#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির
[পর্ব-৫৯] অন্তিম পর্ব
মাথা তুলে উন্মুক্ত খোলা আকাশের দিকে তাকালো রাজ। কষ্ট গুলো সব বৃষ্টির পানিতে মুছে দিয়ে বলতে লাগলো, ‘চুপচাপ স্বভাবের ছেলেটার একাকীত্বের সময় পাশে ছিল নুরা। যে তাকে নতুন করে ভালোবাসতে শিখিয়েছে। ভুল সিদ্ধান্ত থেকে সরিয়ে এনেছে। কোনো একসময় যাকে ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারতাম না; আজ নুরার আগমনে তার কথা মাথায় আসে না। দীবাকে হারিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই। তাকে হারিয়েই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মূল্যবান রত্নটা পেলাম আমি।’
আবরার তখন কিছু বললো না। বিনিময়ে শুধু মৃদু হাসি দিয়েছিলো। অবাক হয়েছিলো তখন রাজের কথা গুলো শুনে। ভুল ধারণা গুলো মুহূর্তেই ভেঙ্গে গেলো। রাজের প্রতি কোনো সন্দেহ থাকলো না। তবুও আবারো বাড়িতে এসে সাবিতের সঙ্গে কথা বললো। ঘুম থেকে উঠে আবারো রোশান ও হোসেন। সবার মতামত যখন পজিটিভ এসেছে তখন নিশিতাকে জানালো রাজের পরিবার আসবে। এবার তার বোন শান্তিতে থাকলেই হবে। আর কিছু চায় না তার।
.
সূর্য পশ্চিমাকাশে ডুবে গেছে। মাগরিবের আজান পরেছে কিছুক্ষণ আগে। চারপাশে পাখিদের ডানা ঝাপটানোর শব্দ কানে আসছে। সঙ্গে ঝিঁঝিঁপোকা দের কর্কশ ধ্বনি। তবুও আবরার বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে পূর্বে ঘটিত কথা গুলো ভাবছে। গভীর ভাবে চিন্তায় থাকার সময় হঠাৎ পিছন থেকে দীবা ঝাপটে এসে জড়িয়ে ধরলো। আকস্মিক ঘটনায় আবরার কিছু ভয় পেলেও প্রকাশ করলো না। ঘাড় ঘুরিয়ে দীবার দিকে তাকিয়ে দেখলো দীবা মহাখুশি। আবরার আলতোভাবে হেসে প্রশ্ন করলো, ‘এবার খুশি?’
দীবা আবরারকে জড়িয়ে ধরেই আনন্দিত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ভীষণ খুশি।’
প্রত্যুত্তরে আবরার মুচকি হাসলো কেবল। শব্দ করে একটা নিশ্বাস ছুড়ে দীবাকেও জড়িয়ে ধরলো।
~~
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠতেই দীবার মন বিষণ্ণ হয়ে গেলো। নুরার বিয়ে নিয়ে যতোটা এক্সাইটেড হয়ে ঘুমিয়েছিল সবটাই নষ্ট হয়ে গেলো আবরারের একটা কথাতে। কিছুদিন পরেই তো নুরার বিয়ে। তাহলে এখুনি ঢাকা যাওয়ার কি দরকার? কিছুদিন পরে গেলেই তো পারে। এই নিয়ে মন খারাপ দীবার। বিছানায় চুপচাপ এক ভঙ্গিতে বসে আছে। না কিছু বলছে, আর না কিছু করছে। অনেকটা সময় দীবার মন খারাপ দেখে ক্ষান্ত হলো আবরার। কাপড় সব ব্যাগে রেখে দীবার পাশে এসে বসলো। পরম যত্নসহকারে দীবার এক হাত ধরে আলতোভাবে শুধাল, ‘দরকার আছে বলেই তো যাচ্ছি। প্রমিস বিয়ের আগেই চলে আসবো।’
