#আরোও_একবার_বসন্ত,১৪,১৫
#১৪তম_পর্ব
আরাফাতের খারাপ লাগছে। মনে অপরাধবোধ কাজ করছে। গলায় কথা আটকে আসছে। নিজেকে যথাযথ শান্ত রেখে ধীর কন্ঠে বললো,
– আমি চাই না, আপনি আমার মার কাছে ক্ষমা চান
– কিন্তু আমি চাই, আমি চাই আরশাদ এবং রুপন্তীর বিয়েটা হোক। আমি ক্ষমা চাইলে যদি তাদের সম্পর্কটা…
– আপনি ক্ষমা চাইলেই আমার মার চিন্তাধার বদলাবে না। বরং এটা প্রমাণ হয়ে যাবে দোষটা আপনার ছিলো। আমি সেটা চাই না।
– তাহলে? আমার জন্য আমার বোনের জীবনটা এভাবে এলোমেলো হয়ে যাবে সেটা তো আমি নিতে পারবো না। মেয়েটা আমার ছোট বোন হলেও আমার কাছে সে আমার বাচ্চার মতো। বিগত একটা সপতাহ মেয়েটার মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। এতো নিরুপায় লাগছে নিজেকে।
মাথাটা নিচু করে ধীর গলায় কথাটা বললো প্রিয়ন্তী। মেয়েটাকে এতো অসহায় লাগছে আরাফাতের কাছে। শ্যাম বর্ণের চেহারাটা যেনো আরোও শ্যাম লাগছে। তার উদাস মুখখানা দেখে আরাফাতের বুকে ছ্যাত করে উঠে। যদি প্রিয়ন্তী রাফিজা বেগমের কাছে ক্ষমা চায় তবে হয়তো এই ব্যাপারটাকে নিয়ে পুনরায় চিন্তা করার একটি অবকাশ পাওয়া যেতো। কিন্তু মন সায় দিচ্ছে না। প্রিয়ন্তীকে নিচু হতে দেখতে পারবে না সে। অনেক চিন্তা করলো আরাফাত। কিন্তু শত চিন্তা করেও, আকাশ পাতাল ভেবেও উপায় বের করতে পারলো না সে। প্রিয়ন্তীর সামনে বসে থাকাটা আরো ও বেশি কষ্টদায়ক লাগছে। এখন এখান থেকে প্রস্থান করাটাই উত্তম হবে। মানুষ তখন সবথেকে বেশি হতাশ হয়ে যায় যখন ইচ্ছে থাকতেও প্রিয়জনকে সহায়তা করার উপায় পাওয়া যায় না। আজ আরাফাত এই হতাশা যেনো হাতে নাতে টের পাচ্ছে। আরাফাত উঠে দাঁড়ালো; হতাশাগ্রস্ত কন্ঠে বললো,
– আই এম সরি, আমার পক্ষে আপনাকে সহায়তা করা সম্ভব নয়। আমি আপনাকে ছোট হতে দেখতে পারবো না।
বলেই হাটা দিলো আরাফাত। প্রিয়ন্তীর উত্তরের অপেক্ষা করলো না সে। প্রিয়ন্তী শুণ্য দৃষ্টিতে আরাফাতের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়েছে। ভেবেছিলো লোকটার কাছে আসলে হয়তো কোনো উপায় বের হবে কিন্তু সেখান থেকেও খালি হাত ফিরতে হলো তাকে। প্রিয়ন্তী এখনো সেখানেই বসে রয়েছে। উঠতে ইচ্ছে হচ্ছে না। নিজেকে ইউজলেস মনে হচ্ছে। আজ তার জন্যই হয়তো তার ছোট বোনকে এতোটা কষ্ট পেতে হচ্ছে। ইশ কোনো একটা উপায় বের হতো! কি ভালোই না হতো!
