আমি_ফাইসা_গেছি(২২)

0
788

#আমি_ফাইসা_গেছি(২২)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

“ও মা গো,কি হলো আমার?আমি হাঁটতে পারতিছি না কেনো?এই বলে জোরে জোরে চিল্লাতে লাগলো কুশান।কুশানের কন্ঠ শুনে সবার আগে কামিনী দৌঁড়ে গেলো রুমে।আর জিজ্ঞেস করলো,
বাবা কি হয়েছে তোর?এতো জোরে চিৎকার করলি কেনো?
ধীরে ধীরে সবাই এগিয়ে আসলো।
জারিফ চৌধুরীও এসে বললো, কি হয়েছে বাবা?সোনিয়া,সুমন ও বার বার জিজ্ঞেস করতে লাগলো ভাইয়া কি হয়েছে?
কুশান সবাইকে এমন বিচলিত দেখে বললো কিছুই হয় নি আমার।এমনিতেই চিৎকার দিয়ে দেখলাম আমাকে কে কত টা বেশি ভালোবাসে?আম্মু যে সবচাইতে আমাকে বেশি ভালোবাসে তা আমি আগে থেকেই জানতাম।কিন্তু আজ দিয়ে আরো বেশি ক্লিয়ার হয়ে গেলাম।এই বলে কুশান তার আম্মুকে জড়িয়ে ধরলো।

আসলে কুশান দেখতে চাইছিলো তার আম্মু সত্যি সত্যি অভিনয় করছিলো কিনা?যদি কামিনীর পায়ে ব্যাথা থাকতোই তাহলে তো সে এভাবে দৌঁড়ে আসতে পারতো না।

ইরা এবার কুশানের কাছে গিয়ে বললো, ভাই তুই হলি আমাদের সবার আদরের।তোকে সবাই অনেক ভালোবাসে ভাই।এইভাবে কখনো মজা করবি না।
মিরা আর লিরাও সেম কথা বললো।
কুশান সবার কথা শুনে বললো আমি আসলে অনেক লাকি এরকম একটা পরিবারে জন্মগ্রহণ করে।যে পরিবারে আমাকে সবাই পাগলের মতো ভালোবাসে।

কামিনী তখন কুশান কে বললো এরকম ফান আর কখনোই করবি না বাবা।তোর চিৎকার শুনে তো আমি হার্ট অ্যাটাক করতে ধরেছিলাম।আমার কলিজা সোনা টা।
কুশান তখন বললো আসলে আমাদের পরিবার টা সবার জন্য একটা আদর্শ পরিবার।এইরকম পরিবার যেনো সবার হয়।বাট,,,,বলেই থেমে গেলো কুশান।

–বাট?কি বলতে ধরে থেমে গেলি বাবা?

কামিনীর এমন প্রশ্ন শুনে কুশান বললো,আমি আবার বলছি, এইরকম পরিবার যেনো সবার হয়,বিশেষ করে এই রকম আম্মু যেনো সবার ঘরে ঘরে থাকে, আর এই রকম বোন ও প্রতিটা ভাই এর যেনো হয় বাট এরকম একটা পরিবার যেনো কোনো মেয়ের শশুড়বাড়ি না হয়,এরকম যেনো শাশুড়ী কারো না হয়,আর এমন ননদ যেনো কোনো মেয়ের সংসারে না থাকে।

