#আমি_ফাইসা_গেছি(৩৩)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
তোড়া সোনিয়া কে ফলো করতে করতে নিজেও বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।কিন্তু সোনিয়া তার আগেই একটা রিক্সা নিয়ে বাহিরে চলে গেছে।
এদিকে সোনিয়া তার আম্মু মিসেস লুতফা চৌধুরী কে বলেছে সে কলেজ যাচ্ছে।
তবে তোড়ার কেনো জানি মনে হচ্ছে সোনিয়া মিথ্যে বলেছে তার আম্মুকে।কারণ সোনিয়া যে এখন কলেজে যাচ্ছে না এ ব্যাপারে তোড়া একশো পার্সেন্ট সিওর।
কারণ এই অসময়ে সোনিয়ার কিসের কলেজ?তাছাড়া কলেজ গেলে সোনিয়া আগেই যেতো।
এদিকে ছেলেটার উপরও সন্দেহ হচ্ছে তোড়ার।আর সবচেয়ে বড় কথা ছেলেটাকে তার বেশ চেনা চেনা লাগছিলো।দূর থেকে সে ভালো ভাবে দেখতে পারে নি যার কারণে ফেস টা ভালো করে মনে করতে পারছে না।তবে সে যার ফেসের সাথে মিল পাচ্ছে সে কেনো এভাবে তাদের বাসায় লুকিয়ে আসবে, আর
তার বাড়ির আশেপাশে এভাবে ঘুরঘুর করবে,আর তাকে ইশারাই বা করবে কেনো?
চিন্তায় তোড়া শেষ হয়ে যাচ্ছে একদম।
তোড়া বাসা থেকে নিজে বের হতে পারবে না দেখে বুদ্ধি করে সুমন কে বললো,
দেখ তো সোনিয়া এখন কোথায়?যেহেতু সামনে ওর বিয়ে,এজন্য ওকে একা একা ছাড়া এখন ঠিক হবে না।
সুমন তোড়ার কথা শুনে সোনিয়াকে কল করলে সোনিয়া সুমনকেও সেই একই কথা বলে যে সে কলেজে যাচ্ছে।
কিন্তু তোড়ার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিলো না।
সেজন্য তোড়া সুমন কে বললো,
সোনিয়ার কলেজে একবার গিয়ে দেখে আসো তো সুমন।
সুমন তোড়ার কথা শুনে অবাক হয়ে বললো, ভাবি কোনো সমস্যা?
–না,না।সমস্যা না।বিয়ের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত তুমি নিজে ওকে কলেজে রেখে আসবে আবার তুমিই গিয়ে নিয়ে আসবে।
–আচ্ছা ভাবি।এই বলে সুমন সোনিয়ার কলেজ চলে গেলো।
তোড়ার ধারনাই ঠিক ছিলো। সোনিয়া আজ আসলেই কলেজ যায় নি।সুমন সোনিয়াকে কলেজ না পেয়ে সাথে সাথে কল করলো সোনিয়াকে।
সোনিয়া এবারও তাকে কলেজের কথাই বললো।সুমন সোনিয়ার কথা শুনে আর বেশি কিছু জিজ্ঞেস করলো না।সে শুধু সোনিয়াকে বললো,
আজ কলেজে ক্লাস করতে হবে না তোর।তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আয়।কারণ শ্রাবণের ফ্যামিলির লোকজন আজ বাসায় আসবে।
সোনিয়া সুমনের মুখে এই কথা শোনামাত্র রওনা দিলো।তবে বাসায় আসতে আসতে প্রায় তিরিশ মিনিট পার হয়ে গেলো।
সোনিয়া বাসায় আসা মাত্র সুমন রাগ দেখিয়ে বললো,কই ছিলি এতোক্ষণ? কার সাথে গিয়েছিলি?তাড়াতাড়ি বল।
তোড়া সুমনের এমন রাগারাগি দেখে সোনিয়াকে তার রুমে নিয়ে যায়।
সুমন তা দেখে নিজেও তোড়ার রুমে ঢোকে।আর আবার সেই একই কথা জিজ্ঞেস করে।
সোনিয়া তখন বলে,
আমি মিথ্যা কথা বলি নি।আমি সত্যি সত্যি কলেজ গিয়েছিলাম।