__________________________________________________________________________________
রুমের সব জিনিসপত্র উলোটপালোট হয়ে পড়ে রয়েছে। বিছানার তোশক উলটে রয়েছে। বই খাতা নিচে গড়াগড়ি খাচ্ছে। শোপিচের ভাঙ্গা অংশগুলো মেঝেতে পড়ে রয়েছে। নিজের সমস্ত রাগ জড় বস্তুর উপর দেখানো একটি বদ অভ্যাস আরশাদের। আজও তার ব্যাতিক্রম হয় নি। বাসার ছোট বলে সর্বদা তার জিদকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়েছে৷ কিন্তু আজ তার প্রয়োজনীয়তাও মিটানোর ইচ্ছে প্রকাশ করছে না কেউ। রুপন্তী তার প্রয়োজনীয়তা। রুপন্তী থেকে আলাদা হবার কথা কল্পনাও করতে পারে না সে। কিন্তু বাসায় যেনো রুপন্তীর নামের আইন জারি হয়েছে। নামটা শুনলেই রাফিজা বেগমের মরাকান্দুনি শুরু হচ্ছে। বিভিন্ন উক্তি শুনতে হচ্ছে তাকে,
” দশ মাস পেটে ধরার এই প্রতিদান দিয়েছিস তুই?”
” একটা মেয়ের জন্য মাকে অস্বীকার করছিস?”
” মেয়েটাকি তোকে তাবিজ কবজ করছে বাপ?”
আরশাদ ও কম যাচ্ছে না। সে বিগত দুই সপ্তাহ যাবৎ সমানে হরতাল করেই যাচ্ছে। কিন্তু তাতেও খুব একটা সুবিধা হচ্ছে না। আরাফাত ও কম চেষ্টা করে নি তার হরতাল সফল করার। কিন্তু মায়ের চোখের পানির কাছে সব কিছুই যেনো বৃথা হয়ে যায়। এই অসফলতার রাগ সে ঘরের জিনিসগুলো ভেঙ্গে মিটাচ্ছে। দরজায় ক্রমাগত আঘাত করে যাচ্ছেন রাফিজা বেগম৷ কিন্তু তাতেও টনক নড়ছে না আরশাদের। একটা সময় ক্লান্ত হয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পড়ে সে৷ মাথার বা পাশটা ধপ ধপ করছে তার। মুখ শক্ত হয়ে আছে, চোখজোড়া লাল হয়ে আছে। কানে রাফিজা বেগমের কন্ঠ শোনা যাচ্ছে,
– খোল না আরশাদ, দরজা খোল বাবা। দুঘন্টা হয়ে আসলো। আর কত নিজেকে আটকে রাখবি?
-……………
– কি রে! বাবা, রাগ করিস না। মেয়েই তো একটা গেলে চারটা আসবে। আর ওই মেয়েকে বাসায় আনলেও যে তুই সুখী হতে পারবি তা তো নয়। যার বড় বোন সংসার করতে পারে নি, সে যে সংসার করতে পারবে তার কি গ্যারেন্টি? বাবা আমি নিজে তোর জন্য সুন্দর সুন্দর মেয়ে খুজে দেবো। খোল না বাবা
– যাবে এখান থেকে?
রাগান্বিত কন্ঠে কথাটা বলে আরশাদ। আরশাদের কথাটা শুনতেই কেঁপে উঠেন রাফিজা বেগম। ছেলের ধমকের সুর চোখে পানি জমিয়ে দিতে যথেষ্ট। মনের মাঝে সুপ্ত ক্ষোভ জন্মেছে রুপন্তীর প্রতি। আজ একটা মেয়ের জন্য তার ছেলে পর হয়ে গেছে তার। বিয়ে দিলে তো ছেলেটাই তার থাকবে না। শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখটা মুছে নিয়ে ধীর পায়ে হেটে রুমে চলে গেলেন তিনি। তার উদাস মুখখানা আরাফাতের চোখ এড়ালো না। একদিকে ভাই তো অন্য দিকে মা। কাউকেই ফেলে দেওয়াটা সম্ভব নয়। মনে মনে একখানা ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিলো আরাফাত। যা চিন্তা করেছে তাতে হয়তো সবার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে, কিন্তু এ ব্যতীত কোনো উপায় নেই তার।
সকাল ১১টা,
সকাল বেলায় আরাফাতের ঝাড়ি খেয়ে রুম থেকে বেরিয়েছে আরশাদ। রাফিজা বেগমের সাথে জরুরি ব্যাতীত কথা বলা হচ্ছে না তার। রাফিজা বেগম ও তার সাথে কথা বলছেন না। যে ছেলে মায়ের সাথে একটা মেয়ের জন্য খারাপ ব্যাবহার করতে পারে সে আবার কিসের ছেলে? ডাইনিং টেবিলে ঠাস করে চায়ের কাপটা রেখে রান্নাঘরে চলে গেলেন তিনি।
– আমি চা খাই না?
