#আসক্তি?Mr_Arrogant_4
#পর্ব_২৮
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রওশন। শরীরের কালো ওভারকোটটার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে ও। কালো রঙেও যেন র*ক্তের ছাপ গুলো ও স্পষ্ট দেখতে পারছে। যদিও কালো রঙের মধ্যে লাল রং বুঝতে পারা খুব কঠিন কিন্তু রওশনের বেলায় এটা সম্পূর্ণ বিপরীত। ও যেন কালোর মধ্যেই র*ক্তের ছাপ আরো ভালো দেখতে পায়।
আয়নায় তাকিয়েই কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা মনে করে ও।
অন্ধকার কক্ষ। একটা কাঠের চেয়ারে একজন লোককে বেঁধে রাখা হয়েছে। লোকটির হাত পা দড়ি দিয়ে বাঁধা এমনকি তার মুখও কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা।
লোকটির মাথার কিছুটা উপরে লাল বাতি জ্বলছে। পুরো অন্ধকার রুমে এটাই একমাত্র আলোর উৎস। লোকটি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ হয়। কয়েকজন গার্ড ভেতরে প্রবেশ করে তাদের সাথেই প্রবেশ করে রওশন।
কালো রঙের ওভারকোট পরিহিত আর হাতে ওর সেই প্রিয় রি*ভ*ল*ভার। একজন গার্ড লোকটির বরাবর একটা চেয়ার রাখে আর রওশন সেখানে বসে পরে। হাতের রি*ভ*ল*ভারটা আঙ্গুল দিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে ও ইশারা করে বেঁধে রাখা লোকটির মুখ থেকে কাপড় সরাতে।
গার্ডটি সাথে সাথে সেটাই করল। লোকটির মাথা থেকে কালো কাপড়টি সরিয়ে দিল। এতক্ষণ অন্ধকারে থেকে হঠাৎ আলোর সংস্পর্শে এসে তাকাতে কষ্ট হয় লোকটির। কিন্তু না তাকিয়েও সে বুঝতে পারে যে তার সামনে এই মুহূর্তে কে বসে আছে।
এর মধ্যেই অয়ন হুরমুরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো, রওশনকে দেখে তার সামনে এসে কিছুটা ভীতু স্বরে বলতে শুরু করে ও, “স্যরি বস লেইট হওয়ার জন্য। এর পর থেকে প্রমিস কখনো লেইট হ…” অয়নের কথা শেষ হওয়ার আগেই রওশন ওর কথা কেটে বলে উঠে, “ও কতদিন ধরে আমার বাসায় কাজ করছে?”
অয়ন লোকটির দিকে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে আবার রওশনের দিকে তাকায়। ওর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, ভয়ে শরীর সহ আত্মাটাও কাঁপছে। তবুও কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দেয় ও, “ ব বস দেড় বছর, স স্যরি বস আমি ওর ইনফরমেশন ভালো করে কালেক্ট করতে পারিনি। আমি…”
রওশন আবারো অয়নের কথা কেটে বলে উঠলো, “তার মানে দেড় বছর ধরে শানের পাঠানো গুপ্তচর আমার বাসায় ছিল? আমারই চোখের সামনে, আমারই আসেপাশে অথচ আমার এ বিষয়ে কোনো ধারণাই নেই। ওয়াও!” হাসলো রওশন, কিন্তু এই হাসি ছিল রাগের।
অয়ন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, কিছু বললে এখন এখান থেকে এই লোকটার বদলে তার লা*শ যাবে সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছে ও। তাই এই মুহূর্তে চুপ থাকাটাই বুদ্ধিমত্তার কাজ হবে।
রওশন কিছুক্ষণ চুপ থাকলো তারপর সব গুলো গার্ডকে ইশারা করলো বেরিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করার জন্য। কথা অনুযায়ী সবাই বেরিয়ে গেল, অয়ন সুযোগ বুঝে ওদের সাথে বের হতে নিলেই রওশনের খাঁকারি শুনে কেঁপে উঠে, “ নট ইউ স্টুপিড!”