দীবা মন খারাপ করেই প্রত্যুত্তর করলো, ‘ভেবেছি এক সাথে ম্যাচিং করে কাপল ড্রেস কিনবো। আপনি না থাকলে কিভাবে কিনবো? আপনাকে ছাড়া একা একা মজা করতে খারাপ লাগবে আমার।’
মৃদু শব্দ তুলে হাসলো আবরার। দীবাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে কপালে আলতোভাবে চুমু দিলো একটা। দীবার গালে আদুরে এক হাত রেখে মৃসণ গলায় বললো, ‘সবার সাথে থাকবে তাহলে মন খারাপ হবে না। আমি খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো।’
অনিচ্ছা থাকার পরেও সম্মতি দিলো দীবা। আবরারকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থাকলো কিছুক্ষণ। ঘড়ির কাটা বোধহয় খুব দ্রুতই চলে। এইটুকু সময়ের মাঝেই আধঘণ্টা কেটে গেলো। সময় হয়ে যাওয়ায় দরজায় টোকা দিলো অভ্র। আবরার উঠার আগে দীবা ঠোঁটে প্রগাঢ় একটা চুমু দিয়ে মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিলো। বিনিময়ে দীবাও লাজুক হাসলো। অতঃপর আবরার ব্যাগ হাতে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। সবার থেকে বিদায় নিয়ে অভ্রকে সঙ্গে করে রওনা দিলো ঢাকার উদ্দেশ্যে।
____________________
সময় খুবই নগণ্য। দেখতে দেখতে পুরো এক সাপ্তাহ কেটে গেলো। বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হবে তবুও যেন আয়োজনের কোনো কমতি নেই। গায়ের হলুদের আগেই আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে দেশে যারা আছে বা যাদের আসা সম্ভব মনে হয়েছে তারাই এসেছে। খুব বেশি মানুষদের ভীর নেই বাড়িতে। তবুও যেন হৈহুল্লোড় পরেছে শান্তি নিবাসে। নুরার খালামনি নিজ হাতে কাচা হলুদ বেটে তৈরি করলো। কাজিনরা মিলে নুরাকে হলুদের শাড়ি পড়ালো। সঙ্গে কাচা ফুলের জুয়েলারি। হলুদ শাড়িতে ঠোঁটে লাল লিপস্টিক ও চোখে গাঢ় কাজল দেওয়ায় অপ্সরীর মতো লাগছে নুরাকে। অন্যরাও শাড়ি পরে তৈরি হয়ে নিলো। আরিয়ান সাবিত সাদা কাপড়ের মাঝে হলুদ রঙ্গের সুতার কাজ করা পাঞ্জাবি পরলো। সবাই ব্যস্ত। রাজের পরিবার থেকে রাজিব, রাইমা ও রাইমার এক ননদ এসেছে হলুদের তথ্য নিয়ে। সবাই খুশি হলেও নুরার মন বিষণ্ণ! কারণ একটাই। আবরার এখনো আসেনি। হলুদ লাগানোর আগেও আবরারকে কল দিয়েছিলো নুরা। কিন্তু আবরার জানালো রাস্তায় আছে, আসতে দেরি হবে। এতো সুন্দর একটা মুহূর্তে বড় ভাইয়ের অনুপস্থিতি নুরার মন খারাপের কারণ। কিন্তু কাজিনরা থাকতে কি আর মন খারাপ থাকবে?
শুরু হলো হলুদ লাগানোর পর্ব। ড্রয়িংরুমের বড় সোফার মাঝেই নুরা বসেছে। এক এক করে পরিবারের বড়রা আগে হলুদ ছোঁয়ালো। এক পর্যায়ে নুরাকে হলুদ লাগানোর সময় রাইমা বললো, ‘তুই আমার জা হবি কখনোই কল্পনা করি নাই!’