-…………
– আমার কফি কোথায়?
– ওই রুপু না ফুপু তার কাছে যেয়ে চাও।
হিনহিনে কন্ঠে কথাটা বলেন রাফিজা বেগম। আরশাদ ও কম যায় না। চায়ের কাপটা ঠেলা দিয়ে ডাইনিং টেবিল থেকে উঠে গেলো সে। মুখ ফুলিয়ে সোফাতে গিয়ে বসে সে। তখনই কলিংবেলটা বেজে উঠে। কলিংবেলের আওয়াজ শোনার পর ও দরজা খোলায় কোনো আগ্রহ দেখায় না আরশাদ। আরশাদের এমন ব্যবহার দেখে বিরক্তি নিয়ে দরজাটা খুলেন রাফিজা বেগম। দরজা খুলতেই আক্কেলগুড়ুম হয়ে যায় তার। চোখ জোড়া বিস্ফোরিত হয়ে যায়। দরজার ওপারে মালা পরিহিত অবস্থায় প্রিয়ন্তী এবং আরাফাত দাঁড়িয়ে আছে। রাফিজা বেগমের অবাক মুখখানা দেখে হাসি মুখে আরাফাত বলে,
– বউমাকে বরণ করবে না?
কথাটা যেনো মাথায় বজ্রপাতের মতো আঘাত করলো রাফিজা বেগমের। কি বলছে তার ছেলে। প্রিয়ন্তী তখন এগিয়ে এসে…………….
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি
#আরোও_একবার_বসন্ত
#১৫তম_পর্ব
রাফিজা বেগমের অবাক মুখখানা দেখে হাসি মুখে আরাফাত বলে,
– বউমাকে বরণ করবে না?
কথাটা যেনো মাথায় বজ্রপাতের মতো আঘাত করলো রাফিজা বেগমের। কি বলছে তার ছেলে। প্রিয়ন্তী তখন এগিয়ে এসে রাফিজা বেগমকে সালাম করতে যায়। রাফিজা বেগম এখনো তব্দা মেরে আছেন। কি হচ্ছে না হচ্ছে সব যেনো ঠিক মাথার উপর দিয়ে প্রজেক্টাইলের মতো যাচ্ছে। প্রিয়ন্তী তার পা স্পর্শ করতেই তিনি কেঁপে উঠেন। সত্যি তার বাবু একটি ডিভোর্সী মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে। যতদূর জানে মেয়েটি আরাফাত থেকে বয়সে ও বড়। ভ্রু কুচকে হিনহিনে গলায় বলেন,
– এই মেয়ে তুমি আমাকে ছুবে না। এই সকাল সকাল এটা কি ফাজলামি হচ্ছে বাবু?
প্রিয়ন্তী সালাম করতে যেয়েও থেমে যায়৷ উঠে দাঁড়িয়ে আরাফাতের পাশে বাধ্য মেয়ের মতো দাঁড়ায়। আরাফাত বেশ স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,
– ফাযলামি কেনো করবো মা? আমি প্রিয়ন্তীকে ভালোবাসি। তাই বিয়ে করে ফেলেছি।
– হ্যা?
– আসলে আমাদের সম্পর্কটা বেশ দিনের। সেদিন রুপন্তীকে দেখতে যেয়েই জানতে পারি প্রিয়ন্তী রুপন্তীর বড় বোন। যা কান্ড ওখানে হয়েছিলো। আমরা ভয় পেয়েছি, আমাদের বিয়েটাই না হয়। নিজেদের আলাদা রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সম্ভব হয় নি। তাই আজকে বিয়ে করে ফেললাম
– এতো বড় একটা কাজ একা করে ফেললি বাবু? বিয়ের করেছিস তো করেছিস এই মেয়েকে কেনো? নিশ্চয়ই এই মেয়েটা তোকে উসকাইছে? বাবু সত্যি করে বলতো আইডিয়াটা কার?