অয়ন যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানেই ফ্রিজড হয়ে যায়। অসহায় অবস্থা আর কাদোকাদো চোখ নিয়ে দরজার দিকে তাকায় ও, কিন্তু এতক্ষণে দরজা বন্ধ হয়ে গেছে।
এখন এই বন্ধ অন্ধকারচ্ছন্ন কক্ষে রওশন, বেঁধে রাখা লোকটা আর ওকে ছাড়া কেউ নেই।
হঠাৎ দরজায় খোলার শব্দে নিজের কল্পনা থেকে বেরিয়ে আসে রওশন। সামনে তাকাতেই দেখতে পায় নীল এসেছে।
দৌড়ে আসার ফলে হাঁপিয়ে উঠেছে বেচারা, ঘনঘন শ্বাস ফেলতে ফেলতে বলে ও “ব্রো নিচে ওয়ার্ল্ড ওয়্যার থ্রি শুরু হয়ে গেছে কাম ফাস্ট।”
“আবার কী হলো?” রওশন বিরক্ত হয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।
এইদিকে,,,
আভি গোমড়া মুখ করে বাসায় এসেছে। ওর মাথা থেকে ওহির ওভাবে ফাঁকি দিয়ে পালানোর ঘটনাটা যেন সরছেই না। মনে মনে হাজারটা কথা শুনিয়ে ফেলেছে হয়ত এতক্ষণে ওহিকে ও।
ড্রইং রুমের মিডল সোফাটায় দু হাত ছড়িয়ে বসে পরলো আভি। বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে পা দুটো গ্লাসের টেবিলে তুলে নিল ও।
হঠাৎ কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ কানে আসে আভির। সাথে সাথে হুরমুর করে উঠে আশেপাশে তাকায় ও। এর মধ্যেই সিঁড়ির পেছন থেকে টাইসেল বেরিয়ে আসে। টাইসেলকে দেখেই আভির চোখে বিস্ময় আর চমক ফুঁটে উঠে।
“ টাইসু মেরি জান, মাই বেবি!” – আভি দৌড়ে গিয়ে টাইসেলকে তুলে নেয়। ওর গাঁয়ে হাত বুলিয়ে ওকে ইচ্ছে মতো চুমু দিয়ে আদর করছে আভি। “কত দিন পর তোকে দেখছি, অবশেষে ভাই তোকে নিয়ে আসল।”
সুবহা নিজের দরজায় দাঁড়িয়ে আভিকে দেখছে। আভি টাইসেলকে চিনে শুধু তাই নয় ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে টাইসেল হয়ত ওরই পোষা, যদিও ওর কথা দূর থেকে শুনতে পায়নি সুবহা।
আভি টাইসেলকে আদর করছে আর ওর সাথে কথা বলছে নিজের মত করে। ওকে দেখে প্রচন্ড রাগ লাগছে সুবহার। নাক ফুলিয়ে চোখ দুটো ছোট ছোট করে দেখছে আভিকে ও।
হঠাৎই বড় বড় কদমে ও আভির সামনে এসে হুট করে আভির হাত থেকে টাইসেলকে এক প্রকার ছিনিয়ে নেয়।
আভি পুরোই হতভম্ব সুবহার কাজে। সুবহা রেগে অগ্নিমূর্তি ধারণ করেছে। টাইসেলকে আভির কাছ থেকে নিয়ে রেগে আভির উপর চেঁচাতে শুরু করে ও। “ডোন্ট টাচ হিম, আপনার লজ্জা করে না এতো কিছুর পরেও আবার টাইসুকে টাচ করতে? নির্লজ্জ বেহায়া হার্টলেস লোক।”
সুবহার হঠাৎ এমন ঝাঁঝালো শব্দের আক্রমণে অবাক আভি। হচকিয়ে যায় ও, সুবহার এমন ব্যবহারে পুরো বেকুব বনে গেছে ও।
