আসক্তি? #Mr_Arrogant_4,পর্ব_৮,৯

0
2378

#আসক্তি?
#Mr_Arrogant_4,পর্ব_৮,৯
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
০৮

?
ডেস্কে বসে গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু একটার হিসাব করছে আভি। এক হাতে ট্যাব আরেক হাতে কলম আর নোটবুক। খুব ভেবে চিন্তে কিছু কিছু লিখছে তো কিছু কাঁটা দিচ্ছে।

আভিঃ ক্লাবে যাওয়া ক্যান্সেল ( ক্রস দিয়ে ), বাইরের খাবার ক্যান্সেল, এক্সট্রা সব খরচ ক্যান্সেল ক্যান্সেল ক্যান্সেল!( সব কেটে দিয়ে )

বিরক্ত হয়ে ট্যাব আর কলম টেবিলে রেখে দেয় আভি।

আভিঃ সব ক্যান্সেল করে দিয়েছি। আমিও দেখিয়ে দিব তোর টাকা ছাড়াও অনেক ভালো করে চলতে পারি আমি হুহ।

?
দুপুরের সময়। সব স্টাফরা লাঞ্চ করছে। কেউ কেউ ক্যান্টিনে গিয়ে তো কেউ বাসা থেকে আনা খাবার খাচ্ছেন।

সুবহা নিজের কাজ শেষ করে ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখে দুইটা বাজছে। এ সময় রওশনের খাবার দিয়ে আসতে হয় ওর কেবিনে।

সুবহার নিজের ডেস্কে রাখা লাঞ্চ বক্সটা তুলে ক্যান্টিনে চলে যায়। রওশনের জন্য ক্ষির রান্না করে এনেছে ও।

অফিসের ক্যান্টিন থেকে রওশনের জন্য খাবার নিয়ে সাথে নিজের রান্না করা ক্ষির‌ টুকুও নিয়ে নেয় সুবহা।

সব খাবার ট্রেতে সাজিয়ে রওশনের কেবিনের সামনে চলে আসে ও। এক হাতে ট্রে নিয়ে আরেক হাত দিয়ে সাবধানে কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে সুবহা।

একবার শুধু সকালেই এ কেবিনে প্রবেশ করেছিল ও রওশনকে কফি দেওয়ার জন্য। এর পর আর কাজের জন্য আসা হয়নি ওর। আর না রওশন ওকে আসতে বলেছে।

কেবিন পুরো অন্ধকার হয়ে আছে। সুবহা কিছুটা বিস্মিত হয়ে পা টিপে ভিতরে প্রবেশ করে। কেবিনের সব গুলো জানালার পর্দা আটকানো এজন্যই এতো অন্ধকার। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে রওশনকে খুঁজে সুবহা, তখনই ওর চোখ যায় শেলফের পাশে।

জানালার সামনের সোফায় শুয়ে আছে রওশন। এক হাতে মাথা ভর দিয়ে আরেক হাতে একটা বই বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে ও।

এজন্যই রুম অন্ধকার করে রেখেছে রওশন। চোখে সামান্য আলো পড়লেই বা সামান্য শব্দেই ঘুম ভেঙ্গে যায় ওর। তাই হয়তো অয়নকে বলে সব পর্দা বন্ধ করে রেখেছে রওশন যেন ওর ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটে।

রওশনকে এভাবে ঘুমাতে দেখে হালকা হাসে সুবহা। আলতো পায়ে হেঁটে টি টেবিলে খাবারের ট্রে’টা রেখে দেয় ও। তারপর পা টিপে টিপে রওশনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

ঘুমের মধ্যেই কপালে ভাঁজ পড়ে আছে রওশনের যেটা দেখে হেঁসে দেয় সুবহা।

সাবধানে রওশনের মাথার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে পরলো ও। গভীর দৃষ্টি নিয়ে রওশনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে সুবহা।

আজ প্রথমবার রওশনকে এতোটা কাছ থেকে দেখছে সুবহা। পর্দার ফাঁকে ফাঁকে সরু হয়ে আলো প্রবেশ করছে ভিতরে। সে আলোতে ঘুমন্ত রওশনকে দেখছে সুবহা। রওশন জেগে থাকলে অবশ্য কখনো ওর এতোটা কাছে আসার সাহস বা সুযোগ কোনোটাই পেতো না ও।

নিখুঁত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সুবহা রওশনের দিকে। ওকে এভাবে ঘুমন্ত ভাবে দেখলে কেউই বলবে না যে লোকটা এতোটা রাগি।

