#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির
[পর্ব-২৩]
বৃষ্টি না হলেও পরিবেশ টা আজ শীতল। আকাশ স্বচ্ছ, পরিষ্কার। সূর্য তার কোমল আলোতে পরিবেশ মুখরিত করেছে। এমন পরিবেশে ক্লাস করার মজায় আলাদা। খুবই গম্ভীরতার মাধ্যমে ফিজিক্স ক্লাস শেষ করলো মুনতাসির রাজ। তার ক্লাসে অতিরিক্ত কথা বলা থেকে বিরত থাকে সবাই। স্বেচ্ছায় তো কেউ ধ*ম*কানি খেতে চায় না। ক্লাস শেষে বেরিয়ে যাবার আগে দীবাকে উদ্দেশ্যে করে বললো রাজ, ‘ক্লাস শেষে আমার সাথে দেখা করবে। কথা আছে।’
রাজ বেড়িয়ে যাবার পর দীবা খুব সাবলীল ভাবে তার পিছু পিছু গেলো। রাজের কেবিনের কাছে এসে দরজায় নক করলো দীবা। ভিতর থেকে পারমিশন আসলে সে নিরবে রুমে ঢুকে পরলো। রাজ তখন টেবিলে নিজের ফাইল গুলো গুছিয়ে রাখছিল। সে ইশারায় দীবাকে বসতে বললো। দীবা এগিয়ে চেয়ার টেনে বসলো। ফাইল গুছানো শেষে রাজ দীবার দিকে ফিরে পকেটে দুই হাত গুঁজে সটান দাঁড়িয়ে থেকে বললো, ‘আমি তোমার মার্কশিট দেখেছি। ক্লাসের টপার তুমি। এমন স্টুডেন্ট আমি খুবই কম দেখেছি। তোমার ছোট একটা হেল্প লাগবে আমার।”
দীবা খুব বিনয়ীর সাথে জানতে চাইলো, ‘কি হেল্প স্যার?’
‘তোমাদের এক্সাম বেশী দিন নেই। এক্সামের জন্য নোট বানাতে হবে। এখন থেকে আমি ক্লাসে যে টপিক গুলো পড়াবো তুমি তা নোট করে নিবে। আর সেগুলো আমি পরবর্তী ক্লাসে পড়াবো।’
দীবা খুব মিনমিনে গলায় শুধাল, ‘কিন্তু স্যার যদি ভুল হয়?’
‘চিন্তা করো না। ক্লাস করানোর সময়ই নোট করে নিবে তাহলে সহজ হবে। নোট গুলো তুমি ক্লাস শেষে কিংবা ছুটির পর আমাকে দেখাবে। ভুল থাকলে আমি সংশোধন করে দিবো। আর সুন্দর করে লিখে নির্ভুল ভাবে নোট গুলো করতে হবে। আমি ক্লাসে এই নোট গুলো দিয়ে বাকি স্টুডেন্টদের পড়াবো।’
দীবা নিরব থাকলো কিছুক্ষণ। চুপচাপ ভাবতে লাগলো সে। ভালোই হবে এই সুযোগে সেও স্যারের কাছ থেকে সহযোগীতা পাবে। খুশি হলো দীবা। ঠোঁট প্রসারিত করে মুচকি হেসে বলল, ‘ঠিক আছে স্যার। হয়ে যাবে।’
রাজ দীবার হাসিখুশি মুখের দিকে তাকালো। এতো মায়াবী কেন এই মুখখানি? দীবা হাসলে গোলগাল চেহারা ফুটে উঠে। রাজ আবারো দীবার উপর মুগ্ধ হলো। মনে মনে ভাবলো দীবার পরিক্ষা শেষে তাকে নিজের করে নিবে। আপাতত অপেক্ষা মাত্র। যদিও সে জানে না দীবা বিবাহিত। কারণ আবরার আর দীবার বিয়ের কথা এখনো গোপন রয়েছে। রাজ মুগ্ধতা ভিতরে রেখে উপরে গম্ভীর ভাবে বললো, ‘এবার তুমি যেতে পারো। এই ব্যাপারে পরে কথা হবে তোমার সাথে।’
অনুমতি পাবার পরপরই দীবা বিলম্ব না করে বেড়িয়ে গেলো। বারান্দা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাহিরে তাকালো। বৃষ্টিতে ভিজে আছে ক্যাম্পাস। মাঠে থাকা সবুজ দুর্বা ঘাস গুলো চকচক করছে। বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়ালো দীবা। আনমনে মৃদু হেসে বাহিরে তাকিয়ে রইলো এক মনে। ভাবলো সে আবরার কে নিয়ে। লোকটা ভারি অদ্ভুত। কাল রাতের কথা মনে পরলো তার। মুহূর্তেই লাল আভা ছড়িয়ে এলো তার গালে। কান লাল হলো তার। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে মুচকি হাসলো।
‘কিরে? একা একা দাঁড়িয়ে লজ্জা পাচ্ছিস কেন?’
