আসক্তি?#Mr_Arrogant_4 #পর্ব_১৯

0
1800

#আসক্তি?#Mr_Arrogant_4
#পর্ব_১৯
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida

?
সন্ধা গড়িয়ে রাত হচ্ছে। অফিস টাইম শেষ, তাই একে একে সবাই বাসায় চলে যাচ্ছে। সুবহাও নিজের কাজ শেষ করে সব গুছিয়ে রাখছে। ফাঁকে ফাঁকে রওশনের কেবিনের দিকে তাকাচ্ছে ও, যেটা এই মুহূর্তে বন্ধ আছে। রওশন‌ ওর কেবিনে, বের হতে দেরী হবে ওর। সব সময় সব স্টাফদের যাওয়ার পর বের হয় রওশন। আজও এর ব্যতিক্রম হবে না।

সুবহা সব কিছু গুছিয়ে নেয়। এখন শুধু একটা কাজ বাকি, ডিজাইন করা ড্রাফ্ট গুলো অফিসের স্টোর রুমে রেখে আসতে হবে। অফিসে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল আর জিনিসপত্রের জন্য আলাদা রুম আছে। বেশি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রাখার জন্য এই রুমটা ইউজ হয়। সচরাচর শুধু কয়েকজনেরই অনুমতি আছে সেই রুমে যাওয়ার কারণ সেখানে রওশনের বিজনেসের বিষয়ে অনেক সিক্রেট ইনফো রাখা। রওশন আর সুবহা বাদে হাতে গোণা কয়েক জনই রুমটায় যেতে পারে।

ড্রাফট গুলো নিয়ে উঠে দাঁড়ায় সুবহা, পা বাড়ায় স্টোর রুমের দিকে। উপরের ফ্লোরে যাচ্ছে ও। রুমের সামনে গিয়ে দরজা খুলছে ও।

ভেতরে কেউ একজন আগে থেকেই ছিল। কিছু একটা খুঁজছিলো। দরজা খোলার শব্দেই সচেতন হয়ে যায় লোকটি। সাথে সাথে একটা শেলফের আড়ালে লুকিয়ে পরে সে।

এইদিকে, রওশন ল্যাপটপে পুরো অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরা চেক করছে। এটা ওর প্রতিদিনের কাজ। বের হওয়ার আগে পুরো অফিসের সিকিউরিটি আর ফুটেজ চেক করে নেওয়া। সব গুলো ফ্লোরের ফুটেজ চেক করে ও কিন্তু থার্ড ফ্লোরের ফুটেজ অন করতেই দেখে ক্যামেরা বন্ধ। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ করেই ক্যামেরা অকেজো হয়ে পরা স্বাভাবিক কিছু না। খটকা লাগছে রওশনের। কিছু একটা ভুল হচ্ছে আন্দাজ করতে পারছে ও।

সাথে সাথে উঠে দাঁড়ায় রওশন, ড্রয়ার খুলে সেখান থেকে নিজের গা’নটা বের করে কোমরে গুঁজে নেয়। তারপর দ্রুত পায়ে বের হয়ে যায় কেবিন থেকে।

সুবহা রুমে ঢুকে দরজার পেছনের সুইচ দিয়ে লাইট জ্বালিয়ে নেয়। বড় প্রশস্ত কক্ষে সাঁড়ি করে দাঁড় করানো একেকটা শেলফ। আর শেলফ গুলোর মধ্যে নাম্বার অনুযায়ী সাজিয়ে রাখা বিভিন্ন ফাইল আর কাগজ পত্র।

সুবহা কিছুটা এগিয়ে একটা শেলফের সামনে দাঁড়ায় তারপর হাতের ফাইল গুলো সেখানে গুছিয়ে রাখতে শুরু করে।

লুকিয়ে থাকা লোকটা আড়াল থেকে দেখছে সুবহাকে। লোকটা আরেকটু দেয়াল ঘেঁষে লুকাতে নিলেই শেলফে নাড়া লেগে কয়েকটা ফাইল পরে যায়।