রওশনের নাকের ডগায় সুক্ষ্ম একটা কালো তিল। দূর থেকে অতটা স্পষ্ট দেখা না গেলেও কাছ থেকে পুরো স্পষ্ট দেখা যায়। নাকের ডগায় তিল থাকার কারণেই হয়তো সারাদিন নাকের ডগায় রাগ থাকে রওশনের।

রওশন বুকে বই জড়িয়ে আছে। সুবহা বইটার দিকে তাকিয়ে গাল ফুলিয়ে বিরবির করে বলতে শুরু করে,,,

সুবহাঃ বইটাও কতটা ভাগ্যবান, কিছু সময়ের জন্য হলেও আপনার বুকে জায়গা পেয়েছে। ( দীর্ঘশ্বাস ফেলে )

সুবহার যেন বইটার উপর হিংসে হচ্ছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বইটার দিকে তাকায় ও, তারপর হঠাৎ করেই দুষ্টু হেসে বইটার দিকে হাত বাড়ায় সুবহা। খুব সাবধানে বইটা ধরে ও। কিন্তু ভয় হচ্ছে সুবহার, যদি বই টান দিলে রওশনের ঘুম ভেঙ্গে যায় তখন?

সুবহাঃ না না থাক সরানো লাগবে না। ( ভয়ে ভয়ে )

সুবহা ভয়ে ভয়ে বইটা ছেড়ে দিয়ে হাত সরিয়ে আনতেই রওশন ওর হাত ধরে ফেলে। সুবহা চমকে রওশনের দিকে তাকাতেই দেখে রওশন ওর দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে।

সাথে সাথে ঘাবড়ে হন্তদন্ত হয়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করতেই পরে যায় সুবহা।

সুবহাঃ আমার কোমর!( চেঁচিয়ে )

রওশনঃ বি কেয়ার’ফুল স্টুপিড!

রওশন সাথে সাথে উঠে বসে। সুবহা কাঁদো কাঁদো মুখ করে নিজের কোমরে হাত দিয়ে ওভাবেই ফ্লোরে বসা অবস্থাতেই আছে।

রওশন উঠে সুবহার হাত ধরে টেনে তোলে ওকে,,,

রওশনঃ ঠিক আছো তুমি? লেগেছে বেশি?

সুবহাঃ উহুম, লাগেনি।( মাথা নাড়িয়ে )

রওশনঃ কি করেছিলে তুমি?

সুবহাঃ ক কিছু না তো!( আমতা আমতা করে )

রওশনঃ তাহলে আমাকে সজাগ দেখে এভাবে ভয় পেয়ে গেলে কেন?

সুবহাঃ আমি সত্যি কিছু করিনি, প্রমিস। আমি আপনার জন্য লাঞ্চ নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু এসে দেখি আপনি ঘুমাচ্ছেন। আমিতো ফিরেই যাচ্ছিলাম তখন দেখি আপনি বই জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছেন। আমি ভেবেছিলাম যে হয়তো বইটার জন্য আপনার ঘুম নষ্ট হয়ে যাবে তাই আমি শুধু বইটা নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম ঠিক তখনই আপনি জেগে গেলেন। আর আপনি হঠাৎ এভাবে জেগে যাওয়ায় আমি ঘাবড়ে যাই, ঘাবড়ে সরে গিয়ে উঠতে নিলেই পড়ে যাই। – এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে চুপ হয়ে যায় সুবহা। ভয় পেয়ে আছে ও এখনো। না জানি রওশন ওকে বকা দেয় এ কাজের জন্য সে ভয়।

কিন্তু রওশন ওকে কিছুই বলল না। উল্টো টেবিল থেকে পানির গ্লাস তুলে সুবহার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে ও,,,

রওশনঃ ড্রিংক ইট। গলা শুকিয়ে গেছে হয়তো তোমার। – কথাটা বলেই ও ওয়াশরুমে চলে যায়।

রওশন চলে যেতেই যেন সুবহা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। গ্লাসের পানি টুকু এক নিঃশ্বাসে শেষ করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে ও।

সুবহাঃ সত্যিই গলা শুকিয়ে গিয়েছিল।

রওশন তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বের হয়। ওকে বের হতে দেখেই সুবহা তাড়াতাড়ি গ্লাসটা টেবিলে রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। রওশন সুবহার দিকে একপলক তাকিয়ে টি টেবিলে গিয়ে বসে‌‌।

খাবারের উপর থেকে ঢাকনা সরাতেই কিছুটা অবাক হয় ও। সুবহা কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে আছে রওশনের দিকে। রওশন কিছু বলবে সে অপেক্ষায় ও।

রওশনঃ তুমি রান্না করছো?

