আলো_আঁধার,part_11
writer_Tahsina_Islam_Orsha.
তৃষ্ণার সাথে যখন আবেগ আর অনুভুতি মিশ্রিত হয় তখন ভিতরে ভয়াবহ এক অজানা অনুভূতি অনুভব হয়৷ সেই অনুভুতি ঢেউয়ের মতো হৃদকম্পনে এসে উপচে পড়ে আর তার শব্দে বুকের ধুকধুকি বেড়ে অস্থিরতার সৃষ্টি করে । আলোরও তাই হচ্ছে এখন এই মুহুর্তে।
ভালোবাসার মানুষটির মুখে নিজের নাম শুনতে পারা সত্যিই ভাগ্যের আর আনন্দের ব্যপার। এর থেকে মধুরশ্রুতি হয়তো আর কিছু হয়না। এই মুহূর্তে আলোর তাই মনে হচ্ছে। এই ডাকে এতো ভালো লাগা কেন কাজ করে জানা নেই আলোর। তবে ভীষণ রকমের ভালো লাগে।
আলোর চোখ জোড়া স্থির হয়ে আবদ্ধ করে রেখেছে আঁধারের মুখ। এই মুখে ভালোবাসি শব্দটা শুনলে কেমন লাগবে তা ভাবছে আলো।আদৌ কি শোনা হবে কখনো?
আঁধার আলোর হাত ছেড়ে দিতেই আলোর ভাবনার ছেদ ঘটে। আঁধার আস্তে করে কাশি দিয়ে
‘ আলো ফায়েজ ভীষণ জেদ ধরে আছে ওর সাথে যেতে হবেই নাকি। আমি অনেক মানা করার পরও মানছে না এই দিকে রাইসার ফেমিলিকে তো জানোই আমাকে ফোন করে বার বার অনুরোধ করছে আমি আর তুমি যাতে রাইসা,আর ফায়েজের সাথে ওদের ওখানে যাই। এখন ফায়েজকে তো আমি মানা করতে পারি কিন্তু ওদের কি ভাবে বার-বার মানা করবো? কি করবো এখন?
আলো আশাহত হয়ে আঁধারের মুখ থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। নীরবে দু’কদম পিছে গিয়ে
‘ তাই করেন যা আপনার ভালো লাগে। জোর করে তো আর কিছু হয়না। আপনি যেতে না চাইলে ওরা তো আর বারবারই জোর করতে পারবে না।
আলোর কথা শোনে আঁধারের রাগ হয়। কিছুটা শান্ত হয়ে
‘ স্টুপিডের মত কথা বলো না। সব জায়গায় এতো বোকামি কেন করো? ওদের আমি এই ভাবে কতবার না করে দেবো কি ভাববে ওরা? তাছাড়া এখন ওরা আমাদের আত্নীয়। স্টুপিড মেয়ে।
আলোর চোখে বিন্দু বিন্দু পানি চলে আসে, বার বার কেন এই ভাবে বকাবকি করতে হবে তাকে। কে বলেছিলো তাকে জিজ্ঞেস করতে আর কে বলেছিলো বকাঝকা করতে। আলোর চোখে পানি চিকচিক করছে আঁধার তা খেয়াল করেছে। আলো চলে যেতে নিলে আঁধার আবার আলোর হাত ধরে বেডে তার পাশে বসায়। আলো জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আঁধারের দিকে তাকায়।
আঁধার বুঝতে পারে আলো তার কথায় ভীষণ ব্যতিত হয়েছে তাই অন্য কথা না বাড়িয়ে
‘ খাবার রেখে কোথায় যাচ্ছো?