কুশানের মুখে এরকম কথা শুনে সবাই ভীষণ আশ্চর্য হয়ে গেলো।বিশেষ করে কামিনী আর তার মেয়েরা। ইরা,মিরা,লিরা শোনামাত্র একসাথে এগিয়ে এসে বললো,
ভাই,তোর মাথা কি ঠিক আছে?এইমাত্র প্রশংসা করলি আবার এই মাত্র নিন্দা করছিস।ব্যাপার টা ঠিক বুঝলাম না।
কুশান তখন বললো এখানে না বোঝার কি হলো আপু?তোরা যে সবাই আমাকে কত টা ভালোবাসিস সেটা তো অস্বীকার করছি না আমি।সেজন্যই তো বললাম এরকম বোন প্রতিটা ভাই এর যেনো হয়।কিন্তু তোরা কি কেউ আমার বউ কে ভালোবাসিস?সেও তো এখন এই পরিবারেরই একজন সদস্য। তবুও কেনো তাকে হিংসার চোখে দেখিস তোরা?আমি তো আর অন্ধ না।দেখি তো নিজের চোখ দিয়ে।তোড়ার মতো একজন রাগী আর জেদি মেয়ে নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করে তোদের সাথে ভালো আচরণ করে মন জয় করার চেষ্টা করছে।তারপরেও ওকে তোরা নানা ধরনের কথা শোনাস।কেনো?উত্তর দে?

ইরা,মিরা,লিরা তিনজনই চুপ হয়ে গেলো।কারো মুখে কোনো কথা নেই।তবে তারা যে নিজের দোষ টা দেখতেই পারছে না।বরং উলটো মনে মনে ভাবছে তাদের ভাই সত্যি চেঞ্জ হইছে।বউ এর হয়ে আমাদের কে অপমান করছে।

কামিনী এবার এগিয়ে এসে বললো, হঠাৎ এরকম প্রশ্ন কেনো করছিস কুশান।আমি নিশ্চিত এসব তোর মনের কথা নয়।তোকে নিশ্চয় কেউ কানপড়া দিয়েছে।তা না হলে তুই তো এভাবে আমাদের অপমান করার সাহস পেতি না।

–কানপড়া?কিসের কানপড়া?আম্মু তুমি কি এখন সবার সামনে সত্য টা বলতে বলছো আমাকে?আমি যদি বলা শুরু করি তখন কিন্তু আর থামবো না।প্লিজ আম্মু ভালো হয়ে যাও।তোড়াকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসো।দেখবে সে তোমাদের আরো বেশি ভালোবাসবে,আরো বেশি আদর যত্ন করবে।

কামিনী কুশানের কথা শুনে একদম নিশ্চুপ হয়ে রইলো।

কুশান তখন কামিনী কে আবার জড়িয়ে ধরলো আর বললো,আম্মু,আমি বলি না কিছু তোমাদের সবার মন খারাপ হবে দেখে।তাছাড়া আমি চাইতাম না তোড়ার সামনে তোমাদের ছোটো করতে।আমি যে তোমাদের সবাইকে যথেষ্ট রেসপেক্ট করি।এজন্য সবার উদ্দেশ্যে ওয়ার্নিং দিলাম,তোড়া যেহেতু এ বাড়ির একজন সদস্য আর আমার বউ সেহেতু ওর সাথে সবাই ভালো আচরণ করবে।শুধু তোড়া না,ওর ফ্যামিলির লোকজনের সাথেও তোমাদের ভালো ব্যবহার করা উচিত।তোমরা আমাকে যেভাবে ভালোবাসো,তোড়া আর তার ফ্যামিলির লোকজনকেও সেভাবে ভালো বাসতে হবে।আমি সংসারে কোনো অশান্তি চাই না।আমি শান্তি চাই, শান্তি।

কারো মুখে কোনো কথা নাই।সবাই শুধু কুশানের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।কুশানের এতো পরিবর্তন হয়েছে।সত্যি আজ যে কেউ কুশানকে চিনতেই পারছে না।

