আসক্তি?#Mr_Arrogant_4 #পর্ব_১৮

0
1806

#আসক্তি?#Mr_Arrogant_4
#পর্ব_১৮
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida

?
নিজের ডেস্কে বসে আছে সুবহা,,, রওশনের কেবিন থেকে বেরিয়েছে প্রায় বিশ মিনিট হয়েছে ওর। কিন্তু এখনও নিজেকে শান্ত করতে পারছে না ও। হাত পা এখনো থরথরিয়ে কাঁপছে। নিঃশ্বাস যেন গলা অব্দি আটকে আছে। কিছুক্ষণ আগের ঘটনা মনে পড়তেই গাঁয়ের লোম যেন আবারও দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।

মনে হচ্ছে যেন মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে এসেছে ও। মাথার ডান পাশে হাত রাখে সুবহা। ভাবতেই গলা শুকিয়ে আসছে যে, কিছুক্ষন আগেই রওশনের ব’ন্দু’কের গুলি ওর মস্তিষ্ক ভেদ করে ওর জান নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বেঁচেছে।

কিছুক্ষণ আগে,,,

রওশনের কেবিনের দরজা খুলতেই ভেতর থেকে কেউ একজন ওর হাত ধরে ওকে ভেতরে টেনে নেয়।

হঠাৎ এমন কাজে হচকিয়ে যায় সুবহা। চোখে মুখে ভয় লেপ্টে যায় ওর। সুবহা ভিতরে প্রবেশ করতেই দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে দেয় মানুষটি।

সুবহা ভয়ে চোখ কুঁচকে বন্ধ করে নেয়। ওর দু হাতের কবজি খুব শক্ত করে ধরে আছে মানুষটি। না দেখেও তার স্পর্শে বুঝতে পারে ও যে মানুষটি অন্য কেউ নয় বরং রওশন নিজে। রওশন যে কত পরিমাণ রেগে আছে তা ওর স্পর্শেই বুঝা যাচ্ছে।

চোখ খোলে সুবহা, কিন্তু নিচের দিকে তাকিয়ে আছে ও। উপরে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না,,, হঠাৎ রওশনের ঝাঁঝালো কন্ঠের ধমকে কেঁপে উঠল ও।

রওশনঃ সত্যি করে বলো সুবহা, তুমি আমার রুমে কি করছিলে?

রওশনের কথায় সুবহা অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকায় রওশনের দিকে। যেটার ভয় পেয়েছিল সেটাই হয়েছে। এখন কি বলবে সুবহা? সত্যিটা বললে নির্ঘাত ওর উপর রওশন নামক সুনামি বয়ে যাবে।

সুবহা ভেবে পাচ্ছে না ওর কি বলা উচিত, এইদিকে রওশন রেগে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ওকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে আরো রেগে যায় রওশন।

হঠাৎ সুবহাকে ছেড়ে দিয়ে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ায় ও। সুবহা মাথা তুলে রওশনের দিকে তাকায় এটা বুঝার জন্য যে ও কি করতে চাইছে।

হঠাৎই রওশনের রাগী মুখটা শান্ত হয়ে যায়। শীতল দৃষ্টিতে তাকায় ও সুবহার দিকে। এই শীতল দৃষ্টিতেও যেন হুমকি লুকিয়ে আছে রওশনের।

রওশনঃ তুমি আমার কেবিনে স্পাইগিরি করছিলে? সত্যি করে বলো। ( সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে)

রওশনের কথা শুনে সুবহা সাথে সাথে তার মাথা দু দিকে ঝাঁকিয়ে বলতে শুরু করে।

সুবহাঃ না না রওশন আমি কিছুই করিনি। আমি তো তখন আপনাকে নতুন প্রজেক্টের ডিজাইন গুলো দেখাতে এসেছিলাম। কিন্তু আপনি ছিলেন না।

রওশনঃ এজন্য তুমি আমার আড়ালে আমার কেবিনেই গোয়েন্দাগিরি করা শুরু করে দিলে?( ধমকের স্বরে ‌)

রওশনের ধমকে কেঁপে উঠে সুবহা, এমন জোরে ধমক আজ অব্দি কেউ দেয়নি ওকে। কান্না আসছে ওর। নাক ফুলিয়ে নেয় ও। হঠাৎ রওশন টেবিলের উপর ফাইল দিয়ে ঢেকে রাখা গানটা বের করে হাতে নেয়। চোখ দুটো বড় বড় করে নেয় সুবহা। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকায় রওশনের মুখের দিকে।

রওশন কি তাহলে ওকে গু’লি করে মে’রে ফেলবে? গলা শুকিয়ে আসছে সুবহার। রওশন ব’ন্দু’কটা ঘুরাতে ঘুরাতে সুবহার দিকে এগিয়ে আসছে আর বলছে,,,

রওশনঃ আমার চোখ থেকে কিছু্ই লুকোয় না সুবহা। তোমাকে আমি একবার না বহুবার সাবধান করেছিলাম। বলেছিলাম আমার পার্সোনাল জিনিস থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকবে। কখনো এমন কিছু দেখবে না যেটা দেখার অনুমতি নেই তোমার। কখনো এমন কিছু শুনবে না যা শোনার অনুমতি নেই তোমার, আর কখনোই এমন কিছু ছুঁবে না যা ছোঁয়ার অনুমতি নেই।

সুবহাঃ আমি ইচ্ছে করে করিনি রওশন। ফাইল গুলো নিচে পরে গিয়েছিল আমি সেইগুলোই তুলে রাখছিলাম।

রওশনঃ আর সেগুলো তুলে রাখতে গিয়ে তোমার হাত আমার ড্রয়ারে চলে যায়। এটাই তো তাই না? তো কি দেখলে তুমি ওটায়? গান?

