আরেক_ফাল্গুনে,পর্ব -02

0
2176

আরেক_ফাল্গুনে,পর্ব -02
সামানিয়া_জামান_প্রজ্ঞা

রাত দশটাই সমস্ত কাজ সেরে ডা.ফায়াজ আবরার জুবায়ের বাসায় ফিরে আসে । আবদুল্লাহ চাচার কাছে যখন জানতে পারলেন আমি কিছু খাইনি সঙ্গে সঙ্গে উনার চোখ লাল রক্তিম বর্নের হয়ে যাই। উনি হাতে থাকা ব‍্যাগটা সোফায় ছুড়ে পোশাক চেন্জ না করেই আবদুল্লাহ চাচাকে খাবার আনতে বলে তারপর খাবারটা নিয়ে উপরে যাই। সমস্ত কাজের লোক অত্যন্ত ভয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে না জানি কি হবে মেহেকের এইটা ভেবে। আবদুল্লাহ চাচা মাথায় হাত দিয়ে সোফাতে বসে পরে।

জ্বরটা একটু কমেছিল কিন্তু সারাদিনে একটিবারো ওষুধ পেটে না পরায় জ্বরটা রয়ে গেছে। ঘরটা অন্ধকার করে শুয়ে ছিলাম হুট করে দরজা খুলাই আতকে উঠে বসলাম। ডা. ফায়াজ আবরার ভিতরে এসে খাবারটা একপাশে রেখে দাত চেপে বললেন।

সাহস কি করে হলো তোমার মেহেক? তোমাকে সকালে কি বলেছিলাম? তুমি জানো কেউ আমার কথা অমান্য করেনা কিন্তু তুমি এমন করছো কেনো?

আমার খেতে ইচ্ছে করছিল না। ডা. আমি বাড়ি যেতে চাই। আমার বাপি মাম্মা অনেক টেনশন করছে আমাকে না পেয়ে প্লীজ আমাকে বাসায় যাওয়ার পারমিশন দিয়ে দিন।

উনার মুখটা হঠাৎ কালো মেঘে ছেয়ে গেলো। উনি কিছু না বলে খাবারটা নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। মুখটা ভারি করে পরোটা দিয়ে মাংসের টুকরো নিয়ে আমার মুখের সামনে ধরে বললেন।

চুপপ! তোমাকে এখানে থাকতে হবে। চুপচাপ খেয়ে নেও। তোমার বাপি মাম্মাকে সামলানোর দায়িত্ব আমার। আর হ‍্যা কিছুদিনের মধ‍্যেই আমরা বিয়ে করছি। নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করো।

ইচ্ছে না থাকা সত্বেও আমি খাবারটা মুখে নিয়ে ছিলাম কিন্তু বিয়ে, মানসিক ভাবে প্রস্তুতি, এসব শুনে স্তব্ধ হয়ে রইলাম। আমাকে এইভাবে থাকতে দেখে উনি বললেন,

এখনকি খাবারটা চিবিয়ে দিতে হবে?

উনার কথায় খাবার টা চিবোতে লাগলাম। দেখুন আমি তো বলেছি আপনাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না।

কিন্তু তোমাকে তো বিয়ে করতে হবে। আর সমস্যা নেই আমাদের বিয়েতে তোমার বাবা মা উপস্থিত থাকবে।

উনার সঙ্গে তর্ক করার ইচ্ছে নেই তাই চুপচাপ খাবারটা খেয়ে নিলাম।খাওয়া শেষে জ্বরের ওষুধটা খাইয়ে দিলেন। উনি প্লেট নিয়ে নিচে চলে যেতে লাগলেই উনাকে থামিয়ে বললাম,

শুনন! আপনি সেই ফায়াজ আবরার জুবায়ের যে বাংলাদেশের সবচেয়ে নামকরা বিজ্ঞানী? যে কিনা এতোকম বয়সে প্রথম বাংলাদেশি বংশদুত খ‍্যাত সফল বিজ্ঞানী এবং হাভার্ড ইউনিভার্সিটির টপার?

আমার ব‍্যাপারে ভালোই খোজ খবর রাখা হচ্ছে তাহলে? হুম আমি সেই ডা. ফায়াজ আবরার জুবায়ের। ওকে শুয়ে পরো তবে বেশি রাত জাগা ভালো না। আর আমার উপর রাগ করে নিজের ক্ষতি করোনা এতে পরে তুমিই পস্তাবে।

আপনিইইইইই!!!

