#আমি_ফাইসা_গেছি(১৯)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
তোড়ার আঙুল কেটে যাওয়ায় কুশান আজ আর ভার্সিটিতে গেলো না।সে তোড়ার সেবা করতে লাগলো।যেহেতু তোড়া এখন তার ডান হাত দিয়ে কোনো কাজই করতে পারবে না সেজন্য আজ তো তোড়ার কুশানকে ভীষণ প্রয়োজন।
এই পর্যন্ত ঠিক ছিলো।
কিন্তু তোড়ার আঙুল কেটে যাওয়ার খবর তার পরিবারের কাছে কুশান এমন ভাবে বর্ণনা করেছে যে তোড়ার বাবা, মা, দাদী,চাচা,চাচী,কাজিন সবাই এলো তোড়াকে দেখার জন্য।তোড়া নিজেও জানে না তার হাতের এতই খারাপ অবস্থা হয়েছে।সে তো জানে সামান্য একটু কাটা গিয়েছে,আর তাতে স্যাভলন দিয়ে ব্যান্ডেজ করার ফলে আর কোনো অসুবিধায় হচ্ছে না তার।না কোনো রক্ত পড়ছে,না কোনো ব্যাথা আছে।
তোড়ার ফ্যামিলির লোকজনও ভীষণ অবাক হলো।তারা তো ভেবেছিলো তোড়ার হাত বাজে ভাবে কেটে গিয়েছে।
চামেলী বেগম তোড়ার কথা শুনে পুরো রাস্তা কান্দাকাটি করতে করতে এসেছেন।তার একটিমাত্র মেয়ে।কেনো যে তাকে আগেই বিয়ে দিতে গেলো।যে মেয়ে নিজের বাড়িতে এক গ্লাস পানি ঢেলে খায় নি সে আজ শশুড় বাড়ি গিয়ে বাবুর্চিদের মতো দিন রাত রান্না করছে।এখন কি হবে তার মেয়ের?এই হাত যদি ভালো না হয় সে কিভাবে চলবে এখন?গোলাপ সাহেব অনেক বোঝানোর ফলে চামেলি বেগম চুপ হয়ে গেলো।সবাই বেশ চিন্তার মধ্যে ছিলো। তারা যখন সবাই কুশানদের বাড়ি এসে তোড়ার আঙুলে ব্যান্ডেজ করা দেখলো চামেলি বেগম একটা চিৎকার করে উঠলো। তিনি ভাবলেন সত্যি সত্যি তোড়ার আঙুল টা মনে হয় পুরাই কাটা গিয়েছে।চামেলি বেগমের সাথে সাথে তোড়ার দাদী আর আব্বুও ভয় পেয়ে গেলেন।
তোড়া সবাইকে এভাবে দেখে নিজেও আতংকের মধ্যে পড়ে গেলো।হঠাৎ সবাই তার শশুড় বাড়ি কেনো?একটিবার তো একটা খবর দিতে পারতো?
চামেলি বেগমের এমন কান্দাকাটি দেখে আর তার পরিবারের বাকি সদস্যদের মুখের দিকে তাকিয়ে সে না হেসে থাকতে পারলো না।তোড়া হাসতে হাসতে বললো,তোমরা এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো আমার দিকে? কি হয়েছে আমার?
চামেলি বেগম সেই কথা শুনে তোড়ার পাশে এসে বসলো আর বললো,মা এখন কেমন আছিস?
তোড়া সেই কথা শুনে বললো,আমি তো ভালোই আছি।কিছুই হয় নি তো আমার।
–তুই বুঝবি না মা তোর কি হয়েছে?এই বলে চামেলি কুশানকে বললো,
বাবা এখন কি অবস্থা? ডাক্তার কি বলেছে?
কুশান সেই কথা শুনে বললো, আম্মু মারাত্নক কিছু হয় নি।সেজন্য ডাক্তার ডাকার প্রয়োজন পড়ে নি।
–মানে কি কুশান?ডাক্তার ছাড়া কিভাবে ট্রিটমেন্ট করলে তুমি?
