আরেক ফাল্গুনে,পর্ব-০১
সামানিয়া_জামান_প্রজ্ঞা
তোকে বিয়ে করবো,তোর সঙ্গে সবকিছু করবো এমনকি আমার বাচ্চার মাও তোকেই হতে হবে। দেখি তুই কিভাবে আটকাস..!!
দ্বিতীয়বার এখান থেকে পালানোর চেষ্টা করলে জানে মেরে ফেলবো! কথাগুলো যততাড়াতাড়ি মাথায় নিবি তোর জন্য ততই মঙ্গল হবে বলে অনদিকে ঘুরলেন ডা. ফায়াজ আবরার জুবায়ের। চোখের পানিটা হালকা মুছে ধপ করে বিছানায় বসে পরলাম। আমার কান্না দেখে উনি বড় বড় নিশ্বাস ফেলে নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত করার চেষ্টা করে নরম কন্ঠে বলল,
এখান থেকে পালানোর চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়েঁ ফেলো মেহেক। কারন সেটা তোমার দ্বারা পসিবল না। আর যদি পসিবল হয় ও তবে আমি সেটা হতে দিবো না।
আরেকটি কথা! তোমার বাবা-মার সঙ্গে কন্ট্যাক করার চেষ্টা ও করোনা তবে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। আমি আবদুল্লাহ আঙ্কেলকে বলে যাচ্ছি সকালের খাবারটা তোমার ঘরে পাঠিয়ে দিবে চুপচাপ খেয়ে নিবা। আমার ল্যাবে কাজ আছে আমাকে এখন যেতে হবে।
….নিশ্চুপ
আমি চলে যাচ্ছি বলে ভেবো না তুমি পালাতে পারবে
কারন পুরো বাড়ির আসে-পাশে গার্ড রয়েছে। সবাই কে অডার্র দেওয়া আছে বাইরের কেউ ভিতরে আসতে পারবে না ভিতরের কেউ বাইরে যেতে পারবে না অন্তত আমার পারমিশন ছাড়া তো না। আর যদি কেউ ভুল করে এমনটা করার চেষ্টা করে তবে তাকে সেখানেই সুট করে মারা হবে। গট ইট?
রাগে দুঃখে হাত-পা কাপছে আমার। আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম আপনার সমস্যা কি?কেনো আমাকে এখানে আটকে রেখেছেন? কি ক্ষতি করেছি আপনার? আপনাকে তো চিনিও না ঠিকমতো তবে কিসের শত্রুতা আমার সঙ্গে ?কেনো আমাকে মাম্মা,বাপির সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিচ্ছেন না? কি চানটা কি আপনি?
আমাকে রাগে অস্থির হতে দেখে জরিয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘কাম ডাউন মেহেক! প্লীজ কাম ডাউন তুমি এখনো সুস্থ হওনি। দেখো তোমার জ্বরটা এখনো কমেনি।
আমি উনাকে দুরে সরানোর চেষ্টা করতেই উনি আরো শক্ত করে চেপে ধরলেন আমাকে। একটা সময় পর কাদঁতে কাদঁতে নিস্তেজ হয়ে উনার বুকে ঢুলে পরলাম।
‘প্লীজ বলুন আমার অপরাধটা কি?কেনো আটকে রেখেছেন আমাকে?’
উনি পরম যত্নে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘তোমার কোন দোষ নেই মেহেক।তোমাকে এখানে আটকে রাখার কারন তুমি নিজেই।’
আমি মাথা তুলে তাকালাম। উনি আমার চোখের পানিটা মুছে বলল,
‘হুম! তোমাকে আমার চাই মেহেক। আমার বসন্তহীন জীবনে তুমি বসন্তের ছোঁয়া এনেছো। আমার রৌদ্দুর হীন জীবনে রৌদ্দুরের অনুভুতি অনুভব করিয়েছো।তোমাকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ থেকে যাবো মেহেক। আর সেটা আমি চাইনা। আমি শুধু তোমাকে চাই। আমার থেকে বেশিদুরে যেতে পারবেনা তুমি। তোমাকে আমার সঙ্গে আমার হয়েই থাকতে হবে। কারন ভালোবাসি তোমাকে এটাই সত্যি। আর এই সত্যিটাকে মেনে নিতে হবে তোমার।
হঠাৎ দরজায় নক করার কারণে আমরা দুজনে দরজার দিকে তাকালাম।
স্যার আসবো.?