অপর পাশ থেকে আরিয়ান কিছুটা নিরাশ হয়ে বলে উঠলো, ‘ছোট হয়েও বিয়ের পিড়িতে বসে গেলি। অথচ আমরা এখনো গার্লফ্রেন্ডই খুঁজে পেলাম না। কি বিলাই ম-রা ভাগ্য দেখছোস?’
হুহা করে হেসে উঠলো সবাই। লজ্জায় মাথা নত করে ফেললো নুরা। লাল হয়ে এলো তার গাল। চোখ তুলে কারোর দিকে তাকানোর মতো স্বস্তি খুঁজে পেলো না।
_______________
ঘড়ির কাটা প্রায় দুইটার ঘরে। চারপাশ নিঝুম নিস্তব্ধ। বাড়ির প্রতিটা সদস্য গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সন্ধ্যায় গায়ের হলুদের পরপরই হাতে মেহেদি দেওয়া শেষ। সবাই মিলে মধ্যরাত পর্যন্ত আড্ডা দেবার পরে যার যার কাঙ্ক্ষিত স্থানে গিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে। মাত্র বাড়ি ফিরেছে আবরার। যেহেতু সবাই ঘুমিয়ে আছে তাই ডাক দেয়নি কাউকে। দীর্ঘপথ জার্নি শেষে শরির বড্ড ক্লান্ত। অভ্রকে রুমে যেতে বলে নিজেও অসল শরীর টেনে রুমে আসলো। ঘুমে চোখ দুটো টলমল করছে। দরজা লাগিয়ে পিছু ফিরে দীবার ঘুমন্ত মুখখানি দেখে মুহূর্তেই ক্লান্তিহীন হয়ে উঠলো আবরার। ওয়াশরুম থেকে দ্রুত কাপড় বদলে ফ্রেশ হয়ে আসলো। বিছানার কাছে এসে দীবার গায়ে কাথাটা ভালোভাবে টেনে দিয়ে নিজেও পাশে শুয়ে পরলো আবরার। এক দৃষ্টিতে তাকালো তার অর্ধাঙ্গিনীর দিকে। দীবার মুখের উপরে এলোমেলো ভাবে পরে থাকা চুল গুলো ধীরে ধীরে কানের পিছনে গুঁজে দিল। সাবধানতার সঙ্গে চুল সরালেও সুড়সুড়ি লাগলো দীবা। ঘুমন্ত চোখে পিটপিট করে তাকালেও সামনে আবরারকে দেখে সকচকিত হয়ে উঠলো মস্তিষ্ক। খুশি ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো। হেসে উঠলো আবরার। দীবা খুশি মনে জড়িয়ে ধরে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো, ‘কখন আসলেন?’
‘একটু আগেই। ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিয়েছি?’
‘উহু, আপনাকে অনেক মিস করেছি আমি।’
আবরার দীবাকে জড়িয়ে ধরে কপালে ছোট একটা চুমু খেলো। চোখ বন্ধ করে বললো , ‘আমিও। ঘুমিয়ে পরো এবার।’
প্রত্যুত্তর করলো না দীবা। আবরারকে জড়িয়ে ধরে খুশি মনে শান্তিতে একটা ঘুম দিলো। আবরার দীবার মাথায় ধীরেসুস্থে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মনে মনে ভাবছে দীবার পরিক্ষার পর তাদের দুজনের বিয়ের ব্যাপারটা অফিশিয়ালি জানিয়ে দিবে আবরার। আবারো নতুন করে, খুব বড় আয়োজন করে, সম্পূর্ণ সব নিয়ম মেনে দীবাকে তার স্ত্রীর অধিকার দিবে। মিডিয়ায় জানাবে আবরার জুহারের ম্যারিড। তারও একটা মিষ্টি কিউট বউ আছে।