তোড়া তখন চামেলি বেগমকে বললো, বিশ্বাস করো আম্মু।আমি ঠিক আছি।শুধু একটু ছিলে গিয়েছে।এতে ডাক্তার ডাকতে হবে কেনো?আর তোমরা সবাই এতো ভয় পাচ্ছো কেনো?
শেষ মেষ তোড়া ব্যান্ডেজটি খুলেই দেখালো।
সামান্য একটু ছিলে গেছে তার। ডাইনিং টেবিলে বসে গল্প করা কুশান আর যুথির দিকে তাকিয়ে সবজি কাটতে গিয়ে এই অবস্থা হয়েছে তোড়ার।
এতোক্ষন দিয়ে সবার বিশ্বাস হলো কিছুই হয় নি তোড়ার।হেনা বেগম হঠাৎ কুশানের কান টেনে ধরে বললো,এই ফাজিলের ফাজিল!কি বলেছিস তোর শশুড়কে?তোড়ার নাকি আঙুল পুরোটাই কেটে গিয়েছে।
–দাদী ব্যাথা পাচ্ছি আমি।ছেড়ে দাও।
–ব্যাথা পাওয়ার জন্যই তো ধরেছি।এইভাবে কেউ বলে?সবাই তো একদম ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
কুশান সেই কথা শুনে বললো আসলে দাদী ও যেভাবে চিৎকার করে উঠেছিলো আর যেভাবে ওর আঙুল বেয়ে বেয়ে রক্ত পড়ছিলো তা দেখে আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।আমি ভেবেছিলাম ওর মনে হয় আঙুল টা পুরোই কেটে গিয়েছে।সেজন্য আপনাদের খবর দিয়েছিলাম।পরে তো নিজেরাই বলতেন এতো কিছু হয়ে গেলো আর আপনাদের জানালাম না।
গোলাপ সাহেব আর চামেলি বেগম কুশানের এমন কর্মকান্ডে হেসে উঠে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন।তারা কাকে কি বলবেন বুঝতেই পারছেন না।সত্যি কুশান এতো ভালোবাসে তাদের মেয়েকে?সামান্য একটু কেটে যাওয়ায় সবাইকে জড়ো করেছে।আর সেই ছেলেটাকে তারা ভুল বুঝেছিলো এক সময়।
এদিকে কামিনী চৌধুরী তার ছেলের এমন কর্মকান্ড দেখে আর তোড়ার পরিবারের সবাইকে এভাবে আসা দেখে মুখ ভেংচিয়ে বললো,আর কত ঢং দেখবো খোদা!এই টা দেখার জন্য বুঝি বাঁচিয়ে রেখেছিলে আমাকে?আমার ছেলেটার এতো অধঃপতন হয়েছে?সামান্য হাত কাটাকে কেন্দ্র করে এতো কাহিনী শুরু হয়ে গেলো?ও মোর আল্লাহ বাঁচাও আমাকে।এই বলে কামিনী রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।আর নিজের রুমে গিয়ে চুপটি করে বসে রইলেন।
হেনা এবার স্বর্ণাকে বললো চল আমরাও একটু বাহিরে থেকে ঘুরে আসি।এই প্রথমবার নাতনির বাড়ি আসলাম।একটু ঘুরে ঘুরে দেখি চারপাশ।
— তুমি যাও দাদী।আমি একটু আমাদের দুলাভাই এর সাথে মজা করি।এই বলে স্বর্ণা কুশানের হাত ধরে বললো,
ভালো আছেন দুলাভাই?
কুশান স্বর্ণাকে তার এভাবে হাত ধরা দেখে তাড়াতাড়ি করে হাত সরিয়ে নিয়ে বললো,জ্বি ভালো আছি।তা আপনি ভালো আছেন?
আপনি করে বলায় হেনা বেগম হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।আর মনে মনে ভাবলেন তোড়ার জামাই যে এতো সহজ সরল হবে ভাবতেই পারছি না।আমাদের তোড়া কত চঞ্চল?আর কুশান হইছে একদম তার উলটো।
স্বর্ণা একদম হা হয়ে রইলো।সে ভাবলো দুলাভাই এর সাথে একটু মজা করবে কিন্তু তার দুলাভাই তো তাকে আপনি বলে মজা করা থামিয়ে দিলো।
তোড়া তখন কুশানকে বললো,ওকে আপনি করে বলছো কেনো?
