আমি_ফাইসা_গেছি(৪১)

0
407

#আমি_ফাইসা_গেছি(৪১)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

বিবাহ দুটি অচেনা মানুষকে একত্রিত করে।তাদের জীবনকে একসাথে এগিয়ে নিয়ে যায়। বিবাহের পর প্রতিটি দায়িত্ব স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে ভাগ করে নেওয়া উচিত এবং সন্তানকে বড় করার ক্ষেত্রেও এই একই নিয়মই খাটে। গর্ভাবস্থায় বাবা-মা উভয়েরই সমান দায়িত্ব থাকে।এসব কিছুই সম্ভব যদি স্বামী আর স্ত্রীর মধ্যে ভালো বোঝাপড়া থাকে।যখন একজন স্বামী আর স্ত্রীর মধ্যে যথেষ্ট মিল মহব্বত আর ভালোবাসা থাকবে তখনি এই বিবাহিত সম্পর্ক টাকে একদম স্বর্গসুখের মতো মনে হবে।আর এই বিবাহিত জীবনের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অনুভূতি হচ্ছে মা বাবা হবার অনুভূতি।একজন নারী যখন গর্ভবতী হয়ে যায় তখন তার জীবনে আসে ব্যাপক পরিবর্তন।এই পরিবর্তন শারীরিক, মানসিক সবক্ষেত্রেই হয়ে থাকে।সেজন্য একজন স্বামী হিসেবে আপনাকে প্রথমেই স্ত্রীর এই পরিবর্তন গুলোর সাথে খাপ খাওয়ানোর মানসিকতা তৈরি করে নিতে হবে।

কুশান ডাক্তার ম্যাডামের কথা শুনে মাথা নাড়লো।সে বেশ মনোযোগ দিয়েই শুনতে লাগলো কথাগুলো।ডাক্তার ম্যাডাম তাকে তোড়ার ভালো করে দেখভালো করার জন্য নানারকম পরামর্শ দিতে লাগলো।তবে তোড়াকে অনেক আগেই চেকাপ করিয়েছেন ডাক্তার ম্যাডাম।তোড়া সম্পূর্ণভাবে সুস্থই আছে।আসলে তোড়ার হঠাৎ করে একটু ব্লেডিং হচ্ছিলো।যার কারণে কুশান একটু ভয়ের মধ্যে পড়ে যায়। সেজন্য সে তোড়াকে সাথে সাথে হাসপাতালে নিয়ে আসে।তোড়ার অসুস্থতার কথা শুনে ইরা,মিরা,লিরা,সোনিয়া আর কামিনী সবাই এসেছে চেম্বারে।তোড়াকে চেকাপ করার পর ডাক্তার ম্যাডাম এখন কুশানকে চেম্বারে আলাদা ভাবে ডেকে এনে কিছু উপদেশ দিচ্ছেন।

ডাক্তার ম্যাডাম বললেন, স্বামী হিসেবে আপনার কিছু করণীয় আছে।
এক,আপনার স্ত্রী যে আপনার জীবনের অসাধারণ এক প্রাপ্তি তা তাকে অনুধাবন করান।কারণ এই সময়ে একজন গর্ভবতী মায়ের শারীরিক পরিবর্তন হয়, যেমন ধীরে ধীরে তোড়ার ওজন বাড়তে থাকবে।এতে আপনার স্ত্রী হয়তো নিজের শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগতে পারেন। এ সময় আপনি তার বেশি বেশি প্রশংসা করুন। এতে করে তার আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

দুই,স্ত্রীকে চমক দিন। এ সময় নারীর মানসিক অবস্থা যখন তখন পরিবর্তিত হয়। মন খারাপ লাগা, উত্তেজিত হয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক এ সময়। শুধুমাত্র আপনার ভালোবাসাই স্ত্রীর এ ধরনের পরিবর্তন সামাল দিতে পারে। স্ত্রীর জন্য উপহার নিয়ে আসতে পারেন। এ উপহার হতে পারে ফুলের তোড়া, পছন্দের কোনো কিছু এমনকি আইসক্রিমও নিয়ে আসতে পারেন।অর্থাৎ আপনার স্ত্রী যে জিনিস টা পেলে এতোদিন খুশি হতো সেই জিনিস টা বেশি বেশি করে আনুন।

৩. তোড়াকে চেকাপ করার জন্য মাসে মাসে আসবেন চেম্বারে।আর সাথে অবশ্যই আপনি আসবেন। এতে করে তোড়া অনুভব করবে, আপনি তাকে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছেন।