সুমন তখন চিৎকার করে উঠে বলে, আমি নিজে তোর কলেজ গিয়েছিলাম।আর তোর বান্ধুবিদের সাথে কথাও বলেছি।সবাই বলেছে তুই আজ কলেজে যাস ই নি।
সোনিয়া এবার ভয় পেয়ে যায়।সেজন্য সে সুমনকে বলে, ভাইয়া প্লিজ তুই একটু বাহিরে যা।আমি ভাবির সাথে কিছু কথা শেয়ার করতে চাই।
সুমন তখন রাগ দেখিয়ে বলে,
কেনো আমি থাকলে কি প্রবলেম? যা বলার আমার সামনেই বল।
তোড়া তখন সুমনকে বলে,
সুমন যাও তুমি।ও যখন তোমার সামনে কিছু বলতে চাচ্ছে না তখন বেশি জোর করো না।আমি শুনছি।
সুমন তোড়ার কথা শুনে রুম থেকে চলে গেলো।তবে সে নিজেও কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো।কারন সোনিয়া তার সামনে যেহেতু কিছু বলতে চাচ্ছে না,নিশ্চয় বড় কোনো প্রবলেম আছে।
সুমন নিজেকে শান্ত রাখলো কিছুক্ষন।
সুমন রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে সোনিয়া তোড়ার হাত ধরে বললো,
ভাবি আমি মারাত্মক একটা বিপদের মধ্যে আছি।প্লিজ আমাকে উদ্ধার করো।
তোড়া তখন বললো,কিসের বিপদ?
সোনিয়া তখন এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,আগে বলো কাউকে বলে দিবে না।
তোড়া তা শুনে বললো, আগে তুমি বলো আমায় কথাটা।তারপর ভেবে দেখবো।
–না,এভাবে বললে হবে না।কারণ এই কথাটা বাসার কেউ শুনলে প্রবলেম হয়ে যাবে।
তোড়া সেই কথা শুনে ডাইরেক্ট বললো,
তোমার কি কোনো ছেলের সাথে রিলেশন আছে সোনিয়া?আমার সাথে কথাটা শেয়ার করতে পারো।
সোনিয়া তোড়ার কথা শুনে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।বাট মুখে কিছু বললো না সে।
তোড়া তখন বললো, কি হলো?বলো?
সোনিয়া এবার কোনো সংকোচ ছাড়াই বললো,সম্পর্ক নেই।বাট একজন কে আমি ভালোবেসে ফেলছি।আর সেও আমাকে ভালোবাসে।
তোড়া তখন রাগ দেখিয়ে বললো, সেটা আগে বলো নি কেনো?পাত্রপক্ষ আসার কথা শুনে তো বলতে পারতে আমাকে।এখন কি হবে?
সোনিয়া তখন তোড়ার হাত ধরে বললো, ভাবি তুমি তো জানো এ বাড়িতে নিজের পছন্দের কাউকে বিয়ে করা যায় না।পরিবারের লোকজন যাকে পছন্দ করবে তার সাথেই বিয়ে হবে।এজন্য বলি নি কাউকে।তাছাড়া আমি ভাবতেই পারি নি সেও আমাকে পছন্দ করে।কিন্তু আজ যখন সে নিজের মুখে তার ভালোবাসার কথা প্রকাশ করলো তখন আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারছি না।প্লিজ ভাবি কিছু একটা ব্যবস্থা করো।
তোড়া তখন বললো কাউকে না বলো অন্তত তো আমাকে বলতে পারতে। এখন বিয়ে ঠিক হওয়ার পর বলছো তোমার পছন্দ আছে।সেটাও আবার আমি জোর করে তোমার মুখ থেকে বের করলাম।এখন আমি কি ব্যবস্থা করবো?
সোনিয়া তখন বললো,আমি তোমাকে ভয়েই বলি নি ভাবি।তাছাড়া আমাদের সম্পর্ক তো বেশি দূর এগোয় নি।মাত্র কথা বলা শুরু করেছি।কিন্তু কেউ কাউকে ভালো লাগার কথা বলি নি।
–ছেলেটা কে?কি করে?
সোনিয়া তখন বললো, ভাবি! শুনলে রাগ করবে না তো?
–আগে বলো তো?
সোনিয়া তখন বললো তোমার ভাই সায়ক।
–সায়ক ভাইয়া?