সাথে সাথে ঘাবড়ে ফিরে তাকায় সুবহা। পেছনে কেউ নেই শুধু ফ্লোরে পড়ে আছে ফাইল গুলো। সুবহা আশেপাশে চোখ বুলোয় কিন্তু কাউকেই দেখতে পায় না। আশ্চর্য্যচকিত হয় ও। এখানে তো কেউ নেই, তাহলে ফাইল গুলো নিজে নিজে কিভাবে পরলো ভেবে পাচ্ছে না ও।

সুবহা এগিয়ে যায়। সুবহাকে এ দিকে আসতে দেখে লোকটা ধীর পায়ে শেলফের অন্য পাশে লুকিয়ে যায়। সুবহা ফাইল গুলো তুলে জায়গা মতো রেখে দেয়। এখানে কেউ নেই, তাই আজব লাগছে ওর যে নিজে নিজে কিভাবে পরলো এগুলো। এসব ভাবতে ভাবতেই পেছন ঘুরে ও কিন্তু ঘুরতেই শক্ত কিছুর সাথে মাথা বারি খায় ওর। বারি খেয়ে দু কদম পিছিয়ে যায় সুবহা।

সুবহাঃ হঠাৎ এখানে দেয়াল আসলো কিভাবে? এতক্ষণ তো ছিল না! – চোখ আর মুখ কুঁচকে হাতের তালু দিয়ে কপাল ঘঁষতে ঘঁষতে সামনে তাকাতেই মুখ বন্ধ হয়ে যায় ওর।

সামনে কোনো দেয়াল নয় সয়ং রওশন দাঁড়িয়ে, ওকে দেখে অবাক হয় সুবহা। রওশন এক কদম এগিয়ে সুবহার বরাবর দাঁড়িয়ে কপালে হালকা ভাঁজ টেনে বলে,,,

রওশনঃ আমাকে তোমার দেয়াল মনে হয়? চোখ ঠিক আছে তোমার?

সুবহাঃ আপনার শরীর দেয়ালের থেকে কম না, একটুর জন্য আমার কপালটা ফাটতে ফাটতে বেঁচেছে। ( মুখ ফুলিয়ে )

সুবহার এমন জবাবে রওশন চুপ হয়ে যায়, ও বুঝতে পারছে যে তখনকার ঘটনার জন্য রেগে আছে সুবহা। এজন্যই এভাবে কথা বলছে।

সুবহা আড়ি চোখে তাকায় রওশনের দিকে। ও অপেক্ষায় আছে রওশনের তরফ থেকে কিছু শোনার জন্য। নিশ্চয়ই এখন রেগে ইচ্ছে মতো ঝাড়বে ওকে। সুবহা তবুও প্রস্তুত ঝাড়ি খাওয়ার জন্য।

কি অবাক করার বিষয় রওশন তেমন কিছুই বলল না, উলটো আশেপাশে ভালো করে চোখ বুলিয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ করতে করতে বলে,,,

রওশনঃ তুমি একা এখানে কেনো?

সুবহাঃ‌ এইতো পার্টি করতে এসেছি!

সুবহার এমন ত্যাড়া জবাবে রওশন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকায় ওর দিকে। কিন্তু কিছুই বলল না। সুবহা অবাক হয়। রওশন রাগ করছে না উল্টো নিজের রাগ দমিয়ে আছে। ভাবতেই অবাক লাগছে সুবহার।

রওশন চোখ বন্ধ করে একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে শান্ত স্বরে আবার বলে,,,

রওশনঃ সুবহা খেয়াল করে ভেবে তারপর বলো, তুমি ছাড়া কি এখানে অন্য কেউ আছে বলে তুমি অনুভব করেছো?

সুবহাঃ হ্যাঁ!

সুবহার কথায় রওশন সচেতন হয়ে আশেপাশে তাকিয়ে খুঁজতে খুঁজতে বলে,,,

রওশনঃ কে? আর কোথায়?

