#আসক্তি?Mr_Arrogant_4
#পর্ব_২৪
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
সর্বোচ্চ গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে রওশন। একে একে সামনে থাকা সব গাড়ি গুলোকে ক্রস করে এগোচ্ছে ওর গাড়ি। দু হাতে শক্ত করে স্টেয়ারিং ধরেছে ও, এতোটা শক্ত করে যে হাতের শিরা গুলো স্পষ্ট ফুলে উঠেছে। রক্তিম চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সামনের দিকে।
নিঃশ্বাস ঘনঘন ফেলছে, বুকের ধুকপুক শব্দটা যেন দ্বিগুন বেড়ে গেছে। স্টেয়ারিংয়ের পেছনের দিকটায় ফোনটা সোজা করে রাখা আর ফোনে অন করা লোকেশন ট্র্যাকার।
ফোনে দেখানো লোকেশন অনুযায়ীই এগোচ্ছে রওশন, না কিছু ভেবে না কিছুর পরোয়া করে। পাশের সিটেই ওর ব’ন্দু’ক’টা রাখা সেটাও এমন ভাবে যেন হাত বাড়ালেই নেওয়া যায়।
অন্যদিকে সুবহাকে কি*ড*ন্যা*প করা গাড়িটা নিজেদের গন্তব্যে এগোচ্ছে। লোক গুলো ফোনে কারো সাথে কথা বলা শেষ করলো। ফোনটা রেখে নিজেদের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে কথা বলতে শুরু করে তারা। পেছনের সিটে সুবহা সে’ন্স’লে’স হয়ে আছে।
রওশন নিজের ফোনের দিকে তাকায়, রেড মার্কটা সামনে দেখাচ্ছে। তারমানে সুবহা যে গাড়িতে আছে সেটা ওর সামনেই। গাড়ির স্পীড বাড়ায় রওশন। সামনের কয়েকটা গাড়ি ক্রস করে একটা বড় কালো গাড়ির পেছন ফলো করে ও।
গাড়ির ড্রাইভারটি এতক্ষণে রওশনকে দেখে ফেলেছে। লোকটি সাথে সাথে সর্টকাট একটা রাস্তায় মোড় ঘুরিয়ে নেয়। রওশনও তাদের পিছু নেয়।
গাড়ির স্পীড আরো বাড়ায় রওশন। এক পর্যায়ে দু’টো গাড়িই সমানে এসে পরে। রওশন জানলার গ্লাস নামিয়ে মাথা ঘুরিয়ে গাড়ির ড্রাইভারের দিকে নিজের র*ক্তি*ম দৃষ্টি নি*ক্ষে*প করল।
ড্রাইভার ঢোক গিলল, কপাল বেয়ে ঘামের ফোঁটা নিচে গড়িয়ে পরল তার। ড্রাইভারের ভীতু দৃষ্টি বারবার রওশনের দিকে পরছে। বাঁকা হাঁসে রওশন, সুযোগ বুঝে গাড়ির স্পীড আরেকটু বাড়িয়ে সামনে এগোয় ও। একদম সামনে গিয়ে গাড়ি বাঁকিয়ে দাঁড় করায়, এখন যেতে হলে রওশনের গাড়িকে ট*ক্ক*র দিয়ে যেতে হবে তাদের।
দু চোখের নির্ভীক দৃষ্টি ড্রাইভারের দিকে। স্টেয়ারিং শক্ত করে চেপে ধরে আছে রওশন। যদি ড্রাইভারটা গাড়ি না থামায় তাহলে এর পরিণাম কি হবে জানে ও। কিন্তু তবুও চোখে মুখে ভ*য়ে*র ‘ভ’ টাও নেই ওর। রওশনকে দেখে মনে হচ্ছে ওর মাথায় অন্য কিছু চলছে।
হঠাৎ পাশে রাখা গা*নটা হাতে নেয় ও। ব*ন্দু*কটা হাতে নিয়ে জানলা বাইরে হাত বের করে রওশন। নিশানা লাগায় গাড়ির টায়ারে। সেকেন্ডও দেরি করল না রওশন, গাড়িটা একটু কাছে আসতেই শ্যু*ট করে দিলো একে একে দুই পাশের টায়ারে।
গাড়িটা ব্যালেন্স হারিয়ে আঁকাবাঁকা ভাবে একটা বড় গাছের সাথে গিয়ে বা*রি খেয়ে থেমে যায়।
