আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ #মাইশাতুল_মিহির [পর্ব-২৭]

0
1627

#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির

[পর্ব-২৭]

ড্রয়িংরুমে সকলে উপস্থিত থাকলেও আবরারের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করলো রোশান। গম্ভীর চোখেমুখে আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো আবরারের। কিন্তু আবরার নিচে আসছে না। তাই তাকে ডেকে আনার জন্য আরিয়ানকে পাঠালো উপরে। মেরুন কালার ব্লেজার টা ঠিক করে দ্রুত পায়ে আবরারের রুমে আসলো আরিয়ান। দেখলো আবরার ডিভানের উপরে আধশোয়া অবস্থায় ল্যাপটপ চালাতে ব্যস্ত।

‘ভাই? সবাই কখন থেকে ওয়েট করছে। তুমি এখনো রডি হও নি?’

আরিয়ানের কথা কর্ণকুহর হলো আবরারের। কিন্তু প্রতিক্রিয়া দেখালো না। ল্যাপটপ চালাতে চালাতেই প্রত্যুত্তর করলো, ‘আমি কি একবারো বলেছি যে যাবো? তাহলে নিচে আমার জন্য ওয়েট করার কোনো মানে দেখছি না।’

আরিয়ান অত্যন্ত শান্ত ভাবে বললো, ‘ভাইয়া প্লিজ। সিনক্রিয়েট চাই না। আসো আমাদের সাথে।’

আবরার নির্বিকার ভাবে ল্যাপটপ বন্ধ করে উঠে দাঁড়ালো। আড়মোড় ভেঙ্গে বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে শুধাল, ‘আমাকে জোর করে তোরা সিনক্রিয়েট করিস না।’

বলেই বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পরলো। আরিয়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবরার বলে উঠলো, ‘আর হ্যাঁ! তোর অতিশয় ভদ্র বাপ কে বলে দিস। তার সাথে কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা এই আবরার জুহায়ের নেই।’

‘কিন্তু ভাই..’

আরিয়ানের কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই আবরার কিছুটা রাগ মিশ্রিত গম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘আরিয়ান??’

আরিয়ান আর কিছু বললো না। চুপচাপ হতাশার নিশ্বাস ফেলে দরজা ভিড়িয়ে চলে গেলো। বাবা ভাইয়ের এই মনোমালিন্য তাকে বিষিয়ে তুলেছে। ভালো লাগে না একদম। আগের প্রাণোচ্ছল শান্তি নিবাস এখন তার ভাই আর বাবার আড্ডা ছাড়া মৃ:ত। তপ্ত শ্বাস ফেলে নিচে আসলো। তাকে একা নিচে আসতে দেখে হোসেন জানতে চাইলো, ‘আবরার কোথায়? আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবো?

আরিয়ান জবাব দিলো, ‘আরব ভাই যাবে না।’

রোশান গম্ভীর মুখে আরিয়ানের দিকে তাকালো একবার। প্রতিক্রিয়া না করে চুপচাপ বাহিরে যাবার জন্য পা বাড়ালো। হোসেন চোখের ইশারায় সবাইকে যেতে বললো। তখুনি নিশিতা অভ্র আর আরিয়ানকে সাবিতের কথা বলতেই আরিয়ান জানায় সাবিত তার একটা কাজে আরো আগেই বেড়িয়ে গেছে। কাজ শেষে সরাসরি রেস্টুরেন্টে চলে আসবে। অতঃপর সবাই মিলে গাড়িতে উঠলো। রোশান, নিশিতা, অভ্র, রাইমা ও দীবা বসলো একটা গাড়িতে। অপর গাড়িতে হোসেন, আরিয়ান, রিমি ও নুরা।
_____________________