আলো মাথা নামিয়ে
‘ আর খাবো না।
আঁধার চোখ রাঙিয়ে
‘ আর খাবে না মানে? শুধু একটুকরো মুখে দিলে আর খাওয়া শেষ ? বাকি খাবার কে খাবে? খাবার নষ্ট করা ভালো না জানো না? এখনি খেয়ে নাও সব।
আলো কোন কথা না বলে আবার উঠে চলে যেতে নিলে আঁধার আবার হাত ধরে বসিয়ে দেয় বেডে। এভাবে তিনবার আলো উঠে যেতে নিলে আঁধার হাত ধরে বসিয়ে দেয় মুখে কিছু না বলে । আলোর রাগ হচ্ছে অনেক কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। এখন যদি আবার উঠতে চায় ও তাহলে আবার হাত ধরে টেনে বসাবে এমন করতে করতে হাতই না খুলে পড়ে আলোর, তাই চুপচাপ প্লেট হাতে নিয়ে খাওয়া শুরু করে।
আঁধার মুখ টিপে একটু হেসে উঠে হাতে ল্যাপটপ নেয়। সোফায় বসে হাটুর উপরে ল্যাপটপ রেখে কি যেন করতে করতে আলোকে বলে
‘ খেয়ে কাপড়চোপড় গুছিয়ে নাও । বিকেলে ওদের সাথে যেতে হবে। আর হুম আমার কাপড়ও গুছিয়ে রেখো।
আলো খাবার মুখে নিয়েই চোখ বড় বড় করে তাকায়। ঠিক শুনছে কিনা বুঝতে পারছে না।আসলেই কি আঁধার যেতে চায়? তাও ওর সাথে। আঁধার এমনিতেই কারো বাসায় গিয়ে কখনো থাকেনা। ভালো লাগে না নাকি। আঁধার
সজ্ঞানে আছে নাকি দেখার জন্য আলো আঁধারের দিকে তাকায়।
নাহ সজ্ঞানেই আছে তাহলে এমন আবোলতাবোল করছে কেন বুঝতে পারছে না ( মনে মনে)
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আলোই নীরবতা ভাঙে তার শব্দ দিয়ে
‘ তাহলে তিন্নিকে খুঁজতে যাবেন না?
আলোর কথা শোনে আঁধার মুখ তুলে আলোর দিকে তাকিয়ে আবার ল্যাপটপে তাকায় কোনো উত্তর না দিয়ে।
আলো মলিন মুখে তাকিয়ে থেকে কোন উত্তর না পেয়ে চুপ হয়ে যায়।
খাওয়া শেষ করে আলো রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে যাওয়ার জন্য একটু সামনে যেতেই আনিশা আলোর পথ আটকিয়ে
‘ কি ব্যপার? এমন কাজের মেয়েদের মতো সবার সামনে যাবি নাকি। নিচে অনেকে এসেছে বউ দেখতে। রাইসা তৈরি হচ্ছে তুইও তৈরি হয়ে নে।
আলো আনিশার কথায় বিব্রত হয়ে
‘ তৈরি হবার কি আছে আমায় তো সবাই চেনেন নতুন করে আর কি দেখবে? ওরা তো জেনেই গেছে হয়তো আশ্রিতা মেয়ের সাথে বিয়ে হয়েছে এই বাড়ির ছেলের ।
আলোর কথা ভিতর থেকে সব শুনছে আঁধার।
আনিশা আলোকে ধমক দিয়ে
‘ তুই চুপ কর। সব সময় বেশি বুঝিস কেন?এখন আর তখনকার সময়ে অনেক পার্থক্য এখন তুই এই বাড়ির বউ। চল আমি রেডি করে দিচ্ছি তোকে ।
আলো আর কিছু বলার আগেই আনিশা আলোকে ভিতরে নিয়ে গিয়ে একটা শাড়ি বের করে দেয় পড়ে আসার জন্য। আঁধারকে দেখে কিছু বলেনি আর আনিশা। আঁধার নিজের মনের মতো কাজ করে যাচ্ছে ল্যাপটপে।
আলো শাড়ি পড়ে এসে দেখে আনিশা নেই রুমে। আঁধার বসে বসে কাজ করছে। আনিশাকে না দেখে আলোর মন খারাপ হয়ে যায়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ব্লাউজের ফিতাটা দুহাত উল্টে লাগানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না কিছুতেই। আঁধার আড়চোখে সব কিছু দেখছে আর মিটমিট করে হাসছে। হাঠাৎ আঁধারকে উঠতে দেখে আলো পিঠ দেওয়ালের সাথে লাগিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।