হকচকিয়ে গেলো দীবা। পিছু ঘুরে দেখলো রিমি নুরার কাধে এক হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। নুরা বুকে হাত গুঁজে ভ্রুঁ নাচিয়ে বললো, ‘লজ্জা পাচ্ছিলে কেন বাবু?’
চোখ পাকিয়ে তাকালো দীবা। এই মেয়ে দুটোর তো লজ্জা শরম নেই ; আবার অন্য কাউকে লজ্জা পেতেও দিবে না। চোখ সরিয়ে আবারো সামনের মাঠের দিকে দৃষ্টি রাখলো দীবা। রিমি এসে দীবার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ভ্রুঁ নাচালো। বললো, ‘বেব তোমার গাল দুটো ব্লাশিং করছে। তুমি কি জানো? ভাই তোমাকে দেখলে এখন কন্ট্রোললেস হয়ে যাবে।’
‘ছিঃ তোরা এতো খারাপ। সর এখান থেকে।’ নাক মুখ কুঁচকে বললো দীবা। তাদের সামনে আর থাকলো না। দ্রুততার সঙ্গে স্থান প্রত্যাখ্যান করলো দীবা। সে যেতেই রিমি ও নুরা উচ্চস্বরে হাসিতে মেতে উঠলো।
_________________
বাহিরে শীতল মৃদু বাতাস প্রভাহমান। ঝিরঝির হাল্কা বৃষ্টিতে ভিজে আছে আগ্রাবাদ শহর। প্রভঞ্জনের শীতলতা গায়ের পশম কাটা দিয়ে উঠার উপক্রম। তারপরেও ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল খানা শেষ করলো আবরার। থ্রি-কোয়াটার প্যান্টের সাথে পাতলা কালো টি-শার্ট পরনে তার। টাওয়াল দিয়ে চুল গুলো মুছতে মুছতে মোবাইল হাতে নিলো। কিছুসময় মোবাইলে মেইল চেক করে অভ্রের রুমের উদ্দেশ্যে বের হলো। অভ্রের রুম যেহেতু শেষের রুমটা তাই সামনে থাকা সকল রুম পেরিয়ে যেতে হয়। দীবার রুমের সামনে আসার পর খেয়াল করে রুমের দরজা হালকা ভিড়ানো। কৌতুহল বশত উঁকি দিয়ে দেখলো দীবা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভিজা চুল টাওয়াল দিয়ে মুচ্ছে। আবরারের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসলো। কোনো প্রকার শব্দ না করে নিরবে রুমে ঢুকে পরলো। দীবা বিন্দুমাত্র টের পেলো না। দুই হাত উঠিয়ে চুল মুছচ্ছে আর আপন মনে গুনগুন করে গান গাইছে!
আমার প্রান ধরিয়া মারো টান,
মনটা করে আনচান।
আমার প্রাণ ধরিয়া মারো টান,
মনটা করে আনচান।
জোয়ার নদীর উতল বুকে,
প্রেমের নৌকা উজান বায়।
বারে বারে বন্ধু তোমায়,
দেখিতে মন চায়।
বারে বারে বন্ধু তোমায়,
দেখিতে মন চায়।
দীবার গুনগুন করে গাওয়া সম্পূর্ণ গানটা আবরার স্পষ্ট শুনতে পেরেছে। পকেটে দুই হাত গুঁজে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ালো সে। হঠাৎ-ই দীবাকে থামিয়ে আবরার গানের শেষাংশ বলে উঠলো,
‘বারে বারে বন্ধু তোমায়,
দেখিতে মন চায়।’
দীবা চমকে উঠলো। ভড়কে হাত থেকে টাওয়াল পরে গেলো তাৎক্ষনাৎ। বুকে এক হাত রেখে জোরে জোরে দু’বার নিশ্বাস নিলো। বললো, ‘আপনি এখানে? ম্যানারস জানেন না? রুমে আসার আগে পারমিশন নিতে হয় ভুলে গেছেন?’
ম্যানারসের কথা বলায় কপাল কুঁচকালো আবরার। ফিচেল গলায় গা-ছাড়া ভাব নিয়ে বলে উঠলো, ‘আমার বউ যখন খুশী তার কাছে আসবো। পারমিশন নিতে যাবো কেন?’