সুবহাঃ হুম।( মুচকি হেসে )

রওশনঃ থ্যাংক ইউ। – বলেই খেতে শুরু করে ও। সুবহা মুচকি হেসে হেসে দেখছে রওশনকে। রওশনের থ্যাংক ইউ টাও যেন এই মুহূর্তে ওর কাছে অনেক স্পেশাল।

To be continued…..

#আসক্তি
#পর্ব_৯
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Mr_Arrogant_4
?
ডেস্কে‌ বসে ফাইল চেক করছে রওশন। সামনেই সুবহা দাঁড়িয়ে, হাতে ছোট একটা নোট বুক ওর। অয়ন দিয়ে গিয়েছে এটা সুবহাকে। আজকের আর কালকের সারাদিনের রুটিন লিখা এটায়। রওশন এই দুইদিনে কোথায় কার সাথে মিটিং এটেন্ট করবে, কোন প্রজেক্টের ফাইল কোন শেলফে, ক্লাইন্টদের নাম্বার থেকে শুরু করে সব ইনফরমেশন এটায়।

হঠাৎ অয়ন অসুস্থ হয়ে পড়ায় ওকে দুদিনের জন্য বাসায় রেস্ট করার জন্য ছুটি দিয়েছে রওশন। অয়ন যদিও ছুটি নিতে চায়নি, কারণ ও জানে, ও ছাড়া রওশনের শেডিউল কেউ হ্যান্ডেল করতে পারবে না কারন একমাত্র ও-ই জানে রওশনের কাজের ধরন কেমন‌।

কিন্তু রওশনের কথার সামনে ওর কথা টিকে নি, সেই ছুটি নিতেই হলো ওকে। আর যেতে যেতে ওর কাজের সব দায়িত্ব সুবহার উপর দিয়ে গিয়েছে ও। তারউপর নোট বুকে পইপই করে সব লিখে বুঝিয়ে দিয়েছে অয়ন সুবহাকে। যেন কোনো গন্ডগোল না হয়।

এখন সে নোট অনুযায়ীই রওশনকে আজকের শেডিউল বলছে সুবহা,,,

সুবহাঃ রওশন চারটা বাজে ক্লাইন্টদের সাথে মিটিং আছে ব্লু মুন রেস্টুরেন্টে।

রওশনঃ এখন কয়টা বাজে?

সুবহাঃ তিনটা বিশ!

রওশনঃ ওকে, ড্রাইভারকে গিয়ে বলো গাড়ি বের করতে আমি আসছি।

সুবহাঃ হুম।

সুবহা বেরিয়ে যায়। সুবহা বের হতেই রওশন বসা থেকে দাঁড়িয়ে নিজের পরনের কোট খুলে নেয়। কোট খুলে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে ক্লসেটের সামনে যায় ও।

সাদা শার্টটা খুলে সোফায় রেখে ক্লসেট থেকে একটা চকলেট কালার শার্ট, তার সাথে ম্যাচিং করে টাই বের করে নেয় ও।

এমন সময় হুট করে সুবহা ভিতরে প্রবেশ করে ফেলে।

সুবহাঃ রওশন আমি ড্রাইভারকে…. বাকিটা বলার আগেই রওশনকে দেখে চোখ কপালে উঠে যায় ওর। রওশনের মুখের ভাব এমন যেন ওর শান্তি কেউ কেড়ে নিয়েছে।

সুবহাঃ উপ্‌স! স স্যরি,,,

সুবহা চোখে হাত দিয়ে তড়িঘড়ি করে ঘুরে যেতে নিলেই দরজার সাথে মাথায় বারি খায় ও,,, ওর সাথে সাথে রওশনও চেঁচিয়ে ওঠে “ কেয়ার’ফুল!”

সুবহাঃ আমার মাথা! – কপাল ডলতে ডলতে কাঁদো কাঁদো গলায় বলছে সুবহা।

রওশন সাথে সাথে সুবহার কাছে গিয়ে ওকে নিজের দিক ঘুরিয়ে নেয়।

রওশনঃ দেখি কোথায় লেগেছে,,,

সুবহার কপাল থেকে চুল সরিয়ে ভালো ভাবে চেক করছে রওশন যে কতটুকু ব্যথা লেগেছে। কপালের মাঝের জায়গাটা সামান্য ফুলে গিয়েছে।

রওশনঃ এতো অগোছালো কেন তুমি? যখন তখন পড়ে যাওয়া, এখানে সেখানে ঢুঁ খাওয়া কি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে তোমার? হোয়াই আর ইউ সো ক্লামজি, ইডিয়েট!

