আমি_ফাইসা_গেছি(২৯)

0
692

#আমি_ফাইসা_গেছি(২৯)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

স্ত্রীর কথা শুনে বা স্ত্রীর প্রেমে অন্ধ হয়ে যেমন কোনোভাবেই মা-বাবাকে কষ্ট দেয়া যাবে না ঠিক তেমনি বাবা-মাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে স্ত্রীকেও অবহেলা করা যাবে না।সেজন্য আমাদের সবার মনে রাখা উচিত,
বাবা-মায়ের অধিকারের জন্য যেমন সৃষ্টিকর্তার কাছে জবাব দিতে হবে, একইভাবে স্ত্রীর হক সম্পর্কেও কেয়ামতের দিন সৃষ্টিকর্তার আদালতে জবাব দিতে হবে।

তবে দুঃখজনক হলেও সত্য! আবহমানকাল থেকেই আমাদের সমাজের পুরুষরা একপেশে নীতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। কেউ অতি মাতৃভক্তি দেখাতে গিয়ে স্ত্রীকে মানুষই মনে করেনি। আবার কেউ অতি স্ত্রী-প্রীতি দেখাতে গিয়ে মায়ের সব অবদান ভুলে থেকেছে নির্মমভাবে। স্ত্রীর কথায় মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করা আমাদের দেশের মানুষের সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার মায়ের কথায় স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়ার ঘটনাও কম ঘটছে না।

এভাবে ভারসাম্যহীন জীবনযাপনের ফলে দুনিয়া-আখিরাতের অশান্তি ছাড়া কিছুই কপালে জোটে না হতভাগ্য পুরুষটির। একজন পুরুষ কে তখনি আমরা সুপুরুষ বলবো যখন সে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে মা-বাবাকে তাদের অবস্থান অনুযায়ী মর্যাদা দেবে এবং স্ত্রীকে তার অবস্থান অনুযায়ী প্রেম দিয়ে সুখী-সুন্দর আদর্শ পরিবার গড়ে তোলার চেষ্টা করবে।

কুশানের জীবনেও এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।একদিকে কামিনী তোড়াকে সহ্য করতে না পেরে ডিভোর্স দেওয়ার কথা তুলেছে।অন্যদিকে তোড়া কামিনীর মুখে বার বার ডিভোর্স এর কথা শুনে কুশানের উপর বকাঝকা শুরু করে দিয়েছে।কুশানের মনের উপর দিয়ে কি ঝড় বয়ে চলেছে সেটা শুধুমাত্র সেই জানে।কিন্তু সে যেহেতু তার মা আর বউ দুইজনকেই সমান ভাবে ভালোবাসে, দুইজনকেই তার পাশে চায় সে,সেজন্য তাদের কে বোঝানোর জন্য উঠেপড়ে লাগে কুশান।

কুশান কামিনী কে বোঝায়,
তোড়া তার প্রিয়জনদের ছেড়ে আমাদের ঘরে এসেছে। আপন করে নিয়েছে আমাকে,তোমাদের সবাইকে।সেজন্য আমার ফ্যামিলির লোকজনকে ভালোবাসার পাশাপাশি তাকেও আমার ভালোবাসা উচিত।আমি যদি তোড়ার সাথে খারাপ আচরণ করি বা তোমরা কেউ ওকে কটু কথা শোনাও তখন মেয়েটা ভীষণ ভাবে ভেঙ্গে পড়বে,আর নিজের ভাগ্যকে গালমন্দ করতে থাকবে।সারাদিন কান্দাকাটি করবে সেটা কি ভালো লাগবে বলো?বিনা কারণে তার চোখ থেকে ঝড়ে পরা এক ফোঁটা অশ্রু আমাদের জন্য যে কত টা অভিশাপের হয়ে দাঁড়াবে তা তুমি ভাবতেও পারবে না।