স্বর্ণা আমার ছোটো হয়।তোমার ছোটো শালি সে।
–ওহ,সরি।বুঝতে পারি নি।
–ঠিক আছে দুলাভাই।কিছু মনে করি নি।ভুল হতেই পারে।তাছাড়া যেভাবে দেখতে এসেই হঠাৎ করে তোড়া আপুর বিয়েটা হয়ে গেলো না চেনারই কথা।আপনার সাথে তো ঠিক করে এখনো পরিচয়ই হয় নি কারো।
কুশান মাথা নাড়িয়ে বললো জ্বি।সে তখন বললো, তোমরা গল্প করো আমি একটু আসছি।
স্বর্ণা তখন আবার কুশানের হাত ধরে বললো আরে দুলাভাই কই যাচ্ছেন এভাবে?বসেন একটু।আপনার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করি।
কুশান তখন তোড়ার দিকে তাকালো।
তোড়া কুশানের মুখ চোখ দেখে অন্য মুখ হলো।আর মিটিমিটি করে হাসতে লাগলো।কারণ স্বর্ণা তার হাত ধরায় কুশান ভীষণ লজ্জা পাচ্ছিলো।
কুশান মেয়ে মানুষ দেখলে আসলেই দশ হাত দূরে দূরে থাকে।
সেই লাজুক কুশান তার সাথে প্রেম করেছে এক বছর।ব্যাপার টা কিন্তু বেশ অদ্ভুত।কুশানের ফ্যামিলির কেউ শুনলে জীবনেও এটা বিশ্বাস করবে না।তবে কুশান কে তোড়া এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে কুশান জানায় এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র ফোনে ফোনে প্রেম টা শুরু হওয়ার কারণে।কারণ কুশান তোড়ার সাথে ফোনে কথা বলতে বলতেই ভালোবেসে ফেলে।সেজন্য প্রেম টা কন্টিনিউ করতে পেরেছে।সামনাসামনি সে তো কোনো মেয়ের চোখের দিকেও তাকাতে পারে না।
কুশানকে এভাবে দূরে দূরে সরতে দেখে স্বর্ণা বললো, আপনি কি লজ্জা পাচ্ছেন দুলাভাই?কই শালির সাথে একটু মজা করবেন,মজার মজার গল্প করবেন তা না করে চুপচাপ বসে আছেন?
কুশান তখন বললো আমার একটু দরকারী একটা কাজ আছে।আমি পরে এসে গল্প করবো।এই বলেই কুশান চলে গেলো।
স্বর্ণা এবার তোড়ার কাছে গিয়ে বললো,আপু?দুলাভাই কি একটু বেশিই লাজুক।
তোড়া একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো হুম।
স্বর্ণা সেই কথা শুনে বললো সো সেড।দুলাভাই যদি এমন লাজুক হয় তাহলে তোকে সে ভালোবাসে কেমনে না মানে বোঝাতে চাচ্ছিলাম সে তোকে আদর করে কেমনে?না সেটাও পারে না?
তোড়া স্বর্ণার মুখে এমন কথা শুনে ওর মাথায় একটা চড় দিয়ে বললো, বেশি পেকে গেছি দেখছি তুই?কি সব বলছিস?
–চড় দিলি কেনো আমাকে?আমি খারাপ কি বললাম?দুলাভাই রোমান্টিক না আনরোমান্টিক সেটা শুধু জানতে চাচ্ছি।
তোড়া সেই কথা শুনে বললো রোমান্টিক আছে?
স্বর্ণা তখন অবাক হয়ে বললো মানে?
–হ্যাঁ।মানে আবার কি?