রজনীর প্রথমভাগ। বিশালাকৃতির চাঁদটা থালা ন্যায় ঝলঝল করছে দূর আকাশে। চার তলায় সজ্জিত বিল্ডিংয়ের উপর জ্যোৎস্নার আলো পরে সৌন্দর্য করেছে দ্বিগুণ। গাড়ি থেকে নামার পর রাজিব এসে ভদ্রতার সাথে ভিতরে নিয়ে গেলো সবাইকে। দীবা, নুরা ও রিমি মুগ্ধ চোখে দেখছে। ছোট ছোট ঝাড়বাতি তে সজ্জিত চারপাশ। রঙবেরঙের মোমবাতি জ্বলছে আপন মনে। রেস্টুরেন্টের তৃতীয় তলায় এসে দেখলো এখানে অনেকে উপস্থিত। সবাই অনুমান করে নিলো এরাই রাজিবের পরিবারের লোকজন। তবে অপরিচিত মানুষের মাঝে পরিচিত একজনের মুখ দেখে বিস্ময়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে রিমি, নুরা ও দীবা। অবাক হওয়ার কারণটা হচ্ছে রাইমার শ্বশুরের পাশে তাদের কলেজ টিচার মুনতাহির রাজ। তাকে দেখে যতোটুকু না বিস্মিত হলো ; তার থেকেও হাজার গুন বিস্মিত হলো এটা শুনে যে রাজ রাজিবের আপন ছোট ভাই। তিনজন একে অপরের দিকে প্রথমে হতভম্ব হয়ে তাকালো। পরক্ষনে ফিশফিশ করে নিজেদের শান্ত্বনা দিলো, ‘আত্মীয় হবে যেহেতু পরিক্ষায় মার্ক একটু বাড়িয়ে দিতে পারে! আমাদের লস বৈকি লাভ-ই হলো।’

নুরা উপরে নিজেকে স্বাভাবিক রাখলেও ভিতরে ভিতরে অস্থির হয়ে আছে তার মন। ঘনঘন ভারি নিশ্বাস তাকে আড়ষ্ট করে তুলছে। অদ্ভুত অজানা এক কারণে রাজের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারছে না। কারণটা তার সত্যি অজানা। তবে রাজের গেটআপ দেখে মনে মনে আকাশ সমান ভালোলাগা কাজ করছে তার। রক্তিম হচ্ছে গাল। লজ্জাভূতি হচ্ছে সে।

রোশানকে ভিতরে আসতে দেখে আফজাল ও রাজ এগিয়ে আসলো। আফজাল প্রথমে কুষলবিনীময় করে রাজের সাথে রোশানের পরিচয় করিয়ে দিতে বললো, ‘এইযে আমার ছোট ছেলে রোশান। মুনতাহির রাজ। ওর কথাই সেদিন বলেছিলাম।’

রাজ নম্রতার সাথে এক হাত এগিয়ে দিয়ে রোশানের সাথে হাত মিলিয়ে সালাম দিলো। সংক্ষেপে কুষলবিনীময় ঘটালো। কথার এক পর্যায়ে রোশান বলল, ‘রাজের সাথে তো আগেও পরিচয় হয়েছিলো আফজাল। রিমিদের কলেজের টিচার। ওদের মার্কশিট আনতে গিয়ে পরিচয় হয়েছিলো আমাদের।’

রাজ মিষ্টি করে মৃদু হাসি দিলো একটা। আফজাল এবার মহা খুশি হয়ে বললো, ‘তাহলে তো ভালোই পূর্ব পরিচিত তোমরা। সম্পর্ক করতে আরো সুবিধে হবে। হাহা!’

বলেই একা একা হাসতে লাগলো আফজাল। মেয়েরা কথাটার অর্থোদ্ধান করতে না পারলেও অন্যরা ঠিকই ধরতে পারলো। অভ্র আরিয়ানের দিকে সূক্ষ্ম চোখে তাকাতেই আরিয়ান হালকা গলার টাই ঠিক করে একটু নড়েচড়ে দাঁড়ালো। দুইজন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। আরিয়ান পকেট থেকে মোবাইল বের করে আবরারকে ম্যাসেজ পাঠিয়ে দিলো একটা।

‘আফজাল হোসেনের ছোট ছেলে মুনতাহির রাজ। দীবার ক্লাস টিচার। ভাই, আসো নি ভালো করেছো। আলাপ করতে সুবিধে হচ্ছে।’

ম্যাসেজটা পাঠিয়েই অভ্রের দিকে সকলের অগোচরে মোবাইল কাত করে দেখালো আরিয়ান। অভ্র চোরা চোখে ম্যাসেজ টা দেখে ঠোঁটে ঠোঁট টিপে মনে মনে হাসলো। তার ঠিক কয়েক মিনিট পরেই অভ্রের মোবাইলে কল আসলো। মোবাইল বাইব্রেশন থাকায় টের পেলো সে। হাসি পেলো দুজনের। অভ্র পকেট থেকে মোবাইল বের করে কল রিসিভ না করে ছোট করে ম্যাসেজ দিল, ‘কোনো দরকার স্যার?’

