#আসক্তি?#Mr_Arrogant_4
#পর্ব_১৭
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
?
আভির কেবিনে বসে আছে নীল। এক জায়গায় স্থির বসে থেকেও চোখ বুলিয়ে পুরো কেবিনটা গভীর ভাবে স্ক্যান করে নিয়েছে ও। আভি কেবিনে নেই, অর্নব খানের সাথে দেখা করতে গিয়েছে। কেবিনে নীল একাই বসে আছে। ল্যাপটপ অন আভির, কিছু একটা নিয়ে কাজ করছিল সেটা মাঝ পথে রেখেই বেরিয়ে গেছে।
নীল বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হচ্ছে। তাই উঠে দাঁড়িয়ে কেবিনের চারপাশটা দেখতে শুরু করে। কত গুলো কেসের ফাইল রাখা ডেস্কে আর টেবিলে। এ সব গোয়েন্দা টাইপ জিনিস নীলের খুব পছন্দ। ও সব সময় এমন একটা অফিসে কাজ করতে চেয়েছে যেখানে ও কঠিন কঠিন সব কেসের সমাধান করতে পারে। তাই আজকে এখানে এসে অনেক বেশি খুশি লাগছে ওর।
ঘুরতে ঘুরতে আভির ডেস্কের সামনে চলে আসে নীল। ল্যাপটপ অন দেখে কৌতুহল জাগে নীলের। নিশ্চয়ই কোনো কেসের বিষয়ে কাজ করছে আভি। নীল চেয়ারে উঠে বসে কিন্তু ওর ছোট ছোট হাত দুটো ল্যাপটপের নাগাল পাচ্ছে না।
মায়ুস মুখ করে নিজের হাত দুটোর দিকে তাকায় নীল। হাত দুটো আরেকটু বড় হলে কি এমন ক্ষতি হতো।
নীলঃ এতো বড় ডেস্ক কেউ বানায়? আমার ছোট ছোট হাত দুটো তো পৌঁছাচ্ছেই না।
হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি চাপে নীলের। ঠোঁটে বড় একটা হাসি টেনে চেয়ারে দাঁড়িয়ে পরে ও তারপর খুব সাবধানে ডেস্কের খালি জায়গাটায় বসে ল্যাপটপটা নিজের দিকে এগিয়ে নেয়।
এবার খুব সহজেই ল্যাপটপ চালাতে পারবে ও। স্ক্রিনে একটা গাড়ির তথ্য। আভি গাড়ির নাম্বার দিয়ে তার মালিকের ইনফো বের করেছিল।
নীল খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে ইনফো গুলো। এমন সময় আভি কেবিনে প্রবেশ করে। এসেই নীলকে নিজের ডেস্কে বসে থাকতে দেখে অবাক হয় ও।
নীলের কাছে যেতে যেতে বলতে শুরু করে ও,,,
আভিঃ এইযে মিস্টার ব্লু, কি করছেন আপনি আমার ল্যাপটপে?
আভির কথা কানে গেলেও কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না নীল উল্টো ল্যাপটপে মনযোগ দিয়ে সাধারণ ভাবে বলল,,,
নীলঃ ডোন্ট ওয়ারি আমি কোনো স্পাই না। শুধু তোমাকে হেল্প করার চেষ্টা করছি।
আভি ফিক করে হেসে দেয় নীলের কথায়। এতো টুকু পুঁচকে ছেলে ওকে হেল্প করবে তাও কেস সল্ভ করতে। কথাটা শুনতেও হাস্যকর লাগছে ওর কাছে।
আভি চেয়ারটা টেনে নীলের সামনে বসে পরে তারপর দেখতে শুরু করে নীল কোন কেসের ডিটেইল পড়ছে।
গতকাল আভি অর্নবের গাড়ির নাম্বার থেকে যে ইনফো বের করেছিল সে গুলোই দেখছে নীল।
আভিঃ এই কেস তো গতকালই সল্ভ করে ফেলেছি আমি। ( ভাব নিয়ে )
আভির কথায় নীল মাথা তুলে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।
নীলঃ কেসটা কি ছিল?
