আলো_আঁধার,part_16+ 17 (last_part)
writer_Tahsina_Islam_Orsha.
আইসিইউর কাঁচের ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে আছে আলো। চোখের বারিধারা বইছে ঝর্ণার মতো শুধু পার্থক্য শব্দ নেই। নিঃশব্দে গাল ছুঁয়ে পড়ছে বুকে। আত্মার সাথে জড়িত মানুষগুলো যখন খুব বাজেভাবে আঘাত পায় সেই আঘাতের ক্ষতগুলো হয় তার কাছের মানুষের। আলো বাকরুদ্ধ। কিছু বলার মতো অবস্থায় সে নেই। বারবার শুধু একটা কথাই মনে পড়ছে আমি মরলেই তুমি শান্তি পাবে।
আলো যদি আঁধারের জীবনে না আসতো এসব কিছুই হতো না। না আঁধারকে এতো যন্ত্রণা পোহাতে হতো। আঁধারের এই অবস্থার জন্যও আলো নিজেকে দায়ী মনে করছে।
বাড়িতে ফিরতি পথে গাড়ি এক্সিডেন্ট করে আঁধার। খবর পৌঁছানোর সাথে সাথে স্বপরিবারের সবাই হাসপাতালে আসে। কিছু লোকজন হাসপাতালে নিয়ে আসে আঁধারকে। মমতা জাহিদ কান্না করছে। তিন্নিকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অন্য কাউকে কেন পাঠায়নি তার জন্য আফসোস করছে পাশে বসে আঁধারের আব্বু সান্ত্বনা দিচ্ছে তাকে।
রাইসাও আলোর পাশে দাঁড়িয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে তাকে। কিন্তু আলোর কান অব্দি শব্দগুলো যাচ্ছে না। সে একমনে তাকিয়ে আছে ভিতরে।
কিছুক্ষণ পর আঁধারকে কেবিনে শিফট করা হয়। ডান হাতে আর মাথায় ভালো জখম হয়েছে। পায়েও কম ব্যথা পায়নি। হাতে ব্যান্ডেজ দিয়ে পেঁচিয়ে গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে।
রাতে একে একে সবাই বাসায় চলে গেলো। মমতা জাহিদ থাকতে চেয়েছিলো আলো দেয়নি। উনার প্রেশার আছে তাই ভালো ঘুমের প্রয়োজন। আলোর অবস্থাও খুব একটা ভালো নয় কেঁদে কেঁদে চোখ মুখের আকৃতি বদলে গেছে। ফায়েজ আলোকে বাড়িতে চলে যেতে বলেছিলো, সে থাকবে কিন্তু আলো মানেনি। আঁধারকে রেখে ওর ঘুম আসবে না।
শেষরাতে আলোর চোখ লেগে যায়। আঁধারের গলা শুকিয়ে যাওয়ার ফলে সে জেগে যায়। আঁধারের বাম হাত ধরে চেয়ারে বসে বেডে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে আলো। আঁধার টেবিল থেকে পানি নেওয়ার জন্য হাত সরাতে নিলেই আলো জেগে যায়। ধড়ফড়িয়ে উঠে।
‘ আপনার কিছু লাগবে? এখন কেমন লাগছে? ব্যথা করছে হাত?
