আষাঢ়ে_প্রেমের_বর্ষণ পর্ব_৩

0
3763

আষাঢ়ে_প্রেমের_বর্ষণ পর্ব_৩
#হাবিবুল্লাহ_হাবিব_ফুয়াদ

“অত বড় একটা বাজে কাজ করার আগে তোমার মনে ছিল না এই কথাটা?আমাদের পরিবারের সম্মানের কথাটাও একবার ভেবে দেখলে না আর এখন এসে ওকালতি করা হচ্ছে? তোমাদের তো বিয়ে হয়েছে-ই তাহলে লোক জানাজানি হয়ে যাওয়ার আগে সামাজিকভাবে আর একবার বিয়ে করতে তোমার সমস্যা কোথায়?”,বাবা চোখ রাঙিয়ে রেগে বললেন।

বাবার এমন রাগ মিশ্রিত কথায় আমার কান্নার গতি যেনো দ্বিগুণ হয়ে গেল।আমি কান্না করতে করতে ফোফাতে ফোফাতে বললাম,
–‘প্লীজ বাবা বিশ্বাস করো আমি এমন কাজ করি নাই।আদ্র ভাইয়া আমাকে ফাঁসাচ্ছে।আমি কালকের আগে এ সম্পর্কে কিছুই জানতাম না।আদ্র ভাইয়াকে আমি বিয়ে করতে পারবো না প্লীজ বাবা কিছু একটা করো প্লীজ।’

আমার কান্না করতে করতে এমন অবস্থা দেখে বাবা একটু নরম হলো।(যতই হোক না কেনো বাবা-মেয়ের সম্পর্ক বলে কথা।সব বাবাই সকল সন্তানদের ভালোবাসে কিন্তু তাদের মেয়েদের একটু বেশীই ভালোবাসে।)তিনি আমাকে বসা অবস্থাতেই আমার মাথা তার কোলের উপর টেনে নিয়ে মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
–‘হুম আমি বুঝতে পারছি মা।কিন্তু মা এখন কি আর বিয়ে ভেঙে দেয়া সম্ভব? কাল বাদ পরশু বিয়ে তাই এপর্যন্ত আমাদের প্রায় সব আত্মীয়দের বাসায় আর আমাদের এলাকায় ও নিমন্ত্রণ পাঠানো হয়ে গেছে।এখন যদি তাদেরকে বলা হয় যে বিয়ে হবে না তাহলে কি হবে বুঝতে পারছিস?’

বাবার কথায় কি বলবো বুঝতে পারছি না।আমি যে এর কোনো জবাব-ই খুজে পাচ্ছি না।আমাদের এলাকার সবাই আমাদের পরিবারকে যথেষ্ট সম্মান করে,আমার জন্য যদি আমাদের পরিবারের সম্মানে আঘাত লাগে তাহলে তো আমি সহ্য করতে পারবো না।আমি কিভাবে পারবো এতটা স্বার্থপর হতে?আমার জন্য আমার পরিবারের দিকে কেউ আঙ্গুল তুলবে এটা আমি কখনোই চাই না আর না চাবো।আমি নাহয় সবার আনন্দ আর পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে আমার এতদিনের লুকায়িত ভালোবাসাকে জলাঞ্জলি দিলাম।

আমার কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে বাবা আবার বললেন,
–‘দেখ মা আমি বুঝতে পারছি তোর মনের অবস্থা।আমি তো বললাম-ই এখন তুই যদি বিয়ে ভাঙতে বলিস তাহলে আমি ভেঙে দিবো। আর আদ্র-কে তো আমি ছোট থেকেই দেখেছি ওর কাছে তুই অনেক সুখী থাকবি আর তাছাড়া তুই আমার একমাত্র মেয়ে তুই সবসময় আমার কাছেই থাকবি,সুখে থাকবি এর চেয়ে বেশি আর কিছু কি চাইতে পারি আমি।’

বাবার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বাবার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকলাম যদি মনটা একটু শান্ত হয় এই আশায়। আমাকে কিছু না বলে চুপ থাকতে দেখে বাবা ও আর কিছু না বলে আমার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
______________________________________________
‘আপু আব্বু তোমাকে ডাকছে। একি তুমি এভাবে শুয়ে শুয়ে কান্না করতেছ কেন?’ আমি শুয়ে ছিলাম হটাৎ অদ্রি এসে কথা গুলো বলল আমাকে।

অদ্রিকে দেখে আমি তাড়াতাড়ি করে চোখ মুছে বললাম,
–‘কই কান্না করতেছি।চোখে কি যেনো পড়েছিলো।’

–‘আপু আমাকে কি তোমার হাবলু মনে হয়।আমি স্পষ্ট দেখলাম তুমি কান্না করতেছ।’

–‘আরে না তুই ভুল দেখছিস।”হাহা”এই দেখ আমি হাসতেছি আর আমি কেনো কান্না করবো রে? কান্না করে তো তারা,যাদেরকে পরিবার ছেড়ে অন্য একটা পরিবারে যেতে হয়।কিন্তু আমার তো আমার পরিবারকে ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে হচ্ছে না তাহলে আমি কান্না করবো কেনো?’

