আরোও_একবার_বসন্ত,১৬,১৭

0
404

#আরোও_একবার_বসন্ত,১৬,১৭

#১৬তম_পর্ব

চিন্তায় মগ্ন ছিলো প্রিয়ন্তী। তখনই অনুভব করলো ঘাড়ের উপর উত্তপ্ত নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে। হঠাৎ এমন অনুভূতি হওয়ায় বেশ ভয় পেয়ে যায় প্রিয়ন্তী। তাড়াতাড়ি পেছনে ফিরতেই প্রিয়ন্তীর মনে হলো একটা পাহাড়ের সাথে ধাক্কা খেলো। মাথা তুলে দেখে তার সামনে আরাফাত দাঁড়িয়েছে। কেবল গোসল করে বেড়িয়েছে সে। ভেজা চুলগুলো থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। কালো একটি টিশার্ট পড়েছে সাথে ধূসর বর্ণের ট্রাউজার। আজ হয়তো থানায় যাবে না সে। সকাল সকাল বিয়ের ঝামেলায় থানায় বলে দিয়েছে আজ একটু ঝামেলার জন্য আসতে পারছে না। বাথরুম থেকে বেড়িয়ে আরাফাত দেখলো এক ধ্যানে তার ছবি দেখে যাচ্ছে প্রিয়ন্তী। খানিকটা কৌতুহল ও কাজ করলো আরাফাতের। এই ছবিটার মাঝে কি এমন আছে যে প্রিয়ন্তী এক মনে ছবিটি দেখে যাচ্ছে। তাই পেছনে ঝুকে প্রিয়ন্তীকে দেখে বোঝার চেষ্টা করছিলো। তখনই প্রিয়ন্তী পেছনে ফিরে আর ধাক্কা খায়। নাকে হাত দিয়ে বিরক্তির স্বরে প্রিয়ন্তী বলে,
– এভাবে ভূতের মতো পেছনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন কেনো? ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম পুরোই
– তাই বুঝি? আপনি ভয় ও পান। আচ্ছা আমি কি খুব হ্যান্ডসাম?
– কিহ? আপনি আর হ্যান্ডসাম। বাঁদরের মতো তো চেহারা।
– তাহলে একধ্যানে আমার ছবির দিকে তাকিয়ে ছিলেন কেনো?
– কোথায়?
– আমি কতক্ষণ আপনার পেছনে দাঁড়িয়ে আছি জানেন? আপনি অপলক দৃষ্টিতে শুধু আমার ছবি দেখে যাচ্ছিলেন।

কথাটা শুনে খানিকটা লজ্জা পেয়ে যায় প্রিয়ন্তী। অনেকটা চুরি করতে যেয়ে ধঅরা পড়ে যাবার মতো অনুভূতি হচ্ছে তার। কিন্তু এটা আরাফাতকে বুঝতে দেওয়া যাবে না। তাই নিজের সাফাই এ বললো,
– ফোটোগ্রাফার ভালো তাই ছবিটা ভালো হয়েছে। আমি তো ফোটোগ্রাফারের ছবি দেখছিলাম। এখন সেটা আপনার ছবি হলে আমার কি করার, সরেন সরেন। আমার ডিউটি রয়েছে। আমি হাসপাতালে যাবো।

বলে চলে যেতে নিয়ে থেমে যায়। পেছনে ফিরে ধীর কন্ঠে বলে,
– আমার বাসায় যেতে হবে। সকালে হসপিটালের জন্যই বেড়িয়েছিলাম। বাসায় কেউ ই জানে না। জানি না তারা কিভাবে রিয়েক্ট করবেন। আচ্ছা ভূল কি কিছু করেছি?