কুশান তখন বললো,একটা মেয়ের জীবনের সবচেয়ে কষ্টকর মুহুর্ত হলো তখন,যখন দেখে তার স্বামীর সামনে তার শশুড় বাড়ির লোকজন তাকে অপমান করে তবুও তার স্বামী তার হয়ে কোনো প্রতিবাদ করে না।আমি যে তোমাদের সবাইকে প্রচন্ড ভাবে ভালোবাসি।সেজন্য কারো মনে আঘাত দিয়ে কোনো প্রতিবাদ করি নি।
বিয়ের পর থেকে তোড়ার উপর দিয়ে কি যাচ্ছে তা তো আমি বুঝতে পারছি।আর নিজের চোখে দেখছিও।আমি এতোদিন শুধু দেখছিলাম সবকিছু,ভেবেছিলাম সব একদিন এমনি ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ব্যাপার টা ততো জটিল হয়ে যাচ্ছে।
আর তোমরা তো কেউ এই মর্ম টা বুঝবে না।কারণ তোমরা কেউ ই যে এই সিচুয়েশনে পড়ো নি?আম্মুও কোনোদিন তার শশুড়বাড়ি গিয়ে এক রাত কাটায় নি, আর আমার বোনেরাও না।সেজন্য তোমরা আরেকজন মেয়ের কষ্ট বুঝতে পারো না।নিজেরা যদি শশুড় বাড়ি গিয়ে সংসার করতে তখন বুঝতে সবার মন মানিয়ে চলা একজন বউ এর জন্য কতটা কষ্টের আর ধৈর্যের কাজ?

ইরা তখন বললো ভাই তুই কিন্তু আমাদের খোটা দিচ্ছিস?যা আর থাকবোই না এ বাড়িতে।আজকেই চলে যাবো।
মিরা তখন বললো তুই কিন্তু এর আগেও বলেছিলি এই কথাটা,ভেবেছিলাম না বুঝে বলেছিলি।

কুশানের কথা শুনে তিন বোনই রাগ করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।কুশানও তাদের আজ আটকালো না।কারন সে ভালো করেই জানে এরা কখনোই ভালো হবে না।আর যতদিন থাকবে এই বাড়িতে অশান্তি লেগেই থাকবে।

কুশানকে এরকম উচ্চস্বরে কথা বলা দেখে সবার মাথা একদম চক্কর দিয়ে উঠলো।এ কোন কুশানকে দেখছে তারা?যে কুশান কামিনী আর তার মেয়েদের সাথে মিউমিউ করে কথা বলতো আজ সে তাদের সাথে এভাবে উচ্চস্বরে কথা বলার সাহস দেখালো?

কামিনী নিজেও কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো।সে বুঝতে পারলো কুশান তাহলে এতোদিন সবকিছু জেনে বুঝেও চুপ করে ছিলো।আর আজকের ঘটনাও কি সে জানে?সে যে শরীর ব্যাথার মিথ্যা অভিনয় করলো সেটাও তাহলে কুশান বুঝতে পেরেছে।কামিনী কুশানের সাথে আর কোনো কথা না বলে তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে গেলো রুম থেকে।

অন্যদিকে ইরা,মিরা, লিরা রাগ করে তাদের ব্যাগ গোছাতে লাগলো।আর জোরে করে বলতে লাগলো যে বাড়িতে কুশানকে সবাই মাথায় তুলে রেখেছে সে বাড়িতে তারা কিছুতেই থাকবে না।কুশান তাদের কোন সাহসে এরকম কথা বলে?ওকে এতো বড় পাওয়ার কে দিয়েছে?

কামিনী তাড়াতাড়ি করে ইরার রুমে প্রবেশ করলো।আর মিরা,লিরাকেও ইরার রুমে আসতে বললো।মিরা আর লিরা যখন আসতে চাইছিলো না তখন কামিনী জোর করেই টেনে এনে বললো,
এই রাগ তোরা কার উপর দেখাচ্ছিস?আর কার উপর রাগ করে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছিস?এটা আমার বাড়ি।আমি কাকে রাখবো আর কাকে রাখবো না সেটা আমার ব্যাপার।কুশান বললো আর হলো নাকি?এটা আমার বাড়ি।আর আমার বাড়িতে সবার আগে আমার মেয়েদের থাকার অধিকার আছে।

ইরা সেই কথা শুনে বললো, আম্মু আমি বুঝতে পারছি না একটা জিনিস?তোমার বাড়িতে থেকেও কুশান আমাদের এভাবে অপমান করতে পারলো।আচ্ছা আমাদের না হয় করলো তার সাথে তো তোমাকেও যা নয় তাই বললো।তবুও তুমি কুশানকে এতো ভালোবাসো কেনো?