ওহহ সাদাফ তুমি! ভিতরে এসো।
স্যার ডা. শাহরিয়ার আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আজকে তো প্রেসের সঙ্গে মিটিং আছে আপনার। উনি একা হেন্ডেল করবে কিভাবে অলরেডি অনেক লেট হয়ে গেছে।
আসছি তুমি ফাইলটা রেডি করো।
সাদাফ ভাইয়া চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উনি আমার কপালে চুমু খেয়ে বলল,
সরি তখন মাথা ঠিক ছিলো না। ভেবেছিলাম তুমি এই জ্বরের শরীরে পালিয়ে গেছো। আমি তোমাকে আর খুজে পাবো না। আর অসুস্থ শরীরে তোমার যদি কিছু হয়ে যেতো তাই ভেবে পুরো মাথা হ্যাং করছিল। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। তার উপর তুমি বললে আমাকে কোনদিন ভালোবাসবে না বিয়ে করাতো দুরের ব্যাপার তাই রাগে তোমাকে থাপ্পড় মেরেছি সঙ্গে তুই বলে সম্বোধন করেছি। আম এক্সটিমলি সরি মেহেক। আসলে রাগ উঠে গেলে আমার মাথা ঠিক থাকেনা।
আমি এখন যাচ্ছি কেমন?আর হ্যা খাবারটা পাঠালে চুপচাপ লক্ষি মেয়ের মতো খেয়ে নিয়ো। তুমি এখন ও অনেকটা উইক।
‘আবদুল্লাহ আঙ্কেল ডাইভারকে গাড়ি বের করতে বলুন।’
উনি চলে যেতেই মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পরলাম। জ্বর কিছুটা কমেছিল এখন মনে হচ্ছে বেড়ে যাবে। লোকটি কতো অদ্ভুত!!!!
উনি দেখতে ভিষণ কিউট। লম্বাতে ছয় ফুটের মতো সঙ্গে অনেক প্রভাবশালী। শুনলাম খুব বড় সাইনটিস্ট। সবদিক দিয়ে তো পারফেক্ট। কিন্তু উনি আমার মধ্যে কি এমন দেখলো?
আমার বাপির টাকা? কিন্তু আমার বাপির চেয়ে তো উনার অনেক বেশি টাকা। তবে কি আমার গুড লুকিং ফেস? আমার মতো কি আমার চেয়ে একটু বেশি সুন্দরী মেয়ে অনায়াসে পেয়ে যাবেন উনি তবে???
উনিতো বলেন আমাকে অনেক আগে থেকে চিনেন কিন্তু আমি তো উনাকে কোনদিন দেখিওনি। আজ তিনদিন ধরে উনার কাছে বন্দি হয়ে পরে আছি। বাপি মাম্মা নিশ্চিত অস্থির হয়ে খুজছে আমাকে। আর মেধা তো নিশ্চয় হার্ট এট্যাক করে ফেলেছে আমাকে ফোনে না পেয়ে। ডা. ফায়াজ আবরার জুবায়ের তো আমার ফোনটা ভেঙে ফেলেছে।
কিছু ভালো লাগছেনা। আচ্ছা সত্যি সত্যি যদি উনি আমাকে বিয়ে করে ফেলে আর আমি যদি উনার বাচ্চার মা হয়ে যাই তবে কি হবে আমার? আল্লাহ্ আমাকে এখান থেকে প্লীজ উদ্ধার করুন!!!
মেহেক মা আসবো?
আবদুল্লাহ চাচা আপনি! হুম ভিতরে আসুন চোখের পানিটা মুছে বললাম।
মা খাবারটা?