অন্যদিকে কুশান তোড়াকে বোঝায়,

একটু অবসর পেলেই আম্মু আমার সঙ্গে ছেলেবেলার গল্প করেন। ছোটবেলায় তিনি কীভাবে খালার সঙ্গে খুনসুটি করেছেন, কীভাবে সমবয়সীদের সঙ্গে গ্রামীণ খেলায় মেতে থাকতেন- এসব গল্প করতেন। আমি অবাক হয়ে শুধু আম্মুর গল্প শুনতাম।আম্মু এতো বেশি রাগী আর জেদি হওয়া সত্ত্বেও আমার সাথে একদম শিশুদের মতো মেশেন তিনি।আমাকে এতো বেশি ভালোবাসেন যা আমি তোমাকে বোঝাতে পারবো না তোড়া।তবে আমার বউকে যে তিনি সহ্য করতে পারবেন না সেই ধারণা আমার আগে থেকেই ছিলো।আমি সব সময় শুধু এই ভয়েই থাকতাম জানি না আমার বিয়ের পর আম্মুর রিয়্যাকশন কেমন হবে?আমার বউ এর সাথে তিনি কেমন আচরণ করেন?কারণ আম্মুকে আমি সবসময় একটা কথা বলতে শুনেছি তা হলো,
আমার কুশানকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসার অধিকার আমার আছে আর আমার কুশানও সবচেয়ে তার মাকেই বেশি ভালোবাসবে।এজন্য রাগে আর অভিমানে এমন আচরণ করে আম্মু।তুমি কষ্ট পেও না তোড়া।নিজেকে কষ্ট করে সবার সাথে একটু মানিয়ে নাও,দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।আর আমি আছি তো? তোমার উপর আম্মুর অহেতুক বকাঝকা করা না হয় তোমাকে আমার ভালোবাসা দিয়ে পুষিয়ে দেবো।চলবে তো তাতে?

কুশানের মুখে কামিনী আর তোড়া এসব উপদেশ শুনে দুজনই বেশ ইমোশনাল হয়ে পড়লও।তারা এতোদিন যদিও জানতো কুশান তাদের যথেষ্ট ভালোবাসে কিন্তু আজ আরো পরিষ্কার ভাবে বুঝে গেলো ব্যাপার টা।কুশান যে বউকে রেখে মাকে বা মা কে রেখে শুধু বউকে নিয়ে সুখী থাকতে পারবে না তা দুইজনই বুঝে গেলো।কামিনী কাঁদতে কাঁদতে কুশানের হাত ধরে বললো,
বাবা আমাকে ক্ষমা করে দি বাবা।তোর মনে অনেক আঘাত দিয়েছি আমি।তোড়াকে অপমান করায় বা তার সাথে বাজে আচরণ করায় তোড়ার চেয়ে তুই যে বেশি কষ্ট পেয়েছিস তা আমি বুঝতে পেরেছি।

কুশান তখন কামিনীর হাত ধরে বললো, আম্মু আগের সবকিছু ভুলে যাও।আজ থেকে আমরা সবাই একসাথে থাকবো আর সুন্দরভাবে জীবনযাপন করবো।

তোড়া হঠাৎ তার শাশুড়ীর কাছে এসে বললো, আম্মু আমাকেও ক্ষমা করে দিয়েন।হয় তো রাগের বশে আমিও ছোটো মুখে অনেক বড় কথা বলে ফেলেছি।

কামিনী তখন তোড়াকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো, ভুল তো আমরা করেছি তোমার সাথে।ক্ষমা তো চাইবো আমরা।একজন নতুন বউ এর সাথে আমরা যা যা করেছি সত্যি তুমি অনেক বেশি ধৈর্য্যশীল মানুষ।অন্য কেউ হলে আর ফিরে আসতো না এ সংসারে।

তোড়া কামিনীর কথা শুনে কুশানের দিকে তাকিয়ে বললো, আম্মু সবকিছু আপনার ছেলের জন্যই সম্ভব হয়েছে।আমি কিন্তু মোটেও ধৈর্য্যশীল মেয়ে নই। আমি তো সেই কবেই এ সংসার ছেড়ে চলে যেতাম।শুধুমাত্র আপনার ছেলের কারণে যেতে পারি নি।সে সবসময় আমাকে বুঝাতো।সেজন্য ওকে আমি কত বকেছি?তারপরেও সে হাল ছাড়ে নি।শেষমেশ কুশানের কষ্ট সার্থক হলো।

জারিফ চৌধুরী এতোক্ষন সবার কথাবার্তা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন।তিনি বেশ খুশি হলেন কামিনীর পরিবর্তন দেখে।যাক অন্তত এবার একটু সংসারে শান্তি ফিরে আসবে।
জারিফ চৌধুরী এবার কুশানের হাত ধরে বললো,বাবা, তোড়াকে নিয়ে এখন রুমে চলে যা। অনেক রাত হয়েছে।
তারপর কামিনীর হাত ধরে বললো,
তোমার এই কান্দাকাটি শেষ হয়ে থাকলে এবার তুমি রুমে আসতে পারো।কয়টা বাজে দেখেছো?