আবরার সাথে সাথে রিপ্লাই করলো, ‘রাজ কে? বাবার সাথে কি কথা হচ্ছে তাদের? কোথায় তোমরা?’

অভ্র নিজের হাসি ধরে রাখতে বৃথা চেষ্টা করছে। নিজেকে আর সামলাতে পারলো না। সবার উদ্দেশ্যে ‘এক্সকিউজমি!’ বলে সড়ে এলো। দ্রুত পা চালিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো অভ্র। সে যেতেই আরিয়ান মাথা চুলকে সবার উদ্দেশ্যে বলল, ‘আমিও আসছি।’

কথাটা বলে কাউকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে অভ্রের পিছু গেলো। সবাই ব্যাপার টা স্বাভাবিক ভাবে নিলেও রিমি ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। অভ্রের পর আরিয়ানের যাওয়ার ব্যাপার টা তার সন্দেহ লাগলো। তাই দীবার দিকে হালকা ঝুকে ফিশফিশ করে বলে উঠলো, ‘দুইজন একই সাথে ওয়াশরুমে কি করবে?’

দীবা কোল্ডড্রিংকে চুমু দিতে নিয়ে ভিমরি খেয়ে খুকখুক করে কেশে উঠলো। নিজেকে অল্প সময়ে সামলে নিয়ে রিমির উদ্দেশ্যে বলল, ‘ওয়াশরুমে গিয়ে মানুষ কি করে? ইডিয়ট নাকি তুই।’

দীবার প্রত্যুত্তর শুনে রিমি বুঝলো সে অন্যদের মতোই ব্যাপার টা স্বাভাবিক নিয়েছে। কিন্তু অভ্র আরিয়ানের মিটমিট হাসি, অগোচরে মোবাইল দেখা, দুইজন একই সাথে ওয়াশরুমে যাওয়ার ব্যাপার মোটেও স্বাভাবিক না। মাথায় এইসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তার। বিরক্ত হলো কিছুটা। সে এইসব নিয়ে ভাবছে কেন সে? আশ্চর্য! ‘

ওয়াশরুমে এসেই উচ্চ হাসিতে মেতে উঠলো অভ্র আরিয়ান। হাসি দুজনের থামছেই না। অবস্থা আরো গুরুতর করতে আরিয়ান আবরার কে আবারো ম্যাসেজ দিলো, ‘ছেলেটা দীবার কলেজের লেকচারার। আব্বুর পরিচিত। দেখতেও সুন্দর। দীবাও বোধহয়….! ”

এইটুকু লিখে ডট ডট দিয়ে দিলো আরিয়ান। হেসে ফেললো অভ্র! এইটুকু বার্তা পেয়েই অস্থির হয়ে উঠলো আবরার। বাড়িতে কেউ না থাকায় একা একা বসে চিল করছিলো সে। উল্লাসিত মনে যখন ল্যাপটপে ব্যস্ত ; তখনই আরিয়ানের ম্যাসেজের আগমন ঘটলো। এমন উদ্ভট ম্যাসেজ দেখে আরিয়ানের নাম্বারে ডায়াল করতে গিয়ে ভেবেছে হয়তো আরিয়ান মজা নিচ্ছে। তাই ডিরেক্ট অভ্রের নাম্বারে কল দিলো। অভ্র কল রিসিভ না করায় প্রকাণ্ড রকমের রাগ হলো তার। অতঃপর এক মুহূর্তও বিলম্ব করলো না। অভ্রের লোকেশন ট্র‍্যাক করে বেড়িয়ে গেলো রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে নিলো ‘যদি রোশান এমন কোনো কাজ করে থাকে তাহলে সে ছাড়বে না কাউকে।