“তুমি কী বলছ ভেবে বলছ? পাগল টাগল হয়ে গেলে নাকি? টাইসু আমার বেবি দাও ওকে আমায়।”
আভি টাইসেলকে নেওয়ার চেষ্টা করতেই সুবহা সরে যায় ওকে নিয়ে। তবুও আভি হার মানে না। এক পর্যায়ে দু’জনই টাইসেলকে নিয়ে টানাটানি শুরু করে। না আভি টাইসেলকে ছাড়ছে আর না সুবহা। বেচারা টাইসেল যেন দু’জনের ঝগড়ার মধ্যে পিষে যাচ্ছে।
পুরো অসহায় অবস্থা টাইসেলের। সুবহা ননস্টপ আভিকে এটা ওটা বলছে দোষারোপ করছে। অপর দিকে আভি সুবহার কোনো কথাই বুঝতে পারছে না। সুবহা কেন ওকে এগুলো বলছে, কোন বিষয়ে দোষারোপ করছে সবই আভির মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
রওশন এসে সিঁড়ির উপরে দাঁড়িয়ে আভি আর সুবহাকে ঝগড়া করতে দেখছে। ওর পাশেই দাঁড়িয়ে নীল, কিন্তু নীল একটুও অবাক হলো না বরং রওশনের দিকে তাকাল। রওশন নীলের দিকে তাকাতেই নীল ভ্রু উঁচু করে বলল “আমি জানতাম এমন কিছুই হবে। দোষ একজনের কথা শুনছে আরেকজন।”
রওশন কিছু বলল না বিরক্তিকর দৃষ্টি নিয়ে নিচে ওদের দিকে তাকাল। বিরবির করে বলল ও, “একটা ঝা*মে*লা শেষ না হতেই আরেকটা এসে জুটে যায়। আমাকে কেউ শান্তিতে থাকতে দিবে না। ইচ্ছে করছে…. ” নিজেকে সংযত করে নেয় রওশন। বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলল, তারপর কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে জোরে ভয়ঙ্কর ভাবে চিৎকার করে ধমকে উঠে ও
“চুপ….”
হঠাৎ রওশনের বিকট চিৎকারে আভি আর সুবহা চুপ হয়ে যায়। শুধু তাই নয় দু’জনেই যে ভয়ঙ্কর ভাবে ভয় পাচ্ছে সেটাও বুঝা যাচ্ছে তাদের চেহারা দেখে।
টাইসেল সাথে সাথেই সুবহার কোল থেকে নেমে দৌড়ে পালিয়ে যায়। বেচারা যেন এতক্ষণে নিজের জান বাঁচিয়ে পালানোর সুযোগ পেল।
সুবহা দু হাত বুকে চেপে ঘনঘন কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেলে। বেচারি সত্যিই খুব ভয় পেয়েছে এমনকি এখনো কলিজা কাঁপছে ওর।
আভিতো একদম চুপ হয়ে গেছে। রওশন ঘন করে হাঁফ ছাড়ল, দু হাত রেলিংয়ে ভর দিয়ে হালকা ঝুঁকল তারপর শান্ত গলায় বলল..
“বোওথ অফ ইউ, চুপচাপ বসো সোফায়। আর হ্যাঁ, কোনো শব্দ শুনতে চাই না আমি।”
কিছুক্ষণ পর,,,
বড় সোফাটার এক কোণে আভি আরেক কোণে বসেছে সুবহা ওদের মাঝে বসেছে নীল। আর ওদের সামনের সিঙ্গেল কুরসিতে পায়ের উপর পা তুলে বসেছে রওশন।
আভি গোমড়া মুখ করে অসহায় ভাবে বলে উঠে, “ব্রো ট্রাস্ট মী আমার কোনো দোষ নেই, সব দোষ এই ম্যাডামের।” সুবহার দিকে আঙুল তাক করে।
সুবহা রেগে কিছু বলতে যাবে কিন্তু রওশনের রাগী মুখ দেখে আবারো চুপসে যায়।
To be continued…..