলো এহসানুল।চিঠিতে লেখা ছিলো:
–হঠাৎ সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর এরূপ মৃত্যু নিতে পারছেন
না তাই তো? মনে মনে হয়তো ভাবছেন আমি খুন’টা করিনি তো?ওনার পূর্বেও একটা সংসার ছিলো।স্বামী
ছিলো যেটা হয়তো আপনি জানেন না অথবা আপনার
থেকে লুকানো হয়েছে।ওনার পূর্বের স্বামীর বৃদ্ধ মাকে
খুন করেছিলেন বিধায় হারিয়ে ফেলেছে প্রান-বোমরা।
প্রিয় ভাইয়া!””
শেষে ভাইয়া বলাতে নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন তাই না?
মনে আছে ছোট বেলাকার কথা!আপনার একটা ছোট
ভাই হয়েছিলো?দু-তিনেক দিন পর যাকে হাসপাতাল
থেকে কেউ চুরি নিয়ে গেছিলো?যদি বলি আমি সেই?
তাহলে বিশ্বাস করবেন?নিচে আমার নাম-খানা কিন্তু
নিজের রক্ত দিয়েই লেখা!চাইলে ডিএনএ টেস্ট করতে
পারেন।
~সেরু ভাই।
চিঠিটা পড়ার পর অবাকের শেষ সীমানা মুহূর্তেই
অতিক্রম করে ফেললো এহসানুল।যার পরের দিন-ই
ইচ্ছে না থাকা সত্যেও ডিএনএ টেস্ট করায় এহসানুল।
এই মুহূর্তে রিপোর্ট হাতে নিয়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে
সে।কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজেও যেন খুঁজে পাচ্ছে না।হাত থেকে রিপোর্ট ফ্লোরে ফেলে দিয়ে মনে মনে
এহসানুল শেষ-মেস বলেই ফেললো,
–তার মানে সত্যিই ও আমার রক্তের আপন ভাই!
___হঠাৎ আচমকাই আট বছরের একটা ছেলে এগিয়ে
এসে অবশ্য এহসানুল কে উদ্দেশ্য করেই বলল,
— আঙ্কেল,আঙ্কেল,এই খাম’টা একটা লোক আপনাকে
দিয়েছে।
কথাটা শুনতে দেরি হলেও ছেলেটির হাত থেকে
খামটা নিতে একটুও সময় ব্যয় করলো না এহসানুল।
অতএব দ্রুতই খামটা ছিঁড়ে চিঠিটা বের করলো সে।
চিঠিতে মাত্র কয়েক’টা কথাই লেখা ছিলো,যেগুলো
হলোঃ-
“”—অবাক হলেন রিপোর্ট দেখে?আপনি আমার ভাই,
আপনার মা আমার,নিজ আপন গর্ভধারণী মা।সেটা
আমি মূলত অনেক আগে থেকেই জানতাম।যেটা মন
শতবার চাইলেও বলিনি কাউকে।
|
|
|
সেরু ভাইয়ের গল্প,সেরু ভাইয়ের কাহিনি কখনও শেষ
হওয়ার নয়।
___________________সমাপ্ত_________________