সুবহার কপালে ফুঁ দিতে দিতে কড়া গলায় ওকে শাসাতে শাসাতে বলছে রওশন। নাক ফুলিয়ে নেয় সুবহা। এভাবে রওশনের কথায় কথায় ওকে ইডিয়েট বলাটা যেন মেনে নিতে পারে না ও। ইডিয়েট তো তাকে বলা হয় যে বোকা, কিন্তু সুবহার মতে ও যথেষ্ট বুদ্ধিমতী।

সুবহা চোখ বন্ধ করে আছে। ব্যথা লেগেছে অবশ্য তারপর আবার রওশনের শাসন। রওশনের কথার প্রতিউত্তরে কিছু বলার জন্য চোখ খুলতেই রওশনকে নিজের এতোটা কাছে দেখে গলা অব্দি কথা গুলো আঁটকে যায় ওর। রওশন দু হাত দিয়ে সুবহার মাথা ধরে ওর কপালে ফুঁ দিচ্ছে।

একদম সুবহার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে রওশন, যার ফলে ওর গায়ের তীব্র পারফিউমের ঘ্রান নাকে আসছে সুবহার। চোখ তুলেও রওশনের দিকে তাকাতে পারছে না সুবহা। অদ্ভুত একটা অনুভুতি হচ্ছে ওর। যেন শুধু শরীরের বাইরে না ভেতর টুকুও
কাঁপছে ওর। দাঁড়িয়ে থাকার মতো ভারসাম্য পাচ্ছে না সুবহা, রওশন যদি ওকে ধরে না রাখতো এতক্ষনে বুঝি ফ্লোরে পরে যেত ও। ভাগ্যিস রওশন নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে রেখেছে ওকে।

যতবারই রওশন ফুঁ দিচ্ছে শিউরে উঠছে সুবহা। কিছু সময়ের জন্য মনে হচ্ছে নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেছে ও। কপালের চুল গুলো উড়ে চোখে আসছে বার বার, যার ফলে চোখ মেলে তাকাতে সমস্যা হচ্ছে সুবহার। বারবার চোখ বুজে আসছে ওর। রওশন বিষয়টা খেয়াল করে চুল গুলো আঙ্গুলের ভাজে নিয়ে নেয় যেন আর না উড়ে।

রওশনঃ ব্যথা করছে?

আঙুল দিয়ে আলতো ভাবে জায়গাটা স্পর্শ করে নরম স্বরে বলে ও। রওশনের স্পর্শে কেঁপে উঠে সুবহা। আর এমন নরম স্বরের কথা গুলো যেন ওর শরীরের লোম দাঁড় করিয়ে ফেলছে।

সুবহা কতটা কাঁপছে তা স্পষ্ট অনুভব করতে পারছে রওশন। হাত দুটো সুবহার মাথার পেছন থেকে পিছলে ওর গালে নিয়ে আসে রওশন।

গালে গরম হাতের স্পর্শে চোখ তুলে তার দিকে তাকায় সুবহা। চোখে বিস্ময় ওর। রওশনের ঘন নিঃশ্বাস ওর মুখে পরছে। কিন্তু সুবহা নিজেই যেন নিঃশ্বাস ফেলতে ভুলে গেছে।

রওশন ধীরে ধীরে নিজের মাথা নুইয়ে নেয় সুবহার দিকে। কিন্তু হঠাৎই নুইয়ে পড়া মাথাটা উপরে তুলে সুবহার কপালে ব্যথা পাওয়া জায়গায় গভীর ভাবে ঠোঁট জোড়া স্পর্শ করে ও। গভীর ভাবে কপালে চুমু দিয়ে সুবহার কাছ থেকে সরে যায় রওশন।

সরে গিয়ে সোজা ক্লসেটের সামনে গিয়ে সুবহার দিকে পিঠ করে শার্ট পড়তে শুরু করে ও।

সুবহা এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে। যেন পুরো শরীর জমে গেছে ওর। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে সুবহা যেন একটুর জন্য দম আটকে যেতে যেতে বেঁচেছে।