_____________________
শ্রাবণের শেষদিন। সূর্যের তীর্যক আলোকরশ্মি গুচ্ছ এখন কোমলায়ন। স্নিগ্ধ বিকেলের হাওয়া। আকাশটা স্বচ্ছ। থেমে থেমে সাদা মেঘ ভাসছে। চারপাশ একদম কোলাহলমুক্ত হলেও বাড়ির ভিতরে পরিবেশ আনন্দময়। দুপুরের শেষভাগ বরযাত্রী এসেছে। বরযাত্রী হিসেবে আফজাল, রাজের দুটো কাজিন, রাজিব আর রাইমা। আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের খাওয়া দাওয়া সম্পন্ন করলো সবাই। অতঃপর কাজিকে নিয়ে পরিবারের সবাই এক সঙ্গে বসলো। কাগজপত্র রেডি করে কাজি পাত্রী ডাকতে বললে আরিয়ান গেলো উপরে। যথারীতি লাল বেনারসি পরে মাথায় ঘোমটা নিচে নামলো নুরা। তাদের আগমনে সবাই মাশা’আল্লাহ বলে সুর তুললো। সবার দৃষ্টি অনুসরণ করে সিঁড়ির দিকে তাকাতেই থমকে গেলো রাজ। চোখের পলক পরা বন্ধ হয়ে গেছে তার। হৃদযন্ত্র খুব দ্রুতই চলা শুরু করেছে। এই প্রথম নুরাকে বধূ রুপে দেখেছে। নুরা আজ বউ সেজে তার জন্য। কিছুক্ষণ পরেই নুরা তার অর্ধাঙ্গিনী হবে। জীবনসঙ্গিনী হিসেবে যুক্ত হবে তার জীবনে। ভাবতেই অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে রাজের মনে। আনমনেই মৃদু হাসলো রাজ। অজান্তেই উচ্চারণ করে ফেললো, ‘মাশা’আল্লাহ!’
নুরাকে রাজের পাশে বসানোর পরে কাজি সাহেব তার নিয়ম অনুসারে বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। রাজকে কবুল বলতে বলে নুরাকে বলা হলো। রাজ সাথে সাথে কবুল বললেও নুরা একটু সময় নিলো। এই সময়টায় প্রতিটা মেয়ের বুকের ভিতর অদ্ভুত ভাবে তোলপাড় চলে। না চাইতেও অজান্তে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে। পাশ থেকে নিশিতা আর রাইমা তাকে শান্ত্বনা দিলো। অতঃপর নুরাও কবুল বলে স্বীকার করে নিল রাজকে। সবাই আলহামদুলিল্লাহ্ বলে হাত তুলে মোনাজাত করে নিল। নবদম্পতির জন্য কাঙ্ক্ষিত দোয়া পড়ে নিলো। রেজিস্টেশন পেপারে সাইন করে নিলো দুজন।
____________________
সন্ধ্যা নেমে এলো। চারপাশ অন্ধকারচ্ছন্ন হয়ে গেলো। সূর্য আকাশে নেই। চাঁদের এক তৃতীয়াংশ দেখা যাচ্ছে আকাশে। চারপাশে তারারা মিটমিট আলো নিয়ে খেলা করছো আকাশ জুরে। ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের কর্কষ ডাক চারপাশ মাতিয়ে রেখেছে। কাঙ্ক্ষিত সময় এলো বাবার বাড়ি থেকে বিদায় হবার। কান্নায় ভেঙ্গে পরলো নুরা। একবার মাকে জড়িয়ে ধরছে। তো আরেকবার বড়মা মানে চাচিকে। আরেকবার দীবার মাকে জরিয়ে ধরে। কান্না কিছুতেই থামছে না নুরার। এক পর্যায়ে আরিয়ান পরিস্থিতি সামলাতে চেঁচিয়ে বলেই উঠলো, ‘ভাই তুই বিদায় হলে আমি একটু ঘুমাবো। একটু তাড়াতাড়ি কর না।’
কান্নার মাঝেও বিরক্তিকর চোখেমুখে তাকালো নুরা। কান্নায় ভাঙ্গা গলায় রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘আমি চলে যাচ্ছি আর তুমি খুশি হচ্ছো? মায়া লাগছে না? কেমন ভাই তুমি।’
আরিয়ান কিছুটা বিদ্রূপাত্মক কন্ঠে বললো, ‘কিসের মায়া? এমন ভান ধরতেছিস যেন পৃথিবী ছেড়ে মঙ্গলে যাচ্ছিস। আরে পাগল, বাড়ি থেকে বের হয়ে দুই পা হাঁটলেই তো তোর জামাইয়ের বাড়ি। এইটুকু রাস্তার লাগি এমনে কানতাছোস কেন?’