প্রিয়ন্তীর মুখে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে। সে করুণ দৃষ্টিতে আরাফাতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আরাফাত ধীর কন্ঠে বললো,
– আমি তো আছি। চিন্তা করবেন না। ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।

আরাফাতের সান্ত্বনা বাণীতে মনের কোথাও না কোথাও একটি সুপ্ত আশা জন্মায়। ঠোঁটের কোনায় মলিন হাসি ফুটে উঠে। বিয়ের মতো সাংঘাতিক কাজটি করার পর ও প্রিয়ন্তীর বেশ একটা চিন্তা হচ্ছে না। কারণ তার পাশে আরাফাত নামক একজন পুরুষ দাঁড়িয়েছে। রেজিষ্ট্রির সময় খুব হাত কাঁপছিলো প্রিয়ন্তীর। তখন আরাফাত একটা কথাই বলেছিলো,
” আমার জীবনের বসন্ত আপনি৷ আমিও আপনার জীবনের বসন্ত হতে চাই। আরোও একবার বসন্ত হয়ে আপনার জীবনে নিজের অস্তিত্ব গড়তে চাই, অনুমতি পেতে পারি কি?”

কথাটা বলে হাতটি বাড়িয়ে দিলো আরাফাত। কেনো যেনো হাতটি ধরতে ইচ্ছে হলো প্রিয়ুর। হয়তো ক্ষণিকের ভালোলাগা, কিন্তু কিছু একটা আরাফাতের মাঝে আছে যা অনেকটা সূর্যের কিরণের মতো। সূর্যের কিরণ যেমন সকল কালো মেঘের আবরণ সরিয়ে ঝলমলে আলো দিয়ে পৃথিবীকে আলোকিত করে। আরাফাত ও খানিকটা তেমন প্রিয়ন্তীর জন্য। সে জানে না ভবিষ্যতে কি আছে! সে কেবল বর্তমানে থাকতে চায়, একটু সুখি কুড়াতে চায়। তাতে কি খুব ভূল হবে!
__________________________________________________________________

ছাদের এক কোনায় সিগারেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে আরাফাত। বিয়েটা তো করে ফেলেছে কিন্তু এখনো যে একসাথে পথ চলা বাকি। প্রিয়ন্তী নামক মানুষটার অতীতের ছিটা কিছু তার জানা আছে কিন্তু আসলে কি হয়েছিলো, কেনো তাকে সেই লোকটা ছেড়ে দিয়েছিলো কিছুই জানা নেই আরাফাতের। এর চেয়েও চিন্তার ব্যাপার হলো প্রিয়ন্তীর মনে নিজের জন্য জায়গাটা কিভাবে করবে সে! আর যদি কখনোই সেটা না করতে পারে। প্রিয়ন্তী একবার বলেছিলো,
” ইরফান তার জীবনের প্রথম পুরুষ”

কথাটা ভাবতেই বুকে ছ্যাত করে উঠে আরাফাতের। প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোলাগা, প্রথম ভালোবাসা; জীবনে প্রথম জিনিসটা খুব ভয়ংকর হয়। সেটা অনেকটা খুব পুরোনো এলকোহলের মতো হয়। ধীরে ধীরে নেশা হয় কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী। হয়তো এজন্যই প্রিয়ন্তীর প্রতি তার অনুভূতিগুলো কিছুতেই মনের কোন থেকে বের করতে পারছিলো না সে। চিন্তায় গভীর সাগরে ডুবে ছিলো আরাফাত। ঠিক তখনই আরশাদের কন্ঠ তার কানে আছে,
– তুমি এতো স্বার্থপর এটা আমার জানা ছিলো না

আরশাদের কন্ঠ কানে আসতে পেছনে ফিরে আরাফাত। আরশাদের মুখটা শক্ত হয়ে আছে। আরাফাত কিছু বলার আগেই………….

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি
#আরোও_একবার_বসন্ত
#১৭তম_পর্ব

– তুমি এতো স্বার্থপর এটা আমার জানা ছিলো না

আরশাদের কন্ঠ কানে আসতে পেছনে ফিরে আরাফাত। আরশাদের মুখটা শক্ত হয়ে আছে। আরাফাত কিছু বলার আগেই আরশাদ ক্ষুদ্ধ কন্ঠে বলে,
– কি জানি বলেছিলে, বাসার অমতে বিয়ে করাটা কখনোই সলুশ্যন নয়। এখন তুমি কি করলে? না জানিয়ে ঠিক ই বিয়ে করে ফেললে। তোমার সব রুলস কেবল মাত্র আমার জন্য। নিজের বেলায় সব সংবিধান পালটে যায়। আসলে কি বলো তো তুমি একটা নিতান্ত স্বার্থপর মানুষ। যা একটু রুপুর সাথে আমার কথাটা এগুতো তুমি তাতেও একটা দেয়াল টেনে দিলে। কেনো ভাই? আমি কি তোমার পর? আমি তো ভাবতেই পারি নি তুমি তলে তলে টেম্পু চালক বের হবে। নিজের ভালোবাসার বেলায় ষোল আনা বুঝে নিলে।

আরশাদের রাগ যথার্থ। কারণ এতোদিন আরাফাতই তাকে নানা রকম সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দিয়েছে। আরশাদ যেমন ছেলে ঠিকই রুপন্তীকে বিয়ে করে নিয়ে আসতো। আরাফাত তাকে কখনো শাসন করে, কখনো বুঝিয়ে দমিয়ে রেখেছে। তখন বড় ভাই বিধায় তার কথা মেনে চুপ করে ছিলো। কিন্তু আজ এতোদিনের সুপ্ত ক্ষোভ আগ্নেয়গিরির লাভার মতো বের হচ্ছে। এই লাভায় পুড়তে তো তাকে হবেই। নিজেকে শান্ত রেখে আরশাদের অপবাদগুলো মাথা পেতে নিলো আরাফাত। আরশাদের ক্ষোভের মাত্রা কমতে লাগলে ধীর স্বরে ঠান্ডা কন্ঠে বলে,
– শেষ বলা?
-………
– এবার কি আমি কিছু বলার অনুমতি পেতে পারি?
– কি বলবে তুমি? বলার মুখ আছে তোমার?
– মুখ তো আছেই বলার জন্য। তুই যদি তোর মুখ দিয়ে গারবেজ বকতে পারিস আমি পারি না?
-………..
– এটা ঠিক হয়তো আমি প্রিয়ন্তীকে ভালোবাসি। তার প্রতি আমার একটা টান কাজ করে। কিন্তু আমি সেকারণে প্রিয়ন্তীকে বিয়ে করি নি। আর সবচেয়ে বড় কথা প্রিয়ন্তী আমাকে ভালোবাসেন না। আমাদের বিয়ের একটাই উদ্দেশ্য সেটা হলো তোদের বিয়ে।
– বুঝলাম না!
– আমি কি হিব্রু ভাষায় বলেছি? বাংলায় তো বললাম। আমরা বিয়ে করেছি যাতে তোদের বিয়েটায় কোনো ঝামেলা না হয়।
– বিয়ে করলে তুমি আর আমাদের বিয়ের বাহানা দিচ্ছো, এতোটা মিথ্যেবাদী কবে থেকে হলে ভাই?
– তোর যেটা ভাবতে ইচ্ছে হয় সেটাই ভাবতে পারিস।কিন্তু সত্যি এটাই। প্রিয়ন্তী আমাকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছে যাতে রুপন্তী এবং তোর ব্যাপারটার কোনো হিল্লে হতে পারে। মার কখনোই রুপন্তীর সাথে কনো সমস্যা ছিলো না। সমস্যা একটাই ছিলো সেটা হলো প্রিয়ন্তীর ডিভোর্স। যদিও এতে প্রিয়ন্তীর কোনো দোষ নেই। তবুও মার কাছে সেই দোষী। মার এই ভ্রান্ত ধারণাটা ভাঙ্গার জন্যই এই বিয়ে। আমি জানি না আমাদের বিয়ের ভবিষ্যত কি! তবে আমি চাই তোদের ভবিষ্যতটা সুখময় হোক।
– তাহলে তোদের বিয়েটা ভিত্তিহীন বলছিস?

আরশাদের প্রশ্নে চুপ মেরে যায় আরাফাত। খুবই যৌক্তিক প্রশ্ন করেছে সে। আসলেই কি তার এবং প্রিয়ন্তীর বিয়ে ভিত্তিহীন। তা কেনো হবে? কবুল বলে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেছে সে। সেই বিয়ে কি ভিত্তিহীন হবে। কিন্তু প্রিয়ন্তী তো তাকে ভালোবাসে না। যদি কখনোই ভালো না বাসে কি করবে সে। বুক থেকে অচিরেই দীর্ঘশ্বাস বের হলো আরাফাতের। ধীর কন্ঠে বলে,
– ভিত্তিহীন কি আদৌ জানি না, তবে চেষ্টা চালাচ্ছি যদি ভিত্তিটা গড়ে উঠে। বিয়েটা ঢপের বিয়ে করি নি। ফুল রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেছি বলে কথা
– ভালোবাসো প্রিয়ন্তী আপুকে?
– একটা অজানা মায়ায় জড়িয়ে গেছি। তাকে দেখলে মনের কোনায় ঠান্ডা বাতাস বয়ে যায়। মোট কথা, আমার ভালো থাকার খোড়াক সে। এটা যদি ভালোবাসা হয় তবে তাই।