তোড়া সায়কের নাম শুনে একদম আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলো।তার মানে গেটের সামনে ওটা সায়ক দাঁড়িয়ে ছিলো।আর সেজন্যই তার বেশ চেনা চেনা লাগছিলো।কিন্তু ওটা যে সায়ক হবে তোড়া ভাবতেই পারছে না।
তোড়াকে চুপ হয়ে থাকা দেখে সোনিয়া বললো, তোমাকে আমি আর সুমন ভাইয়া আনতে গেলাম না সেদিন ই ফাস্ট দেখা হয়েছে আমাদের।তারপর আলাপ আলোচনা। দেন আমরা একে অপরের সাথে ফেসবুকে এড হই। তারপর রোজ চ্যাটিং করতে থাকি।কিন্তু চ্যাটিং করতে করতে আমরা দুইজনই মনে মনে দুইজনকে পছন্দ করে ফেলি। এদিকে তো কুশান ভাইয়া হঠাৎ করে আমার বিয়ের জন্য ছেলেও ঠিক করেছে।পরিবারের সবার কথা ভেবে সায়ক কে আমি বারণ করে দেই সে যেনো আর মেসেজ না করে আমাকে।কারণ আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।সেই কথা শুনে সায়ক আমার বাড়িতে এসেছে।ওর আসার কথা শুনে আমি তাড়াতাড়ি করে বাসা থেকে বের হয়ে যাই।সায়ক বলছে সে নাকি আমাকে ভালো বেসে ফেলছে।এদিকে আমিও তো তাকে ভালোবেসে ফেলছি।এখন কি করবো আমি?
তোড়া তখন বললো, তুমি কি সায়ক ভাইয়াকে বিয়ে করতে চাও?একদম মন থেকে বলবে?যদি চাও তাহলে আমি ব্যবস্থা করে দিতে পারবো।
–হ্যাঁ চাই। কিন্তু শ্রাবন?কুশান ভাইয়া আর বাকিরা যে ওই শ্রাবণ ছেলেটাকে চয়েজ করেছে।আমার আম্মু আব্বু তো মহা খুশি হয়েছে।এখন কি করবো আমি?কিভাবে সামলাবে সবাইকে?
তোড়া তখন বললো তুমি যদি আগেই আমাকে বলতে কথাটা তাহলে আমি কুশানকে বলে কিছু একটা ব্যবস্থা করতাম।এখন যেহেতু বিয়ে ঠিক হইছে সেজন্য বুঝতে পারছি না বাকিদের কিভাবে ম্যানেজ করবো?
সোনিয়া তখন তোড়ার হাত ধরে বললো, প্লিজ ভাবি।যে করেই হোক ভাইয়াকে একটু ম্যানেজ করো।
এদিকে সুমন দরজায় দাঁড়িয়ে বললো,ভাবি তোমাদের কি কথা বলা শেষ হইছে?আমি কি এখন আসবো?
–হ্যাঁ আসো।
তোড়ার কথা শুনে সুমন আবার রুমে প্রবেশ করলো।আর সোনিয়াকে বললো, ভাবির সাথে তুই গোপনে আলাদা ভাবে কি কথা বললি সেটা আমার জানার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।কিন্তু তুই কলেজ বাদ দিয়ে কই গিয়েছিলি সেটা অবশ্যই আমার জানার অধিকার আছে।তাড়াতাড়ি বল কেনো মিথ্যা কথা বলেছিলি?তোর আবার কোনো ছেলের সাথে কোনো চক্কর নেই তো?যদি থেকেও থাকে তাহলে মন থেকে সব মুছে ফেল।ভুলে যাস না কয়েকদিন পর তোর বিয়ে।
সোনিয়া সুমনের কথা শুনে ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো।সে তখন ভয়ে ভয়ে তোড়ার দিকে তাকালো।তোড়া সোনিয়ার এমন ভয় পাওয়া দেখে সুমনকে বললো,
সুমন তুমি কি বলছো এসব?ওর কোনো ছেলের সাথে চক্কর টক্কর নাই।ওর একটা পার্সোনাল কাজ ছিলো।এজন্য একটু মার্কেটে গিয়েছিলো।তুমি চলে যাও এখন।চিন্তা করার কোনো কারণ নেই।