‘দুই পা হাঁটলেই জামাইয়ের বাড়ি’ কথাটা শুনে সবাই গভীর কষ্টের ভিতরেও হেসে উঠলো। সবার হাসিতে নুরাও না পারতে সঙ্গে হাসলো। অতঃপর সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো নতুন জীবনের উদ্দেশ্যে।
~
সবাই বাড়ির ভিতরে চলে গেলে দীবার আবরারের বাহু জরিয়ে ধরে বললো, ‘আপনি খুশি?’
মৃদু হাসলো আবরার। দীবার গালের চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে বললো, ‘খুশি হবো না কেন? নুরা হাসিখুশি থাকলে আমিও খুশি।’
প্রত্যুত্তর করলো না দীবা। মুচকি একটা উপহার দিয়ে আবরারের বাহু ধরেই বাড়ির ভিতরে ঢুকলো। বাগানের কাছে আসতেই আবরার ঝোপঝাড় থেকে কিছু নড়ার শব্দ পেলো। ভ্রুঁ জোরা কুচকে তাকালো সেই দিকে। দীবাকে ইশারায় দাঁড়াতে বলে শব্দহীন পায়ে সেই দিকে এগিয়ে গেলো। বাগানবিলাসের পিছনে গিয়ে দাঁড়াতেই ভয়ে চেঁচিয়ে উঠলো রিমি। অপ্রত্যাশিত ভাবে আবরারকে হঠাৎ দেখে ভড়কে গেছে রিমি ও অভ্র। যতোটা না তারা ভড়কে গেছে তার থেকে দ্বিগুণ বিস্মিত হয়ে আবরার দুজনকে এখানে দেখে। সন্দেহ আরো বেশি গাঢ় হলো দুজনের হাত ধরা দেখে। রিমির সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছিলো না অভ্র। তাই হাত ধরে এখানে এনেছিল রিমির রাগ ভাঙ্গানোর জন্য। কিন্তু রাত তো ভাঙ্গাতে পারলো উলটো আরো অঘটন ঘটে গেলো।
চেঁচানোর আওয়াজে দীবাও সেখানে উপস্থিত হলো। রিমি ও অভ্রকে এমন বিব্রত অবস্থায় দেখে তার ভীষণ হাসি পেলো। রিমি ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো একটা। কটমট চোখে অভ্রের দিকে তাকালো একবার।
আবরার প্রথমের মতোই অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো, “তোরা এখানে কি করছিস?’
রিমি অপ্রস্তুত হয়ে হাসলো কোনোমতে। ইতস্তত করে জবাব দিল, ‘এমনিই। অভ্রকে জিজ্ঞেস করো।’
বলে এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না রিমি। এক দৌড় দিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো। রিমি যেতেই আবরার অভ্রের দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকালো। অভ্র বোকা বোকা একটা হাসি দিয়ে বললো, ‘দীবাকে জিজ্ঞেস করেন।’
সে-ও কোনো রকমে এখান থেকে পালালো। আবরার এবার বোকা বনে গেলো। ব্যাপারটা তার হজম করতে কষ্ট হচ্ছে। দীবার দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘হচ্ছে টা কি ভাই?’