গানটা উঠিয়ে দেখানো রওশন সুবহাকে। একদম সুবহার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ও। সুবহা আগে থেকেই দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিল তাই পেছনে যাওয়ার স্কুপও নেয় ওর।

ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকায় সুবহা রওশনের হাতের গানটার দিকে। ঢোক দিলে ও।

রওশন এটাই চেয়েছিল। তীক্ষ্ণ নজরে সুবহার ভীতু মুখের দিকে তাকায় ও। রওশন ব’ন্দু’কটা ঘুরাচ্ছে। সুবহা গানটার দিকে খেয়াল করে তাকাতেই দেখে এই গা’নে তেমন কোন চিহ্ন নেই। তাঁর মানে এটা সেই গান না, আর না রওশন সেই মানুষটি। এমন একটা পরিস্থিতিতেও যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ও। এতক্ষণ যে ভয়টা পাচ্ছিল তা মিনিটেই গায়েব হয়ে যায়।

রওশন এখনো কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে সুবহার দিকে। সুবহা এবার ঠোঁটে হালকা হাঁসি টেনে রওশনের চোখে চোখ রেখে বলতে শুরু করে।

সুবহাঃ একদম ঠিক বলেছেন আপনি রওশন। ভুল আমারই ছিল। আমার উচিত হয়নি আপনার অনুমতি ছাড়া এই রুমে আসার। কিন্তু আমি সত্যি কোনো স্পাই নই। আমি জানি আপনার অনেক শত্রু কিন্তু আমি সেই শত্রুদের কেউ নই, আমিতো আপনার ভালোব….. হঠাৎ চুপ হয়ে যায় সুবহা। বলতে বলতে মুখ ফসকে সবই বলে দিচ্ছিলো ও। কথা ঘুরানোর জন্য সুবহা আবার বলে,,,

সুবহাঃ আমি বলছিলাম যে, আমি আপনার শত্রু কেন হবো? আমার কি নিজের জীবনের মায়া নেই?

রওশনঃ তাহলে তুমি সত্যি স্পাই নও?( কপাল কুঁচকে )

সুবহাঃ একদম না। ( মাথা নাড়িয়ে ) যদি তবুও আপনার আমার উপর বিশ্বাস না হয় তাহলে এখুনি আমাকে গু’লি করে ফেলুন।

রওশনের হাত ধরে ব’ন্দু’ক’টা নিজের মাথায় তাক করলো সুবহা। কাজটা একটু রিস্কি, ভয়ও হচ্ছে ওর কিন্তু ওর এতো টুকু বিশ্বাস আছে যে রওশন আর যাই করুক ওর কোনো ক্ষতি করবে না।

সেটাই হলো, রওশন কিছুক্ষণ সুবহার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে থেকে নিজের ব’ন্দু’কটা নামিয়ে নেয়।

রওশন ব’ন্দু’কটা নামিয়ে পেছনের দিকে পা বাড়িয়ে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে। ব’ন্দু’ক’টা নিজের সামনে ঠিক সুবহার বরাবর রাখে ও তারপর বলে,,,

রওশনঃ ঠিক আছে, তুমি যেহেতু বলছো আমি বিশ্বাস করলাম যে তুমি স্পাই নও।

রওশনের কথা শুনে সুবহা বড় একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম টুকু মুছে নেয়।

সুবহাঃ তাহলে আমি কি এখন যেতে পারি?

রওশনঃ উমম, হ্যা। ( কিছুক্ষণ ভেবে )

আর এক সেকেন্ডও দেরি করলো না সুবহা, দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যায় ও রুম থেকে।

সুবহা চলে যেতেই রওশন সোজা হয়ে বসে। কপালে চিন্তার ভাঁজ ওর। সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছিল রওশন, সেখান থেকেই ও জানতে পারে যে সুবহা ব’ন্দু’ক’টা দেখে ফেলেছে। প্রথমতো ঘাবড়ে যায় রওশন। যদি সুবহা সব জেনে যায় খারাপ কিছু ঘটে যাবে। কিন্তু পরক্ষনে নিজেকে সামলে ঠান্ডা মাথায় ভাবে যে কি করা উচিৎ। অনেক সময় নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা ভাবনা করার পর রওশন এই প্ল্যানটা করে।

আসল ব’ন্দু’ক’টা লুকিয়ে অন্য একটা ব’ন্দু’ক সুবহার নজরে আনে ও। যেন ওর মন থেকে সন্দেহ দূর করতে পারে। আর সেটাই হয়েছে। সুবহার মন থেকে সন্দেহ দূর হতেই ভয়টা গায়েব হয়ে যায়।

রওশনঃ তুমি সত্যিই বোকা সুবহা,,, ( মুচকি হেসে )

To be continued….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here