আঁধার চুপ করে তাকিয়ে আছে আলোর দিকে কান্নায় ফুলিয়ে রেখেছে মায়াময় দুটি চোখ। আঁধার চোখের পলক ফেলে
‘ পানি খাবো। গলা শুকিয়ে গিয়েছে।
আলো উঠে বোতল থেকে পানি গ্লাসে ঢেলে আঁধারের মুখে ধরলো। বাম হাত দিয়ে অল্প ধরে সবটুকু পানি খেয়ে নেয় আঁধার। আর ঘুম হয়নি দুজনের। একে অপরকে লুকিয়ে-চুরিয়ে দেখে সকাল হয়ে যায়।
সকালে ফায়েজ, রাইসা আঁধারকে দেখতে আসে। চারজন মিলে আড্ডায় বসে। ওরা যে হাসপাতালে আছে তার খেয়াল ওদের নেই। সবার ছোট বেলার গল্প জুড়েছে। আলোও তার বাবা-মায়ের সাথে কাটানো দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে কেঁদে দেয়। তা দেখে আঁধার তার বাম হাত দিয়ে চেপে ধরে আলোর হাত। আলোর সাথে থাকার সময়গুলোতে কেমন যেন একটা ভালোলাগা সবসময় কাজ করতো আঁধারের। তবে কখনো এমনভাবে উপলব্ধি করেনি সে।
তিনদিন পর আঁধারকে ডিসচার্জ করে দেওয়া হয়। ভালো হতে আরো অনেকটা সময় লাগবে।
রুম বন্দি হয়ে বসে থাকতে হয় আঁধারকে তাই আঁধার যাতে বোরিং ফিল না করে কখনো গান গায় আলো, কখনো কবির কবিতা হয়ে মনের মাধুরি মিশিয়ে কবিতা শোনায় আঁধারকে। আঁধার শুধু নিষ্পলক নিষ্পাপ চাহনি নিয়ে তাকিয়ে থাকে আলোর দিকে। কি জাদুকরী সেই কন্ঠই না কেন এতোদিন সেই জাদুতে আটকায়নি আঁধার? এখন ভীষণ রকম আফসোস ঘিরে ধরে তাকে। হাতের কাছে একফোঁটা স্নিগ্ধ কোমল শিশির বিন্দু, কেন তার আগে চোখে পড়েনি? আচ্ছা সত্যিই কি ভালোবাসতো আঁধার আলোকে? শুধু উপলক্ষের জন্য উপলব্ধি করতে পারেনি । নাকি নতুন করে ভালোবেসেছে? আলোর ভালোবাসার কাছে হেরে গিয়েছে আঁধার।
‘ কি হলো আঁধার শুনছেন না?
আঁধারের ভাবনাটা থেমে যায় আলোর ডাকে। আলো পিটপিট করে তাকিয়ে আঁধারের দিকে
‘ এইভাবে সুরাইয়া অপেক্ষা করতে থাকে তার স্বামীর জন্য।
আঁধার ভাবনা রেখে
‘ আচ্ছা কলিং বেল যে বাজাচ্ছিলো সে কি তার স্বামী ছিলো? দরজাটা খুলে কে ছিলো তা দেখা পর্যন্ত উপন্যাসটা বড় করার দরকার ছিলো। কিন্তু হুমায়ুন আহমেদ স্যার উপন্যাসটা ওখানেই শেষ করে দিলো।
আলো “অপেক্ষা” উপন্যাসটা বন্ধ করে
‘ হয়তো অপেক্ষা শেষ হয়েছিলো বা হয়তোবা শেষ হতো না। তাই অজানা থাকাই শ্রেয়।
আলো রুম ত্যাগ করলো চোখে একটু পানি নিয়ে। সব অপেক্ষা কি শেষ হয়? কিছু অপেক্ষার অপেক্ষা থাকুক না ক্ষতি কিসে?
আলো আঁধারের শরীর মুছিয়ে খাবার নিজের হাতে খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দেয়। প্রতিদিনই এখন সব বেলা আলোই খাইয়ে দেয় আঁধারকে। আঁধার ডান হাতে ব্যথা পেয়েছে তাই। আলো সব কাজ শেষ করে চলে যেতে নিলেই আঁধার আলোর হাত ধরে পাশে বসায়। আলো বাধ্য মেয়ের মতো আঁধারের পাশে মাথা নিচু করে বসে।
আঁধার ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে
‘ সেদিন সানির উপর ভীষণ রাগ উঠেছিলো আমার। তুমি আর জিজ্ঞেস করনি ওইদিন কি হয়েছিলো। সানিকে দেখে প্রথমবার তুমি কেমন যেন ঘামছিলে ভয় পাচ্ছিলে মনে আছে?
আলো অবাক হচ্ছে আঁধার নিজে থেকে এসব বলছে দেখে, কিন্তু এখন কেন বলছে? আঁধার কি বকবে তাকে? ( মনে মনে)
আঁধার আবার বলতে শুরু করলো
‘ তখনি আমার সন্দেহ হয়েছিলো। তারপর বালিশের নিচে চিঠি দেখলাম। ভেবেছিলাম তুমি আমার জন্য লিখেছো কিন্তু যখন আমি সানিকে আরেকটা চিরকুট ফেলে যেতে দেখলাম তখন বুঝলাম কিছু সমস্যা আছে। রাইসাকে ডেকে বললাম সানি এইসব করেছে। তোমার কলেজ ফ্রেন্ড ফারিয়াকে কল দিয়ে সানির ছবি সেন্ড করলাম তখন জানতে পারলাম সানি নাকি তোমাদের সাথেই পড়তো আর তোমায় বিরক্ত করতো। তোমার সাথে জোর জবরদস্তি করেছে সেটা শুনে মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো আমার আর সেটা তুমি আমায় কেন বলোনি তার জন্যও অনেক রাগ হয়েছিলো তোমার উপর। আর রাইসাকেও সব বলি।
চিরকুটটা পড়ে বুঝলাম সে তোমায় ছাদে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তুমি হয়তো আমি যেতে বলেছি ভেবে যাবে ছাদে তাও বুঝেছিলাম। তাই তোমার আগেই আমি ছাদে যাই তারপর কি হলো দেখলেই তো তুমি?
আলো আঁধারকে জড়িয়ে ধরে অজান্তেই
‘ আমি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো আমায় ভুল বুঝবেন। তাই আমি কিছু বলিনি আপনাকে
আঁধারও আলোকে জড়িয়ে নিলো
‘ তুমি কিছু বলোনি তাই রাগ হয়েছিলো বললে হয়তো রাগ হতো না।
.
.
.
এভাবে দু-মাসে পেরিয়ে যায়। আঁধার অনেকটা সুস্থ হয়ে যায়৷ আলো আর আঁধারের মাঝে দূরত্ব কমে গিয়েছে অনেক। তবে ভালোবাসি কথাটা আর কেউই বলেনি। আঁধারও জানায়নি সে ভালোবাসে আলোকে৷ মমতা জাহিদ বুঝতে পারে আঁধার এখনো পুরোপুরি মেনে নিতে পারেনি আলোকে।
সন্ধ্যায় আঁধারের রুমে গিয়ে দেখে আঁধার ফোন টিপছে মমতা জাহিদকে দেখে আঁধার উঠে দাঁড়িয়ে
‘ মা তুমি? ভিতরে আসো।
মমতা জাহিদ চেয়ারে বসতে বসতে
‘ কিছু কথা বলতে এসছি তোর সাথে। আনিশা, রাইসা, আলো সবাই নিচে ভাবলাম এই সুযোগে কথাগুলো বলে যাই।
আঁধার একটু চিন্তিত হয়ে
‘ কি কথা মা?
‘ আমি ভেবেছিলাম তিন্নির প্রতি তোর ভালোলাগা যেটাকে তুই ভালোবাসা নাম দিয়েছিলি। আর আলোকে তুই ভালোবাসিস কিন্তু সেটা তুই নিজেও জানিস না। যে কেউ দেখলেই ভাবতো তোরা একে অপরকে ভালোবাসিস। আলোর প্রতি তোর যত্ন ছিলো চোখে পড়ার মতোন। আমিও আলোকে ভালোবাসতাম তাই চেয়েছিলাম আলো আমার কাছেই থাকুক। তোদের বন্ধুত্বের নাম দিতে চেয়েছিলাম স্বামী- স্ত্রী। তাই যখন মিথ্যে নাটকটা করেছিলি আমি খুব খুশিই হয়েছিলাম কিন্তু যখন জানলাম সব মিথ্যে ব্যথিত হয়ে আলোর সাথে কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছিলাম।
আঁধার দীর্ঘশ্বাস ফেলে
‘ এখন কেন এসব বলছো মা?
‘ বলছি কারণ জানা দরকার তোর।
আমি চাইনি ফায়েজের সাথে বিয়ে হোক আলোর তুই যাতে রিয়েলাইজ করতে পারিস তুই আলোকে ভালোবাসিস তাই আমি আলোর বিয়ে ঠিক করেছিলাম ফায়েজের সাথে। রাইসা আর ফায়েজের সম্পর্কের কথা আমি জানতাম। রাইসাকে আমি কথা দিয়েছিলাম যে ফায়েজের বিয়ে রাইসার সাথেই হবে এবং তাকে আসতেও বলি তাই, আর তা ফায়েজ বা আলো কেউই ঘুনাক্ষরেও জানতো না। কিন্তু মধ্যে দিয়ে তিন্নি আপানাআপনি তোদের কথা শুনে আলোর কথা শুনে নিজে নিজেই চলে যায়। আমি ভেবেছিলাম আমি তিন্নিকে বোঝাবো কিন্তু তা আর করতে হয়নি।
প্রকৃতি নিজের খেল নিজেই দেখিয়েছে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে কোথাও না কোথাও আমি ভুল করেছি তোর সাথে আলোকে বিয়ে দিয়ে। মেয়েটা মনমরা হয়ে থাকে। তুই যে আলোকে কখনো মেনে নিবিনা তা ভাবিনি। তুই যে তোর ভালোবাসা উপলব্ধি করতে পারবিনা তা ভাবিনি।
মমতা জাহিদ আঁধারকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উঠে চলে যায়। আঁধার বলতেই পারলো না সেও যে আলোকে ভালোবাসে। হ্যাঁ এটা বন্ধুত্ব ছিলো না ভালোবাসাই ছিলো। আর আজ তা সে ভালোভাবেই জানে কিন্তু আলোকে সে কিভাবে বলবে? আলো কি ভাববে বললে? কিন্তু আর কত? আলোকে তো বলা দরকার তার আঁধারও তাকে ঠিক সেভাবেই চায় যেভাবে আলো তাকে চায়।
.
