#আসক্তি?
#Mr_Arrogant_4,পর্ব_৬,৭
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
০৬
?
ক্লাবে বসে আছে আভি। কিন্তু যখন থেকে আভি এখানে এসেছে অদ্ভুত লাগছে ওর কাছে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে ওর মনে হচ্ছে কেউ ওকে ফলো করছে ওর উপর নজর রাখছে।
কিন্তু সন্দেহ করার মতো কাউকে পাচ্ছে না ও। সবাই-ই নিজেদের মতো ব্যস্ত এর মধ্যে কাকে সন্দেহ করবে ও ভেবে পাচ্ছে না।
শেষ গ্লাসের ড্রিংক টুকু শেষ করে উঠে দাঁড়ায় আভি। আশেপাশে আবারো ভালো করে নজর বুলিয়ে কাউন্টারে বিল দিতে চলে যায় ও।
পকেট থেকে কার্ড বের করে কাউন্টারে বিল দেওয়ার জন্য দেয় ও।
ম্যানেজার কার্ডটা মেশিনে সুইপ করে আভির দিকে তাকিয়ে বলে,,,
– স্যার আপনার কার্ড ব্লক করা।
আভিঃ কিহ? ( চমকে ) অসম্ভব। আবার চেষ্টা করুন হয়তো আপনাদের মেশিনে সমস্যা।
ম্যানেজার আভিকে দেখিয়েই আবারো কার্ডটা মেশিনে সুইপ করলো কিন্তু ফল একই।
– স্যার মেশিনে কোনো সমস্যা নেই আপনার কার্ড সত্যিই ব্লক। আপনি ক্যাশ বা ফোন-পে করতে পারেন।
ম্যানেজারের কথায় আভি হা হয়ে যায়। নিশ্চয়ই রওশন কাজ এটা। রওশন ওর কার্ড ব্লক করে দিয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আভি কখনো ক্যাশ নিয়ে ঘুরে না আর ফোন-পে করার জন্য কোনো একাউন্টও ও খুলে নি। কখনো প্রয়োজনই পরে নি তাই।
কিন্তু এখন কি করবে আভি? বিল দিবে কিভাবে? প্রচুর রাগ লাগছে ওর। মনে মনে হাজার বার রওশনকে গালি দিয়ে ফেলেছে ও।
আভিঃ আই’ম ব্রোক!( আহত কন্ঠে ) আমার কার্ড ব্লক করে দিয়েছে? সিরিয়াসলি! তুই সত্যিই কি আমার ভাই? আমার সাথে এমনটা কিভাবে করতে পারিস তুই? এখন আমি বিল দিব কিভাবে? ( কনফিউজড হয়ে )
বিরবির করছে আভি। ম্যানেজার এখনো আভির দিকে তাকিয়ে। আভি আড়িচোখে ম্যানেজারের দিকে তাকায় তারপর একটু সাইডে সরে গিয়ে রওশনের নাম্বারে কল করে। কিন্তু অনেকবার কল করা সত্ত্বেও রওশন রিসিভ করে না।
আভিঃ ইচ্ছে করে ফোন ধরছে না। আগে এই পরিস্থিতি থেকে বের হই তারপর তোর সাথে বোঝাপড়া করবো।
ফোনটা পকেটে রেখে আবারো ম্যানেজারের সামনে চলে আসে আভি,,,
আভিঃ আসলে বিষয়টা হচ্ছে আমার ভাই মজা করে আমার কার্ডটা ব্লক করে দিয়েছে আর আমি গতকালই দেশে ফিরেছি তাই ফোন-পে করার জন্য কোনো একাউন্ট খোলার সময় পাইনি আর ক্যাশও নেই। ( আমতা আমতা করে ) কিন্তু আপনি অবশ্য আমার ভাইকে চিনবেন। ( জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করে ) রওশন রায়জাদা আর আমি তার এক মাত্র ভাই আভি রায়জাদা তাই আপনি একদম বিলের টেনশন করবেন না। আমি…
– স্যার আপনার আর বিল দিতে হবে না। – আভির কথার মাঝে বলল ম্যানেজার।
আভি প্রানপনে ম্যানেজারকে পটানোর চেষ্টা করছিল যেন এই মুহূর্তে বিল নামক ঝামেলা থেকে বাঁচতে পারে। কিন্তু ম্যানেজারে কথায় ও চুপ হয়ে যায়।
আভিঃ বিল দিতে হবে না মানে?( অবাক হয়ে )
ম্যানেজারঃ আপনার বিল দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আভিঃ কে দিল?
ম্যানেজারঃ আপনি যখন ফোনে কথা বলছিলেন একজন লেডি আপনার বিল পে করে দিয়েছে।
আভিঃ লেডি? ( হচকিয়ে ) কে ছিল আপনি বলতে পারবেন?
ম্যানেজারঃ স্যরি স্যার আমার জানা নেই। এক্সকিউজ মি!