আমার কথা শুনে অদ্রি বলল,
–‘হুম তুমি সবসময় এমন হাসিখুশি থাকবে।তোমাকে কষ্ট পেতে দেখতে আমার একটুও ভালো লাগে না।’
কিন্তু মনে মনে নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো,
~~”তুমি মুখে যতই বলো না কেনো তুমি যে কষ্ট মনে মনে অনেক কষ্টে আছো এটা আমি বুঝতে পেরেছি।যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই তো প্রায় সব সময়ই তো তোমার আর আপুর কাছেই ছিলাম।আমি জানি তুমি কেনো কষ্ট পাচ্ছ সেটা কখনোই বলবে না,কিন্তু তোমার এই কান্নার পিছনে কি কারণ আছে সেটা আমাকে খুঁজে পের করতেই হবে।আর এর জন্য যদি ভাইয়াও দায়ী হয় তাহলেও তাকে শাস্তি পেতে হবে।তোমাকে কথা দিলাম আপু।”

এই টপিক চেঞ্জ করার জন্য আমি বললাম,
–‘আচ্ছা এখন বলতো বড়বাবা কেনো ডাকে আমাকে? বিশেষ কোনো দরকার আছে নাকি?’

–‘সেটা কি আমাকে বলেছে?আমাকে শুধু বলল,যাও তো গিয়ে ফারুমা কে ডেকে নিয়ে আসো।তোমাকে সবাই কত ভালোবাসে আমাকে একটুও ভালোবাসে না কেউ ‘ অদ্রি এই কথা বলে ন্যাকা কান্না শুরু করলো।

অদ্রির এমন ন্যাকা কান্না দেখে বললাম,
–‘কেন রে তোর কেনো এমন মনে হয়?’

আমার কথা শুনে অদ্রি ঠোঁট উল্টিয়ে বাচ্চাদের মতো করে বলল,
–‘কেনো হবে না তুমিই বল।সবাই তোমাকে মা মা বলে ডাকে আর আমাকে ওই অদ্রি বলে ডাকে। ভালোবাসলে কি এমন করে ডাকতো?’

অদ্রির এমন অভিযোগ শুনে আমি মুচকি হাসলাম ভাবলাম, যাক বাবা এই মেয়ে এটাও খেয়াল করেছে! তারপর মজা করে বললাম,
–‘আহা কাঁদে না সোনা কাঁদে না।আমি আছি না?কেউ ভালোবাসুক আর না বাসুক আমি তো তোকে অনেক ভালোবাসি। এখন যা গিয়ে বড়বাবাকে বল আমি আসতেছি।’
আমার কথা শুনে অদ্রি চলে গেলো।আর আমি ওর চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলতে লাগলাম,
~~”সরিরে বোন তোর থেকে সব কিছু লুকাবার জন্য আজকে তোকে মিথ্যা বললাম।আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস। এছাড়া যে আমার আর কোনো উপায়ই ছিলো না।তুই তো ছোট,তোকে যদি বলতাম তাহলে তুই তো আমাদের পরিবারের দিকটা না ভেবে আমার কথাই ভেবে হয়তো কিছু একটা করার চেষ্টা করতিস কিন্তু এটা যে আমাদের পরিবারের সম্মানে দিকে আঙ্গুল তুলতো।আমার জন্য আমার পরিবারের দিকে কেউ আঙ্গুল তুলবে এটা যে আমি কখনোই চাই না।..”
_______________________________________________
“আমাকে ডেকেছিলে বড়বাবা?”বড়বাবাকে বই পড়তে দেখে ওনার কাছে গিয়ে বললাম।

আমাকে এই কথা বলতে শুনে বড়বাবা বইটা রেখে আমাকে ওনার পাশে টেনে নিয়ে বলল,
–‘এসেছিস ফারুমা!আমি যে জন্য তোকে ডেকেছিলাম ‘

–‘হ্যাঁ বড়বাবা বলো।’

–‘পরশু দিন-ই তো তোদের বিয়ে।তাই আমি বলতে চাচ্ছি তুই তোর বন্ধু-বান্ধব যাদের যাদের দাওয়াত দিতে চাস দিয়ে দিস।বিয়ের কার্ড ও এসে গেছে।আর আজকে কিছুক্ষন পর বিয়ের শপিং করতে যেতে হবে।তুই বরং অদ্রি,আহসান সাথে তোর কোনো বান্ধুবী থাকলে নিয়ে যাবি।’

–‘জী বড়বাবা।’