–কিন্তু ওনাকে দেখ তো বোঝা গেলো না।উনি রোমান্টিক একজন মানুষ, সেটা আমার বিশ্বাস হয় না।
তোড়া তখন আবার স্বর্ণার মাথায় একটা চড় দিলো আর বললো,ও কি তোর সামনে বউ এর সাথে রোমান্স করবে?যার সাথে করার দরকার তার সাথে ঠিক করে।অন্য মানুষ দের সামনে হাবলু,তবে আমার কাছে একজন রোমান্টিক মানুষ সে।
স্বর্ণা সেই কথা শুনে তোড়াকে জড়িয়ে ধরে বললো সত্যি বলছিস আপু?ইসঃ আমার জামাই টাও যদি এমন হতো।সবার সামনে এমন ভাবে থাকবে যে কিছুই বোঝে না সে, আর আমার সাথে ঠিকই রোমাঞ্চ করবে।
জানি না কি আছে কপালে আমার।তবে অন্য দিক দিয়ে পারফেক্ট হোক বা না হোক শুধু একটু রোমান্টিক হলেই চলবে।
ঠিক সেই সময় সুমন আর সনিয়া ভাবি ভাবি বলে রুমে প্রবেশ করলো।
সনিয়া তোড়ার পাশে বসলো আর সুমন দাঁড়িয়ে থেকেই বললো, কি হয়েছে ভাবি তোমার?বাসায় এতো লোকজন কেনো?
–কই কি হয়েছে?কিছুই হয় নি।শুধুমাত্র একটু ছিলে গেছে।আর তাতে তোমার পাগল ভাই সবাইকে বলেছে আমার আঙুল একদম হাত থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে।আর সেটা শুনে সবাই এভাবে দেখতে এসেছে আমাকে।
সুমন তোড়ার কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো আহারে! আমার ভাইটা যে তোমাকে এতো বেশি কেয়ার করে সত্যি আমরা বুঝতে পারি নি।কই আমার বউ সোহাগী ভাই টা?এই বলে সুমন এদিক ওদিক তাকিয়ে কুশানকে খুঁজতে লাগলো। হঠাৎ সুমনের স্বর্ণার দিকে চোখ গেলো।আর স্বর্ণার দিকে চোখ যেতেই সুমন একদম লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।মুহুর্তের মধ্যে সুমনের হাস্যোজ্জ্বল মুখটি মলিন হয়ে গেলো।
স্বর্ণা হঠাৎ করে সুমনকে বললো আমাকে কি আপনি চিনতে পেরেছেন?
সুমন ডাইরেক্ট বললো না তো।আপনাকে আমি কিভাবে চিনবো?
সুমন বেশি ভাব দেখাতে গিয়ে আরো বেশি ধরা খেয়ে গেলো।
কারণ স্বর্ণা তখন বিস্তারিত ভাবে বলতে লাগলো তাদের প্রথম কোথায় দেখা হয়েছে?যে দিনটির কথা সুমন আজও ভোলে নি।এরকম দিন মনে হয় তার জীবনে কোনোদিন আসে নি আর আসবেও না।সুমন আর বেশিক্ষন থাকলো না তোড়ার রুমে।সনিয়াকে রেখেই রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
তোড়া তখন স্বর্ণাকে বললো, কি হয়েছে রে স্বর্ণা?সুমন তোকে দেখে ওভাবে চলে গেলো কেনো?
স্বর্ণা তখন হাসতে হাসতে বললো আপু যেদিন তোকে সবাই দেখতে গিয়েছিলো সবার যে একসাথে পেট খারাপ হয়েছিলো ভুলে গেছিস সেটা?
–ভুলি নি তো?কি হয়েছে?