চলে গেলেন উনি। রাগ হচ্ছে প্রচুর। এই মানসিক সমস্যা গোস্তলোকটিকে একদম অসহ‍্য লাগে। কিন্তু সত্যি বলতে উনাকে ভয় ও লাগে। প্রচণ্ড ভয় এর অবস‍্য যথেষ্ট কারন রয়েছে।

সেদিন বাপি মাম্মাকে রাজি করিয়ে আমি আর মেধা আমাদের চেয়ে বড় ব‍্যাচের স্টুডেন্টদের সঙ্গে সেন্টমার্টিন ভার্সিটি টুরে গেছিলাম। সবার সঙ্গে ভালোই ছিলাম বিপত্তি বাধলো আমি আর মেধা সমুদ্রে নেমে। আমি সাতাঁর পারিনা। পানিতে ডুবে যাচ্ছিলাম এদিকে মেধা ভয়ে কান্না করতে লাগলো।
সেখানে একজন দৌড়েঁ এসে পানিতে ঝাপঁ দেয়।
এরমাঝে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি আমি। চোখ খুলে দেখতে পাই উনি আমার জ্ঞান ফিরানোর জন‍্য ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে কিত্তিম শ্বাস দিচ্ছে। ব‍্যাস রাগে ধাক্কা দিয়ে উনাকে সরিয়ে দিলাম। চারপাশে বড় ভাইয়া আপুরা ছিলো সবার সামনে অপরিচিত একজন ছেলে আমাকে কিস করলো ভেবেই লজ্জায় রাগে একাকার আমি।

আমি অনেকটা জোরেই বললাম,

কে আপনি? আপনার সাহস কি করে হলো আমাকে কিস করার?

উনি উঠে দাড়াঁলেন তারপর প‍্যান্ট, ব্লেজার ঝেড়ে বললেন,

আপনার আমাকে ধন্যবাদ জানানো উচিত মিস! কজ আমি আপনার জীবন বাচিঁয়েছি। কিন্তু আপনি আমাকে ধন্যবাদ না দিয়ে সবার সামনে উল্টোপাল্টা বলছেন। অদ্ভুত প্রানী তো আপনি!??

ডোন্ট টক টু মাচ। একজন অচেনা মেয়েকে কিস করা এটা কেমন কাজ হ‍্যাঁ? আপনি চাইলে অন‍্যপদ্ধতিও অবলম্বন করতে পারতেন কিন্তু কিস ই কেনো? মেয়ে দেখলেন আর হয়ে গেলো তাইনা?

ব‍্যাস এতটুকু যথেষ্ট ছিল। উনার চোখের রং পাল্টে রক্তিম বর্ণ হয়ে গেলো। আমি ও একটু দমে গেলাম। উনি দাতঁ চেপে বললেন,

একেতো আপনার লাইফ সেভ করলাম কোথায় ধন্যবাদ দিবেন তা না উল্টাপাল্টা বকেই যাচ্ছেন। আমি একজন ডা. ওকে? সো আমি জানি কখন কি করতে হবে। আপনাকে ইচ্ছে করে কিস করার শখ ছিলোনা আমার। নিহাত ডা. হিসাবে প্রানটা বাচালাম। আপনাকে কৃত্তিম শ্বাস না দিলে আপনি মারা যেতে পারতেন। দীর্ঘ অনেক্ষণ ধরে পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন আপনি। আমার এখানে মিটিং ছিলো। মিটিং শেষে সবাই ঠিক করলো সেন্টমার্টিন ঘুরবে যার কারনে এসেছিলাম। মাই বেড!!আপনাকে বাচানো উচিত হয় নি আমার। লোকটি চলে গেলেন।

এদিকে আমি আহম্মকের মতো তাকিয়ে রইলাম। মেধা রেগে বলল তুই উনাকে এইভাবে বললি ক‍্যানো? তুই জানিস লোকটি তোকে ডুবে যেতে দেখে নিজের জিবনের চিন্তা না করে পানিতে ঝাপঁ দিয়ে তোকে উদ্ধার করেছে। যখন দেখলো তুই জ্ঞান হারিয়েছিস আর অনেক পানি খেয়েছিস। তখন পেট চেপে ও পানি বের হচ্ছে না দেখে তোকে কৃত্তিম শ্বাস দিয়ে জ্ঞান ফিরিয়েছে আর তুই…..

দোস্ত! রাগ করিস না প্লীজ। এখন আমার কি করা উচিত?আমি কি করবো?

উনাকে সত্যি অপমান করলি মেহেক! উনাকে সরি বলা ফরজ তোর জন‍্য!