৪.তোড়াকে রান্নাবান্নার কাজে অবশ্যই হেল্প করবেন।
শিশুকে গর্ভে বহন করা কিন্তু খুব সহজ কাজ নয়। সুতরাং, আপনাদের দুজনের দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

কুশান তখন হাসতে হাসতে বললো, ম্যাডাম আমাকে রান্নার কাজে ওকে সাহায্য করতে হবে না।কারণ এখন ওকে কেউ রান্নাঘরের আশেপাশেই যেতে দিবে না।সবাই এতো বেশি খুশি হয়েছে যে তোড়ার মা হওয়ার কথা শুনে ওকে একদম মাথায় তুলে রেখেছে।পানি পর্যন্ত ঢেলে খেতে দিচ্ছে না ওকে।একদম পুরো বেড রেস্টে আছে সে।বেড রুমেই ওর জন্য খাবার নিয়ে যাওয়া হয়।

“ওয়াও!কত লাকি এই মেয়েটা।সত্যি খুব ভালো লাগলো শুনে।আসলে খুব কম ফ্যামিলিতেই এরকম মেন্টালির লোকজন দেখা যায়।আপনার স্ত্রীর মেজাজের পরিবর্তন, মানসিক লড়াই, ব্যথা ইত্যাদি থাকবে এই সময়। এই পরিবর্তনগুলি যদিও স্বাভাবিক, তবুও আপনার স্ত্রী যখন এই পরিবর্তনগুলির মধ্যে দিয়ে যাবেন ঠিক তখনি যখন সে দেখবে আপনারা সবাই ওকে সমর্থন এবং উৎসাহ দিচ্ছেন,ও কিন্তু অনেক বেশি খুশি হবে।এতে করে আপনার বাচ্চাও ভালো থাকবে।

” জ্বি ম্যাডাম।”

“আরেকটা কথা কুশান সাহেব।এই নিয়ম টা অবশ্যই ভালোভাবে পালন করবেন।আজ তোড়ার হঠাৎ করে ব্লেডিং এই কারনেই হয়েছে।

কুশান তা শুনে বললো কি জন্য ম্যাডাম?

” স্বামী স্ত্রী মিলনের সময় অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।একটু অসাবধানতার কারণে কিন্তু কোনো অঘটন ঘটতে পারে।ওকে?

কুশান ডাক্তার ম্যাডামের কথা শুনে নিচ মুখ হয়ে বললো,জ্বি ম্যাডাম।

“আর কোনো প্রবলেম হলে বিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি চলে আসবেন হাসপাতালে।

কুশান তা শুনে বললো, ম্যাডাম আমি আর ওকে আনতে চাচ্ছি না হাসপাতালে।রাস্তাঘাটের ব্যাপার,বোঝেনই তো। আপনি যদি একটু কষ্ট করে মাসে মাসে আমাদের বাসায় গিয়ে ওর চেকাপ টা করে আসতেন তাহলে অনেক বেশি খুশি হইতাম আমি।

ডাক্তার ম্যাডাম কিছুক্ষন চুপ থাকার পর বললেন, আমি অনেক বিজি মানুষ তো।এভাবে বাসায় গিয়ে চেকাপ করার সময় নেই।কিন্তু এতো করে বলছেন যখন তখন অবশ্যই চেষ্টা করবো।তাছাড়া আপনাদের ফ্যামিলির প্রতিটা সদস্যকে ভীষণ ভালো লেগেছে আমার।বাড়ির বউ কে সবাই এতো বেশি ভালোবাসে সত্যি আমি দেখি নি এমন ফ্যামিলি।আর আপনার কথা কি বলবো?সত্যি আপনার স্ত্রী একজন ভাগ্যবতী নারী,যিনি আপনার মতো একজন হাজব্যান্ড পেয়েছেন।

কুশান তা শুনে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো,ভালো হাজব্যান্ড কিনা জানি না তবে সবসময় ওর মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করি।আর ম্যাডাম আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। খুব খুশি হলাম শুনে যে আপনি আমাদের বাসায় গিয়ে ওর চেকাপ করে আসবেন।আজ তাহলে আসি ম্যাডাম।এই বলে কুশান চেম্বার থেকে বের হয়ে গেলো।

কুশান চেম্বার থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে সবাই ওকে ঘিরে ধরলো।আর জানতে চাইলো কোনো প্রবলেম হয় নি তো?তোড়া আর তোড়ার বেবি ঠিক আছে তো?