স্বর্ণা তখন বললো এই ছেলেটি তার মায়ের সাথে আমাদের ওয়াশরুমে গিয়েছিলো।কিন্তু আব্বু ওদের আগেই ওয়াশরুমে থাকায় ইনি বাচ্চাদের মতো বেশ কান্নাকাটি করছিলেন আর ওনার মাকে চিৎকার করে বলছিলেন তাড়াতাড়ি একটা ওয়াশ রুমের ব্যবস্থা করো।আমার না ওনার কান্দাকাটি দেখে ভীষণ হাসি পাচ্ছিলো সেদিন।সেজন্য ওনার ফেস টা বেশ ভালোভাবেই মনে আছে আমার।
তোড়া সেই দিনের কথা মনে করে নিজেও হেসে উঠলো।কি একটা অবস্থা হয়েছিলো সবার?শেষমেষ বুদ্ধি করে সে তার পরিবার কে অপবাদ আর অপমানের হাত থেকে বাঁচিয়েছে।
সোনিয়া নিজেও হো হো করে হেসে উঠলো।সেদিন সত্যি তার সুমন ভাইয়ের এমন নাজেহাল অবস্থা দেখে তারও ভীষণ হাসি পাচ্ছিলো।শুধু সুমন নয় পরিবারের সবার অবস্থা একদম নাজেহাল হয়ে গিয়েছিলো।
অন্যদিকে কুশান তো একদম ভয়ের মধ্যে ছিলো।এই বুঝি তোড়া তাদের প্রেমের কথা প্রকাশ করে।আর তার বাবা মা রাগ করে বাসা থেকে বের করে দেয় তাকে।
সোনিয়া আর স্বর্ণা গল্প করতে করতে দুইজন বেশ ফ্রি হয়ে গেলো।তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গল্প করতে লাগলো।আর গল্প করতে করতেই একসাথে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
ওরা চলে যাওয়ার পর তোড়া বেড থেকে উঠে কুশানকে খুঁজতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো না জানি কুশান কই চলে গেলো?
হঠাৎ কুশান কই থেকে যেনো পাখির মতো উড়ে এসে তোড়াকে বেলকুনির দিকে টেনে নিয়ে গেলো।হঠাৎ আকস্মিক ভাবে পিছন দিক থেকে তোড়াকে ধরায় তোড়া একদম চমকে উঠলো আর নিজের বুকে থু থু ছিটিয়ে দিয়ে বললো,
এইভাবে কেউ ধরে নাকি কুশান।আমি তো একদম ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
কুশান তখন তোড়াকে জড়িয়ে ধরে বললো আমি ছাড়া আর কার সাহস আছে তোমার ধরার?
তোড়া তখন বললো কি জন্য এখানে নিয়ে আসলে?কেউ দেখলে কি বললে?
–আমার বেলকুনিতে কে আসবে?এই বলে কুশান তোড়ার ঘাড়ে তার মুখ রেখে বললো,
এখন কি ব্যাথা একটু কমছে তোড়া?
তোড়া সেই কথা শুনে বললো আচ্ছা কুশান!তুমি এরকম পাগলামি টা কেনো করছো বলো তো?আমার কত টুকু কেটে গিয়েছে?সামান্য একটু কেটেছে?আর তুমি যে কান্ড শুরু করেছো না জানি সত্যি সত্যি আঙ্গুল টা কেটে পড়লে কি করতে?
কুশান সেই কথা শুনে বললো তখন আমি আর ঠিক থাকতে পারতাম না তোড়া?তোমার একটু ব্যাথা লাগলেই কেনো জানি আমার বুকের ভিতর টা চড়াৎ করে ওঠে।মনে হয় ব্যাথা টা তুমি পাও নি আমি পেয়েছি।এমন কেনো হয় বলতে পারো?
তোড়া তখন বললো, সামান্য ব্যাথা পাওয়াতেই তোমার যখন এতো কষ্ট হয় তাহলে যদি আমিই না থাকি তখন কি হবে?
কুশান তোড়ার মুখে এই কথা শোনার সাথে সাথে তার মুখ টিপে ধরলো।আর কোনো কথা না বলে মাথা নাড়িয়ে বললো, আর যেনো না শুনি এমন কথা।তুমি না থাকলে আমিও থাকবো না।তুমিহীনা এই শূন্য জীবন দিয়ে আমি করবো টা কি?
তোড়া কুশানের এমন কথা শুনে কিছুক্ষন ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।আর ভাবতে লাগলো সে কত খারাপ আচরণ করে কুশানের সাথে?একটু রেগে গেলে মারধরও করে।আর সেই কুশান তাকে কত ভালোবাসে?কুশান আসলেই তোড়াকে অনেক অনেক ভালোবাসে।কিন্তু সে তার অনুভূতি পুরো টা প্রকাশ করতে পারে না।মুখ ফুটিয়ে বলতে পারে না তোড়া আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।আমি সত্যি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি।
হঠাৎ রুমের মধ্যে টুনি চলে আসলো।সে তোড়া ভাবি বলে বলে ডাকতে লাগলো।
তোড়া টুনির কথা শোনামাত্র তাড়াতাড়ি করে কুশানকে ছেড়ে দিয়ে তার রুমে চলে গেলো আর বললো কি হয়েছে রে?ডাকছিস কেনো?