সুবহাঃ জিন, পরি, ভুত, পেত্নী আর আপনি। এতক্ষন তো শুধু জিন পরিকে অনুভব করেছি কিন্তু এখন আপনাকে‌ সাক্ষাত এখানে দেখতে পারছি।

সুবহার এমন কথায় রওশন রেগে, ওর দিকে এগোতেই ও পিছিয়ে শেলফের সাথে লেগে যায়। রওশন বাম হাত সুবহার বা পাশের শেলফে রেখে ওকে আটকে নেয়। ওর আর অন্য পাশে যাওয়ার উপায় নেই। ডান পাশে দেয়াল আর বা পাশ রওশন হাত দিয়ে আটকে রেখেছে। সুবহা ভয়ে ঢোক গিলছে কিন্তু ভয়টা প্রকাশ করেছে না। রওশন সুবহার দিকে ঝুঁকে ওর চোখে চোখ রেখে হালকা স্বরে বলে,,,

রওশনঃ‌ সুবহা তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো তুমি কার সাথে কথা বলছো।

ঘাবড়ে আছে সুবহা। ভয়ও পাচ্ছে, রওশন ওর এতোটা কাছে দাঁড়িয়ে যে গাঁয়ের লোম গুলোও দাঁড়িয়ে গেছে। হৃদস্পন্দনের গতি বেড়েছে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য যেন নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেছে ও।

রওশনের চোখে চোখ রেখে অপলক ওর গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সুবহা। রওশন যদি ওর সামান্য কাছেও আসে সুবহার অবস্থা নাজেহাল হয়ে যায়। সুবহা শুধু রওশনের চোখে তাকিয়ে এটাই বুঝার চেষ্টা করছে, যেমন অনুভূতি ও অনুভব করে রওশনও কি তেমনটা করে কি না।

কিন্তু প্রতি বারের মতো রওশনের দৃষ্টি শূন্য, অনুভূতিহীন।

রওশন কিছু বলবে তখনই হঠাৎ একটা শেলফ ঢলে পড়ে ওদের উপর। রওশন সেটা দেখার সাথে সাথে সুবহার হাতে হ্যাচকা টান দিয়ে সরে যায়। শেলফটা অন্য একটা শেলফের সাথে বেজে যায়। সাথে সাথে লুকিয়ে থাকা লোকটা আড়াল থেকে এক দৌড়ে বেরিয়ে যায়। রওশন তাকে দেখতেই সুবহাকে ছেড়ে লোকটার পেছনে যায় কিন্তু দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়েছে সে। রওশন সমস্ত শক্তি দিয়ে খোলার চেষ্টা করে কিন্তু কাজ হচ্ছে না।

সুবহা দূরে দাঁড়িয়ে শুধু দেখছে। হঠাৎ ঘটনাটা ঘটে যাওয়ায় সব মাথার উপর দিয়ে গেছে ওর। এখনো হচকিয়ে আছে সুবহা। কিন্তু পরক্ষণেই হুঁশ ফিরতে ওর খেয়াল হয়, তখন ফাইল গুলো নিজে নিজে পড়েনি। এ লোকটাই ফেলেছিলো। সুবহা তখন একা এই লোকটার সাথে এই রুমে ছিল। ভাবতেই গাঁয়ে কাটা দিয়ে উঠছে ওর। যদি রওশন না আসতো তাহলে কি হতো ভাবছে ও।

দরজা ধাক্কানোর শব্দে ধ্যান ভাঙে ওর। দ্রুত রওশনের পাশে গিয়ে ওর কোট খামচে ধরে সুবহা। তারপর ভয়ার্ত কন্ঠে বলতে শুরু করে।

সুবহাঃ এ এটা কি ছিল রওশন?

রওশন ধাক্কাধাক্কি বন্ধ করে সুবহার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে শুরু করে।

রওশনঃ এইতো তোমার পরিবারের সদস্য, দেখা করতে এসে ছিলো তোমার সাথে। জিন পরি ভুত পেত্নী যাদের কথা তুমি বলছিলে। স্টুপিড!

To be continued……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here