দীবা বিরক্তি মিশ্রিত চোখে তাকালো আবরারের দিকে। ঝুকে গিয়ে ফ্লোরে পরে থাকা টাওয়াল তুলে নিলো। তারপর শক্ত গলায় বললো, ‘বের হোন এখুনি। নেক্সট টাইম আমার রুমে পারমিশন ছাড়া আসবেন না।’
আবরার বাঁকা হেসে দীবার দিকে এগোতে এগোতে বলল, ‘আসলে কি করবে?’
তাকে এগোতে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেলো দীবা। শুকনো ঢোক গিলে বললো, ‘আবার চলে যেতে বলবো।’
আবরার একদম তার সামনে চলে আসলো। দীবা কিছুটা পিছুতে গেলে ডেসিংটেবিলের সাথে ধাক্কা খেলো। নিঃশব্দে হাসলো আবরার। জিভ দিয়ে উষ্ঠধয় ভিজিয়ে দুই হাতে দীবার কোমড় ধরলো। কেঁপে উঠলো দীবা। তার কাঁপনিতে আবরার মৃদু হাসলো। কোমড় ধরে উঠিয়ে ডেসিংটেবিলের উপর বসালো দীবাকে। টেবিলে থাকা প্রসাধনী গুলো দীবার শরিরে ধাক্কায় এলোমেলো হয়ে পরে গেছে। আবরার একটু এগিয়ে দীবার সাথে নিবিড় হলো। দীবার কপালে পরে থাকা ভিজে চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে বললো, ‘তোমার প্রেমে ভয়ানক ভাবে ফেঁসে গেছি দীবা। এর থেকে পরিত্রাণ পাবার উপায় নেই।’
আবরারের চোখে চোখ রাখলো দীবা। হৃদপিন্ড কাঁপছে তার। অস্বাভাবিক ভাবে দৌড়াচ্ছে। আবরারের প্রতিটি স্পর্শে ইষৎ কেঁপে উঠছে সে। আবরার দীবার ঘাড়ের চুল গুলো সরিয়ে উন্মুক্ত করলো গলা। নিজের মুখ এগিয়ে দীবার গলার উঁচু হারটার মাঝে আলতো করে চুমু খেলো। তারপর দীবার কানের কাছে নিজের মুখটা এনে আলতো গলায় আবারো গায়লো,
‘বারে বারে বন্ধু তোমায়,
দেখিতে মন চায়।’
আবরারের ফিশফিশ কন্ঠের গান টা শুনে মৃদু কম্পিত হয়ে উঠলো দীবার শরির। আবরারের শার্টটা খামচে ধরলো। ইষৎ শরির কাঁপছে তার। আবরার এক হাতে দীবার কোমড় জড়িয়ে অন্য হাতে দীবার গাল পরম যত্নে ধরলো। চোখ বন্ধ করে উষ্ঠধয়ের দিকে এগোতে থাকলো। তখনি দরজা ঠেলে রুমে ঢুকলো নুরা। নুরার আগমনে ছিটকে সরে গেলো আবরার। দীবা ভিষণ রকমের লজ্জা পেলো। নুরা ভ্যাবাচ্যাকা খেলো। রুমে এসে আহাম্মক হয়ে গেলো সে। অপ্রস্তুত গলায় বলে উঠলো, ‘স্যরি! আমি কিছু দেখি নি। টেনশন নিও না। কন্টিনিউ! ‘
বলেই তড়িঘড়ি করে তাৎক্ষনাৎ রুম প্রত্যাখ্যান করলো নুরা। আবরার দীবার লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখ দেখে হেসে ফেললো। রাগে দাঁত চি বিয়ে আবরারকে ধা ক্কা দিয়ে সরিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো দীবা। দরজা লাগানোর আগে চোখ পাকিয়ে আবরারকে ‘অ’সভ্য’ বলে দরজা লাগিয়ে দিলো। আবরার হাসতে হাসতে অভ্রের রুমের দিকে অগ্রসর হলো।
________________
সন্ধ্যার আকাশ স্বচ্ছ, পরিবেশ সিক্ত। বৃষ্টিময় সন্ধ্যায় ছিমছাম গোমট বাধানো কোলাহলমুক্ত পরিধি। সূর্যিমামা পশ্চিমাকাশে ডুব দিয়ে পরিবেশ করেছে অন্ধকার, নির্জন। অভ্র ফার্ন গ্রিন কালার শার্টের হাতা কুনই পর্যন্ত ভাজ করতে করতে আবরারের রুমের দিকে এগিয়ে আসছে। রিমি দূর থেকে অভ্রকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করলো। লোকটা দেখতে বেশ সুন্দর। কিন্তু তার সাথে কেন জানি ঝগড়া করতে প্রচুর ভালোলাগে। কথায় কথায় লোকটার ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ার চেহারাটা দেখলে হাসি পায়। এখন এমন কিছুই করতে ইচ্ছে করছে রিমির। ভেবে চিন্তে হঠাৎ মাথায় দু ষ্টু ফ:ন্দী আটকালো। অভ্র তার কাছাকাছি এগিয়ে আসতেই সে বলে উঠলো, ‘আরে অভ্র ভাইয়া? আপনি এখানে?’