টুনি তখন বললো, ভাবি আপনার যে বাড়ি থেকে লোকজন এসেছে তাদের জন্য খাবারদাবার করতে হবে না?কি কি নাস্তা বানাবো?
কুশান টুনির কথা শুনে ওকে ধমক দিয়ে বললো, মেহমানের জন্য কি কি নাস্তা রেডি করতে হয় তা তুই জানিস না?সেটার জন্যও কি তোর ভাবির কাছে আসতে হবে?
টুনি তখন বললো আমাকে এতো ধমক দিয়ে কথা বলেন কেনো কুশান ভাইয়া?খালামনি বললো তোর ভাবিকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর তার মা বাবার জন্য কি কি আইটেম করবে?সেজন্য জিজ্ঞেস করতে আসলাম।
তোড়া তখন কুশানের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,এই তুমি কিন্তু টুনির সাথে সবসময় ধমক দিয়েই কথা বলো।আমি নিজেও শুনেছি।ও তো ভালো কথা বলার জন্যই এসেছে।এই চল।এই বলে তোড়া টুনিকে নিয়ে চলে যেতে ধরলো।
কুশান তখন বললো তুমি এই হাত নিয়ে রান্না করবে তোড়া?
–হ্যাঁ করবো।আমার কোনো অসুবিধা হবে না কুশান।এই বলে তোড়া টুনিকে সাথে করে নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো।তোড়ার পিছু পিছু কুশানও যেতে ধরলে তোড়া বললো,
তুমি আবার এখানে আসছো কেনো?তোমাকে কেউ রান্নাঘরে দেখলে কি বলবে?
–না মানে তুমি রান্না করলে তো হাতে ব্যাথা পাবে।সেজন্য বলছিলাম,
তোড়া তখন বললো কুশান আমি রান্না করবো না।ওরা করবে আমি শুধু দেখিয়ে দিবো।এতে আমার কোনো কষ্ট হবে না।তুমি এখন যাও তো।
হঠাৎ সুমন এসে বললো, ভাবি এই দিকে একটু এসো তো।
কুশান তখন এগিয়ে এসে বললো, কি দরকার ওর সাথে?
–সেটা আমি ভাবিকেই বললো।তোকে বলতে যাবো কেনো?
এই বলে সুমন তোড়ার কাছে গিয়ে বললো,সোনিয়া কোথায় ভাবি?ওকে দেখছি না যে?
–স্বর্ণার সাথে কই যে গেলো?
–স্বর্ণা?তোমার ওই কাজিন টার নাম বুঝি?
–হ্যাঁ।
–দূর কি এক বিপদে পড়লাম বাবা।যতই চাচ্ছি ওই মেয়ের সামনে আর যাবো না ততই যেতে হচ্ছে আমাকে?
সুমন কে বিড়বিড় করা দেখে তোড়া বললো, কিছু বললে তুমি?
–না ভাবি।এই বলে সুমন চলে গেলো।
?
তোড়ার মা বাবারা সেই কখন এসেছে এখন পর্যন্ত তাদের কে এক গ্লাস পানি পর্যন্ত দেয় নি কেউ।কামিনী তো মেহমান দেখেই তার নিজের রুমে গিয়ে বসে থাকলো।এতোদিন সারাক্ষণ পিছু পিছু থাকে আজ একদম হাত পা গুটিয়ে বসে আছে নিজের বিছানায় আর চারদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।কামিনী এমনই।তিনি নিজে কখনোই এক গ্লাস পানি ঢেলে খান না।আর করবেন মেহমানের সেবা?কামিনী এতোদিন শুধুমাত্র কুশানের দেখভালো করলেও তোড়া আসার পর থেকে সেটুকুও আর করেন না।তিনি তো বসে থেকে শুধু ভাবতেছেন কুশানের ভবিষ্যৎ নিয়ে।কুশান তো দুইদিনেই একদম বউ পাগল হয়ে গেছে ভবিষ্যৎ এ যে আর কি কি করবে কে জানে?
চলবে,