রাজিবের রেস্টুরেন্ট আগ্রাবাদ হওয়ায় আবরারের সুবিধে হলো বেশ। সেখানে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগে নি। লোকেশন মোতাবেক সঠিক স্থানে পৌঁছাবার পর গাড়ি থেকে নেমেই দ্রুত পা চালিয়ে উপরে আসলো। রিসিপশনের লোকটার কাছ থেকে জেনে তৃতীয় তলায় আসলো। বড় একটা ডাইনিং টেবিলে সবাই একত্রে বসে খাবার খাচ্ছে। রোশানের পাশে বসেছে দীবা। রোশানের ঠিক সামনে বসেছে রাজ। যদিও আবরার প্রথম দেখায় রাজকে চিনতে পারে নি। তাকে দেখে হোসেন হেসে কাছে ডাকলো। আবরার এগিয়ে আসার পর আফজালের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো রোশান। আবরার সাবলীল ভাবে হাত মিলালো। পরিচয় হলো রাজিবের পরিবারের সাথে। আবরার হোসেনের পাশের চেয়ারে বসলো। প্রথমেই তাকালো দীবার দিকে। নীল রঙের হিজাবে দীবাকে ভীষণ কিউট লাগছে। তবে মুগ্ধ হওয়ার বদলে ক্ষুব্ধ হলো আবরার। আজ কেন এতো সুন্দর করে সেজে আসতে হলো মেয়েটার? রুক্ষ চোখে দীবার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে রাজের দিকে তাকালো। হেসে হেসে কথা বলছে সবার সাথে। দেখতেও খারাপ লাগে নি আবরারের। হয়তো তার সমবয়সী হবে কিংবা কয়েকবছরের ছোট। যেহেতু দীবাদের কলেজের টিচার ; সেহেতু দীবা রাজের সম্পর্কে কিছুটা হলেও অবগত। যদি সত্যি সত্যি রাজি হয়ে যায়? নিজের এমন ভাবনায় নিজেই চমকালো আবরার। ভয়ার্ত হলো মন। যে করেই হোক দীবার মনে নিজের জায়গা করে নিতে হবে।

সকালের ঘটনার কারণে আবরারকে দেখেই লজ্জা পাচ্ছে দীবা। এখন ভুলেও চোখ তুলে আবরারের দিকে তাকাচ্ছে না। চুপচাপ নিজেকে স্বাভাবিক রেখে খাবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। এক পর্যায়ে টেবিলে থাকা সকল আইটেমের দিকে চোখ বুলাতে লাগলো। কোনটা খাবে ভেবে দ্বিধায় আছে আপাতত। ঠোঁট কামড়ে ভাবতে লাগলো। তাকে সম্পূর্ণ ভাবে খেয়াল করলো রাজ। যদিও কথার ফাঁকে ফাঁকে তার সম্পূর্ণ নজর, খেয়াল দীবার দিকে ছিলো। খাবার নিয়ে তার এমন দুটানা দেখে রাজ স্মিতি হেসে বিফ স্ট্রোগানোফের প্ল্যাট দীবার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘এটা নিতে পারো। এখানে বিফ স্টেক খুব ভালো বানায়।’

দীবা মুচকি হেসে রাজের হাত থেকে প্ল্যাটটা নিয়ে বলল, ‘এটা আমার অনেক পছন্দ।’

রাজ মনে মনে বলল, ‘আর আমার তোমাকে!’ কিন্তু মুখে প্রত্যুত্তরে মুগ্ধ কন্ঠে শুধাল, ‘আমারো!’ তারপর রিমি ও নুরার দিকে পাস্তা এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘তোমরাও নাও।’

রিমি জবাবে মিষ্টি হেসে পাস্তার বাটি হাতে নিলো। দীবা খুশির মনে খাচ্ছে। আশেপাশে কারোর দিকে বিন্দুমাত্র ধ্যান নেই তার। কেউ একজন যে তার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে সেটা তার কল্পনাতীত। আবরার এবার প্রকাণ্ড রকমের রাগান্বিত হলো। সবচেয়ে বেশি রাগ হলো রোশানের উপর। রাজের সাথে অতিরিক্ত ন্যাকামি সহকারে আলাপের কারণে মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে তার। দীবা তার বিবাহিত স্ত্রী তার পরেও কিভাবে রাজকে নিয়ে এইসব চিন্তা করতে পারে? চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে রইলো দীবার দিকে। প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারলো না। নিরবে বসে সহ্য করতে লাগলো।
________________