–হ্যাঁ চলো।এই বলে কামিনী জারিফ চৌধুরীর সাথে রুমে চলে গেলো।
জারিফ চৌধুরী রুমে গিয়েও কামিনী কে বোঝাতে লাগলো।
জারিফ চৌধুরী বললো, এতোদিন যা যা হয়েছে সবকিছু ভুলে সামনের দিকে এগোও কামিনী। কথায় আছে না শেষ ভালো যার সব ভালো তার।এরকম একটা ভালো ছেলে যার আছে তার মা কি করে খারাপ হতে পারে?আমার বিশ্বাস তুমি চাইলেই নিজেকে পরিবর্তন করতে পারবে।তোড়াকে নিজের মেয়ে মনে করে ওকে আবার সবকিছু বুঝিয়ে দাও।এখন তোমার সংসার,সম্পদ এসবের চিন্তা করার বয়স নয়,তুমি এখন শুধু খাবে দাবে আর এবাদত বন্দেগী করবে।

কামিনী জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।কারণ সবকিছু ঠিক হয়ে গেলেও যে এখনো তার মনে
একটা অপরাধবোধ বার বার জেগে উঠছে।সে একবার ভাবছে জারিফ কে বলবে কথাটা আরেকবার ভাবছে না না। কাউকেই জানাবে না সে।তার কুশান শুধুমাত্র তারই সন্তান।কুশানের মা সে ছাড়া আর অন্য কেউ হতেই পারে না।কুশানকে তার মতো করে আর কেউই ভালোবাসতে পারবে না।
?
সবাই সবার রুমে চলে যাওয়ার পর কুশান ও তোড়াকে সাথে করে নিয়ে নিজের রুমে প্রবেশ করলো।তারপর তোড়াকে বললো, যাও তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো।

তোড়া তা শুনে বললো,
তুমি শুবা না?

–যাও তুমি।আমি একটু পরে আসতিছি।

তোড়া তখন হঠাৎ করেই বললো,
আজকেই কিন্তু লাস্ট দিন কুশান।ইদানীং আমি খেয়াল করতিছি তুমি অনেক বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছো।সংসারের এমন অশান্তি দেখে আমি কিছু বলতিছি না।পরবর্তী তে আর একদিন যদি দেখি তাহলে কিন্তু আর রক্ষা নাই তোমার।

কুশান তোড়ার কথা শুনে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো তুমি যেটা ভাবতেছো সেরকম কিছু নয় তোড়া।ছোট্ট একটা কাজ আছে আমার।এই বলেই রুম থেকে বের হয়ে গেলো কুশান।

তোড়া তা দেখে বললো কুশান?আমি জানি এখন তোমার কোনো কাজ নাই।এতো রাতে আবার কিসের কাজ থাকতে পারে?

কুশান তখন পিছন দিকে তাকিয়ে বললো,বললাম তো আসতিছি।যাও শুয়ে পড়ো গিয়ে।

তোড়া চুপচাপ একা একা শুয়ে থাকলো।তার এতো বেশি রাগ হচ্ছে যে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কিছু করতে পারছে না।কুশান ইদানীং তাকে একটুও ভয় করছে না।সে রুমে থাকা সত্ত্বেও তার চোখের সামনে,ছাদে বসে এমনকি বেলকুনিতে গিয়েও সিগারেট টানতেছে।আগে তাকে কত ভয় পেতো?তার ভয়ে সিগারেটের নাম মুখেই আনতো না।আসলে ছেলেরা এমনি।একটু ভালোবাসা দেখালেই এরা মাথায় উঠে নাচতে থাকে।এদের কে একটু শাসনেই রাখতে হয়।

হঠাৎ কিছুক্ষন পর কুশান আসলো।সে রুমে এসেই আগে ওয়াশরুমে চলে গেলো।তোড়া এখনো জেগে আছে।তবে কুশানকে রুমে ঢোকা দেখে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর অভিনয় করলো।

কুশান ফ্রেশ হয়ে এসে ঘরের লাইট টা অফ করে দিয়ে বেডসাইড ল্যাম্প টা অন করলো।আর তোড়াকে জড়িয়ে ধরে বললো ঘুমাইছো?