কামিনী সেই কথা শুনে বললো তোরা এভাবে বলছিস কেনো?কুশান তোদের ভাই হয়।আমার একমাত্র আদরের সন্তান সে।ও না বুঝে বলেছে এসব?আসলে কুশান তোড়াকে ছাড়া কিছু বুঝছে না।সেজন্য তোড়ার উপর কেউ কড়া কথা বলায় ওর মাথা গরম হয়ে গেছে।সেজন্য আজ থেকে কেউ তোড়ার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে না।তাহলে দেখিস কুশানও আর ক্ষুব্ধ হবে না।

মিরা তখন বললো আম্মু তুমি কি ভয় পাচ্ছো কুশানকে?না মানে এই বাড়ি তোমার।ব্যবসা বানিজ্য সব তোমার?যেখানে কুশান তোমাকে মান্য করে চলবে সেখানে তুমি কুশানের কথা মতো তার বউকে সম্মান দিতে বলছো?আমরা এটা মানতে পারবো না।
কারণ ওই মেয়েটাকে আমার ভালো লাগে না।

লিরা তখন বললো আম্মু আপু কিন্তু ঠিকই বলেছে।কুশানকে আমরা ভালোবাসি ঠিক আছে।তাই বলে ওর এসব কড়া কথা হজম করতে পারবো না। ও কি এমন হয়েছে যে ওর কথামতো চলতে হবে আমাদের?তার সাথে আবার ওই তোড়া আর টোরাকেও মেনে চলতে হবে?

হঠাৎ জারিফ চৌধুরী প্রবেশ করলেন ইরার রুমে।তিনি নিজেও এসে মেয়েদের বোঝাতে লাগলেন।কিন্তু তার মেয়েদের একটাই কথা তারা তোড়ার সাথে কিছুতেই ভালো আচরণ করতে পারবে না।

জারিফ চৌধুরী তখন কামিনী কে বললো,কামিনী! এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যাও।আর মেয়েদের ও ভালো পথে আনো।তা না হলে কুশানকে কিন্তু তোমরা সারাজীবনের জন্য হারাবে।যে ছেলেকে নিয়ে তোমার এতো অহংকার?এতো ভালোবাসা?সবকিছু কিন্তু ধুলিসাৎ হয়ে যাবে।সো মাইন্ড ইট কামিনী। আর কুশান হাত ছাড়া হওয়া মানে,,, বুঝতেই পারছো?এই বলে জারিফ চৌধুরী চলে গেলো।

কামিনী জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে রাগে নিজের চুল নিজেই ছিড়তে লাগলো।কারণ যে সত্য টা এতোদিন ধরে সে মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে সেই সত্য টা জারিফ কেনো আবার মনে করে দিলো?আর এই সত্য টা যাতে কুশানের কানে কোনোদিন না যায় সেজন্য তার কুশানকে হাতে রাখা উচিত।কুশানের চোখে তার খারাপ হওয়া চলবে না।কিন্তু তোড়া?এই তোড়াকে যে সে নিজেও কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না।এই তোড়ার জন্যই আজ কুশান তাকে এভাবে অপমান করলো?কি করে সে তোড়াকে কুশানের জীবন থেকে সরাতে পারবে সেটাই ভাবতে লাগলো কামিনী।

ইরা,মিরা আর লিরা এবার কামিনীর কাছে এগিয়ে এসে বললো, আম্মু,আব্বু এভাবে কি বললো তোমাকে?তুমি কি কিছু লুকাচ্ছো আমাদের থেকে?