নীলের প্রশ্ন শুনে আভি সোজা হয়ে বসে, তারপর কিছুক্ষণ ভেবে বলতে শুরু করে।
আভিঃ কেসটা অনেক সহজ সোজা ছিল। একজন লোক ভিক্টিমকে রোজ এই গাড়ি দিয়ে ফলো করতো আই মিন স্টক করতো। তারপর ভিক্টিম গাড়ির নাম্বার নোট করে আমাকে দেয়। এটা বের করতে যে তাকে কে প্রতিদিন ফলো করছিলো। তারপর আমি! দ্যা গ্ৰেট আভি রায়জাদা, এই গাড়ির নাম্বার দিয়ে ওই স্টকারকে খুঁজে বের করি। ( বুক ভরা গর্ব নিয়ে কথা গুলো বলল আভি )
নীলঃ স্টকারটা কে ছিল?
আভিঃ আর কে? গাড়ি মালিক অবভিয়েসলি! যার নামে গাড়ি রেজিস্ট্রার সেই স্টকার।
নীলঃ এটা কোথায় লিখা যে, যার নামে গাড়ি রেজিস্ট্রার সেই গাড়ির মালিক?
নীলের কথায় হচকিয়ে যায় আভি,,,
আভিঃ মানে? কি বলতে চাচ্ছো তুমি?
নীলঃ এটাই যে, “ডোন্ট জাজ আ বুক বাই ইট্স কভার”। সব সময় চোখের সামনে যা দেখা যায় তা সত্য হয় না। ফর এক্সাম্পল, যদি কখনো কোনো গাড়ি দিয়ে এক্সিডেন্ট হয় তার মানে এটা নয়, যার নামে গাড়ি সে-ই এক্সিডেন্ট করেছে। অন্য কেউ ও হতে পারে। সেভাবেই যদি কেউ এই গাড়ি ইউজ করে থাকে তার মানে এটা না যে সে-ই গাড়ির মালিক।
নীলের কথা গুলো শুনে আভি চুপ হয়ে যায়। সত্যিই তো বলছে নীল। আভিতো এমনটা ভাবেই নি। তাছাড়া আভিতো একটা মেয়েকে দেখেছিল আর অর্নব খাঁন তো আর কোনো মেয়ে নন। তাছাড়া আভিকে ফলো করার মতো তার কাছে কোনো কারনও নেই।
আভিঃ আমি তো এতোটা ডিপলি ভাবিই নি!( আনমনে )
নীলঃ সেজন্যই তো বলি, তোমাকে কি দেখে সিবিআই তে জব দিলো?( বিরবির করে বলল নীল )
এইদিকে,,,
নিজের ডেস্কে বসে গভীর ভাবনায় মগ্ন সুবহা। যখন থেকে রওশনের কেবিনে ব’ন্দু’ক’টা দেখেছে ভয়ে কুঁকড়ে আছে ও। সুবহার ভয় লাগছে, এজন্য না যে ও কোনো ধরনের হাতি’য়া’রকে ভয় পায় বরং এজন্য যে, এ ব’ন্দু’ক’টা ওর কাছে খুব পরিচিত লাগছে। এর আগেও সুবহা দেখেছে ঠিক এমনই একটা হাতি’য়া’র।
সে এক ভয়ংকর স্মৃতি সুবহার কাছে। যে স্মৃতি মাঝেমধ্যে আজও ওকে স্বপ্নে তাড়া করে বেড়ায়। বৃষ্টির পানিতে চুপসে যাওয়া শরীর, এক জোড়া রক্তাক্ত হাত আর সে হাতে এ অ’স্ত্র। এক জোড়া হিংস্রতা মিশ্রিত চোখ। লাল রক্তিম চোখ জোড়ার ভয়ঙ্কর দৃষ্টি আজও ভুলতে পারেনি সুবহা।
ওর চোখের সামনে কোনো দ্বিধা ছাড়া একে একে সব গুলো বুলেট কারো মস্তিষ্কের এপার ওপার করে দিয়েছিল।
