আলো_আঁধার,part_4
writer_Tahsina Islam Orsha.
ভাঙছে। ভীষণ ভাঙছে ভিতরে৷ ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে যাচ্ছে সব ৷ কিন্তু আফসোস ভাঙচুরের আওয়াজ শুধু আলো ছাড়া আর কেউ শুনতে পাচ্ছে না, সে শুনতে পাচ্ছে না যার শোনার প্রয়োজন প্রখর। ভিতরে তীব্র ব্যথায় কিছু কাতরাচ্ছে তার আন্দাজ শুধু আলো ছাড়া আর কারো নেই।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই নিজ নিজ রুমে চলে গেছে। সকালে চা চেয়েছিলো আঁধার। কিন্তু বেকুবির জন্য দিতে পারলো না। তাই নিজেকে নিজে হাজারখানেক গালি দিয়ে মনকে শান্ত করলো আলো। সকালে দিতে পারেনি তো কি হয়েছে এখন দেবে। এই ফাঁকে আঁধারকেও দেখা হয়ে যাবে। হঠাৎ হঠাৎ যে আলোর কি হয়, ভীষণ ইচ্ছে হয় আঁধারকে দেখতে আর এই রোগ হয়েছে ভালোবেসে ফেলার পর থেকেই। আগে কখনো এমন হতো না। এখনো হঠাৎ আলোর খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে আঁধারকে। চা দিতে গিয়ে দেখেও আসবে মন ভরে। কিন্তু এখন চা নিয়ে গেলে কি ভাববে আঁধার? এই সময় কি কেউ চা খায়? এমন ডাফার কখনো দেখিনি এসব বলবে? বা তোমাকে এখন কে বলেছে চা নিয়ে আসতে? ধুর যা ইচ্ছে ভাবুক। এমনিতেও কম কথা শোনায় নাকি এখন আবার শোনালে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না।
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে আলো পা বাড়ালো আঁধারের রুমের দিকে। দরজায় নক করতেই আঁধার ভিতরে যেতে বললো। আঁধার কিছু করছে ল্যাপটপে। আলো আঁধারের সামনে চায়ের কাপ ধরতেই আঁধার কোন কথা না বলে কাপ নিয়ে নেয়। আলো ভীষণ অবাক হয় আঁধার কিছু না বলায়। দু’একটা কথা শুনিয়ে দেবে ভেবেছিলো আলো, কিন্তু তা করেনি।
আঁধার আলোর দিকে তাকিয়ে
‘ তুমি কিভাবে বুঝলে এখন আমার চা খেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো? থ্যাংকস।
‘ আলো আঁধারের মুখে থ্যাংকস শব্দটা শুনে আনমনেই হেসে ফেলে। বোধহয় একটু ভালো লাগা কাজ করছে৷
এইদিকে আঁধার জানতো আলো সকালে চা দিতে পারেনি তাই চা নিয়ে আসবেই তা ভেবে আনমনে হেসে ওঠে। আলো চলে যেতে নিলেই আঁধার বসতে বলে। আঁধারের সামনে বসতে একটু অস্বস্তি অনুভব করলেও আলো বসে পড়ে আঁধারকে কাছ থেকে দেখার লোভে। প্রিয় মানুষ গুলোকে কাছ থেকে দেখার প্রলোভন কার না হয়। আলোরও তাই হয়েছে। প্রিয় মানুষগুলোকে কাছ থেকে দেখার, ছোঁয়ার মতো সুন্দর অনুভুতি আর দৃশ্য দ্বিতীয় হতে পারে না।