কামিনী তার রাগ কে কন্ট্রোল করে বললো,না কই কি লুকাচ্ছি?
–তাহলে আব্বু ফিসফিস করে কি বললো তোমাকে?
কামিনী তখন বললো তোদের আব্বুও কুশানের মতোই সেম কথা বললো। তোড়ার সাথে আমাদের কে ভালো ব্যবহার করতে বললো।
?
তোড়া চলে যাওয়ায় কুশানের মন টা আজ এমনিতেই খারাপ হয়ে আছে। তার উপর আম্মু আর বোনদের কড়া কথা বলে আরো বেশি মন খারাপ হলো কুশানের।কুশান মনে মনে শুধু ভাবছে তার আম্মুরা কেনো তোড়াকে মেনে নিতে পারছে না, যেখানে তারা নিজেরাই তাকে চুজ করে এনেছে।
কুশানের মন খারাপ থাকা সত্ত্বেও সে তোড়াকে কল করতে ভোলে নি।তোড়া তার গ্রামে না পৌঁছতেই এর মধ্যে কমপক্ষে পাঁচবারের বেশি কল দিয়েছে কুশান।তোড়া না পৌঁছানো পর্যন্ত যেনো কুশানের মনে স্বস্তি ফিরে আসছিলো না।কুশান আবার কল দিয়ে বললো, পৌঁছেছো তোড়া?

তোড়া কুশানের এমন অস্থিরতা দেখে বললো,
তুমি এতো বেশি টেনশন কেনো করছো কুশান?আমি সময়মতো পৌঁছে যাবো।আর বললাম তো বাসায় গিয়ে জানাবো।

কুশান তখন বললো কেনো জানি শান্তি পাচ্ছি না।তাছাড়া রাস্তাঘাটের যে অবস্থা,কেনো জানি ভয় লাগছে আমার।
তোড়া কুশানের এমন কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠে বললো,তুমি কখনো কি চেঞ্জ হবে না কুশান?বললাম তো অযথা চিন্তা করো না।
–ওকে।আর করবো না চিন্তা। এই বলে কুশান কল কেটে দিলো।

তোড়া তখন নিজের থেকে আবার কল দিয়ে বললো, রাগ করতেছো কেনো?আমি তো এমনি বললাম।আচ্ছা আমার কথা বাদ দাও।আম্মুর কি অবস্থা এখন?ব্যাথা কি ভালো হইছে?
কুশান তখন বললো তুমি কি ফান করছো আমার সাথে তোড়া?
–ফান?ফান করবো কেনো?সত্যি সত্যি জিজ্ঞেস করছি।আসলে আমি ধারণা করে বলেছিলাম যে আম্মু অভিনয় করছে।সেই ধারণা তো মিথ্যেও হতে পারে।
কুশান তখন হঠাৎ করে বললো, সরি তোড়া।
তখন ওভাবে তর্ক করা উচিত হয় নি আমার।আসলে কোনো জিনিস যাচাই করে তবেই সেই বিষয় নিয়ে তর্ক করা উচিত।

–তার মানে আম্মু সত্যি সত্যি অভিনয় করছে?

কুশান তখন বললো আমি আবার কখন সেটা বললাম?তুমি যেমন বললে তোমার ধারণা তো মিথ্যেও হতে পারে।ঠিক আমিও বলছি আমার ধারণাও তো মিথ্যে হতে পারে।

–ওকে। ঠিক আছে কুশান।আমাদের দুইজনের ধারনায় মিথ্যা।তুমি এখন রাখো কল টা।আর ফিসফিসিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।আমার পাশে স্বর্ণা আছে কিন্তু।যখন বলবে ফোন টা আমাকেও একটু দে, দুলাভাই এর সাথে আমিও কথা বলি তখন বলবে কথা?
–না,না।রাখলাম এখন।এই বলে কুশান কেটে দিলো কল।