সে হাত, সে চোখ জোড়া আর সে ব’ন্দু’ক স্পষ্ট এখনো মনে আছে সুবহার। যদিও অনেক ধরনের হাতি’য়া’র এক রকম দেখতে হয়। কিন্তু সে ব’ন্দু’ক’টা এজন্য আজও স্পষ্ট মনে আছে সুবহার কাছে কারন সেটাতে একটা মার্ক ছিলো। ড্রাগন মার্ক ছিল ওটায়। আর আজ ও রওশনের ড্রয়ারে যে ব’ন্দু’ক’টা দেখেছে সেটাতেও এমন একটা মার্ক ছিলো হয়তো। কিন্তু তাড়াহুড়োতে সুবহা জিনিসটা ভালো করে খেয়ালই করে নি। তবুও ওর মনে হচ্ছে যে মার্কটা ছিল গানে।
রওশনের শত্রুর অভাব নেই, তা সুবহার নিজ চোখে দেখা। তাই নিজের সুরক্ষার জন্য সাথে হা’তি’য়ার রাখাটা স্বাভাবিক। এতে কোনো ভয় বা খারাপ ভাবনা নেই সুবহার মাঝে, ওর ভয় শুধু এটাই রওশন যেন সে লোকটা না হয়। রওশনকে ভালোবাসে সুবহা, ওর সব রুপ মেনে নিতে পারবে ও কিন্তু ওর সেই নৃশংস খুনি রুপ হয়তো মানতে পারবে না ও।
সুবহার ভাবনার মাঝেই ল্যান্ড ফোনে কল আসে। ও একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে ফোন ধরতেই ফোনের ওপাশ থেকে রওশনের কন্ঠ ভেসে আসে। “এখুনি আমার কেবিনে আসো সুবহা” – কথাটা বলেই কল কেটে দিলো রওশন।
ফোনটা কান থেকে নামিয়ে রাখে সুবহা। শরীর কাঁপছে। মনের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে। তবুও নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়ায় সুবহা।
জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে পা বাড়ায় রওশনের কেবিনের দিকে।
কেবিনের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরলো সুবহা। হঠাৎ করেই বাম চোখটা লাফাচ্ছে। বাম হাত তুলে সাথে সাথে চোখটা হালকা করে চেপে ধরে ও। লোকেরা বলে বাম চোখ লাফালে নাকি খারাপ কিছু ঘটে।
কথাটা মাথায় আসতেই গলা শুকিয়ে গেল সুবহার। হৃদস্পন্দনের গতি দ্বিগুণ হলো। পরক্ষনেই মাথাটা ঝাঁকিয়ে এসব উদ্ভট চিন্তা ভাবনা দূর করার প্রয়াস করে সুবহা।
সুবহাঃ এসব কি ভাবছিস সুবহা। এমন কিছুই হয়না। এসব অন্ধবিশ্বাস। আদিম যুগের চিন্তা ভাবনা। ভয় পাস না,,,
জোরে জোরে বাম চোখটা হাতের তালু দিয়ে ঘষে নেয় সুবহা। নিজেকে আশ্বাস দিয়ে বলে ও।
সুবহাঃ কিচ্ছু হবে না।
কথাটা বলে একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে দরজাটা হালকা খুলে ভিতরে পা বাড়ায়। দরজাটা পুরো খুলে কেবিনের ভিতরে ঢুকতেই হাতে টান অনুভব করে ও। কেউ ওর হাতে হ্যাচকা টান দিয়ে ওকে ভিতরে ঢুকিয়ে ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো।
To be continued…..