কাঁপা কাঁপা হাত তুলে কপালে স্পর্শ করে ও যেখানে রওশন ঠোঁট ছুঁইয়েছিল। পুরো ঘটনাটা যেন ওর কাছে অবিশ্বাস্য লাগছে। মনে হচ্ছে যেন স্বপ্ন দেখছে ও।

অবাক দৃষ্টি নিয়ে রওশনের দিকে তাকায় ও, যে এখন অন্য দিকে ফিরে শার্টের বোতাম লাগাতে ব্যস্ত।

সুবহাঃ এটা কি সত্যিই রওশন?( অবাক স্বরে )

সুবহা রওশনকে কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই রওশন তার গম্ভীর গলায় বলতে শুরু করে।

রওশনঃ এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে প্রজেক্টের ফাইলটা ম্যানেজারের কাছ থেকে নিয়ে আসো।

কিন্তু সুবহা না গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কথাটা বলার জন্য হাঁসফাঁস করছে ও। কিন্তু রওশন হয়তো এই মুহূর্তে কিছু শোনতে বা বলতে চাচ্ছে না তাই তো সুবহাকে পাঠানোর জন্য ফাইলের বাহানা দিচ্ছে।

সুবহাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রওশন এবার বিরক্ত হয়ে ওর দিকে ঘাড় ফিরিয়ে ধমকের স্বরে বলে,,,

রওশনঃ দাঁড়িয়ে আছো কেন স্ট্যাচুর মতো? জাস্ট গো নাও,,,

রওশনের এক ধমকে সব কথা ফেলে এক ছুটে রুম ত্যাগ করে সুবহা। ও চলে যেতেই রওশন একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে নিজে নিজে বলে,,,

রওশনঃ কি করছিস রওশন? জাস্ট কন্ট্রোল ইউর’সেল্ফ! ( বিরবির করে )

?
রায়জাদা মেনশনের সামনে হুডি পরে চোরের মতো লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আভি। বেগুনি রঙের হুডি মাথা অব্দি ঢাকা, তার উপর মুখে মাস্ক লাগানো।

গেইটের সামনে দুজন গার্ড সটান হয়ে দাঁড়িয়ে। এদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ভেতরে ঢোকা সম্ভব না কিন্তু আভির কাছে অসম্ভব বলতে কিছুই নেই। একটা না একটা পথ ও ঠিকই বের করে নিয়ে নিবে।

কিছুক্ষণ আড়ালে লুকিয়ে গার্ড দুটোর উপর নজর রাখে আভি। কিন্তু নাহ, এক মিনিটের জন্য এক ইঞ্চিও নড়ে নি বান্দা গুলো। একদম ল্যাম্প পোস্টের খাম্বার মতো স্টিল হয়ে দাঁড়িয়ে।

ওদের দেখে যেন আভির নিজেরই পা ব্যথা করছে। ও ভেবে পায় না এদের শরীরে এতো এনার্জি আসে কোথা থেকে।

আভিঃ এরা কি রোবট? দুই ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। কিন্তু এক মিনিটের জন্য নিজের জায়গা থেকে নড়ছেও না। এদের কি এক দুইও পায় না? আরে ভাই যা না, বাথরুমে যা। এতোক্ষণ কিভাবে কন্ট্রোল করিস? তোদের জন্য দাঁড়িয়ে থেকে আমার নিজেরই পেয়ে গেছে। শীট!

কথাটা বলেই আশেপাশে তাকায় আভি। কোনো মানুষ দেখা যাচ্ছে না। সুযোগ পেয়েই বাড়ির পেছনে চলে যায় ও। এই পথটায় তেমন মানুষের আসা যাওয়া নেই। তবুও আশেপাশে ভালো করে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি প্যান্টের জীপ খুলে দেয়ালে নিজের কাজ সারতে শুরু করে ও।

এইদিকে,,,

স্টাডি টেবিলে বসে এতক্ষন পড়ছিল নীল। পড়া শেষ হতেই দু হাত উঠিয়ে হাই তুলতে তুলতে দাঁড়িয়ে পড়ে ও।

নীলঃ স্টাডি কমপ্লিট, গেইমও খেলে ফেলেছি, সকালে বুকও পড়েছি এখন কি করবো? করার মতো তো কিছুই নেই। রওশন ভাইয়াও তো রাতে আসবে। বাইরে যাওয়ারও পারমিশন নেই। (মন খারাপ করে বেডে বসে )

হঠাৎ নীলের চোখ যায় টিভির সামনের টেবিলে রাখা দূরবীনের দিকে।

নীলঃ টেলিস্কোপ!