তোড়া কোনো উত্তর দিলো না।

কুশান তখন বললো, আমি জানি তুমি ঘুমাও নি।আর আজ ঘুমানোর কথাও না।দুই দিন পর আমাদের দেখা হলো তোড়া।প্লিজ তাকাও আমার দিকে।

তোড়া তা শুনে বললো সিগারেট খাওয়ার সময় সে কথা মনে ছিলো না?এতোক্ষন দিয়ে এসে মনে হলো আজ আমাদের দুই দিন পর দেখা হলো।

–খাই নি তো সিগারেট। এই দেখো?কোনো স্মেল কি পাচ্ছো?

তোড়া তখন বললো মিথ্যা কথা কেনো বলতেছো কুশান।আমি কিন্তু ছোটো মানুষ না,যেভাবে বুঝাবে সেই ভাবেই বুঝবো। তুমি যে সিগারেট খেয়ে দাঁত মেজে একটা সেন্টার ফ্রুটস মুখে দিয়ে এসেছো তা আমি ভালো ভাবেই জানি।তোমার পকেটে এখন আমি সবসময় দু একটা সেন্টার ফ্রুটস পাই।

কুশান তা শুনে বললো তুমি আবার কবে থেকে আমার পকেট হাতাহাতি করছো?এটা তো খুব বাজে অভ্যাস।এই বলে কুশান তোড়ার ঘাড়ে নাক ঘষতে ঘষতে বললো আই লাভ ইউ তোড়া।এই দেখো কি এনেছি তোমার জন্য।

তোড়া তখন বললো কথা ঘুরাচ্ছো কেনো কুশান।এখন আমাদের কি নিয়ে কথা হচ্ছে? সেটাই আগে শেষ করো।

–ওসব কথা শেষ হবার নয়।ওটা যতদিন আমি বেঁচে থাকবো ততোদিন শুনতেই হবে।এখন যা এনেছি একবার দেখো তাকিয়ে।

–দেখবো না আমি?আগে বলো কবে ছাড়বে এসব বদ অভ্যাস?

–ছেড়েছিই তো।মাঝেমধ্যে ভুলবশত খেয়ে ফেলি।সেটা কি আমার দোষ?

তোড়া এবার কুশানের পাশ হলো।
সে দেখলো তার ফেভারিট চকলেট আর চিপস। তার সাথে একটা টকটকে লাল গোলাপের তোড়া।

কুশান তখন বললো, এখন খুশি হয়েছো?এগুলো আনতে গিয়েছিলাম। না বুঝে হুদাই চিল্লাচিল্লি করো।

তোড়া তখন বললো এগুলো তুমি অনেক আগেই এনেছো।আমি এগুলো আগেই দেখেছি।এখন তুমি ছাদে গিয়েছিলে।সেখান থেকে সিগারেট টেনে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসলে।

কুশান তখন বললো ওসব নিয়ে আমরা কাল আলোচনা করি?এখন চকলেট আর চিপসগুলো খেয়ে নাও তাড়াতাড়ি।তারপর একটু,,,,,, এই বলে কুশান তার এক চোখ বন্ধ করে মুচকি একটা হাসি দিলো।

তোড়া তখন কুশানের হাত ধরে বললো,তুমি কেনো বুঝতে চাও না কুশান?তুমি কি চাও আমাদের বাচ্চার ক্ষতি হোক?তুমি যদি নিজেই সিগারেট না ছাড়তে পারো তাহলে নিজের সন্তানকে কি শিক্ষা দেবে?

–বাচ্চা?আমার আবার বাচ্চা এলো কোথা থেকে?মাত্র বিয়ে হইছে এরই মধ্যে বাচ্চা এসে গেছে?

তোড়া তখন বললো এখনো আসে নি কিন্তু আসবে তো?

— ও বুঝেছি।তোমার এসব গিফট চাই না,তোমার এখন বাচ্চা চাই।সেজন্যই তুমি ঘুরে উলটে বুঝাচ্ছো কথাটা।ওকে আমি তো রেডিই আছি।স্টার্ট করে দিবো কি?

তোড়া তখন চিৎকার করে বললো, কুশান?তুমি কিন্তু আবার কথা ঘুরাচ্ছো?