ম্যানেজার তার কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেন। আভি ভেবে পাচ্ছে না কার ওর উপর এতো ভালোবাসা?
আভিঃ কে হতে পারে এই লেডি?( ভেবে ) আমার কোনো এক্স গার্লফ্রেন্ড এর মধ্যে কেউ না তো? ( মজা করে হেসে ) ধুর এতো ভেবে আমার কাজ নেই।
ক্লাব থেকে বেরিয়ে আসে আভি বাইকে উঠতে উঠতে আবারো রওশনের নাম্বারে কল করে ও কিন্তু এবার কল রিসিভ করে রওশন।
কল রিসিভ হতেই আভি বলতে শুরু করে,,,
আভিঃ আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই এক্ষুনি!
কোথায় দেখা করবে সে এড্রেস বলে কল কেটে দেয় আভি।
?
টাইসেলকে গোসল করিয়ে ড্রায়ার দিয়ে ওকে শুকাচ্ছে সুবহা। আর টাইসেলও একদম শান্ত হয়ে দু পা ভাঁজ করে আর বাকি দু পায়ে দাঁড়িয়ে সুবহার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
সুবহাঃ গোসল করে অনেক ফ্রেশ লাগছে তাই না টাইসু? দেখ তো তোকে কত সুন্দর দেখা যাচ্ছে গোসল করানোর পর। সাদা লোম গুলো একদম মুক্তার মতো সাদা আর তুলোর মতো সফ্ট হয়ে গেছে। কত সুন্দর দেখাচ্ছে। কিন্তু তুই এক নাম্বার নোংরা। যতবারই গোসল করানোর চেষ্টা করি সারা বাড়ি ছুটাছুটি করিস। বলছি তুই এতো নোংরা কেন? তোর আগের ফ্রেন্ড হয়তো এমন নোংরা ছিল তাই তোকেও তার মতোই বানিয়েছে তাই না?
কিন্তু এখন তুই আমার সাথে থাকিস। আর আমি নোংরা একদম পছন্দ করি না বুঝেছিস? আমার সাথে থাকতে হলে একদম পরিস্কার পরিচ্ছন্ন চকচকে হয়ে থাকতে হবে। বুঝেছিস?
সুবহা টাইসেলকে শুকাতে শুকাতে কথা গুলো বলছে। টাইসেলও সুন্দর নিজের লেজ নাচাচ্ছে সুবহার কথায়। মনে হচ্ছে যেন সুবহার সব কথা বুঝতে পারছে ও। সুবহা হাসছে ওর কাজে।
শুকানো শেষ করে টাইসেলকে কোলে তুলে বিছানায় বসে পরে সুবহা। ওর গালে হাতের তালু দিয়ে আদর করে ডলতে ডলতে বলে ও।
সুবহাঃ তুই এতো কিউট কেন? একদম টেডিবিয়ারের মতো। কত সফ্ট আর কিউট। তার উপর আমার সব কথা বুঝিস। পার্থক্য একটাই যে তুই আমার রিয়েল টেডিবিয়ার।
টাইসেল জিভ বের করে হাসছে। ছোট ছোট চোখ দুটো সাদা লোমে অনেকটা ঢাকা তবুও মায়াবী চাহনি স্পষ্ট বোঝা যায়।
সুবহা প্রতিদিন টাইসেলের সাথে এভাবে কথা বলে। ওর সারাদিনের ক্লান্তি যেন টাইসেলের সাথে কথা বললে একদম হাওয়া হয়ে যায়। ওর মনের সব কথা ও শেয়ার করে টাইসেলের সাথে। আর টাইসেলও সবসময় খুব মনোযোগ সহকারে সুবহার প্রতিটা কথা শোনে। যেন সুবহার প্রতিটা কথা ও বুঝতে পারে অনুভব করতে পারে।
সুবহা টাইসেলকে কোলে নিয়ে বারান্দায় চলে আসে। টাইসেলের গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে বাইরে তাকিয়ে বলতে শুরু করে ও।
সুবহাঃ জানিস টাইসু আজকে রওশনের কেবিনে আমি একটা ডায়েরি পেয়েছি। আর ডায়েরিটায় কি ছিল জানিস?
রওশনের মনের কথা ছিল। ও কাউকে ভালোবাসে টাইসু। অনেক ভালোবাসে বলতে গেলে অতিরিক্ত ভালোবাসে। – কথা গুলো বলতে গিয়ে মুখে বিষন্নতা ছেয়ে যায় সুবহার। অজান্তেই চোখ দুটো ভরে যায় ওর।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঠোঁটে আবারো হাসি টেনে বলতে শুরু করে সুবহা।
সুবহাঃ আমি অনেক খুশি রওশনের জন্য। রওশনের জীবনেও এমন কেউ আছে যাকে সে এতোটা ভালোবাসে। মেয়েটা কতটা লাকি তাইনা টাইসু?