উঠে দূরবীনটা হাতে নেয় ও তারপর জানালার সামনে চলে যায়।

নীলঃ দেখি এটা দিয়ে বাইরে কি কি দেখা যায়।

নীল উৎসাহিত হয়ে দূরবীনটা দিয়ে বাইরে দেখতে শুরু করে। দূরের জিনিস গুলো কাছ থেকে দেখতে বেশ মজা পাচ্ছিল ও। তখনই হঠাৎ একটা জিনিস চোখে পড়ে যায় নীলের।

কেউ একজন ওদের বিল্ডিংয়ের দেয়ালে কাজ সারছে। সাথে সাথে চোখ কপালে উঠে যায় নীলের। দূরবীন সরিয়ে লোকটার দিকে তাকায় ও। তারপর জোরে জোরে চেঁচিয়ে গার্ডদের ডাকতে ডাকতে বলতে শুরু করে।

নীলঃ গার্ড, গার্ড কে কোথায় আছো? দেখো একটা অসভ্য লোক হিসু করছে। গার্ড!!!

নীলের চেঁচামেচিতে বাড়ির ভিতরের সব গার্ড আর সার্ভেন্টরা ছুটে আসে,,,

>> কি হয়েছে নীল বাবা? কোনো সমস্যা?

নীলঃ সমস্যা? অনেক বড় সমস্যা। হিসু করছে ও।

নীলের কথায় সবাই হচকিয়ে একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করলো তারপর আমতা আমতা করে বলতে শুরু করলো,,,

>> কে হিসু করছে? রুমে তো কেউ নেই।

ওদের কথায় নীল রেগে যায়, তারপর বাইরে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বলতে শুরু করে।

নীলঃ ঘরে না বাইরে,,, আমাদের দেয়ালে হিসু করছে। তাড়াতাড়ি গিয়ে ধরো ওকে।

নীলের কথায় সবাই অবাক হয়ে বাইরে তাকায়। গার্ড গুলো সাথে সাথে বাইরে দৌঁড়ে যায় লোকটাকে ধরার জন্য।

এইদিকে,,,

আভি আরামে নিজের কাজ করছিল হঠাৎ কারো চেঁচানো শুনে আশপাশে হচকিয়ে তাকায় ও। কিন্তু চেঁচানোর মতো কাউকেই দেখতে পেলো না ও।

আভিঃ এভাবে ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছে কে?

হঠাৎ একত্রে অনেক গুলো মানুষের পায়ের শব্দ পায় ও। পাশে তাকাতেই দেখে বাড়ির গার্ডেরা ফুল সোর্সে ওর দিকেই আসছে।

আভিঃ শীট! এরা আমার দিকে এভাবে সুনামির মতো ধেয়ে আসছে কেন? এখানে আর থাকা আমার জন্য ভালো হবে না। ভাগ আভি,,, রান ফর ইউর লাইফ,,, – কোনো মতে প্যান্টের চেইন লাগিয়ে এই দৌঁড়ে নিজের বাইকে উঠে বসে আভি।

আভিঃ রাতে আবার আসবো।( বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বলল ) রাতে কাজ না হলে কালকেও আবার আসবো। যতক্ষন না কাজ হবে আসতেই থাকবো। তাড়াতাড়ি কর আভি- কথা গুলো নিজে নিজে বলে পেছনে না ফিরেই ফুল স্পীডে বাইক চালিয়ে পালিয়ে যায় ও।

দূরবীন দিয়ে এতক্ষন আভিকেই পর্যবেক্ষন করছিল নীল। আভি এভাবে পালিয়ে যাওয়ায় দূরবীনটা রেগে নামিয়ে বলতে শুরু করে ও।

নীলঃ পালিয়ে গেলো হিসু ম্যান। কিন্তু যতই পালাও তুমি মিস্টার হিসু ম্যান, তোমাকে তো একদিন না একদিন আমি ধরবোই। নীলের চোখ শুধু চোখ না ক্যামেরা, আর এই ক্যামেরায় তোমার লুক ক্যাপচার হয়ে গেছে। চেহারা না দেখেও চিনে ফেলবো তোমায়। আমাদের দেয়ালে হিসু করার শাস্তি তো আমি তোমাকে দিবই, হিসুম্যান কোথাকার। ( মুখ ফুলিয়ে বলল )

To be continued…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here