আশেপাশের আপু গুলাও আমাকে বকলো ভাইয়া গুলাতো সরাসরি বললেন এটা কি করলা? উনি ভালো মানুষ ছিলেন বিধায় অচেনা মেয়েকে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাচাঁলেন।

আমরা সবাই রিসর্টে চলে আসলাম। দুদিনের ট্রিপ ছিলো আমাদের। সারাটা বিকাল আমার টেনশনে কেটেছে যে কোথায় পাবো ওই ডা.কে। উনাকে যে সরি প্লাস ধন্যবাদ বলা লাগবে। কি করব কিছু বুঝছিলামনা।

সাদাফ ওই মেয়েটা কে? বাসা কোথায়? বাবা মা কে সবটা জানতে চাই। ডিড ইউ নো আমি যা ভাবছি সেটা যদি সত্যি হয় তবে আমার এতোদিনের আশাটা পূরন হবে।

ফায়াজ স‍্যার আমাকে শুধু দুদিনের সময় দিন আমি সবটা খুজে বের করবো।

উহু দুইদিন না আজকের মধ‍্যে খবর চাই আমার। কালকে আমাকে ঢাকা ফিরতে হবে। এখানে মিটিং তো শেষ।

ওকে স‍্যার। আমি যাচ্ছি আপনি চিন্তা করবেন না।সবটা জেনে তবে ফিরবো।

রিসর্টে আশেপাশে কেনা কাটা করার জন‍্য অনেক মার্কেট ছিলো ভার্সিটির সিনিয়ররা,মেধা আমাকে জোর করে নিয়ে আসে সপিং করানোর জন‍্য। আসলে আজকের ঘটনাটা মনে ভিষণ ভাবে দাগ কেটে ফেলে এজন‍্য মুড অফ ছিলো। মেধা আর বাকিদের জোরাজুরিতে শেষে আমাকে রাজি হতেই হয়। সবাই অনেক সপিং করেছিলাম। আমি বাপি আর মাম্মার জন‍্য ও অনেক গুলো উপহার নিই। যেহেতু হালকা শীত পরেছিল তাই বাপির জন‍্য সেখানকার বিখ্যাত শাল আর মাম্মার জন‍্য দুটো শাড়ি নিলাম। নিজের জন‍্য চারটে চুরিদার নিয়ে নিলাম। চুরিদার তেমন একটা পরিনা আমি কিন্তু দেখে ভিষণ ভালো লাগছে তাই কিনে নিলাম।

আসার পথে আমাদের সবার মেধার একটা ফোন আসে। এজন‍্য হন্তদন্ত হয়ে সে রিসোর্টের দিকে চলে যাই। আমি বাকিদের সঙ্গে ফিরলাম।

…..

তোমার ফেন্ড এর পুরো বায়োডাটা জানতে চাই। যদি ভালো চাও বলে দেও। না বললে বিপদ তোমার কিন্তু। এখন ভেবে দেখো!

দে দেখুন আপনি কে? কেনো আমাকে এখানে আনলেন? আর কেনোইবা মেহেকের ব‍্যপারে জানতেন চাইছেন?

সেটা তোমার নাজানলেও চলবে। আমাকে সত্যি টা বলো শুধু। আর না হলে তোমার বান্ধুবিকে,,,,,,,

কি- কি করবেন আপনি মেহেকের সঙ্গে? দেখুন আমি সবটা বলছি। প্লীজ কিছু করবেন না মেহেকের সঙ্গে।

এইতো গুড গার্ল প্লীজ টেল!

ওর পুরো নাম মুহতাসিন মেহেক চৌধুরী। অনার্স ফাস্ট ইয়ার । আমরা দুজন সিনিয়রদের সঙ্গে সেন্টমার্টিন টুরে এসেছিলাম। মেহেকের বাবা রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার মুহতাসিন মাহিদ চৌধুরী । আর মায়ের নাম এশা মুহতাসিন চৌধুরী। ওর বাসা ঢাকা উত্তরাতে। মেহেককে ওর বাবা মা গার্ড ছাড়া আসতে দিতে চাইনি কিন্তু অনেক রিকুয়েস্ট করার পর ওর বাবা মা রাজি হয়।
আ- আর কিছু?

না এটাই ইনাফ। বাই দা ওয়ে তোমার নাম কি?

মে – মেধা! জান্নাতুল মেধা। সেম ব‍্যাচ সেম ইয়ারের সেম ভার্সিটিতে। সেম জাইগাতেই বাসা আমাদের।

মনে হচ্ছে অনেক ভয় পেয়েছো ঠিক না?

আমি এ-এবার যাই? মেহেক চলে এসেছে মনে হয়। ও আমাকে খুজবে। আর প্লীজ মেহেকের কিছু করবেনা আপনি।

ভয় পেয়োনা আমি উপকারের বদলে কাউকে শাস্তি দিইনা। এখন তুমি রিসর্টে যেতে পারো।

জ -জ্বী! কিন্তু আপনি এগুলো জানতে চাইলেন কেনো? আপনার কি লেনাদেনা মেহেকের বায়োডাটা নিয়ে?

উনি চোখ টিপে বললেন,

ইটস্ টপ সিক্রট!

আমি আর দেরি না করে চলে আসলাম।

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here