হাসলো দীবা। আবরারের হাত ধরে বাড়ির ভিতরে যেতে যেতে অভ্র ও রিমির সম্পর্কের কথা জানালো। আবরার এবার আরো বিস্মিত। চোখ দুটো তার কোটর বেরিয়ে আসার উপক্রম। বিস্মিত হতে হতে পেটে গ্যাস্ট্রিক হয়ে গেছে বোধহয়। উচ্চস্বরে হাসলো দীবা। মেনে নিবে কিনা জানতে চাইলে আবরার কিছু বললো না। দীবা তার নিরবতাকে সম্মতি হিসেবেই ধরে নিল।
___________________
ঘড়ির কাটা প্রায় রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই। নুরা বিছানায় একা একা বসে আছে। পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে দেখলো একবার। খুব সুন্দর ভাবে গুছানো হয়েছে। বিছানাটা যেন আজ ফুলের রাজ্য হয়ে উঠেছে। শুধুই কি তার আর রাজের জন্য সাজানো? সত্যি কি সে রাজের স্ত্রী আজ? ভাবতেই শান্তি শান্তি অনুভব হলো তার। তখুনি দরজা খোলার শব্দ কানে আসলো। বুকটা ধুক করে উঠলো নুরার। ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো একটা। নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে জড়সড় হয়ে বসলো।
রাজ দরজা লাগিয়ে নুরার পাশে বসলো। হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে জানতে চাইলো, ‘কোনো সমস্যা হচ্ছে?’
নুরা মাথা নাড়িয়ে না বললো। রাজ তাকালো নুরার দিকে। গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। তাকে এভাবে তাকাতে দেখে অস্বস্তিতে পরে গেলো নুরা। রাজ মন ভরে দেখলো কিছুক্ষণ। অতঃপর আমোদিত একটা হাসি দিয়ে মৃদু গলায় শুধাল, ‘আজকে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে নুরা।’
নুরা লজ্জা লাগলো ভীষণ। গাল দুটো লাল হয়ে এলো। রাজ পকেট থেকে একটা ছোট বক্স বের করলো। বিনা অনুমতিতে নুরার হাত ধরে বক্স থেকে একটা রিং বের করে পরিয়ে দিল। ডান হাতে একটা সুন্দর স্বর্ণের ব্রেসলেট পরিয়ে দিলো। নুরা মুচকি হাসি দিয়ে ব্রেসলেট টা দেখলো ভালোভাবে।
‘পছন্দ হয়েছে?’
‘ভীষণ।’
‘আলমারিতে একটা বক্স আছে। সকালে নতুন শাড়ি সাথে ওই জুয়েলারি গুলো পরবে।’
নুরা মাথা নাড়িয়ে ঠিক আছে বললো। রাজ নুরার এক হাত নিজের কাছে টেনে ধরলো। লম্বা একটা নিশ্বাস ফেলে বলে উঠলো, ‘আমার সম্পর্কে তুমি সব জানো। তাই নতুন করে আর কিছু বলছি না। আমার খারাপ সময়ে, আমাকে মেন্টালি সাপোর্ট দিয়ে আমার পাশে থাকার জন্য, আমার জীবনে আসার জন্য, সব কিছুর জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ নুরা। আমার অতীত নিয়ে মনে কখনো সংশয় রাখবে না। আমাদের পরিচিয় অল্প সময়ের মধ্যে হলেও আমি মন থেকেই তোমাকে ভালোবেসেছি। অতীত ভুলে সেই দিনই এয়ারপোর্ট থেকে তোমার কাছে এসেছি। আমার এই ক্ষুদ্র জীবনটা তোমার সাথে কাটাতে চাই। তোমাকে সারাজীবন পাশে চাই। প্রথমবার নিজেকে সামলে নিলেও তোমাকে হারালে দ্বিতীয়বার সামলাতে পারবো না।’
নুরা অপর হাত রাজের হাতের উপরে রাখলো। আলতো হেসে শুধাল, ‘আমি হাত ধরেছি ছাড়ার জন্য নয়। একবার যখন ধরেছি তখন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ধরে রাখবো।’
সন্তুষ্ট হলো রাজ। বিষণ্ণবদন মনটা নিমিষেই ভালো হয়ে গেলো। এগিয়ে এসে নুরার কপালে আলতোভাবে চুমু খেলো একটা। কিছুক্ষণ বসে বিভিন্ন ব্যাপারে কথা বলে নিজেদের ভিতরের ভয় জড়তা সংশয় কাটাতে চাইলো। নুরা কিছুটা এক্সাইটেড হয়ে বললো, ‘আজ আরব ভাইয়ের একটা গান রিলিজ হবার কথা। শুনেছেন?’