রাফিজা বেগম আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না। বেশ চিৎকার করেই কথাগুলো বলে উঠলেন। রাগে তার গা শিরশির করছে। আরশাদ এমন ধারা কাজ করলে তিনি মানতে পারেন কিন্তু আরাফাত এমন কিছু করবে এটা কল্পনাতীত। গলায় অভিমানগুলো জমতে লেগেছে। তার শরীর কাঁপছে। প্রিয়ন্তীর উপর রাগ হচ্ছে। তাই শব্দাঘাত করছেন। গায়ে আঘাতের থেকে শব্দের আঘাতটা বেশি লাগে। প্রিয়ন্তীর ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম হলো না। প্রতিবাদী স্বরে বললো,
– আপনার ছেলে কি বাচ্চা? আমি উসকাবো? আমি তাকে আইডিয়া দিবো? সাতাশ বছরের ছোকরা। নিজ ইচ্ছেতে আমরা দুজন বিয়ে করেছি। বিশ্বাস না হলে জিজ্ঞেস করেন।
– বাবু? কি বলছে এই মেয়ে?
– মা, এতোদিন তো তুমিই আমার পেছনে ছুটতে বিয়ের জন্য। আজ করে ফেলেছি। ওভাররিয়েক্ট করো না। আর মা আমি এই বিয়েতে সুখী। প্লিজ আমাদের মেনে নেও। আসো প্রিয়ন্তী৷
– না মোটেই না, এই মেয়ে আমার ঘরে ঢুকবে না। ওকে ওর বাড়ি রেখে আয়
– মা, প্রিয়ন্তী আমার বউ। আমি যেখানে ওকে রাখবো ও সেখানেই থাকবে। এখন তুমি আমাদের ঢুকতে না দিলে আমি ওকে নিয়ে কোয়ার্টারে চলে যাবো৷ ডিসিশন তোমার।
আরাফাতের কথাটা বিদ্যুৎ এর মতো কাজ করলো। রাফিজা বেগম কোনো কথা বলতে পারলেন না। দরজাটা ছেড়ে দিলেন। তিনি তার ছেলেকে বেশ ভালো করেই চিনেন। আরাফাত এক কথার মানুষ; সে আরশাদের মতো চিল্লাপাল্লা করবে না। জিদ করবে না, কিন্তু একবার যেটা বলবে সেটা করেই ছাড়বে। প্রিয়ন্তীকে না ঢুকতে দিলে সে এক কাপড়ে বাড়ি ছেড়ে দিবে এটা বেশ ভালো করেই জানা আছে রাফিজা বেগমের। আরফাত ধীর কন্ঠে একটা কথা বলে,
– মা, আমার কাছে প্রিয়ন্তী যতটা গুরুত্বপূর্ণ তুমিও কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সুতরাং আমাকে একজনকে বাছতে বলবে না।আমি একজনকে ছেড়ে আরেকজনকে বাছতে পারবো না।
বলেই প্রিয়ন্তীর হাত ধরে ঘরে প্রবেশ করলো আরাফাত। রাফিজা বেগম এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন। ছেলের এমন আচারণ কখনোই কল্পনা করেন নি তিনি। আরশাদ হা করে নিজের ভাইকে দেখে যাচ্ছে। বিগত পনেরো মিনিটের ঘটনা তার বিশ্বাস হচ্ছে না। তার ভাই প্রিয়ন্তীকে বিয়ে করে এনেছে। তাদের মাঝে সম্পর্কটা কবে হলো! তারা একে অপরকে কি আগ থেকে চিনে! হাজারো প্রশ্নের ভিড় জমেছে মাথায়। আরাফাত প্রিয়ন্তীকে নিয়ে তার রুমে প্রবেশ করেছে। এদিকে রাফিজা বেগম রোবটের মতো সোফায় এসে ধপ করে বসে পড়লেন। আরশাদের দিকে হতাশা চোখে তাকিয়ে বললেন,
– বাবু এমন একটা কাজ কিভাবে করলো আরশাদ? কি পাপ করছি? একটা ছেলে জাতের হয় নাই।
কথাটা বলেই মরাকান্দন শুরু করলেন রাফিজা বেগম। আরশাদ মাকে শান্তনা দিতে ব্যস্ত হয়ে গেলো। তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। শুধু তিনটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে, কেনো? কখন? কিভাবে?