সুবহা রেলিংয়ের সাথে হেলান দিয়ে বসে পরে। টাইসেলও সুবহার কোল থেকে নেমে ওর গা ঘেঁষে বসে ওর দিকে তাকায়,,,
সুবহাঃ আমি জানি তুই কি ভাবছিস। তুই এটাই ভাবছিস যে আমার কেন খারাপ লাগছে তাই না?
একটা সত্য কথা বলি টাইসু? তোকে তো বলতেই পারি। তাছাড়া এখানে তো আমরা দু’জনেই তাই কেউ জানতেও পারবে না।
আসলে টাইসু আমার সত্যিই খুব খারাপ লাগছে। কষ্ট হচ্ছে, কান্নাও আসছে। রওশন কেন তাকে ভালোবেসে? ( রাগ দেখিয়ে ) আর ভালোবাসলেও এতোটা কেন ভালোবাসে?
যখন ডায়েরিটা পড়ছিলাম আমার কয়েক মুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছিল যেন ডায়েরির প্রতিটা শব্দ আমাকে নিয়ে লিখা। আমি সত্যিই অনুভব করছিলাম যে ডায়েরির প্রতিটা শব্দ, প্রতিটা লাইন, প্রতিটা কথা আমাকে নিয়ে তৈরি। কিন্তু আমি জানি এটা শুধু মাত্রই আমার ভুল ধারণা।
তুই অবশ্য আবার ভাবছিস আমি কেন এসব বলছি আর কেনই বা আমার কষ্ট হচ্ছে তাই না?
তুই-ই বল আমার কষ্ট হবে না কেন? কারন আমিও তো রওশনকে ভা…. বলতে গিয়ে থেমে যায় সুবহা। হ্যাঁ আমি মানলাম রওশন অনেক বদমেজাজি, খারুস, অ্যারোগেন্ট, রাগি, কখনো আমার সাথে সুন্দর ভাবে কথা বলেন না, হাসেন না, শুধু নিজের হুকুম চালান তবুও! আমি নিজেকে আটকাতে পারি না তাকে ভালোবাসতে।
এখন তুই-ই বল ভালোবাসায় কি কখনো কারো জোর চলে? আমি ভালোবেসে ফেলেছি তাকে। চাইলেও আমি রওশনকে ভালোবাসা বন্ধ করতে পারি না। কি করবো আমি? ( অসহায় ভাবে ) টাইসু আমি…. সুবহা টাইসেলের দিকে তাকাতেই দেখে ঘুমিয়ে পরেছে ও। হেঁসে দেয় সুবহা। পা গুটিয়ে একদম সুবহার সাথে লেপ্টে ঘুমিয়ে পরেছে টাইসেল।
সুবহাঃ আমার কথা এখনো শেষ হয়নি আর তুই ঘুমিয়ে পড়লি? পঁচা টাইসেল! ( মুখ ফুলিয়ে )
?
রাত এগারোটা। অন্ধকার রাস্তার দু’পাশে স্ট্রীট লাইটের আলোয় আলোকিত দেখা যাচ্ছে সব। নীরব রাস্তার এক পাশে বাইক থামিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আভি।
এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে বিরক্ত হচ্ছে আভি। বারবার হাতের ঘড়ি চেক করছে ও।
আভিঃ সিরিয়াসলি! আমাকে যখন ও কোথাও আসতে বলে আমি টাইমের আগে পৌঁছে যাই অথচ আমি যখন ওকে আসতে বলি এভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করায় আমাকে। যদি ওই ভিডিওটা না থাকতো আমিও দেখিয়ে দিতাম অপেক্ষা কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি। – বিরক্তিকর মুখ নিয়ে নিজে নিজেই কথা গুলো বলছে আভি।
রাস্তায় পায়চারি করছে আভি। হঠাৎ সামনে তাকাতেই রওশনের গাড়ি আসতে দেখে থেমে যায় ও।
রওশনের গাড়িটা একদম আভির সামনে এসে থামে।গাড়ির গ্লাস নামিয়ে আভির দিকে তাকায় রওশন তারপর বলে,,,
রওশনঃ কেন আসতে বললি?
আভিঃ কেন আসতে বলেছি?
আভি গাড়ির দরজা খুলে রওশনের পাশের সীটে বসে পরে তারপর বলতে শুরু করে,,,
আভিঃ একদম না জানার ভান করবে না। তুমি আমার কার্ড ব্লক করে দিয়েছো। শুধু এটা না আমার ব্যাংক একাউন্ট ও ফ্রিজ্ড করে দিয়েছো। এটার মানে কি?