রাজ ঘাড় নাড়িয়ে থা নাড়িয়ে না বুঝালো। নুরা মোবাইল বের করে গানটা লাগালো। সুন্দর মিউজিক বাজিয়ে গানিটা বাজতে লাগলো। পাশাপাশি শুয়ে দুইজনই গানটা উপভোগ করতে লাগলো। প্রথম রজনী হিসেবে মুহূর্তটাকে আরেকটু মধুর করে নিল দুজন। আকাশের চাঁদটা আলো দিয়ে পূর্ণতার হাসি দিলো।
আঁধারে নির্জনে মেঘের ডাকে এক রাতে
তোমার সমস্ত নিরবতা দিয়েছিলে আমার হাতে।
আবারও এসেছে নির্জন রাত, বৃষ্টির মত আঁধার
কোথাও তুমি নেই, আমাদের দুজনের প্রেম নেই
বর্ষার ঝড়ো মেঘ নেই, উত্তপ্ত প্রেমের এই মহাপ্রাচীর
হন্যে হয়ে ২ দশক ধরে খুঁজে চলেছে তোমাকেই।
২ দশকের জমে থাকা প্রেম, দেখেছে আর কজন?
দুঃখ জমে জমে আজ #আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ।
বর্ষার জলে ডুবে গেছি কতবার
শেষ হয়ে গেছি বৃষ্টির চৌকাঠে।
আমার হৃদয়ের কোথায় নেই তুমি
শান্ত জলের মত তুমি আছ সবটায়।
তোমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে দেখি
অঝোর ধারায় #আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ।
____________সমাপ্ত___________
নোট : এটা সম্পূর্ণই কাল্পনিক গল্প ছিল। কেউ বাস্তবের সাথে মেলানোর চেষ্টা করবেন না। আমি আলসেমির কারণে কোনো পর্বই রিচেক দেইনি। শ’খানেক ভুল থাকতেও পারে। ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। যদি কখনো সময় পাই তাহলে ভুল গুলো ঠিক করে নেওয়ার চেষ্টা করবো।
নোট ০২ : গল্পটা লিখতে গিয়ে অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছি। আমার বাস্তব জীবনে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। যার কারণে নিয়মিত হতে চেয়েও বারবার অনিয়মিত হয়েছি। এতোটা অনিয়ম আমি স্কুলে যাওয়ার সময়ও করি। সবাইকে অনেক অপেক্ষা করিয়েছি গল্পটার জন্য। আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি সবার কাছে। ভুল গুলো মাফ করে দিবেন। অবশ্যই পাঠ্য প্রতিক্রিয়া জানাবেন রিভিউ দিয়ে। আশা করি নতুন গল্প আসা আগ পর্যন্ত পাশে থাকবেন যেভাবে শুরু থেকেই ছিলেন। হ্যাপি রিডিং! ভালোবাসা সবাইকে। ❤️
রিমি ও অভ্রের বিয়ে নিয়ে একটা পার্ট হলে ভালো হতো। তারপরেও আলহামদুলিল্লাহ খুবই চমৎকার লেগেছে।। এভাবে আরও গল্প লেখার অনুপ্রেরণা রইল।