প্রায় আধা ঘন্টা বসে বসে আঁধারকে দেখছে আলো। আঁধার কোন কথা বলছে না আলোর সাথে। আলোর হঠাৎ হুশ ফিরলো সে এখানে এইভাবে বসে বসে কি করছে? কেউ দেখলে কি ভাববে? এমনিতেই তো কম কথা উঠেনি ওর উপর। এখন আবার কেউ এইভাবে বসে থাকতে দেখলে নিশ্চিত কেলেংকারী হয়ে যাবে।
আলো বসা থেকে উঠে চলে যেতে উদ্যত হতেই আঁধার আলোর হাত ধরে ফেলে।
আঁধার মুচকি হেসে
‘এখানে বসো একটা কবিতা শোনাই। এতক্ষণ ধরে চেষ্টা করছিলাম হচ্ছিলো না। তোমাকে সামনে বসিয়ে লিখতেই কবিতা সম্পুর্ণ হলো।
আলো আঁধারের দিকে তাকিয়ে
‘ কবিতা কবে থেকে লিখতে শুরু করলেন আবার? আমার জানামতে তো৷ আপনি লেখালিখি করেন না।
‘ ধুর আগে শোনো তো কবিতাটা।
আলো চুপ করে আবার আঁধারের সামনে বসে পড়ে। কবিতার কথা শুনে আলোও লোভ সামলাতে পারলো না।
আঁধার ল্যাপটপে মনযোগ দিয়ে পড়তে শুরু করলো
দেখো না প্রিয়া কতশত যুগ
তোমার জন্য অতিবাহিত করে দিয়েছি
শুধু তোমায় আপন করার লোভে,
আরো আগে হয়নি কেন দেখা
তাই জীবনর প্রতি রাগে ফেটে পড়ি ক্ষোভে।
কত সময় একাকি পাড় করে দিয়েছি
তোমায় নিয়ে দু’জন হবো বলে।
এতো অপেক্ষায় আর ক্লান্ত চেহারায়
হাত বুলিয়ে দিয়ে আগমন ঘটালে তোমার,
আমার জীবনে এক নতুন সম্ভ্রম নিয়ে
জড়িয়ে নিলে অজানা মায়া অনুভুতি দিয়ে।
যত স্মৃতি ছিলো বেদনায় নীল
তোমার কোমলতার রঙে হলো রঙিন।
আজীবনের জন্য কথা দিলে আমার অন্তরিন্দ্রিয় কারাগারে আমৃত্যু বন্দিনী
হয়ে থাকবে যেখানে অন্যের প্রবেশ নিষেধ।
এরচেয়েও বেশি তোমার কাছে কি চাইবো আর
এর অধিক তো কিছু চাইবার নেই আমার
সেই সাধ্য সত্যিই আমার আর নেই অভিমানী
শুধু এইটুকু কথা দিতে পারি
তুমি আজীবন থাকবে আমার হিয়ার সম্রাজ্ঞি
তোমায় বুঝিয়ে দিতে পারি পৃথিবীর সব দামী
জিনিস তোমার সামনে অতি তুচ্ছ নগন্য
হাকিকত এতো সুন্দর হতে পারে তোমার
স্পর্শ বুঝিয়েছে আমার কল্পনাকে
সারাদিন তোমার তারিফ করে আমার ঠোঁটে
জানি না শুনলে বলবে কি লোকে।
তোমাকে তকদিরে দিয়েছে রহমান
জানো? শুকরিয়া জ্ঞাপন করি হাজারবার।
তোমাকে অবলম্বন করে বাকি জীবন
কাটিয়ে দিতেই আমাদের এই সুন্দর বন্ধন।
আলোর চোখে ছলছল করছে পানি। নীরবে পথ তৈরি করে বেয়ে চলেছে পানি সেদিকে আলোর খেয়াল নেই।
আঁধার আলোর দিকে তাকিয়ে থমকে যায়। মেয়েটা কান্না করছে কিন্তু কেন কান্না করছে?
বাহ সুন্দর লাগছে কিন্তু।
আঁধার আলোর সামনে চেয়ার টেনে বসে চেয়ারের মাথায় থুতনি রেখে
‘ তুমি কি সত্যিই ছিঁচকাঁদুনে
আঁধারের কথায় আলো উপর নিচে তাকিয়ে দেখে সে কান্না করে ফেলেছে অলরেডি।
আলো তোতলাতে তোতলাতে
‘ ক কই আমি ছিঁচকাঁদুনে হতে যাবো কেন?