সুমন তখন বললো যেখানেই যাক না কেনো?সামনে কিন্তু ওর বিয়ে,এটা যেনো ওর মাথায় থাকে,সেটাই আবার মনে করে দিলাম।এতো বড়লোক ফ্যামিলিতে বিয়ে হচ্ছে যা আমরা কল্পনাও করতে পারি নি কখনো।আমাদের সবার মানসম্মান যাতে ঠিক থাকে বিশেষ করে কুশান ভাইয়া নিজে কিন্তু পছন্দ করেছেন ওই ছেলেকে। এমন কিছু যেনো না শুনি যাতে আমাদের সবার মানসম্মান একদম নষ্ট হয়ে যায়।
এই বলে সুমন চলে গেলো।
সুমন চলে যাওয়ার পর সোনিয়া বললো দেখছো ভাবি,কি বলে গেলো সুমন ভাইয়া।আম্মু আর আব্বুও ঠিক এভাবেই বলছে।সবার অবাধ্য কি করে হয় যার কারনে সায়ক কে আমি বারণ করে দিয়েছিলাম।কিন্তু সায়ক তো কিছুতেই শুনছে না।
তোড়া তখন বললো আচ্ছা তুমি ঘরে যাও।আর চুপচাপ থাকো।আমি কুশানের সাথে কথা বলে জানাচ্ছি তোমাকে।
সোনিয়া তোড়ার কথা শুনে চলে গেলো।তবে তোড়াকে জানিয়ে তার ভয় কিছুটা দূর হলো।
সোনিয়া নিশ্চিন্তে থাকলেও তোড়া পড়ে গেলো ভীষণ দুশ্চিন্তায়।কারণ দুইজনই তার আপনজন হয়।সোনিয়ার বিয়ে শ্রাবণের সাথে হলে সায়ক আর সোনিয়া দুইজনই ভীষণ কষ্ট পাবে।এদিকে সোনিয়ার বিয়ে পাকাপোক্ত ও হয়ে গেছে।তোড়া কিভাবে ম্যানেজ করবে সেটাই ভাবতে লাগলো।
?
সন্ধ্যার সময় বাসার সবার জন্য নাস্তা রেডি করে সবার রুমে রুমে পৌঁছে দিয়ে তোড়া নিজে এক মগ কফি আর কিছু কাটলেট পিরিচে করে নিয়ে জানালার পাশে গিয়ে বসলো।আর কফির মগে চুমুক দিতে দিতে সোনিয়ার ব্যাপার টা নিয়ে ভাবতে লাগলো।হঠাৎ একটা আননোন নাম্বার থেকে কল এলো।
তোড়া রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে একজন ছেলে বললো,
আসসালামু আলাইকুম ভাবি।কেমন আছেন আপনি?চিনতে পারছেন আমাকে।
তোড়া তখন নাম্বার টা আবার একবার ভালো করে দেখে নিলো।না, সে চেনে না এই নাম্বার।সেজন্য তোড়া বললো,
জ্বি ওয়ালাইকুম আসসালাম।কিন্তু কে আপনি?সরি আপনাকে চিনতে পারলাম না।
ছেলেটি তখন মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো, গেস করেন ভাবি।তাহলেই চিনতে পারবেন।
তোড়া আসলেই বুঝতে পারছে না কে এই ছেলে?আর তাকে ভাবি বলেই বা ডাকছে কেনো?
হঠাৎ ছেলেটি বললো,সুন্দরী মানুষ দের এই এক প্রবলেম।এরা বাহির দিক থেকে সুন্দরী হলেও মাথাতে একটুও বুদ্ধি নাই।আচ্ছা আপনাকে ভাবি বলে কে ডাকতে পারে একটু ভাবুন।বুদ্ধি খাটিয়ে বলুন।
তোড়া তখন বললো, দেখুন,আমার এতো ভাবার সময় নেই।কি জন্য ফোন দিয়েছেন সেটা বলুন আগে।
–না বলবো না।আপনি আমাকে যখন চিনতেই পারছেন না তখন আর বলে কি হবে?বাদ দিন আমার কথা।তা ভাবি নাস্তা করেছেন কি?
তোড়া এবার আর কোনো উত্তর দিলো না।কল কেটে দিয়ে ফোন টা রেখে দিলো।এসব আজাইরে লোকের সাথে কথা বলার সময় আছে নাকি তার?
হঠাৎ ছেলেটি আবার কল দিলো।এবার তোড়া রিসিভ করলে ছেলেটি ধমকের সুরে বললো,
এভাবে কথা না বলে কল কেটে দিলেন কেনো?আগে তো শুনবেন আমি কে?