রওশন নিজের নাক ছিটকে ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে আভিকে দূরে ঠেলে দিতে দিতে বলে,,,
রওশনঃ তোর শরীর থেকে বাজে স্মেল আসছে দূরে সরে কথা বল,,,
রওশনের কথায় আভি বোকা বনে যায়। নিজের গা শুঁকে ও কিন্তু ওর গা থেকে পারফিউম এর ঘ্রান আসছে। তবে হালকা এলকোহলের স্মেলও আসছে। আভি রাগি দৃষ্টিতে তাকায় রওশনের দিকে। ও ভালোই বুঝতে পারছে রওশন ইচ্ছে করে এটা বলেছে কারন আভি ড্রিংক করেছে।
আভিঃ একদম কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবে না। ( ভরকে গিয়ে ) তুমি আমার কার্ড ব্লক করে দিয়েছো। তোমার কোনো ধারণা আছে আজকে আমি কত বাজে একটা পরিস্থিতিতে পরে গিয়েছিলাম। আমার কাছে টাকা ছিল না বিল দেওয়ার জন্য। আমি! আভি রায়জাদার কাছে টাকা ছিল না বিল দেওয়ার। ক্যান ইউ বিলিভ?
রওশনঃ ভুল তোর। আমার অনুমতি ছাড়া দেশে ফেরার শাস্তি এটা। তুই যদি ফিরে যেতে রাজি হোস আমি এখুনি তোর সব একাউন্ট রিনিউ করে দিব।
আভিঃ তুমি আমাকে এখান থেকে তাড়ানোর জন্য এসব করেছো? ( অবাক হয়ে )
রওশনঃ অস্বীকার করবো না।
আভিঃ হাহ! তুমি ভেবেছো তুমি আমার একাউন্ট ব্লক করলে আমি ফিরে যাব? তুমি কতটা এভিল।
কিন্তু তুমি যাই করো না কেন কোথাও যাব না আমি। এখানেই থাকবো। লাগবে না আমার তোমার টাকা। আমি নিজেও জব করি। আমার টাকাই আমার জন্য যথেষ্ট।
রওশনঃ ঠিক আছে। দেখা যাক সামান্য সেলারির টাকা দিয়ে তুই কিভাবে আর কতদিন চলতে পারিস।
আভিঃ তুমি চ্যালেন্জ করছো আমায়? ওকে ফাইন। চ্যালেন্জ এক্সেপ্টেড।
রওশনঃ গেট আউট।
আভিঃ হু? ( হচকিয়ে )
রওশনঃ বের হ আমার গাড়ি থেকে।
আভিকে গাড়ি থেকে বের করে চলে যায় রওশন। আভি এখনো হা হয়ে দাঁড়িয়ে রওশনের গাড়ির যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে।
আভিঃ আমিও আভি রায়জাদা। দেখিয়ে দিব তোমাকে যে তোমার টাকা ছাড়াও আমি চলতে পারি। লাগবে না তোমার টাকা। শুনতে পারছো? – চেঁচিয়ে জোরে জোরে রওশনকে শুনিয়ে বলল আভি। কিন্তু রওশনের গাড়ি এতক্ষণে চোখের আড়াল হয়ে গেছে।
To be continued……
#আসক্তি?
#পর্ব_৭
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Mr_Arrogant_4
?
আজ গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট হয়েছে সুবহার। ওর স্বপ্ন ছিল যে একদিন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফ্যাশন ডিজাইনারদের মধ্যে একজন হবে ও। আর এই স্বপ্ন পুরনের প্রথম ধাপ অর্থাৎ গ্ৰ্যাজুয়েশন শেষ করলো সুবহা আজ।
ডিপার্টমেন্টে টপ করেছে ও কিন্তু তবুও খুশি হতে পারছে না সুবহা। কারন এই খুশি ভাগ করার জন্য ওর পাশে কেউ নেই। এতো আনন্দের একটা দিনেও আজ একা সুবহা। তাই এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা মুহূর্তেও মুখে বিষন্নতা ওর।
ইউনিভার্সিটির কার্যক্রম শেষ করে বেরিয়ে আসে সুবহা কলেজ ভবন থেকে।
রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে সুবহা। রোদের তাপ প্রখর। শরীরে তাপ লেগে যেন পুড়ে যাবে এমন অবস্থা। তার উপর গাড়ির হর্নের শব্দ মানুষের চেঁচামেচি, ধুলোবালি সব মিলিয়ে সুবহার যেন মাথা ফেটে যাচ্ছে ব্যথায়। একটা রিক্সা বা ট্যাক্সি কিছুই পাচ্ছে না ও। এমনিতেই আজ ওর মন খারাপ তার উপর এমন জঘন্য পরিস্থিতি। যেন পুরো ইউনিভার্স আজ সুবহার পিছু পরেছে ওর বিষন্ন মনকে আরও বিষন্ন করতে।