আরাফাতের রুমে বসে রয়েছে প্রিয়ন্তী৷ রুমটা বেশ ছোট। এককোনায় একটা খাট, একটা ওয়ারড্রব এবং একটা টেবিল রয়েছে। টেবিলের উপর আরাফাতের সব আইনের বই এবং পুরস্কার রয়েছে। দেয়াল জুড়ে কিছু তার অর্জনের ছবি, পরিবারের ছবি এবং একটি বড় আয়না রয়েছ। ঘরের দক্ষিণে একটা বারান্দা রয়েছে। বারান্দা থেকে বাসার কেঁচি গেটটা দেখা যায়। বাসাটা বেশ পুরোনো। মিরপুরে এই দুতালার ছোট বাড়িগুলো এখনো দেখা যায়। দেয়ালে একটা ছবির দিকে এক নজরে তাকিয়ে রয়েছে সে। সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে রয়েছে আরাফাত, ছবিটা তার বা পাশ থেকে তোলা হয়েছে। যুবক হিসেবে সত্যি ই সুদর্শন, যেকোনো মেয়েই তাকে বিয়ে করতে চাইবে। কথাটা ভাবতেই মুখে একটা আধার নেমে আসে প্রিয়ন্তীর৷ গতকালের ঘটনাগুলো সেলুলয়েডের ফিল্মের মতো চোখের সামনে ভাসতে থাকে।
সন্ধ্যা ৭টা,
প্রিয়ন্তী তখন রোগী দেখতে ব্যস্ত। হঠাৎ একজন নার্স এসে তাকে বলে,
– ম্যাডাম একজন আপনার সাথে কথা বলতে এসেছে।
– কে?
– জানি না ম্যাডাম। বললেন, আপনার সাথে পাঁচ মিনিট কথা বলবেন৷
প্রিয়ন্তী রোগী দেখা শেষে কেবিনে প্রবেশ করতেই দেখে চেয়ারে আরাফাত বসে রয়েছে। আরাফাতকে দেখেই বেশ অবাক হয়ে যায় প্রিয়ন্তী। লোকটা এক সপ্তাহ আগে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলো। আজ কি এমন হলো তার সাথে দেখা করতে আসলো! নিজেকে স্বাভাবিক রেখেই প্রিয়ন্তী বললো,
– আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
– সাহায্যের জন্যই এসেছি এটা কিভাবে বুঝলেন?
– আমার সাথে আপনার তো এমন কোনো বন্ধুত্ব নেই যার জন্য সকাল সকাল আপনি গল্প করতে আসবেন! বলুন কি করতে পারি?
– আমাকে বিয়ে করতে হবে
নির্বিকার ভাবেই কথাটা বললো আরাফাত। আরাফাতের মুখের দিকে কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে থাকে প্রিয়ন্তী৷ সে কি মজা করছে নাকি নেশা করে এসেছে এটা বুঝতে পারছে না। আরাফাত চোখ স্থির, মানুষ সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো এমন স্থির চোখে বলে। কোনো বিচলিতা তার মধ্যে কাজ করছে না। নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে প্রিয়ন্তী প্রশ্ন করে উঠলো,
– জ্বী, বুঝি নি! কি করতে হবে?
– বিয়ে, বিয়ে করতে হবে।
– সকাল সকাল ডেট এক্সপায়ার গঞ্জিকা সেবন করেছেন?
– আমি সিগারেট খাই তাও বেনসন। ড্রিংক করলেও দু তিন বছরে তাও বন্ধুদের সাথে। গাঁজা ভালো লাগে না
– আমি কি আপনার শখের বিবরণ চেয়েছি?