তোড়া তখন বললো আপনি তো পরিচয় দিচ্ছেনই না।আর আমি এভাবে অচেনা কোনো ছেলের সাথে কথা বলি না।
ছেলেটি তখন বললো, অচেনা ছেলে?আপনি কি করে বুঝলেন আমি অচেনা ছেলে?যেহেতু আপনার নাম্বারে কল দিয়েছি সেহেতু আমি বাহিরের কেউ নই।নিশ্চয় আপনার পরিচিত কেউ হই।
তোড়া এবার ভীষণ বিরক্ত হলো।আর বললো,প্লিজ ভাই আমার এসব প্যাচালো কথা পছন্দ না।যা বলার ডাইরেক্ট ক্লিয়ার করে বলেন।কে আপনি?আমি আসলেই চিনতে পারছি না।
–সরি মাফ করবেন ভাবি।আর চিনতে হবে না।আপনার যে অনেক বেশি অহংকার তা আমার বোঝা হয়ে গেছে।আর হ্যাঁ,সব সময় মনে রাখবেন এতো বেশি অহংকার কিন্তু ভালো না।অহংকার কিন্তু পতনের মূল।এই বলে এবার ছেলেটি নিজেই কল কেটে দিলো।
তোড়া ছেলেটির কথা কিছুই বুঝতে পারলো না।এই ছেলে এতো রাগ দেখাচ্ছে কেনো তাকে?আর সে কখন অহংকার দেখালো?পাগল কোথাকার!এই বলে তোড়া আবার কফির মগ টা হাতে নিয়ে জানালার পাশে বসলো।এদিকে কুশান আসার ও সময় হয়ে গেছে।সেজন্য তোড়া তাড়াতাড়ি করে কফি টা শেষ করে কুশানের জন্য নাস্তা রেডি করে রাখলো।যাতে সে আসার সাথেই তাকে দিতে পারে।
?
ঠিক সাতটার সময় কুশান বাসায় ফিরলো।সারাদিন বাহিরে থাকার ফলে কুশানের চোখমুখ একদম শুকিয়ে গেছে,ঘেমে মুখ চোখ কালো হয়ে গেছে।মনে হয় মুখে একটু পানিও দেয় নি সে।কুশান বাসায় এসেই আগে তার মায়ের রুমে প্রবেশ করলো।কারণ কুশান যেখানেই যাক না কেনো সেখানে যাওয়ার সময় প্লাস আসার পর, সবার আগে সে তার মায়ের সাথে দেখা করে।
কামিনী আর জারিফ চৌধুরী রুমে বসে নাস্তা করছে।
কুশানকে দেখামাত্র কামিনী বললো,বাবা এতোক্ষণে আসলি?তা আজ এতো দেরি হলো যে?
–রাস্তায় জ্যাম ছিলো আম্মু।এজন্য ফিরতে লেট হইছে।
–যা বাবা,ফ্রেশ হয়ে নি আগে।কি অবস্থা হয়েছে মুখচোখের?
–আচ্ছা আম্মু।এই বলে কুশান তার রুমে যেতেই লুতফা এগিয়ে এসে বললো,
বাবা কুশান?শ্রাবনের ফ্যামিলি থেকে আর কোনো খবর দিয়েছিলো?না আগের তারিখই আছে।
কুশান লুতফার কথা শুনে বললো, না চাচি।আগের তারিখই আছে।তবে মনে হচ্ছে ও তারিখে বিয়ের ডেট টা নেওয়া যাবে না।আরো কিছুদিন পেছাতে হবে।কারণ আমার এক্সামের রুটিন দিয়ে দিয়েছে।পরীক্ষার আগে এসব বিয়ের ঝামেলা আমার পড়াশোনায় প্রবলেম হতে পারে।
–ঠিক আছে বাবা।তোমার যেটা সুবিধা মনে হয় সেটাই করো।
–আচ্ছা চাচি, পরে কথা বলছি।মাত্র ফিরলাম তো বাসায়।ফ্রেশ হয়ে আসছি একটু।
–আচ্ছা বাবা যাও।
বিয়ে পেছানোর কথা শুনে লুতফার মুখখানা একদম শুকিয়ে গেলো।সে পাইলে কালকেই বিয়ে টা দিয়ে দেয়।এতো বড় ফ্যামিলির ছেলে তার মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছে এটা যে লুতফার অনেক বড় সৌভাগ্য।বিয়ে পড়ে হোক অন্তত রেজিস্ট্রি টা এখন করে রাখলে ভালো হতো।মনে মনে এটাই ভাবতেছে লুতফা।
কুশান রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথে তোড়া এগিয়ে এলো।আর কুশানের হাত থেকে তার ব্যাগটা নিয়ে বললো তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসো।আমি নাস্তা রেডি করেই রেখেছি।
কুশান হঠাৎ তোড়ার হাত ধরে টেনে তার কপালে একটা কিস করে তোড়াকে তার বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো।
তোড়া তা দেখে বললো, কি হলো আবার?যাও আগে হাত মুখ ধুয়ে আসো।চেহারার দিকে দেখেছো একবার।এই ক্লান্ত শরীরে রোমান্স করার মুড আসে কিভাবে তোমার?