.
.
রাতের খাবার শেষে আলো দাঁড়িয়ে আছে রুমের বেল্কুনিতে। আঁধার ব্যথা পাওয়ার মতো উফ করে ওঠে সেই শব্দ শুনে আলো ছুটে আসে রুমে।
রুমে এসে দেখে আঁধার দাত কেলিয়ে হাসছে।
আলো ভ্রু কুঁচকে তাকায় আঁধারের দিকে কিন্তু আঁধার হেসেই যাচ্ছে। আলো এবার মন্ত্রমুগ্ধ চাহনি নিয়ে তাকায় আঁধারের দিকে কি সুন্দর হাসি। এরকম হাসির দিকে তাকিয়ে পূর্ণিমা-অমাবস্যা সবই পার করে দেওয়া যাবে তবু দেখার স্বাধ মিটবে না।
আঁধার উঠে আলোর কাছে যায়।
‘ কেমন অভিনয় করলাম ব্যথা পাওয়ার?
আলো কিছু না বলে অন্যদিকে ঘুরে তাকায়।
আঁধার আলো যেইদিকে ফিরেছে সেইদিকে গিয়ে দেখে আলোর চোখে পানি। আঁধার বোকা হয়ে
‘ আরেহ আমি তো মজা করছিলাম, সরি? কান্না করো না। কান্না করলে আমারও কান্না চলে আসবে।
আঁধারের কথা শুনে আলো ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে। আঁধার মনে মনে ভাবছে
‘ মেয়েটা এখনো ছিঁচকাঁদুনেই রয়ে গেলো ।
আঁধার আলোর থুতনিতে ধরে মুখটা উপরে তুলে আলোর গালে আসা চোখের পানি ঠোঁট দিয়ে তার মুখে তুলে নেয়। আঁধারের ঠোঁটের ছোঁয়া কম্পন তোলে আলোর সারা শরীরে। জড়িয়ে ধরে আঁধারকে। আঁধারও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আলোকে একনাগাড়ে কয়েকশো বার বলতে থাকে
‘ ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি।
দুজনের মাঝেই বিরাজ করছে কাছে পাওয়ার স্পৃহা। জড়িয়ে রাখতে ইচ্ছে করছে দুজনের আবেগ। বাতাসে বইছে প্রণয়ের সুর।
সকালে আঁধারের ঘুম ভাঙে অনেক দেরিতে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে প্রায় এগারোটা বেজে বিশ মিনিট। তড়িঘড়ি করে বিছানায় উঠে বসে। গতরাতের কথা মনে হতেই মুচকি হেসে ফ্রেশ হতে যায় আঁধার। অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছে কিন্তু আলো একবারো রুমে আসেনি। তাই নিচে গিয়ে আনিশাকে জিজ্ঞেস করতেই বললো সে জানেনা আলো কোথায়। রাইসাকে জিজ্ঞেস করলে
‘ ভাইয়া আমি সকালে দেখি আলো হাতে কিছু একটা নিয়ে বেড়িয়ে যায়। পিছন দিক থেকে ডেকেছিলাম কিন্তু শোনেনি। কোন জবাবও দেয়নি।
আঁধার ব্যস্ত হয়ে
‘ কাউকেই কি কিছু বলে যায়নি? টেনশন হচ্ছে ভীষণ।
আঁধার গাড়ি বের করে বেড়িয়ে পরে আলোকে খুঁজতে। মার্কেটে শপিংমলে সব জায়গায় আলোকে খুঁজেছে কিন্তু কোথাও নেই। তিন্নির বাসার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আঁধার কি মনে করে গাড়ি থামিয়ে ওদের বাড়িতে ঢোকে।
তিন্নি বসে আছে বেশ সুদর্শন একটা ছেলে নিয়ে। আঁধারকে দেখে তিন্নি খুব অবাক হয়।
আঁধারকে বসতে দিলে আঁধার না বসে
‘ আমার তাড়া আছে তিন্নি আরেকদিন এসে বসবো। তুমি ঠিকি বলেছিলে তিন্নি আমি আলোকে ভালোবাসি, ভীষণ ভালোবাসি আর সেটা আমি জানতাম না। তুমি চলে গিয়ে খুব ভালোই করেছিলে। নাহয় আমি আমার আলোকে চিনতাম না।