– হবু বউ কে সব বলে রাখাটা ভালো। পড়ে ক্যাচক্যাচানি লাগবে না
– ফাজলামি নাকি আমি আপনাকে কেনো বিয়ে করবো?
– যাতে আরশাদ এবং রুপন্তীর বিয়েটা হয়।
খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিমাতে কথাটা বললো আরাফাত। এই লোকটা আসলেই পাগল-ছাগল। তার কাছ থেকে উপায় চেয়েছে, এক সপ্তাহ পর এই উপায় নিয়ে হাজির হয়েছে এই পাগল লোক। প্রিয়ন্তী ভ্রু কুচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি প্রয়োগ করে তার দিকে তাকিয়ে আছে আরাফাতের দিকে৷ কিন্তু এসবকে উপেক্ষা করে স্বাভাবিক ভাবেই বসে রয়েছে আরাফাত। প্রিয়ন্তী এবার ধীর কন্ঠে বললো,
– এটা সম্ভব নয়, ওদের বিয়ে দেবার জন্য একটি মিথ্যে বিয়ে নাটক করা
– আমরা মিথ্যে বিয়ে করবো না। সত্যি সত্যি বিয়ে করবো। আমি আপনাকে সত্যি বিয়ে করবো।
– এটা কোনো নাটক সিরিয়াল নয়, আরাফাত সাহেব প্লিজ রিয়ালিটিতে আসেন। রুপন্তী এবং আরশাদকে বিয়ে দেবার আরোও উপায় আছে
– আর উপায় নেই।
– মানে?
– মানে, অন্য কোনো উপায়েই তারা সুখী হবে না। শুধু শুধু তাদের প্যারা খেতে হবে। এর থেকে এটা ভালো না আমরা বিয়ে করে নেই। আমাদের বিয়েটা মা মেনে নিলে আর কোনো ঝামেলা হবে না।
– বিয়ে কোনো ফাজলামি নয়!
– জানি, আমি বিয়ে করতে চাই না। আর আপনিও মানুষের টন্ট শুনতে শুনতে বিরক্ত। আমাদের কাছে এর থেকে ভালো উপায় আর নেই। আমার আপনার কোনো স্বভাবে প্রব্লেম নেই। আর ছমাস আমার সাথে থাকলেই আপনি বুঝতে পারবেন।
– আর ছ মাস পর? আমি আপনার থেকে বয়সে বড়, ডিভোর্সী। এমন মেয়েকে আপনার মা মানবে?
– সেটা আমার উপর ছেড়ে দিন।
– জিদ ছেড়ে দিন আরাফাত।
– এটা জিদ নয়। আমি জিদ করি না। আমি আপনাকে কাল সকালের সময় দিচ্ছি ভেবে দেখুন। রুপন্তীর জন্য এমনটা তো করতেই পারবেন। আর একটা কথা, আমি হয়তো আপনাকে ভালোবাসি।
– হয়তো?
– হুম, কারণ আমি ভালোবাসা নামক পথের নতুন পথিক। তাই বুঝতে পারছি না।
– আপনি পাগল
– জানি
প্রিয়ন্তী বিরক্ত। আরাফাতের সাথে সে তর্কে পেরে উঠছে না। লোকটা কিছুই বুঝতে চাইছে। প্রিয়ন্তী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
– আমি আপনাকে বিয়ে করবো না
– সেটা আপনার ইচ্ছে, তবে একটু রুপন্তীর কথাটা চিন্তা করে দেখবেন। মেয়েটার ভবিষ্যতের ব্যাপার।
বলেই উঠে দাঁড়ালো আরাফাত। আরাফাতের বলা শেষ বাক্যটি বজ্রের মতো কাজ করলো। সারারাত চিন্তা করেছে প্রিয়ন্তী। শেষমেষ আরাফাত নামক ব্যাক্তিটিকে সে বিয়েটা করেই ফেললো। বাসায় কাউকেই সে জানায় নি। চিন্তা হচ্ছে, শিপন, জাহানারা বেগম কিংবা রুপন্তী কি মেনে নিবে। চিন্তায় মগ্ন ছিলো প্রিয়ন্তী। তখনই……………….
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি