আলো_আঁধার,part_3

0
1541

আলো_আঁধার,part_3
writer_Tahsina Islam Orsha.

নীরবে তোলপাড় হচ্ছে ভিতরে। সব নিয়ম নীতিমালা ভেঙে চুরমার হয়ে যাক বলে দোয়ায় মেতে উঠেছে ভাঙাচুরা হৃদয়। তবু তৃষ্ণার্ত ঠোঁটে শব্দের আনাগোনা নেই। পলকহীন তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোন বেমালুম উপায় নেই আলোর।

তিন্নি অপেক্ষার চোখ নিয়ে
‘ কিছু বলবে আলো?

ভেজা চোখে বর্ষণ হলো না। স্বভাবে শান্ততা মিশিয়ে
‘ কিছু না সাবধানে যাও। সব কিছুর জন্য ধন্যবাদ দিতে নেই।

‘ হ্যা কিন্তু কখনো সুযোগ হলে অনেক গুন বেশি ফিরিয়ে দিবো।

আঁধারের সাথে তিন্নি বেড়িয়ে যেতেই আলো উঠে ওয়াশরুমে যায়। পানির ঝাপটা মুখে দিয়ে ভাবছে কি করতে যাচ্ছিলো সে? কি ভাবে সে বলতে চাচ্ছিলো সে ভালোবাসে আঁধারকে। আঁধার তো অনেক আগে থেকেই তিন্নির হয়ে আছে। এখন কি ভাবে বলবে তিন্নিকে আঁধারকে সে ভালোবাসে। ওদের মাঝে সে কিভাবে যাবে! এতো নিচে সে কখনো নামতে পারেনা।

তিন্নির আর আঁধারের শপিং করতে করতে রাত হয়ে যায় অনেক। এক এক করে কেনা সব কিছু বের করছে তিন্নি। আনিশা, আলো, ফায়েজ, মমতা জাহিদ সবাই মিলে বসে বসে দেখছে। অনেক শপিং করেছে তিন্নি। সবার জন্যই কিছু না কিছু নিয়ে এসেছে। আঁধার আলোকে একটা শাড়ী দিয়েছে। তিন্নির জন্য শাড়ি কেনার সময় আঁধারের নাকি এই শাড়িটা ভালো লেগেছে খুব তাই আলোর জন্য নিয়ে এসেছে। আলো নিচের দিকে তাকিয়ে নিয়ে নেয় শাড়িটা। মানা করতে পারবে না সবার সামনে আর মানা করলে কেমন দেখাবে তাই চুপচাপ নিয়ে নেয়।

রাতে সবার সাথে খাওয়া দাওয়া শেষ করে তিন্নি নিজের বাসায় চলে যায়। দু-পরিবার সিধান্ত নিয়েছিলো বিয়ে ধুমধামে হবে। কিন্তু আঁধার বলেছিলো ছোট্ট খাটো ভাবে আয়োজন করে বিয়ের কাজ সেরে ফেলতে। কিন্তু তিন্নিরও ইচ্ছে বেশ আয়োজন করে বিয়ে হবে তাই আঁধার আর না করেনি।

আলো দাঁড়িয়ে আছে ছাদের কার্ণিশে নিরলসভাবে । আকাশ গুমোট হয়ে আছে। ঘনকালো মেঘ উড়ছে। বৃষ্টি আসবে মনে হচ্ছে জোরেসোরে। আলোর অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। অস্বস্তি লাগছে ভীষণ। অক্ষম অনুভুতি গুলো এসে মনে হচ্ছে গলায় দলা পাকাচ্ছে। অনিমন্ত্রিত চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে বুকে।

হঠাৎ চিরচেনা ঘ্রাণ এসে লাগলো আলোর নাকে। আলো পিছনে ফিরতেই আঁধারের মাকে দেখে
‘ মামুনি!

‘ খুব রাগ হয়েছিলো। ভেবেছিলাম আর কথা বলবো না তো সাথে। কিন্তু মায়ের মন তো থাকতে পারিনি আর।

(আলোর চোখে আসা ফোটা ফোটা জল বার বার মুছে দিচ্ছে বাম হাত দিয়ে৷)

‘ সবার অপমান সহ্য করে তো আমার জন্যই পড়ে থাকতি এই খানে আর আমিও দেখ স্বার্থপরের মতো তোকে দূরেই সরিয়ে দিলাম।

আর কিছু বলার আগেই আলো ঝাপ্টে ধরে মমতা জাহিদকে। এই বাড়িতে বরাবর খুব বেশি আলোকে শুধু একজনই বোঝে আর সেটা হচ্ছে তার মামুনি৷ তাই উনি মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় খুব বেশি কষ্ট পেয়েছিলো আলো। বাবা- মা হারানোর পর মায়ের আদর এই মানুষটা তাকে দিয়েছিলো।পৃথিবীতে সব থেকে বেশি যদি এখন আলোকে কেউ ভালোবাসে সেটা তার মামুনি। কিন্তু সেই মানুষটাকে আলো না চাইতেও অনেক দুঃখ দিয়ে ফেলেছে৷ কোন কিছুই হাতের মধ্যে নেই এখন মনে হচ্ছে।

আলোকে এমন ভাবে কাঁদতে দেখে

‘ কি হলো এই ভাবে কাঁদছিস কেন? আমি কি রাগ করতে পারিনা নাকি নিজের মেয়ের সাথে। আর আমার রাগ করার যথেষ্ট কারন তোরা দিয়েছিলি৷ আঁধারের সাথে তাল মিলিয়ে তুই এমন না করলেও পারতি। এখন সবাই তো তোকেই ভুল বুঝছে। কিন্তু আমি তো জানি তোর কোন ভুল নেই। তাই আরো বেশি রাগ হচ্ছিলো। ফায়েজের মা যা তা বললো তোকে চুপ করে শুনছিলি। কিন্তু আমি তো তোর অপমান সহ্য করে ধৈর্য ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনা৷

আলোর কান্নার বেগ আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেলো
‘ আমায় ক্ষমা করে দাও মামুনি। আমি বুঝিনি সব কিছু এতটা বড় হয়ে যাবে।

‘ কিন্তু নিজের গায়ে যে কলঙ্ক জেনে শুনে লাগালি তার কি করবি?

আলো মুখ তুলে নেয় মমতা জাহিদের বুক থেকে। চোখ মুখ মুছে শক্ত হয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকে। মমতা জাহিদ আলোর কাধে হাত রেখে

‘ ভালোবেসে ফেলেছিস আঁধারকে?

মমতা জাহিদের মুখ থেকে কথাটা বের হওয়ার আগেই আলো চোখ বড় বড় করে উনার দিকে আচমকা তাকায়।

‘ কি হলো কথা বলছিস না কেন এই ভাবে তাকিয়ে থেকে কি হবে?

আলোর ভিতরে ধড়াম ধড়াম আওয়াজ শুরু হয়েছে। হাত পা মনে হচ্ছে কাপছে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে

‘ ক কি সব বলছো মামুনি। আমি আঁধারকে কেন ভালোবাসবো?। আর আঁধার যে তিন্নিকে ভালোবাসে সেটা আমি অনেক আগে থেকেই জানতাম তার জন্যই তো এতো কিছু হ হলো।

‘ কিন্তু তোর চোখ কেন অন্য কথা বলছে?। তুই তো জানিস আমি তোর সব কথা চোখ দেখেই বুঝে নিই। তোর চোখ দেখে বার বার মনে হয় তুই আমার ছেলেকে ভালোবেসে ফেলেছিস। সেটা অভিনয় করেই হোক বা এমনিতেই।

আলো জড়িয়ে ধরে মমতা জাহিদকে আবার। চোখ বন্ধ করে মিথ্যা গুলো সাজিয়ে নেয় সুন্দর করে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে

‘ তেমন কিছুই না মামুনি৷ আমি আঁধারকে বন্ধু মনে করি। তার জন্যই সব করেছি। তোমার এই জন্য এমন মনে হচ্ছে কারন মিথ্যা গুলো শুনে খুশি হয়েছিলে। তুমি চেয়েছিলে আমি আঁধারে বউ হোই ।

মমতা জাহিদ চোয়াল শক্ত করে

‘ যদি তাই হয় তাহলে কালকের সন্ধ্যায় আমি যা সিধান্ত শোনাতে যাচ্ছি আশা করি তুই তাতে বিরূপ মত করবি না৷ আর আমার কথার উপর আর কোন কথা বলবি না।

কথা গুলো বলে মমতা জাহিদ চলে যায় নিচে। আলোর চিন্তা এবার বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়ে গেলো মমতা জাহিদ। কোন সিধান্তের কথা বলতে যাচ্ছেন উনি? মাথায় ঢোকছে না কিছু। আলোর শরীরটা আবার ভীষণ খারাপ লাগছে। দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে আলোও তার রুমে চলে যায়।

কচি রোদে বসে বসে চা খাচ্ছে আলো মমতা জাহিদের সাথে । অনেকবার চেষ্টা করেছিলো বলতে যে রাতে কোন সিধান্তের কথা বলেছো মামুনি। কিন্তু জিজ্ঞেস করতে পারছে না।

এর মধ্যে দুজনকে এক সাথে বসে থাকতে দেখে বেশ খুশি হয়েছে আঁধার।

হাস্যজ্জল মুখ নিয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে

‘ তা আমি কি এক কাপ চা পেতে পারি? না মানে চা নিয়ে আপনাদের সাথে শামিল হতে চাই।

আলো মুচকি হাসি দিয়ে
‘ নিয়ে আসছি বসুন আপনি।

আলো চা নিয়ে আসার জন্য কিচেনে চলে যায়।
হঠাৎ বিকট শব্দে আঁধার দৌড়ে কিচেনে যায়। আলো চা সহ চায়ের পাতিল ফেলে দিয়েছে। হাতে, পায়ে গরম চা-ও পড়েছে। আলোর দু’হাত আঁধারের দুহাতে নিয়ে তারাতাড়ি বেসিন ছেড়ে দেয় আলোর দু’হাতে পানি দিচ্ছে, আবার পা মুছে দিচ্ছে হাত দিয়ে আঁধার।

এই দিকে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে মমতা জাহিদ। এটা কি আঁধার শুধু বন্ধুত্বের জন্য করছে নাকি অন্য কিছু। ( মনে মনে ভাবছে)

আঁধারের রাগ হচ্ছে অনেক কন্ট্রোল করতে না পেরে রাগ দেখিয়ে

‘ তোমার কি জীবনেও আক্কেল হবে না? এই ভাবে কেউ কাজ করে? পুরে মরে আমাদের ফাসানোর ধান্দায় আছো নাকি? আমারই ভুল হয়েছে তোমার কাছে চা চেয়ে। একবার জ্বর বাধাবে তো আরেকবার হাত-পা পুরাবে।

আর কিছু বলার আগেই আলো কান্না করে দেয়। আলোর কান্না দেখে আঁধার বোকা বনে যায়। এই মেয়েকে কিছু বললেও জ্বালা।

আঁধার বোকার মতো চুপ করে তাকাতেই আলো চোখে পানি নিয়ে বের হয়ে যায় রান্নাঘর থেকে।
.
.
.
আমি কি কাম কাজ কিছুই পারি না? এমন ভাবে বলার কি ছিলো আঁধারে! আমি শুধু চিন্তায় মগ্ন থাকায় হাত থেকে পড়ে গিয়েছিলো পাতিলটা।

হঠাৎ আনিশা এসে
‘ তা কি চিন্তায় মগ্ন ছিলি?

আনিশার কথা শোনে আলো চুপ হয়ে যায়।

‘ কি হলো বল কি চিন্তা করছিলি। ভাইয়া আমায় পাঠালো মলম দিয়ে তোর হাতে পায়ে লাগিয়ে দিতে। হাত পা নাকি পুড়ে ফেলেছিস।ভাইয়া আসেনি তুই নাকি রেগে গেছিস তাই।

আলো মনে মনে খুশি হয়েছে কিন্তু খুশি এক সাইড করে আবার মনে মনে বলছে

‘ এতো দরদ দেখানোর কি আছে! আমার এতো দরদ লাগে না। বকবে আবার দরদ দেখাবে কেন!!

আনিশা আলোকে ভাবতে দেখে

‘ এখানে বসে পড় আমি লাগিয়ে দিই মলম। আর বল কি নিয়ে ভাবছিস এতো?

‘ আসলে মামুনি কি যেন সিধান্তের কথা বলেছিলো সেটাই ভাবছিলাম কি নিয়ে।

‘ তোকেও বলেছে? আমাদেরও বললো সবাই যেন সন্ধ্যায় থাকি কি যেন বলবে সবাইকে।

এই বার আলোর সত্যিই কেমন যেন লাগছে সবাইকে যেহেতু বলেছে নিশ্চয়ই বড় বিষয় হবে। কিন্তু বিষয়টা কি!?? তার আর আঁধারের বিষয়ে নয়তো???……….

চলবে……….

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here