বলেই সিগারেটে সুখটান দেয় আরাফাত। আরশাদ অবাক চোখে আরাফাতের দিকে তাকিয়ে আছে। কথাটা কি স্বাভাবিকভাবেই বলে দিলো আরাফাত। আরাফাত নামক মানুষটি সবসময় এমন। বাবা মারা যাবার পর থেকেই সে এমন। কখনো বিচলিত হয় না সে। আরাফাত যদি সত্যি ই প্রিয়ন্তীকে ভালোবেসে থাকে তবে প্রিয়ন্তীর সাথে তার অদূর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভাবতেই তার ভেতরটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবার কথা। কিন্তু এর মাঝেও সে অবিচলিতভাবে সিগারেট টেনে যাচ্ছে। এতো অদ্ভুত কেনো আরাফাত এটা একটা গবেষণার বিষয়। আরশাদ ছোট বেলা থেকে এই গবেষণা চালাচ্ছে কিন্তু তাতেও উত্তর মেলে নি তার। চিন্তার ভাজে কপাল কুঞ্চিত হয়ে এসেছে আরশাদের। না ভাবতে পারছে ন সে। এখন শুধু আগামীর অপেক্ষা। দেখা যাক তার অদূর ভবিষ্যতে কি লেখা আছে
__________________________________________________________________________

বিকেল ৪টা,
স্থানঃ প্রিয়ন্তীর বাসা
পিনপতন নীরবতা বিরাজমান বসার ঘরে। জাহানারা বেগম চুপটি মেরে বসে রয়েছেন। শিপন কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। তার মুখে অবিশ্বাসের ছাপ স্পষ্ট। স্নেহার মুখের বিরক্তি, তার ননদিনীদের কীর্তির তো শুরু এবং শেষ নেই। এক ননদিনীর প্রেম নিয়ে ঘর রমরম হয়ে উঠেছে, এখন আরেক ননদিনী একেবারে বিয়ে করেই বাসায় এসেছে। তাও নিজের চেয়ে বয়সে ছোট একজন ছেলেকে। এতোদিন নামী দামি ব্যবসায়ী, ব্যাংকারদের বিয়ে এসেছে কিন্তু তিনি সেই বিয়ে সুন্দর মতো ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন বিয়ে করেছে তো করেছে একটা পুলিশকে, যার চাকরি খুবই সামান্য। বয়সেও তার থেকে ছোট। বলিহারি যাই তার কান্ডজ্ঞানের। মানুষকে কি বলবে পরিবার, একটাবার ভাবার প্রয়োজনীয়তাবোধ হয় নি তার। তুই পছন্দ করিস ভালো কথা তা আগে বললেও বা কি হতো একেবারে বিয়ে করে হাজির হবার কি আছে! রুপন্তী অংক মেলাতে পারছে না। তার বোন কোনো কারণ ব্যতীত এমনধারা অবিবেচকের ন্যায় কাজ মোটেই করবে না। কি এমন দায় ঠেকেছিলো যে এমন কাজটা করতে হলো! প্রিয়ন্তী মাথা নিচু করে বসে রয়েছে। পাশে আরাফাতও বসে রয়েছে। প্রিয়ন্তী নানাবিধ প্রশ্নের সম্মুখীন হবে বা হচ্ছে এটা ভেবেই তার এখানে আসা। হাত দুটো একত্রিত করে পায়ের উপর রেখে বা পাটা নাড়াচ্ছে আরাফাত। কেনো যেনো বেশ নার্ভাস লাগছে। এটা শ্বশুরবাড়ি বলে কথা। শ্বশুর বাড়িতে জামাই হিসেবে এই প্রথম বসে রয়েছে টেনশন হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। এর মাঝেই জাহানারা বেগম ধীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
– হুট করে বিয়ে করার কারণটা কি? তাও না জানিয়ে। মেয়ের বিয়েতে উপস্থিত থাকার অধিকার সকল বাবা-মার ই আছে। আমাদের বললে কি হতো?
– আন্টি আপনারা কেউ মেনে নিতেন না
– এখন মেনে নিবো তোমার মনে হয়?
– না, এখনো মানবেন বলে মনে হচ্ছে না। তবে এখন আমাদের বিয়েটা হয়ে গেছে। আগে জানালে হয়তো বিয়েটা করতে পারতাম না। আমার মাকে আমি চিনি সে কোনো না কোনো ছুতোয় ঠিক আটকে দিতো। কিন্তু এখন কারোর কিছুই করার নেই। কারণ এখন আমি প্রিয়ন্তীকে ছাড়বো না।