রিমির কন্ঠস্বর কর্ণকুহর হতেই পা থামালো অভ্র। কপালে সরু ভাজ ফেলে রিমির দিকে সন্দেহপ্রবন দৃষ্টি মেলে তাকালো। রিমি তার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আছে। এখানে আসার পর থেকে এমন কোনো দিন বাদ নেই যে দিন রিমির সাথে তার ঝ’গ’ড়া হয় নি। রিমি উঠে পরে লাগতো ঝ’গ’ড়ার জন্য। আজ তার মুখ থেকে এতো সুন্দর সম্মোধন অভ্র সহজ ভাবে নিতে পারছে না। যেই মেয়ে কথায় কথায় ইটের বস্তা, কারেন্ট গাছ ডাকে সেই মেয়ের মুখে অভ্র ভাই? না ব্যাপার টা ভালো টিকছে না।
রিমি হাস্যউজ্জল মুখে অভ্রের সামনে দাঁড়িয়ে বললো, ‘আপনি এখানে? আমি তো আপনাকে বাড়ির আনাচে কানাচে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে গেছি।’
অভ্র জিজ্ঞেস করলো, ‘কারণ কি?’
রিমি দাঁত কেলিয়ে প্রত্যুত্তর করলো, ‘আরব ভাই আপনাকে বাড়ির পিছনের লনে যেতে বলছে। কি জানি জরুরি কাজ আছে বললো। আর ভাইয়া অনেক তাড়াহুড়োতে ছিলো। যান যান অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।’
ব্যাপার টা এতোক্ষণে বুঝে আসলো অভ্রের। তাকে অপদস্থ করতে কি মিথ্যে কথা বলছে এই মেয়ে। মনে মনে হাসলো অভ্র। পকেটে দুই হাত গুঁজে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, ‘মিথ্যে বলাও এক ধরনের আর্ট। যা সবাই পারে না। যেমন তুমি।’
বুঝতে না পেরে রিমি ভ্রুঁ উঁচিয়ে কপাল কুঁচকালো। অভ্র ঠোঁটে মৃদু হেসে বললো, ‘তোমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই আমার রুমে বসে চিল করছে। এই মাত্র তার সাথে আমার কথা হয়েছে।’
রিমি চোখ বড়বড় করে অভ্রের দিকে তাকালো। ইশ মিথ্যে বলতে এসে এভাবে হাতে নাতে ধরা খাবে ভাবতে পারেনি। ঠোঁট টেনে প্রসারিত করে বোকা বোকা টাইপ হাসি দিলো একটা। অভ্র রিমির দিকে এক কদম এগিয়ে কিছুটা ঝুকে দাঁড়ালো। রিমি না পিছিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে অভ্রের চোখে চোখ রাখলো। অভ্র শীতল চাহনীতে শান্ত কন্ঠে শুধাল, ‘এখন থেকে মিথ্যে বললে আরেকটু চতুরতার সাথে বলবে। আর এইসব লেইম কথাবার্তা নেক্সট টাইম থেকে অভ্র হাসানের সাথে ট্রাই করবে না। গট ইট?’
রিমিকে পাশ কাটিয়ে আবরারের রুমে গেলো আইপড আনতে। মূলত আবরার অভ্রের রুমে বসে কাজ করছিলো। আবরারের আইপড আনতেই বেড়িয়ে ছিলো অভ্র। সে যেতেই রিমি দাঁতে দাঁত পিষে গটগট পায়ে রুমে এসে দরজা ঠাস করে লাগিয়ে দিলো।
__________________
গানের তালে তালে মাথা-পা দুলাচ্ছে রাইমা। পাশাপাশি সাদা কাগজে কেমিস্ট্রির ম্যাথ করছে। কানে তার কালো ওয়্যারলেস ব্লুটুথ হেডফোন। ঢিলেঢালা কালো টি-শার্ট। লেয়ার কাটের চুলগুলো পিঠ ছেড়ে কোমড় পর্যন্ত ছুঁই ছুঁই। মন যখন তার পুরো দমে অঙ্ক করতে ব্যস্থ তখনই মোবাইলে ব্রাইভেশনের ঝিম ধ্বনি বেজে উঠলো। অপরিচিত নাম্বার দেখে ভ্রুঁ কুঁচকালো রাইমা। কল রিসিভ করে খুব সাবলীল ভাবে বললো,
‘কে?’