কুশান সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললো, তোমরা একটু শান্ত হয়ে যাও প্লিজ।তোড়া আর বেবি সম্পূর্ণভাবেই সুস্থ আছে।দুশ্চিন্তার কোনো কারণই নাই।ওকে একদম ফুল রেস্টে থাকতে বলেছেন ডাক্তার ম্যাডাম।
কামিনী সেই কথা শুনে বললো, আলহামদুলিল্লাহ। আমি তো ভীষণ চিন্তার মধ্যে পড়ে গেছিলাম বাবা।

অন্যদিকে তোড়া মুখ চোখ অন্ধকার করে বসে আছে।সে কোনো কথা বলছে না।কুশান তখন তোড়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো, কি ব্যাপার ম্যাডাম?আপনি কিছু জিজ্ঞেস করছেন না যে?

তোড়া সেই কথা শুনে বললো, ডাক্তার ম্যাডাম আমাকে আগেই বলে দিয়েছে সব।সেজন্য জানতে চাইছি না।তা তুমি আমার প্রশ্নের কিছু উত্তর দাও তো এখন?

“কি প্রশ্ন?”

“বাচ্চার মা তুমি না আমি?”

“” তুমি।”

বাচ্চা আমার পেটে না তোমার পেটে?

“তোমার পেটে।”

তাহলে ডাক্তার ম্যাডাম তোমাকে আলাদা ভাবে ডেকে নিয়ে গিয়ে কি কথা বললো? আমাকে থাকতে দিলো না কেনো?

কুশান তোড়ার এমন প্রশ্ন শুনে বললো,
কারন ডাক্তার ম্যাডাম আমাকে কিছু উপদেশ দিলো।যা শুধু আমার শোনা উচিত।তোমার শোনা যাবে না সেসব কথা।

তোড়া তখন বেশ উচ্চস্বরে বললো, কেনো শোনা যাবে না?আমি শুনলে কি হতো?

কুশান তোড়ার সাথে এতো বেশি তর্ক করতে গেলো না।কারণ ডাক্তার ম্যাডাম তো বলেই দিলো এখন নাকি সেকেন্ডে সেকেন্ডে তোড়ার মুড সুইং হবে,ওর মনে কখন কি আসবে সে নিজেও বুঝতে পারবে না।এসময় মোটেও ওর সাথে তর্ক করা যাবে না।সেজন্য কুশান তোড়াকে বললো,
বাসায় গিয়ে বলবো।এখন বাসায় যেতে হবে।

কামিনী তখন এগিয়ে এসে বললো, কি হয়েছে বাবা?

“না আম্মু কিছু হয় নি।”তোমরা গাড়িতে গিয়ে বসো।আমি তোড়াকে নিয়ে আসছি। এই বলে কুশান ধীরে ধীরে তোড়াকে ওঠালো।আর ওর হাত ধরে ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগলো।
তোড়া আবার হঠাৎ করেই বললো, সরি।ভুল করে তখন ওসব জিজ্ঞেস করেছিলাম।তুমি কিছু মনে করো নি তো আবার?

কুশান তোড়ার কথা শুনে মনে মনে হাসতে লাগলো।বাট বাহিরে একটু রাগ রাগ ভাবই দেখালো।

তোড়া তখন বললো তুমি কিছু বলছো না কেনো?আমি কিন্তু খারাপ কিছু মনে করি নি।শুধু একটু সন্দেহ করছিলাম।যেহেতু ডাক্তার ম্যাডাম এখনো বিয়ে করে নি,তার উপর আবার যথেষ্ট সুন্দরীও আছে।সেজন্য ওনার সাথে তোমার একান্ত আলাপ আলোচনা আমার একদম সহ্য হচ্ছিলো না।

কুশান সেই কথা শুনে বললো, কি বললে?উনি অবিবাহিত?জানতাম না তো? আবার সুন্দরীও?খেয়াল করি নি তো?নেক্সট টাইম দেখা হলে তাহলে খেয়াল করবো।

তোড়া সেই কথা শুনে থেমে গেলো।আর এক পাও এগোলো না।

” কি হলো?থেমে গেলে কেনো?”

তোড়া তখন বললো, ছাড়ো আমাকে।আমি একা একা যেতে পারবো।এতোটাও অসুস্থ না আমি যে তোমার হাত ধরে ধরে যেতে হবে।

কুশান সেই কথা শুনে বললো তোড়া!জিদ করো না।তুমি যদি এরকম জিদ করো আমাদের বাচ্চাও কিন্তু ঠিক এমনই হবে।তুমি যদি ঝগড়া করো সেও সারাক্ষণ শুধু ঝগড়াই করবে।তুমি কি চাও আমাদের বাচ্চা এমন হোক?

তোড়া সেই কথা শুনে মাথা নাড়লো।

কুশান তখন বললো ডাক্তার ম্যাডাম এগুলোই বলছিলেন।তুমি আজ থেকে আমার সাথে সুন্দর করে কথা বলবে।তাহলে আমাদের বাচ্চাও আমাদের সাথে সুন্দর করে কথা বলবে।বুঝেছো?

তোড়া আবার মাথা নাড়লো।

কুশান তখন আবার তোড়াকে ধরে ধরে গাড়িতে নিয়ে বসালো।আর ড্রাইভার কে বললো একদম ধীরে ধীরে সাবধানে গাড়ি চালাবেন।ড্রাইভার কুশানের কথামতো একদম সাবধানে গাড়ি চালাতে লাগলেন।

?

সময় কারো জন্য থেমে থাকে না।সময় তার আপন গতিতেই চলতে থাকে। কুশানের চোখের সামনে ধীরে ধীরে তার সন্তান তোড়ার গর্ভে বেড়ে উঠতে লাগলো। তার সন্তানকে নিয়ে কত পরিকল্পনা কুশানের?তোড়া হঠাৎ একদিন জিজ্ঞেস করলো,

আচ্ছা তুমি ছেলে চাও নাকি মেয়ে?

কুশানের একটাই উত্তর ছিল যে সে সুস্থ সন্তান চায়।তার কাছে ছেলে-মেয়ে কোন বিষয় না।

কুশান তার সাধ্যমতো যতটুকু সম্ভব তোড়ার যত্ন নিতে লাগলো।কি করলে পেটের সন্তান সুস্থ থাকবে? কি করলে সন্তানের সঙ্গে সঙ্গে মায়ের স্বাস্থ্যও ভালো হবে? ইত্যাদি বিষয়গুলো ইউটিউব, ওয়েবসাইড থেকে জেনে নিয়েছে সে।যদিও ডাক্তার ম্যাডাম তাকে উপদেশ দিচ্ছেনই তবুও সে আলাদা ভাবে নিজেও কিছু কিছু জিনিস শিখে নিচ্ছে।কারণ তার একটাই প্রত্যাশা তার তোড়া আর সন্তান যাতে সুস্থ থাকে সবসময়।কোনো কমতি সে রাখতে চায় না।

কুশান শুনেছে পেটের মধ্যে থাকলেও বাচ্চারা নাকি বাবা-মায়ের কথা শুনতে পায়। সেজন্য সে প্রতিদিন নিয়ম করে তার বাচ্চার সাথে কথা বলে, তাকে ইসলামিক কথাবার্তা শোনায়,তাকে কোরআন তেলোয়াত করেও শোনায়।এইভাবেই কাটছে কুশানের দিন।তাছাড়া এখন সে সম্পূর্ণভাবে ফ্রি আছে।কারণ তার ফাইনাল এক্সাম শেষ হয়ে গেছে।

দিনে দিনে বাচ্চা কতটুকু হচ্ছে? কত সপ্তাহে তার ওজন কতটুকু হয়? কত কি যে কুশানের জানার চেষ্টা, একদম ব্যকুলতা অবস্থা কুশানের।

কুশান তোড়ার এই এই নয় মাসের জার্নিতে খেয়াল করেছে গর্ভবতী মায়েরা বেশ কিছু প্রতিকুলোতার সঙ্গে লড়াই করে প্রতিটা ছেলেকে বাবা হওয়ার আনন্দ দেয়।এইভাবে ধীরে ধীরে কুশানের সন্তান বড় হচ্ছে।কুশান তোড়ার পেটের মধ্যে বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করতে লাগলো।সে তোড়ার পেটের উপর হাত দিয়ে, কান পেতে তার সন্তানের হৃদয় স্পন্দন অনুভব করেতে লাগলো।

গর্ভবতী মেয়েরা এসময়টাতে তাদের সকল আপনজন কে কাছে দেখলে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়।যার কারণে কুশান তোড়ার পুরো ফ্যামিলিকে তাদের বাসায় নিয়ে এসেছে।কুশানের এমন পাগলামি দেখে তোড়ার চাচী তো হাসতে হাসতে বলেই দিলো,

মনে হচ্ছে এই দুনিয়ায় কুশানই প্রথম বাবা হচ্ছে,আর কেউ মনে হয় বাবা হয় নি।এতো বেশি পাগলামি কেনো করছো বাবা?এবার একটু থামো।

কুশান তখন নিজেও হাসতে হাসতে বলে,চাচী আম্মা,আমার মনের অনুভূতি আপনি বুঝবেন না।আমি কি পরিমান খুশি হয়েছি যে এখন তোড়াকে আমি কোথায় রাখবো ভেবে পাচ্ছি না।ওর যাতে বিন্দু পরিমান ক্ষতি না হয় সেই ব্যবস্থায় করছি।

?

আজ অনেক দিন পর তোড়া আবার বাড়ির বাহির হচ্ছে।কারণ আজ তোড়ার আল্ট্রাসোনোগ্রাফী করা হবে।তোড়া তো উত্তেজিত হয়ে আছেই তার সাথে পুরো বাসার লোকজন আজ ভীষণ উত্তেজিত। কেউ বলছে ছেলে হবে কেউ বলছে মেয়ে।

তোড়া সবার এমন পাগলামি দেখে শুধু হাসছে।অন্যদিকে কুশান শুধু মনে মনে বলছে আল্লাহ!যাই দাও,শুধু সুস্থ সবল বাচ্চা দাও আমাকে।

তবে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করার পর ডাক্তার ম্যাডাম ঠিকঠাক বলতে পারলেন না সন্তান কি হবে! কারণ বাচ্চা নাকি পেটের ভিতর উলটে আছে।বাচ্চার পজিশন ভালো না।
সব পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে ডাক্তার ম্যাডাম সামনের সপ্তাহের ১০,১১,১২ তিনটা তারিখ দিলেন।আর বললেন,এর মধ্যে যেকোন একদিন বাচ্চা হবে।

শেষ মুহুর্তে তোড়ার নড়াচড়া করতেও কষ্ট হচ্ছে।পা একদম ফুলে গেছে তার।কুশান ধরে ধরে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়।একা একা হাঁটতে পারে না।রাতে ঘুমাতে কষ্ট হয়।এপাশ ওপাশ হতে পারে না।কুশান ধরে ধরে এপাশ ওপাশ করে।তোড়ার সাথে সাথে কুশানকেও রাত জাগতে হয়।
তোড়ার ওজন একদম বেড়ে গেছে।চিকনি তোড়া ফুলে একদম গুলুমুলু হয়ে গেছে।তোড়া তো ওর এরকম গুলুমুলু চেহারা দেখে নিজেই ভয় পেয়ে যায়।সে মাঝেমধ্যে কুশানকে বলে এই আমি এমন হয়ে যাচ্ছি কেনো?আমার চেহারা এমন কেনো?এতো বাজে কেনো লাগছে আমাকে?
কুশান তখন বলে,এখনি তো সুন্দর লাগছে বেশি।আগে গায়ে তো কোনো মাংসই ছিলো না।এখন দেখো তো কত সুন্দর হয়েছো।এই বলে সে তোড়াকে আদর করে দেয় একটু।

তোড়া যদিও বুঝতে পারে এটা শুধুমাত্র শান্ত্বনা তবুও কুশানের মুখের প্রশংসা শুনতে সে বরাবরই ভালোবাসে।