নির্বিকার ভঙ্গিমাতে কথাটা বলে দিলো আরাফাত। জাহানারা বেগমের ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে আসলো। ছেলেটার মাঝে কোনো মেকিভাব নেই। সেদিনো যা বলেছিলো সবগুলো কথা ছিলো সোজা সাপটা, আজও তাই। নিজেকে ভালো লাগাবার কোনো চেষ্টা তার মাঝে নেই। তবে কথা শেষ কথাটাই জাহানারা বেগমের মনে দাগ কেটে গেছে। ছেলেটি তার মেয়েকে ছাড়তে নারাজ। তার মার স্বভাব জানা স্বত্তেও সে প্রিয়ুকে বিয়ে করেছে। তবে কি তার মেয়ের শীতার্ত জীর্ণ জীবনে বসন্তের ছোয়া লাগতে চলেছে! আরাফাত কি সত্যি পারবে বসন্ত হয়ে প্রিয়ুর রংহীন জীবনকে সাজাতে! একবার বিশ্বাস করতে দোষ কি! মুখের কোনায় হাসি টেনে হিনহিনে গলায় বললেন,
– আমার মেয়ের দোষের শেষ নেই। মানুষ তার জীবনের খুদ ধরতে ধরতে ক্লান্ত। এর মাঝেও তুমি তাকে বিয়ে করেছো। আমি তোমাদের বিয়েতে আপত্তি জানাবো না। তবে আমি তোমাদের বিয়ে মেনেও নিবো না। যেদিন তোমার মা নিজে আমার বাসায় এসে আমার মেয়ের হাত চাইবে সেদিন আমি তোমাদের বিয়েকে মেনে নিবো। প্রিয়ু তুমি তোমার জামা কাপড় নিয়ে যেতে পারো। আর একটা কথা, এবারের বিয়েটা আমরা জোর করে দি নি তুমি নিজে করেছো। একটু বুঝে শুনে সংসার করো।

বলেই উঠে দাঁড়ালেন জাহানারা বেগম। নিজের মাকে এতোটা বাঘিনী হতে কখনোই দেখে নি প্রিয়ু। কারণ সবসময় ছেলে-মেয়েদের সামনে নরম হয়ে থাকতেন তিনি। কিন্তু আজ তার কথায় কোনো জড়তা নেই। মুখে চিন্তা নেই। সে তার কথায় অবিচল। প্রিয়ন্তীকে কথাটা বলেই তিনি নিজের রুমে চলে গেলেন। শিপন কিংবা স্নেহা দেইরা কথা বললো না। প্রিয়ু ও কারোর সাথে কথা না বলে ব্যাগ গুছিয়ে নিলো। আরাফাত গেটে দাঁড়িয়ে ছিলো। প্রিয়ু আসতেই হাত এগিয়ে দিলো সে। ধীর কন্ঠে বললো,
– চলুন মিসেস ইয়াসির আরাফাত।

আরাফাতের কন্ঠটা বসন্তের রাতের শীতল হাওয়ার ন্যায় প্রিয়ুর মনের ক্ষততে পরশ বুলিয়ে গেলো। ঠোঁটের কোনে হাসি টেনে হাত বাড়িয়ে দিলো প্রিয়ু। বাসায় ঢুকতেই আক্কেলগুড়ুম হয়ে গেলো আরাফাতের। বাসায় তখন………………

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here