তিন্নি অল্প হেসে
‘ আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু আমার স্বামীর সাথে পরিচয় করে যাও। তন্ময়ের কথা মনে আছে তোমার? ও সেই তন্ময়। আমার প্রাক্তনের কথা বলেছিলাম না তন্ময়? সে এখন আমার বর্তমান ভবিষ্যৎ । ওর সাথে ব্রেকাপ হওয়ার পরই তোমার সাথে সম্পর্কে গিয়েছিলাম আর ওর কথাও তোমায় বলেছিলাম। কিন্তু তোমার সাথে সম্পর্কে যাওয়ার পরও ওর সাথে আরো কয়েকমাস রিলেশন রেখেছিলাম। পরে তোমায় ঠকাচ্ছিলাম ভেবে ওকে ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমায় ওর মতো কখনো ভালোবাসনি আঁধার। তুমি সারাক্ষণই আলো আলো করতে। তখন বুঝেছিলাম তোমার জন্য আলোই পারফেক্ট আর আমার জন্য তন্ময়।
আঁধার জেনে খুব খুশি হয় তিন্নিও ভালো আছে। তন্ময়ের সাথে পরিচিত হয়ে বেরিয়ে পরে তিন্নির বাসা থেকে৷ অনেক খুঁজেও আলোকে না পেয়ে ক্লান্ত হয়ে বাসায় যায় আঁধার।
বাসায় গিয়ে দেখে আলো সবার সাথে বসে গল্প করছে। আলোকে দেখে খুশি হওয়ার সাথে সাথে ভীষণ রাগও ওঠে সারাদিন ধরে যে সে তাকে খুঁজছে আর তার খবর নেই। এখানে বসে বসে গল্প করা হচ্ছে। আঁধার আলোকে কিছু না বলে তেলেবেগুনে রেগে চলে যায় নিজের রুমে
রাইসা আলোর দিকে তাকিয়ে টাকলা মার্কা হাসি দিয়ে
‘ আজকে খবর আছে আমাদের আলো ভাবির।
সাথে সাথে আনিশা হেসে কুটিকুটি হয়ে
‘ একদম ভাইয়া না বলে যাওয়ার শাস্তি ভয়ানকও হতে পারে। অন্যদিকে মমতা জাহিদ, শান্তা ওদের কথা শুনে মুখ টিপে টিপে হাসছে।
আলো রুমে গিয়ে দেখে আঁধার বেডে চুপ করে বসে আছে। আলো আঁধারের পাশে গিয়ে বসে
‘ ফারিয়ার বাসায় গিয়েছিলাম ভেবেছিলাম তুমি উঠে পড়ার আগেই চলে আসবো ফোনটা তো নষ্ট তাই ফোন করে জানাতে পারিনি। তারপর ফারিয়া বায়না ধরলো দুপুরে খেয়ে দেয়ে আসতে তাই দেরি হয়েছে।
আঁধার কোন কথা বলছে না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ করেই আলোকে জড়িয়ে আলোর বুকে মাথা রেখে
‘ কখনো ছেড়ে যাবেনা আমায় বলো!
আঁধারের চোখে পানি। আলোও এই সুযোগ হাত ছাড়া করার মতো মেয়ে না তাই সঙ্গে সঙ্গে
‘এই তুমি এতো ছিঁচকাঁদুনে কেন?
বলেই হেসে ফেলে আলো। আঁধার রাগ করে
‘ তাই না? আমি ছিঁচকাঁদুনে? এবার দেখবো কে ছিঁচকাঁদুনে।
আলো দৌড়ে পালাতে নিলেই আঁধার ধরে ফেলে আলোকে। আলো ছাড়ার নাম না নিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে আঁধারের
‘ কখনো ছেড়ে যাবো না। দিন শেষে আলো তো আঁধারেই মেশে!
আঁধার আলোর কানের কাছে মুখ নিয়ে
‘ আনিশাকে আরো একবছর পর ওর বিদেশি জামাই নিয়ে যাবে ততদিনে সে নাকি ফুপি হতে চায় তুমি কি বলো?
আলো দু’হাতে দিয়ে মুখ ঢেকে নেয় নিজের। শীতল বাতাস বইছে চারিদিকে ঝকঝকে করছে নেমে আসা আঁধার ।
সমাপ্ত