কুশান তখন বললো,তোমাকে কিছুক্ষন জড়িয়ে ধরে থাকলে আমি আলাদা একটা শান্তি খুঁজে পাই তোড়া, যে শান্তি আমি কিছুতেই পাই না।আমার ক্লান্ত শরীরে মুহুর্তের মধ্যে একটা প্রশান্তি চলে আসে।আর তোমার হাসিমাখা মুখ দেখলে আমার ক্ষুধা আর তৃষ্ণা সব দূর হয়ে যায়।যতক্ষন তুমি আমার কাছে থাকো না নিজেকে তখন ভীষণ একা মনে হয়।তোমার প্রতি আমি ভীষণ ভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছি তোড়া।এই আসক্তি তোমার সাথে প্রেম করা অবস্থায় কখনোই ছিলো না।এই অনুভূতি টা বুঝতে পারলে আরো অনেক আগে বিয়ে করে নিতাম তোমাকে।আই লাভ ইউ সো মাচ তোড়া।?
তোড়া কুশানের কথা শুনে মিটিমিটি হাসতে লাগলো।কারণ কুশানের মুখের এই কথা গুলো শুনতে তার ভীষণ ভালো লাগে।এই কথাগুলোর কাছে যেনো দুনিয়ার সব সুখ হার মেনে যায়।
কারন প্রশংসা শুনতে প্রত্যেকে মেয়েই পছন্দ করে। আর তা যদি হয় স্বামীর মুখ থেকে, তাহলে তো কথাই নেই! প্রত্যেক স্ত্রীই তার স্বামীর মুখ থেকে প্রশংসা শোনার জন্য মুখিয়ে থাকেন। তাই স্ত্রীদের সব সময় প্রতিটা কাজে তাদের প্রশংসা করা উচিত,এতে করে স্ত্রীর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।আর স্ত্রীদের সবসময় এটাও বলা উচিত যে তাকে পেয়ে আপনি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করছেন। এতে স্ত্রীরা আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে।আর স্বামীকে অনেক বেশি ভালোবাসতে শুরু করবে।
একটা মেয়ে যত খারাপই হোক না কেনো আর তার যত রাগ আর জেদ থাক না কেনো স্বামীর ভালোবাসাই তাকে সব কিছু ভোলাতে সাহায্য করে।
এজন্য প্রেমিক প্রেমিকা আর স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার মধ্যে রাত দিন তফাত আছে।
বিয়ের আগে প্রিয় মানুষ টিকে যেমন মনে হবে বিয়ের পরের মানুষ টিকে সম্পূর্ণ আলাদা মনে হবে। কারণ বিয়ের আগে তাকে মাঝে মাঝে দেখতে পাওয়া যেতো, এদিকে বিয়ের পর সারা জীবনের জন্য একসঙ্গে থাকার ফলে নতুন ভাবে ভালোবাসার বন্ধনে জড়িয়ে পড়ে সকল হাজব্যান্ড ওয়াইফ।এই ভালোবাসা কোনো কিছু দিয়ে পরিমাপ করা যায় না।কথায় আছে স্বামী ভালো হলে কোনো মেয়ের জন্য এই দুনিয়াটিকেই বেহেশত মনে হয়,আর কোনো মেয়ের স্বামী খারাপ মানে তার কাছে এই দুনিয়া টা একদম নরকের মতো।
?
তোড়া বুঝতে পারছে না কিছু।কিভাবে কুশানকে সোনিয়ার কথা টা জানাবে।এদিকে তো কুশান সোনিয়ার বিয়ে টা নিয়ে খুবই সিরিয়াস।সে শ্রাবণ আর তার ফ্যামিলির সাথে বিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ আগেও কথা বললো। দুই ফ্যামিলির লোকজনের এতো মিল মহব্বত দেখে তোড়া সাহস পাচ্ছে না কথা টা বলার।তবুও তোড়া ঠিক করলো যেভাবেই হোক কুশানকে তার জানানো উচিত।
রাতে ডিনার শেষ করে কুশান যখন রুমে চলে গেলো তখন তোড়া নিজেও তাড়াতাড়ি করে তার কাজ শেষ করে চলে আসলো রুমে।
তোড়াকে আজ এতো তাড়াতাড়ি রুমে দেখে কুশান বললো,
সবার খাওয়াদাওয়া শেষ হয়ে গেছে?
–হ্যাঁ।
–আজ এতো তাড়াতাড়ি সবাই খেয়েছে?
–হ্যাঁ।
কুশান তখন বললো, ওকে।তাহলে এতো লেট করতেছো কেনো?এসো তাড়াতাড়ি। এই বলে কুশান তোড়াকে তার কাছে টেনে আনলো?
তোড়া কোনো কথা না বলে শুধু একটা মুচকি হাসি দিলো।
কারণ এই ভালোবাসার মুহুর্তে বেশি কথা না বলায় ভালো।
কিছুক্ষন পর,
কুশান ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলে তোড়া হঠাৎ করে বললো,
কুশান তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।যদি তুমি আশ্বাস দাও তাহলে বলতে চাই তোমাকে।
কুশান তোড়ার মুখে এরকম কথা শুনে বললো, কি এমন কথা যে আমার থেকে পারমিশন চাচ্ছো?
–না মানে,সোনিয়ার বিয়ের ব্যাপারে কিছু কথা বলার ছিলো।
কুশান তখন বললো,
সবার সামনে তো বলেই দিলাম আমার এক্সামের পর বিয়ে হবে।এখন আবার নতুন করে কি বলতে চাচ্ছো?
তোড়া তখন বললো কুশান,সোনিয়া শ্রাবণ কে বিয়ে করতে চাইছে না।
–মানে?বুঝলাম না।
–এখানে না বোঝার কি আছে।সোনিয়া শ্রাবন কে বিয়ে করবে না।
কুশান সেই কথা শুনে বললো, আমি তো সোনিয়ার থেকে অনুমতি নিয়েই বিয়ে পাকাপোক্ত করলাম।ওর সাথে আলাদা ভাবে কথাও বলেছি।সে তো নিজের মুখে বললো তার কোনো প্রবলেম নেই এ বিয়ে নিয়ে।এখন আবার বলছো ও শ্রাবনকে বিয়ে করবে না।
–তোমাদের ভয়েই সে মুখ ফুটে কিছু বলে নি।তাছাড়া লুতফা চাচী তো দিন রাত এই বিয়ে নিয়ে ওকে কথা শুনাচ্ছে।সেজন্য ও কাউকে কিছু বলে নি।কিন্তু ও আমাকে জানিয়ে দিয়েছে শ্রাবণ কে তার মোটেও পছন্দ হয় নি।
কুশান সেই কথা শুনে বললো, তা এখন এই কথা বলার সাহস পেলো কিভাবে?দুই পরিবারের লোকই যেখানে রাজি সেখানে কিভাবে বিয়ে টা ভেঙ্গে দেবো আমি?
তোড়া সেই কথা শুনে কুশানের গলা ধরে বললো,
তুমি তো নিজেও ভালোবাসাকে প্রচুর সাপোর্ট করো কুশান।আমার বিশ্বাস সোনিয়ার ভালোবাসাকেও তুমি ভালোভাবেই গ্রহন করবে।
আসলে ও ভয়ে বলতেই চাই নি,আমি জোর করে ওর মুখ থেকে বের করেছি কথাটা।
কুশান তখন বললো কাকে ভালোবাসে ও?
তোড়া কুশানের দিকে তাকিয়ে বললো, আমার সায়ক ভাইয়াকে।
সায়কের কথা শুনে কুশানের মাথা একদম চক্কর দিয়ে উঠলো।সায়ক?
চলবে,