–‘আচ্ছা তাহলে এখন যা।রাতে নাকি খাস নাই কিছু এখন গিয়ে খাবি।’

–‘জী বড়বাবা।’

–‘আচ্ছা,তাহলে এখন আয়।’

বড়বাবার কাছ থেকে উঠে আমি কিছু খেয়ে রুমে চলে গেলাম। রুমে এসে তিশাকে জানিয়ে দিলাম আর আজকে আমাদের সাথে শপিংয়ে যেতে হবে সেটাও বলে ফোন রেখে দিলাম।মনে শান্তি না থাকলে কিছুই ভালো লাগেনা কথাটা আসলেই সত্যি যেটা আমি এখন হারে হারে বুঝতে পারছি।তারপরও যতটা সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করতেছি।কেননা আমার ওপরই যে আমার পরিবারের মান-সম্মান নির্ভর করছে।কিন্তু মন তো আর সেটা মানতে চায় না,মন তো ছুটে যেতে চায় তার কাঙ্খিত আবাসস্থল তার সেই পত্রপুরুষের কাছে।কিন্তু তারপরও আমি মনের কথা না শুনে মনকে অনেকটা শক্ত করে পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি জানি না শেষ পর্যন্ত কতটা সফল হতে পারবো।
আপাতত মনকে ব্যাস্ত রাখার জন্য একটা গল্পের বই হাতে নিয়ে পড়তে লাগলাম।

অপরদিকে,
আদ্র রেডী হচ্ছে। এখন তাকে ভার্সিটিতে যেতে হবে।এমন সময় হটাৎ আফসানের আগমন।আদ্র আফসানকে দেখে জিজ্ঞাসা করে,
–‘কিরে পিচ্চি কিছু বলবি?’

আদ্রর এমন কথায় আফসান হালকা রেগে গিয়ে চোখ মুখ লাল করে বলে,
–‘দেখো ভাইয়া তোমাকে আমি অনেকদিন মানা করেছি আমাকে পিচ্চি বলবেনা, আমার বয়স ১০ চলতেছে।আবার যদি কখনো আমাকে পিচ্চি বলো তাহলে কিন্তু আমি বড়বাবার কাছে তোমার নামে বিচার দিবো।’

আদ্র আফসানের কথায় একটু হেসে বলল,
–‘আচ্ছা সরি।যা আর বলবো না।’

আফসান আদ্রের কথা শুনে বলল,
–‘তুমি তো প্রতিবারই বলো যে বলবে না তারপর ও বলো।’

–‘ আচ্ছা আর বলবো না।আমার দেরি হচ্ছে কিছু কি বলবি নাকি?’

–‘বড়বাবা তোমাকে ডাকে।কি যেনো বলবে।’

–‘আচ্ছা তুই যা আমি আসতেছি’
আফসান চলে গেলে আদ্র রেডী হয়ে তার বাবার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
–‘বাবা কিছু বলবে?’

–‘হুম, ফারিহার আজকে বিয়ের শপিং করতে যাবে।তোকে ওদের সাথে থাকতে হবে।’

আদ্র মিস্টার আবরার মেহবুবের কথা শুনে বলল,
–‘কিন্তু বাবা আমি তো ভার্সিটি যাচ্ছি।আমার ভার্সিটিতে ক্লাস নিতে হবে।তাহলে আমি কিভাবে?’

আদ্রর কথা শুনে আবরার সাহেব রেগে বলল,
–‘অত কিছু শুনতে চাইছি আমি? যেটা বলেছি সেটাই করবি।’

আবরার সাহেবের কথায় আদ্র আর কোনো প্রতিবাদ না করে বলল,
–‘ঠিক আছে বাবা।আমি অদ্রিকে বলে যাচ্ছি কখন কোথায় থাকতে হবে।আমি ওইদিক দিয়েই যাবো এখন।’
তারপর আদ্র আবরার সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অদ্রি যে জায়গা আর সময় বলে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়।

দুপুর ২ টা,
ফারিহা,অদ্রি,আফসান আর তিশা শপিংয়ের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়।কিছুক্ষন পর তারা শপিংমলে পৌঁছে যায়।তারপর হটাৎ ফারিহা শপিংমলের অপজিটে এমন কিছু দেখতে পায় যার জন্য তার অনেক রাগ হয়, রাগে সারা শরীর জ্বালা করতে শুরু করে।আর মনে মনে বলে,
–‘তুই এইখানে এসব কাজ করতেছিস আর তোর জন্য আমার ওপর দিয়ে কত কিছু যাচ্ছে। তোকে যে আমি কি করবো……’
এই বলে সে অনেকটা রাগ নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে। হটাৎ সে দেখতে পায় একটা…
.
.
.
চলবে….
~~ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আর কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না।
১ম পর্বের লিংক–
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/3050602761835122/
২য় পর্বের লিংক–
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/3051111768450888/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here