রোদে দাঁড়িয়ে থেকে ফর্সা মুখ লালচে হয়ে গেছে সুবহার। ছায়াতে যে দাঁড়াবে সে সুযোগও নেই।
প্রায় আধাঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছে ও কিন্তু আজ যেন সব রিক্সা এক সাথে হরতালে নেমেছে। একটাও খালি রিক্সা পাচ্ছে না আর যেগুলো খালি আসে সেগুলো যেতে চায় না। রাগে দুঃখে সুবহার ইচ্ছে করছে এখানে বসেই কেঁদে ফেলতে।
সুবহাঃ কি হচ্ছে আজ আমার সাথে? ( কাঁদো কাঁদো গলায় )
সুবহা নিজে নিজে বিরবির করছে এমন সময় পেছন থেকে কেউ সুবহার জামা টেনে ধরে। কিছুটা হচকিয়ে পেছনে ফিরতেই অবাক হয় সুবহা। একটা দশ এগারো বছরের পিচ্চি ছেলে হাতে বড় একটা সাদা আর কালো গোলাপের তোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে।
সুবহা একবার ফুলের তোড়াটার দিকে তাকায় তারপর ছেলেটার দিকে। ছেলেটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে ফুলের তোড়ার ভারটা সে সামলাতে পারছে না। বড় বড় চোখে গোল ফ্রেমের প্রিসক্রিপশন চশমা। ফোলা ফোলা গাল গুলো আরো ফুলিয়ে সুবহার দিকে তাকিয়ে পিচ্চিটি। সুবহাকে এভাবে নিজের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে পিচ্চিটি কপাল কুঁচকে অভিযোগ স্বরে বলতে শুরু করে।
“ ওফফো! আমি জানি আমি অনেক কিউট তাই বলে কি আমার কষ্ট হয় না? কখন থেকে ধরে আছি এটা। আমার ছোট ছোট হাতে কি এতো বড় আর ভারি জিনিস কুলোয় বলো?”
ছেলেটার কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় সুবহা। ও কিছু বলবে তার আগেই ছেলেটি তোড়াটা একটু উপরে তুলে ওর হাতে ধরিয়ে দেয়।
“ উফ্ হাতটা আমার ব্যথা হয়ে গেলো!” – হাত ঝাড়তে ঝাড়তে বলল ছেলেটি।
সুবহা না হেসে পারলো না ছেলেটির কথায়। হালকা হেঁসে পিচ্চিটিকে বলল ও।
সুবহাঃ বাবু এইটা কার? আর তুমি আমাকে দিচ্ছো কেন?
সুবহার কথাটা যেন ছেলেটার পছন্দ হলো না। কোমড়ে দু হাত গুঁজে চোখ দুটো ছোট ছোট করে সুবহাকে বলে সে।
“ বাবু? কে বাবু? আমি কোনো বাবু না। আমি কত বড় তুমি দেখতে পাও না? হ্যাঁ, তোমার থেকে একটু ছোট হব তাই বলে বাবু না। আর এটা যেহেতু তোমার হাতে দিয়েছি অবশ্যই তোমার জন্যই হবে। তোমরা মেয়েরা সত্যিই কত বোকা হও। না বললে নিজে থেকে কিছুই বুঝো না। ”
ছেলেটা নিরাশ হওয়া ভঙ্গিতে কথা গুলো বলল সুবহাকে। সুবহাতো পুরোই হা হয়ে গেছে তার কথা শুনে। এতো টুকু পিচ্চি ছেলে কতটা পাকা পাকা কথা বলছে ভেবেই অবাক লাগছে ওর। এতো টুকু বয়সে হয়তো সুবহা ঠিক মতো কথাও বলতে পারতো না আর এ নাকি এমন ম্যাচুয়র ভাবে কথা বলছে। আর তার উপর এর অ্যাটিটিউট ল্যাভেল,, মাশাআল্লাহ!
নিজেকে সামলে বিস্মিত চোখে বলতে শুরু করে ও,,,
সুবহাঃ এটা আমার জন্য? কে দিয়েছে? তুমি?
সুবহার কথায় পিচ্চিটি ঠোঁটে হাসি টেনে মাথাটা উপরে নিচে নাড়িয়ে বলে,,,
“ আমি আর ভাইয়া মিলে চুজ করেছি। কালো গোলাপ ভাইয়ার পছন্দ আর সাদাটা আমার। দু’টো এক সাথে মিক্সড করে কত সুন্দর লাগছে তাইনা?”
সুবহা কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। এমনিতেই ছেলেটা ওর কাছে অপরিচিত তার উপর সে আবার তার ভাইয়ার কথা বলছে।
সুবহাঃ কে তোমার ভাইয়া? আর কোথায় সে? আর তুমি আমাকে এটা কেন দিচ্ছো?