ইদানিং তোড়ার অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিস খেতে ইচ্ছে করে।হঠাৎ রাত তিনটায় উঠে সে বলতেছে, কুশান আমাকে একটু পানি আর মুড়ি ভিজিয়ে চিনি দিয়ে মাখিয়ে দেবে?
কুশান সেই কথা শুনে কিছুক্ষন হা হয়ে থাকে।এসব কি বলে সে?যে মানুষকে সে কখনোই এই খাবার খেতে দেখে নি আজ হঠাৎ করে এই খাবার তার মাথায় আসলো কি করে?
পরের দিন আবার বলতেছে কুশান কড়া করে তিন চার টা মরিচ দিয়ে একটু ভাত আর পানি মিক্সড করে মেখে নিয়ে আসবে?
কুশান তোড়ার এসব অদ্ভুত অদ্ভুত খাবার দেখে সত্যি না হেসে পারে না।কুশান তখন কামিনীর কাছে গিয়ে বললো ব্যাপার টা।কামিনী নিজেও হাসতে হাসতে শেষ হয়ে গেলো।আর বললো,
পেটে বাচ্চা থাকলে এমনি হয় বাবা।এতে ভয়ের কোনো কারণ নেই।আরো কত অদ্ভুত অদ্ভুত খাবার খেতে চায় মায়েরা।ইরা,মিরা,লিরা পেটে থাকতে তো আমি সবসময় একটা করে লেবুর পাতা কাছেই রাখতাম।আর পান্তা ভাত, খুদের ভাত,মুড়ি দিয়ে মাংসের ঝোল আরো কত কি খেতে চাইতাম।তোর বাবাও এরকম শুধু হাসতো।আর মাঝে মাঝে চিন্তার মধ্যে পড়ে যেতো।

কামিনীর কথা শুনে মুহুর্তের মধ্যে কুশানের মন টা খারাপ হয়ে গেলো।কারণ কামিনী শুধু ইরা,মিরা,লিরার নামই নিলো।তার নাম তো নিলো না।তার নিজের আম্মুও নিশ্চয় সে পেটে থাকা কালীন এরকম অদ্ভুত অদ্ভুত খাবার খাইতে চাইতো।কই আছে তার গর্ভধারিণী আম্মু?তাকে কি সে জীবনেও আর খুঁজে পাবে না?মুহুর্তের মধ্যে কুশানের চোখ টা জ্বলে টলমল হয়ে গেলো।

?

জারিফ চৌধুরী জামিলাকে ছাড়িয়ে আনার জন্য অনেক চেষ্টা করছে।কিন্তু পারছে না।কারণ কেস টা অনেক জটিল হয়ে গেছে এখন। সেলিনা কাউকে চিনতে পারছে না আর সে কোনো কথা বলতেও পারে না।যার কারণে জামিলাকে জেল থেকে ছাড়ানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে জারিফ চৌধুরীর।তবে জারিফ চৌধুরী অনেক বেশি চেষ্টা করছে।তার ছেলের মনের এই কষ্ট টা তিনি যতদিন দূর করতে পারবেন না ততোদিন তিনি শান্তি পাবেন না।জারিফ চৌধুরী মাঝে মাঝে কুশানকে সাথে করে নিয়ে দেখা করে আসেন জামিলার সাথে।জামিলা কুশানের মুখ চোখ বুলিয়ে দোয়া করে দেয়,চুমু খায়।কুশান শুধু হা করে তাকিয়ে থাকে।কেনো জানি জামিলাকে দেখলেই তার অনেক বেশি মায়া কাজ করে।খুব ভালো লাগে তার জামিলার সাথে দেখা করতে আসলে।

অন্যদিকে জারার একটা ছেলে সন্তান হয়েছে।জারার দেখভালো জারিফ নিজেই করেছে।শ্রাবণের ছেলে হওয়ার পর থেকে সে অনেকটাই চেঞ্জ হইছে।সে এখন সারাক্ষণ ছেলে কে কোলে নিয়ে থাকে,তার সাথে কথা বলে,ছেলেকে চুমু খায়।বাহিরে আড্ডা দেওয়ার কথা তার মনেই থাকে না এখন।
একজন সন্তান আসলেই বাবা ও মার মনমানসিকতা সম্পূর্ণ চেঞ্জ করে দিতে পারে।স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যতো খারাপ সম্পর্কই থাক না কেনো যখন তাদের কোল আলো করে সন্তান আসে,সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সব অশান্তি, রাগ,অভিমান যেনো ভুলে যায় সবাই।
সন্তান হলো সৃষ্টিকর্তার অফুরন্ত নেয়ামত।সন্তান হাসলে পিতামাতা হাসে আর সন্তান কাঁদলে পিতামাতাও কাঁদে । সন্তানের মুখ দেখলে সকল পিতামাতার হৃদয়ে যেনো আনন্দের জোয়ার সৃষ্টি হয়। কারণ প্রতিটা সন্তানের মুখ পূর্ণিমার চাঁদের চেয়েও সুন্দর হয় । সন্তান যখন বাবা মা বলে ডাক দেয় তখন সেই বাবা মার বুকের মাঝখানে গিয়ে এক ধরনের শব্দ ধ্বনি বেজে উঠে।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here