রাত্রীর দ্বি-প্রহর শেষে তৃতীয় প্রহরের সূত্রপাত ঘটলো। রাস্তাঘাট নিরব নিস্তর। পিচ ঢালা রাস্তার উপর বৃষ্টির পানির বিন্দু কণা গুলো চিকচিক করছে। আকাশের অর্ধবৃত্ত চাঁদটা ভীষণ সুন্দর লাগছে। শীতল বাতাসে বৃক্ষের নেত্রপল্লব দুলছে। হালকা হালকা শীতের আমেজ চারপাশে। তবে সহ্য করার মতো! কিন্তু দীবার এই হালকা শীতল হাওয়া নিতে পারছে না। এমনিতেই সন্ধ্যা রাত থেকে শীত শীত লাগছিলো তার। আর এখন শীতল বাতাসের কারণে তখনের তুলনায় দ্বিগুণ শীত লাগছে। গায়ে হালকা কাঁপুনি দিয়ে উঠছে বারংবার। সকালে বৃষ্টি ভেজা তার সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো। তাই এখন জ্বর এসেছে বোধহয়। ব্যাপার টা আচ্ করতে খুব বেশি সময় লাগে নি দীবার। চুপচাপ এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। রোশান আফজালের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে আসলো। নিজেরা গাড়িতে উঠার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলো।
.
জরুরি ইমেইল আসায় অভ্র সবার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে মোবাইলে চেক করছিলো। রিমি তার দিকে এগিয়ে আসলো ধীর গতিতে। দুই হাত পিছনে নিয়ে হাস্যউজ্জ্বল চেহারায় অভ্রের সামনে দাঁড়ালো। তাকে এখানে দেখে অভ্র মোবাইল পকেটে রেখে প্রশ্ন করলো, ‘কিছু বলবে?’

রিমি মাথা উপর নিচ নাচিয়ে ‘হ্যাঁ’ বুঝালো। তারপর দাঁত কেলিয়ে বললো, ‘আপনাকে কালো হনুমানের মতো লাগছে।’

রিমির কথা শুনে ভ্রুঁ জোড়া কিঞ্চিৎ বাঁকা করলো অভ্র। কালো হমুমান বলার কারণ হলো সে আজ ব্ল্যাক কালার ব্লেজার পরেছে। মেয়েটা ইচ্ছে করে ঝ’গ’ড়া করতে এসেছে। মনে মনে হাসলো অভ্র। পকেটে এক হাত গুঁজে সটান হয়ে দাঁড়ালো। বাঁকা হেসে তাচ্ছিল্যের সাথে বলল, ‘ঝ’গ’ড়া করার এতো সখ তোমার? বেচারা যে সারাজীবন তোমাকে কিভাবে সহ্য করবে আল্লাহ জানে।’

রিমি বুঝতে না পেরে পালটা প্রশ্ন ছুড়লো, ‘আপনি কার কথা বলছেন?’

‘তোমার জামাইয়ের কথা ইডিয়ট!’ কিছুটা বিরক্তি সহিত কথাটা বলে চলে গেলো গাড়ির কাছে। রিমি আহাম্মকের মতো তাকিয়ে রইলো অভ্রের দিকে। কথাটার অর্থোদ্ধান ও কারণ বুঝার পর দাঁতে দাঁত লেগে আসলো আপনা আপনি। চোখমুখ শক্ত করে গটগট পায়ে গাড়িতে এসে বসে পরলো।

রিমি গাড়িতে উঠার পর রোশান দীবাকে ডাকলো। দীবা একপাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো। শরির দুর্বল লাগছে তার। তাকিয়ে থাকার মতো স্বস্তি পাচ্ছে না চোখ দুটো। জ্বরের উত্তাপে মৃদু কাঁপুনির কারণে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি টুকু নেই দেহে। রোশানের ডাক শুনে শক্তিহীন দেহ ধীর গতিতে টেনে রোশানের কাছে আসলো। রোশান গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে বসার ইশারা দিতেই পিছন থেকে আবরার বলে উঠলো, ‘দীবা আমার সাথে যাবে।’

দাঁড়িয়ে পরলো দীবা। হতভম্ব হয়ে পিছু ফিরে আবরারের দিকে তাকালো। রোশান গম্ভীর মুখে বলল, ‘এসেছো যেহেতু একা, সেহেতু একা-ই ফিরে যাও। দীবা আমার সাথেই যাবে।’

আবরার এগিয়ে এসে দীবার বাম হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। হাতটা ধরে রেখেই এটিটিউট দেখিয়ে শুধাল, ‘আমার বউকে আমি সাথে নিয়ে যাবো নাকি অন্য কারোর সাথে যাবে সেটা আমি ডিসাইড করবো। আপনি যেতে পারেন। দীবা আমার সাথেই যাচ্ছে।’

রোশান আর কিছু বললো না। মৌনতার সাথে গাড়িতে উঠে বসলো। অন্যরাও গাড়িতে উঠতেই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সু-সু শব্দ তুলে চলে গেলো। গাড়ি চোখের আড়াল হতেই দীবা আবরারের হাত ঝামটা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে উঠলো, ‘হুটহাট সবার সামনে হাত ধরা বন্ধ করেন। অস’হ্যকর!’

চলমান…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here