আঁধার আলোর দিকে আসছে দেখে সে নিচে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। এই দিকে কেন আসছে নিশ্চয় আবার বকাঝকা করবে
আঁধার আলোর কাছে এসে দাঁড়াতেই আলোর বুকের কম্পন আরো বেড়ে যায়। আঁধার খুব কাছে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতে পারছে আলো। চোখ খোলা যাবেনা। যাইহোক চোখ খোলা যাবেনা৷ আলো চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে।
আঁধার আলোর দুবাহুতে ধরতেই আলো কেঁপে উঠে। আঁধার আলোকে ঘুরিয়ে ব্লাউজের ফিতা দুটো বেধে দিতেই আনিশা এসে কাশি দেয়।
আঁধার কিছু না বলে আবার সোফায় গিয়ে বসে পড়ে। আনিশা ড্রেসিং টেবিলের উপর কিছু গহনা রেখে আলোর দিকে তাকিয়ে
‘ গহনা আনতে গিয়েছিলাম। এই গুলো মা দিয়েছে, তোকে এই গুলো শাড়ির সাথে পড়তে বলেছে।
আলোকে আনিশা হালকা মেকাপ করে দিয়ে গহনা গুলো পড়িয়ে দেয়। আঁধার এতোক্ষণ ধরে আলোকেই দেখছিলো। সাজানো শেষ হলে উঠে চলে যেতে নিতেই আঁধার চোখ সরিয়ে ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকায়।
আনিশার যাওয়ার পথে আঁধারকে
‘ থাক এখন আর চোখ নামাতে হবে না।
আঁধার চুপ করে একটু রাগ দেখায় আনিশাকে।
আলো নিচে গিয়ে দেখে রাইসা বসে আছে আগে থেকেই নিচে। মমতা জাহিদ আলোকে নিয়ে রাইসার পাশে বসায়।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে আলো আর আঁধার তৈরি হয়ে ওদের সাথে রওনা দেয়। প্রায় এক ঘন্টার রাস্তা। আঁধার ড্রাইভ করছে পাশে আলো বসে আছে। পিছনে ফায়েজ আর রাইসা সেল্ফি তোলায় ব্যস্ত।
রাইসা ওদের দু’জনকে উদ্দেশ্য করে
‘ একটা গান বাজাও না। তোমরা দু’জন খুবই বোরিং। রাস্তা শেষ হবে না হয়।
ফায়েজ রাইসার কথায় সায় দিয়ে
‘ ভাইয়া একটা গান দাও বোরিং লাগছে আসলেই।
আঁধার দাঁতে দাঁত চেপে রবীন্দ্র সংগীত ছাড়ে
রাইসা এবার দুঃখে কেঁদে দিবে অবস্থা। ও চেয়েছিলো একটু বেশি রোমান্টিক গান শুনবে কিন্তু না উনি দিয়েছে রবীন্দ্রনাথের দেশাত্মবোধক গান। চুপ চাপ কষ্ট চেপে সবাই রাইসাদের বাড়ি গিয়ে পৌঁছায়।
রাইসার রুমে রাইসা আর ফায়েজ থাকবে পাশের রুমেই আলো আর আঁধারের থাকার ব্যবস্তা করেছে ওরা৷ আলো রাইসার সাথে গল্প করে ওদের রুমে আসে ফ্রেশ হতে। আঁধার নেই হয়তো ফ্রেশ হয়ে ফায়েজের সাথে কোথাও গিয়েছে। আলো ঘুরেফিরে ঘরটা দেখছে তখনি দেখলো মেঝেতে একটা চিঠি পড়ে আছে।
আলো চিঠিটা হাতে নিয়ে ভাবছে আঁধার কি চিঠি ফেলে গেছে আলোর জন্য? কিন্তু নিচে পড়া কেন? ফ্যান চালানো হয়তো ফ্যানের বাতাসে নিচে পড়েছে। কিন্তু কি আছে এই চিঠিতে যা মুখে বলা যাবে না?
চলবে….
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।