আজ আর কুশান দুচোখের পাতা এক করতে পারছে না।তার চোখেমুখে একটুও ঘুম নেই।সে শুধু ভাবতেছে কখন রাত টা শেষ হয়ে যাবে?আজ যেনো সময় আর যাচ্ছেই না।এই কিছুক্ষন আগেই তোড়ার সাথে সে কথা বললো।ঘুমাবে বলে তোড়াকে গুড নাইট ও বললো।কিন্তু এখন আর ঘুম আসছে না কুশানের।কুশান তখন শুয়ে থেকে ফোনটা হাতে নিলো।তবুও তার ভালো লাগছে না।সেজন্য সে তার মনের আবেগ দিয়ে তোড়াকে কে একটা ভালোবাসার মেসেজ পাঠালো।

যবে থেকে তোমায় বেসেছি ভালো,
তবে থেকে আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন শুধু তুমি।
আমার আকাশ,আমার বাতাস,আমার নদীজল,
আমার পৃথিবী,আমার নিঃশ্বাস,আমার বিশ্বাস,
শুধুই যে তুমি।
আমি তোমাতে থাকি, তোমাতেই হারাই,তোমার মাঝে নিজেকে যে খুঁজে বেড়াই।
বেঁচে আছি আজ তোমারই তরে,আরও বাঁচতে চাই তোমাকে ঘিরে।আমার জীবন,আমার মরণ সঁপে দিলাম তোমারই তরে।
যদি জেগে থাকো প্রিয়া,তাহলে একটা রিপ্লাই দিও।
কিছুতেই ঘুমাতে পারছি না।

অপর পাশ থেকে উত্তর দিলো,দুলাভাই আপু তো ঘুমাচ্ছে।আমি স্বর্ণা।

কুশান স্বর্ণার মেসেজ দেখার সাথে সাথে অফলাইনে চলে গেলো।

স্বর্ণা হাসতে হাসতে একদম শেষ হয়ে গেলো।কিন্তু স্বর্ণা তো কুশানের মেসেজের রিপ্লাই দিলো এখন যদি তোড়া এই মেসেজ দেখে তাহলে তো ভীষণ রেগে যাবে।সেজন্য স্বর্ণা ডিলিট করে দিলো মেসেজটি।তবে কুশানের সেই ভালোবাসার মেসেজটি রাখলো সে।

আসলে স্বর্ণা তোড়ার মোবাইল টা হাতে নিয়ে সুমনের নাম্বার খুঁজছিলো।কিন্তু তোড়ার ফোনে যে সুমনের নাম্বার টি এখনো ব্লক লিস্টেই আছে।ওই যে সেদিন রাতে কুশান সুমনের ফোন থেকে কল দেওয়াই তোড়া ব্লক করে রেখেছিলো।সেই থেকে আর খোলে নি নাম্বার টা।
?
কুশান ভার্সিটিতে যাবে বলে রেডি হচ্ছিলো।এদিকে কামিনী আর ইরা,মিরা,লিরা কাল থেকে কুশানের সাথে কোনো কথা বলে নি।কুশান নিজেও রাগ করে কথা বলে নি কারো সাথে।কুশান রেডি হয়ে যখন নাস্তার টেবিলে চলে গেলো সে কাউকেই দেখতে পেলো না।শুধু টুনি কুশানকে দেখে এগিয়ে এসে বললো, কুশান ভাইয়া নাস্তা দিবো এখন?

কুশান তখন বললো আম্মু আর আপুরা খাইছে?

–না ভাইয়া। খায় নি।আমি সেই কখন নাস্তা রেডি করেছি।সোনিয়া,সুমন,খালু আর দুলাভাই রা খেয়েছে শুধু।খালামনি এখন পর্যন্ত খেতে আসে নি।আর আপুরা না খেয়েই চলে গিয়েছে অফিসে।

কুশান টুনির কথা শুনে সোজা কামিনীর রুমে চলে গেলো।রুমে গিয়ে দেখে কামিনী শুয়ে আছে।কুশানকে রুমে ঢোকা দেখে অন্য পাশ হলো কামিনী।কুশান তখন কামিনীর হাত ধরে বললো,সরি আম্মু।তোমার সাথে উচ্চস্বরে কথা বলা উচিত হয় নি আমার।শান্ত ভাবে বোঝানো উচিত ছিলো।কিন্তু কালকের রাগ আজকে করলে কি হবে?শুনলাম তোমরা নাকি কেউ খাও নি নাস্তা।চলো খেয়ে নেই।আমি ভার্সিটিতে যাবো এখন।

কামিনী তখন বললো বাবা তুই খেয়ে নে।আমরা পরে খেয়ে নিবো।

–পরে কেনো?আমার সাথে খেলে কি প্রবলেম?