–আমি আবার কি করলাম?তুমি তো নিজেই বললে বাচ্চার কথা।

–তোমার সাথে আমি কোনো কথাই বলবো না।আর তুমি আমাকে ছুঁয়েও দেখবে না।সরে যাও আমার কাছ থেকে।

কুশান তখন তোড়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,ঠিক আছে ছোঁবো না।

তোড়া তখন বললো কুশান প্লিজ ছাড়ো আমাকে।আমার ভালো লাগতেছে না কিন্তু।

–আমারও।

–আমারও কি?

–তোমাকে না ছোঁয়া পর্যন্ত আমাকেও ভালো লাগতেছে না।তুমি অযথাই এমন জিদ দেখাও না,এখন কিন্তু তিন টা পার হয়ে গেছে।চুপচাপ থাকো এখন।এসব নিয়ে আমরা কাল আলোচনা করবো।আসলেই এটা ঠিক না।আমি তো আমার দোষ স্বীকার করছিই।এসব বদ অভ্যাস যত দ্রুত সম্ভব ত্যাগ করতে হবে।

তোড়া তখন বললো তোমার কথা আমি বিশ্বাস করি না।তুমি আবার কালকেই ভুলে যাবে।আগে কথা দাও।

কুশান তখন বললো ওকে কথা দিলাম।আমার ছোট্ট একটা রাজকন্যা বা রাজপুত্র এলেই ছেড়ে দিবো সব।সেজন্য আর এক সেকেন্ড দেরি করা যাবে না।সিগারেট ছাড়তে হলে একটা রাজকন্যা বা রাজপুত্র চাই ই চাই।এই বলে কুশান তোড়াকে কিস করতে লাগলো।

তোড়া তখন বললো কুশান থামো প্লিজ।তারমানে তুমি বুঝাতে চাচ্ছো, এতো দিন তুমি এসব ছাইপাশ খেয়েই যাবে?

–এখন একটু চুপ করো না।রাত চারটা বাজে কিন্তু।সকালে উঠতে দেরি হয়ে যাবে।

তোড়া তখন বললো তোমার আম্মুকে আমি কাল সবটা বলে দিবো।আমার মুখ এভাবে জোর করে বন্ধ করে রাখলেও দেখি তোমার আম্মুকে তুমি কি বলে থামাও?

কুশান এবার আর কোনো কথা বললো না।সে তোড়ার নরম গোলাপি ঠোঁটদুটি মুখে পুরে নিয়ে থাকলো কিছুক্ষন।আর সাথে সাথে তোড়ার ঘ্যানঘ্যানানিও বন্ধ হয়ে গেলো।এখন পুরো ঘরে নিরাবতা বিরাজ করছে।চারদিকে স্তব্ধতা!আর তারই মাঝে ভালোবাসার মানুষের সাথে মধুর মিলন!ব্যাপার টা কিন্তু আসলেই সুন্দর।আর ভালোবাসায় রাগ অভিমান জিদ না থাকলে সে ভালোবাসা কিন্তু জমে ওঠে না।ভালোবাসায় সব উপকরণ ই থাকা চাই।টক,ঝাল, মিষ্টি সব।
?
কাল অনেক রাত ধরে জেগে থাকার ফলে আজ আর তোড়া সকালবেলা উঠতে পারলো না।কুশান নিজেও বেহুঁশের মতো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।হঠাৎ তোড়া নিজের থেকেই চমকে উঠলো।কিন্তু কুশান তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থাকায় উঠতে পারলো না সে।তখন তোড়া কুশানকে ডাক দিয়ে বললো,

কুশান?কুশান?

কুশান ঘুম ঘুম কন্ঠ নিয়ে বললো,
কেনো এভাবে ডিস্টার্ব করছো তোড়া?