ছেলেটা সুবহার কথায় নাক কুঁচকে বলল,,,
“ উফ্! তুমি কত প্রশ্ন করো। আমি এত গুলোর উত্তর দিতে পারবো না। আমার মুখ ব্যাথা করছে। আমার কাজ শেষ তাই আমি এখন যাই। টাটা ”
কথা গুলো এক নিঃশ্বাসে বলে ছেলেটা দৌড়। সুবহা হা হয়ে তাকিয়ে তার যাওয়ার দিকে। কিছুটা দূরে একটা কালো রঙের গাড়ি দাঁড় করানো। ছেলেটা গাড়ির দরজা খুলে উঠতে গিয়েও উঠলো না। দেখে বোঝা যাচ্ছে ভিতরের মানুষটি তাকে কিছু বলছে। সুবহার ইচ্ছে করছে এগিয়ে গিয়ে দেখতে গাড়ির ভিতরের মানুষটি কে কিন্তু তবুও দ্বিধা অনুভব হচ্ছে ওর। কেন এতটা দ্বিধা লাগছে তা ও নিজেও বুঝতে পারছে না।
হুট করেই ছেলেটি আবারো দৌড়ে সুবহার কাছে আসে। কিন্তু এবার তার হাতে একটা ছাতা। দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে সে,,,
“ তোমার জন্য। ” – ছাতাটা এগিয়ে দিয়ে। ডান হাতে তোড়া থাকায় বা হাত দিয়ে ছাতাটা নিল সুবহা। সুবহার মুখ থেকে বিস্ময়ের রেখা এখনো কাটে নি। ও যেন বুঝে উঠতেই পারছে না আসলে হচ্ছে টা কি।
সুবহাকে বাম হাত এগিয়ে দিতে দেখে ছেলেটি কোমড়ে হাত গুঁজে জ্ঞান দেওয়ার ভঙ্গিতে বলে,,
“ ওফফো! তুমি কি এটাও জানো না যে কেউ কিছু দিলে ডান হাত দিয়ে নিতে হয় বাম হাত দিয়ে না।”
সুবহা যেন আরেক দফা শক খেলো। ছেলেটা সত্যিই ধানি লঙ্কা। একদম মুখের উপর ঠাস ঠাস জ্ঞান দিচ্ছে। সুবহা কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই ছেলেটি আবার বলতে শুরু করে।
“আচ্ছা থাক যেহেতু তোমার ডান হাত খালি না আমি তোমাকে বাম হাতেই দিচ্ছি। এই নাও” ছাতাটা ধরিয়ে দিয়ে।
সুবহাঃ থ্যাংক ইউ।( হেসে )
ছেলেটা ডান হাত দিয়ে ইশারা করে সুবহাকে ঝুঁকিতে বলে। সুবহাও কিছু না ভেবেই তার দিকে ঝুঁকে যায়। সাথে সাথে চট করে ছেলেটি সুবহার গালে চুমু দিয়ে দেয়। সুবহা যেন আরেকটা ঝটকা খায়। ছেলেটি সুবহার গাল আলতো করে নিজের হাত দিয়ে ঘষে দিয়ে বলে,,,
“ তুমি দেখতে সত্যিই খুব কিউট। আর তোমার গালও অনেক সফ্ট একদম জাস্ট জেলি ক্যান্ডির মতো।( হেসে ) ও হ্যাঁ আমি তো আমার নামই বলি নি। আমার নাম নীল! তুমি কিন্তু আমাকে ভুলে যেও না। আমি আবার আসবো তোমার সাথে দেখা করতে। এখন আমি যাই। টাটা!
হাওয়ার গতিতে এসে ঝড়ের গতিতে চলে গেল নীল। গাড়িতে গিয়ে উঠে বসতেই গাড়ি সামনের দিকে চলে গেল।
সুবহা এখনো তার অবাক চাহনি নিয়ে দাঁড়িয়ে। পিচ্চিটা কে?কোথা থেকে আসলো? ওকে কিভাবে চিনে? আর গাড়িতেই বা কে ছিল? এরকম হাজারো প্রশ্ন যেন সুবহার মাথায় ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে।
সুবহা ছাতাটার দিকে তাকায়। হালকা নীল রঙের ছাতাটা দেখতে খুব সুন্দর দেখা যাচ্ছে। সুবহা ছাতাটা খুলে মাথার উপর দিতেই ঝড়ঝড় করে ওর উপর কত গুলো ফুলের পাপড়ি পরে।
সুবহা হেসে দেয়। এটা একদমই আশা করে নি ও। এতক্ষন সুবহার মুখে বিষন্নতা ছিল কিন্তু এখন ওর মুখ জুড়ে হাসি।
ছেলেটা যেন ঝড়ের বেগে এসে তুফানের বেগে চলে গেল। কিন্তু যেতে যেতে সুবহার বিষন্ন মনকে ভালো করে দিয়ে গেল।
দাঁড়িয়ে ছেলেটার কথা ভাবতে ভাবতেই একটা ট্যাক্সি এসে থামে সুবহার সামনে। সুবহাও কিছু না ভেবে উঠে বসে। অনেক কষ্টে ট্যাক্সিটা পেয়েছে একে কোনো মতেই হাত ছাড়া করতে চায় না ও।
ট্যাক্সিতে বসে ভালো করে তোড়াটা দেখতে শুরু করে সুবহা। খুব মিষ্টি ঘ্রাণ আসছে ফুল গুলো থেকে। এর মধ্যেই তোড়ার ভিতরে একটা কাগজ দেখতে পায় ও। সুবহা সাথে সাথে কাগজটা তুলে পড়তে শুরু করে,,,“ কংরেচুলেশন’স ফর ইউর গ্ৰ্যাজুয়েশন ” সাথে দুটো হার্ট আঁকা।
নিমিষেই সুবহার চোখ ভিজে গেছে। ও ভেবেছিল আজকের দিনে ও একা। ওর আনন্দ ভাগ করার জন্য ওর পাশে কেউ নেই। কিন্তু একজন আগন্তুক ওর দিনটাকে এতো স্পেশাল করে দিবে ও ভাবে নি।
?