কামিনী সেই কথা শুনে বললো কিসের আবার প্রবলেম?তুই খেয়ে ভার্সিটিতে যা।তোর দেরি হয়ে যাচ্ছে।

কুশান তখন জোর করেই তার আম্মুকে বিছানা থেকে টেনে তুললো।আর সোজা ডাইনিং টেবিলে নিয়ে গেলো।

কামিনী আর কোনো কথা বললো না।কিন্তু কামিনীর চোখে পানি দেখতে পেলো কুশান। কুশান তখন কামিনীর হাত ধরে বললো, কি হয়েছে আম্মু?কাঁদছো কেনো আবার?

–কিছু না।এই বলে কামিনী চোখের পানি মুছে নিলো।

কুশান তখন বললো আম্মু যা হয়েছে ভুলে যাও প্লিজ।আমার কিন্তু এসব কান্দাকাটি একদম ভালো লাগে না।জানোই তো আমি এসব অশান্তি পছন্দ করি না।আর তুমি যদি খাওয়া বাদ দিয়ে এভাবে কেঁদেই চলো তাহলে কিন্তু আমি না খেয়েই চলে যাবো।

কামিনী সেই কথা শুনে কান্না থামিয়ে দিলো।আর চুপচাপ খেতে লাগলো।কুশান নিজেও তাড়াতাড়ি করে খেয়ে দেয়ে ভার্সিটির দিকে রওনা দিলো।
?
কুশান ক্লাসেও মনোযোগ দিতে পারলো না।তবুও এক প্রকার বাধ্য হয়েই ক্লাস গুলো করতে হচ্ছে তাকে।ক্লাস শেষ হলে বন্ধুরা আবদার করে বসলো তারা তাদের ভাবিকে দেখবে।কত দিন হইলো বিয়ে হয়েছে কুশানের।এখন পর্যন্ত তারা কুশানের বউকে দেখলো না।এটা কি মেনে নেওয়া যায়?
কুশান তখন সবাইকে বললো ও নাই বাসায়।বাবার বাড়ি গিয়েছে।এবার আমাদের বাড়ি আসলে ঠিক নিয়ে যাবো।
তখন বন্ধুরা বললো তাহলে অন্তত একটা ট্রিট তো দিতে পারিস।এই বলে তারা কুশানকে টেনে নিয়ে রেস্টুরেন্টে চলে গেলো।সবাই সবার পছন্দমতো খেয়েদেয়ে প্রাইভেট পড়তে চলে গেলো।কিন্তু সেখানে গিয়ে শোনে তাদের স্যার আজ বাসায় নাই।এজন্য এক ঘন্টা সময় তাদের বসে থাকতে হবে।কিন্তু কুশানের আজ এতো বেশি ধৈর্য্য নাই।সেজন্য সে রাগ করে বাসায় চলে এলো।কারণ তার যে মনে বিন্দুমাত্র শান্তি নাই।তবে বাসায় গিয়ে কুশান তার সিদ্ধান্ত পাল্টিয়ে ফেললো।সে ঠিক করলো আজকেই সে একবার তোড়ার বাড়ি যাবে।তোড়াকে এক নজর না দেখলে সে কিছুতেই শান্তি পাবে না।কিন্তু বাসার সবাইকে কি জানিয়ে যাবে না লুকিয়ে যাবে এই নিয়ে ভাবতে লাগলো কুশান।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here