আমার খিদে নেই চাচা আপনি এগুলো নিয়ে যান।
খিদে নেই বললেই হলো?এখনো তো তুমি সুস্থ হওনি। কাল রাতে অনেক জ্বর এসেছিল তোমার। ফায়াজ বাবা পাগলের মতো করছিল শেষে ডাক্তার এসে ইনজেকশন দিয়ে গেছে। ফায়াজ বাবা সারারাত জেগে তোমার দেখাশোনা করেছে। ভোরের দিকে তোমার জ্বর কমে আসলে ফায়াজ বাবার চোখ বুজে আসে। যখন ঘুম ভাঙে তোমাকে দেখতে না পেয়ে পুরো বাড়ির সবাইকে খোঁজ করতে বলে। অবশেষে গার্ডেনের এরিয়ায় পায় তোমাকে।
কিহহ!! ডা.ফায়াজ আবরার জুবায়ের সারারাত জেগে আমার দেখাশোনা করেছে?
হুম!!
খাবারটা খেয়ে নেও মা।
চাচা বললাম তো খিদে নেই নিয়ে যান এখান থেকে।
যেমনটা তোমার ইচ্ছা.! কিন্তু ফায়াজ বাবা অনেক রাগ করবে।
আমি সামলে নিবো আপনি যান চাচা।
…………..
ডা. ফায়াজ স্যার। বিদেশ থেকে বাংলাদেশে যে নতুন রোগটি আসার সম্ভবনা রয়েছে সেই রোগটির ক্ষেত্রে আমরা তো রিসার্চ করেছি। আপনি কি এইটা মিডিয়াকে জানাবেন? আসলে রোগটি তো বাংলাদেশে এখনো আসেনি আর তাছাড়া আমেরিকান ন্যাশনাল ল্যাব থেকে এই বিষয়ে ডাক আসেনি তাইজন্য বললাম আরকি আপনি এতো তাড়াতাড়ি র্ফমূলাটা পাবলিস্টড্ করবেন কিনা?
ডা. শাহরিয়ার! এই রিসার্চ পেপার আর ফমূর্লার কথা আমি আপনি ছাড়া কেউ জানবে না। আমি যদি এটা পাবলিস্টড্ করি তবে সারাবিশ্বে হইচই পরে যাবে এইটার জন্য যে ব্লাক টাইফাস ভাইরাস নিমর্য়ের ফমূর্লা বাংলাদেশের দুই তরুণ বিজ্ঞানী বের করে ফেলেছে। তখন সবাই চাইবে ফমূর্লাটা কিনে নিতে। এর জন্য আমাদের জীবনের ঝুঁকি থাকবে। তাই জন্য আমি এটা এতো দ্রুত পাবলিস্টড্ করতে চাইনা।
কিন্তু স্যার বিশ্বের অনেক জাইগায় এটা সংক্রমিত হয়েছে। আর যাদের যাদের ব্লাক টাইফাস হয়েছে তাদের প্রাই মারা যাচ্ছে। আমরা যেহুতু ফমূর্লা বের করেছি তবে ভ্যাকশিন তৈরি করে সবাই কে হেল্প করা উচিত আমাদের। এতে অনেক মানুষের প্রান বেচে যাবে।
ডা. শাহরিয়ার আমি আপনার কথা বুঝতে পেরেছি। আর এইজন্যই লেট করে পাবলিস্টড্ করতে যাচ্ছি।
ভাইরাসটা বাংলাদেশে ছড়িয়ে যাওয়ার আগেই আমরা ভ্যাকশিন তৈরি করে ফেলবো তারপর ফমূর্লাটি পাবলিস্টড্ করবো এতে বাংলাদেশকে নিয়ে সারা বিশ্বে হইচই পরে যাবে। আর এদিকে আমরাও শান্তি পাবো সকলের প্রাণ বাচাঁতে পেরে সঙ্গে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে দাড়ঁ করাতে পেরে।
স্যার ১৯৫৫ সালে ব্লাক টাইফাস ভাইরাসটি প্রথম নাইজেরিয়াতে পাওয়া যাই তারপর বিজ্ঞানীরা ভ্যাকশিন বের করলেও সেটা কার্যকর হয়নি আশা রাখছি আমরা সফল হয়েছি।
হুম ঠিক বলেছেন।
ডা. ফায়াজ আবরার জুবায়ের সাংবাদিক গন আগত রোগের ব্যাপারে বিধি নিষেধ জানতেই যে প্রেস কনফারেন্স ডেকেছে সেখানে জয়েন করতে হবে চলুন।
স্যার যাচ্ছে ডা.মাহিম আপনি যান।
ডা. শাহরিয়ার চলুন যাওয়া যাক।
জ্বী স্যার।
……….