তোড়া তখন বললো আমাকে ছেড়ে দাও,তাহলেই আর ডিস্টার্ব করবো না।
কুশান সেই কথা শুনে তোড়াকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থাকলো।
তোড়া তখন বললো নয় টা পার হয়ে গেছে কুশান।প্লিজ ছাড়ো আমায়।
কুশান সেই কথা শুনে তোড়াকে ছেড়ে দিয়ে কোল বালিশ টা জড়িয়ে ধরে আবার অন্য পাশ হয়ে শুয়ে থাকলো।

তোড়া তখন তাড়াতাড়ি করে বেড থেকে নেমে ওয়াশরুমে গিয়ে আগে ফ্রেশ হয়ে নিলো।তারপর তাড়াতাড়ি করে কোনো রকমে চুলগুলো মুছে মাথায় কাপড় দিয়ে দরজা খুলে বের হলো।আর মনে মনে ভাবতে লাগলো,
কাল পর্যন্ত তো তার শাশুড়ী ঠিকই ছিলো।না জানি আজ আবার কোন অশান্তি শুরু করে।আজ এতো দেরি হলো উঠতে?ওনার তো নাস্তা খাওয়ার সময় ও হয়ে গেছে।
তোড়া মনে মনে দোয়া পড়তে পড়তে রান্নাঘরে প্রবেশ করলো।কিন্তু সে রান্নাঘরে গিয়ে যা দেখলো তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।

কারণ কামিনী নিজেই রান্নাঘরে রান্না করছে।তোড়া এবার আরো বেশি ভয় পেয়ে গেলো।সে ভেবেছে হয় তো কামিনী রাগ করেই এভাবে রান্না করছে।
টুনি আর জয়া এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে কামিনী কে।তা দেখে তোড়া এগিয়ে গিয়ে বললো,

আম্মু আপনি আবার রান্না করছেন কেনো?এই টুনি জয়া তোরা আমায় একটু ডাক দিবি না?

কামিনী তা শুনে বললো, আমি নিষেধ করেছি ডাকতে।কাল অনেকরাত পর্যন্ত জেগে ছিলে ভাবলাম ঘুমাও একটু।

তোড়া কামিনীর কথা শুনে একদম আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলো।এতো চেঞ্জ হয়েছে কামিনী।
টুনি আর জয়া নিজেরাও অবাক।তারা তখন বললো, খালামনি তুমি আবার রাগ করে এভাবে বলছো না তো?

–রাগ?কেনো রাগ করবো কেনো?
একদম হেসে উঠে বললো কামিনী।

কামিনীর হাসিমাখা মুখ দেখে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেলো তোড়া।

হঠাৎ জারিফ চৌধুরী ডাইনিং টেবিল থেকে চিৎকার করে বললো, তোমাদের কি হলো?আমি অফিস যাবো কখন?

কামিনী তা শুনে বললো, তোড়া তোমার শশুড় কে নাস্তা দিয়ে এসো।এই বলে কামিনি নিজেই একটা পিরিচে রুটি আর অন্য আরেকটা বাটিতে কিছু সবজি তুলে নিলো।আর সেটা তোড়ার হাতে দিয়ে দিলো।

তোড়া নাস্তার বাটি আর পিরিচ নিয়ে জারিফ চৌধুরীর কাছে চলে গেলো।জারিফ চৌধুরী নাস্তা পাওয়ামাত্র খাওয়া শুরু করলো।যেই এক টুকরো রুটি সবজি দিয়ে খেতে ধরলো সাথে সাথে ওয়াক ওয়াক করতে লাগলো।
তোড়া তখন বললো আব্বু কি হয়েছে?এরকম করছো কেনো?
জারিফ চৌধুরী পানি দিয়ে আগে কুলি করে নিলো তারপর বললো, আজ তুমি নাস্তা বানাও নি তোড়া?

–না আব্বু।আমার উঠতে একটু দেরি হইছে আজ।

জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো,
আমি মুখে দিয়েই বুঝতে পেরেছি এটা কামিনীর কাজ।এই মানুষ যে কবে হলুদ আর লবণের পরিমান ঠিকভাবে দেবে তারকারিতে আল্লায় ভালো জানে।সারাবছর অন্যজনের হাতের রান্না খেয়েছে,নিজে যে একটু শিখে নেবে রান্নাটা সেই প্রয়োজন মনেই করে নি।

তোড়া তখন বললো আব্বু প্লিজ চুপচাপ খেয়ে নাও খাবার টা।আম্মু অনেক যত্ন করে রান্না করেছে।ওনার ভুল ধরলে একদম অশান্তি শুরু করে দেবে সংসারে।

জারিফ চৌধুরী তা শুনে বললো এইরকম খাবার কি করে মুখে দেবো? আমি পারবো না।তারচেয়ে বরং অফিসে গিয়ে কিছু খেয়ে নিবো।এই বলে জারিফ চৌধুরী উঠে গেলো।