‘ এই যে আবারো কান্না করছো।
আচ্ছা বলো কবিতাটা কেমন হয়েছে। আসলে কবিতাটা লিখেছি বিয়ের দিন বা রিসিপশনে তিন্নিকে শোনাবো সবার সামনে। ও কবিতা অনেক ভালোবাসে । কখনো লেখা হয়নি ওর জন্য কিন্তু বিয়ে বলে কথা নিজের লেখা একটা কবিতা ওকে উপহার দেওয়া যেতেই পারে। কেমন হয়েছে বলো।
আলো নির্বাক হয়ে বসে আছে আঁধারের কথায়। প্রতিটি শব্দ তাহলে তিন্নির জন্য? ভাবতেই ভিতরে নড়াচড়া করে উঠলো কিছু৷ দলাবেঁধে গলায় কিছু জড় হলো বুঝতে পারছে।
‘ কি হলো আলো কেমন হয়েছে বললে না যে
অনেক সময় নিয়ে আলো
‘ খুব সুন্দর।
মা মামুনি আমায় ডাকছে আসি এখন।
অসাড় শরীর টেনে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো আলো। এমনই তো হবার কথা তাহলে খারাপ লাগছে কেন? কান্না কেন আসছে এইভাবে অবাধ্য হয়ে!?
সারা বিকেল আলো আর ঘর থেকে বের হলো না। সন্ধ্যায় কেউ আলোর ঘরে এসে লাইট জ্বালায়। ফলে লাইটের আলো চোখে পড়তেই আলো চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে আনিশা।
আনিশা আলোর কাছে এসে বসে
‘ সন্ধ্যায় এইভাবে লাইট অফ করে শুয়ে আছিস কেন? শরীর খারাপ লাগছে।
আলো উঠে বসতে বসতে
‘ না তেমন কিছু না এমনিতেই শুয়ে ছিলাম।
‘ আচ্ছা চল মা ডাকছে তোকে। সবাই নিচে বসে তোর জন্য অপেক্ষা করছে তুই নিচে গেলেই মা কোন সিদ্ধান্তের কথা বলছিলো তা বলবে।
আলোর কেমন যেন একটা লাগছে। কি হতে পারে সেই সিধান্ত তা নিয়ে ভাবছে।
‘ কি হলো আলো চল।
আলো আর কথা না বাড়িয়ে ওড়নাটা নিয়ে আনিশার পিছু পিছু পা বাড়ায়।
নিচে যেতেই মনে হলো সম্পুর্ণ পরিবার এক হলো। সবাই আছে এখানে।
মমতা জাহিদ আলোর দিকে তাকিয়ে
‘ তোর শরীর ঠিক আছে আলো?
‘ হ্যা মামুনি ঠিক আছে।
আঁধারের আব্বু চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে
‘তাহলে বলো এইবার কি বলতে চাইছো।
মমতা জাহিদ ফায়েজের মায়ের দিকে তাকিয়ে
‘ দেখ শান্তা আমি তোকে কখনো আমার জা’য়ের মতো দেখিনি সবসময় আমার বোনের মতোই দেখেছি।
ফায়েজের মা মুচকি হেসে
‘ জানি আপা। কিন্তু কি হয়েছে সেটা বলুন
‘ ফায়েজের আব্বু এখন দেশে নেই তুই এখন ফায়েজের গার্ডিয়ান। আর আমি কিন্তু ফায়েজকে নিজের ছেলের মতোই দেখি তুইও জানিস। তাই আমি আলোর জন্য ফায়েজকে পছন্দ করেছি। আমি চাই আগামীকাল আঁধার আর তিন্নির হলুদে আলো আর ফায়েজেরও হলুদ হয়ে যাক।
মমতা জাহিদের কথা শুনে সবাই হাঁ হয়ে তাকিয়ে আছে ওনার দিকে। এইদিকে আলোর দুনিয়ায় মনে হচ্ছে ঝড় উঠেছে এই কথা শুনে।
বুকের ব্যথার সাথে মাথার ব্যথাটাও বেড়েছে
মনে হচ্ছে প্রতিযোগিতায় নেমেছে কে আলোকে বেশি ব্যথা দিতে পারে দেখার জন্য । চিনচিনে ঘাম ঝড়ে পড়ছে আলোর……..
চলবে………….
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।