‘আমি রাজিব!’
‘ওহ, আসসালামু আলাইকুম।’
‘ওয়ালাইকুম সালাম। কেমন আছেন?’
‘আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?
‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো।’
নিশ্চুপ হয়ে গেলো দুজন। নিরবতা নেমে এলো তাদের মাঝে। রাইমা লজ্জায় কথা বলতে পারছে না। আর রাজিব কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না। আসলে সেদিনের পর রাজিবের সাথে রাইমার প্রথম ফোনালাপ হচ্ছে। তাই লজ্জা, অস্বস্তি ও জড়তা কাজ করছে দুজনের মনে। দীর্ঘ সময় পর লম্বা দম ফেলে রাজিব বললো, ‘আসলে মা নাম্বার দিয়ে বলেছে কল দিতে তাই দিলাম। ডিস্টার্ব করলাম নাকি?’
‘না তেমন কিছু না। আসলে আমি ম্যাথ করছিলাম।’
‘ওহ! আমি এখনো কানফিউজড তাই একটু আনইজি লাগছে।’
রাইমা জানতে চাইলো ‘কোন ব্যাপারে?’
‘আপনি আসলেই নিজ ইচ্ছায় বিয়েতে মত দিয়েছেন তো নাকি কোনো রকম’…
কিছুটা মিনমিনে গলায় বললো রাজিব। তাৎক্ষনাৎ রাইমার কপালে ভাজ পরলো। বললো, ‘কি মনে হয় আপনার?’
রাজিব ইতস্ততবোধ করে বললো, ‘মানে এখনকার যুগের মেয়েরা এমনি হয়। এক জায়গায় সম্পর্ক করে পরিবারের চাপে বিয়ে করে। আর আমি চাই না কারোর মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করতে। এখনো সময় আছে আপনি বলতে পারেন। আমি সামলে নিবো আপনাকে কেউ কিছু বলবে না। তবুও নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করবেন না। সারাজীবনের ব্যাপার এটা।’
রাইমা মুগ্ধ হলো রাজিবের কথা শুনে। তারপরেও মজা নিতে কন্ঠস্বর নামিয়ে বললো, ‘আসলেই। আমার দশ বছরের রিলেশন। কিন্তু পরিবার মানছে না। বয়ফ্রেন্ড বেচারা আমার টেনশনে চুল পাকিয়ে ফেলছে।’
রাইমার কথায় হতভম্ব হলো রাজিব। বিস্মিত কন্ঠে বললো, ‘দশ বছরের রিলেশন? আপনার বয়স কতো তাহলে?’
হাসি পেলো রাইমার। বললো, ‘বিশ্বাস হচ্ছে না?’
রাজিব কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বলল, ‘একটুও না।’
রাইমা হাই তুলে বলল, ‘কি আর করবো। আপনার তো আমার সত্যি কথা বিশ্বাস করছেন না তাই ভাবলাম মিথ্যে বলে দেখি।’
প্রসন্ন হলো রাজিব। সে মনে মনে চেয়েছে রাইমা যেনো মন থেকেই রাজি হয়। হলোও তাই। এতোক্ষণ রাইমা মজা নিয়েছে। রাজিব খুশি মনে বলে উঠলো, ‘তাহলে আপনি সত্যি বিয়েতে রাজি?’
‘আবার জিজ্ঞেস করছেন?’
রাজিব হেসে ফেললো। হাস্যউজ্জল কন্ঠে বললো, ‘তাহলে আর আপনি বলছি না। কিছু দিন পর তো বউ হবেই। তুমি ডাকটাই পারফেক্ট। কি তাই না?’
লজ্জা পেলো রাইমা। গাল লাল হয়ে এলো তার। প্রত্যুত্তরে বলার মতো কিছু পেলো না। রাজিব আবারো বল ‘তুমিও কিন্তু আমাকে তুমি করে ডাকবে।’
রাইমা লাজুক হাসলো। মুচকি হেসে উত্তর দিলো, ‘আচ্ছা!’
রাজিব এবার এমন ভাবে খুশি মনে কথা বলছে যেনো তাদের কতো বছরের সম্পর্ক পূর্ণতা পাচ্ছে।
চলমান..