হোস্টেলে চলে আসে সুবহা। নিজের রুমে এসেই ছাতাটা আর তোড়াটা টেবিলে রেখে দেয় ও। আজকের দিনটা ওর কাছে ভোলার মতো ছিল না। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে সুবহা। চোখ বন্ধ করতেই নীলের ফোলা ফোলা গালের হাসিটা ভেসে উঠে চোখে। একটা বাচ্চা এতোটা কিউট কিভাবে হয় ভাবছে ও। তার উপর তার কথা গুলো।
ফোন বাজছে সুবহার। উঠে বসে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে ও। আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে।
সুবহাঃ হ্যালো! – রিসিভ করে।
ফোনের ওপাশ থেকে কথা গুলো শুনে যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না সুবহা। ফোনটা কেটে যায়। সুবহা এখনো যেন ঘোরের মধ্যে আছে।
হঠাৎ করেই লাফিয়ে উঠে সুবহা। ফোনে মিউজিক ছেড়ে উড়াধুরা নাচতে শুরু করে ও। ওর আনন্দ দেখে মানুষ ভাববে যেন কোনো বড় খাজানা পেয়েছে ও। এর মধ্যেই ওর রুমমেট প্রবেশ করে। সুবহাকে এভাবে দেখে কিছুটা অবাক হয় সে।
“ সুবহা কি হয়েছে? তোকে এতো খুশি দেখাচ্ছে কেন?”
সুবহাঃ অব’ভিয়েসলি খুশি হওয়ারই ব্যপার। তুই জানিস কার ফোন এসেছে?
“ কার?”
সুবহাঃ রায়জাদা ইন্ডাস্ট্রিজ! ভাবতে পারছিস তুই? রায়জাদা ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে কল এসেছে যে তারা আমাকে তাদের ফ্যাশন হাউস ডিপার্টমেন্টের জন্য হায়ার করতে চান। আর কালকে সকালেই ইন্টারভিউ।
সুবহার কথায় যেন ওর রুমমেট এর মুখ হা হয়ে যায়। রায়জাদা ইন্ডাস্ট্রিজ যেখানে কাজ করা কোনো স্বপ্নের থেকে কম না সেখান থেকে সুবহার জন্য কল এসেছে ইন্টারভিউয়ের জন্য। অবশ্যই অভাবনীয় ঘটনা।
সুবহাঃ আজকের দিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আর স্মরনীয় দিন। আমি এই দিনের কথা কখনো ভুলবো না কখনো না! ( ছাতাটার দিকে তাকিয়ে )
বর্তমানে,,,
বারান্দায় বসেই দেড় বছর আগের ঘটনা মনে করে নিজে নিজেই হাসছে সুবহা। পাশেই টাইসেল ঘুমিয়ে।
উঠে দাঁড়ায় সুবহা। রুমে ঢুকেই সেই ছাতাটার দিকে নজর যায় ওর। সুন্দর করে নিজের বেডের পাশে সাজিয়ে রেখেছে সুবহা ছাতাটা।
সময় কত দ্রুত বদলে যায়। দেড় বছর আগের সুবহা আর আজকের সুবহার মধ্যে কতটা তফাৎ তা প্রতিদিনই অনুভব করে সুবহা। সেদিনের পর থেকে কখনো পেছনে ফিরে তাকায় নি সুবহা শুধু সামনের দিকে এগিয়েছে।
নিজের সব স্বপ্ন সব ইচ্ছে পুরোন করেছে ও। আর এর এক মাত্র ক্রেডিট যায় রওশনকে। যদি রওশন সুবহা সুযোগ, না না দ্বিতীয় সুযোগ না দিত তাহলে হয়তো আজও সে পুরোটা সুবহাই রয়ে যেত।
টাইসেলের দিকে তাকিয়ে সেদিনের ইন্টারভিউ এর কথা ভেবেই হেসে দেয় সুবহা। কত বড় গন্ডগল করে ফেলেছিল ও। তবুও রওশন ওকে দ্বিতীয় বার সুযোগ দিয়েছে নিজেকে প্রমান করার। সাথে টাইসেল নামক মিষ্টি শাস্তিও রওশনই দিয়েছে ওকে।
কিন্তু মাঝে মধ্যে আজও ভাবে সুবহা নীলের কথা। কে সে নীল। এখন কোথায় আছে ও কার সাথে আছে? নীল সেদিন বলেছিল আবার আসবে সুবহার সাথে দেখা করতে। কিন্তু আজ দেড় বছরেও এক বারের জন্যও তার দেখা পায় নি সুবহা। নীল যেন সুবহার কাছে এখনো মিস্ট্রি হয়ে আছে।
এইদিকে,,,?