সাংবাদিক – ডা. ফায়াজ আবরার জুবায়ের আপনি তো জানেন দেশে ব্লাক টাইফাস নামে ভাইরাস সংক্রামিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। দেশের বাহিরে অনেক জাইগাতে প্রাই ছড়িয়ে পরেছে।আর যাদের শরীরে এই রোগটি পাওয়া যাচ্ছে তারা নাকি তৎক্ষনাত মারা যাচ্ছে। অন্যান্য দেশের বিজ্ঞানীগন রোগটি দমন করার চেষ্টা করছে। আপনার কি মত এটাকি আদেও দমন করা যাবে? যেহুতু ১৯৫৫ সালে প্রথম কয়েকজন বিজ্ঞানী চেষ্টা করেছিল কিন্তু তারা ব্যার্থ হয়েছে ফমূর্লা বের করতে! আপনার কি মনে হয় এটার ক্ষেত্রে আপনি কতটা এগুতে পারবেন যেহেতু বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীদের মধ্যে আপনি আছেন।
‘দেখুন একজন বিজ্ঞানী হিসাবে আমি এটা বলতে পারি রোগ যখন মহান আল্লাহ্ তায়ালা রব্বুল আলামিন যখন দিয়েছেন এটার প্রতিকার ও নিশ্চয় আছে। আমরা অবশ্যই এটা দমন করতে পারবো শুধু সময়ের প্রয়োজন। দেশের জনগন যদি সাস্থ্যবিধি মেনে চলে তবে এই রোগ আমাদের দেশের তেমন ভাবে প্রভাব ফেলবে না। আমরা রিসার্চ করে দেখেছি মানুষ যদি সচেতনতা মানে যেমন সবার সঙ্গে দুরত্ব বজাই রাখা। পরিষ্কার পরিছিন্নতা মেনে চলে তবে সবাই মিলে এই রোগ দমন করতে পারবে। আর যাদের এই রোগ হবে মৃত্যু অনিবার্য। তাই আমার পরামর্শ এখন থেকেই নিজেদের সচেতন করুন। কারণ ভ্যাকশিন বের হতেও পারে নাও পারে,আবার সেটা কাজ করতেও পারে নাও পারে তাই বলে সাস্থ্যবিধির অনিয়ম করা যাবে না। আমাদের রিসার্চে কিছু বিষয় আছে যেগুলো সবার মানতে হবে ভাইরাসটি প্রতিরোধ করার জন্য। তার মধ্যে প্রধান যেটা সেটা হলো প্রবাসিদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা উচিত ভাইরাসটি পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পরার আগেই। আমাদের রিসার্চের আরো বিষয় আমরা পাবলিক করেছি। আপনাদের শুধু এগুলো মানলেই হবে এতে কিছুটা প্রতিরোধ হবে। আর আমরা বিশ্বের সব সাইন্টিস্ট মিলে তো চেষ্টা চালাচ্ছি ইনশাআল্লাহ আপনাদের দোয়াই আমরা সফল হবো।
সাংবাদিক – ধন্যবাদ ডা.ফায়াজ আবরার জুবায়ের। আপনার মুল্যবান সময়টা আমাদের দেওয়ার জন্য।
আমরা আশা করছি খুব দ্রুত এই প্রাণঘাতিক রোগ থেকে মুক্তি পাবে বিশ্বের সব জনগন।
ইন শা আল্লাহ!!
চলবে