গাড়ির সামনের দিকটা একদম থেঁতলে গেছে, ঘন করে ধোঁয়া উঠছে। সামনের সিটে বসে থাকা দু’জন লোকের অলরেডি আ*ধ*ম*রা অবস্থা। ড্রাইভারের মাথা থেঁ*ত*লে একদম সামনের দিকে উপচে পড়েছে সে। আর পাশের সিটের লোকটার দরজা ভেঙে অর্ধেক শরীর মাটিতে লুটিয়ে আছে। কিন্তু একজন এখনো সালামত অবস্থায় আছে। দ্বিতীয় সারিতে সুবহার সাথে বসে থাকা লোকটি। লোকটি কাঁশতে কাঁশতে কোনো রকমে বেরিয়ে আসে গাড়ি থেকে। কিন্তু বের হতেই রওশনকে নিজেদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হুমড়ি খেয়ে পিছলে পড়ে সে। রওশন ব*ন্দু*কটা ঘুরাতে ঘুরাতে সামনের দিকে ছোট ছোট কদমে এগোয়, তার সে পেছনের দিকে। এক পর্যায়ে গাড়ির সাথে পিঠ লেগে যায় তার। পেছনে যাওয়ার পথ নেই।
ঢোক গিলে রওশনের দিকে তাকায় লোকটি। চোখে মুখে ভয় তার, যেন মৃ*ত্যু*কে স্বচক্ষে দেখতে পারছে সে।
রওশন তার ঠোঁটের বাঁকা হাসি আরেকটু প্রসস্ত করে। এক হাঁটু ভাঁজ করে লোকটার সামনে বসে ও। ব*ন্দু*কটা এখনো আঙুল পেঁচিয়ে ঘুরাচ্ছে ও।
হঠাৎ ঘুরানো বন্ধ করে লোকটার হাঁটুর উপর ব*ন্দু*কটা ঠেকায় রওশন। লোকটার ঘনঘন নিশ্বাস পরছে, যেন বুক ফেটে কলিজা এখুনি হাতে বেরিয়ে আসবে তার। গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না।
আচমকা ব*ন্দু*কটা রওশন লোকটার হাঁটুতে ঠেসে ধরে আর বি*কট ভাবে এক নাগাড়ে দু’টো গু*লির শব্দ হয়। লোকটার চি*ৎ*কার করে দু হাত দিয়ে নিজের হাঁটু জাবড়ে ধরে। তীব্র বেগে হাঁটু থেকে র*ক্ত
চুষে পরছে তার। মাটিতে লুটে পরে লোকটি ব্যা*থা*য় কা*ত*রাতে কা*ত*রাতে।
কিন্তু লোকটির এমন অবস্থা দেখেও রওশন বিন্দুমাত্র বিচলিত হচ্ছে না, আর না ওর মুখে খারাপ লাগার মতো কোনো প্রতিক্রিয়া আছে।
রওশনের ব*ন্দু*কের মুখে র*ক্ত লেগে আছে। রওশন ব*ন্দু*কের মুখটার দিকে তাকিয়ে নাক ছিটকে মৃদু হাসে। তারপর ব*ন্দু*কের মুখটা সামনে পরে থাকা লোকটার গায়ের শার্টে মুছতে মুছতে বলতে শুরু করে,
“তোর দু’জন সাথী অলরেডি লগআউট হয়ে গেছে কিন্তু ডোন্ট ওয়ারি আমি তোকে এখনি মা*রবো না। তোকে মে*রে ফেললে তোর বসের কাছে আমার বার্তা নিয়ে যাবে কে? তাছাড়া তোর এই অবস্থা শানের দেখা উচিত কারন ভবিষ্যতে ওর অবস্থাও এমনি হবে। তোকে জী*বিত পাঠিয়ে ওর জন্য একটা হুমকি পাঠাচ্ছি আমি। ওর ভবিষ্যতের একটা ছোট্ট প্রতিচ্ছবি। ”
রওশন নিজের প্যান্টের পকেট থেকে একটা ভাঁজ করা কাগজ বের করে সামনের লোকটার শার্টের পকেটে পুরে দেয়। তারপর ওর গা*নটা পরিস্কার হতেই সেটা ও নিজের কোমড়ে গুঁজে দাঁড়িয়ে যায়।
দ্রুত পায়ে গাড়ির অপর পাশ দিয়ে দরজা খুলে রওশন। ভেতরে সুবহা সে*ন্স*লেস হয়ে আছে।
রওশন সুবহার হাত ধরে ওকে সাবধানে বের করে কোলে তুলে নিজের গাড়ির দিকে হাঁটা ধরে।
এইদিকে,
বারবার গাড়ির লুকিং গ্লাসে তাকাচ্ছে ওহি। অনেকক্ষণ ধরেই ও খেয়াল করছে একটা বাইক ওকে ফলো করছে। বাইকের মানুষটি হেলমেট পরা তাই বুঝতে পারছে না ওহি যে আসলেই লোকটি কে। কিন্তু ও এতটুকু সিউর যে মানুষটি ওকেই ফলো করছে।
ওহি কখনো আভিকে বাইকে দেখে নি তাই ও আন্দাজও করতে পারছে না যে এটা আভিও হতে পারে।