নীল! নীল তুমি এখানো জেগে আছো? ওপেন দ্যা ডোর! – হাতে দুধের গ্লাস নিয়ে নীলের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে রওশন।
কয়েকবার টোকা দেওয়ার পর দরজা খুলে মাথাটা বাঁকিয়ে রওশনের দিকে তাকায় নীল।
নীলঃ আমি ঘুমিয়ে ছিলাম!
রওশনঃ লায়ার! – দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে পরলো রওশন। নীলও ওর পিছু পিছু চলে গেল। বেডের উপর মোটা একটা বই রাখা। রওশনের আর বুঝতে বাকি রইল না যে নীল সাহেব না ঘুমিয়ে এই বই পড়ছিল।
বইটা হাতে নেয় রওশন। ডিটেক্টিভ বুক। রওশন বুঝতে পারে না এতো টুকু বাচ্চা ছেলে এমন ডিটেক্টিভের বই পড়ে কি মজা পায়।
বইটা রেখে দুধের গ্লাসটা এগিয়ে দেয় রওশন নীলকে।
রওশনঃ ড্রিংক ইট।
নীলঃ না আমি খাব না। – নাক ফুলিয়ে রওশনের পাশে বসে।
রওশনঃ কিন্তু কেন? তোমার তো দুধ পছন্দ।
নীলঃ কারন তুমি লেইট এসেছো। আমি কতটা বোর হচ্ছিলাম তুমি জানো?
রওশনঃ জানি কিন্তু কি করবো বলো? তোমার মতো আমার যে আরেকটা ভাই আছে। ওকেও তো সামলাতে হয় আমার। তাই আজ একটু লেইট হয়ে গেছে। বাট নেক্সট টাইম হবে না প্রমিস।
নীলঃ তোমার আরেকটা ভাই? ওই যে ও ( আভির ছবি দেখিয়ে )
রওশনঃ হ্যাঁ ও।
নীলঃ ও! আচ্ছা ভাইয়া ওকেও কি তুমি অনেক ভালোবাসো আমার মতো? নাকি আমার থেকে বেশি?
রওশনঃ উমম ( ভেবে ) না বেশি না কম। একদম সমান সমান। – নীলের নাক টেনে দিয়ে।
নীল হেসে দেয়। তারপর দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে খেতে খেতে বলে।
নীলঃ ও কেমন? তোমার মতো ভালো নাকি পঁচা? ( নাক কুঁচকে )
রওশনঃ উমম। যখন আমার কথা শোনে তখন ভালো আর যখন কথা শোনে না তখন পঁচা। একদম পঁচা।
[ কথার ছলে ড্রয়ার থেকে নীলের মেডিসিন গুলো নিয়ে নেয় রওশন। তারপর সে গুলো খাইয়ে দেয় ওকে। ]
নীল হেসে দেয় রওশনের কথা শোনে তারপর বলে,,,
নীলঃ ও কি কিউট
রওশনঃ কিউট? নাহ এতোটা কিউট না এভারেজ।
নীলঃ ও কি করে?
রওশনঃ বর্তমানে সিবিআই গেম খেলছে। ( দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ) আই মিন সিবিআই অফিসার।
রওশনের কথা শুনে নীল কৌতুহল নিয়ে বলতে শুরু করে,,,
নীলঃ সিবিআই? ওয়াও!
রওশন বেড থেকে বইটা তুলে সেটার পাতা উল্টাতে উল্টাতে বলে,,,
রওশনঃ তোমার ডিটেক্টিভ স্টোরি অনেক পছন্দ তাই না?
নীলঃ হ্যাঁ। আমি বড় হয়ে ডিটেক্টিভ হতে চাই। অনেক ইন্টেলিজেন্ট ডিটেক্টিভ।
রওশনঃ হবে। আই ট্রাস্ট ইউ। কিন্তু এখন স্লিপিং টাইম। ঘুমোতে হবে। চলো তাড়াতাড়ি শুয়ে পরো।
নীলকে শুইয়ে দিয়ে ওর গায়ে ব্ল্যাংকেট টেনে লাইট নিভিয়ে দেয় রওশন।
নীলঃ গুড নাইট ভাইয়া।
রওশনঃ গুড নাইট। ঘুমাও।
To be continued…..