তোড়া সেজন্য তাড়াতাড়ি করে নাস্তা গুলো লুকিয়ে রাখলো।এরই মধ্যে আবার কুশান এসে হাজির।
কুশানকে দেখে তোড়া বললো,

তুমি আবার কখন উঠলে?কোল বালিশ জড়িয়ে ধরে যেভাবে ঘুমাচ্ছিলে ভেবেছিলাম তো আজ আর উঠবেই না।

কুশান তখন তোড়ার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো, বউ এর কাজ যদি কোলবালিশ দিয়েই হতো তাহলে মানুষ আর বিয়ে করতো না।তাড়াতাড়ি রুমে আসো একটু।কথা আছে।

তোড়া তা শুনে কুশানকে সরিয়ে দিয়ে বললো আম্মু রান্নাঘরে।কি সব বলছো?এখন যেতে পারবো না।

–আম্মু?আম্মু আবার রান্না ঘরে কেনো?

তোড়া তখন বললো আমার আজ উঠতে দেরি হইছে না সেজন্য আজকের নাস্তা আম্মুই বানিয়েছে।

–তাই নাকি?দাও দেখি।আম্মুর হাতের নাস্তা খাবো আজ।আমার আম্মু আজ নাস্তা বানায়ছে।

তোড়া তখন বললো কুশান খেতে পারবে না ওই নাস্তা।আব্বু একবার মুখে দিয়েই আর দ্বিতীয় বার মুখে তোলে নি।আম্মু রান্নাঘর থেকে বের হলে আমি কিছু একটা বানিয়ে দিবো তোমায়।

কুশান তা শুনে বললো আম্মু যে নাস্তা বানিয়েছে এটাই অনেক।যাও নাস্তা আনো।আমি পারবো খেতে।

তোড়া সেই কথা শুনে কামিনী কে বললো,আম্মু কুশান এসেছে।ওর নাস্তা কোথায়?

–এই নাও।এই বলে কামিনী তোড়ার হাতে দিয়ে দিলো নাস্তা।

তোড়া শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আর ভাবছে সে এতো ভালো করে রান্না করে তবুও কারো মন মতো হয় না আর আজ কামিনীর হাতের এমন বাজে রান্না খেতে চাচ্ছে?

কুশান একটা টু শব্দও করলো না।তার কোনো রিয়্যাকশন বুঝতে পারলো না তোড়া।সে খেয়েই যাচ্ছে।

এদিকে আবার কামিনী নিজের জন্য আর তোড়ার জন্য নাস্তা নিয়ে টেবিলে আসলো।
আর কুশানকে বললো বাবা কেমন লাগছে?খেতে পারছিস তো?

–হ্যাঁ আম্মু খুব ভালো হইছে।

কামিনী তা দেখে আরো একটা রুটি তুলে কুশানের প্লেটে।
কুশান তা দেখে বললো,আম্মু আমার পেট ভরে গেছে।আর খাবো না আমি।

–খা বাবা খা।আরেকটা খেলে কিছুই হবে না।

কুশান তা শুনে খালি রুটিটাই ছিড়ে ছিড়ে খেতে লাগলো।তার আর সবজি দিয়ে রুটি খাওয়ার সাহস হলো না।

–বাবা সবজি দিয়ে খা।

কুশান তখন বললো আম্মু খালি রুটির যে টেস্ট হয়েছে তোমাকে আমি বলে বোঝাতে পারবো না।খালিই ভালো লাগছে আমার।এরকম স্বাদের রুটি আমি খাই নি কখনো।আসলে মায়ের হাতের যেকোনো খাবারই ভালো লাগে।

কামিনী কুশানের কথা শুনে হাসতে লাগলো।কেউ প্রশংসা করুক বা না করুক তার ছেলে যে তার রান্নার প্রশংসা করবে সেটা সে ভালো করেই জানে।

এবার কামিনী তোড়াকে বললো,
তোড়া চলো আমরাও নাস্তা করে নেই।আর বাকিরা কোথায়?সবাইকে ডাকো।আমি যেহেতু আজ নিজের হাতেই নাস্তা বানিয়েছি বেশি কিছু বানাতে পারি নি।কালকে নতুন কোনো আইটেম বানানোর ট্রাই করবো।আজ এগুলো দিয়েই সবাই নাস্তা করবো।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here