বেশ কিছুক্ষণ বিষয়টা খেয়াল করে সাইডে গাড়ি থামিয়ে নেয় ওহি। ও গাড়ি থামাতেই পেছনের বাইকটিও থেমে যায়।
“কে এটা? কত বড় সাহস আমাকে, ওহিকে ফলো করছে। চেনে না আমি কে? এখুনি এর হিরোগিরি বের করছি, জাস্ট ওয়েট। ”
অ্যাংরি বার্ড রিয়েকশন নিয়ে নিজের গাড়ি থেকে নেমে যায় ওহি। গাড়ির দরজা ঠাস করে লাগিয়ে পেছনের মানুষটির দিকে ফিরে তাকায় ও।
আভি বাইক থামিয়েছে ঠিকই কিন্তু বাইক থেকে নামে নি এখনো।
ওহি দু হাত বুকে ভাঁজ করে কপাল আর চোখ কুঁচকে তাকায় তার দিকে।
প্রায় চার মিটার দূরত্বে আছে ওরা। আভি পুরো হিরো স্টাইলে নেমে যায় বাইক থেকে। মাথা থেকে হেলমেটটা স্লো মোশনে খুলে নেয়।
আভিকে দেখে অবাক হয় ওহি। মুখটা সেকেন্ডেই হা হয়ে গেছে ওর, চোখ দুটো বড় বড় করে তাকায় আভির দিকে ওহি।
আভি হেলমেটটা বাইকে রেখে মিররে তাকিয়ে নিজের চুল গুলো নেড়েচেড়ে স্টাইল করে নেয়। তারপর জ্যাকেটের বুকে রাখা সানগ্লাসটা চোখে পরে হিরো স্টাইলে হেঁটে ওহির দিকে পা বাড়ায়।
ওহি এখনো নিজের জায়গায় স্টিল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মস্তিষ্ক বলছে দ্রুত এখান থেকে পালাতে কিন্তু পা দুটো যেন গ্লু এর মতো চিপকে আছে মাটির সাথে।
আভির কদম যত সামনে এগোচ্ছে ওহির হৃদস্পন্দন ততই দ্রুত উঠানামা করছে।
এক পর্যায়ে আভি একদম ওহির সামনাসামনি এসে দাঁড়ায়। এক হাত দূরত্ব হবে দুজনের মধ্যে।
“ তুমি ধরা পড়ে গিয়েছো, মিস ওহি খাঁন। ” মৃদু হেসে ওহির দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে আভি।
ওহি যেন কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেছে। কিছু একটা বলতে চায় ও কিন্তু শব্দ গুলো গলা অব্দি এসে আঁটকে গেছে।
আভি ওহির মুখ থেকে কিছু শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। কিন্তু হঠাৎ অদ্ভুত কান্ড ঘটে গেল। আভি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওহি সোজা ওর বুকে পরলো।
বিষয়টা বুঝতে আভিরও কয়েক সেকেন্ড সময় লেগেছে কিন্তু বুঝে উঠতেই দ্রুত ওহিকে ধরে ফেলে ও।
ওহি ওর উপরই বে*হুঁ*শ হয়ে গেছে। আভি যেন পুরো হত*ভম্ব।
“ হোয়াদ দ্য… হ্যালো মিস! আর ইউ ওকে? ” আভি হতভম্ব ভঙ্গিতে ওহির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে। কিন্তু ওহির তরফ থেকে কোনো সাড়া শব্দ নেই।
“ গড, আজকালকার টিনেজ মেয়েরা এত সেনসিটিভ কেন? কিছুই বললাম না এতেই বে*হুঁশ, কিছু বললে কি হত গড নোওজ! ”
নিজে নিজে বিরবির করে বলে আভি। ওহি চোখ পিটপিটিয়ে আভিকে দেখার চেষ্টা করে। পরক্ষনেই আবার একদম শক্ত করে চোখ বন্ধ করে নেয়। এই মুহূর্তে এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্য এর থেকে ভালো বুদ্ধি আসে নি ওহির মাথায়।
এইদিকে আভি কি করবে বুঝতে পারছে না। মাঝরাস্তায় একটা মেয়ে ওর উপর অ*জ্ঞা*ন হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ প্রথমবার পরেছে আভি। তাই কি করবে কিভাবে করবে কিছুই মাথায় আসছে না ওর।
To be continued….